পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Poll) আগে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখার পর্যালোচনা বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বুধবার নবান্নে বৈঠকে বসছেন। নবান্ন সভাঘরে (Nabanna Meet) রাজ্যস্তরের ওই পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের সমস্ত দফতরের শীর্ষ আমলা-পদস্থ কর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এই বৈঠকে জেলা আধিকারিকরাও ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেবেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির হিসেব নেওয়ার পাশাপাশি শতাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনও করবেন।
ওই বৈঠক থেকে তিনি ১,১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পূর্ত দফতরের সেতু, রাস্তা-সহ ১০৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই পরিকাঠামোগুলি গড়ে উঠেছে। আবার, পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের অধীনে নির্মিত কিছু গ্রামীণ রাস্তারও উদ্বোধন হতে পারে এদিন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আগামি কয়েক মাসের মধ্যে রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা। তার আগে গ্রাম বাংলার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে, ঝালিয়ে নিতেই এই পর্যালোচনা বৈঠক বলে সূত্রের খবর।
মঙ্গলবার কোচবিহারের (CoochBehar) দিনহাটা থেকে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেই লক্ষে সোমবার কোচবিহার পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কর্মসূচি শুরুর ঠিক একদিন আগে টুইট করে অভিষেককে অভিনন্দন জানিয়ে উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার টুইট করে তিনি লেখেন, ‘তৃণমূল নব জোয়ার হল একটি প্রথম অভিনব রাজনৈতিক প্রয়াস। এই প্রয়াসের জন্য আমি অভিষেক এবং দলের কর্মীদের জনসংযোগ যাত্রা শুরু করার জন্য আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই। এই যাত্রা রাজ্যজুড়ে হবে।’ সোমবার বিকেলে কোচবিহার পৌঁছে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন অভিষেক। পরদিন থেকে শুরু করবেন জনসংযোগ যাত্রা (Janasangjog Rally)।
এই কর্মসূচিতে আগামী ৬০ দিনের সূচি সাজিয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করে ৬০তম দিনে তা সাগরে এসে শেষ হবে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের এই কর্মসূচর ঘোষণা করেন অভিষেক। পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থী খুঁজতে ২৫০টি জনসভা করবেন তিনি, সঙ্গে হবে ৬০টি অধিবেশন। ৩০ লক্ষ মানুষের সঙ্গে সরাসরি জনসংযোগ করার পাশাপাশি ৩,৫০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করবেন তিনি। এই কর্মসূচিতে তিনি অস্থায়ী ছাউনিতে রাত্রিযাপন করবেন। এই কর্মসূচি সফল করতে রবিবার রাজ্য এবং জেলাস্তরে নির্বাচনী কমিটি গঠন করল তৃণমূল।
রাজ্যস্তরের এবং জেলাস্তরের কমিটির কাজ কী হবে সে বিষয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূলের ২২ জন শীর্ষ নেতা। জেলাভিত্তিক ৮টি জোন তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক জোনের একটি করে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে ৬ থেকে ১০ জন তৃণমূল নেতাকে। এই কমিটিগুলির কাজ হবে গোটা প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। সেই সঙ্গে ভোটার তালিকা তৈরি করা থেকে শুরু করে যাঁরা ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, তাঁরা যাতে সঠিক ভাবে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্রামবাংলার মতামত সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ইনচার্জ এবং কো-ইনচার্জদের বিশেষভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। রাজ্যস্তরের যে নির্বাচনী কমিটি তৈরি করা হয়েছে তার চেয়ারম্যান করা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। কমিটির বাকি সদস্যেরা হলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মানস ভুইয়াঁ, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ ২২ জন নেতা। কলকাতা বাদে রাজ্যের ২২টি জেলাকে ৮টি ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
