প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার উঠে এল ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার নাম। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রিপোর্ট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ জড়িত। এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দিয়ে ইডির বক্তব্য, মোট সাড়ে ৭ কোটি টাকার দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে ইডি। এই সাড়ে ৭ কোটি টাকার পুরোটাই ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সম্পত্তি। এছাড়া আটটি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। এগুলি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে ইডি।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় এদিন সিবিআই ও ইডি আলাদা আলাদা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গেল বেঞ্চে। বিচারপতি রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর বুধবার ফের এই মামলার শুনানি করবেন। ইডির জয়েন্ট ডিরেক্টর ও ইএসআই হাসপাতালের একজন সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসারকে আগামীকাল, বুধবার আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, ইডির স্ক্যানারে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস ছাড়া আরও চারটি কোম্পানির নাম উঠে এসেছে তদন্তে। চার কোম্পানির ডিরেক্টরদের তলব করেছে ইডি। নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সহ এই চারটি সংস্থা যুক্ত রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এই কোম্পানিগুলি থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে টাকা যেত বলে অনুমান তদন্তকারী আধিকারিকদের।
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশ মতো তাঁর আয়ের উৎস, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের (Leaps and Bounds) ডিরেক্টর পদ নিয়ে একাধিক নথিপত্র অবশেষে জমা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই বিষয়ই ইডির আইনজীবী আদালতে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে জানাতেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ইডিকে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার প্রশ্ন, 'এত ডকুমেন্ট এল কীভাবে? কিছু না থাকলে এত ডকুমেন্ট আসে কি? এত সম্পত্তি ২০১৪-এর পরে কীভাবে? তদন্ত করে দেখা হয়েছে?' ফলে একবার ফের লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর সঙ্গে অভিষেকের যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্ন করতে দেখা গেল বিচারপতি সিনহাকে।
মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নথিপত্র জমা দেওয়ার পরই আদালতে তা জানানো হয়। এরপরই এদিন আদালতে অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন, "এত ডকুমেন্ট এল কীভাবে? কিছু না থাকলে এত ডকুমেন্ট আসে কি? সেগুলি খতিয়ে দেখেছেন? কোথা থেকে এল? এত টাকার উৎস কি সেটা দেখেছেন? সব সম্পত্তি ২০১৪ পরে কীভাবে? এত অল্প সময় কীভাবে হল? আবার নিয়োগ দুর্নীতিও একই সময়। কোনও যোগসূত্র আছে কি?" এসব ব্যাপারে তদন্তকারী সংস্থাকে খোঁজ নিতে বলা হয়।
এরপরই ইডির আইনজীবী জানিয়েছেন, "ইডি খতিয়ে দেখছে। সাংসদ জানিয়েছেন কোন কোম্পানি, সেটি কী প্রস্তুত করে ইত্যাদি লেখা হয়েছে। আমরা যখন দেখি আর্থিক দুর্নীতি, তখন তদন্ত শুরু হয়। সিল কভারে রিপোর্ট দিতে চাই বৃহস্পতিবার।" এরপরই বিচারপতি বলেন, "তদন্ত দ্রুত করুন। অনির্দিষ্টকালের জন্য কাউকে গ্রেফতার করে রাখা যায় না।" ইডির তদন্তে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। কোন পথে তদন্ত, তা জানতে চায় আদালত। এরপরই বিচারপতির নির্দেশ, ১৪ ডিসেম্বর ইডিকে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দিতে হবে। ২০ ডিসেম্বর রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআইও।
অন্যদিকে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে প্যানেল লিস্ট চাইলে বোর্ড যে যুক্তি খাড়া করেছে তাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। পর্ষদ থেকে জানানো হয়েছে, পর্ষদের নিয়োজিত সংস্থার আধিকারিকদের গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তাই আদালতে তথ্য জমা দিতে পারবে না। এই যুক্তি শোনার পরই বিচারপতি ক্ষোভপ্রকাশ করেন ও আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বোর্ডের কাছে প্যানেল লিস্ট রিপোর্ট আকারে চেয়ে পাঠায় কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি ইডি তদন্তের গতি কোন পর্যায়ে জানতে চেয়েও ১৪ ডিসেম্বর ইডির কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সিবিআইকেও তদন্তের রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Recruitment Scam) লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে আরও তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মামলায় শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রুজিরা ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের প্যান কার্ডের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। এবারে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের প্যান কার্ডের তথ্যও খতিয়ে দেখতে তৎপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ফলে এই সংস্থার প্যান কার্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতেই মুম্বইয়ে প্যান কার্ডের সদর দফতর ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিপোজিটরি লিমিটেড (NSDL)-কে চিঠি দিল ইডি।
ইডি সূত্রে খবর, অভিষেক, রুজিরা এবং সুজয় কৃষ্ণের ব্যক্তিগত প্যান কার্ড ছাড়াও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস এর প্যান কার্ড সম্পর্কিত তথ্য জানতে চিঠি দিয়েছে NSDL কে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর আয়-ব্যয় এবং সম্পত্তি নিয়ে আরও খোঁজ করতে শুরু করেছে ইডি। কিছুদিন আগেই ৫ হাজার পাতার যে নথি দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সেগুলোর তথ্য মিলিয়ে দেখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর সংস্থার প্যান কার্ড সংক্রান্ত তথ্যও চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অক্টোবর তিন তারিখ হাজিরা না দিলেও ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব ইডির। ইডি সূত্রে খবর, আগামী সোমবার তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ জন্য এর পূর্বেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করে ইডি। এবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে লিপস এন্ড বাউন্ডস প্রসঙ্গে ওই কোম্পানির সিইও হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করে ইডি। সেই হাজিরা এড়ালেও ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে, পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর মা, বাবাকেও তলব করেছে ইডি।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির তথ্য হাইকোর্টে জমা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। শুধু অভিষেক নয়, বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ মতোই ওই সংস্থার সব আধিকারিকের সম্পত্তির তথ্য বৃহস্পতিবার হলফনামা আকারে জমা দিয়েছে ইডি। উল্লেখ্য, দিন সাতেক আগে বিচারপতি সিনহা অভিষেক-সহ সংস্থার সব আধিকারিকের সম্পত্তির খতিয়ান জমা দেওয়া নির্দেশ দিয়েছিলেন ইডিকে। নির্ধারিত তারিখেই হাইকোর্টে জমা পড়ল খতিয়ান।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর অফিসে তল্লাশি চালানোর সময় ১৬টি ফাইল ডাউনলোডের ঘটনায় পুলিসের অতিসক্রিয়তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন ওঠে আদালতে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, ইডি অফিসারদের নামে জিডি করা হচ্ছে। বারবার তাঁদের নানারকম প্রশ্ন করে বিব্রত করা হচ্ছে। ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিচারপতি সিনহা।
বিচারপতি পুলিসের উদ্দেশ্যে বলেন, 'জিডি কেন করছেন? বিচারাধীন বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেন না আপনারা।' যদিও, সরকারি আইনজীবীর দাবি, ইডি-কে কোনওভাবে হয়রানি করা হচ্ছে না, কোনও পদক্ষেপও করা হচ্ছে না। শুধু একটা স্ক্যামের তদন্ত করা হচ্ছে না। এরপরই বিচারপতি সিনহা পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়, রাজ্যের সব কেসে এভাবেই যেন সুপার অ্যাক্টিভ হয়ে কাজ করেন পুলিশ, এটাই আশা করবেন তিনি।
কলকাতা হাইকোর্টে জোড়া নির্দেশের আগেই আদালত থেকে রক্ষাকবচ পেলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। তবে ইডির দায়ের করা এফআইআর অবশ্য খারিজ করেনি আদালত।
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের পর্যবেক্ষণ, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র গ্রেফতার হওয়ার পরে ইডি কোনও তথ্য প্রমাণ আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। এদিন হাই কোর্ট জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে অভিষেকের ইসিআইআর খারিজের আবেদন অপরিণত অবস্থায় রয়েছে। তাই এই নিয়ে আদালত এখনই কোনও নির্দেশ দেবে না।
