সংসদকাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' ললিত ঝা-এর (Lalit Jha) বিষয়ে জানতে আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালেই ইকো পার্ক থানায় হাজির দিল্লি পুলিসের স্পেশাল টিম (Delhi Police)। এরপরই দিল্লি পুলিসের ৪ প্রতিনিধি দল এসে পৌঁছলেন ললিতের বাগুইআটির হেলাবটতলার বাড়িতে। ললিত সম্পর্কিত তথ্য নিতে বাগুইআটি হেলাবটতলা বাড়িতে এসেছেন দিল্লি পুলিস। এখানেই থেমে নেই দিল্লি পুলিস। তাঁরা ললিতের ফোনের বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করতেও পৌঁছে যান বিএসএনএলের দফতর অর্থাৎ টেলিফোন ভবনে। উল্লেখ্য, ললিত ঝা যে মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করত, সেটি বিএসএনএল নম্বর (ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেল)।
সংসদকাণ্ডের পর থেকেই ললিতের বাংলা যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। ললিত যে কলকাতার দু'জায়গায় ভাড়া থাকতেন তা জানতে পেরেছে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল টিম। ফলে ললিতের বিষয়ে খোঁজ করতে তাঁরা রাজ্যে এসেছেন। সোমবার থেকেই তাঁরা তদন্ত করতে শুরু করেছেন। মঙ্গলবার সকালেই তাঁরা পৌঁছে যান বাগুইআটি হেলাবটতলার ভাড়া বাড়িতে।
জানা গিয়েছে, বিগত তিন বছর ধরে ভাড়া ছিলেন ললিত ঝা ও তার পরিবার। ১০ই ডিসেম্বর বাগুইআটি হেলাবটতলার বাড়ি থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল ললিত। সে যেই ঘরে ভাড়া থাকত, সেই ঘরে তালা বন্ধ থাকার কারণে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি দিল্লি পুলিসের আধিকারিকরা। বাড়ির মালিককে প্রায় দেড় ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় দিল্লি পুলিস। এর পরই ললিতের ফোন নম্বরের যাবতীয় কল লিস্ট এবং কল হিস্ট্রি জানতে বিএসএনএলের দফতর অর্থাৎ টেলিফোন ভবনে পৌঁছে যান দিল্লী পুলিসের আধিকারিকরা। সংসদকাণ্ডে ললিত সম্পর্কে আর কী কী তথ্য প্রকাশ্যে আসে, সেটাই এখন দেখার।
সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডে তদন্ত করতে এবারে কলকাতায় এসেছে দিল্লি পুলিসের এক তদন্তকারী টিম। অভিযুক্তদের বিষয়ে একাধিক তথ্য জোগাড় করতে সোমবার কলকাতায় পৌঁছল দিল্লি পুলিসের বিশেষ দল। সংসদকাণ্ডের মূলচক্রী ললিত ঝা-এর সঙ্গে বাংলা যোগ আগেই পাওয়া গিয়েছে। এবারে তাই সেসব যোগসূত্র খুঁজতেই কলকাতায় এসেছে দিল্লি পুলিস। তাঁদের প্রথমে গিরিশ পার্ক থানায় যেতে দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই নীলাক্ষ আইচের হালিশহরের বাড়িতেও গিয়েছে দিল্লি পুলিসের বিশেষ দল।
জানা গিয়েছে, সোমবার দিল্লি পুলিসের স্পেশাল টিম কলকাতায় পৌঁছতেই ললিতের ২১৮ রবীন্দ্র সরণীর বাড়িতে যায়। সেই বাড়ি তালা বন্ধ থাকায়, বাড়ির কেয়ারটেকারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে গিরিশ পার্ক থানায়। ২১৮ রবীন্দ্র সরণীর যে ঘরে ললিত থাকত সেই ঘর খুলে তল্লাশি করতে চাইছে দিল্লি পুলিসের আধিকারিকরা। ললিতের সম্পর্কে খোঁজ নিতে এলাকার এক ব্যক্তিকে গিরিশ পার্ক থানায় তলব করল দিল্লি পুলিস। জনৈক ব্যক্তিকে ইতিমধ্যেই গিরিশ পার্ক থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়েছে। ললিতের বাড়িতে কার কার যাতায়াত ছিল সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ললিত কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, পশ্চিমবঙ্গের কারা কারা ছিল, তাদের কারোর সঙ্গে সংসদের ঘটনার কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা। সংসদে বিক্ষোভ দেখানোর আগে এই বিষয়ে কার কার সঙ্গে ললিত কথা বলেছিল এ সব বিষয়ে জানার চেষ্টা করছে দিল্লি পুলিস। গিরিশ পার্ক থানা ললিত ঝা সম্পর্কে কী কী তথ্য জোগাড় করেছে সেই সমস্ত তথ্য একবার দেখে নিতে চাইছে দিল্লি পুলিস। ললিতের সমস্ত ঠিকানাতেই তল্লাশি চালাতে পারে দিল্লি পুলিস, এমনটাই সূত্রের খবর।
