গণতন্ত্রের উৎ'শব' পালনে মুর্শিদাবাদ যেন মডেল। যদিও গোটা রাজ্যেই মৃত্যু, হিংসা, ভোট বিভিন্ন জেলার তুলনায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে যদিও মুর্শিদাবাদ অনেকটা এগিয়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election 2023) আবহে উত্তপ্ত বাংলা (West Bengal)। শনিবার সকাল থেকে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসের ছবি। ঝরল রক্ত, চলছে দেদার ছাপ্পা ভোট। সকাল থেকে প্রাণ গেল বহুজনের। ফলে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। ফলে মুর্শিদাবাদের চেনা ছবিই ফের প্রকাশ্যে। ভোট গ্রহণের সকাল থেকে এখনও অবধি মুর্শিদাবাদে প্রাণ গেল ৪ জনের। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০। তৃণমূলের মোট ৪ জন, কংগ্রেসের ৩ জন, সিপিএম-এর ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও দিকে দিকে বুথ দখল, ব্যালট লুঠ, বোমা ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে আসছে।
কোথাও পিটিয়ে খুন, কোথাও গুলিবিদ্ধ। ভোট ঘোষণার পর রাজ্যে মুর্শিদাবাদে খুন দিয়ে রাজ্যের হিংসার শুরু হয়। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার রতনপুরে ভোট ঘোষণার পরেই ৯ই জুন খুন হয় কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। এরপর থেকে মুর্শিদাবাদে হিংসার শুরু। শনিবার সকালে রেজিনগর থানার নাজিরপুরে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিন শেখ নামে এক শাসক দলের কর্মীর। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিনের। অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে। এছাড়াও সকালে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামেও একটি ফাঁকা জমি থেকে তৃণমূল কর্মী সাবিরুদ্দিন শেখের দেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার রাতেই রাজনৈতিক হিংসার বলি হন তৃণমূলের কর্মী বাবর আলি। অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে। আবার লালগোলা থেকেও আর এক মৃত্যুর খবর এসেছে। জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রওশন আলী। এটা লালগোলার ময়া অঞ্চলের ১৫ নম্বর বুথের সামনের ঘটনা। অভিযোগ, লালগোলায় ভোট দিতে যাওয়ার সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সিপিএম কর্মী রওশন আলীর মাথায় লাঠি দিয়ে মারে। তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এছাড়াও রানীনগর ১ নম্বর ব্লকের হেরামপুর ১৪৩ ও ১৪৪ নম্বর বুথ দখল করে ছাপ্পার পাশাপাশি বোমা ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় চারজন গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তাঁদের দাবি, 'ভারতের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দিতে হবে আমাদেরকে, আমরা ভোট চাই ভোট দিতে চাই। আমাদের নিজের ভোট নিজেরা দেব।' তাঁরা অভিযোগ করছেন, ইসলামপুর থানার পুলিস ও তৃণমূল বাহিনীরা সকাল থেকে ১৪৩ নম্বর এবং ১৪৪ নম্বর বুথে গ্রামবাসীদের প্রবেশ করতে দেয়নি। তৃণমূল বাহিনী নিজেরাই সবার ভোট দিচ্ছে।
আবার বহরমপুরে অন্য এক দৃশ্য দেখা গেল। বহরমপুরের গোয়ালজান গার্লস হাই স্কুলের ২১২ ও ২১৩ নম্বর ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ঘটায়, ব্যালট বাক্স ছুঁড়ে দেওয়া হয় ভাগীরথী নদীতে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালের দিকে শান্তিপূর্ণ ভোট চলছিল। হঠাৎই তৃণমূলের কিছু দুষ্কৃতীরা বুথ দখল করে, চলে ছাপ্পা ভোট। ঘন্টা খানেকের মধ্যে সব ছাপ্পা ভোট হয়ে যায়। পরে যখন তৃণমূলের লোকজন ওই বুথ ছেড়ে চলে যায়, এই অবস্থা দেখে বিজেপি সমর্থকেরা ব্যালট বাক্স ভাগীরথী নদীতে ফেলে দেয়। অন্যদিকে উত্তপ্ত ইসলামপুরের ঘুঘুপাড়া। বিরোধীদের কাউকেই ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ। প্রচন্ড গোলাগুলি চলার কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা কিছু মহিলা, ভয়ে তাঁদের বাড়িও ফিরতে পারছে না বলে সূত্রের খবর।
