
লোকসভা নির্বাচনের সাত মাস আগে ফের 'এক দেশ এক ভোট' নীতি নিয়ে তৎপর কেন্দ্র। নীতি কার্যকর করার জন্য আইন কমিশনের সঙ্গে কেন্দ্রের কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে বলে খবর। সেই আলোচনার ভিত্তিতেই একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, ওই কমিটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
লোকসভা ভোটের সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন হলে, খরচ অনেকটাই কমবে। একই ভোটার তালিকায় দুটি নির্বাচন হওয়ায় সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরির চাপ কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণবিধির জন্য সরকারের কাজ আটকে থাকবে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েই এক দেশ, এক নির্বাচন নীতি নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানানো হয়, লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচন হলে, আসন সমঝোতা করা সহজ হবে। বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, পরবর্তী পর্যায়ে এই নীতিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলিকে ক্ষমতাহীন করে পঞ্চায়েত ও পুরসভা ভোটকেও অন্তর্গত করা হবে।
ভোটাররা ভোট বয়কট করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও ভোট পড়েছে ৯৫ শতাংশ! এমনটাই ঘটেছে রাজারহাট (Rajarhat) এলাকার জাঙ্গা হাতিয়াড়া দু’নম্বর পঞ্চায়েতের একটি বুথে। কিন্তু, কীভাবে তা সম্ভব? সেই 'রহস্য' সমাধানের দায়িত্বভার পুলিসকে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
সম্প্রতি, জাঙ্গা হাতিয়াড়া দু’নম্বর পঞ্চায়েতের আবদুল কালাম কলেজের একটি বুথে ভোট বয়কটের পরেও ৯৫ শতাংশ ভোট কীভাবে পড়ল, সেই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। সেই মামলার শুনানিতেই, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ, কীভাবে এত ভোট পড়ল, তা অনুসন্ধান করে দেখবেন রাজ্য পুলিসের ডিজি এবং আইজি। আগামী ৩ অগাস্ট সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। সেইসঙ্গে, রাজারহাটের বিডিওকে তলব করেছেন বিচারপতি।
ভোটের দিনই জ্যাঙ্গা হাতিয়ারা দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত আরও একটি এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল । সেখানে আবার ভোট বয়কটের দাবি জানিয়েছিলেন ভোটকর্মীরা। দুই নম্বর পঞ্চায়েতের যাত্রাগাছি বিবেকানন্দ পল্লী ১২ নম্বর সুসংগত শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ২৭১ ও ২৭২ নম্বর বুথে তৃণমূলের সঙ্গে বচসায় জড়িয়েছিল সিপিআইএম ও বিজেপি । বুথে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ব্যালাট বক্স এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন ভোটকর্মীরা। সেইসময় ভোট করাতে রাজি হননি তাঁরা।
ভোট (Vote) গণনার দিনেও উদ্ধার (rescue) তাজা বোমা (bomb)। মঙ্গলবার, কোচবিহারের তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের চিলাখানা বাজার থেকে বোমাটি উদ্ধার হয়েছে। বোমা উদ্ধার ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা বাজার চত্বরে।
উল্লেখ্য়ভাবে বিজেপি নাটাবাড়ি বিধানসভা ৩ নং মণ্ডল সভাপতি চিরঞ্জিত দাস বলেন, চিলাখানার মানুষ শান্তি প্রিয় ও গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ। ২০১৮ সালের মতো ২০২৩ সালেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মানুষের ভোটার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারপরে চিলাখানার বেশ কিছু জায়গায় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে। সেই কারণেই বাজার গরম করার জন্য এই সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এছাড়াও ভোটগণনা কেন্দ্র থেকে দুই কিলোমিটার অদূরে ছড়িয়েছে বোমাতঙ্ক। চাঁচলের কলি গ্রামে মহারাজ তলায় একটি পোলট্রি ফার্মের পিছন থেকে দুটি ব্যাগকে বোমা উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থলে ছিল সিভিক ভলেন্টিয়াররা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌছয় চাঁচল থানার পুলিস বা বম্ব স্কোয়াড। বোমা উদ্ধারে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
