রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Case) মামলায় চলা সিবিআই (CBI) তদন্ত নিয়ে ফের উষ্মা প্রকাশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly)। একটি মামলায় এজলাসে উপস্থিত সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, 'আপনার সিবিআই কত দিনে তদন্ত শেষ করবে? লোক বাড়ানোর ব্যবস্থা করুন। কাল (পড়ুন রবিবার) এক জায়গায় গিয়েছিলাম। সমাজের উপর তলার মানুষ সেখানে ছিলেন। তাঁরা আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করেছেন, তদন্ত কবে শেষ হবে, জানতে চেয়েছেন।'
তিনি জানান, লোক কোথায়, সিবিআইকে লোক বাড়াতে হবে। আমার চোখে যা আসছে তাতে আরও দুর্নীতির ইঙ্গিত আছে। সেক্ষেত্রে সিটে লোক না বাড়ালে হবে না। প্রয়োজনে অর্ডার দেবো। কারণ সিবিআই আরও বহু মামলার তদন্ত করছে। যদিও এক সপ্তাহ আগেই বিচারপতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। সম্প্রতি সিবিআইয়ের আইও-কে ডেকে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছিলেন বিচারপতি। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রথম দিকেই আমি দুর্নীতি লক্ষ্য করেছিলাম। তাই আমি সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমি নির্দেশ দিতে পারি, কিন্তু প্রধান কাজ করতে হবে সিবিআইকে। আমি চাই সিবিআই এই কাজটা দায়িত্ব নিয়ে করবে। সিবিআইয়ের পতাকা মাথা উঁচু করে উড়ুক, আমি এটাই চাই। আমি কিছু মন্তব্য করি আমার উদ্বেগ থেকে।
সপ্তাহ ঘুরতেই ফের সিবিআই তদন্ত কতদিনে শেষ হবে, জানতে চেয়ে উষ্মা প্রকাশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।
বুধবার চাকরি (SSC Case) চেয়ে এক্সাইড মোড়ে জমায়েত হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের (Job Aspirants) গ্রেফতার করে আদালতে তোলে পুলিস (Kolkata Police)। পুলিসের কামড় (Police Bite) খাওয়া অরুণিমা পাল-সহ মোট ৩০ জন চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়। এই ৩০ জনকেই এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলেও জামিন পান (Bail Plea) প্রত্যেকেই। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পুলিস এঁদের 'অপরাধী' দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এঁদের পুলিসি হেফাজতের আবেদন করে পুলিস। কিন্তু সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। ধৃত ৩০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
এদিকে, চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষের উকিল এদিন আদালতে সওয়াল করেন, 'কাদের আসামি বলে সম্মোধন করা হচ্ছে, চাকরিপ্রার্থীদের? আসামি তো তাঁরা, যারা চাকরি দিয়েছেন কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে। অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে যারা টাকা নিয়েছেন সেই মন্ত্রী, আসামিরাই আমাদেরই বিচারকক্ষে আসেন।' চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল, 'যাদের কোর্টে আনা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই শিক্ষক। প্রত্যেকেই টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। হাইকোর্টের নির্দেশ হলেও এঁদের চাকরি দিতেই পারছে না। উলটে একজন পুলিস কামড়েছে, এই কাজ মানুষের না। এঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল, পুলিস বলপূর্বক এঁদের অত্যাচার করছে।'
চাকরিপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিস যে যে অভিযোগ এনেছে, তার প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত নথি পুলিস দেখাতে পারেনি। কৃষক আন্দোলনের সময় সুপ্রিম কোর্ট কৃষকদের সরায়নি। কিন্তু আমাদের চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে মাথা ফেটেছে, কারও হাড় সরেছে। এঁরা অত্যন্ত নিরীহ মানুষ, নিজেদের যোগ্যতায় শিক্ষক হয়েছে। যদিও পুলিস বলছে এঁদের সংগঠন খুঁজে বের করতে হবে। এঁরা কি মাওবাদী? এই প্রশ্নই আদালতে তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী।
