ট্রেনে ভ্রমণ কমবেশি প্রত্যেকেই প্রায় করে থাকি আমরা, কিন্তু এই ট্রেন যাত্রার সময় আমরা বেশকিছু হলুদ বোর্ডে কালো দিয়ে লেখা কিছু নির্দেশ দেখি। এখন প্রত্যেকের মনেই এরম নির্দেশর কারন সম্পর্কে কৌতূহল থাকে। যদিও নির্দেশগুলো ট্রেনের চালক ও গার্ড (ট্রেন ম্যানেজার) এর উদ্দেশে দেওয়া থাকে। এখন দেখে নিন কোন নির্দেশের অর্থ কি?
W/L এইরকম নির্দেশের অর্থ হল চালক কে লম্বা হর্ন বাজাতে বলা হয় , সামনে লেভেল ক্রসিং থাকলে বা কোনো বাঁক থাকলে যাতে আশেপাশের মানুষ শুনতে পায় তার জন্য এরম নির্দেশ দেওয়া থাকে।
C/T আবার অনেক সময় এরম নির্দেশ থাকে এর অর্থ হল সামনে গতিবেগ নিয়ন্ত্রন করতে বলা হয় চালক কে। পাশাপাশি কত গতিতে চালাতে হবে সেই গতিসীমা নির্দেশ করা থাকে। যাতে কোনোরকম দুর্ঘটনা ছাড়াই ট্রেন যেতে পারে।
T/P OR T/G এই নির্দেশের অর্থ চালক কে পূর্বের গতিসীমায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি। চালক চাইলে গতি বাড়াতে পারেন। অর্থাৎ রেলের পরিভাষায় এটাকে বলে Termination of Caution । এটি দুরকম ভাবে থাকে T/P ও T/G । মানে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ক্ষেত্রে T/P । মালগাড়ির ক্ষেত্রে T/G ।
আমরা অনেক সময় দেখি ট্রেনের শেষ বগির পেছনে একটি X মার্ক থাকে হলুদ রঙের। এটির মানে হল এই ট্রেনটির শেষ বগি এটি , এর পরে কোনো বগি নেই। আবার দেখি ছোট লাল বোর্ডে সাদা দিয়ে লেখা LV কথাটা লেখা আছে এর মানে হল একই , অর্থাৎ এটি হল Last Vehicle । কেবিনম্যান যাতে বুঝতে পারেন যে ট্রেনের শেষ কামরা সেটি।
সুজিত সাহা: নাটক করা বা দেখার সঙ্গে যুক্ত কম বেশি প্রায় সকলেই। শুধুমাত্র দেখা বা উপস্থাপনের ধরন খানকিটা অন্যরকম। আমাদের চোখের সামনে বা আড়ালে কিছু কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা, নানা সম্পর্ক, অভিজ্ঞতার উপস্থিতি হয়তো শৈল্পিক রূপ পায় না। কিন্তু কিছু মানুষ তার অনুভূতি ও বাস্তবতার নিবিড় সম্পর্ক তৈরিতে জন্ম নেয় নতুন ধারার নাটক। ইদানিংকালে নাটক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষ নেই। এগিয়ে চলার ধারা অব্যাহত এটা যে কোনও মাধ্যমের ক্ষেত্রেই শুভ লক্ষণ। ব্যক্তি জীবনে সম্পর্কের রূপ, ধরন, অভিজ্ঞতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন বদলায়, তেমনই চলার পথে কত নতুন সম্পর্কের জন্ম হয়। প্রতিনিয়ত প্রেক্ষিত অনুযায়ী দর্শনগত পার্থক্য উপলব্ধি করে থাকেন মননশীল মানুষ। আজ যে জিনিস নিয়ে যেভাবে ভেবেছেন কেউ, দুদিন বাদে সেই জিনিস নিয়েই হয়তো ঠিক অন্যরকম ভাবে ভাববেন। নির্দিষ্ট বলে কিছুই হয় না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর হয়তো পরিবর্তন হয়।
'অন্তরঙ্গ' থিয়েটারও ঠিক তাই। তোমার আজকের সম্পর্ক, অভিজ্ঞতার সঙ্গে কালকের চলনের মিল নাও হতে পারে। আজকের সংলাপ, উপস্থাপন আগামী দিনে তার ভাষা একই থাকবে তার কোনও মানে নেই। এই নাটক এক অন্তরের সঙ্গে অন্য অন্তরের সংযোগের সেতু, সম্পর্কের নতুন খোঁজ। 'অন্তরঙ্গ' থিয়েটারের আঙ্গিকে এমন এক সাবলীলতা আছে যার উপস্থাপন ক্ষেত্র- প্রসেনিয়াম, বা কোনও ঘর অথবা যেকোনও মুক্ত মঞ্চেই হোক না কেন তা নাটকের নিজস্ব আঙ্গিকের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়ে না। এই নাটক চলাকালে অভিনেতা ও দর্শকের সঙ্গে এমন এক আধ্যাত্মিক বা অন্য কোনও অনুভূতি ও সম্পর্কের মেলবন্ধন ঘটে, সেটা একেবারে তার নিজস্ব অনুভূতি। এই অনুভূতি বিশ্লেষণ করা শক্ত। 'অন্তরঙ্গ' থিয়েটার ভাল মন্দ এ প্রশ্ন আপেক্ষিক। তবে এটা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, কিছু মানুষকে এটি অন্য এক অনুভূতির সামনে দাঁড় করায়। একান্তে নাটকের মুহূর্তগুলো অন্তরে অনুরণন তোলে।
(ক্রমশঃ)
সৌমেন সুর: প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। যেমন, 'Moving Perspective'( ১৯৬৭) এবং ১৯৮২-তে ত্রিপুরাকে নিয়ে 'ত্রিপুরা প্রসঙ্গ' তৈরি করেন। ১৯৯০ সালে কলকাতা শহরকে নিয়ে তিনি 'Culcutta my El Dorado' এবং সিনেমার শতবার্ষিকী উপলক্ষে 'And The Show must Go on' সিরিজের 'Indian Chapter' নামক তথ্যচিত্রগুলি তৈরি করেন।
