বীরভূমের সভায় (Birbhum Meet) রাজ্য সরকার-সহ শাসক দলকে একাধিক ইস্যু তুলে আক্রমণ করেছেন অমিত শাহ। এবার তাঁকে পাল্টা দিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। শুক্রবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে শাসক দলের মুখপাত্র জানান, '২৫ সালে রাজ্যে সরকার পড়ে যাবে বলছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (Amit Shah)। এটা অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক, স্বৈরাচারী মনোভাব। ঝুলি থেকে বিড়াল বেড়িয়ে পড়েছে। একুশের ভোটে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে হেরেছেন লজ্জা করে না। লোকসভার সঙ্গে বিধানসভার সম্পর্ক কী? মানুষের রায়ে রাজ্যে নির্বাচিত সরকার। সেই সরকার ফেলে দেওয়ার কথা কে বলছেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অর্থাৎ একটা চক্রান্ত চলছে, আর সেটা হচ্ছে দিল্লি থেকে।'
এদিন কুণাল বলেন, 'উনি (পড়ুন অমিত শাহ) বলেছেন লোকসভায় ৩৫টি আসন, আমরা বলছি শূন্য থেকে গোনা শুরু করুন। এক পর্যন্ত পৌঁছতে ঘাম বেড়িয়ে যাবে। বিজেপি লোকসভায় শূন্যে দাঁড়িয়ে থাকবে। বিধানসভা ভোটের আগে বলেছিলেন আব কি বার ২০০ পার। অমিত শাহজি ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেছিলেন।' এদিন কুণাল ঘোষ দাবি করেন, আগামি লোকসভা এবং বিধানসভায় বিজেপির পরাজয়ের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেন অমিত শাহজি।
২ লাখের সম্পত্তির (Asset) হিসেব দিয়ে ২২ লাখি গাড়ি! ঠিক এমন ভাবেই সিপিআইএমের (Cpim) হোলটাইমার শতরূপ ঘোষকে কটাক্ষ করলেন রাজ্য তৃণমূল (Tmc) সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার সকালে তিনি, ফেসবুক পোস্ট সহ তাঁর ব্যক্তিগত টুইটে শতরূপ ঘোষের আয় ও সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ওই পোস্টে কুণালের দাবি, সম্প্রতি সিপিআইএমের হোলটাইমার শতরূপ ঘোষ একটি গাড়ি কিনেছেন ২২ লক্ষ টাকা দিয়ে। সেই গাড়িটির নম্বর অনুযায়ী, গাড়িটি শতরূপের নামেই আছে বলে দাবি করেন কুণাল। এরপর ওই পোস্টেই কুণাল ঘোষ প্রশ্ন করেন, একজন সিপিআইএমের হোলটাইমার এত টাকা কোথা থেকে পেলো?
Satarup Ghosh of CPM.
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) March 28, 2023
Rs 2 lacs assests in 2021 election affidavit.
Now he bought the new car paying onetime almost 22 lacs.
How can a wholetimer of CPM afford this kind of expenses?
** for detail, contact: Mrityunjoy Pal.@AITCofficial spokesman and state youth wing GS. pic.twitter.com/Rd2HiQ2Wpt
মঙ্গলবার কুণাল, ওই গাড়ির নম্বর, ২০২১ সালে শতরূপের মোট সম্পত্তির নথি, ও গাড়ির সরকারি নথির ছবি পোস্ট করে আরও প্রশ্ন তোলেন, তিনি জিজ্ঞেস করেন, '২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতরূপের মোট সম্পত্তির পরিমাণ, ২ লক্ষ টাকা। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে, কিভাবে এতো টাকা এলো! যে একটা বিলাসবহুল গাড়ি কিনে নিলো শতরূপ। যার মোট মূল্য ২২ লক্ষ টাকা তিনি আরও প্রশ্ন করেন যে, 'কোনো হোলটাইমার এত টাকা ব্যাঙ্ক লোন পেতে পারে কি?' যদিও এ ঘটনায় শতরূপকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, 'এ সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য, দুপুর দেড়টা নাগাদ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাবো।'
মনি ভট্টাচার্য: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না, কুণাল (Kunal ghosh) ঘোষের টুইটে যাদের নাম, আদালতে ঢোকার সময়ে পার্থর (Partha chattopadhyay) মুখেও শোনা গেল তাদের নাম। বিতর্কের শুরু বৃহস্পতিবার। আলিপুর বিশেষ আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পেশ করে পুলিস (Central agency)। আদালতে ঢোকার মুখে পার্থ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, 'এখন দিলীপ বাবু, সুজন বাবু, অধীরবাবুরা বড় বড় কথা বলছেন, তারা নিজের দিকে দেখুন, উত্তরবঙ্গে তারা কী করেছেন? তারা ২০০৯-২০১০-এ সিএজি রিপোর্ট পড়ুন, সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছে, যেহেতু আমি তাদেরকে বলেছি আমি সাহায্য করতে পারবো না, আমি নিয়োগ কর্তা নই, আমি কোনও কাজ বেআইনি করতে পারব না।'