অন্যদিকে সংসদ ভবনে স্মোক বোমা কাণ্ডে হালিশহরে নীলাক্ষের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে দিল্লি পুলিসের বিশেষ দল। এরমধ্যে দু'জন রাজ্য পুলিসের আইবি অফিসার এবং দু'জন দিল্লীর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রয়েছে। প্রথমে নীলাক্ষের বাবা কে ডাকেন তাঁরা। এরপর ঘরে গিয়ে নীলাক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডের পরই দিল্লিপ পুলিসের হাতে গ্রেফতার একের পর এক অভিযুক্ত। এমনকি এই কাণ্ডের 'মূলচক্রী' ললিত ঝাকেও গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর থেকেই প্রকাশ্যে এসেছে একের পর এক নয়া তথ্য। এর আগে ললিতের সঙ্গে বং কানেকশনের কথা জানা গিয়েছে। এবারে জানা গেল, সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে কীভাবে তার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছিল।
সংসদের অন্তরে ধোঁয়া কাণ্ডে ইতিমধ্যে দিল্লি পুলিসের তরফে গ্রেফতার করা হয়েছে এই ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা-কে। গ্রেফতারের পর থেকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ললিতকে। দিল্লির পুলিসের স্পেশাল সেলের আধিকারিকরা মনে করছেন, এই বঙ্গে বসেই ললিত সংসদে প্রবেশের ছক কষেছিল। আবার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা একদিকে চালিয়ে গিয়েছে ললিত। অন্যদিকে এই গোটা কর্মকাণ্ডে কোন কোন সদস্য তার সঙ্গে থাকবে, কার কী ভূমিকা থাকবে, সবটাই ছক কষেছিল ললিত। পরিবারকে বিহারে পাঠিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে, তার দিল্লি যাত্রা সবটাই আগে থেকে ঠিক করা ছিল ললিতের।
সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডের পর 'মূলচক্রী' ললিত ঝা-এর (Lalit Jha) সঙ্গে কলকাতা কানেকশন তো আগেই জানা গিয়েছে। এবারে পশ্চিম মেদিনীপুরের কানেকশনও খুঁজে পাওয়া গেল। পুলিস সূত্রে খবর, ললিত ঝা, নীলাক্ষ আইচ এর তৈরি করা 'সাম্যবাদী সুভাষ সভা'র সঙ্গে এবার যোগ পাওয়া গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের। তারা তাদের সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করছিল বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো। এছাড়াও এই কাণ্ডে নাম উঠে এসেছে আরও এক ব্যক্তির।
সাম্যবাদী সুভাষ সভা- ললিত ঝা, নীলাক্ষ আইচদের এই সংগঠনই এখন দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এবার এই সংগঠন নিয়ে উঠে এলো আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিভিন্ন জেলায় সমাজমাধ্যমে যোগাযোগ করে সংগঠন বাড়ানোর কাজে নেমেছিল ললিত ঝা-রা। কীভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর, মেদিনীপুর শহরেও থাবা বসিয়েছিল 'সাম্যবাদী সুভাষ সভা'। জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে সমাজ মাধ্যমেই যোগাযোগ করা হয় দাসপুরের ল ক্লার্ক হিমাংশু শেখর মান্নার সঙ্গে। দাসপুর, ঘাটাল সহ আশেপাশের এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হিমাংশুকে। এলাকায় সংগঠন তৈরি করারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে। রবিবার সকালে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে হিমাংশু জানায়, এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ফান্ড জমা করতে বলা হয়েছিল তাকে। ললিত ঝা-রা যে সংসদে হামলার মতো এত বড় ঘটনা ঘটাতে পারে তা একেবারেই টের পাননি হিমাংশু। টিভিতে সংসদ হামলার খবর দেখানোর পরেই গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যায় হিমাংশু।