৬০-এর দশকে প্রবাদ প্রতিম চলচ্চিত্রকার বিমল রায় 'Immortal Stupa' (১৯৬১) এবং 'Life and message of Swami Vivekananda' ( ১৯৬৪), এছাড়া ১৯৬৭ সালে সলিল চৌধুরীর সুরে নির্মিত 'Gautam, The Buddha' তথ্যচিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মান লাভ করে। আরেক চলচ্চিত্র নির্মাতা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত 'টোলের রাজা ক্ষিরোদ নট্ট' (১৯৭৩), 'Fisherman of Sundarbon' (১৯৭৪) 'Rhythm of Steel'(১৯৮১) প্রভৃতি তথ্যচিত্রগুলি শিল্পের গুণে দর্শকমহলে সমাদর লাভ করে।
পরবর্তীকালে তরুণ মজুমদার 'অরণ্য আমার' এবং গৌতম ঘোষ 'বিসমিল্লা খান, সানাই বাদক'-এর উপর তথ্যচিত্র নির্মাণ করে তথ্যচিত্রের ধারাকে আরও সমৃদ্ধ করেন। পাঁচের দশকে বাংলা তথ্যচিত্রের উন্মেষের সময় থেকে অনেক প্রতিভাবান চলচ্চিত্র পরিচালকদের উদ্যম, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায় ও পরিশ্রমে তথ্যচিত্র পুষ্ট ও বিকশিত হয়েছে। পরবর্তীকালে তরুণ প্রজন্মের চলচ্চিত্র পরিচালক এবং তথ্যচিত্র নির্মাতারা বাংলা তথ্যচিত্রের ধারাকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাঁদের যাত্রা অপরাজেয় হোক। (শেষ)
সৌমেন সুর: পল জিনসের সাহচর্যে কিংবদন্তী তথ্যচিত্র নির্মাতা শুকদেব, ক্লেমেন্ট ব্যাপটিস্টা, শান্তি চৈধুরী, হরিসাদন দাশগুপ্ত প্রমুখ ভারতীয় তথ্যচিত্রকে নতুন দিশা দেখান। হরিসাধন দাশগুপ্ত ফিল্ম ডিভিশন, ইউনেস্কো, টি বোর্ড, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি প্রভৃতি বিভিন্ন সংস্থার হয়ে নানা ধরনের তথ্যচিত্র তৈরি করেন। তবে তথ্যচিত্রের গৌরবময় দিন আসে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে। তিনি মোট পাঁচটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এর মধ্যে চারটি জীবনীমূলক এবং একটি তথ্যকেন্দ্রিক।
জীবনীমূলক তথ্যচিত্রগুলি হলো- 'Rabindranath Tahgore (1961)', শিল্পী শিক্ষক বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের জীবনী অবলম্বনে 'The Inner Eye(1972)', বিখ্যাত ভরতনাট্যম শিল্পী বালা সরস্বতীকে নিয়ে 'Bala'(1976), সুকুমার রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে 'সুকুমার'(1987) এবং তথ্যকেন্দ্রিক রঙিন ছবি 'Sikkim'। সবক'টি তথ্যচিত্রে সত্যজিৎ তাঁর নিজের মৌলিক ঘরনার সাক্ষর বহন করেছে। তবে সত্যজিতের মতে 'The Inner Eye' হল সেরা তথ্যচিত্র। তিনি বলেন, 'এ ছবি নির্মাণ করেছি-আমি আমার গভীর অনুভূতি থেকে।' আর এক প্রতিভাবান চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক বেশ কয়েকটা তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। যেমন 'scientist of tomorrow', 'chhou dance of purulia', 'দুর্বার গতি পদ্মা' , 'ইয়ে কিয়ু' আর তাঁর সর্বশেষ তথ্যচিত্র 'রামকিংকর'।
তবে তিনি এই মহান কাজটি শেষ করে যেতে পারেননি। যাই হোক পল জিনসের সুযোগ্য সহকারী শান্তি চৌধুরী, তাঁর তথ্যচিত্রগুলির মধ্যে চিত্রকর অবীন্দ্রনাথ থেকে পরিতোষ সেন, মকবুল ফিদা হোসেন অবধি যে চিত্রকলা তৈরি করেন, তা দর্শক মহলে বিশেষ সমাদর লাভ করেছে। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির আর এক পুরোধা চিদানন্দ দাশগুপ্ত-এর 'Patrait of a City' তথ্যচিত্রটি বিদগ্ধ মহলে সাড়া ফেলে। (চলবে)
সৌমেন সুর: বাংলা তথ্যচিত্রের স্বার্থক রূপায়ন পেতে আমাদের সময় লেগেছিল একটু বেশি। ১৮৯৫ সালে চলচ্চিত্রের জন্মলগ্ন থেকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আমরা যা যা পেয়েছি, সেগুলোর কোনও নান্দনিক মূল্য ছিল না। সব দেশেই স্বল্পদৈর্ঘ্যর অনেক চিত্ররূপ তৈরি হয়েছিল, যা অতি সাধারণ এবং বিজ্ঞাপনী চিত্র। সার্থক তথ্যচিত্র আমরা পেলাম ১৯২২ সালে রবার্ট ফ্লাহার্টির তৈরি 'Nanook of the North' ছবি থেকে। মিস্টার ফ্লাহার্টি সব তথ্যচিত্র নির্মাতাদের গতিপথ নির্ধারণ করে দিলেন। ফ্লাহার্টির 'নানুক' এমন একটি ছবি যা বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার লিরিক্যাল গুনে তথ্যচিত্র সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে দিলেন। কানাডার তুষার ঢাকা জমিতে এস্কিমোদের জীবন সংগ্রামে 'নানুক' নামে এক শিকারির মধ্যে দিয়ে যেভাবে তিনি তথ্যচিত্রটি তুলে ধরলেন, যা শিল্প সুষমা এবং নান্দনিকতায় অসামান্য।