ভোটগণনা (Vote) ঘিরে জেলায় জেলায় বাড়ছে উত্তেজনা। তারই মধ্য়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সামশেরগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর। সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর (Central Army) বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার, সামশেরগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুরে ভোটগণনা ঘিরে এবিএস বিদ্যাপীঠে চরম অশান্তির চিত্র লক্ষ করা গিয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর বারংবার এসে জমায়েত হচ্ছিলেন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। যার কারণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা লাঠি উঁচিয়ে সেই ভিড় সরানোর চেষ্টা করলেও বারবারই ব্য়র্থ হচ্ছিল তারা। এই কারণে ভিড় এড়াতে লাঠিচার্জ পর্যন্ত শুরু করে কেন্দ্র বাহিনীর জওয়ানরা।
সম্প্রতি সেই ভিড়ের মধ্য়েই ছিলেন বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁকেও সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। সেই সময় বিধায়কের সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিধায়ক আমিরুল ইসলামের দাবি, ইলেকশন এজেন্ট হিসাবে বৈধভাবেই আমি এসেছিলাম। তবে এই কথা কেন্দ্রীয় বাহিনী মানতে একেবারেই নারাজ। তাদের একটাই দাবি, ভোট গণনা কেন্দ্রের সামনে কোনওভাবেই ভিড় করা যাবে না।
নিয়ম অনুযায়ী, ভোটগণনা কেন্দ্রে আগে কাউন্টিং অফিসার ঢুকবে পরে ইলেকশন এজেন্ট বা প্রার্থী প্রবেশ করবে। কিন্তু এই সব কোনও নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না। ফলে সমস্য়ার মুখে পড়েছে ইলেকশন এজেন্টরা।
শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট গণনা পর্ব (Counting Vote)। কিন্তু এই ভোট গণনা কেন্দ্রে এজেন্টেদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি তাঁদের মারধরও করা হচ্ছে। ঠিক এমনই ঘটনা ঘটে চলেছে রাজ্যের (State) জেলায় জেলায়। ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে ব্যাপক মারধরের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া (Howrah) জেলার বালি নিশিন্দায় পল্লীমঙ্গল বিদ্যামন্দির স্কুলে। নিশিন্দায় বিজেপির এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ভোট গণনা কেন্দ্রে। এমনকি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সিপিআইএমের অভিযোগ, সিপিআইএম সহ বিরোধীদের স্ট্যাম্প মারা গুচ্ছগুচ্ছ ব্যালট পেপার জানালা দিয়ে গণনা কেন্দ্রের বাইরে ফেলে দিচ্ছে শাসক দল। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
সূত্রের খবর, বালিজগাছা গণনা কেন্দ্র থেকে বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টকে মারধর করে বার করে দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। বিজেপি কাউন্টিং এজেন্টের নাম শ্যামল গায়েন জানান, ২১৭ নম্বর বুথের তৃণমুল প্রার্থী অনুরাধা গায়েনের স্বামী মঙ্গল গায়েনও কাউন্টিং এজেন্ট। তাঁরাই বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে দাদাগিরি করে ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে বার করে দেন। তিনি আরও বলেন, 'আমি তিনবার ঢোকার চেষ্টা করি, কিন্তু আমাকে গণনা কেন্দ্র থেকে বার করে দেয়। এর পাশাপাশি বিজেপি প্রাথী পুতুল গায়েনকেও মারধর করে।'
অন্যদিকে সাঁকরাইলেও একই ঘটনা ঘটে চলেছে। সাঁকরাইলের গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের গণনা সাঁকরাইল সিকম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণনা কেন্দ্রের বাইরে মঙ্গলবার সকালে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। দুষ্কৃতীরা গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিস বাধা দেয়। গেটে থাকা স্ক্যানার মেশিনও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার অর্থাৎ পুনর্নির্বাচনের দিন থেকেই সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে পুলিসকে। কোনও বিক্ষোভ হলে পুলিস সেই বিক্ষোভ এড়াতে লাঠিচার্জ শুরু করেছে। সাময়িক উত্তেজনা হলেও পুলিস গোটা পরিস্থিতিকে আয়ত্তে নিয়ে নেয়। যদিও সাঁকারাইলের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। পুলিস সিকম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের রাস্তায় জাতীয় সড়ক এবং সাঁকরাইল স্টেশনের দিকের রাস্তায় নাকা চেকিং চালাচ্ছে। শুধুমাত্র গণনা কেন্দ্রের পরিচয় পত্র থাকা ব্যক্তিদেরই ওই রাস্তায় আসা যাওয়া করতে দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের সিকম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিকম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিতরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে, এমনটাই জানা গিয়েছে।
সৌমেন সুর: ভোটের শেষে বলি হল ৪৬ জন মানুষ। কেউ হলেন পিতৃ হারা, কোনও কোনও মায়ের কোল শূন্য হলো। এই সংঘর্ষ-হিংসা-বিদ্বেষে কার ঠিক কতটা লাভ হল! প্রাণ তো আর ফিরে আসবে না। যে গেল সে তো চলেই গেল। মানুষে মানুষে এই বিভেদ সামান্য রাজনীতির জন্য। কেন? রাজনৈতিক মতভেদ, তরজা থাকবে, তাই বলে আক্রোশ মেটানো হবে প্রাণ নিয়ে! রাত কেটে সকাল হতেই খুনের খবর। খবর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুত পৌঁছে দেয় যে মাধ্যম, তাকে আমরা গণমাধ্যম বলি। যেমন- সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন ও চলচ্চিত্র। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য, খেলাধুলা, বিজ্ঞান, সিনেমা, বাণিজ্য সব জগতের খবর নিয়ে প্রকাশিত হয় উপরিউক্ত গণমাধ্যমগুলি। আমার বক্তব্য হচ্ছে- সর্বক্ষণ যদি আমরা খুন, মারামারি, রক্তপাত দেখি তাহলে আমাদের রিপুগুলো ১০০% নষ্ট হতে বাধ্য। আমরা জানি যে, আমাদের রিপু গুলোকে শান্ত রাখা একান্ত দরকার। রিপু শান্ত থাকলে মন শান্ত, জীবন শান্ত। তাহলেই মানুষের আচার ব্যবহার, কথাবলা, চরিত্র সবদিক থেকেই একটা সুফল পাওয়া যায়। অথচ আমাদের জীবনযাত্রা ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে। নিত্যদিন একটা অযাতিত টেনশনে আমরা দিন কাটাচ্ছি। সর্বসময়ে মনে হয়, 'আর কিছুতেই যায় না মনের ভার/ দিনের আকাশ মেঘে অন্ধকার।' এই কি জীবন! কেন আমরা হেলায় ফেলায় নিজের প্রাণ বিসর্জন দেব!
সবকিছু চলুক সিস্টেমকে ধরে। অবাধ মেলামেশা থাকবে, ভালোবাসা থাকবে, রাজনৈতিক মতভেদ থাকবে- কিন্তু তার পরিণতি হিংসা দিয়ে নয়। এর জন্য সমস্ত গণমাধ্যমগুলোকে সৎ ভাবে এগিয়ে আসতে হবে সমস্ত মানুষের স্বার্থে। নির্দিষ্ট কোন দলের হয়ে নয়। সব সময় যদি আমরা নেগেটিভ দৃশ্য দেখি, তাহলে আমাদের রিপু নষ্ট হবেই। তাই গণমাধ্যমকে অনুরোধ, খারাপের পাশাপাশি ভালো কর্মের দৃশ্য বা খবর, পৌঁছে দেওয়া উচিত মানুষের জন্য।
সামান্য ভোট পর্বের জন্য জীবন চলে যাবে- সে যে দলেরই হোক, এটা মন থেকে মেনে নেওয়া যায় না। আসুন আমরা শপথ নিয়ে আগামীতে একটা প্রাণ ও বিসর্জিত হবে না, সামান্য লোভের বিনিময়ে। একটু সংযত হই আমরা। আগামী প্রজন্মকে নির্ভেজাল নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচতে সাহায্য করি। মনে রাখবেন, নিজের জীবনের লড়াইটা নিজেকে লড়তে হবে, জ্ঞান অনেকেই দেবে, কিন্তু সঙ্গ কেউ দেবেনা।
