১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১৫। এর আগেও চারবার হয়েছে। ২০২৩-এ দক্ষিণ আফ্রিকার অভিশপ্ত সেমিফাইনালের সাক্ষী থাকল ইডেন গার্ডেন্স। ১৯৯৯ সালে টাই করেও ছিটকে যায় তাঁরা। এবার অস্ট্রেলিয়ার মুখের গ্রাস টেনে নেওয়া সময়ের অপেক্ষা ছিল। কিন্তু ম্যাচ হেরে চোকার্স তকমা নিয়েই চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন কুইন্টন ডি কক, রাবাদারা। সেঞ্চুরি করেও পূর্বসূরিদের অভিশাপ কাটাতে পারলেন না ডেভিড মিলার।
এবার টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে খেলে। কুইন্টন ডি-কক টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। রাসি ভ্যান্ডার ডাসেন, আইডেন মারক্রম, হেনরি ক্লাসেন, ডেভিড মিলার। দুরন্ত ফর্মে ছিলেন প্রত্যেকেই। রাবাদার জুড়ি হিসেবে ছিলেন কেশভ মহারাজ। কোয়েটজে, শামসিরাও নজর কেড়েছিলেন। কিন্তু ইডেনে সেই অভিশাপ মুক্ত হতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হল অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও তাঁর দলকে।
১৯৯২ বিশ্বকাপে ১৯ রানে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ম্যাচ ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। টাই করেই বিদায় নিতে হয় তাঁদের। ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই হারতে হয় তাঁদের। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডেপ বিরুদ্ধে শেষ বলে এসে হারে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইডেনে ১৬ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেটে হারলেন টেম্বা বাভুমারা।
মার্শ পাওয়ারে ধ্বংস বাংলাদেশ। পুণায় বিশ্বকাপের ম্যাচে বাংলাদেশের ৩০৭ রান তাড়া করতে নেমে একাই ১৭৭ রানে অপরাজিত মিচেল মার্শ। ১৩২ বলের এই ইনিংস সাজানো ১৭টি চার ও ৯টি ওভার বাউন্ডারিতে। মূলত তাঁর ব্যাটেই এই ম্যাচ আট উইকেটে জিতল অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ স্মিথ ৬৩ এবং ডেভিড ওয়ার্নারের অবদান ৫৩ রান।
এদিন প্রথমে ব্যাট করে সম্মিলীত চেষ্টায় ৩০৬ রান তোলে শাকিবহীন বাংলাদেশ। এদিন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন শান্ত। বাংলাদেশের বোর্ডে উজ্জ্বল থাকে তৌহিদ হৃদয়ের ৭৪ রানের ইনিংস। অজিদের হয়ে দুটি করে উইকেট অ্যাডাম জাম্পা এবং শন অ্যাবোটের।
১৬ নভেম্বর বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ম্যাচ খেলতে পুণে থেকে কলকাতায় আসবেন প্যাট কামিন্সরা। আইপিএলে ইডেনে খেলে থাকেন কামিন্স
পার্থ ভৌমিক (মন্ত্রী / পশ্চিমবঙ্গ সরকার ): মঙ্গলবারের বিশ্বকাপের এই খেলা মনে রাখবো নিশ্চিত। ম্যাক্সওয়েল যেদিন খেলেন সেদিনটা ওরই থাকে। আইপিএলে দেখেছিতো। আজকের ক্রিকেট কিন্তু সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। আমাদের ছোটবেলার ইডেনে দেখা বিশ্বনাথ গাভাস্কারের টেস্টের যুগ আজকে আর কোথায়? আজকে একজনের খেলা এবং দলকে জেতানো নিশ্চয় বড় ব্যাপার কিন্তু ম্যাক্সির এই খেলা ভেবে দেখলে অনেকেই খেলে নিচ্ছে। ম্যাক্সিকে তবু ধন্যবাদ দেব প্রয়োজনে দুর্দান্ত ইনিংস খেলার জন্য কিন্তু ভেবে দেখুন এই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের খেলায় মাত্র ২০০ রান দরকার ছিল, দ্রুত তিনটে উইকেট পরে গেলো। তারপর কোহলি এসে ম্যাচটা ধরলেন। কোহলিকে আমি নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপের সেরা বলবোই। দেখুন আবারও বলছি ম্যাক্স দারুন, চিরকাল এই খেলাটা মনে থাকবে কিন্তু এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া হারলেও সেমিফাইনালে যেতই। এ ছাড়া আফগানিস্তান স্রেফ অভিজ্ঞতা এবং বাজে ফিল্ডিংয়ের জন্য হারলো। দুটো লোপ্পা ক্যাচ কি ভাবে মিস করলো তারা। প্রথমে বেশ ভালো ফিল্ডিং করছিলো কিন্তু ৭ উইকেট ফেলে দেওয়ার ওদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এসে গেলো এবং সেটাই কাল হলো।
