
কলকাতা এমন এক শহর আজও যেখানে অতি সস্তায় খাবার পাওয়া যায় | বোধহয় সারা বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা কলকাতা শহরের খাদ্য | এখানে আজ দুর্মূল্যের বাজারে অনায়াসে ২০ টাকায় পেট ভোরে খাওয়া যায় | রাস্তার ধারে এক প্লেট খিচুড়ি, সঙ্গে একটি বেগুনি, একটি পাঁপড় ও আচার ২০ টাকা | ধর্মতলা বা বিবাদি বাগে তিনটি কচুরি ও দুটি বড় জিলিপি ৩০ টাকা | কত রকম খাবার এই শহরের নানা প্রান্তে পাওয়া যায় | পার্ক স্ট্রিটে এগ রোল একটি ২৫ টাকা, খেলে অন্তত ৪/৫ ঘন্টা আর খিদে পাবে না | বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে বড় ধোসা ২০ টাকা, এক প্লেট ইডলি সম্বর ১৫ টাকা |
আরএন মুখার্জি রোডে খেতে চাইলে সারা দেশের খাবার পাওয়া যায় | এক প্লেট সিঙারা ঘুগনিও পাওয়া যায় ২০ টাকায়, গেলেই গরম গরম পরিবেশন করবে | নিউ মার্কেটের সামনেই এক ফুচকার দোকানি বসে, সারাদিনে কয়েক হাজার টাকা রোজগার তার | বোধহয় কলকাতার সেরা ফুচকা এখানেই | ধর্মতলায় দক্ষিণ রেলের অফিসের সামনেই গলিতে কলকাতার সেরা টোস্ট সুপের দোকান | সুপ্ না খেলে ঘুগনি নিতে পারেন | এর নাম ডেকার্স লেন | তবে অনেকেরই মতে মোহনবাগান ক্লাব টেন্টে সেরা স্টু আর পাঁউরুটির স্বাদ নাকি সবার সেরা |
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির লাগোয়া এক মিষ্টির দোকানে কলকাতার অন্যতম সেরা কচুরি পাওয়া যায় | দক্ষিণ কলকাতা অবশ্য একটু দামি | তবুও দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খেতে টালিগঞ্জ এলাকা বিখ্যাত | টালিগঞ্জের সিনেমা পাড়াতে প্রচুর দোকান | পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে একটু খুঁজলেই বিখ্যাত মাংসের ঘুগনি পেয়ে যাবেন সঙ্গে হাত রুটি | দিল্লি, মুম্বাই ফলের কিংবা জুসের জন্য বিখ্যাত | কিন্তু কলকাতা কম যায় না | বিধান সরণি ও বিবেকানন্দ রোডের কাছে বিখ্যাত সরবতের দোকান ছিল আপাতত তা বিলুপ্ত কিন্তু ধর্মতলায় কেসি দাসের স্টপেজের সামনে দুর্দান্ত সরবত পাওয়া যায় কিন্তু দাম আছে | অবশ্য ফলের রসের সঙ্গে কাজু কিসমিস দেওয়া এই জুস্ | আসলে কলকাতা আজও সাধারণ মানুষের মুখের রুচি সস্তায় যোগান দিতে পারে |
ফের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড শহরে। এবার আগুনের কবলে তপসিয়া এলাকার ২৪ নং বাসস্ট্যান্ডের কাছেই অবস্থিত মজদুরপাড়ার ঝুপড়ি। ভস্মীভূত ঝুপড়ির একাংশ। শুক্রবার দুপুরে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের সাতটি ইঞ্জিন। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা।
কর্মব্যস্ত দিনে দুপুর বেলায় আচমকা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। জানা গিয়েছে, সেখানে অনেক ঘর-বাড়ি রয়েছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে দমকলবাহিনীকে। দমকলের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও।
ওই ঝুপড়ির বেশ কিছু বাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। এলাকায় দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনুমান। তবে এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনও খবর নেই। আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ঝুপড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
ওই ঝুপড়িতে বসবাসকারী এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে জানান,তাঁর ঘর আগুনে জ্বলে গেল। টাকা পয়সাও পুড়ে গেল। ব্যাঙ্ক থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে এনেছিলেন তিনি। সব ডকুমেন্টস পুড়ে ছাই। শুধু পরণের কাপড়টুকুই আছে। ঘরে থাকাকালীনই হঠাৎ আগুন দেখতে পেয়ে দৌড়ে সবাই বেরিয়ে পড়েন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা।
আগুনের খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিধায়ক জাভেদ খান। এই প্রসঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন," সারা কলকাতা জুড়ে একটা সমস্যা তো সবসময় রয়েছে। বিনা পরিকল্পনায় যেখানে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস। এই কারণে অগ্নিকাণ্ড বারবার ঘটে। মানুষের সচেতন করা ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়। অনেক নিরীহ মানুষ এখানে বসবাস করছেন। আমরা এর আগেও মানুষের জন্য চেষ্টা করেছি। যেহেতু আইনি জটিলতা রয়েছে।সেকারণে সমস্যার সমাধান হয়নি। আগুন লেগে ১৫টা বাড়ি পুড়ে গেছে। তাই আগে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর সবাইকে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।"