স্কুল নিয়োগ মামলা থেকে রেহাই পেতে ইডির এফআইআর খারিজ চেয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ। এই মামলার সঙ্গে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির অফিসে ইডির তল্লাশির বিষয়টিও যুক্ত ছিল। এই মামলায় শুক্রবার অভিষেককে রক্ষাকবচ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলার শুনানিতে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার জন্য তিন দিন সময় চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। বুধবার দুপুরের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সেই মতই এদিন দুপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী জমা দিলেন তার হলফনামা। ইতিমধ্যেই লিখিত বয়ান আদালতে জমা করেছে সব পক্ষই। শুনানি শেষ করে রায়দান স্থগিত রাখল আদালত।
এদিনের মামলায় রাজ্যের আইনজীবী শাশ্বত গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, কলকাতা পুলিসের পক্ষ থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্সের অফিস থেকে যে ১৬ টি ফাইল উদ্ধার করা হয়েছে, সে সম্পর্কে ফরেনসিক রিপোর্ট এই আদালতে জমা পড়েছে। আদালত এ বিষয়ে শুনানিও গ্রহণ করেছে। কিন্তু ইডির পক্ষ থেকে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে আবেদন জানানো হয়েছে, কলকাতা পুলিস তাদের হেনস্থা করছে। একই বিষয় নিয়ে দুটি আদালতে কি করে আবেদন জানায় ইডি? বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, আমার সহযোগী বিচারপতির এজলাসের বিষয় নিয়ে আমি কখনই নির্দেশ জারি করতে পারি না, আপনারা প্রয়োজনে আপিলে যেতে পারেন।
প্রসঙ্গত, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড সংক্রান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনের যৌক্তিকতার মামলায় ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে পূর্ণ রিপোর্ট জমা দেয় CFSL কলকাতা। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, CFSL রিপোর্ট ফাইলের পেনড্রাইভ থাকবে কলকাতা পুলিসে। ১৯ সেপ্টেম্বরের সব পক্ষকে দিতে হবে হলফনামা। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সময় নিয়ে বুধবার জমা দেন হলফনামা। এবার সমস্ত পক্ষের হলফনামা খতিয়ে দেখে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলায় পরবর্তী শুনানিতে কী সিদ্ধান্ত নেয় হাইকোর্ট, সেটাই দেখার।
ফের আদালতে ধাক্কা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মঙ্গলবার নিয়োগ দুর্নীতি ও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলার শুনানিতে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বাড়তি আরও তিন দিন সময় চান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। যদিও তার আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত। এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, আজকের মধ্যে সব পক্ষের লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার কথা ছিল। ফলে আরও তিন দিন অতিরিক্ত সময় দেওয়া যাবে না। এর পরেই বুধবার দুপুরের মধ্যে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি ঘোষ। অন্যদিকে এদিনই আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। বুধবার বিকেলেই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড সংক্রান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনের যৌক্তিকতার মামলায় হাইকোর্টে পূর্ণ রিপোর্ট জমা দেয় CFSL কলকাতা। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, CFSL রিপোর্ট ফাইলের পেনড্রাইভ থাকবে কলকাতা পুলিসে। ১৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির আগে সব পক্ষকে দিতে হবে হলফনামা। সেই নির্দেশ ইডির পক্ষ থেকে পালন করা হলেও অভিষেকের আইনজীবী ৩ দিনের অতিরিক্ত সময়ের জন্য আবেদ জানান। যদিও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ অভিষেক মনু সিংভির আবেদনে সাড়া না দিয়ে বুধবার বিকেলের মধ্যেই লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। দ্রুত শুনানির আর্জি জানান বিরোধী শিবিরের নেতারা।
রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্ট এবিষয়ে সরাসরি কোনও নির্দেশ না দিলেও ইডি মৌখিকভাবে জানিয়েছিল, অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। এবার আধিকারিকদের জন্য রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিল ইডি। সেই মামলার শুনানিতে ইডিকেও মৌখিক আশ্বাসবানী দিয়েছে আদালত। হয়রানি করতে বারণ করা হয়েছে।
চাকরি দুর্নীতি মামলায় লিপস এ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালায় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সেসময় ওই অফিসের একটি কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেন এক তদন্তকারী অফিসার। সেনিয়ে অভিযোগও দায়ের হয়েছে লালবাজারে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও আধিকারিকের বিরুদ্ধে যাতে কড়া পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তার জন্যই আদালতে রক্ষাকবচ চেয়েছিল ইডি।
