অমানবিক, মর্মান্তিক বললেও কম বলা হবে। বৃহস্পতিবার সাতসকালে এক নৃশংস ঘটনার সাক্ষী থাকল বাগুইহাটি। বাড়ির নর্দমা থেকে উদ্ধার সদ্যোজাত শিশুর পচাগলা মৃতদেহ। স্বাভাবিকভাবেই যা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। বিধাননগর পুরনিগমের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড উদয়ন পল্লী এলাকার দুটি বাড়ির মধ্যেকার নালা থেকে উদ্ধার হয় ওই সদ্যোজাতের দেহ।
স্থানীয় বাসিন্দা রেনুকা বিশ্বাস জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির নালা থেকে দুর্গন্ধ বেরোলে তিনি নর্দমা পরিষ্কার করতে যান। তখনই একটা ছোট লাঠি দিয়ে নর্দমার মধ্যে কী রয়েছে তা দেখতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন। ভেসে ওঠে শিশুর পা।। দ্রুত তিনি খবর দেন প্রতিবেশীদের, খবর দেওয়া হয় ক্লাবেও। খবর যায় বাগুইআটি থানায়। পুলিস এসে সদ্যোজাতের দেহ উদ্ধার করে।
শিশুর দেহটিকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। তবে কোথা থেকে কীভাবে ওই নর্দমার মধ্যে সদ্যোজাতের দেহ এলো? কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা এখনও জানতে পারা যায়নি। গোটা ঘটনার তদন্তের স্বার্থে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত করছে বাগুইহাটি থানার পুলিস।
পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া সদ্যোজাত শিশুটি কন্যাসন্তান। আর সেখানেই উঠছে প্রশ্ন, ঘন জনবসতি এলাকায় কে বা কারা এই শিশুকে ফেলে দিল নর্দমায়। কন্যাসন্তান বলেই পৃথিবীর আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে, তার এই পরিণতি? সবার মুখে শোনা যায় অনেক উন্নত আমরা, এটাই কি উন্নতির পরিণতি?
কিছুদিন আগেই ধুমধাম করে মেয়ের জন্মদিন পালন করেছিলেন অনীক ধর (Aneek Dhar)। সোমবার বাড়িতে নতুন সদস্যের আগমনের খবর দিলেন গায়ক। তাঁর স্ত্রী দেবলীনা পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি আপলোড করে অনীক লিখেছেন, 'আজ ঈশ্বর আমাকে, দেবলীনাকে ও আমাদের পরিবারকে একটি সুস্বাস্থ্য সম্পন্ন পুত্র সন্তান উপহার দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন।' জানা গিয়েছে, অনীকের স্ত্রী ও সন্তান দুজনেই সুস্থ রয়েছেন।
কিছুদিন আগেই দেবলীনার সাধের অনুষ্ঠান হয়েছিল বড় করে। এরপরেই জীবনে এল নতুন অধ্যায়। কেরিয়ার জীবনেও বেশ সফল অনীক। সারেগামাপা এর মঞ্চ থেকে গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন গায়ক। বহু অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দর্শকদের মন জিতেছেন। ব্যক্তিগত জীবনও এবার জমজমাট হল সন্তানের আগমনে।
সদ্যোজাত সন্তানের খবর প্রকাশ্যে আসে একদিন পরে। রবিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্তানের ছবি প্রকাশ্যে আনলেন ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। মুখ না দেখালেও অনুগামীদের জন্য জানিয়ে দিলেন নাম।
গত ৩০ অগাস্ট পুত্র সন্তানের বাবা হন সুনীল ছেত্রী। ভারতীয় দল থেকে আগে ভাগেই ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন। জানা যায়, বেঙ্গালুরুর এক নার্সিংহোমে সন্তানের জন্ম দেন সুনীল জায়া সোনম। রবিবার সুনীল জানালেন, তাঁর সন্তানের নাম রাখা হয়েছে ধ্রুব।
