
অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হল রিঙ্কু সিং-এর (Rinku Singh) ! প্রত্যেক ভারতীয় ক্রিকেটারের যে স্বপ্ন থাকে, টিম ইন্ডিয়ার সেই নীল জার্সি এবার গায়ে উঠল রিঙ্কু সিং-এর। চলতি বছরের আইপিএলে (IPL) কলকাতা নাইট রাইডার্সের (Kolkata Knight Riders) হয়ে দুর্ধর্ষ ফর্মে ছিলেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ ক্রিকেটার। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর নাম।
উল্লেখ্য, আয়ারল্যান্ডের মাঠে শুক্রবার ক্যাপ্টেন বুমরার ভারত। কলকাতা কিন্তু তাকিয়ে একজনের দিকে। তিনি রিঙ্কু সিং। এশিয়ান গেমসের আগে এই সিরিজেই তাঁর গায়ে উঠতে পারে ভারতের জার্সি। বুমরার যুবদলে অন্যতম ভরসার নাম উত্তরপ্রদেশের এই বাঁ-হাতি।
আয়ারল্যান্ড যাওয়ার পথেই মুখোমুখি হয়েছিল দুই নবাগত রিঙ্কু এবং উইকেট-কিপার ব্যাটার জিতেশ শর্মা। টুইটারে সেই ভিডিও শেয়ার করেছে বিসিসিআই। তাতে রিঙ্কু জানিয়েছেন, ভারতীয় দলের ডাক পাওয়ার খবর শুনে তিনি বেশ অবাক হয়েছিলেন।
এই প্রাপ্তির কোনও ভাগ হবে না। আয়ারল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর জানালেন নাইট ক্রিকেটার রিঙ্কু সিং। এশিয়ান গেমসের পর আয়ারল্যান্ড সফর, ভারতীয় জার্সিতে দেখা যেতে পারে উত্তরপ্রদেশের এই ক্রিকেটারকে।
সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে নিজের ব্যাটিংয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন রিঙ্কু। গুজরাতের বিরুদ্ধে তাঁর ম্যাচ জেতানো এক ওভারে ২৯ রান, এখন টাটকা নাইট সমর্থকরদের মনে। রিঙ্কুর ব্যাটিং আলাদা করে মুগ্ধ করেছিল দল মালিক শাহরুখ খানকেও।
সোমবার আয়ারল্যান্ড সফরের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণা করা হয়েছে। নেতৃত্বে জসপ্রীত বুমরা। সেই দলেই জায়গা পেয়েছেন রিঙ্কু সিং। আলিগড়ের এই ক্রিকেটার জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে সব স্বপ্ন সফল হচ্ছে।
পরপর পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়ে কেকেআরকে (KKR) জেতানো হোক বা বিদায় জেনেও চোয়াল চাপা লড়াই, ২৫ বছরের রিঙ্কু সিং (Rinku Singh) ফের হৃদয় জিতলেন। ঘরের মাঠে শনিবার প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন নাইটদের। রিঙ্কুর হার না মানা লড়াই বলছিল, এই ম্যাচটা জেতা উচিত কলকাতার। কিন্তু ভাগ্য সহায় হল না। গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের পুনরাবৃত্তি হল না। শেষ ম্যাচটা রাঙাতে না পারলেও মন জয় করে নিলেন রিঙ্কু। ২০২৩ আইপিএল থেকে ফের শূন্য হাতে ফিরল কেকেআর। তবে চলতি মরসুমে দলটির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আলিগড়ের রিঙ্কু। আইপিএলের বিপক্ষের টিমগুলিও তা এককথায় মেনে নিচ্ছে। কেকেআরের বিদায় ও লখনউয়ের জয় সত্ত্বেও সবার মুখে রিঙ্কুর নাম।
ম্যাচের ১৯ ওভারে লখনউয়ের পেসার নবীন উল হককে কার্যত মাটি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনটি চার ও একটি ছয়। শেষ ২ বলে ১২ রানের প্রয়োজন ছিল। রিঙ্কু থাকলে সবই সম্ভব, ধরে নিয়ে গোটা ইডেনের গ্যালারি রিঙ্কুর নামে ধ্বনি দিল। বিপক্ষের স্নায়ুর চাপ কয়েকগুণ বাড়িয়ে শেষমেশ হার মানলেন। কী মনে হচ্ছিল তখন? ম্যাচের পর রিঙ্কু বলেন, 'পাঁচ ছক্কার ম্যাচটার কথা মনে পড়ছিল। আমি একেবারে রিল্যাক্স মুডে ছিলাম। যা হবে দেখা যাবে। শেষ ওভারে ২১ রান প্রয়োজন ছিল। ১টা বলে চার হয়।' তিনি আরও বলেন,' শেষ ইনিংসটার (গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে) পর লোকে আমাকে চিনতে শুরু করেছে। পাঁচটি ছয় হাঁকানোর পর প্রচুর সম্মান পেয়েছি। আজও তেমনটা হলে খুব ভালো হত।' ৩৩ বলে ৬৭ রান। নিজের ইনিংসে খুশি। তবে ম্যাচ না জেতায় বেশি আনন্দের বহিঃপ্রকাশ চাইছেন না রিঙ্কু।
ম্যাচ শেষে দেখা যায়, রিঙ্কুর ব্যাট নিয়ে টানাটানি করছেন লখনউ সুপার জায়ান্টসের ওপেনার করণ শর্মা। তিনিও উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটার। তাঁর নেতৃত্বে খেলেন রিঙ্কু। ব্যাট নিয়ে টানাটানি করায় রেগে যাচ্ছিলেন রিঙ্কু। কী ঘটেছিল তখন? রিঙ্কু বললেন, 'ও আমার কাছে ব্যাট চাইছিল। আমি বললাম, এই ব্যাট দিয়েই তো আমি রান করেছি। আমার লাকি ব্যাটও বলতে পারেন।
সেই রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। সেই শেষ বল। আবার দেখা গেল রিঙ্কুর দাপট। মাঠ বদলে গেলেও বদলাল না তাঁর খেলা। এখন কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) যাঁকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করে সেই রিঙ্কুই আর একবার জেতালেন দলকে। তার আগে অবশ্য ইডেনে উঠল আন্দ্রে রাসেল ঝড়। তিনিই দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গেলেন। বাকি কাজ করলেন রিঙ্কু।
এ বারের আইপিএলে ইডেন দেখেছে ব্যাটারদের দাপট। প্রায় সব ম্যাচেই প্রথমে ব্যাট করা দল ২০০ রানের বেশি করেছে। কিন্তু পঞ্জাবের বিরুদ্ধে পিচের চরিত্রে কিছুটা বদল ছিল। উইকেট একটু মন্থর থাকায় গতির হেরফের করলে সুবিধা পাচ্ছিলেন বোলাররা। টসে হেরে প্রথমে বল করতে গিয়ে সেটাই করেন কেকেআরের পেসাররা। তার ফলে শুরুটা ভাল করতে পারেনি পঞ্জাব। কেকেআরের পেসার হর্ষিত রানা পাওয়ার প্লে-তেই প্রভসিমরন সিংহ ও ভানুকা রাজাপক্ষকে আউট করেন।
ছন্দে ছিলেন শিখর ধাওয়ান। তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন লিয়াম লিভিংস্টোন। কিন্তু পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে তাঁকে আউট করে পঞ্জাবকে বড় ধাক্কা দেন বরুণ চক্রবর্তী। জীতেশ শর্মা শুরুটা ভাল করলেও বড় রান করতে পারেননি। ২১ রান করে বরুণেরই শিকার হন তিনি।
