
অনেক নাটকীয়তায় ভরা ছিল এ বছরের টি ২০ বিশ্বকাপ | মূলত আয়োজক ছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু হঠাৎই করোনার প্রভাব বেড়ে যায় আইপিএল চলার সময়। সেই কারণে আইপিএল বন্ধ করে সমস্ত খেলা নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যপ্রাচ্যে | ওই সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ড স্থির করে ফেলে, এদেশে নয়, সম্পূর্ণ বিশ্বকাপটি আয়োজিত হবে দুবাই, শারজা এবং আবুধাবিতে |
টুর্নামেন্টের সেরা দল ছিল নিউজিল্যান্ড এবং ভারত, যারা কিনা টি ২০র ইদানিংকালের সেরা পারফর্মার | ভারতকে কিন্তু টুনামেন্টের লিগ পর্যায়েতেই বিদায় নিতে হয় | টুর্নামেন্টে তখন সেরার স্থানে ছিল পাকিস্তান এবং তারপরই ইংল্যান্ড | নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া কোনওক্রমে সেমি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় |
এই মাঠগুলির মূল সমস্যা ছিল টসে জিতে যে যাবে, সেই পরে ব্যাট করবে এবং দেখা গিয়েছে জয় তাদেরই এসেছে ৯০ শতাংশ | রবিবাসরীয় ফাইনালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি | এই দেশে সন্ধ্যার পর থেকেই মাঠে শিশির পড়তে শুরু করে। কাজেই পরে যারা ফিল্ড করে, তাদের পক্ষে বল গ্রিপ করা কঠিন ছিল | যাই হোক না কেন, সময়োপযোগী খেলাও হয়েছে | ভারত পারেনি, সেটা তাদের খারাপ খেলার নিদর্শন ছিল |
ফাইনাল একপেশে ছিল না মোটেই | প্রথমে টসে হেরে ব্যাট করতে যায় নিউজিল্যান্ড | অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা কিন্তু প্রথম কয়েক ওভার বেশ ভালো বল করে | দ্রুত রান আটকে যায় তাতেই | কিন্তু অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন প্রায় একার দায়িত্বে দলকে টেনে তোলেন | নিজে ৮৫ রান করে আউট হন | শেষ অবধি ১৭২ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস | পরে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া প্রথমেই হারায় অধিনায়ক ফিঞ্চের উইকেট। কিন্তু ওয়ার্নার ও ম্যাক্সওয়েল | এই জুটি ছাড়াও মার্শ টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো ব্যাট করেছেন | অট্রেলিয়া ৫ বারের সীমিত ওভারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু তাদের অধরা ছিল টি ২০ বিশ্বকাপটি | এবার সেটিও তাদের দখলে চলে এল | দুর্ভাগ্য নিউজিল্যান্ডের।
অবশেষে ক্রিকেট কোচের চাকরি থেকে বিদায় নিয়ে অনেক কিছুই খুলে বললেন রবি শাস্ত্রী | তিনি বললেন, কোহলি শুধু টি ২০ থেকেই নেতৃত্ব ছাড়লেন না, বরং এবার সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই নেতৃত্ব ছাড়বেন | বুধবারই বীরেন্দ্র শেহবাগ বলেছিলেন, কোহলি অধিনায়কের পদ থেকে বেরিয়ে আসুক | সচিন তেন্ডুলকরের মতো বিশ্বসেরা ক্রিকেটারও অধিনাকত্ব ছেড়ে নিজের সেরা খেলা খেলেছেন | এবার কোহলির দীর্ঘদিনের কোচ রবি মনে করেন, কোহলিও নেতৃত্ব ছেড়ে স্বাভাবিক খেলা খেলবেন | তিনি অবশ্য নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, রাহুল নিশ্চিত ভালোভাবেই দল চালাবেন। তিনি যথেষ্ট ভালো ক্রিকেট বোঝেন |
তিনি এবার অবশেষে স্বীকার করলেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর তিক্ততার সম্পর্ক ছিল | এখন তিক্ততাটি কী পর্যায়ে, তা খোলসা করেননি | তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের ধারণা, সৌরভ যখন খেলতেন, তখন শাস্ত্রী কমেন্ট্রি বক্সে বসে গাঙ্গুলির চূড়ান্ত সমালোচনা করতেন | অনেকেই মনে করেন, সৌরভ কোনওদিন কাউকে তোষামোদ করে চলেননি। কাজেই শাস্ত্রীর ক্ষোভ | তবু শাস্ত্রী বলেছেন, তাঁরা কাচের গুলি খেলতে বসেননি যে ঝগড়া থাকবে |
অন্যদিকে শাস্ত্রীর মতো কি কোহলির সাথেও ভারতীয় বোর্ডের সভাপতির সম্পর্ক খারাপ ? এক সময় সৌরভ কিন্তু কোহলির প্রচুর প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু পরে সম্পর্কের অবনতি ঘটে সম্ভবত | আজকের তারিখে অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর ২০১৪ তে বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা ইডেন গার্ডেনে এক দিবসীয় ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড করেন | তিনি ২৬৪ রান করেন | অনেকদিন দলের বাইরে থেকে ফিরে এসে রোহিতের এই রানে আপ্লুত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় | তিনি রোহিতের প্রশংসা করে বলেন, আগামী দিনের ভারতের মস্ত ভরসা | তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর ৭ বছর আগের বিখ্যাত ২৬৪ রান, যা কিনা আজকেও অধরা এবং এই রেকর্ড ভাঙাও অসম্ভব প্রায়, যেখানে রোহিত ৩৩ টি বাউন্ডারি এবং ৯ টি ওভার বাউন্ডারি মারেন |
ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে | পাকিস্তানের হারে যেন স্বস্তি আসলো ভারতীয় ক্রিকেট দলে | প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নির্মম পরাজয়ের পর দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল | সত্যি বলে কি এবারের ডার্ক হর্স ছিল এই পাকিস্তানই | চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো সব সমস্ত যোগ্যতা তাদের ছিল | ওই গ্রুপে তারা নিউজিল্যান্ডের মতো দলকেও হারিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত পতন হলো অস্ট্রেলিয়ার কাছে | হেরে যাওয়ার মতো খেলে নি কিন্তু পাক দল | টসে জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক এরোন ফিঞ্চ পাক দলকে ব্যাট করতে পাঠায় | ২০ ওভারে পাকিস্তান ১৭৬ রান করে, যা কিনা যথেষ্ট ভালো রান এই আবুধাবি বা দুবাইয়ের মাঠে | এই মুহূর্তে পাক দলে আফ্রিদি বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলার এর আগে প্রতিটি দল আফ্রিদির সুইংএ উইকেট হারিয়েছে ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রথম থেকে একটু সাবধানে খেলছিল | কিন্তু এই উইকেটে রিজোয়ান ও জামান যথাক্রমে ৬৭ এবং ৫৫ রান করেছিল | এটাকে ভরসা করে অস্ট্রেলিয়া দুই ওভারের পর মেরে খেলতে শুরু করে কিন্তু দ্রুত তাদের ১৩ ওভারেই ৫ টি উইকেট হারায় |
এখানেই খেলা ধরে ওয়েড এবং স্ট্যানিজ | একটা সময়ে ২৫ বলে ৫২ রান দরকার ছিল ঠিক তারপরই পাক অধিনায়ক বাবর বোলিংয়ে নিয়ে আসেন তাঁর দলের সেরা সম্পদ আফ্রিদিকে | আফ্রিদির বলে শেষদিকে পরপর ৩টি ছক্কা মেরে ১৯ ওভারেই ১৭৭ রান তুলে ফাইনালে গেলো অস্ট্রেলিয়া | এবারে তাদের সামনে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড | এবারের টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান দুর্দান্ত খেলেছে | তারমধ্যে বিদায় নিয়েছে পাক দল | এর ফলে টি ২০ বিশ্বকাপে নতুন কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে |
বৃহস্পতিবার ভারতের নানান সমর্থক অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকও ছিল টিভি বা হ্যান্ডসেটে | একই অবস্থা ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের | পাক বিদায় হলে যেন, এ দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললো | এই ভারতের দর্শকরা কিন্তু ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকেই সমর্থন করবে বলেই ধারণা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের | আগামী রবিবারের শিশু দিবসে ক্রিকেটপ্রেমীরা কতটা উল্লাস করে শিশুদের মতো, তাই দেখার |
এখন নতুন ভারতীয় ক্রিকেট দল | নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড় | রবি শাস্ত্রী বিদায় নিয়ে জানালেন, তিনি রাহুলের উপর সম্পূর্ণ আস্থাশীল এবং তিনি এও জানিয়েছেন, তাঁর সময়ে ভারত বেশ ভালোই খেলেছে | অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে তাঁদের মাঠে ভারতের জয় অবিস্মরণীয় | তিনি দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন | কিন্তু পাশাপাশি বর্তমানে মধ্যপ্রাচের টি ২০ ম্যাচের সেমি ফাইনালের আগে বোমা ফাটিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম | তিনি বলেছেন, কোহলির ভারতকে হারিয়ে তাঁরা জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে গ্রুপ লিগে সব ম্যাচ জিতেছেন |
স্বাভাবিকভাবেই পাক অধিনায়কের মন্তব্যে চাপে ভারত | একই সাথে এমন কথাও হয়েছে যে নিউজিল্যান্ডকে সামনে দেখলেই স্বল্প ওভারের খেলা থেকে টেস্টে ভারত ঘাবড়ে যাচ্ছে | কথা উঠতেই পারে, কারণ ইদানীং বিশ্বকাপে ভারত ২০১৯ এ নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে। বিশ্বকাপ টেস্ট ক্রিকেটে এই নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারত ফাইনালে হেরেছে এবং টি ২০ বিশ্বকাপেও ভারত লিগ পর্যায়ে ছিটকে গিয়েছে নিউজিল্যান্ডের কাছেই হেরে | বারবার কেন এই আত্মসমর্পণ, উঠেছে প্রশ্ন | অবশ্য এই নিউজিল্যান্ড বুধবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে একদিকে বিশ্বকাপের বদলা নিয়েছে, অন্যদিকে ফের ফাইনালে গিয়েছে |