গঙ্গা দূষণ রোধের বার্তা নিয়ে পায়ে হেঁটে কেদারনাথ (Kedarnath) যাত্রা এক যুবকের। ওই যুবকের নাম প্রভাস বর। তিনি হাওড়ার (Howrah) ভগবতীপুর কান্দুয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। ৩২ বছর বয়সের এই যুবক সাঁকরাইল থানার ঘাট সংলগ্ন নদীঘাটে স্নান করে গঙ্গা দূষণ রোধ করা এবং সাধারণ মানুষের জনকল্যাণ স্বার্থে কেদারনাথ যাত্রা শুরু করলেন পায়ে হেঁটে। এমনই সংকল্প নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন তিনি। পায়ে হেঁটে দীর্ঘ দুই হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রান্ত করবেন তিনি। স্থানীয় পঞ্চায়েত, বিডিও এবং ডিএম অফিসের অনুমোদন নিয়ে তাঁর এই যাত্রা, জানালেন তিনি।
জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন আগেই কেদারনাথ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রভাস। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তিনি যাত্রা শুরু করতে পারেননি। তাই এই পদযাত্রায় দেরি হয়ে যায়, এমনই জানা গিয়েছে।
ওই যুবকের পরিবার সূত্রে খবর, বাড়ির বড় ছেলে প্রভাস বর। আগাগোড়াই ঠাকুর দেবতার প্রতি বিশেষ ভক্তি তাঁর। বিশেষ করে শিবের। তাই কেদারনাথ যাওয়ার কথা শোনার পরেও তাঁকে আটকানো হয়নি। এমনকি এই পদযাত্রায় শিব নিজেই তাঁকে রক্ষা করবে, এমনই জানালেন প্রভাসের মা। তবে পায়ে হেঁটে কেদারনাথ যাত্রায় তিনি সফলভাবে পৌঁছতে পারবেন কিনা সেদিকেই তাকিয়ে আছেন এলাকার বাসিন্দারাও।
প্রসূন গুপ্তঃ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নানান জল্পনা রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে। অনেকেই ভেবেছিলেন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে হয়তো হতে পারে। তেমনভাবেই প্রচার শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নভেম্বর থেকে কিন্তু সেই আশায় জল ঢালা হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ইত্যাদি পরীক্ষা সময়ে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হয়েছেও তাই। এরই মধ্যে দলের সভায় মমতা জানিয়েছিলেন যে, দুয়ারে সরকার থেকে লক্ষীর ভাণ্ডার ইত্যাদি প্রকল্পগুলি নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে হবে। কাজের দায়িত্ব নেতা-মন্ত্রী থেকে বিভিন্ন সভাপতিকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্র। সেই মোতাবেক কাজে নেমেছিলেন তৃণমূল নেতারা। এরই মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে।
ত্রিপুরা থেকে সাগরদিঘির উপ-নির্বাচনে অখুশি তৃণমূল সুপ্রিমো। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোট, যা কিনা মমতার নিশ্চিত ছিল, তা কিন্তু বাম/কংগ্রেসের দিকে কিছু সরে গিয়েছে। ফলে দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্পগুলির প্রচার ৩০ এপ্রিল অবধি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাজেই নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেলে অনুমোদনের দিন থেকে ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ভোটের দিন ধার্য করতে পারবে। মনে রাখতে হবে এই ভোট কিন্তু রাজ্য সরকার পরিচালনা করবে অর্থাৎ রাজ্য পুলিস দিয়ে ভোট হবে। ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে বিজেপির বিরোধী নেতা কোর্ট-কাছারি করেছিলেন, কিন্তু আদেশ তাঁর বিরুদ্ধেই যায়।
এবারের প্রশ্ন কবে নাগাদ দিন ঠিক হতে পারে। অন্দরের খবর মে মাসে হচ্ছে না বলেই ধারণা। সেক্ষেত্রে জুন মাসে হতে পারে। কিন্তু জুনে হলে কবে নাগাদ হবে। মনে হয়ে প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে। রাজ্যজুড়ে প্রচন্ড দাবদাহ চলেছে এবং অন্য বছরের তুলনায় বেশি গরম এ বছর পড়তে পারে বলেই শোনা গিয়েছে। অন্যদিকে জুনের ৮ তারিখ থেকে এ রাজ্যে বর্ষা শুরু হয়, এই সময়ে কি ভোট সম্ভব? উঠতে পারে প্রশ্ন। তৃণমূলের অন্দরের বক্তব্য দাবদাহে হিট স্ট্রোক হতে পারে, কাজেই গরম একটু না কমলে ভোট দিতেই আসবে না মানুষ। তাঁদের হাতেই ক্ষমতা , তাঁদের ইচ্ছাতেই ভোট।
প্রসূন গুপ্ত: তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে, না হয়নি, তা নিয়ে জল্পনার স্থান নেই। সম্প্রতি কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো বিভিন্ন জেলায় কিছু রদবদল করেছিলেন। মূলত দায়িত্বে থাকা নেতাদের মাথার উপর ফের অঘোষিত পর্যবেক্ষক বসিয়েছেন দলের সুপ্রিমো। এই পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই আদি তৃণমূল নেতা অর্থাৎ অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিম, মলয় ঘটক প্রমুখ। এই পরিবর্তনে দলের একটি অংশের কাছে প্রশ্ন এসেছিল, তবে কি যুব মহল অর্থাৎ যা কিনা অভিষেকের পছন্দের, তারা বাতিল হবে? পরে অবশ্য মমতা জানিয়েছিলেন, যুবরাই ভবিষ্যৎ কিন্তু এখনই সময় হয়নি ভোট দাঁড়ানোর। জল্পনা এমন হয়েছিল যে, মমতাই কি দলের রাশ নিজের হাতে নিলেন? তিনিই কি প্রচারের মুখ আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে?