তথ্যচিত্রের এই যে জয় যাত্রা শুরু হল এরপর একে একে গ্রিয়ারসন, আইজেনস্টাইন, আলবার্তো কাভালকাইন, পুডভকিন--এঁরা বিষয়ে, চিন্তায়, টেকনিকে তথ্যচিত্রকে অন্য মাত্রা এনে দেয়। যার ফলে তথ্যচিত্র একটি পৃথক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তথ্যচিত্র মানে বাস্তব তথ্যনির্ভর অ-কাহিনী চিত্র। এখানে কাল্পনিক বিষয়ের কোনও স্থান নেই। আমরা নানা ধরনের তথ্যচিত্র দেখতে পাই। যেমন প্রামানিক, প্রাসঙ্গিক, অবস্থানগত, তথ্যমূলক, জীবনীকেন্দ্রিক এবং ভ্রমণমূলক।
সম্ভবত পাঁচের দশকে যে কয়েকজন শিক্ষিত সিনেমাপ্রেমী তরুণ কলকাতায় ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট গড়ে তুলেছিলেন, ভালো ছবি তৈরির চর্চা শুরু হয়েছিল তাঁদেরই উদ্যোগে। তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথমে উল্লেখ করতে হয় হরিসাধন দাশগুপ্তের কথা। তবে ভারতে প্রথম তথ্যচিত্রের চালিকাশক্তি হলেন পল জিনস। যিনি ছিলেন এক যুদ্ধবন্দি। (ক্রমশ)
সৌমেন সুর: জাতীয় সঙ্গীত সব মানুষের অন্তরের মুখের ভাষা, বুকের আশা। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের জাতীয় সঙ্গীত, জাতিকে দিয়েছে আত্মত্যাগের মহিমা। জাতীয় সঙ্গীতে জাতির স্বদেশপ্রীতি, ভাবাদর্শ, আত্মত্যাগ, স্বপ্নসাধনা মূর্ত হয়ে ওঠে।
প্রথম জাতীয় সঙ্গীত বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে। সেখানে সন্তান দল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। মাতৃবন্দনার মহামন্ত্রে উচ্চারিত হল 'বন্দেমাতরম।' ১৮৯৬ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ওই মাতৃবন্দনাকেই জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করে। আসলে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে জাতির আত্মপ্রকাশের বীজ প্রকট হয়ে ওঠে। এই মাতৃমন্ত্র উচ্চারণ করে কত মুক্তিযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের গভীরতায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ হয়ে ওঠে সোচ্চার। কোনও শক্তি আত্মত্যাগী স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষকে রোধ করতে পারে না।
স্বাধীনতার পর জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত হয়। বলা হয়, 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতটি অত্যন্ত দীর্ঘ এবং সুরসৃষ্টিতে অসুবিধা। তাই এর একটি স্তবকে হয় জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি দান। তবে ১৯৫০ সালের ২০ জানুয়ারি 'জনগণমন' সঙ্গীতের প্রথম অংশ জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি পায়। স্রষ্টা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রত্যেক রাষ্ট্র এবং জাতির থাকে জাতীয় সঙ্গীত। জাতীয় সঙ্গীত তাঁর মর্যাদা এবং অহঙ্কার। জাতীয় সঙ্গীতের অপমান মানে গোটা জাতির অপমান। জাতীয় সঙ্গীতের অমর্যাদা আমাদের কলঙ্ক। বুঝতে হবে মানুষের আত্মদানের মধ্যে দিয়ে জাতীয় সঙ্গীতের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। জাতীয় সঙ্গীত আমাদের প্রাণ, আমাদের বিবেক।
সুজিত সাহা: একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ, জাতি দাঙ্গা, ধর্ম,গোত্র নির্বিশেষে আর্থ-সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য, ভাবলেও আশ্চর্য লাগে। চারিদিকে শুধু বিভেদ আর অশান্তি। শিক্ষা প্রযুক্তিতে মানুষ এগোলেও, মানুষ অন্তরের প্রকৃত শিক্ষায় সমৃদ্ধ করতে পেরেছে কি? অনুভূতি, প্রেম, মানবিকতা সবই যেন মেকী, লোকদেখানো।
আমার মনে কয়েকটা প্রশ্ন বারেবারে উঁকি দেয়- যদি মানুষের জন্য ধর্ম হয়, তবে মানুষে মানুষে ধর্ম নিয়ে এত হাতাহাতি কেন? অথবা ধর্মটাই যদি মানব ধর্ম হত, এত হানাহানি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ কি ছড়াতো? আসলে আমরা সত্যিই মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছি কি? যে বিশেষ গুণগুলো থাকলে মানুষ হওয়া যায়, তার একটাও আত্মস্থ করতে কি পেরেছি?