আবার বেলডাঙা থানা অন্তর্গত বিষণনগর টিটি প্রাইমারি স্কুলে ৪৮ নম্বর বুথেও ভোটের আগেই বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, পুলিসের মদতে শাসকদলের পক্ষ থেকে বুথ দখল হয়ে যায়। ভরতপুর এক নম্বর ব্লকের সৈয়দকূলুট গ্ৰামে ৯৬ ও ৯৭ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ। সাধারণ মানুষ পুলিসের সঙ্গে প্রথমে বাতবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে যা পরে রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। পুলিসকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টিও। ভরতপুর এক নম্বর ব্লকের সিজগ্রাম পঞ্চায়েতের মনসুরপুর গ্রামের দুটি বুথে ভোটারদের প্রভাবিত করা, হুমকি দেওয়া ও বুথ দখলের অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। চোয়াপাড়া অঞ্চলের কীর্তনিয়াপাড়া বুথে ছাপ্পা ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফলে ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুর্শিদাবাদের এই পরিস্থিতি, তাই এর পরে আর কী কী ঘটতে চলেছে, তাই এখন দেখার।
অর্ধেক নির্বাচন সম্পূর্ণ। আর এই নির্বাচনের মধ্যেই জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে মারধর, ছাপ্পা ভোট, ব্যালট বক্সে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, গুলি, বোমাবাজির মত ঘটনা। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের জেলায়গুলিতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিত তৈরি হয়েছিল। তারপরেই মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি, মারধর শুরু হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আহত-নিহতও হয়েছেন বহু। ঠিক একইভাবে কোচবিহারের প্রত্যেক বুথেই শুরু হয়েছে অশান্তি। তবে কোচবিহারের দিনাহাটতে এই নির্বাচন নিয়ে একটু বেশিই উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দিনহাটার ভিলেজ ওয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীরপাট স্কুলে বিজেপি কর্মীকে গুলির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় চিরঞ্জিত কাজী, রাধিকা বর্মন নামের দুই বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ইতি মধ্যেই চিরঞ্জিত কাজীর মৃত্যু হয়েছে। এখনও অবধি রাজ্যে ভোট ঘোষণা হবার পরে কোচবিহারে মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ অর্থাৎ নির্বাচনের দিনে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা ফলিমারি গ্রাম ৪/৩৮ নম্বর বুথ কেন্দ্রে বোমাবাজি। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ভোট কেন্দ্রের বাইরে বিজেপির এজেন্ট মাধব বিশ্বাস নামের ওই ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। দিনহাটা নিউ গীতালদাহ এলাকায় চলল গুলি আহত ৩ জন বিজেপি কর্মী। এই ঘটনার পরেই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ নজরুল শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে। ভোট কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ভোট কর্মীরা৷ কোচবিহারের বেশ কিছু জায়গায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছে। কোচবিহারের মাথাভাঙা ১, ২ এবং ১৯৭ নম্বর বুথে আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের বলরামপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের নন্দী ছেচুড়া ৮/২১৭ বুথে ভোট বয়কট।
এমনকি গোটা কোচবিহার বিহার জুড়ে ব্যালট বক্স চুরি করার অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। মূলত ছাপ্পা ভোট দিয়ে শাসক দলকে জয়ী করতেই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে শাসক দল, এমনটাই অভিযোগ। তবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছে বিরোধী দলের কর্মীরা। এত গুলি, বোমাবাজি, মারধরের পরেও বুথের বাইরে দেখা মিলছে না কেন্দ্রীয় বাহিনীর। সব মিলিয়ে বেশ এখন উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে কোচবিহার।
মণি ভট্টাচার্য: রাজ্য জুড়ে নির্বাচনী হিংসায় (Electoral Violence) মৃত্যুর সংখ্যা যেন লাফিয়ে বাড়ছে। নির্বাচনী হিংসায় উত্তর-দক্ষিণের সমস্ত জেলাগুলিতেই ক্রমশ ভারী হচ্ছে বাতাস, বোমা ও বারুদের গন্ধে প্রতিটা জেলা বুঝিয়ে দিচ্ছে বাংলায় নির্বাচনের (Election)নামে কিভাবে প্রহসন হচ্ছে। এখনও অবধি নির্বাচনী হিংসায় রাজ্যে এগিয়ে মুর্শিদাবাদ। কেবল ভোটের দিন অর্থাৎ আজ হিসেব করলে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। পাশাপাশি মালদা, কোচবিহারও টেক্কা দিচ্ছে মৃত্যু ও হিংসা নিয়ে। এখনও অবধি রাজ্যে ভোট ঘোষণার পর ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে আজ অর্থাৎ শনিবার ভোটের দিনই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। আপাতত এটুকু বলা চলে যে গণতন্ত্রের রক্তোল্লাস চলছে..
ভোটের দিন এখনও অবধি কোথায় কত মৃত্যু হল!