পাশাপাশি এই বাবা হওয়ার অভিজ্ঞতা ও গোটা সফরের কী লড়াই, তাও শেয়ার করলেন ভারত অধিনায়ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, "৩০ অগাস্ট রাতে সন্তানের বাবা হয়েছি। জীবনে আজ পর্যন্ত যা যা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কিন্তু এই পথ এত সহজ ছিল না। প্রত্যেক সময় মনে হয়েছে, এতটা পথ পেরিয়েছি। আবার নতুন করে শুরু করেছি। কিন্তু মন থেকে বিশ্বাস হারাইনি কোনও দিন। এখন আমরা তিনজন এখানে একসঙ্গে।" সুনীল সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, "আপনাদের অজস্র শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি। এই ভালবাসা কখনও ভুলতে পারব না। মন থেকে আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমরা সময় নিয়েছি। বিশ্বের কাছে পরিচয় করানোর জন্য অনেকটা সময়। এই আমাদের সন্তান। নাম ধ্রুব।"
কেবল জিতল না, ফিরে পেল সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাও। শুক্রবার ত্রিপুরার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলঘোষণার পর দেখা গেল, বিজেপি শুধু জিতেছেই তা নয়, প্রতিপক্ষ সিপিএমের কার্যত জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছে। ধনপুর কেন্দ্রটি বিজেপিরই ছিল। সেখানে জয় নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না গেরুয়া শিবিরের। ত্রিপুরা বিজেপি মন দিয়েছিল বক্সনগরে গেরুয়া পতাকা ওড়াতে। কারণ, বক্সনগর শুধু সিপিএমের দখলে ছিল তা-ই নয়, এই কেন্দ্রটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।
ভোটের ফলঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, বক্সনগরে বিজেপি প্রার্থী তফজ্জল হোসেন পেয়েছেন ৩৪,১৪৬ ভোট। অন্য দিকে, সিপিএমের মিজান হোসেন পেয়েছেন ৩,৯০৯ ভোট। ধনপুরে বিজেপির বিন্দু দেবনাথ পেয়েছেন ৩০,০০৭ ভোট। সিপিএমের কৌশিক চন্দ পেয়েছেন ১১,১৪৬ ভোট।
ভোটের ফলাফল নিয়ে ত্রিপুরা বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, ‘সিপিএম ভোটের পরে ময়দান ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ, ওরা বুঝে গিয়েছিল, মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করছে। তাই আর গণনাকেন্দ্র মুখো হয়নি।’ পক্ষান্তরে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘ভোটের ফল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি প্রশাসনকে ব্যবহার করে কার্যত ছেলেখেলা করেছে। এটা কোনও ভোটই হয়নি! মানুষের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন এই ভোটের ফলাফল নয়। ভোট ডাকাতি করেছে বিজেপি।’
মোট ৬০টি আসনের মধ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট পেয়েছিল ৩৩টি আসন। বাম-কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪টি আসন। তিপ্রা মথা পায় ১৩টি আসন। এই জয়ের পরে বামেদের যেমন একটি সংখ্যা কমে গেল, তেমনই বিজেপি বাড়ল বিধানসভায়।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে প্রথম দিকে পিছিয়ে থাকলেও, শেষের রাউন্ড গুলিতে এগিয়ে থেকে ৪৮৮৩ ভোটে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী। জানা গেছে, সপ্তম রাউন্ডের শেষে বিজেপি পেয়েছে ৬৯,৫০৯টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৭২,৪৪০টি ভোট
জানা যাচ্ছে, বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের থেকে নির্মলচন্দ্র রায় এগিয়ে ছিলেন শেষের দিকে। প্রথম দিকে অবশ্য এগিয়ে ছিল বিজেপি। সূত্রের খবর, চতুর্থ রাউন্ড শেষে তাপসী রায় পেয়েছেন ৩৮,৭৩৬ ভোট, নির্মলচন্দ্ৰ রায় পেয়েছেন ৩৯,০৯৬ ভোট। এর পরেই শুরু হয়েছে আবির খেলা। শুক্রবার গোনাহর শুরুতে বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল বিজেপি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগোতে থাকে তৃণমূল প্রার্থী।