এই নামগুলি উল্লেখ করে একই বিষয়ে পার্থ বাবুর বক্তব্যর, মিনিট ১৮ আগে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক একটি টুইট করেন, সেখানে তিনি বলেন, 'দিলীপ ঘোষ, সুজন চক্রবর্তী, শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য আরও কয়েকজন চাকরির সুপারিশ করেছিলেন কি? তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন কি? কুণালবাবু বৃহস্পতিবার তার টুইটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের খোঁচা দিয়ে বলেন, 'তদন্ত হোক, কেন্দ্রীয় এজেন্সি একমুখী কাজ না করে নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।' যারপরেই কিন্তু শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বিতর্ক ঠিক কোন জায়গায় ? বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা ৪২ মিনিটে কুণালের টুইট। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় সাংবাদিকদের পার্থ ওই নামগুলোই বলেন, যেগুলো তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক টুইটে উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনা কি নিছকই কাকতালীয়? নাকি সমাপতন। প্রশ্ন উঠছে, কুণালবাবুর সঙ্গে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোনও যোগাযোগ আছে? পার্থবাবু কি কুণাল ঘোষকে আগাম কিছু বলেছিলেন, যার ভিত্তিতে এই টুইট করেন তিনি? যদিও তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, পার্থর সঙ্গে কুণালের সম্পর্ক একেবারেই সুমিষ্ট নয়। যদিও এই বিতর্কে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা।
এ বিষয়ে বাম নেতা, সুজন চক্রবর্তী সিএন-কে বলেন, 'যারা বলছে তাঁদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে উনি তো বিরোধীদের লোক ছিলেন, সেই সময় পার্থ কোথায় ছিলেন? এগুলো মাথা খারাপের লক্ষণ।'
একই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'পার্থ যে সময়ের (২০০৯-২০১০) কথা বলছে সেই সময়ে আমি রাজনীতিতেই আসিনি, ওর অভিযোগ প্রমাণ হলে পার্থর বদলে আমি জেলে যাবো ।' যদিও এ বিষয়ে কুণাল ঘোষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
শর্তসাপেক্ষে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকে (Kunal Ghosh) বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁর করা আবেদনের ভিত্তিতে এই অনুমতি আদালতের (Calcutta High Court)। জানা গিয়েছে, ১৬ জানুয়ারি তৃণমূল মুখপাত্র দেশ ছাড়তে পারবেন আবার ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাঁকে দেশে ফিরতে হবে। ফিরে এসেই কুণাল ঘোষ আবার পাসপোর্ট জমা দেবেন আদালতে। বিদেশ যাত্রার জন্য আদালত থেকে পাসপোর্ট তোলার সময় পাঁচ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট (Fixed Deposit) জমা করবেন কুণাল ঘোষের স্ত্রী। তৃণমূল নেতা দেশে ফিরলে সেই টাকা ফেরত পাবেন। কুণাল ঘোষের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৩ ফেব্রুয়ারি।
যদিও মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে সিবিআই আইনজীবী কুণাল ঘোষের বিদেশ যাত্রার বিরোধিতা করেন। তাঁর সওয়াল, 'অত্যন্ত প্রভাবশালী কুণাল ঘোষ। তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশের ব্যাংকে সরদার টাকা রাখার অভিযোগ আছে। তাঁকে বিদেশ যেতে দিলে সমস্যা হতে পারে।'
এই সওয়াল শুনে বিচারপতির মন্তব্য, 'সিবিআই কবে শেষ করবে তদন্ত? ট্রায়াল হচ্ছে এখনও? সেটাও হয়নি, অভিযুক্তদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে? উনি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যাবেন। কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে সারদা-কাণ্ডের বড়সড় অভিযোগ আছে জানি। উনি পড়াতে যাচ্ছেন তাই বিদেশ যাত্রার অনুমোদন দেওয়া হবে।'
বিদেশ যাত্রার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে মামলা কুনাল ঘোষের (Kunal Ghosh)। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে (Calcutta High Court) মামলা। ১০ তারিখ মামলার পরবর্তী শুনানি। তৃণমূল মুখপাত্রের আবেদন, '১০ দিনের জন্য সেমিনারে যোগ দিতে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার অনুমতি দিক মহামান্য আদালত।' সারদা চিটফান্ড-কাণ্ডে (Sharada Case) জামিনে থাকা কুণালের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কোর্টের।
তাঁর পাসপোর্ট এখনও জমা রয়েছে কোর্টে। আজ মামলা ওঠে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে। সিবিআই জানায়, তাঁকে বিদেশ যেতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা, সেটা লিখিত ভাবে জানাতে চায় এজেন্সি। তাই সময় চাওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। এদিকে শীতকালীন অবসরের পর সোমবার থেকে ফের খুলেছে হাইকোর্ট। তাই রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে চলতে থাকা একধিক মামলার শুনানি এবং রায়ের দিকে তাকিয়ে আম আদমি।