বৃহস্পতিবার সকালেই হাইকোর্টে দারস্থ হয়েছিল তারা। এবিষয়ে আদালতের বাইরে ইডি-র আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদি জানিয়েছেন, বাংলায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ইডি কর্তাদের। এমনকী বারবার ডেকে পাঠিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এপ্রসঙ্গে আদালতে ইডি জানিয়েছে, অতীতে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন ওই ১৬টি ফাইল নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে কোনওভাবেই গ্রাহ্য হবে না। কিন্তু কলকাতা পুলিশ তারপরেও হেনস্থা করছে।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের (Leaps and Bounds) সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সম্পত্তির খতিয়ান দেখবে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) সাতদিনের মধ্যে সমস্ত হিসেব জমা দিতে হবে আদালতে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে সেরকমই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে ইডির কাছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার বেশ কয়েকটি বিষয় জানতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রথমত, সিইও অভিষেকের সম্পত্তির খতিয়ান চেয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। মোট ৭ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, ওই সংস্থার সব সদস্যদেরই সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে ইডিকে। একইসঙ্গে সংগঠনের স্মারকলিপি, সংস্থার রেজিস্ট্রেশনের তারিখও জানাতে হবে ইডিকে।
বিচারপতি সিনহার আরও নির্দেশ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যে সব টলি অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের নাম উঠে আসছে, তাঁদেরও সম্পত্তির খতিয়ান রিপোর্ট হিসেবে জমা দিতে হবে ইডিকে। বিচারপতি সিনহার এই নির্দেশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ (Leaps And Bounds) কোম্পানির অফিসে ডাউনলোড করা ১৬টি ফাইলে লুকিয়ে কোন রহস্য, তা জমা পড়েছে আদালতে। সূত্রের খবর, ওই ১৬টি ফাইলেই রয়েছে কলকাতার সমস্ত হস্টেলের তালিকা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। জানা যাচ্ছে, সেই হস্টেলগুলির ঠিকানা হাওড়া-সহ কলকাতা ও শহরতলির একাধিক জায়গার। সূত্রের খবর, মঙ্গলবারই সিল বন্ধ খামে কলকাতা হাইকোর্টে হার্ডকপি জমা দিয়েছে সিএফএসএল। বুধবারই ইডি (ED) দফতরে হাজিরা দিয়েছেন ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ কোম্পানির ‘সিইও’ তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banrjee)।
প্রাথমিকভাবে ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট জমা করেছিল কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি টিম। সেখানেও হস্টেলের কথাই উল্লেখ ছিল। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সেসময়েই নির্দেশ দিয়েছিলেন ১২ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করতে হবে। সেই মোতাবেক মুখ বন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেন গোয়েন্দারা।
কলকাতা হাইকোর্টে ফের ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি। সোমবার এক মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড করা বিতর্কিত ১৬টি ফাইল তথ্য প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। এই ব্যাপারে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, ওই ১৬টি ফাইলকে অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থাও ব্যবহার করতে পারবে না।
এদিন আলিপুরে এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে তাঁর পরিবারকে হেনস্থা করার ফের অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, তদন্তের নামে ইচ্ছাকৃত ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবারকে হেনস্থা করছে ইডি এবং সিবিআই।
এরপরেই সোমবার বিকেলে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, ওই ১৬টি ফাইল সম্পর্কে নির্দেশ রিপোর্ট দিতে হবে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি। মঙ্গলবারের মধ্যে এই রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে এই মামলার ফের শুনানি হতে পারে। এদিন আদালতে এই মামলায় ইডির তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। এই ব্যাপারে আগেই সিএফএসএল থেকে এই ফাইলগুলি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইডি এবং কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল