
দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat polls)। তার মধ্যেই জারি রয়েছে কুড়মিদের আন্দোলন। এরই মধ্যে পদত্যাগ। একই বুথে তৃণমূল (TMC) যুব সভাপতি অমল মাহাতো ও বুথ সভাপতির সুব্রত মাহাতো পদত্যাগ করলেন। পদত্যাগী এই দুই নেতার বক্তব্য রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য কিছুই করছে না তাই তাঁরা তৃণমূলের পদ থেকে পদত্যাগ করছেন। সোমবারও ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল লাগোয়া এলাকা থেকে তৃণমূল ও বিজেপি ছেড়ে কুড়মিতে যোগদান করেন তিন নেতা। এরপর মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে অপর দুই নেতার পদত্যাগে বাড়ছে জল্পনা।
উল্লেখ্য, কুড়মিদের যে দাবি দাওয়া রয়েছে। সেই দাবি-দাওয়াকে সামনে রেখে সম্প্রতিক খেমাসুলিতে একটি বৈঠক হয় ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বদের নিয়ে। কুড়মি সমাজের নেতৃত্বরা মনে করছেন এই যে দুই রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁরা সমাজের কাছে একটা বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এই বিষয়ে তৃণমূল যুব সভাপতি অমল মাহাতো বলেন, “আমাদের আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলন সফল হলে তবেই আমরা ভোটে দাঁড়াতে পারব। সরকার কথা শুনছে না। তাই খেমাসুলিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে ভোটের কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা চলবে না। সরকার আমাদের জন্য কিছু করে না। ১৯৮২ সাল থেকে এই আন্দোলন চলছে।” উল্লেখ্য, জামবনি ব্লকের টুলিবড় এলাকা থেকে নির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেসের কৃপা সিন্ধু মাহাতো এবং জাম্বনি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য ভবতারণ মাহাতো, উপপ্রধান তথা পঞ্চায়েত সদস্য যুথিকা মাহাতো দল ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কুড়মি সংগঠনের ঝাণ্ডা কাঁধে তুলে নেন এবং কুড়মি সংগঠনে যোগদান করেন।
প্রসূন গুপ্ত: পৌর ভোটের মতোই পঞ্চায়েত ভোট রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে। কাজেই তিনি ভোটের দিন ঘোষণা করবেন। অবশ্য এ বিষয়ে অলিখিত আলোচনা থাকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। যতটুকু তৃণমূলের অন্দরের খবর তাতে হয়তো মে-র শেষে অথবা জুনের প্রথম দশ দিনের মধ্যে ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হতে পারে। এই পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ইতিমধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু খুব একটা সুবিধা হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, বিরোধী দল মনে করে যে ২০১৮-র মতো যদি ভোট হয় তবে তা প্রহসনে পরিণত হবে। সমবায় ভোটের মতো বিরোধীদের এককাট্টা করে ভোট যুদ্ধে নামার একটা চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখানেও সুবিধা খুব একটা নেই।
সম্প্রতি বিধাননগরের পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী পরিষ্কার বার্তা দিয়েছিলেন, বিজেপি একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে পঞ্চায়েত ভোটে। যদি 'বিশেষ' কেউ তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে চান তবে তাঁকে পদ্ম চিহ্নেই লড়তে হবে। বিজেপি কাউকে সরাসরি অথবা পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করবে না। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতা-সহ রাজ্য বিজেপির সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। দেবশ্রীর পরিষ্কার বার্তা, যে বিধানসভার বিরোধী নেতাকে দিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন, মমতা আন্দোলন করে, সংগঠন করে ক্ষমতায় এসেছেন। কাজেই রাজ্য বিজেপির নেতারা যেন সংগঠনের দিকে জোর দেন। তিনি জানিয়েছেন এজেন্সি লাগিয়ে একটি দলকে চাপ দেওয়ার বিষয়কে তিনি সমর্থন করেন না। এখন তিনি শেষবার এসে সরাসরি কথা বলেন সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সঙ্গে। কিন্তু সামনে নির্বাচন এখনও বিজেপির প্রস্তুতির চিত্র পরিষ্কার নয়। ফের অমিত এ রাজ্যে আসছেন ৯ মে, তা অবশ্য কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষে। কাজেই ৯ মে নতুন কিছু বার্তা দেন কিনা সেটাই দেখার। তবে আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হবে বলেই খবর।