তাঁদের সওয়াল, 'যে কামড়ালো সে পিজিতে ভর্তি আর যে কামড় খেলো সে হাজতে। পুলিস শাসক দলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। ধৃত চাকরিপ্রার্থীদের নিঃশর্ত জামিন দেওয়া হোক। নয়তো সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাবে।'
যদিও পুলিসের তরফে আইনজীবীর পাল্টা যুক্তি, 'চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি আমরাও সমব্যথী। কিন্তু তাঁর মানে এই নয় যে ওরা আইন হাতে তুলে নেবেন। উন্মত্ত জনতাকে প্রতিহত করতে পুলিসকে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে হবে। এঁরা শিক্ষক, শিক্ষক সুলভ আচরণ এঁদের থেকে কাম্য।' দু'পক্ষের এই সওয়াল-জবাবের পরেই কিছুক্ষণ রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারক। অবশেষে সন্ধ্যার পর ধৃত ৩০ চাকরিপ্রার্থীকেই জামিন দিয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালত।
আদালতের এই রায়ে স্পষ্টতই নৈতিক জয় দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা। নিয়োগ নিশ্চিত না হলে আগামি দিনে আন্দোলন আরও জোরদার হবে, এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এদিন জামিন নিশ্চিত হতেই কোর্ট ক্যাম্পাসে উদযাপন শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। অন্য চাকরিপ্রার্থীরা পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হয়।
এসএসসি নিয়োগ (SSC Scam) দুর্নীতিতে সিবিআই (CBI) চার্জশিটে নাম নেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee)। তবে এই দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কেন্দ্রীয় সংস্থা এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে তুলে ধরেছে। এমনটাই সিবিআইয়ের একটি সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, এই চার্জশিটে নাম রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডের মিডলম্যান প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংয়ের নামও রয়েছে।
এই চার্জশিটে নাম রয়েছে মোট ১২ জনের। নাম রয়েছে এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির শান্তিপ্রসাদ সিনহা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়েরও। এমনটাই সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। চার্জশিটে সিবিআই উল্লেখ করেছে, করোনাকালে লকডাউন চলাকালীন এসএসসি অফিস ফাঁকা ছিল। সেই সুযোগে বেলাগাম দুর্নীতি ও বেনিয়াম করেছেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। এমন নিজের অপরাধ ঢাকতে একাধিক পন্থাও অবলম্বন করেছেন তিনি।
ইতিমধ্যে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গত ২৩ জুলাই তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তারপর একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও নাকচ হয়েছে সেই আবেদন। অন্যদিকে গ্রেফতারির আগে সুবীরেশ ভট্টাচার্য সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাবি করেছিলেন, তাঁর আমলে কোনও দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু সিবিআই চার্জশিটে তাঁর নাম থাকায় আগামি দিনে আরও বিপাকে পড়তে পারেন জেলবন্দি এই শিক্ষাকর্তা। এমনটাই মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
নিম্নমানের মিড ডে মিলে (Mid day meal) খাবার পরিবেশন ও অপরিষ্কার স্কুল ক্যাম্পাস নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকার হাতে আক্রান্ত শিক্ষিকা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি দমদমের মতিঝিল গার্লস স্কুলে (Motijheel Girls School, Dumdum)। তারই প্রতিবাদে শুক্রবার সরব ছাত্রীরা। উত্তাল স্কুল ক্যাম্পাস।
বৃহস্পতিবার স্কুলের নিম্নমানের মিড ডে মিল পরিবেশন ও স্কুল ক্যাম্পাস অপরিষ্কার নিয়ে প্রতিবাদে সরব হন স্কুলেরই বাংলা শিক্ষিকা (teacher) গার্গী মুখোপাধ্যায়। অভিযোগ, স্কুলের মিড ডে মিলের খাবারে কখনও মেলে টিকটিকি তো কখনও আরশোলা। এমনকি, স্কুলের শৌচালয় ব্যবহারেও দ্বিধা বোধ করে ছাত্রীরা। তিনি প্রতিবাদ করতেই তাঁকে মারধর করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পায়েল দে। এরই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা স্কুল ক্যাম্পাস।