এত প্রশ্নের উত্তর একটাই, কোনও সন্দেহ নেই তিনিই মুখ। শেষ পর্যন্ত সব প্রার্থী ঠিক করার লিস্টে তিনিই টিক চিহ্ন বসাবেন। তবে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা কি? সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফর করলেন এবং সব সাংসদের নিয়ে বিভিন্ন আবেদন-নিবেদন বা প্রতিবাদের কাজটি সারলেন। দেখা গেল দুই হাউসের সদস্যরা অভিষেককেই এগিয়ে দিলেন পরিষদীয় নেতা থাকা সত্ত্বেও।
একদিকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে মমতা যেমন পূর্ব মেদিনীপুর গেলেন তেমনই শনিবার থেকে অভিষেক শুরু করছেন বিভিন্ন জেলা সফর। ২০২১-এ বিশাল জয় এলেও বর্তমানে শিক্ষা থেকে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকার বিব্রত। সমাপ্ত সাগরদিঘি উপনির্বাচন, যা কিনা মুসলিম অধুষ্যিত, পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট কিন্তু মমতার সবথেকে বড় ভরসার জায়গা।
কাজেই সাগরদিঘির মন কি সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে, প্রশ্ন তৃণমূল হাইকমান্ডে। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে দুই প্রধান নেতাই বেড়িয়ে পড়ছেন ভোটের খোঁজে। অভিষেক ইদানিং বারবার ডুয়ার্স অঞ্চলে যাচ্ছেন। যাওয়ার কারণ এই অঞ্চলে সব থেকে খারাপ ফল করেছিল তৃণমূল গত বিধানসভা নির্বাচনে। আলিপুরদুয়ারে একটিও আসন পায়নি তাঁরা। কাজেই অভিষেক আলিপুরদুয়ার থেকেই তাঁর প্রচার শুরু করছেন।
অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী নেতা বারবার চেষ্টা করেছেন পঞ্চায়েত ভোট এখুনি না করার। কিন্তু বাদ সেধেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে ভোট হচ্ছে আপাতত ঠিক। মে মাসেই ভোট বলেই অন্দরের খবর এবং ভোট পরিচালনা করবে রাজ্য প্রশাসন। তাই সাংগঠনিক প্রস্তুতির দায় অভিষেকেরই।
প্রসূন গুপ্ত: সাগরদিঘির ভোটের (Sagardighi Bye Poll) ফল দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের ফলের পর মেজাজও ঠিক ছিল না তাঁর। মহাজোট নিয়ে ব্যক্ত করেন তাঁর বক্তব্য এবং অধীর চৌধুরীকে (Adhir Chowdhury) আক্রমণ করেন তিনি। এরপর থেকেই শুরু নানা বিতর্ক। প্রথমত কংগ্রেসের নেতা এবং মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী মমতার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ করে গ্রেফতার হয়েছিলেন। গ্রেফতারির দিনেই ছাড়া পেয়ে তিনি মাথা মুড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেন মমতা সরকারকে (Mamata Government) উৎখাত না করা পর্যন্ত তিনি মাথায় চুল গজাতে দেবেন না।
অর্থাৎ রাজ্য রাজনীতিতে নাটক তুঙ্গে। এরপরই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরাসরি সহকর্মীদের প্রশ্ন করেন যে, সাগরদিঘিতে সংখ্যালঘু ভোট কমল কেন? তাতে অনেকেই অনেক উত্তর দেন। কেউ বলেন, প্রার্থী পছন্দ হয়নি এলাকার মানুষের। এই উত্তরে মোটেই খুশি হননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দলের সংখ্যালঘু মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন, যে সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে গিয়ে সঠিক তথ্য নিয়ে আসতে।
মমতা কেন বাংলার সব রাজনৈতিক দলই জানে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩২% কাজেই এই ভোটকে অগ্রাহ্য করা যায় না। একসময়ে বামেরা এই ভোটের সিংহভাগ পেত। এরপর নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পর এই ভোট ক্রমশই তৃণমূলে চলে যায়। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বহু আসন বিজেপির কাছে হারায়। কিন্তু দেখা গিয়েছে, যেখানে মুসলিম ভোট সেখানেই তৃণমূল জিতেছে।