ভোট পরবর্তী হিংসা বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে গোটা রাজ্য জুড়ে। পুননির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তা অবরোধ ও বোমাবাজি করা হচ্ছে ক্রমাগত। প্রায় বেশিরভাগ বুথেই শুরু হয়েছে সেই বিক্ষোভ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই শুরু হয়েছে এই ঘটনা। শনিবার ভোট শেষ হয়ে গেলেও হিংসা, মারামারি, বোমাবাজি এখনও বন্ধ হয়নি। শনিবার দিনভর বুথে বুথে চলেছে ব্যালট লুঠ, ছাপ্পা ভোট ও মারধর। তবে এখনও সেই ঘটনা অব্যাহত রয়েছে পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে।
আমডাঙা, নন্দকুমার, দিনহাটা, সালার সহ বেশকিছু পঞ্চায়েত এলাকা অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল সিপিআইএম-এর সংঘর্ষে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে বোমাবাজি। যদিও পুলিস বাহিনীকে দেখা গিয়েছে এই ঘটনায় লাঠি চার্জ করতে। বিক্ষোভকারীদের আটক করে তাঁদের লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করছে পুলিস। তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না, এমনটাই দেখা যাচ্ছে।
তবে নির্বাচনের দিন অর্থাত্ শনিবার পুলিসের সক্রিয়তা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। যার ফলে মৃত্যু হয়েছে অনেক কর্মী সমর্থকদের। বোমের আঘাতে, গুলির আঘাতে আহতও হয়েছেন অনেকে। তবে আজা সেই দিকে পুলিসের ততপরতা অনেকখানি লক্ষ্য করছে রাজ্যবাসী।
মণি ভট্টাচার্য: ভোটের কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও ১৬ ঘন্টা ধরে নিখোঁজ ভাঙড়ের পোলিং অফিসার। সূত্রের খবর, ভাঙড়ের দ্বিতীয় পোলিং অফিসার সঞ্জয় সর্দার শনিবার গভীর রাতে ভোটের সামগ্রী সমস্ত কিছু ও ডিসিআরসি জমা দিয়ে এখনও অবধি বাড়ি ফেরেননি। তাঁর হঠাৎ এই নিখোঁজ হওয়াতে স্বাভবিকভাবেই চিন্তিত তাঁর পরিবার। পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার সঞ্জয়ের পরিবারের তরফে জীবনতলা থানায় সঞ্জয়ের নিখোঁজ সমন্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পুলিস জানিয়েছে, সঞ্জয়ের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিস।
সূত্রের খবর, প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক সঞ্জয় সর্দার, ভাঙড়ের ১০৭ বনম্বর বুথ দক্ষিণ গাজীপুর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে ভোটের কাজে যান। এরপর ভোট শেষে ভাঙড়ের কাঠালিয়া হাইস্কুলে ডিসিআরসিতে ভোট সামগ্রী জমা দিয়ে শনিবার রাত ২ টো ১৫এর সময় সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এরপর ১৮ ঘন্টা হয়ে গেলেও সঞ্জয় নামের ওই দ্বিতীয় পোলিং অফিসার বাড়ি ফেরেননি বলে দাবি তাঁর পরিবারের।
সঞ্জয় সর্দারের স্ত্রী টুম্পা সর্দার সিএন-ডিজিটালকে জানিয়েছেন, সঞ্জয়ের সঙ্গে শেষবার ফোন যোগাযোগ করা হয়েছিল তখন সে সবে ভোট শেষ করেছেন। এরপর থেকে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায় নি। তিনি জানিয়েছেন তারপর থেকে ফোন বন্ধই ছিল। এ ঘটনায় রীতিমত ভেঙে পড়েছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমরা আজ সকাল থেকে বিভিন্ন হাসপাতাল গুলিতে ঘুরেছি। কিন্তু কোনও খোঁজ পাই নি। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভোটকেন্দ্র থেকে খুব দেরি হলেও সঞ্জয়ের বাড়ি অর্থাৎ ক্যানিংয়ে পৌঁছাতে দেড় থেকে ২ ঘন্টার বেশি লাগার কথা নয়। আমরা পুলিসকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার টিপুসুলতান হালদার সিএন-ডিজিটালকে বলেন, 'আমাদের ভোট কেন্দ্রে তেমন কিছু হয় নি। যখন আমরা ভোট সামগ্রী জমা দিয়ে ফিরছি তখন দেখেছিলাম ওনার ফোন বন্ধ। এরপর থেকে ১৭ -১৮ ঘন্টা কেটে গেলেও তার খোঁজ মেলেনি।'