এসব তো বহিরাঙ্গের বাক্যালাপ। দেশের ভিতরেও কিন্তু ভারতীয় দল তথা বিরাট কোহলির উপর চাপ বাড়ছে | প্রবাদপ্রতিম সুনীল গাভাস্কার বরাবরই কোহলির নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করেছেন | এটা তো বাস্তব, গাভাস্কার শুধু নয়, দেশের অভন্তরেও দলবাজি নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রচুর ট্রোল হচ্ছে | টার্গেট কিন্তু ওই কোহলি | টি ২০ বিশ্বকাপ শেষ হলেই নিউজিল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে টি ২০ খেলা | এরই মধ্যে দলনায়ক স্থির হয়েছে রোহিত শর্মা এবং সহকারী কে রাহুল | কোহলি নিজেকে সরিয়ে নিলেন, নাকি তাঁকে বিশ্রামে পাঠানো হল, তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে |
অন্যদিকে ভারতের অন্যতম প্রাক্তনী বীরেন্দ্র শেহবাগ জানিয়েছেন, কোহলির অধিনায়ক পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত | শেহবাগ উদাহরণ দিয়ে বলেন যে সচিনও নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বসেরা হয়েছিলেন | যে কোনও দেশের সেরা খেলোয়াড় অনেক বেশি ভালো খেলতে পারেন, যদি খোলা মনে খেলতে পারেন | অধিনায়কত্বের চাপ ছেড়ে নিজের স্বভাবিক খেলা খেলুন |
বিশ্ব টি ২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে এবার ভারত শূন্য অবস্থায় সেমি ফাইনাল খেলা শুরু করবে | বিগত বহু বছরের মধ্যে ভারতের এইভাবে বিদায় দেখা যায়নি | এটা সত্যি, বিশ্বের স্বল্প ওভারের খেলা সবথেকে বেশি ভারতীয়রাই আয়োজন করে থাকে আইপিএলের মাধ্যমে। কাজেই অভিজ্ঞতা তাদেরই সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে বেশি স্বল্পমেয়াদি ক্রিকেট খেলোয়াড় | তবুও আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারত ট্রফি পায়নি বহুদিন | এ যেন অনেকটা ইউরোপ ফুটবলে ইংলিশ ফুটবল টুর্নামেন্ট। সবচেয়ে জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ পেয়েছে একবার, আর ইউরো কাপ পায়নি |
এমনটি হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু তাই হল। ভারতকে বিশ্বের সেরা সমালোচকরা চ্যাম্পিয়নের দাবিদার বলা সত্ত্বেও দেশ লিগ পর্যায়েই বিদায় নেয় | যে চারটি দেশ সেমি ফাইনাল খেলবে, তারা যথাক্রমে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড | এর মধ্যে দুটি গ্রুপের সেরা হয়েছে ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান | ফলে ইংল্যান্ড খেলবে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ( যারা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ছিল), অন্যদিকে পাকিস্তান খেলবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে |
ভারতের আর একটিই খেলা বাকি। সেটি নেহাতই নিয়মরক্ষার। হবে সোমবার, তারপর দেশের বিমান ধরবে মঙ্গলবার | বাড়িতে বসেই বিশ্বখ্যাত ভারতীয় খেলোয়াড়দের ফাইনাল খেলা দেখতে হবে |
শোনা গিয়েছে, টসে পরাজিত হয়ে আগে ব্যাট করতে যাওয়াই কাল হয়েছে ভারতের | এই যুক্তি নস্যাৎ করে দিচ্ছেন হরভজন সিং | তিনি জানিয়েছেন, এগুলো বাজে বাহানা | শুরু হয়েছে নানান সমালোচনাও | বলা হয়েছে, রাজনীতি করে অশ্বিন বা চাহারকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে রোহিত এই মুহূর্তে সেরা ওপেনার হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছিল | বলা হয়েছে, দলে এখন অনুগামী না হলে সুযোগ পাওয়া দুষ্কর | পক্ষান্তরে প্রভূত উন্নতি হয়েছে পাকিস্তান দলে | তাদের অবস্থান নিয়ে কারও কোনও ধারণা ছিল না। অথচ তারাই এবারের ডার্ক হর্স | ক্রিকেট প্রেমীদের নজর এখন পাকিস্তান কী করে, সেই দিকেই।
আর কয়েকটা দিন বাকি বিশ্বকাপ টি ২০ শেষ হতে | শেষ হলেই ভারতের কোচ কিন্তু কর্মহীন| ভারতীয় ক্রিকেটকে দেওয়ার মতো আর কোনও রসদ তাঁর হাতে থাকবে না | অদূর ভবিষ্যতে তাঁর কোচ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই | তবে রবি করবেন কী ? বর্ণময় চরিত্র রবি কিন্তু ক্ষণস্থায়ী | ১৯৮১ তে সুনীল গাভাস্কারের দৌলতে ভারতীয় দলে আগমন | মূলত বাঁ হাতি স্পিনার ছিলেন তিনি। আর ব্যাটটি মোটামুটি করতে পারতেন | ১৯৮৩ র বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে সুযোগ এলেও সেমি বা ফাইনালে দলের বাইরে ছিলেন তিনি | এরপর থেকেই ঘুরে দাঁড়ান রবি | ব্যাটিংয়ে অভূতপূর্ব উন্নতি করেন | ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এদেশে ভালো ব্যাট করেন তিনি | বোলিং থেকে ব্যাটসম্যান হিসাবেই উঠে আসেন | গাভাস্কার ফের ১৯৮৫ তে অধিনায়ক হলে দলে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসাবে এক দিবসীয় ক্রিকেটে যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি এবং টেস্টেও অনেক ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পান | সেঞ্চুরি করেন উভয় ক্রিকেটে | এক ওভারে ৬ টি সিক্সার মারার রেকর্ড হয় তাঁর এবং ইডেন টেস্টে ৫ দিনই ব্যাট করেন তিনি, যেটিও বিশ্ব রেকর্ড | এরপর অস্ট্রেলিয়াতে মিনি ওয়ার্ল্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত এবং রবি ম্যান অফ দ্য সিরিজ হন |