# শনিবার সকালে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থানার নাজিরপুরে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিন শেখ নামে এক শাসক দলের কর্মীর। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিনের। অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে।
# ভোটের সকালে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামেও একটি ফাঁকা জমি থেকে তৃণমূল কর্মী সাবিরুদ্দিন শেখের দেহ উদ্ধার হয়। এই সাবিরুদ্দিন শেখ কংগ্রেস কর্মী খুনে মূল অভিযুক্তের বাবা। অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে।
# মুর্শিদাবাদের নওদায় কংগ্রেস কর্মী খুন। কংগ্রেসকর্মী মৃত্যু প্রবীণ লিয়ায়কত আলি দেহ উদ্ধার। অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে। পাড়ার মানুষের সঙ্গে ভোট দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই কংগ্রেস কর্মী। অভিযোগ, সেই সময় তাদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে নিয়ে আসা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে ওই কংগ্রেস কর্মীর।
# মুর্শিদাবাদের লালগোলায় সিপিআইএম সমর্থক রওশান আলীর মৃত্যু। বুথের বাইরে বের করে এনে পিটিয়ে খুন। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
# কোচবিহারের ফলিমারিতে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে গুলি করে খুন। নিহত বিজেপির পোলিং এজেন্ট মাধব বিশ্বাস। শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুলি করে খুনের অভিযোগ।
# কোচবিহার দিনহাটা ৭/২৬২নম্বর বুথে গুলিবিদ্ধ হয় দুই বিজেপি কর্মী। গুলি বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল চিরঞ্জিত কাজী নামক বিজেপি কর্মীর। অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।
# উত্তর ২৪ পরগনার কদম্বগাছিতে নির্দল প্রার্থীর সমর্থককে খুন। মৃতের নাম আব্দুল্লা আলী। খুনের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলার অভিযোগ। বাঁশ-লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারার অভিযোগ।
# মালদহের মানিকচকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি মহম্মদ নাসিরের কাকা শেখ মালেক। পায়ে গুলি লেগে আহত হয়েছেন নাসিরও। অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে।
# মালদহের ফুলবেড়িয়ার নঘড়িয়াতে বোমার আঘাতে মৃত্যু তসলিমা বেউয়া নামের এক বৃদ্ধার। তিনি স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থীর শাশুড়ি। অভিযোগ কংগ্রেসের দিকে।
# পূর্ব বর্ধমান রাজিবুল হক, আউসগ্রাম২ ব্লকের বিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথে শুক্রবার সিপিএম কর্মী তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের আক্রমণ।
# রাজ্যে এবার ভোটের বলি হলেন খোদ ভোটারই। ভোট দিতে গিয়ে মৃত্যু হল হামজার আলি আল সোনা নামে এক ব্যক্তির । যদিও, শাসকদলের দাবি, মৃত ব্যক্তি তাঁদের কর্মী। জানা গিয়েছে, ভোটের লাইনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনা ছড়ায় নদিয়ার চাপড়ার একটি বুথে। সেখানেই গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর।
# কাটোয়ায় তৃণমূল এজেন্ট গৌতম রায় খুন, তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ সিপিআইএমের বিরুদ্ধে।
# দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ফুল মালঞ্চ এলাকায় খুন বোমার আঘাতে মৃত্যু তৃণমূল কর্মীর। মৃত তৃণমূল কর্মী আনিসুর অস্তাকার। অভিযোগের তীর আইএসএফের দিকে।
# দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূলের বিদায়ী প্রধানের স্বামী খুন। গোয়ালপোখোর ২ ( চাকুলিয়া) বিদ্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেবরা ১০ নং বুথের ঘটনা। ৩৫ বছরের মহম্মদ সাহেনশার মৃত্যু। কংগ্রেস-তৃণমূলের সংঘর্ষে মৃত্যু।
# উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায় তৃণমূল কর্মী খুন।
মণি ভট্টাচার্য: শনিবার বেলা সাতটা থেকে কথামতো শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলা ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election)। কিন্তু বারংবার পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ই গোটা দেশকে চিনিয়েছে যে বাংলায় নির্বাচন কখনও অবাধে শান্তিপূর্ণ হয় না। ঠিক সেই ধারাই বহাল রাখল পশ্চিমবঙ্গ। গোটা রাজ্যজুড়ে প্রত্যেক জেলায় কমবেশি রিগিং, প্রিজাইডিং অফিসারকে মারধর, ছাপ্পা, ব্যালট লুঠ ও সংঘর্ষের পাশাপাশি খুনের অভিযোগ উঠে এসেছে। এখন প্রশ্ন উঠছে কোথায় পুলিস! কোথায় বা কেন্দ্রীয় বাহিনী?
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যে শুক্রবার রাত অবধি ৬০০-এর অধিক কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে কার্যকরী কেন্দ্রীয় বাহিনী অর্থাৎ আধা সামরিক বাহিনীর সংখ্যা প্রায় ৪২০০০। সেক্ষেত্রে কোথায় সেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের মনে।
পঞ্চায়েত ভোট শুরুর পর থেকে এখনও অবধি সাত জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সকাল থেকেই হিংসা মারধর ও বেলাগাম ছাপ্পার অভিযোগ উঠে এসেছে। কোথাও ভোট কর্মীদের মারধর, কোথাও ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে, ফলত এটা স্পষ্ট যে বাংলা তার চেনা রূপই দেখালো। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই ৪২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় গেল? রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভোটে স্পর্শকাতর কেন্দ্রগুলোতেও কোনোভাবেই সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা নেই। এ বিষয়ে বিভিন্ন জেলা পুলিস আধিকারিকদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ভোটগ্রহণের শুরুর চার ঘন্টা পর এখনও অবধি শনিবার মৃতের সংখ্যা ৭, এবং পাশাপাশি সূত্রের খবর অনুযায়ী, ১২ শতাংশ ভোট পড়েছে এবং এখনও অবধি নির্বাচনী হিংসায় আহত কমপক্ষে ১০০ জন।