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে কলকাতার ট্যাংরায় এক প্লাস্টিকের গুদামে আগুন লাগে। ভস্মীভূত হয়ে যায় গোটা গুদাম। তার কয়েকদিনের মাথায় ফের এমন ঘটনায় আতঙ্কিত শহরবাসী।
ফের গৃহবধূর রহস্য়মৃত্য়ু। আত্মহননের খবরে শোরগোল টালিগঞ্জ পাড়ায়। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার ৯৯/১ টালিগঞ্জ রোডের বাড়িতে। মৃতার নাম পূজা চন্দ্র(২০)।
বুধবার, রাত ৭.৫০ নাগাদ দোতলার ঘর থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পূজার দেহ। সেই ঘরে থাকতেন স্বামী সঞ্জয় চন্দ্রের সঙ্গে। আর শাশুড়ি থাকতেন একতলার একটি ঘরে। পূজার কাছ থেকে পাওয়া যায় একটি সুইসাইড নোট। তাতে লেখা ছিল, তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী তাঁর শাশুড়ি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুর বাড়ির তরফ থেকে তাঁর উপর মানসিক অত্যাচার চলত। এমনকি পণের জন্যও তাঁর ওপর চাপ দেওয়া হত বলে অভিযোগ। হতাশা এবং মানসিক অবসাদের জেরেই এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি সকলের।
এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, " পূজা খুব ভালো মেয়ে ছিল। ওর মত মেয়ে হয়না। শাশুড়ি ওকে কারোর সঙ্গে মিশতে দিত না। কারোর সঙ্গে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারত না ওই বধূ। তবে ওর ওপর খুব চিৎকার করত। বাপের বাড়ি গেলে থাকতে পারত না। চলে আসতে হত পূজাকে।"
আরেক প্রতিবেশী মহিলা বলেন," ভাঁইফোটা দিতে বাপের বাড়ি গিয়েছিল। দুদিন বাপের বাড়ি ছিল। কেন বাপের বাড়ি থেকে গিয়েছে সেই নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেছিল ওর ওপর। এছাড়াও পূজাকে দিয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ করাত। মানসিকভাবে ওর ওপর খুব অত্যাচার করত। কারোর সঙ্গে কথা বললেই ওকে ডেকে নিয়ে যেত।"
১ বছর ৮মাস আগেই বিয়ে হয়েছে পূজা চন্দ্র ও সঞ্জয় চন্দ্রের। পূজা অন্তঃসত্ত্বা ছিল বলে দাবি প্রতিবেশীদের। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে টালিগঞ্জ থানার পুলিস। ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে পূজা চন্দ্রের দেহ। গ্রেফতার করা হয় স্বামী সঞ্জয় চন্দ্র ও শাশুড়িকে। এই ঘটনার পর রীতিমত হতচকিত পাড়া-প্রতিবেশী।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে খুন হতে হল এক গৃহবধূকে। অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। ১২ বছরের ছেলের সামনে কুপিয়ে খুন করা হল তার মাকে। অভিযোগ, দা দিয়ে এলোপাথারি কোপানো হয় । তড়িঘড়ি তাঁকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতার নাম প্রিয়াঙ্কা হালদার। অভিযোগ, এর আগেও তাঁকে মারধর করত স্বামী রুবেল হালদার। নিউটাউন থানা এলাকার শুলংগুড়ি দক্ষিণপাড়ার ঘটনা। ১৩-১৪ বছর আগে দেখাশুনো করে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে স্বামী রুবেল হালদার।
মৃতার দাদা অসীম মণ্ডল অভিযোগ করেন, ছেলেকে সকালে পড়াতে দিয়ে বাড়ি আসছিল বোন। তখনই হঠাৎ এক মহিলা তাকে ডেকে বাড়ি নিয়ে যায় এবং বলে, তার স্বামীর কিছু হয়েছে। এরপর বোন বাড়ি গেলে, সেখানেই তার স্বামী এসে এলোপাথারি কোপাতে থাকে তাকে। তার মাথায়-মুখে কোপানো হয়। এলাকাবাসীরা দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
তাঁর আরও অভিযোগ, তার বোনাই অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে ঘরে রেখেছে। সেই মহিলার উস্কানিতেই তার বোনাইয়ের এই কাজ। ছেলেকেও মারার চেষ্টা করে বাবা। ছেলে ছুটে গিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে আসে। তাঁরা ছুটে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ড্রেনের পাশে পড়ে আছে বোনের দেহ। তাঁরাই উদ্ধার করে বিধাননগর হাসপাতালে নিয়ে যান। এর আগেও ৪ থেকে ৫ বার তাঁর বোনকে মারার চেষ্টা করেছিল। যার লিখিত অভিযোগ নিউটাউন থানায় আছে। দোষীর যথাযথ শাস্তি চান তাঁরা।
করোনার চোখরাঙানির মধ্যেই শহরজুড়ে ডেঙ্গিও তার জাল বিস্তার করছে। ইতিমধ্যে শহর ও শহরতলির বেশ কয়েকজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারাও গিয়েছেন। গত সোমবারই বাগুইআটির এক গৃহবধূ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরইমধ্যে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় ডেঙ্গির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী।