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইটাহার ব্লকের একটি স্কুলে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন করণদিঘির রহতপুর হাইস্কুলের শিক্ষক রাজকুমার রায়। ভোট চলাকালীনই তিনি বুথ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। পরদিন সকালে রায়গঞ্জ থানার বামুনগাঁ এলাকায় রেললাইনের ধারে তাঁর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। স্কুল শিক্ষক প্রিসাইডিং অফিসারের ভোট চলাকালীন এই রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজ্যের কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার। এবার ২০২৩ পঞ্চায়েত ভোটে কিছু জায়গায় প্রিসাইডিং অফিসারদের মারধর করা হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটে নি। কিন্তু ভাঙড়ের এই পোলিং অফিসার নিখোঁজের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
মণি ভট্টাচার্য: 'আমাকে ভোটটা দিতে দিন স্যার,' বলেই পুলিস কর্মীর পা জড়িয়ে ধরলেন মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস কর্মী শুকুর আলী। সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের রেজিনগর এলাকায় সকাল থেকেই বুথ দখল করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা প্রিজাইডিং অফিসার সহ কংগ্রেস কর্মীদেরও মারধর করে বলে অভিযোগ। কেবল মুর্শিদাবাদ নয়, গোটা রাজ্যজুড়ে প্রায় সব জেলাতেই এমন চিত্র দেখেছি গোটা বাংলা। পাশাপাশি শনিবার আহতের সংখ্যায় ভরাডুবি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলি। সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলায় মেডিকেল কলেজ, গ্রামীণ হাসপাতাল ও হাসপাতাল গুলিতে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে আহতদের চিকিৎসার জন্য।
সূত্রের খবর, গতকাল অর্থাৎ শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রাণ গিয়েছে ২০ জনের। এছাড়া প্রতি জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনী হিংসায় আহত হয়েছেন বহু মানুষ এরপর তাঁরা ছুটে গিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা হাসপাতাল গুলিতে। সূত্রের খবর, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর এখনও অবধি রাজ্যে মোট ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় আমডাঙায় বারাসত এলাকার কদম্বগাছিতে বিভিন্ন এলাকায় ঝামেলা অশান্তি হওয়াতে আহতরা চিকিৎসার জন্য বারাসত মেডিকেল কলেজে পৌঁছায়। সূত্রের খবর, সেজন্য আহতদের চিকিৎসার জন্য শনিবার এবং রবিবারও বারাসত হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হয়। পাশাপাশি শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হয় মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজেও। আহতদের সংখ্যা নেহাত কম নয় মালদহে। মালদহ মেডিকেল কলেজে শনিবার আহতদের রক্তে ভিজে গিয়েছিল বহু হাসপাতালের শয্যার চাদর।
শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনী হিংসায় ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে সমস্ত বিরোধীরা। এই ঘটনায় হিংসা সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট কমিশনের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা অবশ্য জানিয়েছেন গতকাল অর্থাৎ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এছাড়া যত সমস্যা বা অভিযোগ এসেছিল অধিকাংশই সমাধান করা হয়েছে।
অর্ধেক নির্বাচন সম্পূর্ণ। আর এই নির্বাচনের মধ্যেই জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে মারধর, ছাপ্পা ভোট, ব্যালট বক্সে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, গুলি, বোমাবাজির মত ঘটনা। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের জেলায়গুলিতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিত তৈরি হয়েছিল। তারপরেই মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি, মারধর শুরু হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আহত-নিহতও হয়েছেন বহু। ঠিক একইভাবে কোচবিহারের প্রত্যেক বুথেই শুরু হয়েছে অশান্তি। তবে কোচবিহারের দিনাহাটতে এই নির্বাচন নিয়ে একটু বেশিই উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দিনহাটার ভিলেজ ওয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীরপাট স্কুলে বিজেপি কর্মীকে গুলির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় চিরঞ্জিত কাজী, রাধিকা বর্মন নামের দুই বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ইতি মধ্যেই চিরঞ্জিত কাজীর মৃত্যু হয়েছে। এখনও অবধি রাজ্যে ভোট ঘোষণা হবার পরে কোচবিহারে মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ অর্থাৎ নির্বাচনের দিনে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা ফলিমারি গ্রাম ৪/৩৮ নম্বর বুথ কেন্দ্রে বোমাবাজি। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ভোট কেন্দ্রের বাইরে বিজেপির এজেন্ট মাধব বিশ্বাস নামের ওই ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। দিনহাটা নিউ গীতালদাহ এলাকায় চলল গুলি আহত ৩ জন বিজেপি কর্মী। এই ঘটনার পরেই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ নজরুল শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে। ভোট কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ভোট কর্মীরা৷ কোচবিহারের বেশ কিছু জায়গায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছে। কোচবিহারের মাথাভাঙা ১, ২ এবং ১৯৭ নম্বর বুথে আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের বলরামপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের নন্দী ছেচুড়া ৮/২১৭ বুথে ভোট বয়কট।
এমনকি গোটা কোচবিহার বিহার জুড়ে ব্যালট বক্স চুরি করার অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। মূলত ছাপ্পা ভোট দিয়ে শাসক দলকে জয়ী করতেই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে শাসক দল, এমনটাই অভিযোগ। তবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছে বিরোধী দলের কর্মীরা। এত গুলি, বোমাবাজি, মারধরের পরেও বুথের বাইরে দেখা মিলছে না কেন্দ্রীয় বাহিনীর। সব মিলিয়ে বেশ এখন উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে কোচবিহার।
শনিবার সকাল ৭ টা থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে নির্বাচনী (Vote) প্রক্রিয়া। আর সেই প্রক্রিয়া চলাকালীনই রাজ্যের (State) জেলায় জেলায় চলছে বোমাবাজি মারধর। শুধু মারধরেই আটকে থাকেনি, এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের দলকে সম্পূর্ণভাবে জয়ী করতে শুরু হয়ে গিয়েছে ছাপ্পা (Chappa) ভোটও। ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে, ঠিক এমনই খবর পাওয়া যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে। উত্তর থেকে শুরু করে দক্ষিণ প্রায় সব জায়গাতেই ছাপ্পা ভোট হওয়ার অভিযোগ উঠে আসছে। মূলত উত্তর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ডায়মন্ডহারবার, নদীয়া, ওদিকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আবার মুর্শিদাবাদ, বীরভূমেও দেদার ছাপ্পার অভিযোগ উঠছে।
উত্তর থেকে শুরু করে দক্ষিণ প্রায় সব জায়গাতেই ছাপ্পা ভোট হওয়ার অভিযোগ উঠে আসছে। মূলত, বীরভূমের ১৭ নম্বর বুথের রুদ্রনগর, কোচবিহারের দিনহাটা ২ নম্বর ব্লক, জলপাইগুড়ির ঝাড় আলতা, কাটোয়া ৭০ নম্বর বুথ, কাটোয়া গোপালপুর, মালদহের গাজলী ১২২ নম্বর বুথ, মুর্শিদাবাদের ডোমকল, উত্তর ২৪ পরগনার ২৩০ নম্বর বুথ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মণ্ড ৫ নম্বর ব্লক, ৪৩ নম্বর ব্লক, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার-১ নম্বর ব্লকের নেতড়ার নস্করতলার ১৮৮, ১৮৯ নম্বর বুথ, নদীয়ার ইসলামপুর ৭৮ নম্বর বুথ, ফাঁসিদেওয়ার ফুলবাড়ি ৩০১, ৩০২ নম্বর বুথ থেকে রীতিমতো ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠে আসছে।
