Breaking News
Abhishek Banerjee: বিজেপি নেত্রীকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগ, প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জাতীয় মহিলা কমিশনের      Convocation: যাদবপুরের পর এবার রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সমাবর্তনে স্থগিতাদেশ রাজভবনের      Sandeshkhali: স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন 'সন্দেশখালির বাঘ'...      High Court: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল, সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ হাইকোর্টের      Sandeshkhali: সন্দেশখালিতে জমি দখল তদন্তে সক্রিয় সিবিআই, বয়ান রেকর্ড অভিযোগকারীদের      CBI: শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ! তদন্তে সিবিআই      Vote: জীবিত অথচ ভোটার তালিকায় মৃত! ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ধূপগুড়ির ১২ জন ভোটার      ED: মিলে গেল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর, শ্রীঘই হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ ইডির      Ram Navami: রামনবমীর আনন্দে মেতেছে অযোধ্যা, রামলালার কপালে প্রথম সূর্যতিলক      Train: দমদমে ২১ দিনের ট্রাফিক ব্লক, বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন, প্রভাবিত কোন কোন রুট?     

Rabindranath

Rabindranath: ২৫ শে বৈশাখ, ফিরে দেখা

সৌমেন সুরঃ রবীন্দ্রনাথ এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি দেশ ও জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতীক। তিনি মনুষ্যত্বের চির উন্নত শির। ভারত আত্মার বিগ্রহ। অন্যায়ের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের অহংকার, আমাদের প্রেরণা, আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের সমৃদ্ধি।

পঁচিশে বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। এই দিন আমাদের আত্মসমীক্ষার দিন। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, কখনো যদি কবিকে মনে করতে ইচ্ছে হয়, তাহলে চৈত্রের শালবনের নির্জনতায় নি:শব্দে এসে বসতে। তিনি বারণ করেছিলেন আড়ম্বর করতে। আমরা তা শুনিনি। কবি বিষ্ণু দে বলেছেন, 'সভায় কাগজে বাজে ঢাকঢোল/ কারো বা ঝুমঝুমি /এ বড় অদ্ভুদ রাজ্য ছাব্বিশে বৈশাখ মরুভূমি।' কবির জন্মদিনের পরেও জন্মদিন ফুরায় না। রোজই ২৫ শে বৈশাখ। প্রতিদিন কবির সঙ্গে চলাফেরা। প্রতিদিনই তাঁর গানের সঙ্গে আমরা স্মাত হই। বলতে ইচ্ছে হয়, 'আমর জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান।' নিরুদ্দেশ সৌন্দর্যের পথে পথেই যে কবির নিরন্তর পরিক্রমা, তা নয়। সমকালীন বহু ঘটনাই তাঁর মনে ঝড় তুলেছিল। রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন মত্ত বর্বরতার বিরুদ্ধে। রাজনীতিতে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না। তবু মূঢ়-ম্লান-মূক-নতশির মানুষদের মুখে ভাষা দিয়েছেন। জাতির কন্ঠে দিয়েছেন গনসঙ্গীত। অনুপ্রানিত করেছেন যথার্থ দেশপ্রেমে।

শুধু কবি নন, সাংগঠনিক কাজেও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করলেন আদর্শ শিক্ষাকেন্দ্র। প্রকৃতির পাঠশালাতে দিলেন ছাত্রদের ডাক। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল- যান্ত্রিক নিরানন্দ শিক্ষার হাত থেকে শিক্ষার্থী মুক্তি পাক এই আশায়। শান্তিনিকেতন হলো দেশের সব মানুষের ভাব বিনিময়ের এক মহাতীর্থ। বিশ্বভারতী থেকে অনতিদূরে গড়ে তুললেন 'শ্রীনিকেতন'। আমাদের সংষ্কৃতিকে মাটির কাছাকাছি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্পে রবীন্দ্রনাথ। আমাদের সভ্যতাকে দানবের হাত থেকে রক্ষা করার সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মনেপ্রাণে জড়িয়ে আছে অর্নগল। বন্ধু মজলিশে, চায়ের দোকানে, কফি হাউসে, রেডিওতে, টিভিতে, সংবাদপত্রে, রবীন্দ্রনাথ নিত্য আমাদের সম্মুখে উপস্থিত। কবি আমাদের আধুনিক ভারতের নব তীর্থভূমি। এই তীর্থে এসেই জানা যায় ভারতকে।

12 months ago
Partha:তিনি এলেন, কবিতা বললেন, চোর স্লোগান শুনলেন, চলে গেলেন! এই ছিল সোমবারের পার্থ কাহিনী

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে গত বছর ২৩শে জুলাই নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এরপর প্রতিবারই ইডির তরফে আদালতে পেশের সময় তার মুখে বিভিন্ন বিষয় শোনা গিয়েছে। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তিনি এলেন, ২৫ বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী আগে রবীন্দ্রনাথ আওড়ালেন। অবশ্য এর প্রতিদানে দিনশেষে জুটল 'চোর চোর' স্লোগান।