কোচবিহারের সিতাই গোঁসানিমারি হাইস্কুল মাঠে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় দলীয় নেতৃত্বকে সাবধান করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ব্যালট পেপার ছেঁড়া এবং মারামারির ঘটনা নিয়ে অভিষেকের প্রতিক্রিয়া, 'তিনি ভাল করেই জানেন কোথায় কোথায় গণ্ডগোল হতে পারে। যদি কেউ ভাবেন, গায়ের জোরে, ব্যালট বাক্স ভেঙে নিজেদের নাম ঢুকিয়ে প্রার্থী হবেন, তাহলে তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ, পাহারাদারের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি এই কারণেই তৃণমূলের নবজোয়ার শুরু করেছি।’
মঙ্গলবার সাহেবগঞ্জের সভা শেষে সিতাই গোঁসানিমারি হাইস্কুলের মাঠে সভা করতে যান অভিষেক। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পরে তিনি মঞ্চে উপস্থিত হন। তাঁর মিনিট কুড়ির ভাষণের শেষাংশে অভিষেক জানান, 'মঞ্চে ব্যালট বাক্স রেখে যাচ্ছেন। উপস্থিত তৃণমূল নেতা, কর্মী এবং সমর্থকেরা যেন নিজেদের প্রার্থী বাছাই শুরু করেন এবং মতামত জানান।' কিন্তু তিনি সভাস্থল ছেড়ে পরের সভাস্থল শীতলকুচির উদ্দেশে রওনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট দেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়। একসঙ্গে সবাই ভোট দিতে উঠে যান মঞ্চে। একপক্ষ ব্যালট বাক্স নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করে। অন্য পক্ষ ভোট না দিতে পারার আশঙ্কায় ব্যালট কাগজ ছিঁড়তে শুরু করে। শুরু হয় মারামারি-ধাক্কাধাক্কি। পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ঠেলেঠুলে তৃণমূল কর্মী এবং সমর্থকদের মঞ্চ থেকে নীচে নামায়।
কিন্তু পুলিসের সামনে হাতাহাতি শুরু হয় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর। তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে ওই স্থানে আবার ‘নির্বাচন’ হবে। শীতলকুচির সভায় অভিষেক ওই অশান্তির ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিতাইয়ে আমার সভায় একটি ব্যালট বাক্স রাখা ছিল। সেখানে কিছু মানুষ অত্যুৎসাহী হয়ে ভোট দিতে গিয়ে ব্যালট বাক্সটি প্রায় ভেঙে ফেলেছেন।’ তৃণমূল নেতার সংযোজন, ‘এই কারণেই তো তৃণমূলের জনজোয়ার শুরু করেছি। আমি জানি, কোথায় সন্ত্রাস হতে পারে। কোথায় অশান্তি হতে পারে।’
এই ঘটনায় সিতাইয়ের বিধায়ক, জেলা সভাপতিকে নির্দেশ দেন অভিষেক। ওই স্থানে বুধবার ভোট করে রিপোর্ট তাঁকে দিতে হবে বলে জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। জানান, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থী বাছাই অভিযানের ভোট হবে। প্রসঙ্গত, সোমবার থেকে অভিষেকের ৬০ দিনের কর্মসূচি সাজিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে ওই কর্মসূচি শুরু হয়েছে কোচবিহার থেকে। ‘জনসংযোগ যাত্রা’র শুরুতে অভিষেক জানান, 'তিনি ভাল মানুষের খোঁজে পথে নামছেন। সন্ত্রাসবিহীন ভোট করতে হলে চাই ভাল প্রার্থী। মানুষকেই নেতা বেছে নেওয়ার ভার দিচ্ছেন তাঁরা। মানুষের মত জানার পরই পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই করবে তৃণমূল।' এমন একটি কর্মসূচি সারা ভারতে অভিনব বলে দাবি করেন অভিষেক।