ধর্মগুরু ও রাজনীতিকদের ব্যবসায়িক মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ধর্ম। তারা দাবার বোড়ের চালের মতো ব্যবহার করছে আমাদের। আর ধর্মভীরু মানুষগুলো তাদের ফাঁদে পা দিয়ে দেশ, জাতি,ধর্ম সমগ্র ব্যবস্থাটেকে তমসাচ্ছন্ন করে তুলছে। একটু সহনশীল, সৎ, বিজ্ঞানভিত্তিক চেতনা নিয়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়ালেই অন্যায় স্ফীত হয়ে যাবে।
উপর উপর যতই সৌভ্রাতৃত্বের ছবি ছাপা হোক না কেন? গোড়ায় গলদ থেকেই যাবে। মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তুলতে গেলে মানবিক মূল্যবোধের ও বিজ্ঞান শিক্ষার অপর জোর দেওয়া উচিত। ধর্মগুরুদের অসত্য মিথ্যার প্রয়োগ, অন্যের ধর্মকে ছোট করে দেখানোর প্রভাব বর্তমানে বেড়েছে। এটা যে আগামী দিনে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে,তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মের ধ্বজায় অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে অচিরেই ছিনিয়ে নিয়ে, তা মনব জাতির মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা হোক।
সৌমেন সুর: ইতিহাসের কত পট পরিবর্তন হয়েছে। সভ্যতা বিবর্তিত হয়েছে, সেই সঙ্গে মানুষের জীবনধারাও পাল্টেছে। তবু হিংসা, বিদ্বেষ থেকে মানুষের মুক্তি ঘটেনি। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষ হিংসার ছোবলে প্রাণ হারায়। আজও কত রক্তপাত, দলাদলির নির্লজ্জ বীভৎস ছবি। কেন এত রক্তপাত! কেন আজও হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী! কেন মানুষের ভিতরের হিংস্রতার আদিম পশুটা ক্ষণে ক্ষণে জেগে ওঠে? জীবনের এটাই কি অপরিহার্য ললাট লিখন?
শুরু হলো বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। মানুষ হাতে পেল ভয়ংকর সব অস্ত্রশস্ত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা- নাগাসাকিতে খেলা হলো শক্তিশালী অ্যাটম বোম। নিমিষে ধ্বংস হয়ে গেল দুটো শহর। এই দৃশ্যের পরেও শেষ নেই হিংসা-বিলাসের। আজও চলছে উৎপীড়ন। রক্তের হোলি খেলায় সমাপ্তি ঘটলো না। দিন বদলায়। সমাজ পাল্টায়। রাজার রাজত্ব যায়। বিজ্ঞান তার গতিপথে এগিয়েই চলে। জনপ্রতিনিধিরা শাসকের আসনে বসেন। কোথায় গেল শহর সাজে নতুন নতুন উপকরণে। বারে শ্রমজীবীর দল। শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক তিক্ত হয়। অসন্তোষ বাড়ে। শোষিতের দল চায় এক শোষণমুক্ত সমাজ। তার জন্য আন্দোলন, মৃত্যুবরণ। সব রাজনৈতিক দল চায় দেশের মঙ্গল, মানুষের কল্যাণ। কে কাকে টপকে শাসকের ভূমিকা নেবে, তাই নিয়ে চলে রেষারেষি, হিংসা, মারামারি, খুনখারাপি। দলের লোক খারাপ হলেও ভালো। ভালো লোক অন্য দলের হলে খারাপ। এই ভাবেই সমাজ বিরোধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। বর্তমানে ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই ক্ষমতার লড়াইয়ে খুনোখুনি হিংসা বেড়েই চলেছে।
হিংসা মানুষের জীবনে সত্য, কিন্তু শেষ সত্য নয়। জীবনে প্রেম, জ্ঞান ও মৈত্রীর পথ দেখিয়েছেন। যে সমস্ত অবতার ও ধর্মীয় মহাপুরুষ দেখিয়েছেন মানুষের মুক্তির পথ, একদিন এদের নির্দেশিত পথে বিকশিত হয়ে মানুষ চেতনার আলোই আলোকিত হবেই। অন্ধ সংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষ রোগমুক্তির ঠিকানা খুঁজে পাবেই। তখন মানুষ শান্তিতে বিরাজ করবে, নচেৎ নয়।
রাজ্যের সাম্প্রতিক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক জাদুকর পিসি সরকার জুনিয়র। সিএন-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই দুর্নীতিকে 'চিটিংবাজি' আখ্যা দিয়েছেন তিনি। দুর্নীতিতে যারা জড়িত, তাঁদের ভ্যানিশ করে দিতে চান জাদুকর। এদিন সিএন-কে পিসি সরকার জুনিয়র বলেন,'বাঙালির বীরগাঁথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাংলাকে নষ্ট করে দিয়েছে চোর-ছ্যাচরের দল। বাংলার এখন দুর্বুদ্ধির তারিফ চলছে। টাকার পাহাড় মানে বাঙালি। একটা বউ থাকতে ওহ লাভলি অনেকগুলো বউ মানেও বাঙালি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন নষ্ট করা হচ্ছে। মেধাবী বাঙালিকে পথে বসিয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী গ্রেফতার হওয়া বাংলার লজ্জা। অযোগ্যদের চাকরি দিয়ে বাংলা শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট হচ্ছে।'