কপিলের অধিনায়কত্ব চলে গেলে বেঙ্গসরকার অধিনায়ক হন | কিন্তু হাত ভেঙে যাওয়াতে রবি ভারতের অধিনায়ক হন | এখানেও সার্থক হন রবি | কিন্তু আজহারউদ্দিন অধিনায়ক হলে ছাঁটাইয়ের লিস্টে রবির নামও উঠে আসে | তড়িঘড়ি রবি মাত্র ৩৪ বছরে ক্রিকেটকে বিদায় দেন এবং সাথে সাথে সুযোগ আসে কমেন্ট্রি বক্সে | রবি খুব ভালো বক্তা ছিলেন | রবির মস্ত দোষ ছিল বাংলার খেলোয়াড়দের প্রতি অবহেলা | চিরকালই সৌরভের চরম সমালোচক ছিলেন | পরে ভারতের কোচ হলেও এআইসিসি-র কোনও টুর্নামেন্ট জিততে পারেননি | এবারে তো চাকরিও শেষ। তবে কি ফের কমেন্ট্রি বক্সে, নাকি আইপিএলের কোনও দলে | এটাও নির্ভর করছে সামগ্রিক অবস্থানের উপর |
রবিবার ভারত নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলেই বিদায় নিতে হবে টি ২০ বিশ্বকাপ থেকে | খুবই সহজ গ্রুপে অবস্থান করেছিল ভারত | নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান ছাড়া চমক দেওয়ার মতো দল এই গ্রুপে ছিল না। পাশাপাশি অন্য গ্রুপটি বেশ কঠিন | কিন্তু ভারতীয় দলকে প্রথম বড় ম্যাচেই পাকিস্তানের কাছে নির্মমভাবে হারতে হয়েছে | যদিও এই তারুণ্যে ভরা পাক দলটি সম্বন্ধে কারুরই কোনও ধারণা ছিল না | আপাতত যে কটি দল খেলে ফেলেছে, তার মধ্যে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স সবথেকে ভালো | ভারত হোমওয়ার্ক না করেই পাক দলের সঙ্গে খেলতে নেমেছিল |
প্রশ্ন উঠেছে বিরাট কোহলির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। একই সাথে প্রশ্ন উঠেছে রবি শাস্ত্রীর কোচিং নিয়েও | এমনও বলা হয়েছে, এরা দলবাজি করছে এবং নিজেদের পেটেন্ট খেলোয়াড়দের সুযোগ দিচ্ছে | কিন্তু সেসব আবেগ আর ক্রোধের কথা | যদিও এই টুর্নামেন্টের পর কোহলি আর টি২০ দলের অধিনায়ক থাকবেন না এবং একইভাবে শাস্ত্রীরও এটাই শেষ কোচিং ভারতকে | অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে ধোনির ভূমিকা নিয়েও | দেশের সর্বকালের অন্যতম প্রাক্তন অধিনায়ক কি বুঝে উঠতে পারছেন না, কে কে ফর্মে রয়েছে |
যাই হোক, রবিবার ভারতকে জিততেই হবে | দলে পরিবর্তন চেয়েছিলেন সুনীল গাভাস্কর থেকে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা | শোনা যাচ্ছে তাঁদের দাবি রয়েছে বাটটিংটি আরও শক্তিশালী করা হোক এবং স্পিনার নেওয়া হোক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন | এতেও জেদাজেদি রয়েছে কোহলি-রবি জুটির | তাঁরা কি কিছুতেই অশ্বিনকে দলে নেবেন না? অশ্বিন বিশ্বের সেরা স্পিনারদের অন্যতম। অথচ ইংল্যান্ড সফর থেকে তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছে |
অশ্বিন ভালো ব্যাটিং করেন, টেস্টে তাঁর ৫টি সেঞ্চুরি রয়েছে | একদিবসীও ক্রিকেটেও অশ্বিন অপরিহার্য। অথচ টিম কোহলি চাইছে চাহারকে | কোহলি এবং অশ্বিনের মধ্যে কি সংকট আছে ? ধোনি জানিয়েছেন, হার্দিক প্যাটেলকে ফের খেলানো হোক। অথচ এই হার্দিক আগের ম্যাচে দলকে ডুবিয়েছিলেন | নজর কিন্তু থাকছেই রবিবারের ম্যাচে | রবিবার থাকায় সারা দেশ নজরে রাখবে ম্যাচটিকে |
টি ২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট জমে উঠেছে | এখনও পর্যন্ত যা যা খেলা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান দলটি দারুণ উন্নতি করেছে | এই পাকিস্তান ক্রিকেট দলটি ছিল সম্পূর্ণ অজানা | দেশের অভ্যন্তরে তারা গভীরভাবে ক্রিকেটটি অধ্যয়ন করেছে | একেবারেই যুবা দল | প্রথমে নির্মমভাবে তারা ভারতকে ১০ উইকেটে হারায়, পরে তাদের কাছে হারে নিউজিল্যান্ড দল | মনে রাখতে হবে নিউজিল্যান্ড দলটি ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে স্রেফ নিয়মের বেড়াজালে পড়ে হেরেছিল | অন্যদিকে বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন দল | এরাই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতকে সেমি ফাইনালে হারিয়েছিল| ফের হারিয়েছিল বিশ্বকাপ টেস্ট ফাইনালে | উইলিয়ামস দলের অধিনায়ক হিসাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার | সেই নিউজিল্যান্ডকে অনায়াসে পাকিস্তান লিগ ম্যাচে হারিয়ে দিয়ে গ্রুপ শীর্ষে উঠেছে |