ইকো পার্কে সঙ্গীতশিল্পী অরিজিত সিংয়ের (Arijit Singh Concert) বাতিল হওয়া কনসার্ট অ্যাকোয়াটিকায় হওয়ার সম্ভাবনা। তৃণমূল মুখপত্র কুণাল ঘোষের ফেসবুক দাবি ঘিরে সেই সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। পাশাপাশি শুক্রবার নাকি অরিজিত সিংয়ের টিম অ্যাকোয়াটিকায় গিয়ে সম্ভাব্য কনসার্টস্থল দেখে এসেছেন। সেখানে আদৌ অনুষ্ঠান করা সম্ভব কিনা, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে টিম অরিজিত। যদিও অ্যাকোয়াটিকাতেই হবে অরিজিত সিংয়ের কনসার্ট এমন একটা দাবি ফেসবুকে করেন তৃণমূলের পরিচিত মুখ কুণাল ঘোষ।
এদিন তিনি বিজেপির আক্রমণকে ভোঁতা করতে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছিলেন। ট্যুইটে কুণাল লেখেন, '১৫ ডিসেম্বর অরিজিত সিং গেরুয়া গেয়েছেন। আর এই মাসের ৮ তারিখ ইকো পার্কের শো বাতিলের জন্য দেওয়া অগ্রিম টাকা ফেরত পেয়েছেন সঙ্গীত শিল্পী। তাহলে গেরুয়া ফ্যাক্টর কীভাবে কাজ করল? ৯ ডিসেম্বর অ্যাকোয়াটিকাকে অগ্রিম টাকা দিয়ে আজ তাঁর টিম পরিদর্শনে গিয়েছেন। অনুষ্ঠান আয়োজনের চূড়ান্ত আবেদন এখনও করা বাকি। বিজেপি খুব নোংরা রাজনীতি করছে।'
একইভাবে ফেসবুকে সরব হয়ে তৃণমূল মুখপাত্র লেখেন,'অরিজিৎ সিং নিয়ে কুৎসা। বিজেপি বলছে, চলচ্চিত্র উৎসবে গেরুয়া গাওয়ার জন্য অরিজিতের অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে ইকো পার্কে। এটি ডাহা মিথ্যা। অরিজিত 'গেরুয়া' গেয়েছেন 15/12/22। আর তার অনুষ্ঠান বাতিলের পর আগাম জমা পাঁচ লক্ষ টাকা ফেরত গিয়েছে 8/12/22। তাহলে গেরুয়া যুক্তি কী করে আসে? সলমনের অনুষ্ঠানের তিন লক্ষ টাকাও ফেরত দেওয়া হয়েছে। অরিজিতের অনুষ্ঠান হবে। তবে অন্য জায়গায়। 9/12/22 অরিজিতের টিম অ্যাকোয়াটিকা বুক করতে টাকা জমা করেছে। আজও পরিদর্শন চলছে। সলমনের টিম মিলনমেলা পছন্দ করলেও অরিজিতের পছন্দ অ্যাকোয়াটিকা। এনিয়ে আনুষ্ঠানিক আবেদন প্রশাসন পায়নি বলেই এখনও খবর। সব ঠিক থাকলে ভালোভাবেই অনুষ্ঠান হবে।
অরিজিৎ বাংলার গর্ব। তাকে নিয়ে বিজেপির রাজনীতি নিন্দার।' খোঁচার সুরে কুণালের প্রশ্ন, 'সলমন খানকে নিয়ে অনুষ্ঠানটিও ইকো পার্কে বাতিল হয়েছে। সেটা মিলনমেলায় হবে। সেটার আয়োজক ছিল বিধাননগরের মেয়রের পুত্র রাজদীপ। কই, বিতর্ক হয় নি তো?'
এদিকে, নাকি টিকিট বিক্রি শুরু হলেও হিডকোর অনুমতি না মেলায় বাতিল বলিউড-টলিউড কাঁপানো অরিজিত সিংয়ের অনুষ্ঠান। প্রশাসনিক এই সিদ্ধান্তকে বিজেপি আবার বলছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে 'রং দে তু মোহে গেরুয়া গাওয়ায়' বাতিল অরিজিতের কনসার্ট? এমন প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। যদিও সরকারি তরফে নিরাপত্তার সমস্যাকে কনসার্ট বাতিলের কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলবেন আমার দল তুলে দিতে হবে, তাহলে আমি ওকে রসগোল্লা খাওয়াবো, দুটো হয় নাকি কখনও। শুক্রবার নাম না করে এভাবেই কি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Justice Abhijit Ganguly) বেনজির আক্রমণ করলেন তৃণমূল (TMC) মুখপাত্র কুণাল ঘোষ? এদিন তৃণমূলের মুখপাত্র (Kunal Ghosh) বলেন, 'আমি দলের একজন সামান্য মুখপাত্র। যদি আমার দল তুলে কেউ বলে, জানি না কে বলেছে। সবাই বলছে কেউ বলেছে, কেউ বলেছে, কেউ বলেছে। জানি না কে বলেছে, কেউ আর নাম বলে না। আমি ধরে নিচ্ছি অরণ্যদেব গাঙ্গুলি। অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলবেন আমার দল তুলে দিতে হবে, তাহলে আমি ওকে রসগোল্লা খাওয়াবো, দুটো হয় নাকি কখনও। কোর্টের উপর, সব বিচারকের উপর আস্থা আছে। কোর্ট আমাদের ভরসা, এরম নয় শুধু কেউ একজন পর্যবেক্ষণ মিডিয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে হিরো সাজার চেষ্টা করছেন। কাউকে আমি ব্যক্তিগত আক্রমণ করছি না।'
এখানেই থামেননি কুণাল ঘোষ, তিনি আরও একধাপ এগিয়ে জানান, কেউ কেউ নাকি আকারে ইঙ্গিতে মুখপাত্র মুখপাত্র বলেন। তাহলে আমরাও বলছি বিচারব্যবস্থাকে সম্মান করি, কিন্তু অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলে কেউ যদি আমাদের দল তুলে কথা বলে, তাঁকে রসগোল্লা খাওয়াবো না। যা পারে করে নিক।
কারও নাম না করেই পরোক্ষে কুণাল ঘোষ আরও বলেন, 'যদি কেউ ব্যক্তিগত উইশলিস্ট চরিতার্থ করতে গিয়ে তাঁর চেয়ারের অপব্যবহার করে, তাহলে সেটা চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক। একা কেউ করছেন না, গোটা বিচারব্যবস্থা, সব বিচারক, তাঁরা দিনরাত মানুষকে ন্যায়-বিচার দিচ্ছেন। কিন্তু যদি কেউ দেখাতে চান, আর কেউ বিচার করছে না, আর কোনও কোর্ট নেই, তিনি মঙ্গলগ্রহ থেকে এসে অরণ্যদেব সাজছেন, এটা ঠিক হচ্ছে না। এটা কী ভাষা! আমি দল তুলে দিতে বলবো, মামারবাড়ি নাকি এটা?'