পুরসভা সূত্রে খবর, দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার ৫৬ জন বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তারমধ্যে পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পাচুগোপাল রায়ের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গির চিত্র ভয়াবহ। মুখ্য প্রশাসকের ওয়ার্ড ২৫ নম্বর। সেই ওয়ার্ডেও ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গি। এরজন্য বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় দক্ষিণ দমদম পুরসভায় জরুরি ভিত্তিতে একটি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য প্রশাসক পাচুগোপাল রায়, হেলথ অফিসার সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। যেখানে ডেঙ্গি কিভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রসঙ্গত, বছর তিনেক আগে দক্ষিণ দমদমের ডেঙ্গি পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে, সরকারের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় পুর প্রশাসনকে। তার পরের বছরগুলিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এবছর ফের মাথাচাড়া দিয়েছে ডেঙ্গি। কিছুদিন আগেও এক সাক্ষাৎকারে পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পাচুগোপাল রায় জানিয়েছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। পুর এলাকার ৩৫টি ওয়ার্ডে ২০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তার মধ্যে ২৫ নং ওয়ার্ডে ৬ জন আক্রান্ত। আর তার ১৫ দিনের মধ্যেই পুর এলাকার ডেঙ্গির গ্রাফ একলাফে ২০ থেকে বেড়ে ৫৬ দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, ডেঙ্গির থাবায় আক্রান্ত বরাহনগরের বহু বাসিন্দাও। যার ফলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে বরাহনগর পুর এলাকায়। পুর এলাকার ১৭, ১৮, ১৯, ১৫, ২৫, ৩, ১ এবং ৪ নং ওয়ার্ড-এ ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতর। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই সময় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৩। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮। এর ফলে আতঙ্ক বাড়ছে বসিন্দাদের মধ্যেও।
আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে উঁচু ক্লাসের পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে | নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সমস্ত ক্লাস চলবে | করোনা আবহে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়গুলি বন্ধ ছিল। তার ফলে বিপুল ক্ষতি হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের | পরীক্ষা ছাড়াই তারা পরের ক্লাসে উঠে গিয়েছে | শুধু সেখানেই নয়, পরীক্ষা ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাদের অনেকেই এখনও কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়নি | এছাড়া ভার্চুয়াল ক্লাস কতটুকু সাহায্য করতে পেরেছে পড়ুয়াদের বা কটা স্কুল ভার্চুয়াল ক্লাস করতে পেরেছে ? এছাড়া বিজ্ঞানের পুরো প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতেই পারেনি ছাত্রছাত্রীরা। ফলে তাদের শিক্ষা অসমাপ্ত বলেই ধারণা বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষের |
অবশেষে ১৬ নভেম্বর পুরোদস্তুর ক্লাস শুরু হবে | এরই মধ্যে আদালত অবধি বিষয়টি গিয়েছিল | বিচারপতি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে পড়াশুনা চলবে | এরপরেও কোনও সমস্যা হলে সরকারকে বিষয়টি জানাতে হবে, সরকার ব্যবস্থা নেবে | অতএব সমস্যা সমাধানের একদিকের দায়িত্ব সরকারের থাকছে | পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বহু রাজ্যে ইতিমধ্যে স্কুল শুরু হয়ে গিয়েছে | প্রশ্ন অবশ্য থেকে যাচ্ছে, ছোটদের স্কুল খুলবে কবে ?
পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে চিন্তা করে এবং সাধারণ মানুষের অনুরোধ মেনে কলকাতার মেট্রো ১৫ নভেম্বর থেকে সময় বাড়িয়ে দিল | মোটামুটি দমদম থেকে সকাল ৭ টায় প্রথম ট্রেন ছাড়বে এবং শেষ ট্রেনের সময় রাত সাড়ে ৯ টা। একইভাবে উল্টোদিকের ট্রেনও একই সময় চালু থাকবে এবং সেখানেও শেষ গাড়ি রাত সাড়ে ৯ টা | এটা বাস্তব, সারা কলকাতায় মেট্রো চালু হয়ে মানুষের সুবিধাই হয়েছে | শিয়ালদহগামী ট্রেনের যাত্রীরা অনেকেই দমদমে নেমে মেট্রো ধরে গন্তব্যস্থলে যান | ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও যাত্রী কমেনি | তবে ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে যাওয়ার বিষয়ে মেট্রো কড়া মনোভাব রাখছে | সকাল ৭ টায় ট্রেন চালু হওয়াতে খুশি বঙ্গবাসী। কিন্তু তাদের অনুরোধ, রাতের সময়সীমা অন্তত রাত ১০টা হোক |