মণি ভট্টাচার্য: রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা, কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election) ঘোষণা করেন গত মাসের ৮ই জুলাই। ভোট ঘোষণার পর থেকে আজ অর্থাৎ শুক্রবার ৩০ দিন অতিক্রান্ত। ৩০ দিনে এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে ততক্ষণ বাংলা ২১ জনকে হারিয়েছে কেবল পঞ্চায়েত নির্বাচনের খাতিরে। কোথাও বা হিংসা, কোথাও পঞ্চায়েতের টিকিট, আবার কোথাও বোমা বাধতে গিয়ে। মোটের উপর এই বাংলায় ভোট যে রক্তক্ষয়ী সেটা স্পষ্ট।
এক নজরে দেখে নিন এখনও অবধি হওয়া মৃত্যুর পরিসংখ্যান
৯ই জুন
কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখকে গুলি করে খুন। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার রতনপুরে। অভিযোগের তীর শাসকদল তৃণমূলের দিকে।
১৫ই জুন
ভাঙ়ড়-১ এবং ২ ব্লকের বিডিও অফিস রণক্ষেত্র আইএসএফ ও তৃণমূল সংঘর্ষে। দুপক্ষের গুলিতে মৃত ১ আইএসএফ ও ২ তৃণমূল কর্মী। আইএসএফ কর্মীর নাম মইনউদ্দিন। ও দুই তৃণমূল কর্মীর মধ্যে একজনের নাম রশিদ মোল্লা, অন্যজনের পরিচয় পাওয়া না গেলেও এ দিন ওই এলাকায় এই ব্যক্তির থেতলানো দেহ উদ্ধার হয়।
১৫ই জুন
মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম হজবিবিডাঙা গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতিকে পিটিয়ে এবং গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। মোজাম্মেল শেখ হজবিবিডাঙা অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। অভিযোগ কংগ্রেস ও সিপিআইএমের দিকে।
১৭ই জুন
মালদার সুজাপুরে তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ। মৃতের নাম মোস্তফা শেখ। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধান ছিলেন মোস্তাফা শেখ। মালদার কালিয়াচক থানার সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন মোস্তফা শেখ। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলেই খুন বলে সূত্রের খবর।
১৮ই জুন
কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার টিয়াদহ গ্রামের ঘটনা, রাতভর নিখোঁজ থাকার পর বিজেপি প্রার্থীর আত্মীয় তথা প্রস্তাবকের মৃতদেহ উদ্ধার। মৃত বিজেপি প্রার্থীর আত্মীয়ের নাম শম্ভু দাস। শম্ভুকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে।
২১ই জুন
উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় ১৫ই জুন সিপিআইএম-কংগ্রেসের মিছিলে গুলি চালানোর অভিযোগ, গুলিবিদ্ধ হয় মানসুর আলম। ৬ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর, অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।
২২ই জুন
পুরুলিয়ার আদ্রায় টাউন তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবেকে গুলি করে খুনের অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস ও বিজেপির দিকে অভিযোগ থাকলো ৫ দিনের মাথায় এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিস।
২৪ই জুন
বেলডাঙা থানার মধ্যমপুর নতুনপাড়া এলাকায় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে প্রাণ যায় একজনের। সূত্রের খবর, এলাকার পাটের জমিতে বোমা বাঁধছিল আলিম শেখ সহ বেশ কয়েকজন। সেই সময় আচমকা বোমা ফেটে গেলে গুরুতর আহত হয় বেশ কয়েকজন। ঘটনায় মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। মৃত ব্যক্তির নাম আলিম শেখ।
২৭ই জুন
কোচবিহারের দিনহাটার গীতালদহে ধরলা গ্রামে তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মী খুন। মৃত ওই তৃণমূল কর্মীর নাম বাবু হক।
২৯ জুন
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার ৯ নম্বর বলপাই অঞ্চলের পানিথর বুথ এলাকায় বাড়ি থেকে উদ্ধার বিজেপির বুথ সভাপতির ঝুলন্ত দেহ। মৃত বিজেপি কর্মীর নাম দীপক সামন্ত। এ ঘটনায় অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।
১লা জুলাই
বাসন্তীর গাগরামারি গ্রামে যুব তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুন করা হয়। মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম জিয়ারুল মোল্লা। এলাকার তৃণমূল এবং নির্দল প্রার্থীর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি। অভিযোগের তীর নির্দল গোষ্ঠী অর্থাৎ তৃণমূলের অপর এক গোষ্ঠীর দিকে।
৩রা জুলাই
# ভোররাতে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার শালিপুরে বোমা বিস্ফোরণে মৃত ১ তৃণমূল কর্মী। মৃত ব্যক্তির নাম পরিতোষ মণ্ডল।
# বিজেপি নেতার রহস্যমৃত্যু পুরুলিয়ায়। মানবাজার এলাকার ঘটনা। সোমবার সকালে কেন্দডি গ্রামের কাছে একটি ছোট নদীর পাড় থেকে ওই বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের নাম বঙ্কিম হাঁসদা। তিনি মানবাজার ২ ব্লকের হেঁসলা সংসদের কেন্দডি বুথে বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।
৪ঠা জুলাই
দেগঙ্গায় তৃণমূলের মিছিলে বোমা ছোড়ার অভিযোগ, মৃত্যু ১৭ বছরের স্কুল পড়ুয়ার। মৃত পড়ুয়ার নাম ইমরান হোসেন। মৃত ইমরান এলাকার তৃণমূল কর্মীর ভাইপো। অভিযোগের তীর আইএসএফের দিকে।
৬ই জুলাই
# ৩রা জুলাই কুলপির দক্ষিণ গাজিপুরে ওই কংগ্রেস কর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রচারের সময় হামলা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তারপর কলকাতায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত কংগ্রেস নেতার নাম আলফাজুদ্দিন হালদার। তিনি এলাকায় কংগ্রেসের বুথ সভাপতি ছিলেন। এ ঘটনায় অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।
# নির্দল প্রার্থীর স্বামীকে খুনের অভিযোগ বীরভূমে। মৃত ওই ব্যক্তির নাম দিলীপ মাহারা। নিহত ওই ব্যক্তি বিজেপি কর্মী বলে দাবি তাঁর স্ত্রীর। বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের হিংলো অঞ্চলের সেরেন্ডা গ্রামে ওই বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী ছবি মাহারা বিজেপির টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়ছেন। এ ঘটনায় অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।
# ফের মুর্শিদাবাদে বোমা বাঁধতে গিয়ে বোমা ফেটে মৃত্যু হল একজনের। ঘটনাটি ঘটেছে বেলডাঙা থানার মহেশপুরে। বোমা বাঁধতে গিয়ে বোমা ফেটে মৃত্যু হল কামাল শেখ নামে এক ব্যক্তির।
৭জুলাই