ইতিমধ্যেই ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ আসা বুথগুলির মধ্যেই কয়েকটিতে ব্যালট বক্স জ্বালানো শুরু হয়ে গিয়েছে। ভোট কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স বের করে তা জ্বালিয়ে ফেলছে দুষ্কৃতীরা। কোথাও কোথাও আবার কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে নির্বচনী প্রক্রিয়া।
সবেমাত্র ভোটের ৪ ঘণ্টা অতিক্রম হয়েছে। আর তাতেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বুথে বুথে। কোথাও ছাপ্পা ভোট, কোথাও ব্যালট বক্স জ্বালানো, আবার কোথাও মারধর। এ পরিস্থিতে সাধারণ মানুষযে সন্ত্রাসগ্রস্ত সেটা স্পষ্ট। পাশাপাশি এ অবস্থায় রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট যে একপ্রকার ব্যাহত সেটা বলাইবাহুল্য।
রাস্তা (Road) না হলে ভোট (Vote Boycott) বয়কট! রাস্তার দাবিতে সরব এবার জন সাধারণ। এই উত্তপ্ত জন সাধরণের ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলার কেশিয়াড়ী ব্লকের নছিপুর অঞ্চল এলাকার। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এই বেহাল রাস্তার কথা বারাবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন যাতায়াত করতে হয় ওই বেহাল রাস্তার ওপর দিয়ে। শুধু তাই নয় বর্ষার সময় রাস্তার উপরে জল উঠে আসে। ফলে স্কুলে যেতেও অসুবিধা হয় ছাত্রছাত্রীদের।
এলাকাবাসীদের দাবি, ওই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করে পাঁচটি গ্ৰামের মানুষজন। প্রায় ৭০০ টি পরিবারের বসবাস। গ্ৰাম থেকে ৩ কিমি দূরত্বে রয়েছে নছিপুর আদিবাসী উচ্চমাধ্যমিক হাইস্কুল। পড়ুয়াদের প্রতিনিয়ত ওই বেহাল রাস্তার ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এমনকি রাস্তার বেহাল দশার কারণে এলাকার অসুস্থ রোগীদের জন্যেও এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনা আ্যম্বুলেন্স থেকে শুরু করে বড় গাড়ি। তাই তাঁরা এই রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন, এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।
প্রসূন গুপ্তঃ পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট ঠিক কত শতাংশ তা নিয়ে সঠিক বার্তা কারোর কাছে নেই, কারণ জনগণনা বহুদিন হয় নি। কিন্তু এটা বাস্তব সংখ্যালঘু যেদিকে, বাংলার ক্ষমতা অনেকটাই সেদিকে। দীর্ঘদিন এই ভোটের বৃহৎ অংশ বামেরা পেয়েছিল। একই সঙ্গে এটাও বাস্তব ওই ভোট কিন্তু ভাগও হয়েছিল। এ কারণে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ বা মুর্শিদাবাদে বেশ কিছু আসন পেত কংগ্রেস। আবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভোট তৃণমূল পেয়েছে। অন্যদিকে, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বর্ধমান বা মেদিনীপুরের ভোট পেয়েছিল বামেরা।
তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল, তার অন্যতম কারণ নন্দীগ্রাম নেতাই বা রিজওয়ানুর রহস্যময় মৃত্যুতে সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ বামেদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। ২০১৯-এর লোকসভা বা ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের ৯০% ভোট তৃণমূল পেয়েছিল। ব্যতিক্রম ভাঙ্গর। সেখানে বামেদের জোটসঙ্গী আইএসএফ-এর নওশাদ সিদ্দিকি জিতেছিলেন। বৃক্ষরোপণ কিন্তু সেদিন থেকেই যা হয়তো আমল দেয়নি তৃণমূল।
আইএসএফ নিজেদের যতই ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করুক না কেন, আদতে এটি সংখ্যালঘু অধুষ্যিত দল কাজেই ধর্মের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বার্তা ছড়িয়েছে দিকে দিকে। যে কোনও দেশে সংখ্যলঘুদের দাবিদাবা থাকেই। বামেরা যেটা হয়তো খুব বেশি পাত্তা দেয়নি, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদের আলাদা সুবিধা দিয়েছেন বহুবার। এই পাওয়া বা আরও পেতে হবে, বিষয়টি যেমন সংখ্যালঘুদের আছে তেমন জঙ্গলমহলবাসী, মতুয়া ইত্যাদি গোষ্ঠীর মধ্যেও বিদ্যমান। আজ কিন্তু এই ভোটগুলি ফ্যাক্টর হবে।