ম্যাক্সওয়েল নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপের সেরা ইনিংস খেলেছে কিন্তু ১৯৮৩ র কপিল হতে পারবে না। নটিংহ্যামে ও বছর জিম্বাবোয়ের সঙ্গে যে খেলা হয়েছিল তা আমরা কেউই দেখতে পারি নি কারণ ইংল্যান্ডের সাম্প্রচারকারী বিবিসি সেদিন ধর্মঘট ডেকেছিল বলে খেলা দেখায় নি কিন্তু বিবরণ তো শুনেছি। ১৭ রানে গাভাস্কার, শ্রীকান্ত, অমরনাথ, যশপাল, পাটিল আউট হয়ে গিয়েছিলো। কপিল এসে খেলা ধরে। তখন ফিল্ডিংয়ের কোনও রেস্ট্রিকশন ছিল না। কখনও বিনি কখনও ১০ নম্বরে থাকা কিরমানিকে নিয়ে ২৬৬ রান এবং নিজের ১৭৫ , ভাবা যায় ? মনে রাখতে হবে ভারত মোটেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষমাত্রা নিয়ে মাঠে নাম নি। কিন্তু কপিলের ওই ইনিংসের পরে নক আউট পর্যায়ে উঠেওছিলো দল এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কপিলের ওই ইনিংস সোনায় বাঁধানো| ওর সঙ্গে তুলনা চলে না।
অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত
চোট নিয়েও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দুরন্ত দু'শতরান হাঁকালেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল । কার্যত 'এক পায়ে' খেলে ২০১ রানের রেকর্ড গড়লেন ম্যাক্স। অসম্ভব মানসিক জেদ নিয়ে প্রায় হেরে যাওয়া একটা দলকে একাই জিতিয়ে দিলেন ম্যাক্স। আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে পরাস্ত করল অস্ট্রেলিয়া।
আফগান বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন ম্যাক্স। কিন্তু সেঞ্চুরি করার আগেই তাঁর পেশিতে টান ধরে। ইনিংস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ম্যাক্সের ব্যথাও। ম্যাসাজ, ব্যথা কমানোর ওষুধ কিছুতেই কাজ হয়নি।
কিন্তু থামানো যায়নি ম্যাক্সকে। আফগানদের বেঁধে দেওয়া রান তাড়া করে একাই দলকে জিতিয়ে দিলেন ম্যাক্স। তাঁর এই লড়াই উপভোগ করল গোটা বিশ্ব। ম্যাক্স দলকে জেতালেন তো বটেই একই সঙ্গে রেখে গেলেন ২২ গজে একলা লড়াই করার অনুপ্রেরণা।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ব্যাটার হিসাবে একদিনের ক্রিকেটে ডবল সেঞ্চুরি। তিনি প্রথম যিনি ওপেন করতে না এসে একদিনের ক্রিকেটে দ্বিশতরান করলেন। কোনও একদিনের ম্যাচে রান তাড়ায় তাঁর ব্যাট থেকে গেল সর্বোচ্চ রান করার নজির। এই প্রথম কোনও একদিনের ম্যাচে রান তাড়ায় কোনও ব্যাটার ২০০ রানের মাইল ফলক তৈরি করলেন। মঙ্গলবার ওয়াংখেড়ে পরবর্তী সময়ে চুম্বকে এটাই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যাঁকে বলা হচ্ছে, এক পায়ে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তোলার সম্রাট।
সেই ম্যাক্সওয়েল জানান, মুম্বইয়ের প্রচন্ড গরমে প্রথমে ফিল্ডিং করে তারপর ব্যাট করা মোটেই সহজ ছিল না। তাই কাহিল হয়ে যাচ্ছিলেন। যন্ত্রণা তাঁর শরীরে থাবা বসাছিল। মাঠে শুয়ে তার থেকে নিস্তার খোঁজার চেষ্টা করছিলেন। কারণ, যে পরিস্থিতি তিনি এসেছিলেন, আর যেখান থেকে তিনি মাঠ ছাড়লেন, তা একশো আশি ডিগ্রির পার্থক্য। ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানিয়েছেন, তাঁর দেখা একদিনের ক্রিকেটে এটাই সেরা ইনিংস।
১৯৮৩ সালে ট্রেন্ট ব্রিজ। নাকি ২০২৩ সালের মুম্বই। বিশ্বকাপের প্রেক্ষাপটে কোনটা সেরা। ওয়াংখেড়ে পরবর্তী সময়ে শুরু হয়ে গিয়েছে এই নিয়ে আলোচনা। কপিলের মহাকাব্য নাকি ম্যাড-ম্যাক্সের রূপকথা ? আলোচনা চলছে। তার মধ্যেই বিশ্বকাপের তৃতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তানের হারে আপাতত স্বস্তির শ্বাস পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড শিবিরে। আর ভারত তাল ঠুকছে চার নম্বরে কে থাকবে, তার অপেক্ষায়।