# মুর্শিদাবাদের রাণীনগর রায়পুর গ্রামে কংগ্রেস কর্মী খুন। মৃত কংগ্রেস কর্মীর নাম অরবিন্দ মন্ডল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ।
# দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের দ্বীপখন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁড়ালহাট এলাকায় এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর। দাঁড়ালহাটের সমীর বর্মন (৩৪) নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য। তৃণমূলের দাবি সমীর তৃণমূল কর্মী। অভিযোগ বিজেপির দিকে।
গোধরা মামলায় (Godhra train burning case) ৮ জন সাজাপ্রাপ্তকে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। তবে চার সাজাপ্রাপ্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ছিল মামলার শুনানি। সেদিনই এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্তরা ১৭ বছর জেলে রয়েছেন, সেদিকে তাকিয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই তাঁদের জামিন দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরা স্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসের S-6 কামরায় অগ্নিকাণ্ডে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়। এদের অনেকেই ছিলেন করসেবক। অযোধ্যা থেকে ফেরার পথে তাঁরা ওই ঘটনার শিকার হন। তার জেরে সমস্ত গুজরাটে ছড়িয়ে পরে হিংসা। ঠিক তার পরের দিন গান্ধীনগরের পালিয়াদ গ্রামে জ্বলে ওঠে গোষ্ঠী হিংসার আগুন। আক্রান্ত হয় বহু সংখ্যালঘু পরিবার। অভিযোগ ছিল যে, গোধরার সেদিনের ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছিল অভিযুক্তরা। ট্রেনের ওই কামরায় আগুন লাগানো হয়েছিল এবং ট্রেন লক্ষ্য করে পাথরও ছোঁড়া হয়েছিল।
শুক্রবার যে ৮ জনকে জামিন দেওয়া হল, তাঁরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত। এই মামলায় মোট ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল নিম্ন আদালত। ২০ জনকে শোনানো হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা। যে ৪ জনের জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে, তাঁদের ফাঁসির সাজা খারিজ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টই।
সাম্প্রতিক হিংসার কারণ অনুসন্ধানে তিন দিনের রাজ্য সফরে এসেছিল কেন্দ্রীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি (Fact Finding Committee)। তারা শিবপুর এবং রিষড়া যাওয়ার চেষ্টা করলেও ১৪৪ ধারার দোহাই দিয়ে এই দলকে আটকায় পুলিস। গোটা ঘটনার জন্য রাজ্য প্রশাসন তথা পুলিসকে কাঠগড়ায় তোলে এই অনুসন্ধান দল। এবার ফ্যাক্ট কমিটির এই বঙ্গ সফরকে কটাক্ষের সুরে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এদিন তিনি প্রশ্ন করেন, 'এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কে গড়েছে? সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, কোনও সরকার, না কোনও দল? যদি কোনও দল এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গড়ে, তবে তার কোনও মূল্য নেই। ফেসলেস, ভ্যালুলেস কমিটি।'
তিনি জানান, 'একটা নন-ইস্যুকে ধর্মীয় ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে। এটা ধর্মীয় বিষয় নয়, দুষ্কৃতীমূলক কর্মকাণ্ড। কেউ মারা যায়নি, কেউ আহত হয়নি। পুলিস মিছিলের অনুমতি দেয়নি। নমাজের সময়ে মিছিল বের করে ইন্ধন জুগিয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র, বুলডোজার, ট্রাক্টর নিয়ে কেন ধর্মীয় মিছিল করবে? উন্মত্তের মতো নৃত্য করেছে। মুঙ্গের থেকে লোক এনেছে, বাইরের লোক এনে এসব করেছে। আমাদের এখানকার লোকেরা সবাই একসঙ্গে থাকে।'
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছে বিজেপি। দলের সাংসদ দিলীপ ঘোষ জানান, 'সারা রাজ্যজুড়ে উৎপাত চলছে। আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা, মহিলা-শিশুদের উপর অত্যাচার চলছে। দেশে বাংলার বদনাম হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আছে খোঁজ-খবর নেওয়ার এবং জানার কেন এরকম হচ্ছে।'
প্রসূন গুপ্ত: রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে পেয়ে বঙ্গের মানুষ অখুশি এমন দাবি কেউই করবেন না। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে, বোস যথেষ্ট নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলার মানুষ। এই রাজ্যপালের গুণ, তিনি সমস্ত দলের কথা শোনেন এবং সেই প্রেক্ষিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেন। সাধারণত পশ্চিমবঙ্গে বাম আমল থেকে যত রাজ্যপাল এসেছেন, বোস কিন্তু তাঁদের থেকে একটি বিষয়ে ব্যতিক্রম। সংবিধান মেনে প্রশাসনকে নিয়ে চলা। তিনি দীর্ঘদিন প্রশাসনে ছিলেন ফলে অভিজ্ঞতা তাঁর টাটকা। তাঁকে চাপ দিয়ে কাজ হাসিল করা কঠিন, তা তৃণমূল বাম কিংবা বিজেপি হোক না কেন।
সম্প্রতি হাওড়া এবং রিষড়াতে রামনবমী মিছিলকে কেন্দ্র করে যে যে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে তা নিজে উপস্থিত থেকে সরেজমিন তদন্ত করছেন আনন্দ বোস। যদিও বাম দলগুলি এই কাণ্ডকে ধর্মীয় মেরুকরণের বলে দাগিয়েছে। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে তৃণমূল-বিজেপিকে। তারা বলেছে যে, ধমীয় মেরুকরণ করে আসন্ন ভোটগুলিতে ফায়দা তুলতে চাইছে এই দুই দল। সে যাই হোক না কেন সম্পূর্ণ বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে গিয়েছে এবং তারপর বিষয়টি দেখতে গিয়েছেন রাজ্যপাল নিজেই।