তিনি জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে ভাল। তাঁর সঙ্গে থাকা মানুষরা কেউ ভালো নয়। তাঁর ডান হাত, বাঁ হাত, সৈন্যবাহিনী চোর, ডাকাত, বেইমান। তাই ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য থাকলেও, করতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যতক্ষণ না এই হাতগুলো কাটা পড়বে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো কিছু করতে পারবে না। তবে আমার পছন্দের মানুষ নরেন্দ্র মোদি। তাঁকে দেখে ২০১৪ সালে বিজেপির হয়ে ভোট লড়েছিলাম।'
পিসি সরকার জুনিয়রের বিস্ফোরক অভিযোগ, 'জাদুকর হিসেবে সারা বিশ্বে বাংলার সম্মানকে তুলে ধরলেও, বর্তমানে বাংলাতে সম্মান পাই না। বাংলায় আমাকে শো করতে দেওয়া হচ্ছে না। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলায় আমি আর কোন শো করতে পারিনি। নরেন্দ্র মোদীকে পছন্দ করি বলেই হয়তো আমাকে আর বাংলায় শো করতে দেয় না তৃণমূল সরকার। তাই বিদেশে এখন শো করছি।'
প্রসূন গুপ্ত: রাজনীতি থেকে সেলিব্রেটিদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রচার হয়েই থাকে। এতে কোথাও মানুষের একটা উৎসাহ জাগে নতুন করে ওই সেলেবদের প্রতি। ৯০ দশকে অমিতাভ বচ্চনের একের পর এক ছবি যখন ফ্লপ করছে, তখনিই নাকি তাঁরই পরিচিতরা মিডিয়ার কাছে অমিতাভ রেখার প্রেমের গুঞ্জন তুলে ধরেছিল। তাতে আখেরে লাভ হয়েছিল বিগ বি-এর। শাহরুখ-আমিরদের ছেড়ে অমিতাভের নতুন ছবিগুলির প্রতি আগ্রহ বেড়েছিল দর্শকদের। রাজনীতিতেও নেতিবাচক প্রচার চিরকাল হয়ে এসেছে। ওই প্রচারে লাভবান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই যাঁকে নিয়ে গুঞ্জন বা নেতিবাচক প্রচার হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী নিয়ে চূড়ান্ত নেতিবাচক প্রচার হয়েছিল। স্বয়ং রাহুল গান্ধী সারা দেশে প্রচার করেছিলেন ,"চৌকিদার চোর হে"। এই প্রচারে আখেরে লাভ হয়েছিল মোদীরই। সেটা ভোট পরবর্তী ফলেই প্রতিফলিত হয়েছিল।
মানুষের ভাবনার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল মোদীর বিষয়। এবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে মোদী-সহ বিভিন্ন দিল্লির নেতারা মমতাকে " দিদি ও দিদি " বা নানা কটূক্তিতে ভরিয়ে দিয়েছিলেন, মমতা বিশাল ভোট নিয়ে ফিরে এসেছেন। একই ঘটনা হয়েছিল অভিষেকের ক্ষেত্রেও। শুভেন্দু থেকে নানা নেতা তাঁকে 'তোলাবাজ' ইত্যাদি বাক্য দিয়ে কোনঠাসা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু নেতিবাচক প্রচারে লাভবান হয়েছিলেন অভিষেক। আজ তৃণমূলের নিচুতলায় তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এমনটাই শাসক শিবির সূত্রে খবর।
এবার সেই অভিষেক ইডি অফিস থেকে বেরিয়ে বললেন, অমিত শাহ নাকি দেশের সবচেয়ে খ্যাতনামা পাপ্পু। পরদিনই বাজারে হাজার হাজার টি শার্ট বেরিয়ে গেলো অমিত শাহের ছবি সমৃদ্ধ। সোশাল নেটওয়ার্ক (বিশেষ করে তৃণমূলীদের) গমগম করছে অমিত শাহর পাপ্পু ছবি বা শার্ট।
সবাই জানে মোদী যদি ২০২৪ এর নির্বাচনে জিতে আসেন তবে হয়তো এটাই তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের লাস্ট টার্ম। এরপরে কে? ২০১৪-র নির্বাচনের আগে আরএসএস দেখেছিল সেসময়ে মোদী ইতিবাচক বা নেতিবাচক ক্ষেত্রে সবচেয়ে নামি মুখ। এবার দেখার পালা সারা দেশে তাঁর পরে কে বেশি জনপ্রিয়। অমিত শাহের এই ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রচার যত বেশি হবে ততই তাঁর ইউএসপি বাড়বে। কাজেই অভিষেকের পাপ্পু প্রচার কিন্তু অমিতকে নিয়ে ভাবনার জায়গাটা অনেক বাড়িয়েছে। বুদ্ধিমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু বলতেই পারেন, "অমিত খুশ হুয়া"।