'মসী লেপি দিল তবু ছবি ঢাকিল না। অগ্নি দিল তবুও তো গলিল না সোনা।' সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি তদন্ত মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজিরার আগে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর গলায় রবীন্দ্রনাথের এই দুই লাইন শুনে সবাই অবাক। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই দুটি লাইনের মধ্যেই তাঁর গ্রেফতারি এবং তার পরবর্তী সময়ের ঘটনাপ্রবাহকেই বোঝাতে চাইলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিনের তুলনায় এদিন ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। শুধু রবীন্দ্রনাথের কবিতা নয়, এদিন অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রার  প্রশংসা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। 

মঙ্গলবার রাজ্যে পালিত হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী। তারআগে, এদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার আগে নিজেই সোনারতরী কাব্যগ্রন্থ থেকে এই দুটি লাইন শোনান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা করছেন তা তারিফ যোগ্য। পার্থর দাবি, ১০০ শতাংশ সফল হবে এই কর্মসূচি। 

গত ২৩ জুলাই নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে নিজের নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তারপর থেকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারেই স্থান রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। এদিন রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলে জনসমাজে ফের বার্তা দিতে চাইলেন তিনি। যেখান কলঙ্ক সরিয়ে নিজেকে সোনার সঙ্গে তুলনা করলেন।

12 months ago
Suman:'বেসুরো সময়ে সুরে থাকাটা একটা প্রতিবাদ', সিএন-ডিজিটালকে কেন এমন বললেন কবীর সুমন

মণি ভট্টাচার্যঃ এটা রবীন্দ্রনাথের মুলুক..... ভারতবর্ষ (India) কোনো পলিটিক্যাল পার্টির মুলুক নয়। ভারতবর্ষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মুলুক। সিএন-ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন গায়ক কবীর সুমন (Kabir Suman)। অমর্ত্য সেন-বিশ্বভারতী বিতর্কে, অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে মুক্তমঞ্চের মাধ্যমে শনিবার ও রবিবার প্রতিবাদ স্বরূপ গান গাইবেন বাংলার অন্যতম বিতর্কিত গায়ক চরিত্র কবীর সুমন। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই শান্তিনিকেতন যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সিএন-ডিজিটালের তরফে কবীর সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফুরফুরে মুডেই কবীর সুমন জবাব দিলেন, 'হ্যাঁ আমি রবীন্দ্রনাথের গান গাইবো।'

সূত্রের খবর, অমর্ত্য সেনের বাড়ি 'প্রতীচী'র  বিতর্কিত ১৩ ডেসিমাল জমি নিয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিস নিয়েও জেলা কোর্টের দ্বারস্থ হলে সময়ের হেরফেরে হাইকোর্টে যেতে হয় অমর্ত্য সেনের পক্ষের আইনজীবীদের। বীরভূম জেলা আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের জমির বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বিশ্বভারতী। বৃহস্পতিবার অমর্ত্যের জমি মামলায় এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরে শনিবার ও রবিবার শান্তিনিকেতনে মুক্ত মঞ্চের মাধ্যমে গান গেয়ে প্রতিবাদ জানাবেন গায়ক কবীর সুমন।

এ বিষয়ে সিএন-ডিজিটালের তরফে কবীর সুমনকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি তো বহুদিন পরে রবীন্দ্র সংগীত গাইবেন। এর উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি রবীন্দ্রনাথের গান গাই, অনেকেই জানেন না।' আসলে বাংলার সংস্কৃতিতে বহুদিন পর গানে-কবিতায় প্রতিবাদ করতে দেখা যাবে। গানে-কবিতায় এই প্রতিবাদ নিয়ে কবীর সুমন বলেন, 'যারা ভারতের শাসন ক্ষমতায় থাকুন কিংবা ব্রিটেনের শাসন ক্ষমতায় থাকুন, এটা রবীন্দ্রনাথের মুলুক সেটা কেউ কেউ ভুলে যান। আমি ওইখানে থাকব। আমি তো গান গাই। আমি পরপর রবীন্দ্রনাথের গান গাইব।' কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'আমার এখন ৭৫ বছর বয়স, আমি এখনও গাইতে পারি। ফলে আমি রবীন্দ্রনাথের গান পরপর গাইব। প্রেমের গান, মরশুমের গান, বর্ষার গান। নানা রকম গান গাইব।'

এ উত্তর শুনে সিএন-ডিজিটালের তরফে কবীর সুমনকে বলা হয় ওটা যে প্রতিবাদের মঞ্চ। ঠিক তারপরেই কবীর সুমন প্রতিক্রিয়া দেন, 'অবশ্যই, আমি মনে করি, অসুন্দর সময়ে সুন্দর থাকাটা একটা প্রতিবাদ, বেসুরো সময়ে সুরে থাকাটা একটা প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ, বেসুরো পরিস্থিতিতে অশুভ শক্তিকে একটা জানান দেওয়া যে এটা রবি ঠাকুরের মুলুক।'