এটি নিয়ে কোনও রকম রাজনীতি হোক সে বিষয়ে রাজ্যপাল সজাগ ছিলেন। খবর, তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে রিষড়া না যেতে অনুরোধ করেন। সুকান্তবাবু রাজ্যপালকে সম্মান জানিয়ে অকুস্থলে যাননি। কিন্তু গিয়েছেন রাজ্যপাল এবং দেখে এসেছেন সবই। তিনি পরিবেশ শান্ত রাখতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সুকান্ত মজুমদার রাজ্যপালের অনুরোধ রাখলেও, কিছুটা আক্রমণাত্মক রাজ্যের বিরোধী নেতা। যদিও তাঁর এই সমালোচনা শুনে রাজ্যপাল মিষ্টি হেসে জানান, 'কেউ সমালোচনা করতে পারেন, অতি সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু দ্বিচারিতা করবেন না।' তাঁর এই প্রতিক্রিয়ার ওপারে কে? কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যপাল আরও বলেন, 'তাঁর কাজ বন্ধু ও পথপ্রদর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালন করা। একইসাথে রাজ্য প্রশাসক যেন সংবিধান মেনে কাজ করেন সেটাই দেখা।'
পরপর দু'দিন, শিবপুরের পর এবার রিষড়ায় (Rishra Violence) ঢুকতে বাধা বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে (Sukanta Majumder)। কোন্নগরে পুলিসি ব্যারিকেড গড়ে ঢুকতে বাধা বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদকে। ১৪৪ ধারা জারির কারণ দর্শিয়ে কোন্নগরেই সুকান্ত-সহ বিজেপির প্রতিনিধি দলকে আটকে দেয় পুলিস (Hooghly Police)। তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। ব্যারিকেড ভাঙতে পুলিসের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। জানা গিয়েছে, তিনি সোমবার উত্তরপাড়ার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষকে দেখতে যান।
সেখান থেকে রিষড়ায় ঢোকার মুখে ব্যারিকেড গড়ে পুলিস বাধা দেয় সুকান্ত মজুমদারকে। এই প্রসঙ্গে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি বলেন, 'মানুষদের উপর হামলা হয়েছে। আমাদের সাংসদরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানাবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও টিএমসি সাংসদ ঘুরছেন। কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কর্মী, যারা আক্রান্ত, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ১৪৪ যেখানে নেই সেখানেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ কাশ্মীর হয়ে গিয়েছে। বোমাবাজি চলছে। আইনশৃঙ্খলা কোথায়?' পুলিস কথা না শুনলে ধর্নায় বসবো বলেও হুঙ্কার ছাড়েন তিনি। তিনি ফিরে গিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাবেন। তাঁর সঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কথা হয়েছে বলে সোমবার জানান সুকান্ত মজুমদার।
এদিন পুলিসের সঙ্গে বচসায় জড়ান সুকান্ত মজুমদার। পুলিসি বাধার মুখে পড়ে বিজেপি সভাপতির আবেদন, 'আপনারা কিছু করুন। মার খেলে, বোমাবাজি হলেও কিছু করবেন না? ১৪৪-র বাইরে আপনারা কীভাবে আটকাচ্ছেন?' কোন কোন জায়গায় ১৪৪ ধারা, সেই অর্ডার পুলিসকর্তাকে দেখাতে বলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি। যদিও পুলিসের আবেদন, '১৪৪ জারি রয়েছে আপনারা সহযোগিতা করুন। আপনারা পরে অনুমতি নিয়ে নিশ্চয় যাবেন। ওই এলাকাতেই যাওয়া যাবে না।' যদিও রিষড়ায় যেতে অনড় সুকান্ত মজুমদার।
রামনবমীর মিছিলকে (Ram Navami Rally) ঘিরে তপ্ত হয়েছে হাওড়ার শিবপুর-হুগলির রিষড়া (Shibpur-Rishra Row)। ক্রমেই ছন্দে ফিরছে শিবপুর, তবে উত্তেজনা জিইয়ে রয়েছে রিষড়ায়। এবার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে এবং হিংসার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে জনস্বার্থ মামলা কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court)। এই মামলায় রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের। বুধবার
মামালার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন তিন জায়গার রিপোর্ট তলব করেছে হাইকোর্ট। জানা গিয়েছে মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাওড়ার শিবপুর ও উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলার পরিস্থিতি খুব খারাপ।আগুন জ্বলছে, রাম নবমীকে ঘিরে উত্তেজনা। গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি পুলিসের হাতের বাইরে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও সরকারি সম্পত্তি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
তিনি জানান, 'পুলিসের অনুমতি নিয়ে মিছিল ছিল। রাজ্যপাল ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছেন। প্রশাসন নেট বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।বর্তমান নিত্য জীবনে নেট অপরিহার্য। রবিবার হুগলির রিষড়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আমরা এই হিংসার ঘটনায় এনআইএ তদন্ত চাইছি। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এখুনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হোক। পুলিস পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।'
এই সওয়ালের পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের প্রশ্ন, 'এখন পরিস্থিতি কী? পুলিস কেন পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেনি? কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে? একই ঘটনা রিষড়ায় কী করে ঘটলো? এই ঘটনার পর পুলিস কী করছিল?' হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, 'রাম নবমীর মিছিলে পুলিসের অনুমতি ছিল। পুলিস ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিয়েছে। হাওড়ার ঘটনায় ৩৬ জন গ্রেপ্তার, অভিযোগ দায়ের হয়েছে।'
এই জবাব শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, 'গত বছর ওই একই ঘটনা ঘটেছিল। তাহলে পুলিস কেন আগে থেকে সতর্ক হয়নি?'