তাঁর দাবি, 'এই ভাষাগুলো শুনলে বোঝা যাবে যিনি বলছেন, তাঁর ভিতরটা কোন রাজনৈতিক রঙে রাঙানো। আমরা আদালতকে সম্মান করি, প্রত্যেক বিচারক-বিচারপতির প্রতি পূর্ণ সম্মান রয়েছে। কিন্তু আদালত যেটা ঠিক সেটার বিচার করবে, যেটা ভুল, সেই ভুল বলে দেবেন, অর্ডার দেবেন। তাঁরা তাঁদের নির্দেশ জানিয়ে দেবেন। তার বদলে যদি কোথাও কোথাও দেখা যায় যে কেউ কেউ উইশ লিস্ট পর্যবেক্ষণ-সংলাপের আকারে সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে ছড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাহলে সেটা চরম দুর্ভাগ্যজনক। কোনও ব্যতিক্রম একজন যদি দেখাতে চান তিনি অরণ্যদেব হতে চাইছেন, তাহলে সেটা বিচারব্যবস্থার প্রতি চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক।'
এখন প্রশ্ন উঠছে কুণালে মন্তব্যে উঠে আসা 'বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা' এবং 'অরণ্যদেব গাঙ্গুলি' কি হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদি কোনও নির্দিষ্ট কোর্ট বা বিচারপতির নাম এদিন একবারের জন্যও উল্লেখ করেননি তৃণমূল মুখপাত্র। কিন্তু শুক্রবার বেনামী আবেদনপত্র মামলার শুনানিতে শিক্ষা সচিবের এজলাসে উপস্থিতির মধ্যেই হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, 'বিধানসভার দলনেতা হন মুখ্যমন্ত্রী, আর লোকসভায় দলনেতা প্রধানমন্ত্রী। আমি ইলেকশন কমিশনকে বলব তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য, দল হিসাবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব নির্বাচন কমিশনকে। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছা করা যায় না।'
তারপরেই নাম না করে তৃণমূলের মুখপাত্রর মুখে 'অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলবেন আমার দল তুলে দিতে হবে, তাহলে আমি ওকে রসগোল্লা খাওয়াবো, দুটো হয় নাকি কখনও' মন্তব্য ঘিরে চর্চা রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠছে কে এই অরণ্যদেব গাঙ্গুলি? কুণাল ঘোষ কি ঘুরিয়ে পরোক্ষে বেনজির আক্রমণ করে বসলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারব্যবস্থাকে?
