
১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ রাজ্যে ভোট শুরু হচ্ছে। ফল প্রকাশ ঠিক এক মাস বাদে ১০ মার্চ। রাজ্যে রাজ্যে যেমন দলবদল তুঙ্গে, তেমনই প্রচারে এগতে পারছে না কোনও দল। কারণ, করোনার কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশিকা। ব্যক্তি বা প্রার্থীর শেষ মুহূর্তে উপস্থিত থাকা আর ভার্চুয়াল ভাষণ দেওয়া যে এক ব্যাপার নয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।
৫ রাজ্যের ৪ টি বিজেপি বা বিজেপির জোটের হাতে থাকা সত্ত্বেও খুব স্বস্তিতে নেই গেরুয়া দল। প্রথমত, পাঞ্জাব বিজেপির হাতের বাইরে, মেরেকেটে ২-৩ টি আসন পেলেই বর্তে যাবে তারা। কিন্তু তারা চায় কংগ্রেসমুক্ত হোক পাঞ্জাব। উত্তরাখণ্ডে বেশ চাপে বিজেপি। বারবার মুখ্যমন্ত্রী বদলেও আস্থা অর্জন করতে পারেনি তারা। মণিপুরে জোটে আছে তারা, চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে কংগ্রেস ভোট কম পায়। যাতে করে মন্ত্রিসভা গঠনের সময় বাকি দলগুলিকে ম্যানেজ করতে পারে।
বাকি গোয়া এবং উত্তরপ্রদেশ। এই দুই রাজ্যে লড়াই কিন্তু মোদীর উপস্থিতি বা প্রচারের উপরই নির্ভর করছে। গোয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্যর অবস্থা খুব খারাপ। ওই রাজ্যের ভোটারদের অনেকেই টুরিস্ট ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। সেই ট্যুর করোনা আবহে অনেক কমে গিয়েছে। ফলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি মার খাচ্ছে। নতুন ব্যবসা আসেনি দীর্ঘদিন। বর্তমান প্রশাসনে অনেক জটিলতা এবং ভেদাভেদ রয়েছে। কাজেই প্রচারে সরকারি দল মোদীর উপস্থিতি চাইছে। উত্তরপ্রদেশে যোগীরাজ চললেও বর্তমান সরকারের ধর্ম, জাতপাত এবং প্রশাসনের উদ্ভুত মনোভাবের জন্য চাপা ক্ষোভ রয়েছে যোগীর উপর। সেক্ষেত্রে আজও যে প্রধানমন্ত্রীর একই জনপ্রিয়তা রয়েছে, এমন নয়। কিন্তু তবুও তাঁর উপস্থিতি এখনও কাজ দেয়। ফলে বিজেপি এবং তাদের এনডিএ জোটসঙ্গীরা চাইছে, মোদীজি নিজেই আসুন প্রচারে। এখানেও ভার্চুয়াল ভাষণে কতটা কাজ দেবে, তা সন্দেহের। তবুও মোদীর মুখটাই ভোট টানতে পারবে বলে ধারণা তাদের। মোদী কবে থেকে ভার্চুয়াল শুরু করবেন, তা ঠিক হলেও দল চাইছে প্রতিদিন প্রচারিত হোক তাঁর জনমোহিনী ভাষণ।
আগামী মাসের গোড়াতেই ৫ রাজ্যে নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুর এবং পাঞ্জাবে। এরই মধ্যে প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছেন, প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন দল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের নজরে কিন্তু উত্তরপ্রদেশ। এই প্রদেশে যারা শক্তিশালী, তারাই আগামীতে ভারতের ক্ষমতায় আসে বলে কথিত আছে। উত্তরপ্রদেশের লড়াই কিন্তু উন্নয়নের থেকে জাতপাতের উপরই অনেকটা নির্ভর করে। ব্রাহ্মণ থেকে দলিত, প্রায় ২০টি জাতের ভেদাভেদ আছে এই রাজ্যে। উত্তর পশ্চিমে যেমন জাঠ, তেমন বিহার লাগোয়া স্থানে কুর্মি থেকে নিম্নবর্গের। দলিত আছে সারা প্রদেশ জুড়েই।
গত এক বছরের রিপোর্ট-কার্ড কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে বেশি নম্বর দিচ্ছে না। ফলে লড়াই জোরকদমে। মূল দলগুলিতে আছে ক্ষমতাসীন বিজেপি, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি। কিন্তু মূল লড়াই হচ্ছে বিজেপির সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির মধ্যে, অন্তত মিডিয়া মহলের ওপিনিয়ন পোলের তাই ধারণা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে লড়াই বেশ চাপের। ৫ বছরের শাসনে ত্রুটির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কর্মহীন হচ্ছে এই রাজ্যের মানুষ বেশি। এছাড়া নানা নিয়মের জালে ফেলে রাজ্যের মানুষকে বিশেষ করে দলিত শ্রেণিকে বেশ কিছুটা চটিয়ে রেখেছেন যোগী।