আগের ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে বল করে দলকে জিতিয়েছিলেন বরুণ। ইডেনেও ছন্দে দেখা গেল তাঁকে। ৩ উইকেট নিলেন তিনি। এক দিকে উইকেট পড়লেও অন্য দিকে ছিলেন ধাওয়ান। এ বারের মরসুমে আরও একটি অর্ধশতরান করেন তিনি। পঞ্জাবের ইনিংসকে বড় রানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। কিন্তু কেকেআর অধিনায়ক নীতীশ বল হাতে ৫৭ রানের মাথায় আউট করেন ধাওয়ানকে।
অধিনায়ক আউট হওয়ার পরে রানের গতি কমে গিয়েছিল পঞ্জাবের। দেখে মনে হচ্ছিল, ১৬০ রানের বেশি করতে পারবে না তারা। কিন্তু শেষ দুই ওভারে আবার বদলাল খেলার ছবি। শাহরুখ খান ও হরপ্রীত ব্রার শেষ ১২ বলে ৩৬ রান করলেন। ফলে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান করে পঞ্জাব।
এই উইকেটে ১৮০ রান তাড়া করা যে খুব সহজ নয় তা কলকাতার ইনিংসের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। পঞ্জাবের পেসাররাও গতির হেরফের করছিলেন। ফলে শট খেলা সমস্যা হচ্ছিল। কেকেআরকে প্রথম ধাক্কা দিলেন নেথান এলিস। তাঁর বলের গতি বুঝতে না পেরে ১৫ রানের মাথায় এলবিডব্লিউ হলেন রহমানুল্লা গুরবাজ়। কলকাতার অন্য ওপেনার জেসন রয় ভাল খেলছিলেন। রানের গতি বাড়ান তিনি। কিন্তু স্পিনারকে বলে আনতেই আউট জেসন। হরপ্রীতের বলে সুইপ মারতে গিয়ে ৩৮ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন ইংল্যান্ডের ব্যাটার।
জেসন আউট হওয়ার পরে কলকাতার রানের গতি কিছুটা কমে যায়। অধিনায়ক নীতীশ ও বেঙ্কটেশ চেষ্টা করলেও হাত খুলে খেলতে পারছিলেন না। চাপ বাড়ছিল কেকেআরের উপর। শেষ ১০ ওভারে জিততে দরকার ছিল ১০৪ রান। অর্থাৎ, প্রতি ওভারে ১০ রানের বেশি করতে হত কলকাতাকে।
ঠিক তখনই হাত খোলা শুরু করলেন নীতীশ। লিভিংস্টোনের এক ওভারে ১৬ রান নিলেন তিনি। সেখান থেকে খেলা আবার কেকেআরের দিকে ঘুরতে শুরু করে। পঞ্জাবের স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভাল খেললেন কেকেআর অধিনায়ক। কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দিতে পারলেন না বেঙ্কটেশ। রাহুল চাহারের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ১১ রানের মাথায় আউট হলেন তিনি।
শেষ ৩০ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৫৮ রান। ক্রিজে নীতীশের সঙ্গে ছিলেন আন্দ্রে রাসেল। একটি বড় ওভার প্রয়োজন ছিল কেকেআরের। তার মাঝেই ৩৭ বলে অর্ধশতরান করেন নীতীশ। কিন্তু তার পরেই চাহারকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ৫১ রানের মাথায় আউট হয়ে ফেরেন কেকেআর অধিনায়ক।
কেকেআরকে জয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল রাসেল ও রিঙ্কুর কাঁধে। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৬ রান। তখনই হাত খোলা শুরু করলেন রাসেল। তাঁকে সঙ্গ দিলেন রিঙ্কু। পরের দু’ওভারে উঠল ৩০ রান। শেষ ওভারে ৬ রান দরকার ছিল। আরশদীপ সিংহের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সমস্যা হচ্ছিল। পঞ্চম বলে রাসেল ৪২ রান করে রান আউট হয়ে যান। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। আরশদীপের বল ফাইন লেগ অঞ্চলে চার মারেন রিঙ্কু। আরও এক বার দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন এই বাঁ হাতি ক্রিকেটার। ১০ বলে ২১ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি।