12 months ago


story: একটি ধানের শীষের উপর, একটি শিশির বিন্দু

সৌমেন সুর: দার্শনিক খুঁজে পান জীবনের অতলান্ত রহস্য। সঙ্গীত সাধক তার সুরের মায়াজালে করেন বাঙ্ময়। কবিও এরকম অসাধারন দৃশ্য দেখবার জন্য় প্রকৃতি প্রেমিকের মতো দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এর জন্য সময় ও অর্থ দুই-ই অকৃপন হাতে ব্যয় করেছেন তিনি। তবুও তার সৌন্দর্য দর্শন অসম্পূ্র্ন রয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে যায়, সত্যজিত্ রায়কে নিয়ে তাঁর মা এসেছিলেন, সত্য়জিত্কে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করানোর জন্য। শান্তিনিকেতনের প্রাকৃতিক শোভা, বালক সত্য়জিতকে আকৃষ্ট করে। হাতের খাতাটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, অটোগ্রাফ দিন। তখন রবীন্দ্রনাথ সত্য়জিতকে বলেন, তুমি আধঘন্টা পরে এসো ততক্ষণ ঘুরে ঘুরে সব দেখো। খাতাটা থাক আমার কাছে। 

এরপর সত্য়জিত আধঘন্টা পর কবির কাছে আসেন খাতাটা নেওয়ার জন্য। রবীন্দ্রনাথ তার খাতার প্রথম পাতায় লিখে দিলেন, বহুদিন ধরে বহুক্রোশ দূরে/ বহু ব্য়য় করি বহু দেশ ঘুরে/ দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা/দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু/দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/একটি ধানের শীষের উপর/ একটি শিশির বিন্দু।

প্রকৃতির বাইরের সৌন্দর্য সবার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে, কিন্তু তার অন্তর্স্বরুপকে উপলব্ধি করে সামান্য় কয়েকজন। যার দেখার চোখ আছে, তুচ্ছ ছোট বিষয়ও তার কাছে অপার সৌন্দর্যের আধার হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃত সৌন্দর্যরসিক সামান্যর মধ্যেও অসামান্য়কে খুঁজে পান। যেমন পেয়েছেন কবি। কবি শুধু বহিরঙ্গ রুপের প্রার্থী নন, অন্তরঙ্গ স্বরুপেরও প্রত্যাশী। তাঁর কাছে বাহ্য়িক আড়ম্বরের চেয়ে স্নিগ্ধ প্রকৃতির আন্তরিকতার সবচেয়ে কাম্য। ধানের শীষের ওপর শিশির কনার কমনীয় রুপ কবির কাছে অগোচর থেকে যায়, এই অসম্পূর্নতার বেদনাকেই তিনি সংহত বানীরুপ দিয়েছেন।

12 months ago
Special: ডিলিট না নোবেল, কোনটা আগে পেয়েছেন কবি (১ম পর্ব)

কবি নোবেল পুরস্কার আগে পেয়েছেন, নাকি নোবেলের আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় ডি.লিট উপাধি আগে পেয়েছেন। এ নিয়ে দ্বিমত আছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্বজ্জন সমাজের মধ্য়ে দুটি দল তৈরি হয়েছে। একদল বলে নোবেল আগে, আর এক দল বলে ডিলিট আগে। রবীন্দ্রনাথের ডিলিট প্রাপ্তি সম্পর্কে রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্য়ায় বলেন, পৌষ উৎসবের অব্য়বহিত পরে রবীন্দ্রনাথকে কলিকাতা যাইতে হইল। সেখানে কলিকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় সেনেটের বিশেষ এক অধিবেশনে (২৬ শে ডিসেম্বর, ১৯১৩) রবীন্দ্রনাথকে ডক্টর অব লিটারেচার উপাধি দান করিবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হইয়াছিল। সুতরাং নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হইবার পর কবিকে সম্মানিত করিবার জন্য় দেশবাসী ব্য়গ্র হয়। এ অভিযোগ ঐতিহাসিক সত্য় নহে। সুপন্ডিত ড: সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত  'তে হি নো দিবস' গ্রন্থে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের কাগজপত্র কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। 

অত্য়ন্ত জঘন্য় ভাষায় স্য়ার আশুতোষকে চৌর্যপরাধে অভিযুক্ত করেন। তিনি লিখেছেন, 'সেনেটের যে সভায় রবীন্দ্রনাথকে ডিলিট দেওয়ার প্রস্তাব ঘোষিত হয়, তা বসে ১৫ নভেম্বর, ১৯১৩। ওই সভার বিবরণী পাওয়া যায় যে, রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজ পাবার পর তাড়াহুড়ো করে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এরপর উনি বলেন, যে সকল তথ্য় এখানে উত্থাপিত হইল তাহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্য়ায় মিথ্য় অভিসন্ধিমূলক প্রচার অভিযানের শিকার হইয়াছেন।              তথ্য়ঋণ দীনেশ চন্দ্র সিংহ

12 months ago


Special: কুড়িয়ে পাওয়ার আনন্দ (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: এখনও রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এদিক-ওদিক চোখ যায়। লোকলজ্জা ও ব্যস্ততার ভয়ে চাইলেও কোনওকিছু কুড়োতে পারি না। তবে ছোটদের কুড়োতে দেখে আনন্দ হয়। আর আমি নিজে হাতে কুড়িয়ে নিতে না পারলেও আমার মন টুকরো টুকরো কত ঘটনা কুড়িয়ে নিয়ে জমা রাখে। শৈশবের সেই অভাবনীয় রেশ রয়ে গিয়েছে বলেই তো এখনো মন যেন কিছু একটা খোঁজে ঘরে-বাইরে, কিছু একটা কুড়িয়ে পাওয়ার কথা ভাবে। কুড়িয়ে পাওয়া নিয়ে যে সন্ন্য়াসীর মনও আলোড়িত করে, সে প্রসঙ্গে একটা সুন্দর গল্প বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলি।