এরপর সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ সাম্প্রতিক কৃষি আন্দোলন। রাজ্যের জাঠ শ্রেণির মানুষ যোগীরাজের বিরুদ্ধে, বিরুদ্ধে যাদব শ্রেণির মানুষও। এছাড়া রয়েছে মুসলিম ভোট। অখিলেশ যাদব এই ভোটগুলির দিকে তাকিয়ে উত্তর পশ্চিম প্রদেশে জোট বেঁধেছেন প্রয়াত চরণ সিংহের দল রাষ্ট্রীয় লোকদলের সঙ্গে। মুসলিম ভোট বরাবর পেয়ে থাকেন অখিলেশ, রাজ্যে ১৯ শতাংশ যার ভোট আছে। তারই মাঝে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন ভোট কাটুয়া হায়দরাবাদের ওয়াইসি। মায়াবতী, কংগ্রেস জোট যত ভোট কাটবে, তত সুবিধা পাবে বিজেপি বলেই আশা যোগীর। যোগী দ্বিতীয়বার জিতলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর মুখ হবেন বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলে। কিন্তু সেখানেই নাকি আপত্তি অমিত শাহ বা পীযূষ গোয়েলদের বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থন করছেন। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে, তিনি প্রচারে যাবেন লখনউতে। গত বিধানসভা ভোটে সমাজবাদী নেত্রী জয়া বচ্চন এ রাজ্যে তৃণমূলের প্রচারে এসেছিলেন।
সব মিলিয়ে ভোট জমজমাট।
গঙ্গাসাগরে স্নান ও তর্পণ করতে লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হয় প্রতিবছর। খুব একটা বাঙালির বা বঙ্গবাসীর ভিড় নিশ্চিত হয় না ঠিকই কিন্তু বহিরাগত অবাঙালি পুণ্য়ার্থীদের উপস্থিতি হয় কাতারে কাতারে। এরা প্রথমে ট্রেনে বা বাসে কলকাতায় আসে তারপর ধর্মতলার বাস গুমটি থেকে কয়েক হাজার বাসযাত্রা হয়ে থাকে।
গত দু বছর ধরে সতর্কতা ছিল বিপুল কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ে কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ দেয় নি। এ বছরের বিষয়টি ভিন্ন। ডিসেম্বরেই ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ এসে উপস্থিত হয়েছিল।
ভারতীয় বিজ্ঞানী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থাগুলি সতর্ক থাকার প্রস্তাব দিয়েছিল বিশেষ করে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশকে। তারা জানিয়েছিল যে এবারের তৃতীয় ঢেউ বা তথাকথিত 'ওমিক্রন' কিন্তু আগের দুবারের থেকে বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে। এবং এও জানিয়েছিল যে,সংক্রমণের সুনামি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরই মধ্যে বড়দিন বা বষপূর্তির উৎসব পালিত হয় দেশজুড়ে। অনেক জায়গাই সংক্রমিত হয়েছে তাতে বিশেষ করে শহর কলকাতা। দিল্লি খুলে দিয়েছিল সমস্ত যানবাহন। পক্ষান্তরে অনেকটাই সংযত ছিল মুম্বাই বা বেঙ্গালুরু কিংবা চেন্নাই। কিন্তু সংক্রমণ আটকানো যায় নি।
এরই মধ্যে মকর সংক্রান্তি এসে গিয়েছিল। রাজ্য সরকার পরিষ্কার বার্তা দিয়েছিল, যাদের যাওয়ার তাদের আটকানো কঠিন কিন্তু করোনা টেস্ট করে ভ্যাকসিন নিয়েছে কি না দেখেই গঙ্গাসাগরে যাওয়া স্থির হবে ব্যক্তি বিশেষে। আদালতেও যাত্রা বন্ধ করার আবেদন এসেছিল। মহামান্য আদালত ২ সদস্যের কমিটি গড়ে পুলিশ প্রশাসনের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এরপর লক্ষ লোক শুক্রবার স্নানযাত্রা করে। সাগরে দূরত্ববিধিকে মান্যতা না দিয়েই চলে স্নান যাত্রা। মাস্ক বা স্যানিটাইজার কোথাও দেখা পাওয়া দুস্কর ছিল। আজ তারা ফিরে এসেছে। ওই ধর্মতলায় এবং রওনা দিচ্ছে নিজ নিজ রাজ্যে। কিন্তু কতটা সংক্রমণ পশ্চিমবঙ্গকে উপহার দিয়ে গেলো কে জানে। জানা যাবে এ মাসের ২২, ২৩ তারিখ।
পিছিয়েই গেল ৪ পুরসভার ভোট। শনিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিল, ওই ভোট হবে ২২ ফেব্রুযারি। আর কোনও পরিবর্তন অবশ্য হচ্ছে না। প্রচারের ক্ষেত্রে সব নিয়ম বলবৎ থাকছে।
করোনা সংক্রমণ প্রবলভাবে বেড়ে গিয়েছে গত মাসের শেষ থেকে। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। যদিও করোনা তার নিজের শক্তি অনেকটাই হারিয়েছে, তবুও একটি জটিল রোগ তো বটেই। মৃত্যুসংখ্যা কমলেও কিছু মানুষের মৃত্যু তো হচ্ছে। কাজেই এই অবস্থায় পুরভোট সম্ভব কিনা, প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে।
কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই ভোট পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে| কেউ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। মহামান্য আদালত জানতে চেয়েছিলেন রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনারের কাছে, এই দায়িত্ব কার? সঠিক উত্তর না পাওয়াতে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন মহামান্য বিচারপতিদ্বয়। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সওয়াল-জবারের শেষে জানিয়েছিলেন, এই ভোট পিছিয়ে দেওয়া যায় কিনা।
এরপর দ্রুত পট পাল্টাতে শুরু করে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আসে। সিএন পোর্টালে সকালেই লেখা হয়েছিল, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শনিবার পচিমবঙ্গের ৪ পুরসভার ভোটের প্রস্তাবনা আসছে। অর্থাৎ কিনা প্রায় ২১ দিন পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর আগে প্রায় সব বিরোধী দল যথা বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস থেকে ভোট পিছনোর প্রস্তাবনা এসেছিল। তৃণমূলের রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আজকের এই কোভিড পরিস্থিতিতে ভোট বাতিল করে করোনা পরিস্থিতির দিকে ধ্যান দেওয়া উচিত।
শেষ পর্যন্ত ভোট পিছিয়েই গেল এবং তার দিনক্ষণ হল ১২ ফেব্রুয়ারিই। নৈতিক জয় একপ্রকার অভিষেকেরই বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি প্রশ্নই থেকে যায়, ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলা কি করোনামুক্ত হবে?
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বিজেপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল উত্তরপ্রদেশে, মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন দলের হিন্দুত্বের মুখ যোগী আদিত্যনাথ। যদিও প্রচারের মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই। আসলে মোদী ছাড়া বিজেপির এখনও কোনও মুখ নেই। মোদী দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সংঘ পরিবার বুঝেছিল যে, দেশের বিরোধী দলগুলির ছন্নছাড়া অবস্থা। সুতরাং মোদী ছাড়া উপায় নেই। উত্তরপ্রদেশ এমন একটি রাজ্য যেখানে যে দল শক্তিশালী হয়, কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসে তারাই, যা বিগত দিনে দেখা গিয়েছে। গত উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে জেতার পর গুঞ্জন উঠে এসেছিল যে, মোদীর পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী না এনে সংঘ পরিবার যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী করে। সেবার যোগী শপথ নেওয়ার সময় আমন্ত্রিত প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন ঠিকই, কিন্তু শপথ শেষে 'চা চক্রে' তিনি যাননি। শপথ শেষে দ্রুত দিল্লিতে ফিরে আসেন তিনি।
এবারও যোগীকেই মুখ করে বিজেপি এগোতে চাইছে। এবারেও প্রচারযন্ত্রের দায়িত্ব মোদীর উপর ন্যস্ত করে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিল সংঘ ও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সমস্যা তৈরি হয়েছে অন্যত্র। এবার জনসভা করা যাবে না, যাবে না রোড শো করা। তবে মোদীর ভোটপ্রচার হবে কী করে? জানা যাচ্ছে, ভার্চুয়ালি মোদী বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু ভার্চুয়ালি বা টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করলে দেখবে কজন? সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে সবাই চায় এবং মোদীর ভাষণে "মোদী মোদী" ধ্বনির একটি সফল প্রতিক্রিয়া আছে। সেটি না থাকলে পিছিয়ে পড়া সুবিশাল প্রদেশ নাগরিক কতটা উদ্বুদ্ধ হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।
এর উপর বার্তা আরও আছে। যোগীর নিজস্ব জনপ্রিয়তা নিম্নগামী। প্রদেশে গত ৫ বছরে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, যাতে রাজ্যের মানুষ ক্ষুব্ধ যোগীরাজের উপর। বিকল্প মুখের দরকার ছিলই। এরই মধ্যে বিজেপির মন্ত্রী সহ বহু নেতা সম্প্রতি দল ছাড়ছে, যা নিয়মিত হয়ে গিয়েছে। তবে একটাই ভরসা বিজেপির যে, আজও বিরোধী দলগুলি ছন্নছাড়া। ভোট যদি ভাগাভাগি হয়, তবে ফায়দা বিজেপিরই।