যত দিন যাচ্ছে, শহরের বুকে যানবাহন সমস্যা যেন তীব্র হচ্ছে। কারণ, রাস্তাঘাটে গাড়ির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পথচলতি মানুষের সংখ্যাও। বিশেষ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। সেরকমই একটি মোড় হল ই এম বাইপাসের রুবির মোড়। উল্টোডাঙা ও গড়িয়ার মধ্যে যোগোযোগকারী এই সদা ব্যস্ত রাস্তার সঙ্গে রয়েছে রাসবিহারী অ্যাভিনিউর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার যোগও। তারওপর মেট্রোর কাজ চলছে জোরকদমে। ফলে আগামীদিনে এই মোড়ের গুরুত্ব যে আরও বাড়বে, সন্দেহ নেই।
সেই কারণেই দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটের পর এবার আর একটি স্কাইওয়াক তৈরি হতে চলেছে কলকাতার বুকে। রুবি হাসপাতাল মোড়ে তৈরি হবে এই স্কাইওয়াক। বাইপাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মেট্রো স্টেশনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর সঙ্গে সংযুক্ত রেখেই তৈরি করা হবে এই স্কাইওয়াক। মেট্রো স্টেশন থেকে যে সমস্ত মানুষ বেরোবেন, তাঁদের সুবিধার্থে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিভিন্ন রাস্তার সংযোগস্থল থাকায় রাস্তা পারাপার করতে মানুষের অসুবিধা হয়। এমনকি দুর্ঘটনা ঘটার একটা বড় সম্ভাবনা থেকে।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, আগামী নতুন বছর থেকে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কেএমডিএ বা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির পক্ষ থেকে ডিপিআর বা ডিটেইলস প্রজেক্ট রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অর্থ দফতরকে ডিপিআর পাঠানো হয়েছে। শুধুমাত্র তাদের সম্মতির অপেক্ষা। অর্থ দফতরের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু করা হবে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক চালু হওয়ার পর মন্দিরে যাওয়া যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি কমেছে যানজটও। এখানেও সেই সুবিধা চালু হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন বলে অনুমান।
নগরীতে বৃত্তাকার স্কাইওয়াক নির্মাণের এটাই প্রথম প্রস্তাব। আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের কাঠামোটি ১৮ ফুট বা ৫.৪ মিটার উঁচু হবে। ২৪০ মিটার দীর্ঘ স্কাইওয়াকের ব্যাস হবে ৭০ মিটার। স্টিলের কাঠামোতে ৫ মিটার চওড়া ওয়াকওয়ের উভয়পাশে থাকবে কাচের দেওয়াল।
দীপাবলি শেষ হতেই না হতে শুরু হয়ে যায় ছটপুজোর প্রস্তুতি। এটি বাঙালিদের উৎসব না হলেও তার ছোঁয়া লাগে বাংলাতেও। কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক সপ্তমী পর্যন্ত চারদিন ধরে চলে ছটপুজো। বছরে দুবার পালিত হয় ছট। প্রথমবার চৈত্র মাসে এবং দ্বিতীয়বার কার্তিক মাসে।
ছটপুজোর উন্মাদনা দেখা যায় কলকাতাতেও। কারণ এখানে রয়েছে প্রচুর অবাঙালি। তবে এবারও দূষণের জেরে বন্ধ করে দেওয়া হল রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর। এর পরিবর্তে ছটপুজোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে গঙ্গার ৩৭ টি ঘাট এবং যোধপুর পার্ক, পোদ্দারনগর, আনন্দপুর এবং পাটুলি মিলিয়ে মোট ১৭০ টি ঘাট। এই বিকল্প ব্যবস্থায় খুশি ছট পুজোর ব্রতপালনকারীরা।
উল্লেখ্য, বুধবার থেকে ১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার অবধি চলবে ছটপুজো। তবে ইতিমধ্যে ৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টা অবধি বন্ধ রাখা হল রবীন্দ্র সরোবর পার্ক। কড়া নিরাপত্তা ও বাঁশের ব্যারিকেডে মুড়ে ফেলা হল রবীন্দ্র সরোবর চত্বর। মূলত ভয়াবহ দূষণের ধাক্কায় রবীন্দ্র এবং সুভাষ সরোবরের জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে এসেছে। পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, ঢাকুরিয়া লেকে ছটপুজো হলে জলজ প্রাণীর বাঁচার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই এবারও রবীন্দ্র এবং সুভাষ সরোবরে বন্ধ ছট পুজো।
এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, "আমরা সবসময় চেয়েছি সরোবরের জলে পুজো বন্ধ করা হোক। এতে দূষিত হচ্ছিল জল। আমরা অদের সেন্টিমেন্টকে বুঝি। অন্য ব্যবস্থাও করেছে সরকার। এটা খুব ভাল উদ্যোগ।"
ছট পুজো কী? কিভাবে করা হয় এই পুজো?