চলতি বছরের শুরুতেই চর্চার শিরোনামে রয়েছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ও তাঁর স্ত্রী আলিয়া সিদ্দিকি। একে অপরের বিরুদ্ধে গৃহ হিংসার অভিযোগ তুলে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। দাম্পত্য কলহ তাঁদের এই মুহূর্তে বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে গড়িয়েছে। নওয়াজের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ করেন তার স্ত্রী আলিয়া। দু’জনের দাম্পত্য কলহের শিকার হয়েছে দুই সন্তান ইয়ানি ও শোরা। দুবাইয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে তারা। অনেক দিন ধরেই বন্ধ পড়াশোনা। তবে শোনা যায়, এবার সন্তানদের কথা ভেবে নিজেদের মধ্যে সবটা মিটমাট করতে রাজি হয়েছেন নওয়াজউদ্দিন-আলিয়া।
২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল নওয়াজ ও আলিয়ার দুই সন্তানের সঙ্গে বম্বে হাইকোর্টের হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছে বিচারক রেবতী মোহিতে দেরে ও বিচারক শর্মিলা দেশমুখের ডিভিশন বেঞ্চ। বিবাহবিচ্ছেদ যে হবে, তা আগেই বলেছিলেন আলিয়া। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধান যাতে হয়, সেকারণে আলিয়ার শর্তে মত দেন নওয়াজ। আলিয়ার বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি হন অভিনেতা।
এমনকি ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে যে মানহানির মামলা করেছিলেন তিনি, তা ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছেন নওয়াজ।
একটি মামলার প্রেক্ষিতে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের (Andhra Pradesh High Court) মন্তব্য, ঘরকন্নার কাজ না পারায় শাশুড়ির বকাঝকাকে গার্হস্থ্য হিংসা বলা যাবে না। এমনকি এই ‘অপরাধে’ কারও বিরুদ্ধে ৪৯৮-এ ধারায় মামলাও হতে পারে না। জানা গিয়েছে, ২০০৮-র এপ্রিল মাসে বিয়ে হওয়া মাত্র ৮ মাসের মধ্যে মৃত্যু হয় তরুণীর। মৃতার পরিবারের তরফে স্বামী এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলায় অভিযোগ, বিয়েতে পণ দিতে না পারার কারণেই মেরে ফেলা হয়েছে মেয়েকে। এমনকি মৃতা বাড়ির কাজ করতে না পারলে তাঁর উপর ভীষণ অত্যাচারও করা হত, এই অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। এটি অন্ধ্রপ্রদেশের ঘটনা। তবে এই বিষয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি ভিআরকে কৃপাসাগর তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, 'এর মধ্যে হিংসার কিছু নেই।'
এই ঘটনাকে বিচারপতি গৃহহিংসার তকমা না দিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, 'প্রতিটি সংসারেই ঘরকন্নার কাজ করতে না পারলে পুত্রবধূদের বকাঝকা করা হয়। কোনও কোনও সময় অন্যের উদাহরণ টেনে ভাল কাজ করার প্রেরণাও জোগানো হয়। কিন্তু এমনটা কখনও ঘটে না যে, কেউ সংসারের কাজ না পারলে তাঁকে মারধর করা হয়। পণ না পাওয়ায় অত্যাচার করা হলে তখনই সেটি হিংসার পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।' এই বলে মৃতার শাশুড়ি এবং স্বামীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল তা খারিজ করে দেন বিচারপতি।
তিন বছরের সন্তানের সামনেই স্ত্রীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। কাঠগড়ায় মৃতার শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরাও। অভিযুক্তর দ্বিতীয় বিয়ে ঘিরে প্রথম স্ত্রীয়ের সঙ্গে নিত্য অশান্তি, আর তাতেই খুনের ঘটনা। এমনটাই মৃতার পরিবারের অভিযোগ। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে মেয়ের মৃত্যুসংবাদ পান বাবা মদন সর্দার। তিনি জামাইয়ের বাড়ি গিয়ে দেখেন মেয়ের ঝুলন্ত দেহ। এরপর কুলতলি থানায় এসে দেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে পলাতক অভিযুক্ত। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিনের প্রেম থেকে পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয় অনুপ মণ্ডল এবং তপতী সর্দারের। তিন বছরের একটি ছেলেও আছে দম্পতির। তপতীর পরিবারের অভিযোগ, একবছর ধরে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে সোনারপুরে সংসার পাতেন অনুপ।
প্রথম স্ত্রী এবং ছেলের খোঁজখবর পর্যন্ত নিতেন না অনুপ বলে খবর। বাবার থেকে টাকা নিয়েই সংসার চালাতেন তপতী। যে কারণে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। রোজকার এই ঝামেলা মঙ্গলবার বিশাল আকার ধারণ করে। এভাবে ঝামেলা চলাকালীন ছেলের সামনেই স্ত্রীকে খুন করে পালিয়ে যান অনুপ। মৃতার পরিবার সূত্রে খবর, ভালোবাসা থেকে বছর পাঁচেক আগে বিয়ে করেছিলেন অনুপ-তপতী। ভালোভাবেই সংসার করছিলেন তাঁরা। কিন্তু অনুপ অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করলে তাঁদের মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব পরিবার।