ছাত্রীরা আহত শিক্ষিকার পাশে দাঁড়িয়ে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে নিম্নমানের মিড ডে মিল পরিবেশন করা হচ্ছে। এছাড়াও স্কুলের একমাত্র খেলার মাঠটি অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
অন্যদিকে আহত স্কুলশিক্ষিকার অভিযোগ, তাঁকে মারধর করা হলে থানায় অভিযোগ করতে যান তিনি। কিন্তু থানা কোনও অভিযোগ নেয়নি। পুরো বিষয়টি তিনি এখন বর্তমানে স্কুল বোর্ডের কাছে জানাবেন বলে দাবি করেছেন। এই ঘটনা নিয়ে পরিচালন কমিটির সভাপতি তিমিরবরণ পাল জানান, এটি একটা নিন্দনীয় ঘটনা। আগে কখনও দেখিনি। প্রধান শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করা হোক না হলে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হোক।
এই ঘটনা খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্কুল শিক্ষা দফতরকে প্রতিনিধিরা স্কুলে এসে পৌঁছয়। তারা নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক করে। যদিও প্রধান শিক্ষিকা এই বিষয় নিয়ে সেভাবে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। তবে এই বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। কোনও শিক্ষিকাকে মারধর করা হয়নি। উল্টো তাঁকে ঘেরাও করে রাখা হয়।
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়: বাড়িতে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবরা এলে অথবা নিজেদের জন্য বিকেলে চা বা কফির সঙ্গে গরমা-গরম মুচমুচে সুস্বাদু বোনলেস চিকেন পাকোড়া বানিয়ে খাওয়াতে বা খেতে পারেন। বোনলেস চিকেন পাকোড়া তৈরির পদ্ধতি--- পাঁচশো গ্রাম বোনলেস চিকেন ছোট ছোট খণ্ড করে কেটে নিন। জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে জল মুছে নিন। চিকেনের খণ্ডগুলোর উপর অর্ধেক পাতি লেবুর রস ও আন্দাজমতো নুন ভাল করে হাতের সাহায্যে মাখিয়ে নিন।
এবার একটা পাত্রে এক টেবিল চামচ আদা বাটা, এক টেবিল চামচ রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ কাচা লঙ্কা বাটা, চার টেবিল চামচ ধনে পাতা বাটা, এক টেবিল চামচ পুদিনা পাতা বাটা, এক টেবিল চামচ কারিপাতা বাটা, একটা ডিমের গোলা, এক টেবিল চামচ সাদা তেল, এক টেবিল চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, এক চা চামচ ধনে, জিরের গুঁড়ো, হাফ চা চামচ গরম মশলার গুঁড়ো, দুই টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো, হাফ কাপ কর্নফ্লাওয়ার নিয়ে হাতের সাহায্যে খুব ভাল করে মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন।
এবার এই মিশ্রণের মধ্যে নুন ও পাতি লেবুর রস মাখানো বোনলেস চিকেনের খণ্ডগুলো দিয়ে চিকেনের খণ্ডগুলোর গায়ে ভাল করে মিশ্রণ মাখিয়ে নিন। মিশ্রণ মাখানো চিকেনের খণ্ডগুলো দুই থেকে তিন ঘন্টা আলাদা করে রাখুন। দুই বা তিন ঘণ্টা বাদে কড়া আঁচে বসিয়ে আন্দাজমতো সাদা তেল গরম করে ডুবো তেলে মিশ্রণ মাখানো বোনলেস চিকেনের খণ্ডগুলো ছেড়ে ভাজুন। চিকেনের খণ্ডগুলো হালকা বাদামী রঙয়ের হলে কড়া থেকে তুলে তেল ঝরান। চিকেন পাকোড়াগুলো একটা প্লেটের মধ্যে রেখে উপর থেকে চাটমশলা ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ধনেপাতা, পুদিনা পাতা ও কাচা লঙ্কার চাটনি বা টমেটো সস সহযোগে।
সশরীরের হাজিরার নির্দেশ থাকলেও কেন ভার্চুয়াল শুনানিতে পার্থকে (Partha Chatterjee) হাজিরা। প্রেসিডেন্সি জেলের (Presidency Jail) এই আচরণে ক্ষুব্ধ আদালত। আগামি সোমবার তাই সশরীরেই আদালতে হাজির করাতে হবে বন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এসএসসি (SSC Case) সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে আদালতে হাজির করাতে হবে। শুক্রবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল কোর্ট (Court Hearing)। ৩১ অক্টোবর এই মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিংহ, কল্যাণময় বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সশরীরে হাজিরা করাতে হবে।
শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলার শুনানি সংক্রান্ত একটি জটিলতা দেখা দিয়েছিল। নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় শুনানি লিঙ্ক কাজ না করায় ভার্চুয়ালিও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে আদালতে হাজির করতে পারেনি জেল কর্তৃপক্ষ। এহেন আচরণে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ কোর্ট। সূত্রের খবর, লিঙ্ক কাজ না করায় যেহেতু ভার্চুয়ালি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে হাজির করানো যায়নি। প্রত্যাশিত ছিল সশরীরে তাঁকে আনা হবে। কিন্তু তাঁকে সশরীরেও কোর্টে আনেনি জেল কর্তৃপক্ষ।
যদিও ইডির হাত ঘুরে আপাতত সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার পার্থকে ভার্চুয়ালি হাজির করানোর আবেদন করে আদালতে চিঠি দিয়েছিল জেল কর্তৃপক্ষ। সশরীরে হাজিরা করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বে, কেনো ভার্চুয়ালি আবেদন জেলের? এদিন আদালত সেই প্রশ্নও তুলেছে।
উৎসব আবহে এবার ধর্নাস্থলে (Sit in protest) ভাইফোঁটা (Bhai Phota) পালন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র চাকরিপ্রার্থীদের। বুধবার কলকাতার মেয়ো রোডে ভাইফোঁটা পালন করেন তাঁরা। চাকরিপ্রার্থীদের (SSC Candidate) থেকে ফোঁটা নিয়েছেন সিপিএম (CPM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ধর্নাস্থল থেকে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে সরব তিনি। অন্য দিকে, মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশে ধর্নাস্থলে যান বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তিনি চাকরিপ্রার্থীদের মিষ্টি এবং বস্ত্র বিতরণ করেছেন।
স্কুলে চাকরির দাবিতে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না বুধবার ৫৯১ দিনে পড়ল। রাজ্যজুড়ে এখন উৎসবের মরশুম। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো পেরিয়ে কালীপুজো এবং দীপাবলি, ভাইফোঁটা। কিন্তু গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে রাজপথে ধর্নায় চাকরিপ্রার্থীরা।
সেলিমকে ফোঁটা দিয়ে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, 'চাকরি পেয়ে আমাদের এখন বাড়িতে থাকার কথা। নিজের দাদা ও ভাইকে ফোঁটা দিতাম। কিন্তু এই অপদার্থ সরকারের জন্য তা সম্ভবপর হল না। তবে এত দিনের এই লড়াইয়ে আমরা অনেকের সাহায্য পেয়েছি। তাঁরা আমাদের দাদা-ভাইয়ের মতো। সেলিমদাও সে রকম এক জন। তিনি বহু বার চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থেকেছেন। ভাইফোঁটার দিনেও তিনি আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে এসেছেন। আমরা তাঁকে ফোঁটা দিলাম।'
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, 'এটা একটা মিষ্টি অনুষ্ঠান। যারা যোগ্য প্রমাণ করে হকের লড়াই লড়ছে, এঁদের সকলের নিয়োগ হোক। কোনও বাহানা চাই না। আর যাঁদের জন্য এই চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত, তাঁদের শাস্তি হোক।'
মেয়ো রোডে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের হাতে সেলিম যখন ভাইফোঁটা নিচ্ছেন, সেই একই সময়ে মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশের ধর্না-অবস্থানে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি। সেখানে আবার উচ্চ প্রথামিকে নিয়োগের দাবিতে ধর্না। দিলীপ অবস্থানকারীদের মধ্যে মিষ্টি এবং জামাকাপড় বিতরণ করে বলেন, 'সরকার ৮ বছর ধরে স্বচ্ছ নিয়োগ করতে পারেনি। ভাইফোঁটার দিনেও ছেলেমেয়েদের রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের পাশে একটু সময় কাটাতে এলাম।'
স্কুলে (Recruitment Scam) বেআইনি নিয়োগ খুঁজতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক বসছে চলতি মাসের ১৮ তারিখ। স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি (SSC), পর্ষদ ও মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীদের মধ্যে এই বৈঠক। নিয়োগ দুর্নীতির জেরে যোগ্যতমদের টপকে যারা চাকরি পেয়েছে, তাঁদের তালিকা তৈরি করতে এই বৈঠক। চিহ্নিতদের চাকরি বাতিলের জোরালো সম্ভাবনা। তাই এই বৈঠকের তাৎপর্য রয়েছে। এমনটাই মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক।