সম্প্রতি ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় উপনির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। ফলত লোকসভা ভোটের আগে ধূপগুড়ি হয়ে উঠেছিল প্রেস্টিজ ফাইট। এরপরেই রাজ্যের সমস্ত শীর্ষ নেতৃত্বরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই আসন দখলের জন্য। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের আগে তৃণমূলের পক্ষে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় গিয়ে সাধারনের উদ্দেশ্যে বলেছিলে, আমি কিছুই চাইনি কোনওদিন, আজ চাইছি যে এবার ভোট আমাদের দিন।' এরপরই অবশ্য ২০১৬ সালের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী ও ২০২১ সালে বিজেপির কাছে পরাজিত বিজেপি প্রার্থী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয়। এর ফলে অবশ্য কোনও প্রভাব পড়ল না তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে।
ধুপগুড়ি উপনির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। সপ্তম রাউন্ডের গণনার শেষে এগিয়ে গেল তৃণমূল। জানা যাচ্ছে, বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের থেকে নির্মলচন্দ্র রায় এগিয়ে গিয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ভোটে। ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে বিজেপির থেকে ৩ হাজার ৭৭৩ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। সূত্রের খবর, চতুর্থ রাউন্ড শেষে তাপসী রায় পেয়েছেন ৩৮,৭৩৬ ভোট, নির্মলচন্দ্ৰ রায় পেয়েছেন ৩৯,০৯৬ ভোট। এর পরেই শুরু হয়েছে আবির খেলা। বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, পরে আবারও এগোবেন এবং তাঁরাই জিতবেন এই নির্বাচনে।
এই দিকে আজ ধূপগুড়িতে জেতা সম্ভব ছিল না বলে মন্তব্য করেন অধীর চৌধুরী। ইতি মধ্যেই ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এ লড়াইয়ে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়। এই পরাজয় প্রত্যাশিত ছিল বলে জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বললেন, সাগরদিঘিতে বাম-কংগ্রেস জোটের জয় নিশ্চিত ছিল। ইস্যুও আলাদা ছিল। কিন্তু ধূপগুড়িতে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের জয়ের কোনও সম্ভাবনা ছিল না।
দু একটি বিক্ষিপ্ত অভিযোগ ছাড়া সকাল থেকেই শান্তিতে রাজ্যের ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচন। সম্প্রতি কলকাতার মৃত্যু হয়েছিল এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায়ের। সেই কারণেই মঙ্গলবার এই কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হচ্ছে।
সকাল থেকে ইভিএম বিকলের অভিযোগের পাশাপাশি, বুথের কেন পুলিশ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, রাজ্যের এই একমাত্র বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রচুর পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মব্যস্ত দিন হলেও সকাল থেকে প্রতিটি বুথের সামনে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে।
দু বছর আগে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে যে আসনগুলিতে শাসক তৃণমূলের রক্তক্ষরণ হয়েছিল, ধূপগুড়ি ছিল তাদের অন্যতম। তৃণমূলের মিতালি রায়কে হারিয়ে এই কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় গিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের বিষ্ণুপদ রায়। তাই এই নির্বাচন দুই রাজনৈতিক দলের কাছেই কার্যত চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বিজেপির কাছে।
কারণ, গত পঞ্চায়েত ভোটে উত্তরবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবি হয়েছে। বিধানসভায় হারানো ক্ষমতা ফের নিজেদের পালে টানতে সক্ষম হয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী লোকসভা ভোটের আগে এই ধূপগুড়ি ধরে রাখা এখন সরাসরি চ্যালেঞ্জ সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারীর কাছে।