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ছটপুজো হল সূর্য পত্নী ছঠি মাঈ-এর পুজো। ছঠি মাঈ-কে ঊষাও বলা হয়। ছট পুজোর মাধ্যমে সূর্য দেবতা ও সূর্য পত্নী ছঠি মাঈ-এর পুজো করা হয়। ডুবিত এবং উদিত সূর্যকে পুজো করা হয় এই উৎসবে। এই পুজোর বিশেষ কিছু রীতি রয়েছে। এই পুজো শুরুর দিন বাড়ি পরিষ্কার করতে হয়। সকালে নিরামিষ খান সকলে। এর ঠিক পরের দিন চলে নির্জলা উপোস। এরপর সন্ধ্য়ায় ক্ষীর ভোগ খেয়ে উপবাস ভাঙেন সকলে। তৃতীয় দিন গঙ্গা বা নদীতে সূর্যদেবের পুজো করেন। সেদিনই পুজোর সমাপ্তি হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুভাষ সরোবর-রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। গেটের তালা ভেঙে, গেট ভেঙে পুণ্যার্থীরা প্রবেশ করেন রবীন্দ্র সরোবরে। প্রশাসনের নিরাপত্তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। ২০২০ সালে করোনার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছিল সরোবর। হাইকোর্ট ও পরিবেশ আদালতের রায়ই বহাল রাখার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কেএমডিএ-আবেদন খারিজ করা হয়। তাই এবারেও নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ।
রামমোহন রায় কিংবা বিদ্যাসাগরের আমলেও বোধকরি বিবাহের প্রচলন ছিল না | বিয়ে নেই, কাজেই ডিভোর্সের প্রশ্নই নেই | আজকাল দেশ- বিদেশে ডিভোর্সের ছড়াছড়ি | ৮০-৯০ এর দশকে শোনা যায়, আমেরিকাতে জলভাত ছিল স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি | এর ফলে তাঁদের সন্তানদের উপর মানসিক চাপ প্রবলভাবে বাড়তো | ওই সময়ে তাদের দেশীয় শিক্ষার মান খুব কমে গিয়েছিল। কার্যত ওই সময়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ আমেরিকাতে বসবাস শুরু করে কর্মজীবনের সাথে | আজকাল এই বাংলাতেও তার প্রভাব পড়েছে। উদাহরণ চলচ্চিত্র ও সেলিব্রিটিরা | কিন্তু শিশুমনে তার প্রভাব পড়া কি উচিত ? কিন্তু পড়ছে | বিশেষ করে আজ শিশুদের হাতে মোবাইল হ্যান্ডসেট। ফলে অনায়াসেই সিরিয়ালের ঝোঁক বাড়ছে |
একটি ৫ বছরের শিশুকন্যা, নাম দিতি ( কাল্পনিক ) | স্কুল তার কবেই করোনা আবহে বন্ধ হয়ে গিয়েছে | সকালে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ক্লাস হচ্ছে | ঘুম ঘুম চোখে মায়ের পশে বসে দিতি সেই ক্লাস করে, আর মায়ের বকুনি খায়। কারণ মা দেখেন, অন্য বাচ্চারা অনেক উত্তর দিচ্ছে। কিন্তু দিতি পারছে না | এটাই সমস্যা | স্কুল মানে টিচার বুঝে নেবেন। সেখানে স্কুলের ক্লাসে মায়ের ভূমিকাই নেই, কিন্তু ভার্চুয়ালে আছে | এরই মধ্যে বাবা-কাকারা অফিসে চলে গিয়েছে মাস্ক পরে। কিন্তু করোনার কারণে দিতির বেরনো নিষিদ্ধ | কাজেই মা রান্না ঘরে যাওয়ার আগে মেয়ের হাতে নিজের মোবাইলটি দিয়ে যাচ্ছেন। কারণ ওর তো আর কিছু করার নেই |
প্রথম প্রথম দিতি কার্টুন দেখতো। কিন্তু পরে পাল্টে গেলো সব | এখন বাড়িতে মা-ঠাকুমা কাজ করতে করতে মোবাইলে সিরিয়াল দেখেন | দিতি বুঝলো, এগুলো বেশ মজার। তাই দ্রুত বইয়ের শিক্ষার আগে মোবাইলে বোতাম টিপে টিপে দুনিয়ার অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করে দিল | আচমকাই রাতে ডিনার টেবিলে সবার সামনে জিজ্ঞাসা করে, গুনগুনের ডিভোর্স হয়ে গেলো মা | আমার কী হবে ? সকলের চক্ষু চড়কগাছ | ৫ বছরের মেয়ে বলে কী ? দাদু জিজ্ঞাসা করলেন, দিদু ডিভোর্সটা কি ? দিতির চটজলদি উত্তর, হাসব্যান্ড-ওয়াইফের আলাদা হয়ে যাওয়া | এই যেমন তোমার আর দিদুর মধ্যে যদি একটা পাঁচিল উঠে যায় | এরপরই মায়ের ধাঁই ধাঁই মার, পাকা মেয়ে কাল থেকে তোমার মোবাইল দেখা বন্ধ | বাবা বললেন, অন্ধকারে দিয়ে আসবো | কিন্তু বেচারা ৫ বছরের কন্যা করোনাতে তো এমনিতেই অন্ধকারে। আর নতুন করে যাবে কি ?