এক বৌদ্ধ শ্রমন শুনেছিলেন যে রাস্তায় কিছু কুড়িয়ে পাওয়া নাকি আনন্দের। এই কথা শুনে তিনি ভাবলেন একবার পরীক্ষা করে দেখাই যাক। তিনি ভিক্ষার কয়েকটি পয়সা বারবার ছড়িয়ে দেন আবার কুড়োতে থাকেন। কিন্তু তার মনে কোনও আনন্দ হয় না। তখন নিজের মনেই ভাবেন, তাহলে সবাই যে বললো- কুড়িয়ে পাওয়ার মধ্যে আনন্দ জাগ্রত হয়। তখন আবার তিনি পয়সা ছড়াতে থাকেন আর কুড়োতে থাকেন। এভাবে ক্রিয়াকর্ম করতে করতে একসময় ঘাসের মধ্যে সব হারিয়ে গেল। এরপর বহুক্ষণ ধরে খুঁজে খুঁজে অবশেষে যখন খুঁজে পেলেন, তখন তিনি চিত্কার করে বলে ওঠেন, কুড়িয়ে পাওয়ার মধ্যে আনন্দ অবশ্যই আছে। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কথা প্রাসঙ্গিক- 'হারিয়ে যাওয়া আলোর মাঝে কনা কনা কুড়িয়ে পেলেম যারে, 

 রইল গাঁথা মোর জীবনের হারে।

সেই যে আমার জোড়া দেওয়া

খণ্ড আলোর মালা,

সেই নিয়ে আজ সাজাই আমার থালা'

12 months ago
Poem: আধুনিক বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ দাশের স্থান (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: বাংলা কবিতার দেশ। আধুনিক কালে বাংলার শ্যামল স্নিগ্ধ নরম মাটিতে জন্ম নিলেন সর্বকালের সর্বদেশের আর এক উজ্জ্বল বিস্ময়। তাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ, আকাশের মতোই তিনি বিরাট, নদীর মতোই তিনি গভীর, অনন্ত। নিঃসন্দেহে তিনি বরেণ্য কবি। এরপর বাংলা কবিতার প্রবাহে এক নতুন ঢেউ উঠলো। সবাই শুনলেন নতুন এক কন্ঠস্বর। বিস্ময়ের আর সীমা রইল না। হাজার বছর ধরে পথহাটা ক্লান্ত প্রাণ এক কবি। চোখে তার শতাব্দীর নীল অন্ধকার। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই সেই কবি ব্য়ক্তিত্ব হয়ে উঠলো সকলের একান্ত প্রিয়। সেই কবির নাম জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র উত্তর যুগের এক ব্য়তিক্রমী কবি।

জীবনানন্দের কবিতার বিষয়-বিষন্ন প্রকৃতি, ইতিহাসের ধূসর পটভূমি, আত্মমগ্ন সৌন্দর্য চেতনা, রোমান্টিক মনন, মানব মনের জটিল রহস্যময়তার স্বরূপ উপলব্ধি। তাঁর কাব্য়ে শুনতে পাই চিরন্তন বাংলার প্রাণের স্পন্দন। এমন নিবিড় মমতা দিয়ে আর কোনও কবি বাংলার প্রাণ প্রতিমা রচনা করেননি। বাংলার কত খাল-বিল, মাঠ-প্রান্তর, ঘাস-লতাপাতা, পাখি তাঁর কবিতায় অমূল্য় সম্পদ হয়ে উঠেছে। 

এই বাংলার সঙ্গেই কবির জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক। এখানেই তাঁর আশা আকাঙ্খা, ব্য়র্থতা-সফলতা। এর আকর্ষণ দুর্নিবার। জন্ম-জন্মান্তরেও এই ঋণ শোধ হওয়ার নয়। বারবার তিনি ফিরে আসতে চান, "ধানসিড়িটির তীরে-এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয়/হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব, এ কাঁঠাল ছায়ায়।" (চলবে)

one year ago
Special: রবীন্দ্রনাথের আদরের পুপে! পৌত্রীর সঙ্গে কবিগুরুর সম্পর্ক কেমন, জানুন

সৌমেন সুর: রবীন্দ্রনাথের নাতনী নন্দিনীদেবী ওরফে পুপে। পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমাদেবীর সন্তানহীনতার কান্না রবীন্দ্রনাথকে ভীষণ পীড়িতকরেছিল। এরপর রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা এবং সক্রিয়তায় প্রতিমা দেবী-রথীন্দ্রনাথ নন্দিনীকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নন্দিনীর জন্ম হয়েছিল চতুর্ভুজ দামোদরের পরিবারে। এই গুজরাটি ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথের আকর্ষনে শান্তিনিকেতনে এসে বাসা বেঁধেছিলেন।