মোদী ঝড়ে এই নির্বাচনে দক্ষিণ ভারত ছাড়া এক বাংলার বিজেপির থেকে তৃণমূল ৪টি আসন বেশি পেয়েছিলো। ২১-এর নির্বাচনে একবগ্গা মুসলিম ভোট পেয়েছিলো মমতা। কাজেই তিনি সাগরদিঘির ফলাফলে ক্ষুব্ধ হবেন তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে। তিনি জানেন ফের নন্দীগ্রাম ফর্মুলা যদি ফের পশ্চিমবঙ্গে সাগরদিঘির রূপ নিয়ে আসে তবে সর্বনাশ অনিবার্য। কাজেই তৃণমূল সুপ্রিমো যেভাবেই হোক সংখ্যালঘু ভোট ফিরে পেতে মরিয়া।
আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামিয়েছেন নেতাদের এবং পাক্কা খবরের অপেক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাসনাবাদের আমলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের তকিপুর এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। বারবার সরকারি দফতরে জানিয়ে কোন সুরাহা হয়নি। রাস্তায় বেরিয়েছে পাথর। তাও শুরু হয়নি কোনও মেরামতি। ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতিই মেলে, হয় না কোনও রাস্তার কাজ। এদিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল বিধানসভার নাটসাল ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গাজীপুর গ্রামের রাস্তারও একই অবস্থা।
গ্রামবাসীদের দাবি, প্রায় দশ বছর ধরে এই রাস্তায় ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না তাঁরা। রাস্তায় বড় বড় খানা-খন্দ তৈরি হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি বর্ষাকালে ওই রাস্তায় জল ভরে যাওয়ায় রাস্তার কোথায গর্ত আছে তাও বোঝা যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হয় এলাকাাসীদের। অভিযোগ, সরকারি দফতর থেকে রাস্তা পরিদর্শন করতে এলে শুধু রাস্তা মেরামতের প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যায়।
এদিকে তকিপুরে রাস্তার বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে বসিরহাট বিজেপি সাংগঠনিকের জেলা সাধারণ সম্পাদক তুলসী দাস বলেন, 'শুধু আমলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের রাস্তা নয় পশ্চিমবঙ্গের সব জায়গাতেই রাস্তার বেহাল দশা। রাস্তাগুলির অবস্থা এতটাই খারাপ যে ঠিকমতো কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারে না। তাই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি আ্যাম্বুলেন্স রোগীদেরও বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়। পশ্চিমবঙ্গের যেসকল গ্রামীণ এলাকাগুলোয় প্রধানরা রয়েছেন তাঁরা কোনও কাজই করছেন না। তাঁদের ইচ্ছা শুধু লুটপাট করা।'
তবে আমলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রোকেয়া বিবি জানান, 'এই রাস্তার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আমরা এই বিষয়টি বিধায়ককে জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়িই কাজ শুরু হবে।'
ফের মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) এক কন্টেনার ভর্তি তাজা বোমা উদ্ধার। জেলার সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়ূরাক্ষী নদীর বাঁধের পাশ থেকে উদ্ধার বোমা। তদন্তে বড়ঞা থানার পুলিস। বোমা নিষ্ক্রিয় করতে ঘটনাস্থলে বোম স্কোয়াডও। তবে এই ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা এখনও স্পষ্ট নয়। শুক্রবার মুর্শিদাবাদের লালবাগ থানার অন্তর্গত ডাঙাপাড়ার হাসানপুর রাজেশ্বরী উচ্চবিদ্যালয়েও তাজা সকেট বোমা উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনার ২৪ ঘন্টা কটতে না কাটতেই মুর্শিদাবাদে ফের বোমা উদ্ধার!