তার আগে ১৭ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও মামলাকারী আইনজীবী ফিরদৌস শামীমের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা। এদিকে সপ্তাহ দুয়েক বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া স্কুল শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের কড়া বার্তা দিয়েছে হাইকোর্ট। সিবিআই আদালতে দাবি করেছে এসএসশি নিয়োগে বেনজির দুর্নীতি হয়েছে। রীতিমতো তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে তারা এই অভিযোগ তুলেছে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা সে সময় অভিযোগ করেছিল, অনেকে প্রশ্নের উত্তর না দিয়েও নম্বর পেয়েছেন। একাদশ-দ্বাদশ নিয়োগে ৯০৭ জনের নম্বরে হেরফের ঘটানো হয়েছে।' সিবিআইয়ের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছেন সাদা ওএমআর শিট জমা করেও অনেকে নম্বর পেয়েছেন।
২০১৪ উচ্চ প্রাথমিক টেটে (Primary TET) যারা পাশ করেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেনি, তাঁদের জন্য সুখবর। প্রায় ১৬০০ জনের ১,৫৮৫ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। পর্ষদ সূত্রে খবর, ১৫৮৫ জনের কাছে ইন্টারভিউ (Interview) লেটার যাবে। নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এই পদক্ষেপ স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র (SSC)। শুক্রবার এ খবর জানান এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার।
জানা গিয়েছে, কল লেটার শুক্রবার বিকেল থেকেই দেওয়া শুরু করেছে এসএসসি। ৭ দিন বাদে ২১ তারিখ থেকে শুরু ইন্টারভিউ পরীক্ষা। ৮ বছর ধরে নিয়োগ জটে আটকে এই চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ। এদিকে, প্রাথমিক টেটের আবেদন পত্র শুক্রবার অর্থাৎ আজ বিকেল থেকেই দেওয়া শুরু করছে শিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বিকেল চারটের পর থেকেই অনলাইনে আবেদনপত্র দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এই প্রক্রিয়া চলবে ৩রা নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত। চাকরিপ্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার প্রাথমিকের টেটের নিয়মে বড়সড় বদল এনেছে শিক্ষা পর্ষদ। সংরক্ষণ তালিকাভুক্ত প্রার্থীরা এই বদলের সুবিধা পাবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা, প্রার্থীদের মধ্যে যারা তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্য অনগ্রসর শ্রেণী, তাঁদের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ স্তরের পরীক্ষা বা স্নাতকস্তরে ৫ শতাংশ কম নম্বর পেলেও এই শ্রেণীভুক্তরা আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ সাধারণদের জন্য যেখানে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক, সেখানে সংরক্ষিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নম্বরের উর্ধ্বসীমা ৪৫ শতাংশ। সংরক্ষণ তালিকাভুক্তদের পাশাপাশি শারীরিক দিক থেকে বিশেষভাবে অক্ষম, প্রাক্তন সেনাকর্মী ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি শ্রেণীর প্রার্থীরা এই সুবিধা পাবেন। এই মর্মে বৃহস্পতিবারই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য (Subiresh Bhattacjharya)। সোমবার তাঁর জামিনের আবেদন (Bail Plea) খারিজ করেছে আলিপুরের বিশেষ আদালত। এদিন সুবীরেশের জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই জানিয়েছে, সুবীরেশ ভট্টাচার্য পরীক্ষার্থীদের নম্বর পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে এই ধরনের কাজ হতো। তার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আরও কিছু প্রমাণের প্রয়োজন, তাই তাঁকে জেরা করতে হবে। এই মুহূর্তে তাকে জামিন দেওয়ার কোন অর্থ হয় না।
সিবিআইয়ের যুক্তি, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রভাবশালী। তাঁর প্রমাণ লোপাটের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার সুবীরেশের জামিনের আবেদন করে তাঁর আইনজীবী জানান, কোনও তথ্যপ্রমাণ জোগার করতে পারেনি সিবিআই। তারপরেও বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে। তাকে তাই জামিন দিয়ে দেওয়া হোক। আমার মক্কেলের বয়স হয়েছে।