একইভাবে মেদিনীপুর শহরেও টার্গেট করা হয় মনীষ মাইতি নামে এক যুবককে। শনিবার রাতে মেদিনীপুর শহরে ডিরোজিও নগরে মনীষের বাড়িতে গেলেও দেখা মেলেনি। বাড়িতে তালা। ঠিক এই ভাবেই 'সাম্যবাদী সুভাষ সভা' নিজেদের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। যার মধ্যে বাদ যায়নি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাও। এই সংগঠনের আসল উদ্দেশ্য কী বা সমাজ সেবার আড়ালে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য এই সংগঠনের ছিল কিনা তা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডের 'মূলচক্রী' ললিত ঝা-কে পুলিসি হেফাজতে নেওয়ার পর থেকেই দিল্লি পুলিসের কাছে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবারে জানা গিয়েছে, সংসদে হামলার পরিকল্পনার পাশাপাশি ললিত ঝা-এর সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনই চাঞ্চল্যকর পোস্ট ছিল, যা দেখে হতবাক পুলিস। দেখা গিয়েছে, ললিতের এক পোস্টে লেখা "What India needs today is a bomb"। এছাড়াও ললিত ঝা-এর একাধিক চাঞ্চল্যকর পোস্ট রয়েছে তার সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পুলিস সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ললিত ঝাকে রাজস্থানে নিয়ে গিয়েছে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল। সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডের পরই রাজস্থানের এক হোটেলে ছিল ললিত। হোটেলে রুম বুক করে দেওয়া থেকে শুরু করে রাজস্থানে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল মহেশ কুমাওয়েত নামে এক ব্যক্তি। তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিস। পুলিশ আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, শেষ দু'বছর ধরে ললিতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে এই ষড়যন্ত্র তারা পরিকল্পনা করেছিল।
আরও জানা গিয়েছে, রাজস্থানের কুচামান সংলগ্ন একটি হোটেলে ছিল ললিত ও তার পাশের একটি ধাবায় বসে মোবাইল ফোনগুলি পুড়িয়েছিল ললিত। ফলে আজ সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয় ললিতকে ও সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় পুড়ে যাওয়া মোবাইল ফোনগুলি। এছাড়াও ললিতের ফোনের কার্যকলাপ জানার জন্য ইতিমধ্যেই টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারকে চিঠি দিয়েছে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল।
সংসদ (Parliament) কক্ষে ধোঁয়া কাণ্ডের 'মূলচক্রী' ললিত ঝাঁ (Lalit Jha)। যাকে নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য থেকে জাতীয় রাজনীতি। এই ঘটনার সঙ্গেই একাধিকবার বং কানেকশনও উঠে এসেছে। এরই মধ্যেই ললিতকে পুলিসি হেফাজতে নিলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছে পুলিস। আর জিজ্ঞাসাবাদ করতেই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশে বেকারত্বের সমস্যার জন্যই এই হামলার ছক কষা হয়েছিল বলে ললিত জানিয়েছে পুলিসকে।