তপতী সর্দারের বাবা জানান, 'মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করে। তিন বছর আগে একটা সন্তানও হয়। জামাই অন্য একজনকে বিয়ে করে সোনারপুরে সংসার পাতে। তপতী এবং সন্তানের সঙ্গে থাকতেন না অনুপ। সংসারে কোনও টাকা পয়সাও দিতেন না। আমাদের থেকে কিছু টাকা-পয়সা এনে কোনওভাবে সংসার চালাত মেয়ে। দিন দুয়েক আগে তপতীর শ্বশুর ফোন করে বাড়ি ফিরে আসতে বলে। ও বাড়ি ফিরলেই মঙ্গলবার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে।'
ভোট পরবর্তী হিংসার (Post Poll Violence) কবলে মেঘালয়ের একাধিক এলাকা। হিংসায় মৃত ১, জখম হয়েছেন আরও বেশ কয়েক জন। শুক্রবার এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছে মেঘালয় পুলিস (Meghalaya Police)। জানা গিয়েছে, পূর্ব-পশ্চিম খাসি হিলসের মারিয়াং বিধানসভা, পূর্ব খাসি হিলসের শেলা এবং পশ্চিম জয়ন্তিয়া হিলসের মোকাইয়াও থেকে হিংসার খবর এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকাগুলোয় জারি ১৪৪ ধারা। ফাটানো হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। এক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, মারিয়াংয়ে ডিসিপি অফিসের সামনে একাধিক গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই অভিযোগ।
এদিকে, মারিয়াং আসনের ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার ডিসিপি অফিস ঘেরাও করেছিল কংগ্রেস। এরপরই এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
জানা গিয়েছে, ফল নিয়ে অসন্তোষ সোহরা আসনেও। উপমহকুমা শাসকের অফিস লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন এনপিপি সমর্থকরা। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি পুলিসের। শান্তি বজায় রাখতে সব দলকে আহ্বান জানান মেঘালয়ের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।
অপরদিকে, ৬০ আসনের মেঘালয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল এনপিপি, তাদের ঝুলিতে ২৬ আসন। দ্বিতীয় স্থানে ১১টি আসন নিয়ে ইউডিপি। তৃণমূল এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৫টি করে আসন। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে ২টি আসন। যদিও এই মুহূর্তে এনপিপি-র কনরাড সাংমার সঙ্গে বোঝাপড়া করে মেঘালয়ে সরকার গড়তে উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি।
মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কন্ট্রোভার্সি কুইন (Bollywood Drama-Queen) রাখি সাওয়ান্ত (Rakhi Sawant)। সর্বদা খবরের শিরোনামে থাকতেই পছন্দ করেন। সম্প্রতি নিজের বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে লাইমলাইটে রয়েছেন। প্রেমিক আদিল খান দুরানিকে (Adil Durrani Khan) সাত মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি স্বামীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আনেন। তিনি বধূ নির্যাতন এবং পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন স্বামীর বিরুদ্ধে। রাখির অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় আদিলকে। ১৪ দিনের পুলিসি হেফাজতে থাকার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। এবার আরও গুরুতর অভিযোগ করেন রাখি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাখি জানান, আদিলের প্রেমিকা (Girlfriend) তনু চন্দেল অন্তঃসত্ত্বা। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই তনুকে বিয়ে করবেন আদিল।
একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করছেন রাখি। আদিলের জামিন প্রসঙ্গে রাখি বলেন, এখনই জামিন পাচ্ছেন না। তবে আদিল আগে থেকেই বিবাহিত জেনে অবাক হয়েছিলেন তিনি। এবার জানতে পেরেছেন তনু অন্তঃসত্ত্বা। তাই তনুকে বিয়ে করবেন আদিল। ড্রামা কুইন রাখি দাবি করেন, 'তনুকে সামনে আসতেই হবে। আর বলতে হবে যে ও সত্যিই অন্তঃসত্ত্বা?'
উল্লেখ্য, প্রথমে রাখি ও আদিলের বিয়ে নিয়ে অনেকদিন বিতর্ক চলেছে। রাখি মিডিয়ার সামনে তাঁদের বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আনেন। আইনি ভাবেও বিয়ে করেছেন, সে ছবি সকলের সামনে তুলে ধরেন। কিন্তু তখন আদিলের দাবি ছিল রাখি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন। যদিও পরে রাখি সোচ্চার হতেই ব্যবসায়ী স্বামী স্বীকার করে নেন রাখিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।