প্রসূন গুপ্ত: পার্সি কারা? কোথা থেকে এদের আগমন? এরা কি হিন্দু না মুসলমান? এরকম প্রশ্ন বহু প্রাচীন সময় থেকে চলে আসছে। প্রথমেই বলে রাখা ভালো, আজ ভারতের বাণিজ্যিক যা অবস্থান, তার জন্য কৃতিত্বের অনেকটাই দাবিদার এই পার্সিরা। টাটা, গোদরেজ, মিস্ত্রি বা বালসারা ইত্যাদিরা ভারতের বাণিজ্যের মান উন্নত করেছে চিরকাল। এরা খুব দেশপ্রেমী এবং জাতীয়তাবাদের ভাবনায় অসামান্য। এদের নাম দেখলে মনে হতে পারে এরা হয়তো মুসলমান যেমন ফিরোজ, জামশেদ ইত্যাদি। কিন্তু পদবীতে গেলেই চমক আসে। কারও পদবি দারুওয়ালা, কারও ইঞ্জিনিয়ার, কারওবা ইরানি বা কন্ট্রাক্টর। অর্থাৎ পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা থেকেই এদের পদবি। এরা একসময় পারস্য বা ইরানের বাসিন্দা ছিল। কিন্তু ক্রমশই কালের নিয়মে তাঁরা সিল্করুট ধরে চলে আসে ভারত উপমহাদেশে।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী স্বদেশী আন্দোলন করা ফিরোজ গান্ধী ছিলেন পার্সি। পরে তিনি গান্ধী পদবী দত্তক নেন। এদের ঈশ্বর অগ্নিদেব বা আগুন। তার মন্দির পর্যন্ত আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এদের বিয়ে অনেকটাই হিন্দুদের মতো। মৃত্যুর পর এদের মৃতদেহ আগে একটি উঁচু স্থানে ফেলে দেওয়া হতো, কাক শকুনের খাদ্য হতে। কিন্তু আজকাল দাহ করা হয়।
এদের উৎসবে খাওয়া কিন্তু দারুন। বাঙালিদের মতো এরাও আমিষ খাদ্য খান। মাংস বলতে মাটন ও চিকেন। ব্যস অন্য মাংসে এদের ঝোঁক নেই। যে কোনও উৎসবে এদের খাওয়া হয় কলাপাতায়। প্রথমে পরিবেশিত হয় সুস্বাদু সরবত। তারপর পাতে পরে আচার ও ছোট পাঁপড়। কখনও সামান্য ভাজাভুজি থাকলেও তেমন কিছু না। আসে রুটি, যাকে বলে রোটালি সঙ্গে চিকেনের পদ। এরপর সাদা মাটন, যা খেতে অপূর্ব, কাজু ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। এরপর আসে ধান ডাল কলমি। একদম শেষে ভাত ডাল আসলেও তা সুস্বাদু। সব শেষে কাস্টার্ড বা পুডিং। বেশ রসালো হয় এঁদের রান্না কিন্তু একটু ভিন্ন স্বাদের। আজকাল মুম্বই ছাড়া এই পার্সিদের সংখ্যা অন্য প্রদেশে খুব কম।
এবছরে বর্ষাটা (Monsoon) ঠিক জমিয়ে আসেনি। তাই ছাতার (Umbrella )বিক্রিবাট্টাও ঠিক জুতের হল না। গ্রীষ্ম (Summer) আর বর্ষা। ছাতা প্রয়োজন মূলত এই দুই মাসেই। তবে শুধু বৃষ্টির হাত থেকে অথবা চাঁদি ফাটানো রোদের হাত থেকে বাঁচতেই নয়। রাতের বেলায় কুকুর ঠেঙাতে, ভিক্টোরিয়ার (Victoria) ঝোপে ঝাড়ে। এমনকি মনের সুখে ছাত্রের পিঠে ছত্র ভাঙা... ছাতার হাজার ব্যবহার।
বর্ষা আসলে ছাতা বস্তুটার কদর যদিও বাড়ে, তবে আমব্রেলা শব্দটি কিন্তু এসেছে ল্যাটিন আমব্রা থেকে। আর আমব্রা অর্থ ছায়া (Shadow)। মানে ধরে নেওয়াই যেতে পারে রোদ থেকে বাঁচতেই ছাতা তৈরি হয়েছিল। চিনে ছাতার জন্ম। এরপর ছাতা পারি দেয় ইউরোপে। চিনের সংজিয়াতে বিশ্বের সবথেকে বেশি ছাতা তৈরি হওয়াতে এই শহরটিকে বলা হয় পৃথিবীর ছাতা। শুধু চন্ডীতলার পঞ্চানন খুঁড়ো নন ছাতাকে আত্মরক্ষার (Self defense) অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জিওর্জি মারকোভ স্বয়ং। ছাতার বাটে লুকিয়ে রাখতেন গুপ্তি গোছের অস্ত্র। খামখেয়ালি আবহাওয়ার জন্য শহর লণ্ডনে কিন্তু ছাতা দৈনন্দিজন জীবনের অঙ্গ।
এতো গেলো ছাতার সাতকাহন। কিন্তু ভরা শ্রাবন পেরিয়ে গেল, বাংলার আকাশে বৃষ্টি কই? এ মরসুমেই ছাতা বেচে দুটি পয়সার মুখ দেখেন ছাতা ব্যবসায়ীরা।আষাঢ়ের শুরুতে বৃষ্টি আশা দেখালেও তারপর থেকে মুখ ফিরিয়েছেন বরুণ দেব। ফলে যে সব ব্যবসায়ীদের দিনে কমবেশি ৪০-৫০ টা ছাতা বিক্রি হত, সেখানে বিক্রি গিয়ে ঠেকেছে দিনে ১০-১৫ টায়।তারওপর কাপড় লোহার শিক এর মত কাচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লভ্যাংশের পরিমাণও তলানিতে। ছাতার বিক্রি যেমন তেমন, রেনকোটের (Raincoat) বিক্রির হাল আরও খারাপ।