গঙ্গাসাগরে লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হয়েছে ইতিমধ্যেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজে আজ ধর্মতলার বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত হন এবং জানান, করোনাবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি এও বলেন, উচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনামা এসেছে, তা মেনে চলতে হবে। আদালতের নির্দেশ ছিল, গঙ্গাসাগরে যাওয়ার আগে করোনা টেস্ট করতে হবে। যদি নেগেটিভ আসে, তবেই সাগরে যাওয়া যাবে, নতুবা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এতো পুণ্যার্থীর টেস্ট করা কি আদৌ সম্ভব? এরই সঙ্গে এটাও বাস্তব, যারা গঙ্গাসাগরে যাচ্ছে, তাদের সিংহভাগ বাইরের রাজ্য থেকে এসেছে। এদের কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে এসেছে। নিজের রাজ্য থেকে আসার সময় কেউ কি আর টেস্ট করিয়ে বেরিয়েছে?
প্রশ্ন অনেক। এই গঙ্গাসাগর ১৪ জানুয়ারি অর্থাৎ মকর সংক্রান্তির দিনে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ পৌছে গিয়েছে। এরা ফেরার পর ফের রাজ্যে করোনা বাড়তে পারে, জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল। এরই ৮ দিন বাদে ৪ পুরসভায় ভোট।
সমস্যা বা ভয় সেখানে। এবারের ভোটার যারা, তারা চন্দননগর, আসানসোল, শিলিগুড়ি এবং বিধাননগরের বাসিন্দা। এদেরই সঙ্গে কথা বলল সি এন পোর্টাল।
বিধাননগরের বাসিন্দা কৌশিক দাশগুপ্ত বলছেন, আতঙ্কে আছি। পাড়ায় অনেকেরই সংক্রমণ হয়েছে। ভোটের সময় যদি আমাদের কিছু হয়? শিলিগুড়ির রূপক আবার সরকারি দলের সমর্থক। জানাল, ভোট তো দিতেই হবে। যদি কিছু হয়, তবেও বিকেলের পর গিয়ে ভোট দেওয়া যাবে। যাঁরা সরকারি কর্মী ভোটের কাজ করবেন, আতঙ্ক তাঁদের সবচাইতে বেশি। কয়েকশো মানুষকে ভোট দেওয়াতে হবে তাঁদের। আসানসোলের সোমনাথ রওনা দিয়েছেন মুম্বইতে। জানাচ্ছেন, ভোটে নেই বাবা। চন্দননগরের শুভা মুন্সির শশুরবাড়ির লোক আর ভোটের বিষয়ে উৎসাহী নয়। শুভা জানাচ্ছেন উদাসীনভাবে, দেখা যাক কী করা যায়।
গত দু বছর ধরে সরকারি খাতায় তিনি নাকি মৃত। যদিও দিব্যি বেঁচে রয়েছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার থানা এলাকার নিশাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ঝাপবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আজিমা বিবি জমাদার। মহিলার অভিযোগ, ২০১৮ সালে তিনি জানতে পারেন, ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। এরপরই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নিশাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হন। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্র দিয়ে পঞ্চায়েত থেকে নাকি আবাস যোজনার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছে। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ ওই গৃহবধূর। এরপর থেকে ভোটার কার্ড থাকলেও আজও ভোট দিতে পারেননি ওই মহিলা।
জানা যায়, ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে রাস্তার পাশে ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে বাস করেন আজিমা। স্বামী নেই, তাই লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে হয় তাঁকে। শুধুমাত্র ভোটার তালিকায় নিজের নাম তোলার জন্য ২ বছর ধরে প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। তবে আজও মেলেনি সুরাহা।
অবশ্য এ বিষয়ে মন্দিরবাজারের ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২২ জানুয়ারি ৪ পুরনিগমের ভোট পিছচ্ছে না। হঠাৎ করে করোনা প্রবলভাবে বেড়ে গিয়েছে। নেতা-মন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে এই সংক্রমণ। লোকাল ট্রেনের সময় কাটছাঁট করে শেষ ট্রেন শিয়ালদহ ইত্যাদি থেকে ছাড়বে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে। পাশাপাশি বেড়ানো বন্ধ। টুরিস্ট স্পটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে পূর্ব ঘোষিত ৪ পুরনিগমে ভোট সময়মতো হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল ভোটারদের মধ্যে। এত কড়াকড়ি থাকলে ভোট হয় কী করে, জিজ্ঞাসা ছিল সাধারণের।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, একবার ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ার পর তা পিছিয়ে দেওয়া বেশ কঠিন কাজ। কাজেই ভোট ২২ জানুয়ারিই হবে।