দিনটা ছিল ২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল। সেদিন মাঠে ছক্কার ঝড় তুলেছিলেন কেকেআর-এর রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। চলতি মরসুমের আইপিএলে (IPL) অন্যতম হাইলাইটস ছিল কেকেআর-এর গুজরাত টাইটান্স বধ। সেদিন মাঠে রিঙ্কু ঝড়েই উড়ে গিয়েছিল গুজরাত টাইটান্স। ম্যাচের শেষের দিকে পরপর পাঁচটি ছয় করেই রাতারাতি স্টার হয়ে গিয়েছেন রিঙ্কু সিং। কিং খানের চোখের মণি হয়ে উঠেছেন রিঙ্কু। এবারে জানা গিয়েছে, শাহরুখ (Shah Rukh Khan) নাকি রিঙ্কুকে বলেছেন, তিনি তাঁর বিয়েতে নাচ করবেন। আর এই কথা প্রকাশ্যে আসতেই হইহই পড়ে গিয়েছে বলি ও ক্রিকেট মহলে।
রিঙ্কুর সেদিনের দুর্দান্ত পারফরমেন্স সামনে থেকে দেখতে পারেননি কেকেআর-এর কর্ণধার শাহরুখ খান। ফলে সেদিনই তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন এসআরকে। তবে তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল তা জানা যায়নি। সম্প্রতি সেই ব্যাপারে মুখ খুলেছেন ক্রিকেটার রিঙ্কু সিং। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জিও সিনেমায় বলেন, 'স্যার আমায় ফোন করেছিলেন। তিনি আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। এসআরকে বলেছেন, তাঁকে অনেকেই তাঁদের বিয়েতে ডাকেন। কিন্তু তিনি যান না। তবে তিনি আমার বিয়েতে আসবেন ও নাচবেন।' এই কথা রিঙ্কু সাক্ষাৎকারে একগাল লজ্জা ও হাসির সঙ্গে জানিয়েছেন। এরপরেই এই ভিডিও সমাজ মাধ্যমে শেয়ার হতেই ঝড়ের গতিতে ভাইরাল।
শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলেও অসফল রিঙ্কু (Rinku Singh) ও কেকেআর (KKR)। ঘরের মাঠে হায়দরাবাদের (SRH) কাছে ২৩ রানে হার কলকাতার। শুক্রবার টসে জিতে প্রথম বল করার সিদ্ধান্ত নেয় কেকেআর। ব্যাটে নেমে ২২৯ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্যমাত্রা সেট করে হায়দরাবাদ, ব্যাটে নেমে একদম ভালো করতে পারেনি কেকেআর। শেষ অবধি ম্যাচের হাল ধরে অধিনায়ক নীতিশ রানা ও রিঙ্কু সিং। শেষে রানা আউট হয়ে যাওয়ার পর একাই লড়ে যায় রিঙ্কু। কিন্তু পাহাড় সমান রানের লক্ষ্যমাত্রা একসময় অসম্ভব হয়ে যায়। শেষে ২৩ রানে হারতে হয় কলকাতাকে। রিঙ্কু ৩১ বলে ৫৮ রান করে নট আউট ছিল।
শুক্রবার ঘরের মাঠে টসে জিতে হায়দরাবাদকে ব্যাট করতে পাঠায় কলকাতা। ব্যাটে নেমে হ্যারি ব্রুক জ্বলে ওঠে। রান আসে অভিষেক শর্মা ও মার্ক্রমের ব্যাটেও। ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান করে হায়দরাবাদ। ওই ইনিংসে ব্রুক ৫৫ বলে ১০০ রান করে। যা আইপিএলের প্রথম শত রান। মার্ক্রমের ব্যাটে ২৬ বলে ৫০ রান আসে। শর্মা করে ১৭ বলে ৩২ রান। ২২৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে জগদীশন ছাড়া রান পায়নি টপ অর্ডার কেউই। উল্লেখযোগ্য রানা ৪১ বলে ৭৫ রান করে, ও জগদীশন ২১ বলে ৩৬ রান করে। শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস।