ওর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিচার করুন। মেডিক্যাল দিকটা দেখুন, হাই সুগার, প্রেসার আছে। বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে আমার মক্কেলকে প্রভাবশালী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও প্রমাণ জোগার করতে পারেনি। জেলের খাবার খেতে পারছেন না আমার মক্কেল। ওকে নিজস্ব ডায়েট মেনে চলার অনুমতি দিক আদালত। পাল্টা সিবিআইয়ের দাবি, আমরা জেল হেফাজত বাড়ানোর আবেদন করেছি। প্রার্থীদের নম্বর পাল্টানো হয়েছে সুবীরেশের কথায়। জামিনের আবেদন খারিজ করে জেল হেফাজতে পাঠানো হোক। বিভিন্ন নথি পরীক্ষা করা বাকি আছে। এই পর্যায়ে জামিন সম্ভব না।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (SSC Scam) লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত জেলেই কাটাবেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। শুধু পার্থবাবু নয়, এই দুর্নীতি-কাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে আপাতত জেলেই থাকতে হচ্ছে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিনহা-সহ অন্য ধৃতদের। ৫ অক্টোবর ভার্চুয়ালি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আদালতে হাজিরা করা হয়েছিল। সেই শুনানিতে জামিনের আবেদন (Bail Plea) করেনি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবী।
বরং তাঁর মক্কেলের জন্য সঠিক চিকিৎসা এবং জেলের খাবারের গুণগত মান ভালো করার আবেদন কোর্টকে করেন আইনজীবী। এদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যর ইডি দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গত মাসে ম্যারাথন জেরার পর বৃহস্পতিবার ফের তাঁর ডাক পড়ে। ইডি সূত্রে খবর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারির পর জেরা করে এবং সব সম্পত্তির উৎস খতিয়ে দেখে নাম উঠে এসেছিল কল্যাণময় ভট্টাচার্যের। মূলত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে ও জামাইয়ের নামে পিংলায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। সেই সম্পত্তির উৎস জানতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জামাইকে বিভিন্ন নথি নিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইডি দফতরে এলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য।
ষষ্ঠীর (Durga Puja 2022) দিন দেবীর বোধনের অপেক্ষায় গোটা রাজ্য। রাস্তায় মানুষের ঢল, শারদ উৎসবে পুরোদমে মেতে উঠতে প্রস্তুত বাঙালি। কিন্তু চোখে জল নিয়ে এ শহরের রাজপথেই নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভের অনড় চাকরিপ্রার্থীরা। এসএসসি (SSC) গ্রুপ-ডি হোক বা ২০১৪ প্রাইমারি টেট অথবা এসএলএসটি (SLST) প্রত্যেকের একটাই দাবি, 'অবিলম্বে নিয়োগ চাই।' ষষ্ঠীতে ধর্মতলায় দেখা গিয়েছে আনন্দের মধ্যেও বিষাদের ছবি। এসএসি গ্রুপ সি এবং ডি-তে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন চাকরিপ্রার্থীরা (job aspirants)।
তাঁদের দাবি, 'মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্বেও নিয়োগ মেলেনি। তাই ষষ্ঠীর দিনেও আমরা যারা শিক্ষিত এবং যোগ্য এভাবে ধর্না দিতে হচ্ছে। এটা রাজ্যের জন্য লজ্জা, আমাদের জন্য লজ্জা। সাম্প্রতিক কালে ৬২০০ বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু আমরা যোগ্য হয়েও চাকরি পাচ্ছি না। ধর্মতলা এখন ধর্নাতলায় পরিণত হয়েছে।' একই দৃশ্য প্রাথমিক টেটের চাকরিপ্রার্থীদের। তাঁদের মন্তব্য, 'আমাদের এটাই ভাগ্য। মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখে ঘোষণা করলেও আমরা যন্ত্রণা, বঞ্চনার শিকার। ইতিমধ্যে আমরা ইন্টারভিউ দিয়ে নিয়োগ পাইনি। নতুন বিজ্ঞপ্তি নয়, চাকরি দিন। যতদিন না নিয়োগ পাব এই ধর্না চলবে। যেখানেই যাচ্ছি শুধু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।'
বঞ্চিত হিসেবে ৫৬৬ দিন রাস্তায় অবস্থানরত এসএলএসটি নবম-দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের মন্তব্য, 'আমাদের চাকরি চুরি হয়েছে। আজকে আমাদের স্কুলে থাকার কথা। তা না করে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থী জানে না কবে স্কুলে যেতে পারব।'
ইডির (ED) পর এবার এসএসসি নিয়োগ (SSC) দুর্নীতি-কাণ্ডে চার্জশিট জমা দিল সিবিআই (CBI)। পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee), কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়-সহ ১৬ জনের নাম আছে চার্জশিটে। কেন্দ্রীয় সংস্থার চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে নাম আছে শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক সাহার নামও। এই দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে যে এফআইআর করে সিবিআই, সেই এফআইআর-র ৫ জনের নাম চার্জশিটে (Charge Sheet) উল্লেখ করেছে সিবিআই। জানা গিয়েছে, সেই এফআইআর-এ নাম ছিল না পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে ৫ দিনের জন্য পার্থর সিবিআই হেফাজত পেয়েছে সিবিআই। এসএসসি গ্রুপ-সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই চার্জশিট বলে সিবিআই সূত্রের খবর। নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে ৫১ দিনের মাথায় এই চার্জশিট জমা দিল সিবিআই। ষড়যন্ত্র, প্রতারণা এবং জালিয়াতি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে চার্জশিটে।
জানা গিয়েছে, সিবিআই এফআইআর-এ নাম থাকা পাঁচ জনের মধ্যে ইতিমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাঁদেরকে জেরায় আরও ১০ জনের নাম উঠে এসেছে। এদিকে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জেলেই থাকছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জামিনের আবেদন খারিজ করেছে আদালত। একইভাবে জেলে পাঠানো হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে অন্যত্ম অভিযুক্ত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। এই দু'জনকে ইডি, তাদের প্রথম চার্জশিটে অভিযুক্ত দেখিয়েছে।
তাদের দাবি, 'নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ড ১০০ কোটি টাকার বেশি কেলেঙ্কারি। পার্থ-অর্পিতার নামে একাধিক সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। পার্থকে নমিনি করে তৈরি বিমার হদিশ পেয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা।'
স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসির (SSC) নবম-দ্বাদশ শিক্ষক নিয়োগ এবং গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি নিয়োগে বেনজির দুর্নীতি। কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) ফরেন্সিক রিপোর্ট দাখিল করে দাবি সিবিআইয়ের (CBI)। কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযোগ, 'অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েও নম্বর পেয়েছেন। একাদশ-দ্বাদশ নিয়োগে ৯০৭ জনের নম্বরে হেরফের ঘটানো হয়েছে। একইভাবে গ্রুপ-সি-র নিয়োগে ৩৪৮১ জন, গ্রুপ ডি নিয়োগে ২৮২৩ জনের নম্বরের হেরফের ঘটেছে আর নবম-দশম নিয়োগে ৯৫২ জনের নম্বরে হেরফের ঘটানো হয়েছে।' এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে চারটি ফরেন্সিক রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা করেছে সিবিআই।
সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছেন সাদা ওএমআর শিট জমা করেও অনেকে নম্বর পেয়েছেন। আমাদের কাছে যা প্রমাণ আছে, তাতে নিয়োগ-কাণ্ডে জেলবন্দি কারও জামিন পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা ৩টে হার্ড ডিস্ক পেয়েছি। সেখান থেকে এই তথ্য উদ্ধার হয়েছে।
সিবিআইয়ের এই অভিযোগের পর বিচারপতি বলেন, 'যারা বেআইনি ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, আশা করবো তাঁরা ইস্তফা দেবেন। যে চোর, সে খুব ভালো মতো যানে, সে চোর। যারা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছে, তারা জানে কীভাবে তাঁরা চাকরি পেয়েছে। তারা নিজেরা পদত্যাগ না করলে, কোর্ট যথাযথ ব্যবস্থা করবে। আগামী দিনে তারা যাতে আর কোন সরকারি চাকরি না পায় সেই ব্যবস্থা করা হবে।' বিচারপতির প্রশ্ন, 'ইডি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করছে। কিন্তু কল্যাণময়, এসপি সিনহা এঁদের কী হবে?' বিচারপতি বলেন, 'আমি সিবিআইয়ের আইনজীবীর মারফৎ সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে বলতে চাই, উনি কার ইন্সট্রাকশন এই কাজ করেছেন জানান।'