চতুর্ভুজ দামোদরের স্ত্রী ছিলেন চিররুগ্ন। জন্মের সময় নন্দিনীও ছিল রুগ্ন। এই কন্যাসন্তানকে বাঁচানো যাবে কিনা এই চিন্তা চতুর্ভুজ দামোদরকে চিন্তিত করেছিল। রবীন্দ্রনাথ পুত্র ও পুত্রবধূর জন্য এই কন্যাসন্তানকেই দত্তক নিতে উদ্যোগী হলেন। বাকি জীবনটুকু নন্দিনীর কেটেছিল রবীন্দ্রনাথের প্রশ্রয়ে ও প্রতিমাদেবীর স্নেহে। শান্তিনিকেতনে সকলের আচার্য গুরুদেব বিশ্বজয়ী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পৌত্রী-নন্দিনীর সম্পর্কটি ছিল স্নেহ, ভালবাসা এবং প্রশয়ের। শেষ বয়সে রবীন্দ্রনাথের জীবনকে যেন নতুন করে রাঙিয়ে তুলে ছিলেন। তাঁর আদরের পুপে দিদি গল্পে গানে আদরে আবদারে সে ছিল এক অন্য রবীন্দ্র জীবন। দুই অসমবয়সী বন্ধুর পারস্পরিক নির্ভরতার এক চিত্র ছিল সে সম্পর্ক।

শান্তিনিকেতনের পরিমণ্ডলে নিজের মনের মতো করে আদরের পুপে দিদিকে গড়ে তুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে মুম্বই নিবাসী অজিত সিং খাটাও-এর সঙ্গে নন্দিনীর বিবাহ হয়েছিল। কিন্তু সে বিবাহ সুখের হয়নি। বিবাহবিচ্ছেদের পর নন্দিনী ফিরে এসেছিলেন। তাঁর দাদামশাইয়ের কাছে পরে অবশ্য বাল্যসঙ্গী-গিরিধারী লালনের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। এরপর নন্দিনী-গিরিধারী শান্তিনিকেতনেই থেকে গিয়েছিলেন। সাহিত্যচর্চা, গান ও  নাচে কবির প্রাণ নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।

one year ago


Special: রবীন্দ্রনাথ ও কুসংস্কার

সৌমেন সুর: ঘরে বাইরে উপন্যাসে নিখিলেশের মুখে একটি সংলাপ ছিল, 'কেবল গরুই যদি অবাধ্য হয় আর যদি মোষ অবাধ্য না হয়, তবে ওটা ধর্ম নয়, ওটা অন্ধ সংস্কার।' এই একটি কথায় রবীন্দ্রনাথের সংস্কারমুক্ত মনের পরিচয় পাওয়া যায়। ধর্মের নাম করে এধরনের পশুহত্যার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ এক বিরল ব্যক্তিত্ব, যিনি সার্বিকভাবে সমস্ত কুসংস্কার আর অন্ধ ধর্মমতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর বিজ্ঞানমনস্কতা তাঁকে চালিত করেছে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে লেখনী চালাতে। উদাহরনস্বরুপ মহাত্মা গান্ধীর মতো মানুষ যখন বিহারের ভূমিকম্পকে ঈশ্বরের অভিশাপ বা পাপের ফল হিসাবে অভিহিত করেছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ শুধু তার বিরোধিতাই করেননি, এই ধরনের মন্তব্য যে বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, তাও স্পষ্টভাবে বলতে দ্বিধা করেননি।

বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী মন্তব্য করেছেন, সৃষ্টি শুরু করা বা ব্রহ্মান্ডকে টিকিয়ে রাখার জন্য তথাকথিত ঈশ্বরের কোনও ভূমিকা নেই।রবীন্দ্রনাথ অনেক আগে বুঝেছিলেন,নাস্তিকতা কুসংস্কার বিরোধী মানসিকতার চরম রুপ। তাই ৭৮ বছর বয়সে লেখা রবিবার ছোট গল্পের নায়ক অভীক একজন ঘোর নাস্তিক। রবীন্দ্রনাথ অভীকের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন যে, দেশে দিনরাত্রি ধর্ম নিয়ে খুনেোখুনি, সেদেশে সব ধর্মকে মেলাবার পূন্যব্রত আমার মতো নাস্তিকেরই।

শুধু ধর্ম নয়, বিজ্ঞানের মধ্যেও যে গোঁড়ামি লুকিয়ে আছে তা আসলে অবিজ্ঞান- এ বোধ রবীন্দ্রনাথেরই। 

রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষান,কঙ্কাল, নিশীথে এইসব বিখ্যাত ছোটগল্পগুলিকে অনেক সমালোচক নিছক ভূতের গল্প বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু একটু মনোযোগ দিয়ে গল্পগুলো পড়লে বোঝা যায়,বর্ণনাকারীর মানসিক বিভ্রমই রচনা করেছে গল্পের শরীর।


one year ago
Special: প্যারোডি গান হারিয়ে গেল(শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: রঞ্জিতবাবু রবীন্দ্রনাথকে বিনম্র প্রণাম জানিয়ে বললেন,'কাজী নজরুল ইসলাম একটা খুব অন্যায় কাজ করে ফেলেছেন। তিনি আপনার 'নমো হো নমো' গানটির অনুকরনে একটি হাসির গান লিখে ফেলেছেন। আর তার থেকেও বেশি অন্যায় করে ফেলেছি আমি নিজে। আমি গানটি রেকর্ড করে ফেলেছি। অন্যায় জেনেও গানটি একবার শোনার অনুরোধ করছি। যদি মনে করেন তবেই অনুমোদন দেবেন।'