এই ঘটনায় মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস মুখপত্র জয়ন্ত দাস বলেন, 'মুর্শিদাবাদ একটা বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে। যতই পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে, ততই শাসক দলের ক্ষুদ্র কুটির শিল্প অর্থাৎ এই বোমা বাঁধা ও অস্ত্র তৈরির কাজ আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। এমনকি এই পঞ্চায়েত ভোটে কেউ টিকিট পাবে আবার কেউ পাবে না, এই টিকিট পাওয়াকে কেন্দ্র করেও একটা ভয়ঙ্কর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দুর্ভোগে পড়তে হবে গোটা মুর্শিদাবাদবাসীকে।'
এই বিষয়ে সিপিএম-র জেলা সভাপতি জামির মোল্লা বলেন, 'বেশ কয়েকমাস ধরেই মুর্শিদাবাদে বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র ধরা পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কাজের জন্য কোনও কারখানা তৈরি করতে পারেনি কিন্তু বোমা-আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানা তৈরি করতে পেরেছেন। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রেহাই পাচ্ছে না এই বোমার হাত থেকে। শাসক দল বিরোধীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। যাতে ২০১৮ সালের মতো কেউ ভয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে না দাঁড়ায়।'
এদিকে, এই ঘটনা দুষ্কৃতীদের কাজ বলে দাবি করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পুলিস-প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতি আয়ত্বে এনেছে বলে ধন্যবাদ জানিয়েছে শাসক দল।
ভোট পরবর্তী হিংসার (Post Poll Violence) কবলে মেঘালয়ের একাধিক এলাকা। হিংসায় মৃত ১, জখম হয়েছেন আরও বেশ কয়েক জন। শুক্রবার এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছে মেঘালয় পুলিস (Meghalaya Police)। জানা গিয়েছে, পূর্ব-পশ্চিম খাসি হিলসের মারিয়াং বিধানসভা, পূর্ব খাসি হিলসের শেলা এবং পশ্চিম জয়ন্তিয়া হিলসের মোকাইয়াও থেকে হিংসার খবর এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকাগুলোয় জারি ১৪৪ ধারা। ফাটানো হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। এক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, মারিয়াংয়ে ডিসিপি অফিসের সামনে একাধিক গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই অভিযোগ।
এদিকে, মারিয়াং আসনের ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার ডিসিপি অফিস ঘেরাও করেছিল কংগ্রেস। এরপরই এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
জানা গিয়েছে, ফল নিয়ে অসন্তোষ সোহরা আসনেও। উপমহকুমা শাসকের অফিস লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন এনপিপি সমর্থকরা। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি পুলিসের। শান্তি বজায় রাখতে সব দলকে আহ্বান জানান মেঘালয়ের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।
অপরদিকে, ৬০ আসনের মেঘালয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল এনপিপি, তাদের ঝুলিতে ২৬ আসন। দ্বিতীয় স্থানে ১১টি আসন নিয়ে ইউডিপি। তৃণমূল এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৫টি করে আসন। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে ২টি আসন। যদিও এই মুহূর্তে এনপিপি-র কনরাড সাংমার সঙ্গে বোঝাপড়া করে মেঘালয়ে সরকার গড়তে উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি।
প্রসূন গুপ্ত: একুশের ভোটে ৫০ হাজারে জেতা আসনে পরাজিত তৃণমূল। ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কেন পারলো না সাগরদিঘি ধরে রাখতে? কেনই বা কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাস জিতলো? এই আসনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী জিতবে, তা আগেই পরম দর্পে প্রকাশ করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সিএন পোর্টালের বিশ্লেষণে কী উঠে আসে, তাই ব্যক্ত করি।
১) সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া শিক্ষাক্ষেত্রের কেলেঙ্কারি কিন্তু কিছুটা ছাপ নিশ্চিত ফেলেছে কিন্তু এই ইস্যুর উপর ভোট হয়নি।