তবে কুণাল ঘোষের এই মন্তব্যকে সমালোচনার সুরে বিঁধেছেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনি বলেছেন, 'মানুষ কাদের বলে, যার মান আর হুঁশ দুটি আছে। কুণাল ঘোষের কোনওটাই নেই। একটা মানুষের পরিচয় হয় শিক্ষা এবং সংস্কৃতি দিয়ে। শিক্ষার প্রসঙ্গে এলে কুণালবাবু বোধহয় মাধ্যমিক পাশ। তবে পাশ না ফেল জানি না, ক্লাস টেন লেখা এফিডেভিটে। উনার সংস্কৃতি নিয়ে বললে সারদায় জেল খাটা আসামি, বাংলার পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করেছে। এই ধরনের মানুষের থেকে কী মন্তব্য আশা করেন? কুণালবাবুর বোঝা উচিৎ কোথায় থামতে হবে। আমার মনে হয় কোর্ট এই বিষয়গুলো নোটিশে নিয়ে আদালত অবমাননার জন্য উনি জেলে যাবেন।'
আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, 'কুণাল ঘোষকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিৎ এবং আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে কোর্টে তোলা উচিৎ। কোন সাহসে উনি এ কথা বলছেন! কুণাল ঘোষ বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে বিচারপতিকে হুমকি দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই কাজ করেছেন।' অপর এক আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী জানান, এই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য কুণাল ঘোষ বাইরে আছেন। উনি যে দল করেন সেই দল, সারাজীবন ওকে জেলে রাখতে চেয়েছিল।'
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'আশা করবো এসব মুখপাত্রদের বিরুদ্ধে আইনের মধ্যে থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নেবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যাতে অন্য কেউ সরকারি কাজে বা নিয়োগে হস্তক্ষেপ করার আগে পাঁচবার ভাববেন।' সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, 'বিচারপতির পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনও দল সরকারের নামে সংবিধান-বিরোধী কাজ করে, তাহলে সেই দলের সাংবিধানিক ভিত্তি, এমনকি প্রতীক প্রশ্নের মুখে পড়ে।'
প্রসূন গুপ্ত: জন্মদিনকে খুব একটা আমল না দিয়ে সমর্থকদের ভালোবাসা জানিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নেমে গিয়েছেন সংগঠনের কাজে। বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক যাবেন জেলায় জেলায়। সম্প্রতি চোখের অপারেশন করে আমেরিকা থেকে কলকাতায় ফিরেছেন তিনি। কিন্তু জানা যাচ্ছে নিয়মিত অফিস করছেন। প্রতি জেলার সংগঠনের হাল হকিকতের খবর নিচ্ছেন। এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা দিচ্ছেন স্থানীয় নেতাদের। এরই মধ্যে তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারে গিয়েছিলেন বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দিতে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার কর্মী সমর্থক ও নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, ইচ্ছা হলেই প্রার্থী হতে পারবে না কেউ। বুথস্তরে আলোচনা হবে এবং সেখান থেকে প্রার্থীর নাম যাবে কেন্দ্রীয় অফিসে, সেখানে চূড়ান্ত হবে প্রার্থী। প্রার্থী বাছাইয়ে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে জানান তিনি।
আগামী ১৫ নভেম্বর তিনি ফের যাচ্ছেন নিজের লোকসভা কেন্দ্রে। ১৭ এবং ১৮ নভেম্বর তাঁর মেঘালয়ে জনসভা আছে। ওখানেই দলীয় নেতা এবং বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে খবর। ২৭ এবং ২৮ নভেম্বর তিনি দলীয় কাজে যাবেন দিল্লিতে। এই সময়ে অবশ্য পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনও থাকে। যদিও এই প্রতিবেদককে রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন জানালেন, এই সময়ে অধিবেশন থাকার কথা কিন্তু কিন্তু এখনও শীতকালীন অধিবেশন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ঠিক মতো পার্লামেন্ট না ডাকার অভিযোগ কার্যত করেন তৃণমূল সাংসদ। এদিকে, ১১ নভেম্বর এসে গেলেও অথচ এখনও জানতেই পারা যাচ্ছে না কবে বসবে সংসদ।
অবশ্য যদি ওই সময়ে সংসদ বসে তবে অভিষেক তো দিল্লিতেই থাকছেন। ৩ ডিসেম্বর অভিষেক যাচ্ছেন কাঁথ। ইতিমধ্যে জানা গেলো শুক্রবার নাকি পূর্ব মেদিনীপুরের গোকুলনগরে বিইউপিসির মঞ্চে সভা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই নাকি সেই মঞ্চ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ দাবি করেছেন এটি বিজেপির কীর্তি। তিনি দাবি করেছেন পুলিশ বিষয়টি দেখুক এবং ব্যবস্থা নিক। যদিও এই দাবি অস্বীকার করেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এবারে অভিষেক কী বলেন সেটাই দেখার। ১৭ ডিসেম্বর নদিয়ার রানাঘাট যাচ্ছেন অভিষেক। এরপর নতুন বছর পড়লে জেলায় জেলায় সফর করবেন অভিষেক।
প্রসূন গুপ্ত: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যখনই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তখনই তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এই তরজা বেশিরভাগ সময়ে স্বাস্থ্যকর থাকেনি। এমনটিও দেখা গিয়েছে, শুভেন্দু মমতা বা অভিষেককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলেছেন, তার ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই কুণাল আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দুকে। এ কি এক অলিখিত নিয়ম? বোধহয় না, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি আস্থাভাজন কুণাল ঘোষ। এমনটিও দেখা গিয়েছে, শুভেন্দু কোথাও সভা করেছেন তো তার কিছুদিনের মধ্যে সেই স্থানে সভা করতে গিয়েছেন কুণাল।