প্রথমে বল করতে নেমেও ব্যর্থ কেকেআর, একমাত্র রাসেল ৩টি উইকেট পায় ও বরুন পায় একটি উইকেট। এ ছাড়া ফার্গুসন ২ ওভারে ৩৭ রান দেয়। উমেশ দেয় ৩ ওভারে ৪২ রান। ওদিকে ওদিকে বলে সফল হায়দরাবাদ। ১টি করে উইকেট পায় ভুবনেশ্বর, নটরাজন, ও উমরান। ২ টি করে উইকেট পায় জসেন ও মার্কণ্ডে। শনিবারের ম্যাচে অন্তত এটা স্পষ্ট যে রিঙ্কু সিং একদিনের জন্য আসেনি। রিঙ্কু যে লম্বা রেসের ঘোড়া সেটা ও বুঝিয়ে দিয়েছে।
মণি ভট্টাচার্য: 'একদিন হবে না, কিন্তু একদিন হবেই' ড্রেসিং রুমে বসে সতীর্থদের সেদিনের কথা শোনাচ্ছিলেন রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। ২০২২ সালে একটুর জন্য ম্যাচটা (IPL) জেতাতে সফল হননি তিনি। ড্রেসিংরুমে ফিরে এসে সতীর্থদের বলেছিলেন, 'একদিন হবে না, কিন্তু একদিন হবেই।' সাতবছর পর সুযোগ পেয়ে শেষ ওভারে ৫টা ছক্কা মেরে, হারতে বসা ম্যাচ কেকেআরকে (KKR) জিতিয়েছেন রিঙ্কু সিং। হয়েছেন সেই রাতের নায়ক। শুক্রবার ঘরের মাঠে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে নামবেন তিনি। রিঙ্কুর ঘনিষ্ঠ মাধ্যম সূত্রে খবর, রিঙ্কু তাঁর ঘনিষ্ঠ মাধ্যমে বলেছে, এই সবে নায়ক হওয়া শুরু। আরও নায়ক হওয়া বাকি।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাতের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে ওই ওভারটি। শেষ ৫ বলে ২৮ রানের জবাবে ৫ টাই ছক্কা মারে রিঙ্কু। ম্যাচ জিতে মনে করেন বাবা ও পরিবারকে। ম্যাচ জিতে রিঙ্কু এই জয় তার বাবাকে উৎসর্গ করেছিল। তাঁর বাবা পেশায় একজন ছোট্ট ব্যবসায়ী। আর্থিক অনটনে ঝাড়ুদার হতে হয়েছিল আজকের নায়ক রিঙ্কুকে। একেই হয়ত প্রত্যাবর্তন বলে। ঝাড়ুদার থেকে কেকেআর নায়ক রিঙ্কু হওয়ার লড়াইটা খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু ও থেমে যায়নি।
২০২২ সালে লখনউয়ের বিরুদ্ধে রান তাড়া করতে নেমে ১৫ বলে ৪০ রান করে ঘরে ফিরতে হয়, একটুর জন্য হাতছাড়া হয় ম্যাচ। রিঙ্কুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ওই রাতে ড্রেসিং রুমে ফিরে সতীর্থদের বলেছিলেন, 'একদিন নয়, কিন্তু একদিন হবেই।' আজ অর্থাৎ শুক্রবার ঘরের মাঠে নামবে কলকাতা। ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে ওই খেলার সমস্ত টিকিট। ৬৮ হাজারের ইডেন যে শুধু কেকেআর-কে নয়, বরং রিঙ্কু সিং নামক জ্বলজ্বলে নায়ককেও দেখতে আসবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটাই তো চেয়েছিল রিঙ্কু। চেয়েছিল রিঙ্কুর পরিবার। গোটা কলকাতা, ব্যতিরেকে গোটা খেলার মাঠ রিঙ্কুর জন্য চেঁচিয়ে উঠবে, এর থেকে বেশি রিঙ্কু কীই বা চেয়েছিল!