গত প্রতিটি নির্বাচনেই এই রাজ্যে তাঁদের সামনে রেখেই ভোটে লড়াই করছে বিজেপি। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। গত উপনির্বাচনেও নিজেদের জয়ী আসন হারিয়েছে বিজেপি। দিল্লি থেকেও কার্যত ধূপগুড়ি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে সুকান্ত-শুভেন্দুকে।
গত শনিবার এই কেন্দ্রে প্রচারে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনে প্রচারে ধূপগুড়িকে আলাদা মহকুমা তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ওই সভায় হাজির থাকা প্রাক্তন বিধায়ক মিতালি রায়, পরের দিনেই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। রাজনৈতিক মহলের মতে, মিতালির এই দলবদল কোনও ফ্যাক্টর হল কীনা, তা বোঝা যাবে ভোট শতাংশের উপরেই।
প্রসূন গুপ্ত: ভোট আপাতত শান্তিতেই বলা যেতে পারে। উপনির্বাচন নিয়ে বছর কয়েক আগেও খুব একটা হৈচৈ থাকতো না। ২০২১ এর নির্বাচনে তৃণমূল তৃতীয় বারের মত ক্ষমতায় এসেছে ঠিকই কিন্তু বিধানসভার পটভূমি সম্পূর্ন বদলে গিয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর যুগে কোনও কংগ্রেস বা বাম প্রতিনিধি নেই। সেই ১৯৫২ এর হিন্দু মহাসভার উত্তরসূরী বিজেপি আজ বিরোধী আসনে।
এবারের ধূপগুড়ি বিধানসভা, বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে শূন্য কাজেই ভোট। ভোটে অংশ নিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, বাম সহ নানান নির্দল। তবে এবারের ভোট কিন্তু ভয়ঙ্কর প্রেস্টিজের। বিজেপির আসন ধরে রাখার তাগিদ যেমন রয়েছে তেমন তাগিদ বামেদের যে যুগের পর যুগ এই কেন্দ্র এক প্রকার লালদূর্গ ছিল। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন তৃণমূলের তাগিদ ডুয়ার্স অঞ্চলে জমি খুঁজে নেওয়া।
এরকম অতি সাধারণ এক উপনির্বাচনে তিন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মাটি কামড়ে পরে প্রচার চালিয়েছে। যদিও বিজেপি বিরোধী ২৮টি দল এক ছাতার তলায় এসে " ইন্ডিয়া" নামে একটি জোট তৈরি করেছে কিন্তু তবুও এই ভোটে ওসব দোস্তি পাত্তা দিচ্ছে না কেউই। পাখির চোখের মত জয় তাদের টার্গেট।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোটের লাইন দেখা যাচ্ছে। সামান্য কথা কাটাকাটি ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ আপাতত। ডুয়ার্স অঞ্চলে গন্ডগোলের ইতিহাস প্রায় নেই বললেই চলে। বরং ঝামেলা পাকলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আজকের ভোটে পুরুষদের থেকে মহিলাদের ভীর বেশি। এটি নিয়ে চিন্তিত বিরোধীরা। তবে এখনও এত ভাবনার জায়গা নেই। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ফলাফল।
শনিবার ইন্ডিয়া-পাক ম্যাচের পর, রবিবার তিলোত্তমায় মহারণ। ময়দানে ডুরান্ড ফাইনালে কলকাতা ডার্বির ম্যাচ। বৃহস্পতিবার মোহনবাগান ফাইনালে উঠতেই টিকিট কাটার হিড়িক শুরু হয়ে যায়। ক্লাবের সামনে টিকিট কাটার জন্য ভিড় জমতে থাকে। রোদ ,বৃষ্টি মাথায় নিয়ে লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ উঠছিল।
ডুরান্ডে অনলাইনে টিকিট কাটা যায় না , তাই ভরসা অফলাইন। এদিকে দুই ক্লাবই টিকিট ‘সোল্ড আউট’ এর নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে। এর জেরে ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও দেখান ইস্ট-বাগান সমর্থকেরা। আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত বিক্রি হবে কিছু টিকিট। ফার্স্ট কম ফার্স্ট সার্ভ ভিত্তিতে টিকিট বিক্রি হবে। আজও চিত্রটা একই হয় কিনা সেটাই দেখার।