কুণালের অনেক দায়িত্ব। একদিকে সারা বাংলার বিভিন্ন জেলায় তিনি যান। মূলত প্রচারের কাজটি সারেন। এছাড়া দলীয় মুখপাত্রর দায়িত্বে যেই থাকুন না কেন আসলে সম্পাদকীয়র কাজটি কুণালই করে থাকেন। এছাড়া পৌর বা পুরসভার ভোটেও তাঁকেই বিভিন্ন জেলায় যেতে দেখা গিয়েছে। এবারে দায়িত্ব পূর্ব মেদিনীপুরের। কোনও লিখিত পদ নয় কিন্তু দল (পড়ুন অভিষেক) তাঁকেই পঞ্চায়েতের সংগঠন ও প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছে।
কুণালের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছিল কালীপুজোর রাতে। তিনি জানিয়েছিলেন পয়লা ও দোসরা নভেম্ববর তিনি বিশেষ জেলার কাজে যাচ্ছেন। ফিরবেন হয়তো ৩ নভেম্বর। কিন্তু ফিরেই আবার জেলা সফর। শেষ পর্যন্ত জানা গেল সাম্প্রতিক ভোটের আগে ও পরে তিনি নিয়মিত গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরে। সম্প্রতি নন্দীগ্রামে অভিমান করে থাকা দলের নেতা শেখ সুফিয়ানকে ডেকে এনে সভা করেছেন তিনি। ওই সভায় চোখে লাগার মতো ভিড় দেখা গিয়েছে।
অন্যদিকে কোনও সময়েই শুভেন্দু অধিকারী আমল দেন না কুণালকে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিরোধী নেতা সটান বলে দেন, 'ওই লোকের কথার উত্তর দিতে তাঁর রুচিতে বাঁধে।' কিন্তু বাস্তবে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন কিন্তু আরও একবার বিজেপির কাছে লোকসভার আগে সেমিফাইনাল। দিল্লি থেকে কড়া নির্দেশ, পঞ্চায়েতে ভালো ফল করতে হবে। ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের লড়াই এখন শুভেন্দু বনাম কুণাল। কুণাল দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন হলদিয়ার অফিসে, যা একসময়ে শুভেন্দুর চারণ ভূমি ছিল।
আমেরিকায় চোখের অস্ত্রোপচার সেরে কলকাতায় ফিরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এই মাসের মাঝামাঝিই তাঁর চোখের অস্ত্রোপচারের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তাই নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষও করেন। অবশেষে কালীপুজোর (Kali Puja 2022) দিন চিকিৎসা করিয়ে নিজের শহরে ফিরলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক। বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা না বললেও, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ২০১৬ সালে বহরমপুর থেকে কলকাতা ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি। তখনই চোখে গুরুতর আঘাত পান তিনি।
সেই সময় বাঁ চোখের নিচে গালের অরবিট বোনে গুরুতর আঘাত পান অভিষেক। প্রথমে অরবিট ফ্লোর রিপেয়ারিং হয়। তার জন্য তখন চিকিত্সক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৈরি করা হয় ১২ জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল। অরবিট বোনের অপারেশনের পরবর্তী অপারেশন হয় ও তারপর হয় প্লাস্টিক সার্জারি। তারপর কেটে গিয়েছে ৬টি বছর। ২০২২-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ অস্ত্রোপচার করতে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
গত শনিবার ট্যুইটারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখের ছবি, সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ। ট্যুইটার ও ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক লেখেন, 'যাঁরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কুৎসায় অভ্যস্ত, এমনকি তাঁর চোখের চিকিৎসা নিয়েও নানা কথা রটান,তাঁরা ভাল করে ছবিটা দেখুন। ওর চোখের আজকের অবস্থা।'
প্রসূন গুপ্ত: প্রতি বছর দুর্গাপুজোর শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে বিজয়ার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এবার কিন্তু পুজোর বেশকিছু দিন আগে থেকেই অভিষেকের কোনও সংবাদ নেই। শোনা গিয়েছে তিনি বিদেশ গিয়েছেন কারণ তাঁর চোখের সমস্যা। ২০১৬-তে মুর্শিদাবাদে একটি কর্মিসভা থেকে ফেরার পথে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে তাঁর গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। একটি দুধের গাড়ির সঙ্গে অভিষেকের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। তাতে করে অভিষেকের গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে রাস্তার এক পাশে গিয়ে পড়েছিল। দুর্ঘটনায় অভিষেককে রক্তাক্ত এবং অচৈতন্য অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেখা যায় তাঁর বাঁ দিকের চোখের নিচের হাড় ভেঙে গিয়েছে এবং বাঁ চোখ খুব খারাপ ভাবে জখম। অপারেশনের পর অভিষেক দুবাই এবং সিঙ্গাপুরে যান আরও চিকিৎস্যর জন্য। পরে বেশ কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন। উদ্বিগ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নবান্নে এই খবর জানান এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অভিষেকের খবর নিয়েছিলেন।
এরপর ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হন অভিষেক। জিতেও আসেন ২০১৯-র লোকসভা ভোট। ২০২১-এর বিধানসভার ভোটে তিনিই ছিলেন তৃণমূলের অন্যতম প্রচারক। একুশের ভোটে জেতার পর অভিষেক জানান তাঁর চোখের সমস্যা রয়েই গিয়েছে। তিনি চশমা ছেড়ে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করছিলেন। অনেকক্ষণ বেশি কিছু পড়তে ও দেখতে পান না। চোখ দিয়ে জল গড়ায়, নয়তো প্রচণ্ড মাথাব্যথা।