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Poll) আগে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখার পর্যালোচনা বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বুধবার নবান্নে বৈঠকে বসছেন। নবান্ন সভাঘরে (Nabanna Meet) রাজ্যস্তরের ওই পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের সমস্ত দফতরের শীর্ষ আমলা-পদস্থ কর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এই বৈঠকে জেলা আধিকারিকরাও ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেবেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির হিসেব নেওয়ার পাশাপাশি শতাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনও করবেন।
ওই বৈঠক থেকে তিনি ১,১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পূর্ত দফতরের সেতু, রাস্তা-সহ ১০৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই পরিকাঠামোগুলি গড়ে উঠেছে। আবার, পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের অধীনে নির্মিত কিছু গ্রামীণ রাস্তারও উদ্বোধন হতে পারে এদিন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আগামি কয়েক মাসের মধ্যে রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা। তার আগে গ্রাম বাংলার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে, ঝালিয়ে নিতেই এই পর্যালোচনা বৈঠক বলে সূত্রের খবর।
মঙ্গলবার কোচবিহারের (CoochBehar) দিনহাটা থেকে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেই লক্ষে সোমবার কোচবিহার পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কর্মসূচি শুরুর ঠিক একদিন আগে টুইট করে অভিষেককে অভিনন্দন জানিয়ে উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার টুইট করে তিনি লেখেন, ‘তৃণমূল নব জোয়ার হল একটি প্রথম অভিনব রাজনৈতিক প্রয়াস। এই প্রয়াসের জন্য আমি অভিষেক এবং দলের কর্মীদের জনসংযোগ যাত্রা শুরু করার জন্য আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই। এই যাত্রা রাজ্যজুড়ে হবে।’ সোমবার বিকেলে কোচবিহার পৌঁছে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন অভিষেক। পরদিন থেকে শুরু করবেন জনসংযোগ যাত্রা (Janasangjog Rally)।
এই কর্মসূচিতে আগামী ৬০ দিনের সূচি সাজিয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করে ৬০তম দিনে তা সাগরে এসে শেষ হবে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের এই কর্মসূচর ঘোষণা করেন অভিষেক। পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থী খুঁজতে ২৫০টি জনসভা করবেন তিনি, সঙ্গে হবে ৬০টি অধিবেশন। ৩০ লক্ষ মানুষের সঙ্গে সরাসরি জনসংযোগ করার পাশাপাশি ৩,৫০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করবেন তিনি। এই কর্মসূচিতে তিনি অস্থায়ী ছাউনিতে রাত্রিযাপন করবেন। এই কর্মসূচি সফল করতে রবিবার রাজ্য এবং জেলাস্তরে নির্বাচনী কমিটি গঠন করল তৃণমূল।
রাজ্যস্তরের এবং জেলাস্তরের কমিটির কাজ কী হবে সে বিষয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূলের ২২ জন শীর্ষ নেতা। জেলাভিত্তিক ৮টি জোন তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক জোনের একটি করে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে ৬ থেকে ১০ জন তৃণমূল নেতাকে। এই কমিটিগুলির কাজ হবে গোটা প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। সেই সঙ্গে ভোটার তালিকা তৈরি করা থেকে শুরু করে যাঁরা ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, তাঁরা যাতে সঠিক ভাবে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্রামবাংলার মতামত সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ইনচার্জ এবং কো-ইনচার্জদের বিশেষভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। রাজ্যস্তরের যে নির্বাচনী কমিটি তৈরি করা হয়েছে তার চেয়ারম্যান করা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। কমিটির বাকি সদস্যেরা হলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মানস ভুইয়াঁ, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ ২২ জন নেতা। কলকাতা বাদে রাজ্যের ২২টি জেলাকে ৮টি ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