দুটি গ্রুপে ভাগ করা রয়েছে বিশ্বকাপ টি ২০ র দলগুলিকে | একদিকে ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা | নির্দ্বিধায় বলা যায়, দ্বিতীয় গ্রুপটি যথেষ্ট শক্তিশালী | কোন দুটি দল উঠে আসবে, কেউ জানে না | যারাই উঠুক ওই দুটি দল যে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে, তা বলাই বাহুল্য | ভারত প্রথমে ভেবেছিল, অনায়াসে তারা পাক দল ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থাকবে। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে হেরে বেশ চাপে তারা, কাজটা কঠিন হয়ে গিয়েছে |
রবিবার ফের পরের ম্যাচ এবং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে | প্রায় এক সপ্তাহের ছুটি পেয়ে গিয়েছে তারা | এই ম্যাচটি হারলে ভারত আর সেমি ফাইনালে উঠতে পারবে না | বিদায় নেবে এবারের ২০ ওভারের বিশ্বকাপ থেকে | শোনা যাচ্ছে দলে অনেকটাই পরিবর্তন হবে | রোহিত ও রাহুল থাকলেও সূর্যকুমার থেকে বরুণ প্যাটেল ও ভুবনেশ্বর কুমার বাদ পড়তে পারেন | অশ্বিনকে নেওয়া হতে পারে | আরও একটি বিষয় দেখা হচ্ছে। তা হল দ্বিতীয় ভাগে বোলিং করতে নামলে শিশির থাকলেও তাকে কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় | মোটের উপর নিউজিল্যান্ডকে হারাতেই হবে | ভারত পারবে কি ?
শেষ পর্যন্ত রাহুল দ্রাবিড়কেই কোচ করা হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের | ভারতীয় ক্রিকেট কেন, কোনও দেশের ক্রিকেটেই কোনও কোচ ছিল না এই সেদিনও | ভারত যখন কপিলদেবের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয় করে, তখনও কোনও কোচ ছিল না | তখনকার দিনে বিদেশ সফর করলে সাথে একজন ম্যানেজার যেতেন | যদিও সেই ম্যানেজারের কিছু ভূমিকা থাকত। যথা ১১ জনের দল তৈরি করার সময় দলাধিনায়ক কখনও ম্যানেজারের সাহায্য নিতেন | বিদেশি দলে ম্যানেজারের ভূমিকা বা দায়িত্ব অনেক বেশি থাকলেও আমাদের অধিনায়করা ম্যানেজারদের পাত্তা দিতেন না কখনও | দেশে খেলা থাকলে একটা মজার বিষয় হত, একেক মাঠে একেকজন ম্যানেজার থাকতেন অথবা নির্বাচকরাই অনেক সময় এই দায়িত্ব পালন করতেন | বলা হত, তখনকার দিনে নির্বাচকদের বেশ একটা শহরে বেড়ানো হবে আর পাঁচতারা হোটেলে দিব্বি কমিটির পয়সায় থাকা যাবে | মূলত ম্যানেজারের কাজটা ছিল খারাপভাবে বলতে গেলে ফাই ফরমাশ খাটা | তাঁদের কোনও মাইনেও ছিল না |
দিন পাল্টাল, জগমোহন ডালমিয়ার আমলে ক্রিকেট বোর্ডের রোজগার ১০০ গুণ বাড়ল | ধীরে ধীরে ম্যানেজারের মাইনে হল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই পদ তুলে দিয়ে কোচ রাখা শুরু হল | কোচ হিসাবে দেশের প্রাক্তন খেলোয়াড়দেরই ঠিক করা হত | অজিত ওয়াদেকর থেকে সন্দীপ পাতিল, গায়কোয়ার প্রমুখ বিভিন্ন সময়ে কোচ হয়েছেন | কোচদের ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে | তিনি হেড কোচ হিসাবে খেলোয়াড়দের অবস্থান ঠিক করবেন | তিনি অবশ্যই ব্যাটিং এবং বোলিং কোচ রাখতে পারেন | সৌরভ গাঙ্গুলির আমলে কোচ ছিলেন জন রাইট | জনের আমলে দলে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। কিন্তু তারপরই কোচ হন গ্রেগ চ্যাপেল | চ্যাপেল দলের হাল অতি খারাপ করে ফেলেন | সম্প্রতি কোচ ছিলেন রবি শাস্ত্রী, যিনি ঘোরতর সৌরভ বিরোধী এবং তাঁর আমলে প্রচুর জয় এলেও কোনও আইসিসি ট্রফি আসেনি | রবির ইচ্ছা ছিল আরও কিছুদিন কোচ থাকার। কিন্তু এখন ব্যাটন সৌরভের হাতে | তিনি নিয়ে এলেন বন্ধু দ্রাবিড়কে | মঙ্গলবারই ছিল আবেদন পাঠানোর শেষ দিন এবং এদিনই দ্রাবিড় আবেদন জানালেন | বর্তমানে তাঁর মাইনে একটি সেমেস্টারে ১০ কোটি টাকা |
পাকিস্তানের কাছে নির্মম পরাজয়ের পর কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে দলের মধ্যে | ভারতীয় দলে এই মুহূর্তে দল গঠন করার দায়িত্ব অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং কোচ রবি শাস্ত্রীর। কিন্তু তাঁদের সহযোগিতা নিতে হবে দলের মেন্টর, প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিরও | সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রথম একাদশ ঠিক নাকি আগেই করে রেখেছিলেন কোহলি | এবার দলে কোহলি ছাড়া ব্যাটিংয়ে কেউই সুবিধা করতে পারেননি। অন্যদিকে কোনও বোলারই উইকেট নিতে পারেননি | কিন্তু বিশেষ এক শ্রেণির গোষ্ঠী এই পরাজয়ের জন্য দোষী সাব্যস্ত করছে দলের অন্যতম ফাস্ট বোলার বাংলার মহম্মদ শামিকে। কারণ তিনি ৪ ওভারে ৪৫ রান দিয়েছেন | সারা দেশ জুড়ে তাদের এই আজব দাবির পোস্ট ভাইরাল হয়ে গিয়েছে | কিন্তু সত্যটি কি তাই ? শামি না হয় রান বেশি দিয়েছেন, কিন্তু বাকি বোলাররা কী করেছেন ?