বিদেশি চিকৎস্যকরা জানান ওই লেন্স ব্যবহার করা যাবে না বরং চশমা পড়তে হবে। না হলে চোখ লাল হবে দৃষ্টিশক্তি ক্রমেই ক্ষীণ হবে। অবশ্য এরই মধ্যে একাধিক দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূলের কয়েকজন নেতা এবং অভিষেকের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কেন্দ্রীয় সংস্থার তলবে হাজিরা দিতে কখনও দিল্লি, কখনও বা কলকাতার অফিসে ঢুঁ মেরেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে, আদালত জানিয়েছে বিদেশ যাত্রায় বাধা দেওয়া যাবে না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পুজোর সময়ে তিনি বিদেশে যান। এ নিয়ে সিপিএম-বিজেপি-র মনে অনেক প্রশ্ন এবং কটাক্ষ। এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের।
তবে শনিবার দলের মুখপাত্র এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক একটি টুইটের মাধ্যমে অভিষেকের ছবি দিয়ে সেই কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন। তাঁর এই টুইট নিয়েও তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে সোশ্যাল নেটের লড়াই। কুণাল ঘোষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা চোখের ছবি পোস্ট করে লেখেন, 'যাঁরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কুৎসায় অভ্যস্থ, এমনকি তাঁর চোখের চিকিৎসা নিয়েও নানা কথা রটান, তাঁরা ভালো করে ছবিটি দেখুন। ওর চোখের আজকের অবস্থা। একটি মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম ছিলেন অভিষেক। চোখে ভয়ঙ্কর চোট। কলকাতায়, ভারতের অন্যত্র চিকিৎসা করিয়েছে। সমস্যা কাটেনি। বেশিক্ষণ পড়লে চোখে ব্যথা হয়, মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়, কখনও কখনও ঘুমোতে পারেন না। এত জটিল অবস্থা যে একাধিক জায়গায় চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। তাই এখন আরেকবার চেষ্টা। আমেরিকায় অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। অভিষেক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুক।'
Those inhuman elements, who criticize @abhishekaitc even on his eye treatment and operation, must see today's condition of his eye, which was deeply damaged in an accident.
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) October 15, 2022
He had an operation, now under observation. We all pray for his speedy recovery and normalcy of eyes. pic.twitter.com/EoqiBfNdg0
রাজ্য বনাম রাজভবন সংঘাত এখন অতীত। বরং এই মুহূর্তে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর (Jagdeep Dhankhar) বনাম রাজ্য তরজা আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বাংলার (Bengal) আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্যপাল থাকার সময় একাধিকবার উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন জগদীপ ধনকর, আর এখন উপরাষ্ট্রপতি হয়েও যে সেই অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি তার প্রমাণ তিনি নিজেই দিলেন। 'বাংলার আইন-শৃঙ্খলা (Law And Order) তলানিতে ঠেকেছে। বাংলায় আইন নয়, শাসক দলের আইন চলে' বলে সরাসরি তোপ দাগলেন তিনি।
রাজধানী নয়াদিল্লিতে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে ওঠেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর। আর সেখানেই পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগে রাজ্য সরকারকেই দুষলেন তিনি। বাংলার রাজ্যপালের পদ থেকে এখন দেশের উপরাষ্ট্রপতির আসনে বসেছেন জগদীপ ধনকর, কিন্তু বাংলার দিকে যে তাঁর কড়া নজর সর্বদাই বজায় রয়েছে, তা কার্যত এদিন স্পষ্ট করেন তিনি।
অবশ্য উপরাষ্ট্রপতির করা মন্তব্যের পাল্টা জবাব পাওয়া গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকেও। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, "এই ধরণের কথা বলে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন তিনি। ওঁর প্রমোশন হয়েছে বাংলার নামে কুৎসা এবং তৃণমূলের বিরোধিতা করে। তাই তিনি অভ্যাসবশত বলে ফেলেছেন। ওঁকে পরিষ্কার বলতে চাই, রাজ্যপাল পদটিকে উনি কলুষিত করেছেন, দয়া করে উপরাষ্ট্রপতি পদকে আর কলুষিত করবেন না, এটি একটি সাংবিধানিক পদ। আর যদি উনি তা আরম্ভ করেন তাহলে নিশ্চই তাঁকে রসগোল্লা খাওয়াব না।"
প্রসঙ্গত, উপরাষ্ট্রপতি পদে বসার পর এই প্রথমবার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে মন্তব্য করলেন জগদীপ ধনকর। কিন্তু সেটিও তীব্র সমালোচনাসূচক হওয়াতে তা নিয়ে স্বভাবতই বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেছে রাজ্যের শাসকদল শিবির।
পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapur) ভগবানপুরে তৃণমূলের (TMC) বিজয়া সম্মিলনী ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh), তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর সামনেই বিক্ষোভে সামিল ছিলেন কর্মী-সমর্থকরা। জেলাস্তরে সাম্প্রতিক সাংগঠনিক রদবদলের প্রতিবাদ করেন তাঁরা। পাশাপাশি কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণ মাইতির নাম কেন আমন্ত্রণের নিচে? সেই প্রশ্নের জবাব চেয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকদের মুখে অভিজিৎ দাস নামে এক তৃণমূল নেতার নাম উঠে এসেছে।