কবিগুরু গানটি চালাতে বললেন। শুনতে শুনতে কবির মনে কৌতুক প্রকাশ হল। আবার চালাতে বললেন। এবার শোনার পর বললেন,'অনুমতি দিতে পারি একটা শর্তে। বার্তাটি হল তিনটে রেকর্ড দিতে হবে।' সবাই শুনে হেসে ফেললেন। এভাবেই জন্ম হল প্যারোডি গানের। যাত্রা শুরু হল সেই তখনই। এরপর এই কাজে এগিয়ে আসেন তৎকালীন দুই কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক ও সতীশ ঘটক। সতীশ ঘটক কবিগুরুর একটি গান, 'তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী'র অনুসরণ করে লেখেন, 'তুমি কেমন করো পান করো হে চুনি'। আর কুমুদরঞ্জন মল্লিক রবিঠাকুরের 'সে যে কাছে এসে' এই রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুসরনে লেখেন, 'আমার পাকার যখন কথা ছিল।' কিন্তু দু'জনের কারও অনুমতি পাওয়া হল না, কারণ গুরুদেব প্রয়াত হন।

মিন্টু দাশগুপ্ত ও দীপেন মুখোপাধ্যায় দু'জনেই অপেক্ষা করে বলেন, বিচিত্রানুষ্ঠানের স্বাদ বদলের জন্য থাকতো প্যারোডি গান, হাস্যকৌতুক, মুকাভিনয়, আবৃত্তি ইত্যাদি। কিন্তু হঠাৎ করেই এগুলো সব হারিয়ে গেল। দীপেনবাবুর কথায় 'লক্ষ্য করে দেখবেন জীবনমুখী, ব্যান্ডের নামে যেসব গান হচ্ছে তার অনেকগুলোই প্যারোডি। পাতালঘর ছবিতে খরাজ মুখার্জির গানটার কথা ভাবুন। তাহলে আমাদের বেলায আপত্তি কেন!'

সবশেষে বলতে হয়, বর্তমানে হাসি জীবন থেকে প্রায় উঠে গিয়েছে। সেখানে যদি প্যারোডি গান হাসির মোড়কে জীবন যন্ত্রণার কথা তুলে ধরা যায়-তাতে ফল ভালো ছাড়া খারাপ কোথায়! আশা করছি-আবার যেন বাজারে প্যারোডি গানে রমরমিয়ে ওঠে। তথ্যঋন- দীপক মজুমদার।  (সমাপ্ত) 

one year ago


Special: প্যারোডি গান হারিয়ে গেল(প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুরঃ প্যারোডি গানে একমসয় দর্শককে মাতিয়ে রেখেছিলেন শিল্পী মিন্টু দাশগুপ্ত, দীপেন মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিত রায়, অমল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। মিন্টুবাবুর গলায় বিষাদের সুর, 'আমাদের গান শেষ হয়ে গেল।' তাঁর আক্ষেপ যে ভুল নয় আজকের সংগীত জগতের দিকে তাকালে তা মর্মে-মর্মে টের পাওয়া যায়। নতুন প্রজন্মের এই ধরনের গানের ব্যাপারে তেমন কোনও আগ্রহ নেই।

প্যারোডি গান মিন্টুবাবুর হাত ধরে আসেনি। ওর মতে এ ধরনের গান-এর স্রষ্টা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ বেশ কিছু হাসির গান লিখেছেন। কাজী নজরুল ইসলামও পিছিয়ে নেই। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দও অবশ্য গান ভেবে লেখেননি। লিখেছেন কবিতা। সেই কবিতায় দুর্দান্ত সুরের মায়াজালে সনৎ সিংহের গাওয়ার গুনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্যারোডি গানের আলোচনা করতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের রচনাতেই। রবীন্দ্রসংগীতের প্যারোডি করেন স্বয়ং কাজী নজরুল।

তিনি রবীন্দ্রসংগীতের আদলে একটি গান লেখেন। জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত 'আমায় ক্ষমো হে ক্ষমো, নমো হে নমো'-র অনুকরণে নজরুল লেখেন, 'একবার নাম হে নাম।' নজরুলের বাড়িতে প্রায়ই গানের আড্ডা বসতো। সেই আড্ডায় রঞ্জিত রায়ও থাকতেন। যিনি একাধারে অভিনেতা ও গায়ক। গান গাইলেও তিনি মূলত ছিলেন হাসির গানের শিল্পী। একবার 'নাম হে নাম' গানটি শুনে তিনি ঠিক করেন গানটি রের্কড করবেন। করলেনও এবার প্রকাশ হবে কীভাবে। রবীন্দ্রগানের অনুকরণ যেহেতু, তাই গুরুদেবের অনুমতির প্রয়োজন। ঠিক হলো জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে যাওয়ার। রঞ্জিতবাবু এইচএমভি রিজিওন্যাল ম্যানেজার হেম সোমকে সঙ্গে নিলেন। যথারীতি প্রণাম ও আলাপ পর্ব শেষে রঞ্জিতবাবু আসল কারণটাই নিবেদন করলেন বিনীতভাবে। (চলবে) তথ্যঋণ/ দীপক মজুমদার।

one year ago
Abanindranath: যাত্রাপালা লেখায় ও অভিনয়ে অবনীন্দ্রনাথ (শেষ পর্ব)