প্রথম প্রশ্ন উঠেছে হার্দিক প্যাটেলকে নিয়ে | তাঁকে দলে নেওয়াই হয়েছিল অলরাউন্ডার হিসাবে | তাঁকে কেন ৭ নম্বর হিসাবে ব্যাট করতে নামানো হল ? কেন তিনি রান করতে গিয়ে কাঁধে চোট পেলেন ? কেন একটিও ওভার বল করতে পারলেন না ? চোট থাকা সত্বেও তাঁকে দলে রাখা হল কেন ? নব্য স্পিনার বরুণকে দলে না রেখে কেন অশ্বিনকে খেলানো হল না ? জানা যায়, অশ্বিন নাকি কোহলির ব্যাড বুকে থাকা খেলোয়াড়। কিন্তু তিনি তো এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা স্পিনার | প্রশ্ন উঠেছে, শাহীন আফ্রিদির ইনসুইং ইয়র্কারে একইভাবে রোহিত ও রাহুল আউট হলেন ? যে ক্ষেত্রে সকলেরই ত্রুটি রয়েছে, সেখানে একা শামিকে কেন বলির পাঁঠা করা হচ্ছে ?
আসলে মূল সমস্যা দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব| শামির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বহু প্রাক্তন ক্রিকেটার | স্বয়ং সচিন তেন্ডুলকর তাঁর হয়ে টুইট করেছেন | তিনি জানিয়েছেন, ক্রিকেটটা দলের খেলা | শামি খুবই প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়, একদিনের খারাপ খেলা দিয়ে কাউকে বিচার করা ঠিক নয় | তাঁর পাশে বাংলার সমস্ত খেলোয়াড় রয়েছে | এছাড়াও সাংসদ রাহুল গান্ধি এই বিপাকে শামির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
ভারত-পাকিস্তানের যে কোনও খেলাই হাইভোল্টেজ ম্যাচ| দু দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের একটাই চাহিদা, দেশ যেন জেতে| রবিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি| সকাল থেকে তেরঙ্গা পতাকায় দেওয়াল ঢেকে দেওয়া হয়েছিল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মতো বাংলা তথা কলকাতায়| উত্তেজনায় ভরপুর ছিল আম বাঙালিও, ভুলে গিয়েছিল রাজনীতির রেষারেষি| খেলা তো ভারতে নয়, সুদূর দুবাইতে, যেখানে কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে আইপিএল টুর্নামেন্ট। কাজেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা অনেকটাই অভ্যস্ত ছিলেন স্থানীয় আবহাওয়া এবং উইকেটের অবস্থান নিয়ে|
ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ৭ টা বাজতেই শুরু খেলা| টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামল ভারত| শুরুতেই বিপর্যয়| পরপর আউট হলেন রোহিত শর্মা এবং কে রাহুল| পাক বোলার আফ্রিদি কামাল করলেন দুটি মূল্যবান উইকেট নিয়ে| আসলেন অধিনায়ক কোহলি | ধরে খেলতে শুরু করলেন, কিন্তু তারপরই তৃতীয় উইকেটের পতন| এবারে এলেন ঋষভ পন্থ| কোহলি-পন্থ জুটি ধরে খেলে ১০ ওভারে ৬০ রান অর্থাৎ ৬ এর অ্যাভারেজ | ফের পরপর পন্থ সহ আরও উইকেট পতন | শেষ পর্যন্ত ভারতকে ১৫১ রানে থামতে হল| এই মাঠে যা খুব খারাপ নয়, আবার খুব ভালোও নয়| কোহলি অনেকদিন বাদে ভালো ব্যাট করে ৫০এর বেশি রান তুললেন|
কিন্তু তারপরই চমক পাক অধিনায়ক বাবর আজম এবং রিজোয়ান। ধীরেসুস্থে ১৭ ওভারেই রান তুলে দিলেন| দেখা গেল, প্রতি ওভারে একটি বড় হিট এবং বাকি খুচরো রানেই ভারতের ইতি | রবিবার সম্পূর্ণ ব্যর্থ বোলাররা | ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কোহলি এবং পন্থ ছাড়া কারও ব্যাটেই রান আসেনি|
এরপর শুরু কাটাছেঁড়া| দোষ কার ? প্রথমত এই পাক দল সম্বন্ধে ভারতের কোনও ধারণাই নেই| বহুদিন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হয়নি এবং কোনও এক অজানা কারণে পাক দলের কাউকে ভারতের আইপিএলে নেওয়া হয়নি| দলটি আগের স্ট্র্যাটেজি ঝেড়ে ফেলে নতুন তারুণ্যদের দল গঠন করেছে| পাকিস্তানের ফিল্ডিং বরাবরই খারাপ ছিল। কিন্তু এই নতুন দলটিতে ১১ জন খেলোয়াড়ই প্রভূত উন্নতি করেছে| ভারতের প্রায় ১৫ রান আটকেছে ফিল্ডিংয়ে| স্পিনিং ট্রাক হওয়া সত্ত্বেও অশ্বিনকে দলের বাইরে রাখা হয়েছে| কোহলির পছন্দের ব্যাটসম্যান-বোলাররা সম্পূর্ণ ব্যর্থ| এবার ভাবার পালা।