জানা গিয়েছে, করোনার এই মহামারীর আবহে ভোট হয় কী করে, তা নিয়ে কিছু মানুষের প্রশ্ন থাকলেও এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি কিন্তু খুব প্রতিবাদের সঙ্গে ভোট বন্ধ করার এখনও আবেদন করেনি। মিডিয়ার সামনে হয়তো কেউ কেউ আপাতত বন্ধ থাকুক গোছের কিছু বললেও তা দলের কথা হিসাবে ধরা হচ্ছে না। অর্থাৎ ভোট বাতিল করার পথে তারা যাচ্ছে না আপাতত।
অবশ্য তাদেরও সমস্যা আছে। সামনে কয়েকটি রাজ্যের ভোট। এখন বিজেপি কোনও ক্ষেত্রে ভোট বাতিলের দাবি তুললে একই দাবি অন্য রাজ্যেও উঠতে পারে। বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ভোট দ্রুত সারতে চাইছে। অন্যদিকে সিপিএম বা কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত প্রেস ডেকে ভোট পিছনোর বিষয়ে কোনও দাবি রাখেনি। এই তিন দলের মুখ পুড়বে ভোট পিছনোর দাবি তুললে। কারণ এরাই দু মাস আগে পুরনিগম ও পুরসভার ভোটের প্রবল দাবি তুলেছিল। তখনও তো করোনা ছিল। কাজেই কিছুটা হলেও আপাতত হজম করতে হবে ভোটপর্বটি।
আজই নমিনেশন জমা দিলেন অনেকেই। কারণ হাতে আর সময় নেই। তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রচারের নিয়মকানুনে পরিবর্তন আসবে।
কলকাতা পুরসভার ভোট হয়ে গিয়েছে। বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, আজ শপথ অনুষ্ঠানও হয়ে গেল। এবার নজরে বাকি পুরসভা বা কর্পোরেশনগুলি। এর মধ্যে দুর্গাপুর, চন্দননগর, বিধাননগর ও আসানসোলে ভোট হবে। আপাতত ঝুলে রয়েছে হাওড়ার ভোট, যা ২২ জানুয়ারিতে না হওয়ারই সম্ভাবনা। হাওড়া নিয়ে আদালত কী রায় দেয়, সেদিকেই নজর বাংলার মানুষের।
যে ৪টি কেন্দ্রে ২২ জানুয়ারি ভোট হবে, সেখানে চন্দননগর বা বিধাননগর নিয়ে কোনও ভাবনা নেই সরকারি দলের। দুর্গাপুর বা আসানসোল নিয়েও খুব বেশি টেনশন করছে না তৃণমূল। কিন্তু চিন্তা শিলিগুড়ি নিয়েই। আজ অবধি শিলিগুড়ি পুরসভা কোনওদিনও দখল করতে পারেনি তৃণমূল। একবার কংগ্রেসকে তারা সমর্থন দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী। বিগত পুরসভা দখল করেছিল বামেরা, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েই। সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য মেয়র হয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক লোকসভা এবং বিধানসভায় বামেদের লালদুর্গ শিলিগুড়িতে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। জামানত জব্দ হয়েছিল সর্বত্র।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ফের বিপুল ভোট পেয়ে ক্ষমতায় তৃণমূল। কিন্তু তাদেরও অধরা শিলিগুড়ি। শোনা গেল, প্রথমে অশোক ভট্টাচার্য ভোটে দাঁড়াবেন না জানালেও সম্প্রতি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর নির্দেশে ফের তিনি পুরভোটে দাঁড়াচ্ছেন। এমনও শোনা যাচ্ছে যে, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হতে পারে তাদের। সমস্যা রয়েছে তৃণমূলের। শিলিগুড়িতে একটা বড় সংখ্যার অবাঙালি পশ্চিম ভারতীয় ভোট রয়েছে। নেপালি ভোটও রয়েছে বেশ কিছু। বাকি বাঙালি ভোটের অনেকটাই দখল করেছিল বামেরা। অতএব কোন ভোটের ভরসায় থাকবে তারা? এটা সত্যি, বিগত দুটি নির্বাচনে তৃণমূল পরাজিত হলেও দ্বিতীয় স্থানে তারা ছিলই। এবার বিভিন্ন কেন্দ্রে তৃণমূল দুর্দান্ত ফল করছে। কাজেই তার প্রতিফলন যদি এবার পাওয়া যায়, ভরসা বা ভাবনা সেখানেই। তাদের মুখ শিলিগুড়িতে প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। গৌতম নিজেই গত বিধানসভায় জিততে পারেননি। তাহলে তাঁকে মুখ করে সুবিধা হবে কি? অন্যদিকে, বিজেপির মধ্যেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল। সম্প্রতি অনেক উত্তুরে নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে ক্ষোভ বেড়েছে। তৃণমূলের ভরসা এখানেই।