একদিকে উৎসবের মরসুম প্রায় শেষের পথে। সামনে জগদ্ধাত্রী পুজো। তারপর বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণের মধ্যে মোটামুটি এগারো পার্বণ সম্পন্ন হবে। অপরদিকে অগ্নিমূল্য বাজারদর। ভোজনপ্রিয় বাঙালির পাতে পড়েছে টান। লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে অনেক শাক-সবজি। তার ওপর পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জের এখনও চলছে । তার ফলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজির দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে বলেই দাবি ক্রেতা থেকে বিক্রেতা সকলের।
মঙ্গলবারের বাজারে বিভিন্ন সবজির কেজিপ্রতি দাম ছিল খানিকটা এইরকম। আলু ২০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, যা গত দুদিনের তুলনায় একটু কম। পেঁয়াজ ৫০ টাকা, বেগুন ৮০-৯০টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস যথাক্রমে ৫০-৬০ এবং ৪০ টাকা। টমাটোর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮০ টাকা প্রতি কেজি। যা কিছুটা কমে হয়েছে ৭০টাকা। এছাড়া ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা প্রতি কেজি। উচ্চে এবং ঝিঙে প্রতি কেজি ৮০ টাকা ও ৬০ টাকা।
প্রচণ্ড উদ্বেগের সুরে এক ক্রেতা জানান, "বাজারে সবকিছুর দাম তো আকাশচুম্বী। যেভাবে বাজারদর বাড়ছে, তাতে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। এভাবে বাড়তে থাকলে বাজার করাই বন্ধ করে দিতে হবে। সাধারণ মানুষের দিকটা ভাবা দরকার সরকারের।"
উল্লেখ্য, ভোজ্যতেলের দামও বেড়ে চলেছে হু হু করে। এই বিষয়ে এক ক্রেতা জানান, "অনেকটাই বেশি বাড়ছে তেলের দাম। আগেরদিন এক দামে কিনলাম। পরেরদিন সেটা অনেকটা বেড়ে গেল। প্রশাসনের এবার একটু সজাগ হওয়া উচিত। বাজারগুলির ওপর কড়া নজরদারি চালানো দরকার। আরও এক ক্রেতা বলেন, " নজরদারি বাড়ালে খুবই ভালো হয়। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের দিকটা সরকারের একটু ভেবে দেখা উচিত।"
এক সবজি বিক্রেতা জানান, বৃষ্টির পর থেকেই বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। শীতের সবজি চাষ করা হয়েছিল। সেই চাষের জমিগুলিতে জল জমে শাক-সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে মাল আসছে না। তাছাড়া উৎসবের মরসুম বলেও দাম খানিকটা বেশি। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে বাজারদর কমবে।"
আরেক সবজি বিক্রেতা বলেন ,"শাক-সবজির দাম যে বেড়েছে, তার অন্যতম কারণ, পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে। ফলে গাড়ির খরচ বেড়েছে। মালও কম আসছে। তার ওপর কাস্টমার নেই। বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ।"
জর্জ ফ্লয়েডের ছায়া যেন কলকাতার বুকে। কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল শ্বেতাঙ্গ মার্কিন পুলিস। ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা আমেরিকা। ঠিক যেন সেই দৃশ্যই আবার ফিরে এল।
সম্প্রতি কলকাতা পুলিসের একটি ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, প্রবল বৃষ্টিতে কলকাতা পুলিসের এক আধিকারিক তাঁর ছাতার নীচে আশ্রয় দিয়েছেন রাস্তায় থাকা সারমেয়দের। এই মানবিকতার জন্য তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন গোটা দেশবাসীর।
কলকাতা পুলিসের মানবিক দিক নিয়ে চর্চা হলেও এবার কিন্তু দেখা গেল এক চরম অমানবিক চিত্র। রবিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিয়ো। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। এতে দেখা যাচ্ছে, ফুটপাতে পড়ে রয়েছেন এক যুবক। আর তাঁর বুকে-পেটে দেদার লাথি মেরে চলেছেন বুট পরিহিত এক সিভিক ভলান্টিয়ার। মাটিতে পড়ে থাকা সেই যুবক সিভিক ভলান্টিয়ারের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছেন। কিন্তু সেসবে গুরুত্বই না দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো নির্মমভাবে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার মেরে চলেছেন যুবককে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবীন্দ্র সদনের কাছে এক্সাইড মোড়ে। হাওড়াগামী একটি বাস থেকে রবীন্দ্র সদনে নামেন এক মহিলা। সেই সময়ই তাঁর হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করে ওই যুবক। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ধরে ফেলেন এক্সাইড মোড়ে কর্তব্যরত সিভিক পুলিস তন্ময় বিশ্বাস। আর তারপরই শুরু করে নৃশংস মারধর।
ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায় স্যোশাল মিডিয়া জুড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেন কলকাতার পুলিস কমিশনার সৌমেন মিত্র। বরখাস্ত করে দেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে। পাশাপাশি এমন ঘটনার জন্য শহরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন নগরপাল। তিনি বলেন, তিনি দুঃখিত এবং লজ্জিত।