রবিবার বিকেলে কি লকডাউন ডাকবে সরকার! ট্রেনের জানালার ধারে বসা এক যাত্রী খবরের কাগজের খেলার পাতায় চোখ রেখে এমনই অযাচিত মন্তব্য ছুঁড়লেন সহযাত্রীদের দিকে। আঁতকে উঠলেন অনেকেই।
করোনা আবহে এই মুহূর্তে সরকারিস্তরে এরকম কোনও ঘোষণা হয়নি ঠিকই। কিন্তু রবিবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান 'হাইভোল্টেজ' ম্যাচ যে কতখানি পারদ উস্কে দিয়েছে, তারই ইঙ্গিত ছড়িয়ে রয়েছে শহরজুড়ে। শনিবার দুপুরেই ধর্মতলার মোড় থেকে শুরু করে গোটা বড়বাজার, এমনকী দক্ষিণের রাসবিহারীতে ভারতের জাতীয় পতাকা দেদার বিকোতে দেখা গিয়েছে। অনেক পাড়ার ক্লাবেও রবিবারের খেলাকে কেন্দ্র করে লাগানো হচ্ছে বিরাটের লম্বা কাট-আউট।
রবিবার এমনিই ছুটির দিন। তার ওপর এই ধরনের ম্যাচ, অন্তত ক্রীড়াপ্রেমী লক্ষ লক্ষ দর্শককে যে ঘরবন্দি করে রেখে দেবে, এ কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাতে কি কোনওভাবে করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে? এই নিয়ে অবশ্য বিতর্ক উঠতেই পারে।
ঘরবন্দি টিভি সেটের সামনে বসে অনেকে যেমন খেলা দেখবেন, তেমনি একইভাবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় ক্রীড়াপ্রেমীদের ভিড়ও কিছু কম হয় না। এমনকী, প্রতিবারের মত বড় ম্যাচের আবহ ঘিরে উত্তাল হয় শপিং মলও। একতলা থেকে শুরু করে মাল্টিপ্লেক্সের সামনে পর্যন্ত জড়ো হয়ে খেলা দেখার অভ্যাস নতুন নয়। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও সেক্ষেত্রে ভিড় আটকানো মুখের কথা নয়।
ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন দোকান, মল এবং রেস্তোরাঁয় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখানো হবে বলে সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়ে দিয়েছে, গভীর রাত অবধি রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, হল খুলে রাখায় কোনও বাধা নেই। ভারতের বহু হল, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ রয়েছে মহারাষ্ট্রে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়েই ফের হারানো ব্যাবসা ফিরে পেতে চাইছেন মালিকরা। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, পঞ্জাব এবং চেন্নাইতে আগেই রাত অবধি হল, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং দেশের নামী-দামি শহরগুলি এই ম্যাচ ঘিরে যে কতখানি উত্তাল হতে পারে, তার আভাস যথেষ্টই মিলতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি কলকাতায় হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। ফলে মল, ক্যাফে ছাড়াও পাড়ার ক্লাবগুলিতে একসঙ্গে বহুজন বসে খেলা দেখা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঁকি মারে বৈকি! এখন দেখার প্রশাসন এবং জনগণ কতটা সজাগ।
ভারতীয় ক্রিকেটে বরাবরই মুম্বাইয়ের একটা প্রতিপত্তি ছিল | আজ নয় ব্রিটিশ যুগ থেকে | অবশ্য পরবর্তী অধ্যায়ে দিল্লিও এর মধ্যে ঢুকে পরে | তখন দেখা যেত হয় মুম্বাই অথবা দিল্লি থেকেই অধিনায়ক হচ্ছে দলের | ৬০ এর দশকে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন নরি কন্ট্রাক্টর | তিনি মুম্বাইয়ের ছিলেন এবং যেহেতু তিনি মুম্বাইয়ের ছিলেন তাই মহারাষ্ট্র দলের সিনিয়ার ক্রিকেটার চান্দু বোঁর্দেকে বাদ দিয়ে সহ অধিনায়ক করা হলো নবাগত ২১ বছরের পাতৌদিকে | মাথায় চোট পেয়ে কোট্রাক্টর দলের বাইরে গেলে অধিনায়ক হন পাতৌদি এবং সহকারী হন বোঁর্দে | ৭০ দশকের গোড়ায় চান্দু খেলা ছেড়ে দিলে সহ অধিনায়ক করা হয় মুম্বাইয়ের অজিত ওয়াদেকরকে | ৭১ এ পাতৌদি দল থেকে বাদ পড়লে ওয়াদেকরকে অধিনায়ক করা হয় এবং সহকারী করা হয় দিল্লির বিষেন সিং বেদির |