বিশ্বকাপের মঞ্চে ইতিহাস গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অপরাজিত ডবল সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়াকে তিন উইকেট ম্যাচ জেতালেন ম্যাড-ম্যাক্স। মঙ্গলবারের মুম্বই সাক্ষী বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের। ৭ উইকেটে ৯১ রান। এখান থেকে আফগানিস্তানকে একাই হারিয়ে দিলেন ম্যাক্সওয়েল। ১২৮ বলে ২০১ রানে অপরাজিত তিনি।
টার্গেট ২৯২। যা ওয়াংখেড়ের মাঠে সবচেয়ে বড় রানের টার্গেট। সেই রান তাড়া করতে নেমে স্টিভ স্মিথহীন অস্ট্রেলিয়া। আফগান স্পিনারদের দাপটে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে অজি টপ অর্ডার। প্রহর গোনা শুরু হয় আরও একটা অঘটনের। এখান থেকে শুরু ম্যাচ ঘোরানোর খেলা। অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে নিয়ে সেই শুরু করলেন। থামলেন ওভার বাউন্ডারি মেরে। চুম্বকে এটাই মঙ্গল সন্ধ্যায় ম্যাক্সওয়েল।
তাঁর এই যুদ্ধের সেনাপতির নাম অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। যাঁর অবদান ৬৮ বলে অপাজিত ১২ রান। রিকি পন্টিং, শেন ওয়ার্টসনরা মুগ্ধ কামিন্সের এই ধৈর্য্যে। আফগানিস্তানের এই হারের ফলে স্বস্তি এখন পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড শিবিরে। মনে মনে তাদের ধন্যবাদ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে।
জাম্পা জাদুতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ইংল্যান্ডের। ভারতের মাটিতে হাফ ডজন ম্যাচ হেরে দ্বিতীয় দল হিসাবে ছিটকে গেল গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। শনিবার আমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ার ২৮৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে, ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেল ২৫৩ রানে। ৩৩ রানে জিতে নকআউটের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল গত পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ২১ রান দিয়ে তিন উইকেট অ্যাডাম জাম্পার।
এদিন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ২৮৬ রান করে অস্ট্রেলিয়া। শুরুটা ভাল না হলেও, স্মিথ, লাবুশেনরা ধীরে ধীরে নিজেদের ভিত মজবুত করেন। এরমধ্যে ৮৩ বলে ৭১ রান করে আউট হন লাবুশেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪৪ রান দিয়ে চারটি উইকেট নেন ক্রিস ওকস।
মনে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার এই রান এদিন তুলে ফেলবেন জস বাটলাররা। কিন্তু সেই ব্যাটিংই এই ম্যাচে ডোবাল ইংরেজদের। এই ম্যাচে রান করেও ইংল্যান্ডকে জেতাতে পারলেন না বিগ বেন। ৯০ বলে ৬৪ রান করে স্টোকস। জাম্পা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসারই দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
প্রসূন গুপ্ত: শনিবার নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া যে ম্যাচ খেললো তা নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপের সেরা। ৮৮ করার পরে তারা ভেবেছিলো অনায়াসেই জিতে যাবে কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। ৩৮৩ রান অবধি পৌঁছায় কিউইরা। একদিনের বিশ্বকাপে দুই দলের মিলিত রানের রেকর্ড। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরোচ্ছে অজিরা। প্রথমে দুটি ম্যাচ হেরে যাবার পরে মনে হয়েছিল, নাহ এঁরা আর পারবে না। কিন্তু শেষ দুটি ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। খুব দুর্ঘটনা না হলে ভারতের সঙ্গে সেমিফাইনালে উঠবে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ড। এই যদি হয় তবে ভারতকে ভাবতে হবে। নক আউট খেলা কিন্তু বেশ কঠিন। যেকোনও সময়ে খেলার রং বদলে যেতে পারে। ১৯৮৭ তে অনেকেই ভেবেছিলো ফাইনাল হবে ভারত পাকিস্তানের কিন্তু উল্টোটাই ঘটলো। একই কথা ১৯৯২ তে। কে ভেবেছিল পাকিস্তান ট্রফি জয় করবে?