এদিকে, ১৯ বছর পর ডুরান্ড কাপের ডার্বিতে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। পারদ চড়ছে। খৈয়ের মতো উড়ে গিয়েছে টিকিট ক্লাবের দাবি এমনটাই। কিন্তু সমর্থকেরা তা মানতে নারাজ। আজ বিকেল ৩ টা পর্যন্ত কিছু টিকিট পাওয়া যাবে।
প্রসূন গুপ্ত: মাঝে মাঝে জমজমাট খবর উধাও হয়ে যায় আবার এমন ভাবে কখনও ফিরে আসে যার দিশা পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। এখন বার্তা হলো, দুটি বড় প্রেস্টিজ গেম রয়েছে, ধূপগুড়ি এবং রবিবারের সন্ধ্যায় ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের ডুরান্ড কাপ ফাইনাল। যদিও দুটিকেই খেলা বলা উচিত নয়, বিশেষ করে ধূপগুড়ি উপনির্বাচন। তবে বলতেই হয় ১৯৬৬ অবধি পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও ভোট ছিল খুবই স্পোর্টিং অর্থাৎ ভোটে হারজিত তো থাকেই কিন্তু তা বলে ভোট কেন্দ্রে লড়াই গন্ডগোল বা জিতে দেখে নেওয়ার আক্রোশ কোনও দলের ছিল না। বরং দেখা যেত ভোটের দিন সকাল থেকে যে যার টেন্টে গিয়ে বসতো এবং যারা বুথ এজেন্ট তারা বুথে ঢুকে পাশাপাশি বসে এক প্রকার গল্পগুজব করতো। সময়ে চা আসলে বা খাবার আসলে একেবারে ভাগাভাগি করে খেত। পরে ভোটের ফল বেরোলে জয়ী প্রার্থী পরাজিতের বাড়িতে গিয়ে চা খেয়ে আসত। সেসব দিন স্বপ্নের। অন্যদিকে ৬০, ৭০ বা ৮০র দশকের দর্শক মানেই ভয়ঙ্কর উগ্র বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গলের। খেলা শুরু থেকেই উত্তেজনা এবং খেলা শেষে 'বাড়ি যাবো কি করে' পরিস্থিতি দাঁড়াতো। ব্যাপারটা যেন দুই দেশের যুদ্ধ।
আজ সেই দিন গিয়েছে। আজকের ভোট মানেই জিততেই হবে। প্রচার ইত্যাদির উপর ভরসা না রেখে যে ভাবেই হোক প্রার্থীকে জেতাও। আর ভাগাভাগি করে খাওয়া দাওয়া তো কবেই বিদায় নিয়েছে। দুপুরে কোনও বুথে ঢুকলে দেখা যায় যে কোনও একটি দলের এজেন্ট লাঞ্চ সারছে অন্য জনের দেখাই নেই। এই সংস্কৃতি জোরদার হয় বাম আমলে। আজকে তার কপি বিদ্যমান। পক্ষান্তরে ইস্টমোহনের সেই উগ্র দর্শক আজ আর নেই। তবে এটা ঠিক যে আজকের দিনেও ট্রাক বা বাস ভাড়া করে দলীয় পতাকা লাগিয়ে মাঠে আসে দর্শকরা। খেলা চলাকালীন হৈচৈও রয়েছে কিন্তু খেলা শেষে দেখা যায় যে যার মতো বাড়ি চলে যাচ্ছে এবং এলাকায় এলাকায় ইলিশ চিংড়ির দেখাও পাওয়া যায় না। কর্পোরেট যুগ, টিভি বা ইন্টারনেট খুললেই বিদেশী খেলা দেখা যায়, কাজেই সময় কোথায় ?
ধুপগুড়িতে বড় ধাক্কা তৃণমূলে। সূত্রের খবর ধুপগুড়িতে উপনির্বাচনের ৪৮ ঘন্টা আগেই বিজেপিতে যোগ দিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক মিতালি রায়। রবিবার সকালে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন। মিতালির অভিযোগ, ২০২১ সালে ভোটে হারার পর থেকে তৃণমূল তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখেনি। যদিও শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারমঞ্চে তাঁকে দেখা গিয়েছিল
প্রসঙ্গত, শনিবারই ধূপগুড়িতে অভিষেকের প্রচারমঞ্চে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি দীপেন্দ্রনাথ প্রামাণিক। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সেই সময় মঞ্চে হাজির ছিলেন মিতালিও। তার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূলকে পাল্টা জবাব দিল বিজেপি সেই মিতালিকেই ছিনিয়ে নিয়ে।