এই মিথ চলে গাভাস্কারের আমলেও | তিনি অধিনায়ক হলে হরিয়ানার কপিলদেবকে সহকারী করা হয় | কপিল আবার দিল্লির বাসিন্দা | কপিলকে পুরোদস্তুর অধিনায়ক করা হলে সহকারী করা হয় মুম্বাইয়ের দিলীপ বেঙ্গসরকারকে | এই মিথটি ভেঙে যায় আজহারউদ্দিন অধিনায়ক হওয়ার পর | কিন্তু এখানেও সংকট, আজাহার অধিনায়ক হয়েই সমস্ত পুরাতনদের একে একে ছেঁটে বাদ দিয়ে দেন | তিনিই হয় ওঠেন সর্বেসর্বা | এতে ক্রিকেটের কি সুবিধা হয়েছিল পরের কথা কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বেটিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পরে |
পরিবর্তন এবং গণতন্ত্র আসে সৌরভ গাঙ্গুলি অধিনায়ক হওয়ার পর | তারপর ধোনি ওই সংস্কৃতি ধরে রাখেন | ভারত বিশ্বকাপ জেতে |
আজ ফের ওই দিল্লি মুম্বাইয়ের কাঁটাকাঁটি শুরু হয়েছে কোহলি এবং রোহিতের যুগে |
অনেকেই বলেন বিরাট কোহলি এবং রবি শাস্ত্রীর জুটির ফর্মুলা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে | কোহলির প্রিয় খেলোয়ার হলেই দলে সুযোগ পাওয়া যায় বলেই একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল | শেষ ইংল্যান্ড ট্যুরে দেশের সেরা স্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিন কোনও সুযোগই পান নি এবং সেটা নাকি কোহলির ইচ্ছায় হয়েছিল | এই নিয়ে চূড়ান্ত সমালোচনা হয়েছিল | স্বয়ং সুনীল গাভাসকর প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন |
এরই মধ্যে সৌরভ গাঙ্গুলি ঠিকই করে ফেলেন কোচ বদলাবেন | এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে কোথাও হয় বিসিসিআয়ের সম্পাদক জয় শাহের সঙ্গে | রবির সাথে কস্মিনকালেও সম্পর্ক ভালো নয় সৌরভের | তাঁরা প্রথমে অনিল কুম্বলেকে অনুরোধ করেন কোচ হওয়ার জন্য কিন্তু কুম্বলে রাজি হন না | শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় রাহুল দ্রাবিড় | কোহলির ইয়েস ম্যান কোনও দিন হবেন না দ্রাবিড় ফলে চাপে কোহলি তিনি নাকি জানেন না দ্রাবিড় কোচ হচ্ছেন | ক্রিকেটপ্রেমীদের বক্তব্য এবার জব্দ কোহলি |
বিরাট কোহলীদের কোচের দায়িত্ব নিতে চলেছেন রাহুল দ্রাবিড়? টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সম্ভবত তাঁর হাতেই যেতে চলেছে টিম ইন্ডিয়ার কোচিংয়ের ভার, বলে খবর।সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে দুবাইয়ে আইপিএল ফাইনালের পর জানা যায়, এ বিষয়ে বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিব জয় শাহ বৈঠক করেছেন রাহুলের সঙ্গে।
সেই বৈঠকেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য রাহুলকে রাজি করানো হয়। বোলিং কোচ হতে পারেন পারশ মামব্রে।তবে এখনই এই বিষয়ে জানানো হয়নি। জল্পনা একেবারে তুঙ্গে।জুনিয়র দলের কোচ হিসেবে চূড়ান্ত সাফল্য এনে দিয়েছিলেন দ্রাবিড় । আবার অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েই বিশ্বজয় করেছিলেন। গড়ে দিয়েছিলেন তরুণ ক্রিকেটারদের ভিত। স্বাভাবিকভাবেই তাই সিনিয়র টিমের কোচ হওয়ার দৌড়ে ফেভারিটদের তালিকায় উঠে এসেছিল দ্য ওয়ালের নাম। কিন্তু ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর কোচ হয়ে কোহলিদের দায়িত্ব নাকি প্রথমে নিতে চাননি তিনি।
শোনা গিয়েছিল, কোচ হওয়ার প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার বিসিসিআই সূত্রে খবর, কোহলি অ্যান্ড কোংয়ের দায়িত্ব কাঁধে নিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন দ্রাবিড়। ইতিমধ্যেই বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সচিব জয় শাহর সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তাও হয়েছে তাঁর। শুক্রবার রাতে একদিকে যখন নাইটদের বিরুদ্ধে ইতিহাস গড়ার লড়াই চালাচ্ছিল ধোনির চেন্নাই, অন্যদিকে তখনই ভারতীয় ক্রিকেটে দ্রাবিড় যুগ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল ভারতীয় বোর্ড। খবর এমনটাই।