সব মিলিয়ে এ মরসুমে মুখ থুবরে পড়েছে ছাতা ব্যবসা। হাল খারাপ বাংলার ছাতা ব্যবসায়ীদের। গত দুবছর অতিমারি (pandemic) প্রভাবে এমনিতেই সংসারে হাড়ির হাল শোচনীয়। ভাবা গিয়েছিল এবার হয়তো পরিস্থিতি বদলাবে। কিন্তু কোথায় কী? এখন শরতের শুরুতে আকাশ সাজছে কালো মেঘে। তবেকি এবার শরত্ ভাসবে? নতুন জামাকাপড়ের সঙ্গে বিকোবে নতুন ছাতা? আশায় বুক বাঁধছেন ছাতার ব্যবসায়ীরা। আব্বাসউদ্দিনের কথায় সুর মেলাচ্ছেন আল্লা মেঘ দে পানি দে।
ইতিহাস সমৃদ্ধ বাংলার পট (pot)। বিশ্ব দরবারে সমাদৃত পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Medinipur) নয়ার পটচিত্র। পিংলার পটচিত্র পরিদর্শনে এলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক আয়েশা রানী। পিংলা (pingla) ব্লকের একটি ছোট্ট গ্রাম নয়া। এই গ্রামের সঙ্গে মিশে আছে পশ্চিমবঙ্গের এক অন্যতম শিল্পমাধ্যমের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ইতিহাস। যা শুধু রাজ্য নয় বিশ্বের দরবারে আজ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পিংলা ব্লকের নয়া গ্রাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে একমাত্র পটচিত্র গ্রাম। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে এবং উঠোনে এই পটচিত্রের ছাপ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাড়ির সামনেই পটচিত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন, আবার কেউ কেউ ঘরের সামনে বসেই ছবি আঁকেন।
সংস্কৃতে ‘পট’ শব্দের অর্থ হল কাপড়, আর ‘চিত্র’ মানে ছবি অর্থাৎ পটচিত্র বলতে কাপড়ের উপর অঙ্কিত চিত্রকে বোঝানো হয়। এই চিত্র অঙ্কন করার জন্য প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সমস্ত রং ব্যবহার করা হয়। যেমন- গাছের সিম দিয়ে সবুজ রং, ভুসোকালি দিয়ে কালো রং, অপরাজিতা ফুল দিয়ে নীল রং, সেগুন গাছের পাতা দিয়ে মেরুন রং, পান-সুপারি চুন দিয়ে লাল রং, পুঁই ফল দিয়ে গোলাপি রং, কাঁচা হলুদ দিয়ে হলুদ রং, পুকুর খনন করে মাটি বের করে তা দিয়ে সাদা রং ইত্যাদি। সাধারণত এই সমস্ত প্রাকৃতিক রং দিয়ে ছাতা, হাতপাখা, হ্যান্ডব্যাগ, মোড়া, লন্ঠন, কেটলি ইত্যাদি আঁকা হলেও শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট-এ শিল্পীরা ফেব্রিক রং ব্যবহার করে থাকেন।
জানা যায়, এই গ্রামের বেশিরভাগ পটুয়ারাই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তবুও তাঁরা রামায়ণ, মহাভারত, দুর্গা কাহিনী মঙ্গলকাব্যের বিভিন্ন পটচিত্র এঁকে থাকেন। সে জন্যই হয়ত ধর্মীয় সম্প্রীতির মেলবন্ধনের ছবি এই গ্রামেই ধরা পরে। আর এমনই একটি গ্রামের পটচিত্র পরিদর্শনে এলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক আয়েশা রানী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পিংলা সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন চক্রবর্তী, পিংলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত কীর্তনীয়া, পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ মাইতি সহ প্রশাসনিক একাধিক কর্মকর্তারা। এদিন তাঁরা ঘুরে দেখেন প্রতিটি কার্যকলাপ। পরে পটুয়াদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন জেলাশাসক।
প্রসূন গুপ্ত: বাঙালির খাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনও কাল নেই, এক আড্ডায় এক সময়ে বলেছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। ওনার গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ পড়তে গেলে খাবারের কত রকম যে বিবরণ পাওয়া যায় তার তুলনা নেই। ব্যোমকেশের গল্পেই বর্ষাকালে তেলেভাজা বা খিচুড়ি ও ডিমভাজার গপ্পো শোনা যায়। বাংলার আবহাওয়ার একটি দিক আছে। শীত ও বসন্তকালে বাংলার আবহাওয়া শুষ্ক থাকে বলেই এই সময়ে পেটের রুগীদের পর্যন্ত নানা খাবার বা রান্না হজম হয়ে যায়। অনেকেই বলে গ্রীষ্মকাল নাকি হজমের পক্ষে কঠিন সময়। কিন্তু এই ধারণা আংশিক সত্যি। আসলে বর্ষকালে ভিজে আবহাওয়ার জন্য হজম শক্তি মানুষের কমে যায়। যে কারণে দেখা যায় যত পেটের গন্ডগোল বা সর্দিকাশির প্রকোপ এই সময়েই বাড়ছে।