সংসদে অবৈধভাবে অধিবেশন কক্ষে ঢুকে পড়েছিল দুই যুবক। সেখানে ঢুকে স্মোক বম্ব ছোড়ে তারা। যার জেরে হলুদ ধোঁয়ায় ভরেছিল সংসদের অন্দর। তখন তাঁদের অন্য সঙ্গীরা সংসদের বাইরে স্লোগান এবং স্মোক বম্ব ফাটাচ্ছিল। এদের সকলকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ললিত এবং মহেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সংসদে হানার বিষয়ে আরও তথ্য জানার চেষ্টাও করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু পুলিস জানিয়েছে, ললিতের কথায় একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। পুলিস সূত্রে খবর, সংসদে হামলার প্ল্যান সাকসেস না হলে ললিত দ্বিতীয় প্ল্যান তৈরি করে রেখেছিল বলেও পুলিসকে জানিয়েছে সে। এরপরই সে জানায় যে, মূলত দেশে বেকারত্বের সমস্যার জন্যই এই হামলা করা হয়েছিল।
সূত্রের খবর, যেহেতু ললিতকে আপাতত সাত দিনের পুলিস হেফাজতে রয়েছে, তাই তাকে নিয়ে দিল্লি পুলিস সংসদে ও সংসদের বাইরে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে পারে।
সংসদে ঢুকে হানা এবং রঙিন ধোঁয়া ছড়ানোর কাণ্ডে ছড়িয়েছে উত্তেজনা। সংসদ হামলার ২২ বছর পূর্তিতেই নতুন সংসদ ভবনের লোকসভা কক্ষে দুই যুবকের হানা। বুধবারের এই ঘটনার পরেই গ্রেফতার করা হয় চারজনকে। সেই রাতেই আটক হয়েছিল বিক্রম নামে এক ব্যক্তি। তারপর এদের সকলের সূত্র ধরেই উঠে আসে এই ঘটনার মূলচক্রী ললিত ঝাঁর নাম। তারপর গ্রেফতার হয় পঞ্চম ব্যক্তি ললিত ঝাঁ। এরপরেই ললিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দিলি পুলিসের হাতে উঠে আসে একের পর এক তথ্য। পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে, রাজস্থানের নাগৌর জেলার বাসিন্দা মহেশ কুমাওয়াতকে। তিনিও ঘটনার দিন দিল্লিতে ছিলেন, পুরো ষড়যন্ত্রের তিনিও এক অংশ।
জানা গিয়েছে, ললিতদের গোটা পরিকল্পনায় তৈরি ছিল দুটি প্ল্যান। যাকে বলে 'প্ল্যান এ' এবং 'প্ল্যান বি'। সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে যদি নীলম এবং অমল ব্যর্থ হতেন, তবে বিক্ষোভ দেখাতেন কৈলাশ এবং মহেশ নামে ললিতের অপর দুই বন্ধু। শুধু তাই না, এই ধোঁয়া কাণ্ডের পর, যাতে সহজেই ললিত রাজস্থানের গেস্ট হাউসে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন, সেই কারণে ঘটনার একদিন আগে থেকেই তাঁর নিজের আইডি দিয়ে রাজস্থানের গেস্ট হাউস বুকিং করে রেখেছিলেন ললিত। জানা গিয়েছে, রাজস্থানের ওই গেস্ট হাউস থেকেই সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডে ললিতের সহযোগী সাগর, মনোরঞ্জন, নীলম এবং অমলের মোবাইল ফোন ললিত পুড়িয়ে দেন প্রমাণ লোপাটের জন্য। হার্ডডিস্কের মাধ্যমে প্রমাণ জোগাড়ের জন্য যার ধ্বংসাবশেষ ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিস।
এই ঘটনায় বারবার উঠে আসছে ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাব নামে একটি হোয়াটস্যাপ গ্রুপের কথা। এই গ্রুপেই সংসদে হামলার যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিস সূত্রে খবর। গত দেড় বছর ধরেই এই পরিকল্পনা চালাচ্ছে ললিত। এমনকি, সংসদের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা নিয়ে বহু দিন ধরে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করছিলেন এই পুরো দল। জেরার পর জানা গিয়েছে, সাতটি স্মোক বম্ব নিয়ে সংসদে ঢোকার পরিকল্পনা করেছিল ললিতরা। দিল্লি পুলিসকে ললিত আরও জানায়, তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা সংসদের ভিতরে ও বাইরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু তা তাঁরা বাস্তবায়িত করতে পারেননি।