রবিবার লখনৌতে ভারতের খেলা ইংল্যান্ডের সঙ্গে। যা খবর ৫ বোলার নিয়েই খেলতে হবে। ষষ্ঠ বোলার নেই। যদি তেমন কিছু দরকার হয়, প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বিরাট কোহলিকে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, লখনৌতে পিচ বা উইকেট একেবারে ঝুরঝুরে। পিচে জল দিয়ে রোল করা হয় নি কাজেই একেবারে স্পিনারদের উপযোগী পিচ। ইংল্যান্ডের অধিকাংশ খেলোয়াড় আইপিএলে খেলেছে তাই তারা ভারতীয় স্পিনারদের জানে। কিন্তু এটা ৫০ ওভারের খেলা কাজেই টি২০ র ফর্মুলা চলবে না। আজ সম্ভবত তিন স্পিনার এবং দুই পেসারে খেলবে। হয়তো শামি সিরাজের মধ্যে একজন খেলবে অন্যদিকে জাদেজা, কুলদীপের পাশে হয়তো অস্মিনকে দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া বাকি দল আগের ম্যাচের মতোই থাকবে বলেই খবর। অন্যদিকে ভারতের পরেই অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা বেশ ভালো বল করছে আবার চার পেসারও রয়েছে কাজেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত পরবর্তীতে ভারতকে।
পাহাড় কোলে থ্রিলার। নিউজিল্যান্ডকে পাঁচ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে শেষ চারে ওঠার রাস্তা আরও মসৃণ করল অস্ট্রেলিয়া। ধর্মশালায় অস্ট্রেলিয়ার ৩৮৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে কিউইদের ইনিংস শেষ হল ৩৮৩ রানে। জলে গেল রচিন রবীন্দ্রর ৮৯ বলে ১১৬ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি উইকেট অ্যাডাম জাম্পার। দুটি করে উইকেট হ্যাজেলউড এবং প্যাট কামিন্সের।
এই বিশ্বকাপ এখনও পর্যন্ত সুপার ওভার দেখেনি। শুক্রবার চিপক আর শনিবার ধর্মশালা, সেই পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ ওভারে জিমি নিসাম রান আউট হতেই ম্যাচের ভাগ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। বিশ্বকাপে ভারতের পর ধর্মশালায় এবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারল কিউইরা।
এই জয়ের ফলে ৬ ম্যাচে আট পয়েন্ট অস্ট্রেলিয়ার। পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে রয়েছে তারা। এরআগে ব্যাট করতে নেমে বিরাটের রেকর্ড ভেঙেছিলেন ওয়ার্নার। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে শতরান করেছিলেন ট্রাভিস হেড।
শুক্রবার বিশ্বকাপে জমজমাট ম্যাচ। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে- ৬২ রানে হারাল অস্ট্রেলিয়া। শাহিন আফ্রিদির পাঁচ উইকেটের পর একাই ৪ উইকেট নিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। ৩৬৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে ৩০৫ রানে অলআউট হয়ে গেল পাকিস্তান।
এদিন টস জিতলেও ম্যাচের রাশ পাকিস্তানের হাতে ছিল না। টসে জিতে প্রথমেই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাবর আজম। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে চালকের আসনে ছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম উইকেটে ২৫৯ রানের পার্টনারশিপ করেন মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার। সেখানেই খেলা ঘুরে যায়। শাহিন আফ্রিদির দাপুটে বোলিংয়ে আর কোনও ব্যাটসম্যান বড় রান করতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু একাধিক ক্যাচ মিস করে পাকিস্তান। ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬৭ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
শুরুটা পাকিস্তানও ভাল করে। দুই পাক ওপেনার আবদুল্লা শফিক ও ইমাম উল হক ১৩৪ রানের পার্টনারশিপ করেন। ৬৪ রান করেন শফিক ও ইমামের ব্যাটে আসে ৭০ রান। কিন্তু অধিনায়ক বাবর আজমকে ফেরান অ্যাডাম জাম্পা। রিজওয়ানকে ৪৬ রানে ফেরান তিনিই। এরপরই ভেঙে যায় পাক ব্যাটিং লাইন আপ। শাকিল ও ইফতিকার আহমেদ লড়াই করলেও তা কাজে লাগেনি। ৪৫.৩ ওভারে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। জাম্পা ৪ উইকেট তুলে নেন। ২টি করে উইকেট নেন অধিনায়ক কামিন্স ও মার্ক স্টয়নিস। ভারতের বিরুদ্ধে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও হারতে হয় বাবর ব্রিগেডকে।