প্রসূন গুপ্তঃ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নানান জল্পনা রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে। অনেকেই ভেবেছিলেন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে হয়তো হতে পারে। তেমনভাবেই প্রচার শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নভেম্বর থেকে কিন্তু সেই আশায় জল ঢালা হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ইত্যাদি পরীক্ষা সময়ে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হয়েছেও তাই। এরই মধ্যে দলের সভায় মমতা জানিয়েছিলেন যে, দুয়ারে সরকার থেকে লক্ষীর ভাণ্ডার ইত্যাদি প্রকল্পগুলি নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে হবে। কাজের দায়িত্ব নেতা-মন্ত্রী থেকে বিভিন্ন সভাপতিকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্র। সেই মোতাবেক কাজে নেমেছিলেন তৃণমূল নেতারা। এরই মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে।
ত্রিপুরা থেকে সাগরদিঘির উপ-নির্বাচনে অখুশি তৃণমূল সুপ্রিমো। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোট, যা কিনা মমতার নিশ্চিত ছিল, তা কিন্তু বাম/কংগ্রেসের দিকে কিছু সরে গিয়েছে। ফলে দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্পগুলির প্রচার ৩০ এপ্রিল অবধি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাজেই নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেলে অনুমোদনের দিন থেকে ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ভোটের দিন ধার্য করতে পারবে। মনে রাখতে হবে এই ভোট কিন্তু রাজ্য সরকার পরিচালনা করবে অর্থাৎ রাজ্য পুলিস দিয়ে ভোট হবে। ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে বিজেপির বিরোধী নেতা কোর্ট-কাছারি করেছিলেন, কিন্তু আদেশ তাঁর বিরুদ্ধেই যায়।
এবারের প্রশ্ন কবে নাগাদ দিন ঠিক হতে পারে। অন্দরের খবর মে মাসে হচ্ছে না বলেই ধারণা। সেক্ষেত্রে জুন মাসে হতে পারে। কিন্তু জুনে হলে কবে নাগাদ হবে। মনে হয়ে প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে। রাজ্যজুড়ে প্রচন্ড দাবদাহ চলেছে এবং অন্য বছরের তুলনায় বেশি গরম এ বছর পড়তে পারে বলেই শোনা গিয়েছে। অন্যদিকে জুনের ৮ তারিখ থেকে এ রাজ্যে বর্ষা শুরু হয়, এই সময়ে কি ভোট সম্ভব? উঠতে পারে প্রশ্ন। তৃণমূলের অন্দরের বক্তব্য দাবদাহে হিট স্ট্রোক হতে পারে, কাজেই গরম একটু না কমলে ভোট দিতেই আসবে না মানুষ। তাঁদের হাতেই ক্ষমতা , তাঁদের ইচ্ছাতেই ভোট।
প্রসূন গুপ্ত: তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে, না হয়নি, তা নিয়ে জল্পনার স্থান নেই। সম্প্রতি কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো বিভিন্ন জেলায় কিছু রদবদল করেছিলেন। মূলত দায়িত্বে থাকা নেতাদের মাথার উপর ফের অঘোষিত পর্যবেক্ষক বসিয়েছেন দলের সুপ্রিমো। এই পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই আদি তৃণমূল নেতা অর্থাৎ অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিম, মলয় ঘটক প্রমুখ। এই পরিবর্তনে দলের একটি অংশের কাছে প্রশ্ন এসেছিল, তবে কি যুব মহল অর্থাৎ যা কিনা অভিষেকের পছন্দের, তারা বাতিল হবে? পরে অবশ্য মমতা জানিয়েছিলেন, যুবরাই ভবিষ্যৎ কিন্তু এখনই সময় হয়নি ভোট দাঁড়ানোর। জল্পনা এমন হয়েছিল যে, মমতাই কি দলের রাশ নিজের হাতে নিলেন? তিনিই কি প্রচারের মুখ আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে?