সবমিলিয়ে যা বোঝা যাচ্ছে, ললিতকে জেরা করে ধীরে ধীরে খুলছে সংসদের ধোঁয়া কাণ্ডের বহু জট। ধীরে ধীরে বাইরে আসছে পরিকল্পনা ঘিরে আসল তথ্য। ইতিমধ্যেই লোকসভার নিরাপত্তাকে, ঘটনার পর আরও জোরালো করতে ক্যাবিনেট বৈঠক সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যাচ্ছে, ললিতদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল সংসদে ঢুকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ দেখানো। এখন দেখার বিষয়, দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেলের তদন্তে সংসদে ঢুকে হানা এবং রঙিন ধোঁয়া কাণ্ডে আরও কী কী তথ্য বেরিয়ে আসে।
সংসদ কক্ষে ধোঁয়া কাণ্ডের 'মূলচক্রী' ললিত ঝাঁ। যাকে নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য থেকে জাতীয় রাজনীতি। ললিতের কলকাতা যোগের তদন্তে নেমে লালবাজার খোঁজ পায় ললিতের বাড়ির। ভাড়া বাড়িতে কলকাতায় থাকতেন ললিত। বাগুইআটি এবং বড়বাজারের দুই বাড়ির মধ্যে ২১৮ রবীন্দ্র সরণি পুলিসদের সন্দেহের তালিকার একেবারে শীর্ষে।
আপাতত সূত্র মারফত যা জানা গিয়েছে, তাতে কলকাতায় ললিতের মোট দুটি বাড়ির সন্ধান মিলেছে। এক, বড়বাজারে ২১৮ নম্বর রবীন্দ্র সরণি, যেখানে এই মুহূর্তে ললিত ও তাঁর পরিবার না থাকলেও সেখানে ললিত প্রাইভেট টিউশন করেন এবং ললিতের আধার কার্ডে এই ঠিকানার উপস্থিতি। আর দুই, বাগুইআটির একটি ভাড়া বাড়ি। এখন পুলিসের মনে প্রশ্ন জাগছে, বিহারের ছেলে ললিত থাকেন বাগুইআটিতে। তাহলে ২১৮ রবীন্দ্র সরণি কীভাবে তাঁর আধার কার্ডের ঠিকানায় রইল, তা নিয়েই ধন্দে পুলিস।
অপরদিকে জানা যাচ্ছে, সপরিবারে বাগুইআটির এক ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন ললিত ও তাঁর পরিবার। পাড়ায় বেশ ভালো ছেলে বলেই পরিচিত ললিত। বাগুইআটির বাড়িওয়ালার সঙ্গে ২০২০ সালে ললিতের চুক্তিপত্রে সই হয়। তারপর সেই চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হলে, বহুবার বলার পর অবশেষে ২০২৩ সালে ললিতের মায়ের নামে নতুন করে চুক্তিপত্র হয়।
ললিত যখন বাগুইআটিতেই থাকেন, তাহলে বড়বাজারের ২১৮ রবীন্দ্র সরণির নামে আধার কার্ড কেন? এই মুহূর্তে এই প্রশ্নটাই ভাবাচ্ছে পুলিসকে। আরও জানা গিয়েছে, ১০ ডিসেম্বর রাতেই ললিত তাঁর পরিবারকে পাঠিয়েছিল দেশের বাড়িতে। পাড়ার লোককে বলেছিল, কাজে নিজে সে যাচ্ছে দিল্লি। সুতরাং, সবটাই আগে থেকে ভেবে রাখা পরিকল্পনা। ঠিক এভাবেই তদন্তে তাঁর বাড়ি নিয়ে আরও তথ্য উঠে আসতে পারে, সন্দেহ পুলিসের। ললিতের আধার কার্ডের ঠিকানা, ২১৮ নম্বর রবীন্দ্র সরণি রয়েছে সেই সন্দেহের তালিকার একেবারে শীর্ষে।
সংসদ-কাণ্ডে মূল চক্রী ললিত ঝায়ের সঙ্গে বং কানেকশন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এবার তাঁকে বাংলার শাসক দলের যুব শাখার পদাধিকারী বলে দাবি করলেন শুভেন্দু অধিকারী। সুকান্ত মজুমদারের পর শুভেন্দু অধিকারীর দাবি ঘিরে আরও চড়ছে বঙ্গ রাজনীতির পারদ। শুক্রবার বিরোধী দলনেতা বলেন, ললিত ঝা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পদাধিকারী। তাপস রায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বরানগর-উত্তর কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক কর্মসূচিতে থাকে ললিত, দাবি শুভেন্দুর। তোলামূলীদের রাজত্বে বাংলা দেশ-বিরোধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে, অভিযোগ তাঁর। শুক্রবার ঠিক কী বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