সংখ্যালঘু ভোট প্রবলভাবে ভাগ হলে বিজেপির সুবিধা এমন ভাবনার কথাও ভাসছে, কিন্তু হিন্দু ভোট যে একতরফা বিজেপি পাবে তার গ্যারান্টি আছে কি। বরং ভাগাভাগিতে বিজেপিতে চলে যাওয়া ভোট যদি বামে ফেরে তবে ফায়দা তাদের কিন্তু সেটাও অতি সরলিকরণ হয়ে যাবে। অতএব আসন্ন ভোটে অনেক অঙ্ক।
আভাস ছিল পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে মে-র কোনও এক সময়ে, সম্ভবত মাসের শেষে। সেই ভাবেই বিরোধী দলগুলির হয়তো ভাবনা ছিল, কিংবা হয়তো ভাবনা ছিলই না। শোনা গিয়েছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো বা সেই ঘোষণাটি করতে পারেন ২৮ এপ্রিল। কিন্তু রবিবার ৭ মে অবধি কোনও ঘোষণা রাজ্য নির্বাচন কমিশন বা রাজ্য প্রশাসন কিছু জানাননি। ভোট ঘোষণার ২১ দিনের মাথায় ভোটের দিনক্ষণ ধার্য হয়ে থাকে। বিগত মমতা সরকার কিন্তু দু'বার মে মাসেই ভোটের ব্যবস্থা করেছিলেন। এবারের ভোট কিছুতেই যে মে তে হচ্ছে না তা পরিষ্কার। কারণ প্রস্তুতির একটি বিষয় রয়েছে নিশ্চিত। দুটি বিষয় নিয়ে খটকা রয়েছে।
প্রথমত, শনিবার পঞ্চায়েতমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এখনই ভোট সম্ভবত হচ্ছে না। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন যে, এখনও রাজ্য নির্বাচন কর্তার সঙ্গে ভোট নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। কাজেই ধরে নেওয়া হতেই পারে অবিলম্বে ভোট হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু'মাসের জেলা সফরে বের হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বাংলার উত্তর ভাগের সফর শেষ করে মধ্য বাংলায় পৌঁছিয়েছেন। এরপর সমগ্র দক্ষিণ বাংলা তো রয়েছে। অভিষেক জানিয়েছিলেন, এই সফর তাঁর দু'মাসের। কাজেই কোনও ভাবেই মে-র শেষ বা জুন অবধি প্রচার চলবে। এটা তো বাস্তব, অভিষেক কোনও একটি পরিকল্পনা নিয়েই প্রচারে বার হয়েছেন। তাঁর গলার অবস্থা খুব ভালো নয়। অনেকেই বলেছিলেন অভিষেকের উচিত কলকাতায় ফিরে কোনও ভালো চিকিৎসককে দেখানো। তাঁর কিন্তু এ বিষয় কোনও সারা মেলে নি। সুতরাং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান অভিষেকের সফরের শেষে হয়তো বা ভোটের দিন ঘোষণা হতে পারে।
এখন কথা হচ্ছে জুনের শেষে বা জুলাইয়ে বাংলায় বৃষ্টি শুরু হয়। কাজেই এমন অনুমানও করা হচ্ছে যে, বৃষ্টির মরশুম শেষ হলে ভোট হতে পারে। তাই যদি হয় তবে কোনও ভাবেই অক্টবরের মধ্যে কি ভোট হবে? তখন তো পুজোর মরশুম চলবে। তাহলে কি নভেম্বরে? জানা যাচ্ছে না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে খুলল ডুয়ার্সের কোহিনূর চা বাগান (Teagarden)। প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ ছিল এই চা বাগান। শাসকদলের তৎপরতায়, একগুচ্ছ প্রশ্ন রেখেই পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat vote) আগেই তড়িঘড়ি খুলে দেওয়া হল ইস্টার্ন ডুয়ার্সের কোহিনূর চা বাগান। আর এই পদ্ধতিতে বাগান খুলে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কারণ আগের মালিকের লিজ (Lease) বাতিল না করেই খুলে দেওয়া হল কোহিনূর চা বাগান।
শ্রমিক সূ্ত্রে খবর, চা বাগান খুলে যাওয়াতে একদিকে যেমন সুবিধা হয়েছে। অপরদিকে, শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের প্রাপ্য পিএফ, গ্র্যাচুইটির কোনও সমাধান না করেই তড়িঘড়ি পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে কোহিনূর চা বাগান খুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও-এর দাবি, পঞ্চায়েত ভোট মিটে গেলে ফের বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে এই বাগানের।
উল্লেখ্য, শুক্রবার মেরিকো এগ্রো ইন্ডাস্ট্রির হাত ধরে খুলে দেওয়া হয়েছে কোহিনূর চা বাগান। বাগান খোলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বুলু চিক বড়াইক, জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রকাশ চিক বড়াইক সহ একঝাঁক তৃণমূল নেতা।