রবীন্দ্রনাথ নিজে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যাত্রাপালা লেখা নিয়ে উৎসাহ দিয়ে ছিলেন। তখন অবন ঠাকুর মন পালা লেখার নেশায় মত্ত। তিনি একটা করে পালা লিখতেন আর নাতি-নাতনিদের পড়ে শোনাতেন। নাতি-নাতনিরা খুব খুশি হত। এভাবেই অবনীন্দ্রনাথের দিন কাটতো। ছবি আঁকায় তার মন বসছিল না। কেউ ছবি আঁকার কথা বললে তিনি খুব বিরক্ত হতেন।

যখন রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখা নাটক মঞ্চস্থ করতেন, তখন মঞ্চসজ্জা থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাজসজ্জার ভার পড়তো অবনীন্দ্রনাথের উপর। নিজে অভিনয় করতে গিয়ে সব সময় কমিক চরিত্র করতে ভালোবাসতেন। কমিক চরিত্রে এতো ভালো অভিনয় করতেন, যার জন্য রবীন্দ্রনাথ ওর কথা ভেবে নাটকে একটি কমিক চরিত্র তৈরি করে রাখতেন। অবনীন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালের দিকে রামকাহিনী থেকে নানান খন্ড চিত্র নিয়ে পালা লিখতে শুরু করেন। ১৯২৬-২৭ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথ ছবি আঁকা শুরু করেন।

একে অপরের বিপরীতে এলেন। আবার রবীন্দ্রনাথই, অবনীন্দ্রনাথকে লেখার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। ১৯৩৮ সাল থেকে অবন ঠাকুরকে ছবি আঁকায় আবার ফিরতে দেখা গেল। ১৯৩০ সালে প্যারিসে তাঁর প্রথম ছবি প্রদর্শন এবং পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছবির প্রদর্শনী হয়। শিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ লেখা থেকে গেলেন ছবি আঁকাতে আর অবনীন্দ্রনাথ ছবি আঁকা থেকে গেলেন যাত্রাপালা-নাটক লেখাতে।

কবিকঙ্কন চণ্ডী, কৃষ্ণ লীলা সিরিজে আমরা দেখতে পাই একেবারে ভিন্ন অবনীন্দ্রনাথকে। উচ্চমার্গীয় শিল্প ভুবন ছেড়ে তিনি নেমে এসেছেন একেবারে নিম্নবর্গীয় মানুষের লোকশিল্পের জগতে। তাঁর লেখার ভুবন এসে মিলেছে যেন ছবির ভুবনে। অবনীন্দ্রনাথ মানব হৃদয়কে একবার ছবি দিয়ে অনুভূতি জাগানোর যেমন চেষ্টা করেছেন, তেমনি অভিনয়ের মাধ্যমেও চেষ্টা করেছেন সাধ্যমতো।

one year ago
Abanindranath: যাত্রাপালা লেখায় ও অভিনয়ে অবনীন্দ্রনাথ (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: অবনীন্দ্রনাথের বিশেষ ক্ষমতা ছিল নানাবিধ বানানো গল্প দিয়ে ছোটদের আবিষ্ট করে রাখবার। এই ক্ষমতা দেখে রবীন্দ্রনাথ একদিন তাঁকে ডেকে বললেন, 'অবন তুমি লেখ না কেন? যেমন করে মুখে মুখে গল্প বানিয়ে ছোটদের বলো, তেমন করেই লেখো।' অবনীন্দ্রনাথ বললেন, 'আমি কি আর লিখতে পারবো। বানান-টানানের ঠিক নেই।' রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'সে আমি দেখে দেব, তুমি লেখো।' একদিন এভাবেই আবির্ভূত হলেন বাংলা সাহিত্যে আর এক ঠাকুর। ছবির মতো গল্প লিখে যাওয়া অবন ঠাকুর। একে একে 'শকুন্তলা','ক্ষীরের পুতুল', 'নালক', 'রাজকাহিনী','বুড়ো আংলা' প্রভৃতি। মূলত ছোটদের জন্য লেখা।

যাত্রাপালা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ উৎসাহ দিয়েছিলেন অবন ঠাকুরকে। এরপর লেখায় মত্ত হয়ে উঠেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিশির ভাদুরি আসতেন অবন ঠাকুরের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে পরামর্শ করতে। ঠাকুরবাড়িতে বসতো চাঁদের হাট। অবনীন্দ্রনাথের যাত্রা দেখে রবীন্দ্রনাথ প্রচুর প্রশংসা করতেন। 'বাল্মিকী প্রতিভায়' রবীন্দ্রনাথ হয়েছিলেন বাল্মিকী আর অবন ঠাকুর হয়েছিলেন ডাকাত। এরপর ডাকঘরে সেজেছিলেন মোড়ল। সাড়া ফেলে দেওয়া সেই অভিনয়, মানুষ দেখেছিল এক অসাধারণ অভিনয়। সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, ব্যথা-বেদনা উদাসী নয়নে হতচকিত হয়ে চোখে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ।

গলা ভারী করে ভ্রু কুঁচকিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতেন, তা দেখে দর্শক আসনে যারা থাকতেন তাঁদের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তো। এমনই অভিনয়ে মাতিয়ে রাখতেন অবনীন্দ্রনাথ। (চলবে)

one year ago


Bolpur: রবীন্দ্রনাথের সাধের বোলপুর-শান্তিনেকতনে বন্দে ভারতের স্টপেজ! ঘোষিত রেলের নতুন সূচি