শুক্রবার সকাল হতেই ললিত-কাণ্ডে শাসক দলের প্রতি সুর চড়ান শুভেন্দু। বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের করা একটি এক্স পোস্ট শেয়ারও করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি লেখেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সফলভাবে বাংলায় এমন একটা বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছেন যেখানে শহুরে নকশাল, টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের অবাধ বিচরণ। অনুপ্রবেশকারী, বেআইনি উদ্বাস্তুরা এ রাজ্যে সহজেই নাগরিক হয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত, তাঁদের স্বর্গরাজ্য বাংলা, এভাবেই তোপ দাগেন শুভেন্দু। বেলা বাড়তেই তিনি ললিতের সঙ্গে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের যোগসূত্র টানলেন। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের প্রবীণ বিধায়ক তাপস রায়ের সঙ্গে ললিত ঝায়ের ঘনিষ্ঠতা খুঁজে বের করছিলেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি তাপস-ললিত একফ্রেমে এমন একটা ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, গণতন্ত্রের মন্দিরে হামলাকারী ললিত ঝার সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের যোগাযোগ সামনে এসেছে। তাতে ওই তৃণমূল নেতাকে তদন্তের আওতায় আনার মতো এটা কি যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নয়? এ প্রসঙ্গে সিএন-কে সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, বিরোধীরা বিজেপির বিরোধিতা করতে গিয়ে এবং ভোটে জেতার জন্য যেভাবে দেশের বিরোধিতা করছেন, তা ভাবা যায় না। বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার। এবার দলের রাজ্য সভাপতির পথে হাঁটলেন বিরোধী দলনেতাও।
বিজেপির এহেন জোড়া আক্রমণ ভোঁতা করতে আসরে নামেন তাপস রায়। ললিত এবং তাঁকে জড়িয়ে করা পোস্টের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন তৃণমূল বিধায়ক, এমনটাই জানান তাপস রায়। পাশাপাশি তদন্তকারী সংস্থা তলব করলে আমি সহযোগিতায় রাজি, স্পষ্ট অবস্থান জানান তাপস রায়। পাল্টা সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন মূল চক্রীর সঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ আছে। তদন্তে খতিয়ে দেখা হোক বড় কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, দাবি বিজেপির রাজ্য সভাপতির।
পলাতক হয়েও হল না লাভ। রাজস্থানেও পালিয়ে গিয়েছিল ললিত। কিন্তু অবশেষে সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডের 'মূলচক্রী' ললিত ঝাঁকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিস। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে নিজেই রাজধানীর কর্তব্যপথ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এর পর রাতেই দিল্লি পুলিসেশের তরফে তাকে স্পেশাল সেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে গতকাল রাতেই ললিত ঘনিষ্ঠ কৈলাস ও মহেশ নামে আরও দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল।
সূত্রের খবর, কর্তব্যপথের আশেপাশে অর্থাৎ ইন্ডিয়া গেটের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ললিত। দিল্লি পুলিসের ফেস আইডেন্টিফিকেশন ক্যামেরাতে প্রথম ধরা পড়ে ললিতের গতিবিধি। এরপরই স্পেশাল সেল অ্যাক্টিভ হয়ে ওঠে এবং গ্রেফতার করে ললিত ঝাঁ কে। কর্তব্যপথ থানায় গিয়ে সারেন্ডার করে ললিত ঝাঁ। তার কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লি ইন্টেলিজেন্সের স্পেশাল সেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। এরপর আজ অর্থাৎ শুক্রবারই ললিতের দ্বিতীয় বাড়ির হদিশও পাওয়া গিয়েছে। জানা গিয়েছে, বাগুইআটি অঞ্চলের হেলাবটতলার পালপাড়াতে প্রায় তিন বছর ধরে বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া থাকত ললিত।