২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে ধূপগুড়ি কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মিতালি। ২০২১ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন বিধায়ক। গত বিধানসভা ভোটেও তাঁকেই টিকিট দেয় তৃণমূল। কিন্তু বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়ের কাছে হার স্বীকার করতে হয় মিতালিকে। সেই বিষ্ণুপদের মৃত্যুতে ধূপগুড়িতে উপনির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু এ বার মিতালিকে আর টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তাঁর বদলে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন নির্মলচন্দ্র রায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ বার টিকিট না পাওয়ায় দলের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন মিতালি। তাঁর অভিযোগ, ২০২১ সালে হারের পর থেকেই তাঁকে দল একপ্রকার ব্রাত্য করে রেখেছিল। মিতালির ক্ষোভের আঁচ পেয়েছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বও। সে জন্যই রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের অন্যতম নেতা অরূপ বিশ্বাস ধূপগুড়িতে প্রচারে গিয়ে আলাদা করে মিতালির ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টাও করেছিলেন।
প্রসূন গুপ্ত: আর হাতে শনিবার এবং রবিবার বিকেল অবধি প্রচারের সময়সীমা ধার্য রয়েছে, কাজেই শেষ লগ্নে লড়ে যাচ্ছে তিন দল। ধূপগুড়ির মতো প্রায় অনিয়মিত প্রকাশের বিধানসভায় এতো কোমর কষে ভোট প্রচার এর আগে বোধকরি হয় নি। আর হবেই বা না কেন, এই কেন্দ্রের ভোটের ফল তৃণমূল বিজেপি বা কংগ্রেস/সিপিএম জোটের উত্তরবঙ্গের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
প্রচারে সব থেকে এগিয়ে নিঃসন্দেহে বিজেপি। ওই এলাকার সমস্ত হোটেল বা গেস্ট হাউস দখল করে রেখে প্রচার চালাচ্ছে তারা বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই কেন্দ্রে জিততেই হবে বিজেপিকে কারণ বিগত বিধানসভা ভোটে জয় তাদেরই হয়েছিল। দেখা গেলো রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদা, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ সহ প্রথম শ্রেণীর তাবড় তাবড় নেতারা মাটি কামড়ে পরে রয়েছেন ধুপগুড়িতে। কেন্দ্রের নাকি কড়া নির্দেশিকা রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে এই কেন্দ্রে জয় আনতেই হবে নতুবা নাকি আসন্ন লোকসভায় এর প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে। প্রায় প্রতিদিন সুকান্তবাবু ওখানে থাকাকালীন প্রচার এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা চালাচ্ছেন।
প্রচারে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, যুব তৃণমূল সভাপতি সায়নী ঘোষ সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নেতা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করছেন। জনসভা বা পথসভা তো আছেই। শনিবার প্রায় শেষ লগ্নে যাচ্ছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বালিগঞ্জ থেকে আসানসোল ইত্যাদি বিভিন্ন উপনির্বাচনে শেষ লগ্নে প্রচার করে অভিষেক বাজিমাত করেছিলেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম নেই।
ঘরে ঘরে প্রচার করছে সিপিএমের যুব কর্মী নেতারা। অবিশ্যি তাদের দলে সেলিম বা সুজন চক্রবর্তী ছাড়া তেমন প্রচারের বড় মুখ কোথায়? যদিও শুক্রবার অধীররঞ্জনকে নিয়ে বেশ বড়োসড়ো প্রচার করলো বাম/কং জোট। এই কেন্দ্রে একসময় সিপিএমের দাপট থাকলেও আজ সেই সংগঠন হারিয়েছে সিপিএম। এবারে বাস্তব হচ্ছে এই যে সিপিএম যদি ১০/১৫% ভোট বাক্সবন্দি করতে পারে তবে আখেরে সুবিধা হবে তাদের "ইন্ডিয়া" জোটসঙ্গী তৃণমূলের। মজার বিষয় সারা ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির নজর কিন্তু এই কেন্দ্রে। ধূপগুড়ি বিখ্যাত হতে চলেছে।