এত প্রশ্নের উত্তর একটাই, কোনও সন্দেহ নেই তিনিই মুখ। শেষ পর্যন্ত সব প্রার্থী ঠিক করার লিস্টে তিনিই টিক চিহ্ন বসাবেন। তবে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা কি? সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফর করলেন এবং সব সাংসদের নিয়ে বিভিন্ন আবেদন-নিবেদন বা প্রতিবাদের কাজটি সারলেন। দেখা গেল দুই হাউসের সদস্যরা অভিষেককেই এগিয়ে দিলেন পরিষদীয় নেতা থাকা সত্ত্বেও।
একদিকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে মমতা যেমন পূর্ব মেদিনীপুর গেলেন তেমনই শনিবার থেকে অভিষেক শুরু করছেন বিভিন্ন জেলা সফর। ২০২১-এ বিশাল জয় এলেও বর্তমানে শিক্ষা থেকে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকার বিব্রত। সমাপ্ত সাগরদিঘি উপনির্বাচন, যা কিনা মুসলিম অধুষ্যিত, পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট কিন্তু মমতার সবথেকে বড় ভরসার জায়গা।
কাজেই সাগরদিঘির মন কি সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে, প্রশ্ন তৃণমূল হাইকমান্ডে। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে দুই প্রধান নেতাই বেড়িয়ে পড়ছেন ভোটের খোঁজে। অভিষেক ইদানিং বারবার ডুয়ার্স অঞ্চলে যাচ্ছেন। যাওয়ার কারণ এই অঞ্চলে সব থেকে খারাপ ফল করেছিল তৃণমূল গত বিধানসভা নির্বাচনে। আলিপুরদুয়ারে একটিও আসন পায়নি তাঁরা। কাজেই অভিষেক আলিপুরদুয়ার থেকেই তাঁর প্রচার শুরু করছেন।
অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী নেতা বারবার চেষ্টা করেছেন পঞ্চায়েত ভোট এখুনি না করার। কিন্তু বাদ সেধেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে ভোট হচ্ছে আপাতত ঠিক। মে মাসেই ভোট বলেই অন্দরের খবর এবং ভোট পরিচালনা করবে রাজ্য প্রশাসন। তাই সাংগঠনিক প্রস্তুতির দায় অভিষেকেরই।
হাসনাবাদের আমলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের তকিপুর এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। বারবার সরকারি দফতরে জানিয়ে কোন সুরাহা হয়নি। রাস্তায় বেরিয়েছে পাথর। তাও শুরু হয়নি কোনও মেরামতি। ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতিই মেলে, হয় না কোনও রাস্তার কাজ। এদিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল বিধানসভার নাটসাল ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গাজীপুর গ্রামের রাস্তারও একই অবস্থা।
গ্রামবাসীদের দাবি, প্রায় দশ বছর ধরে এই রাস্তায় ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না তাঁরা। রাস্তায় বড় বড় খানা-খন্দ তৈরি হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি বর্ষাকালে ওই রাস্তায় জল ভরে যাওয়ায় রাস্তার কোথায গর্ত আছে তাও বোঝা যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হয় এলাকাাসীদের। অভিযোগ, সরকারি দফতর থেকে রাস্তা পরিদর্শন করতে এলে শুধু রাস্তা মেরামতের প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যায়।
এদিকে তকিপুরে রাস্তার বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে বসিরহাট বিজেপি সাংগঠনিকের জেলা সাধারণ সম্পাদক তুলসী দাস বলেন, 'শুধু আমলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের রাস্তা নয় পশ্চিমবঙ্গের সব জায়গাতেই রাস্তার বেহাল দশা। রাস্তাগুলির অবস্থা এতটাই খারাপ যে ঠিকমতো কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারে না। তাই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি আ্যাম্বুলেন্স রোগীদেরও বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়। পশ্চিমবঙ্গের যেসকল গ্রামীণ এলাকাগুলোয় প্রধানরা রয়েছেন তাঁরা কোনও কাজই করছেন না। তাঁদের ইচ্ছা শুধু লুটপাট করা।'
তবে আমলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রোকেয়া বিবি জানান, 'এই রাস্তার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আমরা এই বিষয়টি বিধায়ককে জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়িই কাজ শুরু হবে।'
ফের মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) এক কন্টেনার ভর্তি তাজা বোমা উদ্ধার। জেলার সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়ূরাক্ষী নদীর বাঁধের পাশ থেকে উদ্ধার বোমা। তদন্তে বড়ঞা থানার পুলিস। বোমা নিষ্ক্রিয় করতে ঘটনাস্থলে বোম স্কোয়াডও। তবে এই ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা এখনও স্পষ্ট নয়। শুক্রবার মুর্শিদাবাদের লালবাগ থানার অন্তর্গত ডাঙাপাড়ার হাসানপুর রাজেশ্বরী উচ্চবিদ্যালয়েও তাজা সকেট বোমা উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনার ২৪ ঘন্টা কটতে না কাটতেই মুর্শিদাবাদে ফের বোমা উদ্ধার!