এবার কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে ১৪৪ টি ওয়ার্ডে সমস্ত রাজনীতিক দল এবং নির্দল মিলিয়ে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৫০ জন। এর মধ্যে ৭৩১ জন প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ফলাফলের পর এই তথ্য উঠে এসেছে।
নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, কোনও কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা যত থাকবে, তার ৬ ভাগের ১ ভাগ বৈধ ভোট যদি কোনও প্রার্থী না পান, তাহলে তাঁর জমা দেওয়া জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই জন্যই মনোয়ন জমা দেওয়ার সময় সমস্ত প্রার্থী জামানত হিসাবে যে টাকা দেন, নির্বাচন কমিশন সেই টাকা জমা রেখে দেয়। আর সেটা যে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়, তাঁকে ফেরত দেওয়া হয় না।
ভারতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত কী বা সেটা কেন হয়, অনেকই জানেন না বিষয়টি। নির্দিষ্ট আইনসভার আসনে দাঁড়াতে গেলে নির্বাচন কমিশনের একটা অনুমতি লাগে। আর সেই অনুমতি নেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হয়। সেটাকেই জামানত বলা হয়। জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইন ধারা ১৯৫১, ৩৪,১ (ক) অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সেই অর্থ জামানত হিসেবে দিতে হয়। তবে শুধু জামানত বাজেয়াপ্ত হয়, তা কিন্তু নয়। জামানত ফিরিয়েও দেওয়া হয়। তবে কী কী কারণে জামানত ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তার কয়েকটি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে। যেমন, যদি প্রার্থী তালিকায় প্রার্থীর নাম না দেখানো হয়। এর অর্থ হল, যদি নির্বাচন কমিশন সেই প্রার্থীর নাম প্রত্যাখ্যান করে বা তিনি নিজেই তাঁর নাম তুলে নেন। ভোটের আগে যদি প্রার্থী মারা যান। প্রার্থী জয়ী হলে। ইত্যাদি।
তবে এমনও দেখা গেছে, কোনও নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী মোট বৈধ ভোটের ১/৬ অংশ ভোট না পেয়েও জিতে গেছেন। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, কোনও নির্বাচনে জয়ের জন্য ন্য়ূনতম ভোট পাওয়ার কোনও সীমা নেই। আবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করার জন্যই জামানত জমা করার বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন।
রবিবার কলকাতা পুরভোট মোটামুটি সমাপ্তিতে। কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে নিশ্চই। ভোটদান নাগরিকের জাতীয় কর্তব্য হওয়া সত্ত্বেও এদেশে কতটা পালিত হয়ে থাকে? তবে কলকাতা পুরসভার ভোট চিরকালই অশান্তির আবহে হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠা করেছিল বাম জমানা। চিরকাল কলকাতা বাম ও বিজেপি বিরোধী ক্ষেত্র। এক সময় বিধানসভা ভোট ও লোকসভাতে কংগ্রেস পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধীদের তুলনার শতাংশে এবং আসনে এগিয়ে থেকেছে। কিন্তু কলকাতা পুরসভার ভোট এলেই বামেরা তাদের নখদাঁত বের করে ক্ষমতা দখল করেছিল। ব্যতিক্রম না হলেও বিগত নির্বাচনে তৃণমূলও কয়েকটি স্থানে গণ্ডগোল করেছিল। এবার বাম বা কংগ্রেস দলের অবস্থান প্রায় তলানিতে।
অন্যদিকে বিজেপি তাদের শক্তি হারিয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচন থেকেই। পরে যত উপনির্বাচন হয়েছে, অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু এবারের নির্বাচনের আগে দলের রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, নির্বাচন হোক অবাধ। যদি কোনও অঞ্চলে তাঁর দল থেকে কেউ নিয়মভঙ্গ করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রবিবার ভোট দিতে আসার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক জানালেন, যদি কেউ উপযুক্ত প্রমাণ ফুটেজ সহকারে দিতে পারে, তবে তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে দলের অভ্যন্তরে এবং প্রশাসনিকভাবে। তিনি বলেন, বিরোধীরা যদি বুথে এজেন্ট বসাতে না পারে, তবে তার দায়িত্ব তো তৃণমূল নেবে না। তিনি পরোক্ষে জানান, প্রচার ছিল না, সংগঠন নেই। সর্বোপরি আগেই বিজেপি সহ বাকিরা বুঝতে পেরেছে, ১৩০ টি আসন ন্যূনতম তৃণমূল পাচ্ছে। তাই আগেই লড়াই থেকে পালিয়েছে।