আবার ললিত ঘনিষ্ঠ কৈলাস ও মহেশ নামে দুই ব্যক্তিকেও আটক করে পুলিস। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল। সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় এই দুই ব্যক্তিও যুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করছে দিল্লি পুলিস। সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডের পর রাজস্থানে পালিয়ে গিয়েছিল ললিত। সেসময় এইই মহেশ এবং কৈলাস রাজস্থানে ললিতকে সাহায্য করেছিল বলে খবর। মহেশের কাছে সংসদ আক্রমণের সম্পর্ণ খবর ছিল। সে ভগত সিং গ্রুপের সদস্য ছিল। সেও দিল্লি আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তার পরিবার আটকে দেওয়ায় সে আসতে পারেনি।
সূত্রের খবর, সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে কলকাতায় আজই আসবেন দুজন অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পদমর্যাদার অফিসার। মূল অভিযুক্ত ললিত ঝাঁ-এর গতিবিধি সম্পর্কিত তথ্য খুঁজতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে পাঠানো হচ্ছে এই দুই আধিকারিককে।
বুধবার সংসদে দুই ব্যক্তির আচমকা হানায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে সারা দেশজুড়ে। এরপর ধীরে ধীরে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে ও প্রকাশ্যে এসেছে 'মূলচক্রী'র নামও। সংসদে স্মোক কাণ্ডের পর থেকেই সে পলাতক বলে জানা গিয়েছে। আর এরপরই সামনে আসে 'মূলচক্রী' ললিত ঝাঁ-এর সঙ্গে বাংলার যোগের। জানা গিয়েছে, সংসদে হামলার ঘটনায় ললিত বাইরেই ছিল। সে সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভের ছবি তোলে ও বিক্ষোভরত চারজনের মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিক্ষোভের ছবি পোস্টও করে সে। আর সেই বাংলার ভিডিও বাংলার 'বন্ধু' নীলাক্ষ আইচকেও ফোনে পাঠায় ললিত।
জানা গিয়েছে, সংসদে হানা কাণ্ডে 'মূলচক্রী' ললিত ঝাঁ কলকাতার ২১৮, রবীন্দ্র সরণীতে থাকতেন এবং সেখানেই টিউশন পড়াতেন। কিন্তু প্রায় ১.৫ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ললিতদের ভাড়া নেওয়া এই ঘরটি। ৫৯ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে সপরিবারেই থাকতেন ললিত ঝাঁ। পরিবারের শুধুই ছিলেন তার বাবা। পূজা অর্চনার কাজ করতেন ললিতের বাবা। লকডাউনের পর থেকেই এখান থেকে চলে যায় ললিতের বাবা ও ললিত। আরও জানা গিয়েছে, পলাতক ললিত একসময় পশ্চিমবঙ্গের একটি এনজিওতে কাজ করতেন। সাম্যবাদী সুভাষ সভা নামে এনজিওতে কাজ করতেন পলাতক ললিত ঝাঁ। মূলত আদিবাসী উপজাতির পিছিয়ে পরা গ্রামের শিশুদের শিক্ষাও দিত সে।
ললিতের পরিচয় সামনে আসতেই বাংলার 'বন্ধু' নীলাক্ষ আইচের প্রসঙ্গ সামনে আসতেই বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যায় পুলিস। জানা গিয়েছে, হালিশহরের জেটিয়ার বাসিন্দা নীলাক্ষ আইচ। বিধান নগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এনার মোবাইলেই সংসদে হামলার ঘটনার ভিডিওটা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠায়। সাম্যবাদী সুভাষ সভা নামে একটি এনজিও করে নীলাক্ষও। আর সেই সূত্রেই ললিত ঝাঁর সঙ্গে আলাপ তাঁর। দিল্লি পুলিস থেকে ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এদিনই ব্যারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের পুলিস অফিসাররা এসে কথা বলেছে। ওনারা আদিবাসী ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করায় বলে জানিয়েছে নীলাক্ষর বাবা নিলয় আইচ। গোটা পাড়া হতবাক এই ঘটনায়।