এই ঘটনায় মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস মুখপত্র জয়ন্ত দাস বলেন, 'মুর্শিদাবাদ একটা বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে। যতই পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে, ততই শাসক দলের ক্ষুদ্র কুটির শিল্প অর্থাৎ এই বোমা বাঁধা ও অস্ত্র তৈরির কাজ আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। এমনকি এই পঞ্চায়েত ভোটে কেউ টিকিট পাবে আবার কেউ পাবে না, এই টিকিট পাওয়াকে কেন্দ্র করেও একটা ভয়ঙ্কর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দুর্ভোগে পড়তে হবে গোটা মুর্শিদাবাদবাসীকে।'
এই বিষয়ে সিপিএম-র জেলা সভাপতি জামির মোল্লা বলেন, 'বেশ কয়েকমাস ধরেই মুর্শিদাবাদে বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র ধরা পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কাজের জন্য কোনও কারখানা তৈরি করতে পারেনি কিন্তু বোমা-আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানা তৈরি করতে পেরেছেন। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রেহাই পাচ্ছে না এই বোমার হাত থেকে। শাসক দল বিরোধীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। যাতে ২০১৮ সালের মতো কেউ ভয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে না দাঁড়ায়।'
এদিকে, এই ঘটনা দুষ্কৃতীদের কাজ বলে দাবি করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পুলিস-প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতি আয়ত্বে এনেছে বলে ধন্যবাদ জানিয়েছে শাসক দল।
সাত সকালেই শুটআউটের (Shootout) ঘটনায় চাঞ্চল্য কেতুগ্রামে (Ketugram)। সকাল ১০টা নাগাদ কেতুগ্রামের দু'নম্বর ব্লকের রতনপুরের কাছে দুলাল শেখ নামে এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু (death) হয় দুলাল শেখের। স্থানীয় সূত্র মারফত্ খবর মৃত ওই ব্যক্তি একজন তৃণমূল কর্মী। খুনের (murder) ঘটনার পরই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ছে। শোকের ছায়া পরিবারে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার মোটর বাইকে করে দুলাল শেখ যাচ্ছিলেন গন্তব্যে। সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। এই মুহূর্তে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের না করা হলেও মৃতের ছেলের দাবি, বাবা তৃণমূল কর্মী ছিলেন। বর্তমানে বালির ব্যবসা করতেন।
তবে বিজেপির পক্ষ থেকেও কটাক্ষের সুর তোলা হয়েছে। এই ঘটনার নেপথ্য কে বা কারা রয়েছে, বালির ভাগ বাটোয়ারা নাকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই নির্মম পরিণতি তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। পুলিস সূত্রে খবর, মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আনা হবে তারপরেই বোঝা যাবে কী কারণে এই মৃত্যু।
এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের মতে, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে অজয় নদীর বালির ঘাটে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একাধিক খুন হয়েছে। স্থানীয়দের অনুমান, সেরকমই কিছু ঘটেছে। তবে ঘটনার তদন্তে কেতুগ্রাম থানার পুলিস।
৮ কিলোমিটার রাস্তা (road), বেহাল দশা। প্রায়দিনই ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা (accident)। অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রশাসনকে বলেও হয়নি কোনও কাজ। একাধিকবার বিধায়ক প্রতিশ্রুতি দিলেও রাস্তার অবস্থা এখনও বেহাল। ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা (Deganga)। কবে মিটবে সমস্যা, কবে মিলবে যাতায়াতের যোগ্য রাস্তা? জানেন না স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, দেগঙ্গা ব্লকের কলসুর থেকে বক্সিরহাটি যাওয়ার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পিচ, পাথর উঠে রাস্তার কঙ্কালসার অবস্থা। প্রায়দিনই ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। যাতায়াতের সমস্যায় স্কুলপড়ুয়া থেকে নিত্য পথচলতি মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রশাসনকে বলেও হয়নি রাস্তা মেরামতির কোনও কাজ। স্থানীয় বিধায়ক বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও হয়নি রাস্তা মেরামতি।
তবে এবিষয়ে লেগেছে রাজনৈতিক রং। দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তুষারকান্তি দাস জানান, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাস্তাটির মেরামতির কাজ শেষ হবে। অন্যদিকে, বেহাল রাস্তা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেত্রী দীপিকা চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, শাসক দল নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের চাহিদা দেখার সুযোগ নেই।