প্রসূন গুপ্তঃ সোমবার কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জন্মদিনে ধূপগুড়ি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন যে, সামনেই ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে ওই অঞ্চলে বিজেপি সমস্ত হোটেল বুক করে রেখেছে। যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার সমস্তই তাদের হাতে, যাতে অন্য কোনও দলের কেউ সুবিধা না পায়। তিনি বলেন যে, টাকা পয়সা ছড়ানো হচ্ছে। একই সাথে তিনি অবশ্য বাংলার নাগরিক হিসাবে রাজবংশীদের নামে জয়ধ্বনি দেন।
একটি বিষয় আগেও আমরা জানিয়েছি যে, ধূপগুড়ি নির্বাচনে প্রতিটি দলের কাছে প্রেস্টিজ লড়াই। যদিও ধূপগুড়ি চিরকালই বামেদের ভূমি। এখানকার ভোটাররা ২০১১ অবধি বামেদের ভোট দিয়ে এসেছে এবং বামশক্তি দুর্বল হলে তারা বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য তৃণমূলকে পরাস্থ করা। যদিও বাস্তব ঘটনা এই যে, তৃণমূল এই ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে পরাস্থ হলে তাদের কোনও লোকসান নেই। কারণ এই জমি তো তাদের ছিলই না। কিন্তু জিততে পারলে মস্ত লাভ।
তৃণমূল জিতলে এটা প্রমাণিত হবে যে, বিজেপির হওয়া আর উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে ডুয়ার্স/তরাইতে নেই, যা কিনা ১৯ এবং ২১-এ প্রবল ভাবে ছিল। একই সাথে আগামী লোকসভায় উত্তরবঙ্গে জমি খুঁজে পাবে মমতার দল। অন্যদিকে, বিজেপি জিততে না পারলে তাদের মস্ত ভাবনা। এই কারণে যে তাদের শক্ত ঘাঁটি হাতছাড়া হতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে ৩৫ আসন তো দূরস্থান, ৫টি আসন পাবে কিনা চিন্তার। কাজেই ওখানকার মাটি কামড়ে পড়ে থেকে এই উপনির্বাচন জিততে মরিয়া বিজেপি। সেই সঙ্গে তারা অনন্ত মহারাজকে (যিনি এখন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ) প্রচারে নামিয়ে রাজবংশী ভোট দখল করতে চলেছে। এই অনন্ত মহারাজ কিন্তু একসময় বাংলা ভাগের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। বিজেপি অফিসিয়ালরা কিন্তু ওই বিষয়টিকে সামনে আন্তে চাইছে না। তারা চাইছে যেভাবেই হোক এবারেও সিপিএমের সিংহভাগ ভোট যেন তাদের বাক্সে পড়ে, নতুবা জয় পাওয়া কঠিন। দেখার বিষয় ২ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রচারে কি বলেন।
প্রসূন গুপ্তঃ আমাদের এই নিয়মিত ধূপগুড়ি নিয়ে প্রতিবেদন দেখে নানান দলের সমর্থকদের নানান অভিমত আছে। তাদের কারও বক্তব্য, ও দেখতে হবে না, সিপিএমের ৮০ শতাংশ ভোট বিজেপিতে পরবে। হাসতে হাসতে বিজেপি তার নিজের আসন ফিরে পাবে। আবার তৃণমূলের সমর্থকরা মনে করেন অন্তত ২০ হাজার ভোট জিতবে দিদির দল। সিপিএম আপাতত কোনও মন্তব্য করছে না, তাদের একটাই আতঙ্ক যতটুকু কংগ্রেস ভোট আছে তা কি আদৌ তাদের বাক্সে আসবে।
ইতিমধ্যে শনিবার সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গড়তে সিপিএম জয়ী প্রার্থীরা বিজেপিকে ভোট দিয়ে বোর্ড গড়ছে। এই খবর সরকারি ভাবে তাদের কাছে আসার পর দল থেকে অনেককেই বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু বেপরোয়া ওই জয়ীরা। তারা মনে করছে তাদের প্রধান শত্রু তৃণমূল কাজেই যে ভাবেই হোক তাদের আটকাও। এই একই ঘটনা যে ধুপগুড়িতে ঘটবে না তার গ্যারান্টি আছে কি। বলা ভালো মোটেই নেই কারণ আজ যে শক্তিতে বিজেপি এই অঞ্চলগুলিতে শক্তিশালী সেই শক্তি সিপিএমেরই। আজকের দিনে গ্রামগঞ্জে কি আর মার্কস, লেনিনের পাঠ দেওয়া হয়? সুতরাং আজকের প্রজন্মের কাছে পুরাতনী কমিউনিজম চলে না।