শহর কলকাতার বুকে এহেন ঘটনায় কার্যত হতবাক নেটদুনিয়া। আইন কী করে নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন একজন সিভিক ভলান্টিয়ার, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ওই গ্রিন পুলিসের কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন স্যোশাল মিডিয়া ইউজাররা।
একের পর এক মৃত্যু, আত্মহত্যা। আর তার কেন্দ্র হয়ে উঠছে 'মা' উড়ালপুল। শনিবারের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই রবিবার ফের ঘটে গেল দুর্ঘটনা।
শনিবার বাঘাযতীন উড়ালপুলে বেসরকারি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বছর পঁচিশের এক যুবকের। ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই মা উড়ালপুল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন সরকারি গাড়ির চালক। ঘটনাটি ঘটে রবিবার সন্ধ্যায়। জানা গেছে, পার্ক সার্কাসের দিক থেকে রুবির দিকে যাচ্ছিল গাড়িটি। গাড়িতে 'Govt. of West Bengal' লেখা লোগো ছিল। ১৮ নং পিলারের সামনে গাড়িটি আচমকা থেমে যায়। চালকের আসন থেকে বেরিয়ে ঝাঁপ দেন ঝন্টুকুমার দাস। পুলিস এসে তাঁকে উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পারিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, "অফিসের কিছু কাজ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। পরিবারের কারও সাথে কোনওরকম সমস্যা হয়নি। তিনি একটু চাপা স্বভাবের ছিলেন। পরিবারের কাউকে কোনও কিছু জানাননি। ঝন্টু মিশুকে স্বভাবের ছিলেন। ওঁর স্বভাবের জন্য ওঁকে সবাই খুব ভালবাসত।"
মা উড়াল্পুলে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। দুর্ঘটনার খবর নিয়ে প্রায়শই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম এই ফ্লাইওভারটি। কিছুদিন আগে চিনা মাঞ্জা রোখার জন্য বাড়ানো হয় মা ফ্লাইওভারের রেলিং -এর উচ্চতা। রেলিং-এর ওপর লাগানো হয় তার। সম্প্রতি চিনা মাঞ্জায় জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন বাইক আরোহী। তারপরই সরকারের এহেন উদ্যোগ।
তবে নিত্যযাত্রীরা জানাচ্ছেন, রেলিং-এর উচ্চতা বাড়ানো হলেও তা আত্মহত্যা আটকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ইদানিং আত্মহত্যার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। করোনা মহামারী, লকডাউন, কর্মহীনতা, পারিবারিক অশান্তি প্রভৃতি অনেক কারণ। সরকারকে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। নাহলে এমন দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হবে।
বারবারই উড়ালপুলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সরকারকে দাঁড়াতে হচ্ছে সেই প্রশ্নের মুখে। সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার...।
"ফুলে হাত দিলেই যেন ছ্যাঁকা লাগছে। মনে হচ্ছে, এ তো পেট্রোলের চেয়েও দামি।" ফুলের দাম শুনে এমনই মন্তব্য করে বসলেন এক ক্রেতা। উত্তরে দোকানি বললেন, "আরে বাপু, টানা বৃষ্টিতে যে ফুলের গাছ মরে গেছে। গাছের গোড়ায় জল জমে সব গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে ফুল সাপ্লাই কম। তাই তো এত দাম। তার ওপর এতদিন পুজোর মরসুম ছিল। একটু তো দাম বাড়বেই।"
পুজোর কিছুদিন আগেও যে আকন্দ ফুলের মালা বান্ডিল পিছু ৬০-৭০ টাকায় পাওয়া যেত, তার দাম বেড়ে হয়েছে ৩৫০-৪০০ টাকা। গাঁদার বান্ডিল ৮০-৯০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০-৪০০ টাকা। জবার মালা বিক্রি হচ্ছে ১ পিস ১৫-২০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫-১০ টাকা। নীলকন্ঠ ফুল ৫ টাকা পিস। সূর্যমুখী ১০০ পিসের দাম ২০০ টাকা, আগে যা বিক্রি হত ১০০ টাকায়। পদ্মের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে ৫-১০ টাকা।
আরও এক ফুল বিক্রেতা জানান, "উৎসবের মরসুমের জন্যই ফুলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ওপর নিম্নচাপ। ফুল চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ায় গাড়ির খরচও বেড়েছে। সাপ্লায়াররা ফুলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমদের তো একটু হলেও লাভ রাখতে হবে।"
ফুলের দর কষাকষি করতে করতে এক ক্রেতা বলেন, "এ কী ? একদিকে শাক-সবজির বাজার আগুন। কিছুদিন পর তো নুন-ভাত খেয়ে থাকতে হবে। তার ওপর ফুলের দাম চড়া। ব্যবসা করব কিভাবে? দাম শুনে কেউ ফুল কিনতেই চায় না।"
উৎসবের মরসুম প্রায় শেষের পথে। সামনে জগদ্ধাত্রী পুজো। তার পরই বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে ১০ পার্বণ শেষ হবে। তার পরে কি আর কমবে ফুলের দাম? তার ওপর বাজার অগ্নিমূল্য। ভোজ্যতেলের দাম প্রতিদিনই প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এক কথায়, মধ্যবিত্তের হেঁসেলে আগুন লেগেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে পুজোর ফুলের দাম বৃদ্ধি, মানুষ যেন দিশাহারা।।