বিশ্বকাপে অবশেষে পয়েন্ট পেল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। সোমবার কার্যত দর্শকশূন্য লখনউয়ে শ্রীলঙ্কা পাঁচ উইকেটে হারিয়ে এই বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেল তারা। প্রথমে ব্যাট করে ২০৯ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। রান তাড়া করতে নেমে ৩৫.২ ওভারে ম্যাচ বার করে নেয় অজিরা। ৫৯ বলে ৫৮ রান জশ ইঙ্গলিসের। শ্রীলঙ্কার হয়ে তিন উইকেট নেন মধুশঙ্কা।
তবে শ্রীলঙ্কার ২০৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। খুব দ্রুত ওয়ার্নার এবং স্মিথকে হারিয়ে হঠাৎ করেই চাপে পরে যায় অস্ট্রেলিয়া। এখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে টেনে তোলেন মিচেল মার্শ এবং মানাস লাবুশেন। ৫১ রান করে আউট হন মার্শ। লাবুশেনের অবদান ৪০।
এরআগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভালই শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। প্রথম উইকেটে ১২৫ রান তোলের দলের দুই ওপেনার। কিন্তু চার উইকেট হারানোর পরেই ধস নামে লঙ্কার ইনিংসে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪৭ রানে চার উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা।
বিশ্বকাপে সবার নীচে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে আফগানিস্তান। সেই ধাক্কায় পয়েন্ট তালিকায় একবারে শেষে নেমে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এই পরিস্থিতি ভারতের মাটিতে প্রথম পয়েন্টের খোঁজে আজ অজিরা। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। যারাও এই বিশ্বকাপে শূন্যতেই দাঁড়িয়ে।
এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে বিশ্বকাপের বাকি সবকটি ম্যাচকেই ফাইনাল বলে মনে করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এদিকে, দাসুন শানুকা ছিটকে যাওয়ার পর এই ম্যাচ থেকে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্ব দেবেন কুশল মেন্ডিস। তাঁদের ক্রিকেটের শেষ কবে এমন হতশ্রী চেহারা হয়েছিল, তা পরিসংখ্যান ঘেঁটেও বার করতে পারছেন না অ্যালান বর্ডার থেকে রিকি পন্টিংরা। মার্ক ও বলছেন, এবার মনে হচ্ছে শূন্য হাতেই ফিরতে হবে।
বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গত ম্যাচে সাতটি ক্যাচ ফেলার পর মার্ক টেলরের মতো প্রাক্তন রীতিমত আতঙ্কিত প্যাট কামিন্সদের নিয়ে। অথচ ৩৬ বছর আগে ভারতের মাটি থেকেই প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
সুস্থ ট্র্যাভিস হেড। যদিও শ্রীলঙ্কা ম্যাচে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। যা খবর তাতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অপরিবর্তিত প্যাট কামিন্সের দল। উল্টোদিকে শ্রীলঙ্কা দলে পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে।ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে অস্ট্রেলিয়ার ভাঁড়ার শূন্য। বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচেই হেরেছে শ্রীলঙ্কা। তারমধ্যে একটি পাকিস্তান।
ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হারল পাঁচবারের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া। প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বে বিশ্বকাপে এদিন ১৩৪ রানে হার অজি ব্রিগেডের। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩১২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪০.৫ ওভারে মাত্র ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে যান স্মিথ-ওয়ার্নাররা।
এদিন বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নেমে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও সেঞ্চুরি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার ব্যাটসম্য়ান কুইন্টন ডি কক। ৫৬ রান করেন আইডেন মারক্রম। ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ৭০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ কঠিন করে ফেলেন অজি ব্রিগেড। লাবুশেনের ব্যাটে আসে ৪৬ রান। পাঁচ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরই পেরোতে পারেননি। ২৭ রান করেন মিচেল স্টার্ক। অধিনায়ক কামিন্স করেন ২২ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৩ উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা।