কলকাতার কিছু অঞ্চলে ভোটে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটলেও সকাল থেকেই বহু জায়গায় আবার শীতের মিঠে মেজাজে মানুষ লাইন দিয়ে ভোটও দিয়েছে। এক-আধটি স্থানে বোমাবাজিও হয়েছে, যা সব দলেরই দাবি, এটা বিরোধী দলের কীর্তি।
রবিবার সকাল থেকেই মহারণ। খাস কলকাতা দখলের লড়াই। আক্ষরিক অর্থে এ হল ছোট লালবাড়ি দখলের লড়াই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে হাইকোর্টে সুরাহা না মেলায় বিজেপি গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। অন্যদিকে, শনিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে একটি বৈঠক হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন পুলিস কমিশনার সৌমেন মিত্র এবং রাজ্য পুলিসের ডি জি মনোজ মালব্য। এদিন নির্বাচন কমিশনারের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি ঘণ্টায় নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের সময় বহিরাগত কোনও ব্যক্তি যাতে না ঢুকতে পারে, তার জন্য নাকা চেকিংয়ের উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। হোটেল, লজ এবং বিভিন্ন জায়গায় যাতে বাইরের লোক আশ্রয় না নেয়, সেটা দেখতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে থাকে, সেটা প্রতি ঘণ্টায় নজরদারি করতে বলা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। এছাড়া দেখতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে কোনওভাবে লঙ্ঘন না হয়। পাশাপাশি ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পদেক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
২০১০ সাল থেকেই এই লালবাড়ি তৃণমূলের দখলে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক সাফল্যের পর এই লড়াই কার্যত তাদের শিকড়কে আরও ভিতরে নিয়ে যাওয়ার লড়াই। অন্যদিকে, বিজেপি লড়ছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং পাশাপাশি পায়ের তলার মাটি কিছুটা শক্ত করতে। ৪০ লক্ষেরও বেশি ভোটার আজ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী সংখ্যা সাড়ে নশোর মতো। ভোটগ্রহণের সময় সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোট গণনা হবে ২১ ডিসেম্বর। মেয়াদ শেষ হওয়ার হিসেব ধরলে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন হতে চলেছে প্রায় দেড় বছর পর।
অন্যদিকে, শনিবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলে রুটমার্চ এবং নাকা চেকিং। পুলিস আগেই বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। সেই হিসেবে বন্ধ রাখতে বলে হয়েছে চিড়িয়াখানাও।
এবার কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে তাকানো যাক।
১) ২৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন
২) ১৮ হাজার কলকাতা পুলিশ এবং ৫ হাজার রাজ্য পুলিশ থাকছে
৩) সিঙ্গল বুথে ২ জন সশস্ত্র পুলিশ আর ২ জন লাঠিধারী কনস্টেবল থাকবে
৪) বিয়েবাড়ি, ফাঁকা বাড়ি, হোটেল, লজ, নবনির্মিত বাড়ি বা অর্ধনির্মিত বাড়িতে তল্লাশি চলবে
৫) ৪ হাজার ৯৫৯টি বুথের জন্য থাকছে ৬ হাজার ৫৭০টি ইভিএম।
৬) ১ হাজার ৭৭৬টি ভোটকেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ
গত শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে | প্রথমে ঠিক ছিল, বিকেল ৪ টের সময় তালিকা প্রকাশিত হবে। কিন্তু সন্ধ্যা পার হয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৃণমূলের দুই মুখপাত্র লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে পাশে রেখে তালিকা প্রকাশ করেন |