প্রসূন গুপ্ত: ক্রিকেট মানেই বড়লোকদের খেলা এমনই এক প্রবাদ ছিল একসময়। হবে নাই বা কেন, সাহেবসুবোরা খেলতো মাঠে আর এ দেশে বল কুড়তো হতচ্ছারা নেটিভরা। রঞ্জিত সিংজি তো ব্রিটিশ ছিলেন। অবশ্য তারপরে ভারতীয়রা ক্রিকেটের হাল ধরলেন। কিন্তু এখানেও মজা, খেলতেন রাজারাজরারা কিংবা এদেশের বিত্তশালীরা। ৬০-এর দশকে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো তৎকালীন বম্বের এক মালির ছেলে। মিডিয়া দুনিয়া তাঁর খেলার থেকে বেশি প্রচার দিল তাঁর দারিদ্রকে' কিন্তু সেই খেলোয়ার অপরিহার্য হয়ে উঠলেন টাইগার পতৌদির দলে। নাম একনাথ ঢুন্ডুরাম সোলকার। তখন থেকে শুরু গরীবরাও ক্রিকেট খেলে।
ভারতের সর্বকালের অন্যতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও তো নিম্নবিত্ত পরিবারের। আসলে দরিদ্র যারা রয়েছে, চ্যালেঞ্জ তারাই তো নেয়। রিঙ্কু সিংও তাই। অজানা অখ্যাত এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে। ক্রিকেটের বিলাসিতা যাদের মানায় না, এমনই এক পরিবার। বাবা এলপিজি গ্যাস লোকের বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসেন। মাইনে আর বকশিসে যা রোজগার হয় আর কী। ছেলে ক্রিকেট খেলতো বটে তবে বিশাল উত্তর প্রদেশে একপ্রান্তে পড়ে থাকা এক খুদে মাত্র। বাবার কোনও এক গ্রাহককে ধরে শক্ত বলের মাঠে পাঠানো গেল ছেলেকে। খেলো নতুবা ঝাড়পোছের চাকরি নাও। এরপর প্রথমে ক্লাব তারপর রাজ্য দলে সুযোগ।
ওই থেকে কিছু রোজগার বাড়লেও বাড়ির টিনের চালকে ঢালাইয়ে নিয়ে যেতে পারেনি সিং পরিবার। শেষে আইপিএল-এ সুযোগ। আইপিএল আর যাই হোক খেলোয়ারদের টাকার মুখ দেখিয়েছে। খেলতে পারলে সুযোগ নইলে গেট-আউট| আগের বছরগুলিতে দুর্দান্ত ছিল এমন নয়, কিন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিঙ্কু। এবারে এল ঐতিহাসিক ৯ এপ্রিল। গতবারে চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটন্সের সঙ্গে ম্যাচ তাও রবিবারের দুপুরে।
প্রথমে ব্যাট করে গুজরাতের সংগ্রহ ২০৪। যথেষ্ট চাপের রান, কলকাতা নাইট রাইডার্স।কিন্ত দু'উইকেট হারিয়ে মন্দ খেলছিল না। বিশেষ করে ভেঙ্কটেশ ও নীতীশ রানা। কিন্তু পরপর উইকেট হারায় তারা। শেষ ওভার, দরকার ২৯ রান, যা বিশ্বে কেউ করেনি। এক রান নিয়ে যাদব খেলতে দেয় রিঙ্কুকে। এরপরেই স্বপ্ন দেখলো ক্রিকেট প্রেমীরা। ৬ ৬ ৬ ৬ ৬। এ-ও হয়।
শুভশ্রী মুহুরী : রবিবার আইপিএলে (IPL 2023) ঝড় তুলল কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। রিঙ্কু সিংয়ের (Rinku Singh) শেষ মার, বাজিমাত করে গুজরাট টাইটান্সদের বিরুদ্ধে। ম্যাচের শেষ ওভারে পরপর পাঁচটি ছক্কায় নজির তৈরী করেন রিঙ্কু। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন তিনি। নেট মাধ্যমে শোরগোল পড়ে যায় তাঁকে নিয়ে। এক ম্যাচেই যেন ক্রিকেটার থেকে তারকা হয়ে উঠলেন রিঙ্কু। তাঁর এই অবিশ্বাস্য জয়ে, নিজের আনন্দ ধরে রাখতে পারেননি কেকেআরের অন্যতম মালিক শাহরুখ খান (Shahrukh Khan)।
অভিনেতা নিজের ট্যুইটার একাউন্ট থেকে রিঙ্কুকে শুভেচ্ছা জানান। রিঙ্কুর একটি এডিটেড ছবি দিয়ে শাহরুখ 'পাঠান' সিনেমার 'ঝুমে জো পাঠান' গানটি থেকে শব্দ ধার করে লেখেন, 'ঝুমে জো রিঙ্কু'। এখানেই শেষ করেননি শাহরুখ। তিনি আরও লেখেন, আমার সন্তান রিঙ্কু সিং, নীতিশ রানা এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার, তোমরা সুন্দর।' একইসঙ্গে শুভেচ্ছা জানান তাঁর দলকেও।