রবীন্দ্রপ্রেমীদের জন্য সুখবর বন্দে ভারতের স্টপেজ তালিকায় নাম ঢুকলো বোলপুর (শান্তিনিকেতন)-এর (Bolpur/Santiniketan)। রেল মন্ত্রক হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের (Vande Bharat Express) পরিবর্তিত যে সূচি প্রকাশ করেছে, তাতে হাওড়া,বোলপুর (শান্তিনিকেতন), মালদা টাউন, বারসই এবং নিউ জলপাইগুড়ির নাম আছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) রেলমন্ত্রীকে একটা চিঠি লেখেন।

সেই চিঠিতে কবিগুরুর কর্মস্থল শান্তিনিকেতনে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্টপেজের জন্য আবেদন করেন। সেই চিঠি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে পৌঁছনোর পরেই মন্ত্রকের হাওড়া-এনজিপি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পরিবর্তিত সূচি ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ। শুক্রবার অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত দিয়ে এই ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। কবে থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য সহজলভ্য এই সেমি হাই স্পিড ট্রেন, সেই বিষয়ে এখনও কিছু খোলসা করেনি রেল। 

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, হাওড়া থেকে ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ির পৌঁছনোর মাঝে কেবল মালদহ টাউন এবং বারসইয়ে দাঁড়াবে বন্দে ভারত। কিন্তু বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার রেলমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এই ট্রেনের জন্য  শান্তিনিকেতন স্টেশনে স্টপেজের আবেদন করেন। কেন বাংলার সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ সেই চিঠিতে উল্লেখ করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি।   

তিনি লেখেন, বাংলার মানুষের দাবি বোলপুর/শান্তিনিকেতন স্টেশনে দাঁড়াক বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। কলকাতা থেকে ২০০ কিমি দূরে অবস্থিত এই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য কোনও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি বছরভর দেশ-বিদেশের বহু পড়ুয়া এবং পর্যটক শান্তিনিকেতনে আসেন। তাই বন্দে ভারত সেখানে দাঁড়ালে উপকৃত হবেন বহু মানুষ।

এদিকে, রেল মন্ত্রকের নতুন বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে, বুধবার ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন চলবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। হাওড়া থেকে ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছবে দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে। মাঝে মাত্র তিন স্টেশনে দাঁড়াবে,  আবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বিকেল ৩টে ৫ মিনিটে ছেড়ে রাত ১০টা ৩৫-এ হাওড়ায় ঢুকবে।

one year ago
Rabindranath: রবীন্দ্রনাথের গল্পে মৃত্যু (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: রবীন্দ্র সাহিত্যে মৃত্যু কোথাও ভয়ঙ্কর রূপে প্রকাশ পায়নি। মৃত্যু, খুন বা আত্মহনন যাই হোক না কেন, কোথাও তার বীভৎস্য বর্ণনা নেই বললেই চলে। 'পণরক্ষা' গল্পে বংশীবদনের মৃত্যু তার ভাই রসিককে ক্ষমাহীন, প্রায়শ্চিত্তের উপায়হীন একটা জগতে নির্বাসিত করে দিয়ে গেছে। বংশীর মৃত্যুর খবর রসিক জানতো না। লেখক তা জানিয়েছেন একটিমাত্র বাক্যে। দীর্ঘকাল বাদে বাড়ি ফিরে দাদাকে বারবার ডাকলেও- 'যে দাদা তাহার পায়ের শব্দটি পাইলে আপনি ছুটিয়ে আসিতো, কোথাও তাহার কোন সাড়া পাওয়া গেল না। '

'জীবিত ও মৃত' গল্পের শেষ বাক্যটি প্রবাদ বাক্যের মতো হয়ে উঠেছে। কাদম্বিনী জীবনের সব লাঞ্ছনা, অপমানের সমাপ্তি ঘটেছে আত্মহত্যায়- পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে। শারদ-শংকর উপরের ঘর হইতে শুনিতে পাইলেন ঝপাস করিয়া একটা শব্দ হইলো। কাদম্বিনী অনাড়ম্বর মৃত্যু বর্ণনার শেষে লেখকের সংযোজন- 'কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই।'

শুধু রবীন্দ্র সাহিত্যে নয়, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একটি ছোট গল্প-'ছুটি'। তরতাজা প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একটা বালকের মৃত্যু কতটা মর্মান্তিক, ফটিকের প্রলাপ মৃত্যুশয্যায় এবং ডাক্তারের চেষ্টা ব্যর্থ করে তার চলে যাওয়ার মধ্যে কোথাও শোকের বাড়াবাড়ি, দুঃখের চড়া রং নেই। শেষ মুহূর্তে শোকাচ্ছন্ন মায়ের ব্যাকুল আহ্বান শেষবারের মতো সাড়া দিয়ে শেষ কথা বলে ফটিক- 'মা এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।'

রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে অসংখ্যবার মৃত্যুর দশা এসেছে। কোথাও তার শোক উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়িতে বিহ্বল নয়। বরং শান্ত সৌম্য সংযত। বিশ্বপথিক এক জীবনে তার চলার শেষ করতে পারে না। মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বারেবারে নতুন করে তাকে চলার পথ চিনে নিতে হয়। (সমাপ্ত)

one year ago