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ( বিধায়ক / অভিনেতা )
আমাদের দেশের সমর্থক হয়ে বহু ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি কিন্তু রবিবাসরীয় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে স্বাসরুদ্ধ করা ম্যাচ খুব কমই হয়। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ক্যাঙ্গারু দলের এই ১৯৯ রানটি পরিভাষায় আমি আনপ্রিসিডেন্ট বলেই মনে করি। শুরুটা নেহাত খারাপ করে নি অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার এবং স্মিথ বেশ ভালোই খেলাটা ধরেছিলো। রবিবারে সিএন পোর্টালে লিখেছিলাম যে , আইপিএল খেলা খেলোয়াড়রা কিন্তু ভারতের মাঠ সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল কিন্তু তার চিহ্ন কিন্তু রবিবারে ছিল না ব্যাটারদের। তবে ৬ ভারতীয় বোলার ভালোই বল করেছে বিশেষ করে তিন স্পিনার। অনেকদিন বাদে দেখলাম ৬ বোলারের সকলেই উইকেট পেয়েছেন।
১৯৯ রান এমন কি আর ভাবনা থেকে যদি ভারত শুরু করে থাকে তবে বলবো খুবই অক্রিকেটীয় ভাবনা ছিল কারণ চিরকাল বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদের অনেকটাই অস্ট্রেলিয়ার দান। ২ রানে ৩ উইকেট ! ভাবা যায় ? আমি তো ভাবলাম হয়ে গেলো। টেনশনের পারদ চড়তে শুরু তখন থেকেই। ওভার প্রতি ৪ রান, সেটাও ভুলে গেলেন রোহিত ? ইদানিং রোহিত শর্মা চ্যালেঞ্জটা নিতে পারছেন না। তারপরেই শুরু হলো আগের দিনের মতো ধীর গতিতে বল দেখে অসাধারণ ক্রিকেট। আমার নিশ্চিত ভালো লেগেছে কেএল রাহুলের খেলা। উনি ওপেন করে থাকেন আবার প্রয়োজনে উইকেটকিপারের কাজটাও ভালো করেন। তবে এতক্ষন উইকেটের পিছনে থেকে ক্লান্তি আসে কাজেই কোচ রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে পরে পাঠানোর ভাবনা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত ওই তো ওপেনের মতোই করতে হলো দ্রুত তিন উইকেট পরে যাওয়াতে। একটা ভরসা ছিল যে বিরাট ঠিক খেলে দিতে পারে কিন্তু তাঁর দেশ রানের মাথায় হুক করতে গিয়ে যে ক্যাচ দিয়েছিলেন তাকে একেবারে লোপ্পা ক্যাচ বলা যেতেই পারে কিন্তু সেটাই অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপারের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝিতে ফেলে দিলেন মার্শ। আমি মনে করি ওটাই টার্নিং পয়েন্ট। খেলাটাই ফেলে দিলেন মার্শ। বাকি আউট হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রাহুলকে মানসিক বল জুগিয়ে কি খেলাটাই না খেললেন বিরাট কোহলি। একেবারে শেষ দিকে যখন আউট হলেন তখন জয়টা সময়ের ব্যাপার। টেনশন না থাকলে আবার কিসের খেলা ?
(অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত )
ভারতীয় বোলিং আটকের সামনে মাত্র ১৯৯ রানেই গুটিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। আজ অর্থাৎ রবিবার বিশ্বকাপের পঞ্চম ম্যাচে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ম্যাচে একে অপরের সম্মুখীন হয়। এই ম্যাচে প্রথমত গিলকে ছাড়াই নাম ভারত। ওদিকে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিকে উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও সেটার ধাক্ক অসমলে উঠলেও পুরোপুরি সফল হয়নি স্মিথ ও ওয়ার্নার। এরপর কুলদীপের বলে ক্যাচ দিয়ে ঘরে ফেরেন বাড়ানোর। এরপর আর সামলানো যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার তরফে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন স্মিথ। এবং ওয়ার্নারের ব্যাটে আসে ৪১ রান।
ওদিকে প্রথমে বল করতে নেমে ভালো শুরু করে সিরাজ ও বুমরা। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখার চেষ্টা করে। পাশাপাশি ৩ জন স্পিনার নিয়ে খেলায় অতিরিক্ত সুযোগ পেল ভারতীয় টিম। একটি করে উইকেট পে সিরাজ, পান্ডিয়া ও অশ্বিন। ২ টি করে উইকেট পেল বুমরা ও কুলদীপ ওদিকে জাদেজা একা ৩ টি উইকেট পায়। এখন ভারতকে জিততে ১০০ রান দরকার।