এইবার শাহরুখের মতোই রিঙ্কু সিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন অভিনেতা কার্তিক আরিয়ান। ইনস্টাগ্রামের স্টোরি থেকে একটি ছবি আপলোড করেন অভিনেতা। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, জয়ের আনন্দে নীতিশ রানার কোলে রিঙ্কু সিং। কার্তিক এই ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, 'পরবর্তী ধাপ, অবিশ্বাস্য। '
হেরে গিয়েও, হারের থেকে জয় ছিনিয়ে আনলো কেকেআরের (KKR) রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। ৫ বলে দরকার ২৮ রান, গুজরাতের (GT) বোলার দয়ালকে শেষ ৫ বলে ৫টাই ছক্কা মারলেন রিঙ্কু। গুজরাতের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনলেন হেরে যাওয়া ম্যাচ। এখন কলকতার কাছে, রিঙ্কু সিং যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সেটা বলাই বাহুল্য। ২১ বলে ৪৮ রান করে এই ম্যাচকে জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ করে রাখলেন এই খেলোয়াড়। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত। ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ২০৪ রান তোলে তারা। জবাবে কলকাতা শুরু ভালো করলেও রশিদের বোলিংয়ের সামনে পরে মুহূর্তে ভেঙে পড়ে তাদের মিডল অর্ডার। শেষে এমন মনে হয়েছিল রশিদ খান ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু টানটান উত্তেজনার এই ম্যাচে লাস্ট ওভারে ৫টা ৬ মেরে ম্যাচ বার করে নেয় রিঙ্কু সিং।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় রশিদ, হার্দিক বিহীন এই ম্যাচে শুভমন গিল ও সুদর্শনের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। পরে বিজয় শঙ্কর ২৪ বলে ৬৩ রান করে, ২০০ এর উপরে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। গিল করেন ৩১ বলে ৩৯ রান, সুদর্শন করেন ৩৮ বলে ৫৩ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খুব ভালো করতে পারেনি কলকাতা, কিন্তু ম্যাচের হাল খুব সহজেই ধরে নেয় ভেঙ্কটেশ আইয়ার। ভেঙ্কটেশের দুর্দান্ত ৪০ বলে ৮৩ রানের ইনিংস কেকেআর-কে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে, ভেঙ্কটেশকে সঙ্গ দেয় অধিনায়ক নীতিশ রানা। রানা রবিবার ২৯ বলে ৪৫ রান করে। ১৬তম ওভারে রশিদ যখন বলে এলো। তখন ২৪ বলে ৫০ রান দরকার কেকেআরের।
ক্রিজে তখন রাসেল এবং রিঙ্কু সিং। স্ট্রাইকে তখন রাসেল, রশিদের প্রথম বলে খোঁচা লেগে উইকেট রক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে ঘরে ফেরেন রাসেল। পরের বলে ক্যাচ দিয়ে ঘরে ফেরেন নারাইন, ব্যাট করতে আসে শার্দুল ঠাকুর। শার্দুলকেও লেগ বিফোর হয়ে ঘরে ফিরতে হয় রশিদের ওভারে। অর্থাৎ রশিদের হ্যাট্রিক হলেও শেষরক্ষা হলো না। তখন মুহূর্তের জন্য খেলার মোড় ঘুরে গেলেও, শেষ ওভারে রিঙ্কুর ঝড়ে কুপোকাত গুজরাত।
টসে হেরে প্রথমে বোলিংয়ে যায় কেকেআর। উল্লেখযোগ্য, ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেয় নারাইন, একটি উইকেট নেয় শর্মা। পাশাপাশি গুজরাতের পক্ষে ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেয় রশিদ খান। ২ উইকেট নেয় জোসেফ এবং একটি করে উইকেট নেয় শামি ও লিটল।