আমি সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে বহু আগে থেকে চিনি। উনি প্রায় বলতেন আমি একা জেলে থাকবো, বাকিরা বেলে থাকবে এটা হতে পারে না। ববিতা সরকার ও অনিন্দিতা বেরার রিপোর্ট আমি খুলে দেখেছি। বাকি দুটো এখনো খুলিনি। যা দেখলাম প্রচুর ওএমআর শিট ব্ল্যাঙ্ক। আবার কিছুতে শুধু ৫-৬ টা জায়গা গোল করে মার্ক করা, আবার কিছুতে ১-২ টো জায়গা মার্ক করা। সাবিনা ইয়াসমিন মামলাতেও ব্ল্যাঙ্ক ওএমআর শিট উঠে এসেছে। যা সিবিআই, ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের হার্ডডিস্ক থেকে উদ্ধার করেছে। এই মন্তব্যও এদিন করেছেন বিচারপতি।
এই মন্তব্যের পর কোর্টের নির্দেশ, যাবতীয় নামের তালিকা এসএসসিকে দিতে হবে। তারা খতিয়ে দেখবে এই নিয়োগগুলো সঠিক কিনা। এসএসসি ও বোর্ড অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে বৈঠক করে মিলিয়ে দেখবে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা। দিল্লি ও গাজিয়াবাদ থেকে তিনটে মাদার হার্ড ডিস্ক, ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে, সেখানে সব নিয়োগের যাবতীয় নথি ছিল।
পাশাপাশি কোর্ট জানায়, এবার এসএসসি এই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে জানাবে আসলে কত জনের ক্ষেত্রে জালিয়াতি করে চাকরি দেওয়া হয়েছে। মাদার ডিস্কের সঙ্গে এসএসসি ডিস্ক মেলানো হয়। সব রিপোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের হেফাজতে রাখা থাকবে। প্রয়োজনে একাধিক বৈঠক করতে হবে। যারা বেআইনি চাকরি পেয়েছেন, তারা নিজেরা জানেন, পয়সা দিয়ে পেয়েছেন। তাঁরা নিজেরা এগিয়ে এসে চাকরি ছাড়ুন। ৯ নভেম্বরের মধ্যে চাকরি ছাড়তে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ হবে না। কিন্তু তাঁরা স্বেচ্ছায় চাকরি না ছাড়লে, বেআইনি নিয়োগ প্রমাণ হলে ৭ নভেম্বরের পরে কোর্ট পদক্ষেপ করবে।
কোর্ট নির্দেশ দিলে শিক্ষক এবং অশিক্ষক (SSC) নিয়োগে বঞ্চিত সব চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে প্রস্তুত রাজ্য (Mamata Government)। আদালত (High Court) বললে, সুপারিশের ফলে হওয়া ব্যতিক্রমী নিয়োগ বাতিল করে সেই শূন্যপদেও নিয়োগ করতে রাজি রাজ্য। মঙ্গলবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে এই দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন এসএসসি চেয়ারম্যান, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি, শিক্ষা দফতরের সচিব। তিনি জানান, ভুল কর মেধাতালিকার ক্রম ভেঙে সুপারিশের ভিত্তিতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, যারা মেধাতালিকার ওয়েটিং লিস্টে রয়েছেন, তাঁরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই জন্য শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। রাজ্য ইতিমধ্যে ৫২৬১টি শূন্যপদ তৈরি করেছে। ১৬০০ পদ তৈরি হয়েছে শারীরশিক্ষা কর্মশিক্ষার পদপ্রার্থীদের জন্য। ওয়েটিং লিস্টে থাকা বঞ্চিত সব শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী নিয়োগে আরও প্রায় ১৪ হাজার শূন্যপদ তৈরি করছে রাজ্য। ব্যতিক্রমী নিয়োগের জেরে র্যাঙ্ক জাম্প করা বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের এই পদে নিয়োগ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য, 'মুখম্যন্ত্রী চান না কেউ বঞ্চিত থাকুক কিংবা কারও চাকরি যাক। তাই মহামান্য আদালতের কাছে দুটি সুপারিশ পাঠিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি। আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের কাছে অনুরোধ সরকারের সদিচ্ছার উপর ভরসা করে আন্দোলন প্রত্যাহার করুন। পুজো বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটান। আদালত যা নির্দেশ দেবে, সেই নির্দেশের সদর্থক সমাধান করতে আমরা প্রস্তুত।'
তিনি জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে। ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি হবে। কার্বন কপি ফিরছে, ওএমআর শিটে স্বচ্ছতা আসছে।