কিন্তু জিভের লালসা এই বর্ষাকালেই বেড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ তেতো খেতে ভালোবাসতেন, তিনি বিভিন্ন মানুষকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেন, 'বর্ষাকাল রোমান্টিক সময় কিন্তু খাওয়া দাওয়ার জন্য নয়। তাঁদের কলকাতার ঠাকুরবাড়িতে পেয়াঁজ রসুন ছাড়া পাতলা মাছের ঝোল রান্না হতো বর্ষাকালে যার রেসিপি পর্যন্ত দেওয়া আছে।' তবে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার আবার বর্ষাকালে খিদে পেত বেশি। চানাচুর থেকে আলুকাবলি কোনও কিছুতেই টেনিদার আপত্তি ছিল না। শোনা যায়, নারায়ণবাবুর প্রিয় খাদ্যগুলিই টেনিদার নামে চালাতেন।
সাহিত্যিক বা বিখ্যাতরা যাই বলুন না কেন। সারাদিনের কালো আকাশ এবং ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি। কোনওভাবে অফিসে রেইনি ডে মিললে, ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন বাঙালি গৃহকর্ত্রী, গিন্নিকে অনুরোধ করবেই আজ একটু খিচুড়ি হয়ে যাক। তা না হয় হলো, কিন্তু খিচুড়ির সঙ্গে খাবে কি? বললেই তো আর বাজারে গিয়ে ইলিশমাছ কিনে আনা যায় না অতএব ডিমের ওমলেট আর খিচুড়ি। ডিমও যদি না থাকে তবে কিছু একটা ভাজাভুজি দিয়ে দুপুরের খাওয়াটা জম্পেশ করে খাওয়া যায়। আর এসব কোনওটাই হলো না তবে অবশ্যই বিকেলে তেলেভাজা আর মুড়ি মাস্ট। বর্ষার গৃহবন্দী হয়ে এর বিকল্প কিছু আছে নাকি?
প্রসূন গুপ্ত: কলকাতা বা অন্য প্রান্ত থেকে বহু বাঙালি সেলিব্রেটিরা নাম করেছেন বলিউডে। নায়িকা যাঁরা এই রাজ্য থেকে মুম্বইতে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শর্মিলা ঠাকুর, ঠাকুর পরিবারের কন্যা। কার্যত তাঁদের আদি বাড়ি ওপার বাংলায়। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের পূর্ব পুরুষরাও ওপর বাংলা থেকে এসেছেন। কিন্তু ক'জন জানেন জয়া বচ্চন বা জয়া ভাদুড়ির আদি বাড়িও ছিল ওপার বাংলায়। ফলে অমিতাভ যতই নানা অনুষ্ঠানে বলুন না কেন তিনি কলকাতার জামাই, তা আদতে ভুল। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ছিল ওপর বাংলার নেত্রকোনায়।
ঢাকা শহর থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে নেত্রকোনার পূর্বধলায়। এটি আদতে একটি গ্রাম। এই গ্রামেই জন্ম হয়েছিল জয়ার বাবা প্রখ্যাত সাংবাদিক তরুণ ভাদুড়ির। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭-এ তাঁরা প্রথমে কলকাতায় পরে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে বসবাস শুরু করেন।শোনা যায় সবাই চলে এলেও জয়ার দাদা সুধীর ভাদুড়ি নাকি এ বাংলায় আসেননি। তিনি চলে যান ময়মনসিংহতে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু।
আপাতত নেত্রকোনার বাড়িটি ভঙ্গুর হয় গেলেও দখল হয়নি। একতলা সাদা বড়-বড় পিলার দেওয়া বাড়ি। সামনে মস্ত বাগান, সেখানে আম, জাম, নারকেল বা লিচুর গাছ আছে। আজও ফলন হয়। ওই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করে একটি হিন্দু পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, কেউ দাবিদার নেই। মাঝে মধ্যে ভাদুড়িদের কোনও আত্মীয় এলে এদের বাড়িতেই খাওয়া দাওয়া করেন। তাদের আক্ষেপ বাংলাদেশ সরকার, ভারতের বিখ্যাত বচ্চন পরিবারের সঙ্গে যুক্ত বাড়িটি হেরিটেজ করে রেখেছে। কিন্তু কখনও জয়া বা অমিতাভ বচ্চন আসেননি। তাদের বক্তব্য, জয়ার এখন বয়স হয়েছে, কে কবে আছে কে চলে যায় কে জানে। কিন্তু পৈতৃক ভিটে দেখার আগ্রহ তো মানুষের থাকা উচিত। বাংলাদেশে জয়া এসেছেন কয়েকবার কিন্তু নেত্রকোনায় আসার প্রয়োজন বোধ করেননি। হয়তো আসবে, এই আশায় বসে ওই বাঙালি পরিবার।