এই অভিজিৎ দাস দলে সাংগঠনিক ভাবে সক্রিয় না হয়েও কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে? প্রশ্ন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। অভিজিৎ দাস নাকি চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীকে একুশের ভোটে হারানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। এই অভিযোগ করেছেন তরুণ মাইতির অনুগামী তৃণমূলে কর্মীরা। বিক্ষোভ থামাতে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন কুণাল ঘোষ এবং সোহম চক্রবর্তী। কথা বলেন বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'আমি আর সোহম ওদের দাবি-দাওয়া শুনেছি। নতুন কোনও কমিটি গঠন হলে একটু ক্ষোভ-বিক্ষোভ জন্মায়। সঠিক সময়ে ওদের বক্তব্য শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাব। এটাও একটা তৃণমূল, যারা কর্মীদের দাবি-দাওয়া শুনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে।'
তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী বলেন, 'বিষয়টি অনভিপ্রেত। এই অনুষ্ঠানে জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। আমরা ওদের বলেছি এই মঞ্চ এভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানোর জায়গা নয়। ওরা পরে বুঝে অনুষ্ঠানে অংশও নিয়েছে।'
দুর্গাপুজোর দিন সাতেক আগে বিজেপির (BJP) সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। শনিবার তিনি বিজেপির হেস্টিংস অফিসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে (Sukanta Majumder) পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন টলিউডের মহাগুরু। তিনি দাবি করেন, 'আগেও বলেছি এখনও বলছি অন্তত ২১ জন তৃণমূল বিধায়ক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সংখ্যাটা ২১-র কম নয় এটা বলতে পারি।'
এদিন তিনি দুর্নীতিবিদ্ধ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন। সম্প্রতি এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-সিবিআইয়ের অতি সক্রিয়তায় প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন নেই। শনিবার হেস্টিংস অফিসে বসে মিঠুন জানান, মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাত নেই কারণ কোর্ট নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে। বঙ্গ বিজেপির হাত নেই কারণ কোর্টকে গিয়ে ওরা বলেনি তদন্তের কথা। যদিও আপনার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ না থাকে, তাহলে আপিনি নিশ্চিন্তে ঠাণ্ডা ঘরে ঘুমোন। এদিন এই বার্তাই তৃণমূলের নেতাদের দিয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী।
যদিও মিঠুনের এই মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'উনি দক্ষ অভিনেতা। বিজেপির স্ক্রিপ্ট পড়ে বলছেন। উনি ঘুম থেকে উঠে আয়নায় নিজের মুখ দেখেন। তাই সবাইকে দলবদলু মনে হয়, পৃথিবীকে সুবিধাবাদী মনে হয়। উনি আসলে জলঢোরা।' তাঁর কটাক্ষ, 'মিঠুন চক্রবর্তী বারবার রাজনীতিতে ভেসে থাকার চেষ্টা করছেন। উনি সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ, বিশ্বাসঘাতক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওকে ডেকে সাংসদ করছেন। তখন বলছেন মমতা দিদি আমার বোন আর এখন পিঠে ছুড়ি মারছেন। এটা বাংলার কোনও ভাই, কোনও বোন বরদাস্ত করবে না।'
আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সঙ্গে যোগ রয়েছে সন্দেশখালির দুই তৃণমূল নেতার। জড়িত থাকতে পারেন রাজ্যের এক মন্ত্রীও। বৃহস্পতিবার এই অভিযোগ তুলেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের এই অভিযোগকে ভোঁতা করতে আসরে তৃণমূল। কাঁচের ঘরে বসে বাইরে ঢিল ছুড়বেন না সুকান্তবাবু। এভাবেই কটাক্ষের সুরে বিঁধেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
তিনি বলেন, 'আজগুবি কথা বললে হবে না। আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। আর সুকান্ত মজুমদারকে বলতে চাই, আপনার দলের এক নেতা গোল্ড লোনের ব্যবসা করেন। সোনার বিনিময়ে ঋণ প্রদানের ব্যবসা। ইতিমধ্যে হাফ ডজনের বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি খুলে ফেলেছেন সেই নেতা। সিবিআই-ইডি একবার খতিয়ে দেখুক সেই ব্যবসায় ওই নেতার নগদের লেনদেন হচ্ছে না তো? কাঁচের ঘরে বসে বাইরে ঢিল ছুড়বেন না।'
এই প্রসঙ্গে অপর এক তৃণমূল নেতা জয় প্রকাশ মজুমদারের খোঁচা, 'বিজেপির রাজ্য অফিস এখন তদন্তকারী সংস্থার অফিস হয়ে গিয়েছে জানি না। হয় ওটা তদন্ত সংস্থা নয়, তদন্তকারী সংস্থা ওদের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্ত করছে।'
তাঁর প্রশ্ন, 'একটা রাজনৈতিক দলের এহেন অভিযোগ তোলার সূত্র কী? রাজনৈতিক দল তো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে। সেই কর্মকাণ্ড কেমন ছিল আমরা নবান্ন অভিযানের দিন দেখেছি। বিজেপি আসলে চাইছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, গণতন্ত্র বিলোপ করে দেওয়া। রাজ্য বিজেপির কাছে এই অভিযোগ সংক্রান্ত যে নথি আছে, সেটা তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দিক।'