বাসের রেষারেষি এবং তার জেরে নিরীহ পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা এখন আকছারই ঘটছে। বহু ক্ষেত্রে আইনের চোখরাঙানিকেও তোয়াক্কা করছে না বাসচালকরা। শনিবার সকালে বাঘাযতীন উড়ালপুলে এমনই একটি বেসরকারি বাসের ধাক্কায় ঝরে যায় একটি তরতাজা প্রাণ।
এবার বেপরোয়া যানের তালিকায় ঢুকে পড়ল টোটোর নামও। আলোর উৎসবের ঠিক আগের রাতেই অন্ধকার নেমে এল প্রাক্তন ডব্লুবিসিএস অফিসার দীপককুমার সেনের বাড়িতে। কালীপুজোর জন্য রাজ্য ও জাতীয় সড়কে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয় পুলিস-প্রশাসন। ফলে শহরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে বেড়ে যায় টোটোর দাপট। আর সেই টোটোই প্রাণ কেড়ে নিল বারাসতের প্রাক্তন ডব্লুবিসিএস অফিসারের।
বুধবার, ৩রা নভেম্বর বারাসতের নতুনপুকুর এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব দীপককুমার সেন। তখন আচমকাই সামনে থেকে একটা টোটো তাঁকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলেন জ্ঞান। জ্ঞান ফেরার পর তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেয় পথচলতি মানুষ।
দীপকবাবুর ছোট ছেলে অভিষেক সেন বলেন, "বাবা প্রতিদিন বিকেল ৫টা-সাড়ে ৫টা নাগাদ হাঁটতে যায়। বুধবারও বেরিয়েছিল। এক ব্যক্তি বাবাকে বাড়ি দিয়ে গেল। আমাদের বলা হয়েছিল, বাবা মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়ে গেছে। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। পরে জানতে পারি আসল ঘটনা। বাবার মাথায় রক্ত জমে গিয়েছিল। যেটা বাবার মৃত্যুর আসল কারণ। বাবার হঠাৎ বুকে ব্যথা হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।"
তিনি আরও বলেন, "ইদানিং টোটোর দাপট মারাত্মক বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের চলাফেরাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। আর এরকম ঘটনা তো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বারাসত থানায় টোটোচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা ওর কঠিন শাস্তি চাই। সিসিটিভি ফুটেজ হাতে চলে এসেছে। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি ওই টোটো চালককে পুলিস গ্রেফতার করতে পারবে।"
টোটোচালকের সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল, নাকি টোটোচালক মদ্যপ অবস্থায় ছিল, তা তদন্ত করে দেখছে বারাসত থানার পুলিস। বারাসত শহরে যে বেআইনি টোটোর দৌরাত্ম্য বেড়েছে, সে কথা একবাক্যে স্বীকার করছেন এলাকার বাসিন্দারাও।
একদিকে উৎসবের মরসুম। অপরদিকে অগ্নিমূল্য বাজারদর। ভোজনপ্রিয় বাঙালির পাতে পড়েছে টান। লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে অনেক শাক-সবজি। তার ওপর পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জের এখনও চলছে । তার ফলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজির দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে বলেই দাবি ক্রেতা থেকে বিক্রেতা সকলের।
রবিবারের বাজারে বিভিন্ন সবজির কেজিপ্রতি দাম ছিল এইরকম। আলু ২০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, বেগুন ৯০-১০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি যথাক্রমে ৫০-৬০ এবং ৫০ টাকা। টমাটোর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা প্রতি কেজি। এছাড়া ক্যাপসিকাম ১৫০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা প্রতি কেজি।
অন্যদিকে মাছের দামও বাড়ছে লাগামছাড়া। মাছে-ভাতে বাঙালির পাতে উঠছে না মাছ। ইলিশকাল শেষের পথে। তবুও কমছে না ইলিশের দাম। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৮০০ টাকা। অন্যান্য মাছের কেজিপ্রতি দাম এইরকম। গলদা চিংড়ি ৭০০-৭৫০, পারসে ৫০০ টাকা, পাবদা ৫০০ টাকা, কাতলা ৪০০ টাকা, ভেটকি ৫০০ টাকা।
উল্লেখ্য, ভোজ্যতেলের দামও বেড়ে চলেছে হু হু করে। এই বিষয়ে এক ক্রেতা জানান, "একটু বেশিই যেন বাড়ছে। আগেরদিন এক দামে কিনলাম। পরেরদিন ২০ টাকা বেড়ে গেল। এতটা বৃদ্ধি হওয়ার কি কোনও যুক্তি আছে? প্রশাসনের এবার আরও একটু সজাগ হওয়া উচিত। বাজারগুলির ওপর কড়া নজরদারি চালানো দরকার। প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে আরও এক ক্রেতা বলেন, " নজরদারি বাড়ালে খুবই ভালো হয়। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের দিকটা সরকারের একটু ভেবে দেখা উচিত।"
এক সবজি বিক্রেতা জানান, বৃষ্টির পর থেকেই বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। চাষের জমিতে জল জমে শাক-সবজি অনেক নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে মাল আসছে না। তাছাড়া উৎসবের মরসুম বলেও দাম খানিকটা বেশি। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে বাজারদর কমবে।" এক মাছ বিক্রেতা জানান," মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। তার অন্যতম কারণ, পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে। ফলে গাড়ির খরচ বেড়েছে। মালও কম আসছে। তার ওপর কাস্টমার নেই। বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ।"