অন্যদিকে ৩০ অগাস্ট বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রচারে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে বিগত সাগরদিঘি উপনির্বাচনে শুভেন্দুর 'একমুখী ভোট' দেওয়ার আবেদনে প্রচুর হিন্দু ভোট কংগ্রেসের বাক্সে পড়েছিল। এবারেও জল মেপে কি নিধন বিরোধী নেতা দেন সেটাই দেখার। সুজন চক্রবর্তী ইতিমধ্যে নাকি প্রচার সারছেন বাড়ি বাড়ি, কিন্তু শোনা গেলো সেই প্রচারে কোনও ঝাঁজ নেই। অনেকেই বলছে খেলার আগেই সিপিএম হেরে বসে আছে। একেবারে প্রচারের শেষ দিনে যাবেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গেলো এলাকায় নাকি পঞ্চায়েতের একটা হওয়া রয়েছে। যদি তাই হয় তবে সদ্য রাজ্যসভায় পাঠানো অনন্ত মহারাজকে প্রচারে দেখা যেতে পারে, তেমনটাই ভাবছে নাকি বিজেপি কারণ এবারের লড়াইটা টাফ। (চলবে)
প্রসূন গুপ্তঃ ৫ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়ির উপ-নির্বাচন। এর আগের পর্বগুলোতে আমরা মোটামুটি বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছিলাম। আজ আরও কিছু। ধূপগুড়িতে যতটুকু জানতে পারলাম, বিধানসভার মোট ভোটারের অনেকটাই রাজবংশীদের। এই রাজবংশী কারা? দেশ বিভাগের আগে উত্তরবঙ্গের 'এদেশীয়' বলতে যাদের মূলত বোঝায়, তারা রাজবংশী। স্বাধীনতার উত্তর এবং পূর্ব লগ্নে এই রাজবংশীরা উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা ছিল। পরে ঝাঁকে ঝাঁকে ওপার বাংলা থেকে উদ্বাস্তুরা এসে এদের সাথেই বসবাস করলেও ওই সময়ে কোথাও একটা গোষ্ঠীগত ফারাক ছিলই। শহর কলকাতা বা নিকটবর্তী অঞ্চলে যখন ওপার বাংলার মানুষরা এসেছিলো, তখন যেমন ঘটি বাঙালির একটা বিভেদ ছিল, যেমন ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের রেষারেষি ছিল, তেমন রাজবংশী ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে একটা নরম লড়াই ছিল বা কিছুটা আজকেও আছে।
শোনা গিয়েছে, এ বিষয়ে বামপন্থীরা এই বিভেদের রচনা করেছিল। প্রাথমিক ভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বা সংঘ পরিবার যেমন ওপার বাংলার উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়িয়ে একটা রাজনীতির পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, পরে কিন্তু পঞ্চাশের মধ্যভাগে তা ছিনিয়ে নিয়ে পুরোপুরি রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছিল বামেরা। তারা উদ্বাস্তুদের যেমন বুঝিয়েছিল যে, বিধান রায় তাদের উপযুক্ত ত্রাণের বা ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করেননি, তেমন রাজবংশীদের বুঝিয়েছিল যে তাদের জমিতে উদ্বাস্তুরা দখলদারি করেছে। কাজেই এই পক্ষই বরাবরই কংগ্রেস বিরোধী ছিল এবং এই কারণে বারবার উত্তরবঙ্গে সফর করা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অঞ্চলগুলিতে খুব দৃঢ় সংগঠন করতে পারেননি। এই বিভেদের রাজনীতির কারণে রাজবংশী এবং উদ্বাস্তু, দুই গোষ্ঠীই বাম নির্ভর হয়ে পড়েছিল।
পরবর্তীতে ২০১৯ থেকে বামেদের সেন্টিমেন্ট কেড়ে নেয় বিজেপি এবং সেই কারণে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার তাদের দখলে। যদিও বিগত পঞ্চায়েতে তৃণমূল বেশ ভালো ফল করেছে উত্তরবঙ্গে, কিন্তু পঞ্চায়েত ও বিধানসভার মধ্যে ফারাক তো আছেই। এক সময়ে লালদুর্গ ধূপগুড়িতে বামদের ভোট আপাতত গেরুয়া বাক্সেই পড়ছে। মজার বিষয় ধূপগুড়ি বামদুর্গ হলেও বর্তমানের এই উপনির্বাচন নিয়ে তাদের খুব একটা তাপউত্তাপ নেই। একটা সময়ে যুব বামপন্থীরা প্রচারের অঙ্গ ছিল কিন্তু ইদানিং নব্য বামপন্থীরা যেন অনেকটাই কর্পোরেট ধারায় চলেছে। তারা মনে করে টেলিভিশন বা সোশ্যাল নেটে বিতর্কিত কথাবার্তা বললেই মানুষের ভক্তি তাদের উপর উপচে পড়বে। কিন্তু আদতে তাই কি হয়? ফ্যাশন দুরস্ত এই নব্য বামেদের কথা শুনতে ভালো লাগলেও তাদের কটাক্ষকে যে ভোটে পরিবর্তিত করা যায় না, তা বামেদের কে বোঝাবে! ( চলবে )