প্রথমে জানা গিয়েছিল, যাঁরা সাংসদ, বিধায়ক অথবা মন্ত্রী, তাঁরা কেউই প্রার্থী হতে পারবেন না | শোনা যায়, সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল | এক ব্যক্তি এক পদ পরিকল্পনাতে চলবে তৃণমূল কংগ্রেস, এমনটাই ঠিক ছিল | কিন্তু দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে সম্পূর্ণ বিষয়টি বদলে যায় | সাংসদ মালা রায়, যিনি কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন, তিনি আবার টিকিট পেলেন | এছাড়া প্রাক্তন মেয়র ববি হাকিম সহ অতীন ঘোষ, দেবাশিষ কুমার প্রমুখ ৬ জন টিকিট পান | শোনা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই নাকি এই ব্যবস্থা | অবশ্য ছাঁটাইয়ের তালিকায় পড়েন ৩৯ জন প্রাক্তনী, যাঁরা এর আগে তৃণমূলের টিকিট পেয়ে জিতে এসেছিলেন |
বুধবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ | তার আগেই প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়কে বাতিল করা হয় | তাঁর স্থলে প্রার্থী বদল করে এক বার্তা দেওয়া হল | কিন্তু তনিমা দাদার ইচ্ছা পূরণ করতে নির্দল প্রার্থী হলেন। অনেক কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসে থাকা বা বিজেপিতে থাকা অনেকেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে বিভিন্ন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে পড়েছেন | যথা সোনালী গুহর স্বামী পার্থ মিত্র কংগ্রেসের হয়ে নিজের কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন | অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন রতন মালাকার, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য ছিলেন। তাঁকে বাদ দিয়ে প্রার্থী করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর ভাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে |
রতন কিন্তু আজ নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন | আবার ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে এক সময় প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে বাতিল করে প্রার্থী করা হয়েছে অসীম বসুকে | সচিদানন্দ নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন | এইরকম দলের বিরুদ্ধে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে | যদি না করে, তবে তাঁদের দল থেকে বহিস্কার করা হবে জানা গিয়েছে |
শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রচারে নেমে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল প্রার্থীদের দেওয়াল লিখন এবং প্রচারে বিভিন্ন এলাকা ছিল সরগরম। বিরোধিতার তৃতীয় অবস্থানে থাকা বামেরা ইতিমধ্যেই কয়েকটি আসন বাদ দিয়ে বাকি আসনে প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছে। প্রচারে পথে নেমেছে বামেরাও। বামেদের কথায়, ভোটে হার-জিত পরের কথা। রাজনৈতিক লড়াই হবে।
কিন্তু রাজ্যের প্রধান বিরোধী বিজেপি শনিবার সন্ধ্যা অবধি তাদের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে উঠতে পারেনি। অভ্যন্তরের খবর, শুক্রবার রাতেই দিল্লি থেকে ফিরে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার চলে গিয়েছেন বালুরঘাটে নিজের কেন্দ্রে। রবিবার তিনি কলকাতায় আসবেন, এমনটাই সূত্র মারফৎ জানা গেল। তারপর তিনি সোমবার ফিরে যাবেন দিল্লিতে, যোগ দেবেন লোকসভা অধিবেশনে। জানা গেল, ২৯ বা ৩০ তারিখে বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতে পারে।
যে কোনও সরকারি দলের চরিত্রের আয়না বিরোধীরা বলেই কথিত। সেই কারণে কংগ্রেসের রাজত্বে উঠে এসেছে জ্যোতি বসুর মতো বাগ্মীর মুখ। তেমনই ৩৪ বছরের বাম রাজত্বে উঠে আসা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে প্রধান বিরোধী দল প্রার্থীতালিকা ঘোষণা না করায় রাজনৈতিক লড়াইও এখনও জমেনি।
বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, আচমকা ভোটের দিন ঘোষণা করে ফয়দা তুলেছে তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মালা রায়ের বক্তব্য, আমাদের প্রচারের দরকার হয় না। কারণ আমরা সারা বছর মানুষের জন্য কাজ করি।