২) সাগরদিঘি মুলসিম অধ্যুষিত বিধানসভা। ৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘুর বাস। কংগ্রেসের গড় ছিল একসময়। কিন্তু এখন থেকে সুব্রত বিশ্বাসের জেতার কারণ তিনি ছিলেন মুসলিমদের "মসীহা"।
৩) কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করে একেবারে নতুন মুখ ব্যবসায়ী বাইরন বিশ্বাসকে। অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু এলাকায় তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না।
৪) অন্যদিকে বিজেপি এখানে জিততো না কোনওসময়েই। কাজেই ব্যবসায়ী দিলীপ সাহাকে প্রার্থী করে পদ্ম শিবির।
৫) প্রচারের মূল দায়িত্বে ছিল কংগ্রেসের জোট সঙ্গী সিপিএম। রেজিমেন্টেড দল সিপিএম। কাজেই তারা জানে কোথায় কোন তাস খেলতে হয়। এলাকায় এলাকায় তারা প্রচার করেছে। গুঞ্জন প্রচারে তারা বলেছে, তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে একটা সমঝোতা আছে। জনতা দেখুক ত্রিপুরায় তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে শুধুমাত্র বিজেপিকে জেতানোর জন্য। দ্বিতীয় তাস পড়েছে এই যে, সংখ্যালঘু এলাকায় কেন এক ব্রাহ্মণকে প্রার্থী করা হলো? তৃতীয় তাস মমতা আজকাল আর গরিবের দুঃখ বোঝে না, নেতারা বিশাল বড়োলোক অতএব এদের ভোট নয়। এই প্রচার কিন্তু সুনামির মতো ছড়িয়ে গিয়েছিল।
৬) বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী পরিষ্কার প্রচারে বলেছিলেন, সনাতনী ভোট বিজেপিতে পড়ুক এবং সংখ্যালঘু ভোটার জন্য অন্য ব্যবস্থা আছে। প্রশ্ন সেই অন্য ব্যাপারটি কী? দিন শেষে দেখা গেলে সংখ্যালঘু ভোটের ৬০ শতাংশ পড়েছে কংগ্রেসের বাক্সে এবং ৩৪ শতাংশ অন্য ভোটের প্রায় ২৫ হাজার ভোট বিজেপিতে পড়েনি, যা কিনা গত ২০২১ এর নির্বাচনে পড়েছিল। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তৃণমূলকে সাগরদিঘিতে পরাজিত করেছে।
মানুষ জোটকে ভরসা করে ভয় কাটিয়ে ভোট দিয়েছে। প্রমাণ হয়েছে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাজেয় নয়। তাঁকে পরাজিত করা সম্ভব। আমাদের জয়ের অঙ্ক বিশাল। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে এই মন্তব্য করেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের ফল নিশ্চিত হতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতাকে কুর্নিশ জানান অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতায় সাধারণ মানুষ ভোট দিতে বেরোতে পেরেছে। শাসক দল ছাপ্পা ভোটের প্রস্তুতি নিলেও, কেন্দ্রীয় বাহিনী সেই উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়েছে।'
এদিকে, সাগরদিঘি উপনির্বাচন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনৈতিক জোটকে কাঠগড়ায় তুলেছে। তিনি বলেছেন, 'সাগরদিঘিতে অনৈতিক জোটের তীব্র নিন্দা করছি। বিজেপির ভোট কংগ্রেসে গিয়েছে, সিপিএম-র ভোটও কংগ্রেসে গিয়েছে। তবে গণতন্ত্রে হারজিত থাকবেই। এই ফলকে স্বাগত জানাই।' বিরোধী দলগুলো সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছে। তাই এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, এভাবেও সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর দাবি, 'তৃণমূল কংগ্রেস এই তিন শক্তিকে একাই পর্যুদস্ত করবে। যেভাবে একুশের ভোটে করেছে, আগামি দিনেও করবে। উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।'
এই দুই দলের পাশাপাশি সাগরদিঘি উপনির্বাচনের তৃতীয় শক্তি বিজেপির দাবি, 'আমরা সাংগঠনিকভাবে ওখানে দুর্বল। বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ সাংগঠনিক শক্তির নিরিখে আশানুরূপ। গতবার যে বুথে বিজেপি ঢুকতে পারেনি, এবার সেই বুথে দলের পোলিং এজেন্ট ছিল।'
ত্রিপুরায় (Tripura) বিজেপি জোট অনেক আগেই ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলেছে। আগরতলায় গেরুয়া দলের (BJP+) মসনদে বসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। পাশাপাশি সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম সদস্য নাগাল্যান্ডেও এনডিএ সরকার (NDA Government)। মেঘের দেশ মেঘালয়ে (Meghalaya) অবশ্য ত্রিশঙ্কু বিধানসভা। তবে সরকার গঠনে আশাবাদী এনপিপি-র প্রধান কনরাড সাংমা (Conrad Sangma)। তাঁর দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি বা এনপিপি শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত ২৬ আসনে এগিয়ে। তাদের পিছনেই আছে অপর এক আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টি বা ইউডিপি (প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ ১৬.২৪%)। তাদের ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত ১১টি আসন। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের তিন নম্বর স্থানে তৃণমূল কংগ্রেস।
জানা গিয়েছে, বিজেপি এবং কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে এই রাজ্যে টিএমসি এগিয়ে ৫ আসনে। বিজেপি এবং কংগ্রেস ২টি করে আসনে এগিয়ে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত। ৬০ আসন বিশিষ্ট এই বিধানসভা সরকার গঠনে ম্যাজিক ফিগার ৩১। কিন্তু প্রথমসারির কোনও দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায়, একক বৃহত্তম দল হিসেবে মেঘালয়ে এগিয়ে এনপিপি (প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ প্রায় সাড়ে ৩১)। সেক্ষেত্রে সে রাজ্যে সরকার গড়তে কনরাড সাংমার দলকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে বিজেপি। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ট্যুইট করে এ খবর জানান। তবে যেহেতু মেঘালয়ে ফল গণনার ট্রেন্ড মেনে তৃতীয় টিএমসি (প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ প্রায় ১৪), সেক্ষেত্রে সরকার গড়তে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে বাংলার শাসক দল।
এদিকে, নাগাল্যান্ডে সরকার গড়ছে এনডিপিপি এবং বিজেপি। এই দুই দল এগিয়ে ৩৭ আসনে (এনডিপিপি ২৫ এবং বিজেপি ১২)। তারপরেই আছে ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি। তারা এগিয়ে রয়েছে ৭ আসনে। নাগাল্যান্ডে এনডিএ জোটের ফল নিশ্চিত হতেই ট্যুইট করে ভোটারদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশন
গেরুয়া ঝড় তুলে ত্রিপুরায় (Tripura Assembly Poll) প্রত্যাবর্তন বিজেপির। ৬০ আসনের বিধানসভায় ৩৩টি আসন পেয়েছে বিজেপি এবং জোটসঙ্গী আইপিএফটি (BJP+)। ১৪ আসন ঝুলিতে পুড়েছে বাম এবং কংগ্রেস জোট (Left+)। তিপ্রা মোথা পার্টি পেয়েছে ১৩টি আসনে। প্রথমবার ভোটে লড়ে খাতা খুলতে ব্যর্থ তৃণমূল কংগ্রেস। নোটার চেয়েও কম ভোট ঘাসফুল শিবিরের ঝুলিতে। যদিও প্রথমবার ভোটে লড়ে ত্রিপুরায় বিরোধী দলের স্বীকৃতি পাবে তিপ্রা মোথা। ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোট পড়েছিল ৮০%-র বেশি। সেদিন থেকেই ক্ষমতা ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা (CM Manik Saha)। বৃহস্পতিবার তিনি টাউন বরদোলাই আসনে ১১৮০ ভোটে জিতেছেন। মানিক সাহা হারিয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের আশিস সাহাকে।
এদিকে, ত্রিপুরায় ভোট গণনার প্রাথমিক পর্বে বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ছিল বিজেপি। একটা সময় পর্যন্ত ম্যাজিক ফিগার (৩১) থেকে দূরে থাকলেও বেলা বাড়লে সম্পূর্ণ বদলে যায় চিত্র। বিরোধী জোটকে অনেক পিছনে ফেলে ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই ভোটে তিপ্রা মোথা প্রথম থেকেই ফ্যাক্টর। ত্রিপুরায় বিজেপির ঝুলিতে ৩৯% ভোট, বাম এবং কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে ৩৩% ভোট, এক শতাংশের কম ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে।
এদিকে, ভোট গণনায় ফল চূড়ান্ত হওয়ায় এখন দেখার জনজাতি কেন্দ্রিক দল তিপ্রা মোথা বিজেপিকে সমর্থন করে কিনা সেদিকে তাকিয়ে জাতীয় রাজনীতি। ইতিমধ্যে সূত্রের খবর, বিজেপি শিবির থেকে সমর্থনের জন্য তিপ্রা মোথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর মানিক্য দেববর্মার কাছে দূত পাঠানো হয়েছে। ভোটের আগেও এবার গেরুয়া শিবির দৌত্যর জন্য প্রদ্যোত কিশোরের কাছে লোক পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই দৌত্য ব্যর্থ হয়েছে।
অবশেষে বঙ্গ বিধানসভায় কংগ্রেসের প্রতিনিধি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে হাত শিবিরের বিধায়ক শূন্য ছিল বিধানসভা। সেখানে দু'বছর পর সাগরদিঘিতে (Sagardighi By Poll) লাল আর সবুজ আবীরের 'অকাল হোলি'। বিধানসভা উপনির্বাচনে জয় কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের। ২২ হাজার ৯৮০ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী। এই ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ছিলেন বাইরন। জানা গিয়েছে, কংগ্রেস প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৮৫ হাজার ৪৩৭, পাশাপাশি শাসক দলের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৬৩, ০০৩ এবং বিজেপির দিলীপ সাহা পেয়েছেন ২৫,৫০৬টি ভোট। পদ্ম শিবিরের ঝুলিতে ১৪.১১% ভোট। এই উপনির্বাচনে তিন নম্বরে বিজেপি।
কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৭%-এর বেশি। তৃণমূল পেয়েছে প্রায় ৩৮% ভোট। ঘটনাচক্রে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহার মৃত্যুর পর এই আসন ফাঁকা হলে উপনির্বাচন ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের দুই রাজ্যের বিধানসভার সঙ্গে এই আসনে উপনির্বাচন আয়োজিত হয়। ভোট পড়ে প্রায় ৭৪%। প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে সম্পন্ন হয় ভোট।
এদিন ইভিএম খুলতেই ক্রমেই এগোতে শুরু করেন কংগ্রেস প্রার্থী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই লিড ধরে রাখেন জোট প্রার্থী। কংগ্রেসের এই জয় পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুর্শিদাবাদে অনেকটা অক্সিজেন যোগাবে বাম-কংগ্রেসের জোট রাজনীতিকে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশন
প্রসূন গুপ্ত: ত্রিপুরার ভোট আগেই হয়ে গিয়েছিল। সোমবার হয়েছে নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ের বিধানসভা ভোট এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদিঘির উপনির্বাচন। ফলাফল আগামী ২ মার্চ, বৃহস্পতিবার। এখন লক্ষ টাকার প্রশ্ন লক্ষ্মীবারে, লক্ষ্মীপ্রাপ্তি কার হয়! ভোট পর্ব চুকতেই বিভিন্ন চ্যানেল, তাদের নিজস্ব সেফোলজি (নম্বর বিশ্লেষণ) সংস্থাকে দিয়ে বুথ ফেরত সমীক্ষা চালিয়েছে। এই সমীক্ষার পথে অনেকেই বিশ্বাসী আবার অনেকেই বিশ্বাস করে না। কারণ স্যাম্পেল টেস্ট হয় সমগ্র ভোটারদের মধ্যে মাত্র ২-৫ শতাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই। কিন্তু সিএন ক্রমাগত চেষ্টা করেছে মানুষের মনের ভাবনা নিয়ে খবর করতে, তারই বিবরণ খানিকটা এই প্রকার।
প্রথমেই নাগাল্যান্ড, এই রাজ্যের বিষয়ে আগেই জানিয়েছিলাম যে এরা দেশের বাসিন্দা হলেও কোথাও একটা বিদ্রোহ একদা এঁদের মধ্যে বিরাজ করেছে। যদিও এঁরা এখন পুরোপুরি রিপাবলিক অফ ইন্ডিয়ার সার্বভৌম অংশ। ভোট উৎসবের অংশীদার। এখানকার ভোটে দেশের প্রধান দুই দল বিজেপি বা কংগ্রেসকে গত দুই যুগ ধরে খুব একটা ভালো ফল করতে দেখা যায়নি। কাজেই বিজেপি এখানকার স্থানীয় শক্তি এনডিপিপির সঙ্গে জোট বেঁধে ভোট লড়ছে। আপাতত খবর যা তাতে এই জোটকে অর্থাৎ এনডিএ-কে ফের ক্ষমতায় দেখা যেতে পারে।
মেঘালয়, এখানেও জোট সরকার। এখানে সব দল আলাদা হয়ে ভোটে লড়েছে। তাতে করে আবারও ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত। প্রধান দল এনপিপি হয়তো ৬০ আসনের মধ্যে কমবেশি ২৫টি আসনের দাবিদার। এরপর যা বোঝা যাচ্ছে হয়তো তৃণমূল বা কংগ্রেস বেশি আসন পেতে পারে। কিন্তু বিজেপি কোনওমতেই ৩-৫টির বেশি আসন পাবে না। এমনটাই একাধিক একজিট পোল সূত্রে খবর। এনপিপি সরকার গড়তে বিজেপির হাত ধরতে পারে গতবারের মতোই।
এবার জাতীয় রাজনীতির অন্যতম টার্গেট রাজ্য ত্রিপুরা। এখানে আবার দু'টি বিষয় হতে পারে ১) ত্রিপুরার বাঙালিরা, বাংলার মতো কাউকে সরকারে আনলে চট করে সরিয়ে দিতে চায় না
২) সিপিএম-কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়ছে বলে কংগ্রেসের সমর্থকরা বিজেপিকে ভোট দিতে পারে। তবে তিপরা মাথা এবারের যুদ্ধে রাজ্যের 'রাজা'কে প্রচারে নামিয়ে ভোটের রং বদলাতে পারে| অবশ্য সেক্ষেত্রেও বেশি আসন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বিজেপির।
যদি এরপরেও বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হয় তখন কিন্তু অন্য সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছেন ভোট কারবারিরা। শেষের প্রসঙ্গ সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচন। একটা রব উঠেছে এই আসনটি নাকি কংগ্রেস জিততে পারে। বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ তো জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর দল লড়াইয়ে নেই। তবে যদি নীরবে "চুপ চাপ ফুলে ছাপ" হয়ে থাকে তবে ফের তৃণমূল। সব সম্ভাবনার নিশ্চিত জবাব কী, তার জন্য অপেক্ষা ২ মার্চের।