
রাজ্যের দুই প্রান্তের সরকারি হাসপাতালে ভিন্ন দুটি ছবি। একদিকে বেড না থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে শিশু মারা যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ৯ টি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। অন্যদিকে রাজ্যের অন্যতম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এ ধরা পড়ল অন্য চিত্র।
এসএসকেএম হাসপাতালে শিশুদের জন্য রাখা বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। তিনি শুক্রবার সকাল থেকেই অসহ্য বুকে ব্যথা অনুভব করেন। আর সেজন্যই কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তিন সদস্যের চিকিৎসক দলও তৈরি হয়ে গিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে আরও খবর, এসএসকেএম-এর কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউ-তে ২০টা বেড রয়েছে। যার মধ্যে ১ থেকে ১৭ নম্বর বেড বড়দের জন্য বরাদ্দ। আর ১৮,১৯,২০ নম্বর বেড শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে। ওই ১৮ নম্বর বেডে রয়েছেন কালীঘাটের কাকু। কারণ হিসেবে হাসপাতালের তরফে বলা হয়েছে, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে দ্রুত আইসিইউ-তে দেওয়ার দরকার ছিল। তাই শিশুদের জন্য বরাদ্দ বেডে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে তাঁকে।
কিন্তু হঠাৎ করে এত বুকে ব্যথা? শুক্রবার সকালেই হানা দিয়েছেন ইডির আধিকারিকরা। কাকুকে আজই নিয়ে যাওয়া হবে কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য। ইডির আধিকারিকরা আর সময় নষ্ট করতে চাইছেন না। ইএসআই হাসপাতালেই এই কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা হবে। দুয়ারে ইডি বলেই কি কাকুর বুকের ব্যথা বেড়ে গিয়েছে? এমনই প্রশ্ন করছেন রাজনৈতিক বিরোধী শিবির।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদে ৯ শিশু গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছে। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের স্পেশাল নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটস বা এসএনসিইউ অকেজো হয়ে পড়ায় সেখান থেকে থেকে নবজাতকদের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে ট্রান্সফার করা হয়। একসঙ্গে এত শিশুর মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে 'রেফার রোগ'? তা নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
গত ১৪ জুলাই, আদালতের নির্দেশ ছিল তিন দিনের মধ্যে কালীঘাটের কাকুর গলার স্বরের নমুনা জমা দিতে হবে। এরপর দুমাস কেটে গিয়েছে। এখনও সেই নমুনা জমা দেওয়া অনেক দূর। সংগ্রহ করাই হয়নি।
ইডি সূত্রে অভিযোগ, আদালত ওই নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে সরকারিভাবে জেল হেফাজতে থাকলেও কার্যত টানা ২-৩ দিনও জেলে থাকেননি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। স্ত্রী মারা যাওয়ায় ১৭ দিন প্যারোলে মুক্ত ছিলেন। এরপর অসুস্থ ছিলেন তিনি। সেই কারণেই নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
ইডি সূত্রে দাবি গত ৩০ মে গ্রেফতারির পর তাঁর দুটি মোবাইল থেকে একাধিক ভয়েস কল রেকর্ড পাওয়া যায়। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সেই ভয়েস কল গুরুত্বপূর্ণ বলে আদালতে দাবি করেন ইডির আইনজীবীরা। গত ৭ জুলাই, তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহের আবেদন করে ইডি। আদালতের নির্দেশের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন কালীঘাটের কাকু। এরপর স্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৭ দিনের প্যারোল পান তিনি। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ফিরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জেলে ফিরলেও ফের এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
মণি ভট্টাচার্য: 'কাকুর ক্যালমা,' কে কাকু? সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এই কাকু সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে ক্ষমতাশালী কাকু। যিনি তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভীষণ ঘনিষ্ঠ, সে কথা কাকু নিজেও স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি তিনি রাজ্য শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু এরপরই হয়েছে কেলেঙ্কারি, ইডির পেশ করা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কালীঘাটের কাকু অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা বলেছেন ইডি। পাশাপাশি চার্জশিটে একই অনুচ্ছেদে অভিষেক ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সম্পর্ক ও সুজয় কৃষ্ণের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির যোগের কথা রীতিমত ভাবাচ্ছে সব রাজনৈতিক দলগুলিকে। এছাড়া চার্জশিটে ইডির দাবি নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার তছরূপের সঙ্গে জড়িত তিনি। এবং সেই সমস্ত টাকা সাদা করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগও করতেন তিনি।
সুজয় কৃষ্ণ অর্থাৎ কালীঘাটের কাকুর গ্রেফতারির ঠিক ৫৯ দিনের মাথায় ১২৬ পাতার একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট আদালতে পেশ করেছে ইডি। সেখানে ৭৫ নম্বর পাতায়, কে এই সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র অর্থাৎ কালীঘাটের কাকু! এই পরিচয় ব্যক্ত করতে ইডির উল্লেখ, কালীঘাটের কাকু অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত আর্থিক বিষয়টি দেখভাল করেন। এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সমস্ত নির্দেশ তিনি মানিক ভট্টাচার্য সহ নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সমস্ত মিডল ম্যানকে পৌঁছে দিতেন। ঠিক তাঁর পরেই একই অনুচ্ছেদে ইডির উল্লেখ যে, ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেট অনুত্তীর্ণদের পাস করিয়ে দেওয়া এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩২৫টি নামের তালিকা কালীঘাটের কাকুই মানিক ভট্টাচার্যকে দিয়েছিলেন। একই অনুচ্ছেদে এই দুটি বিষয়ের উল্লেখ থাকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে তবে কি নিয়োগ-দূর্নীতি সম্বন্ধে কালীঘাটের কাকুর কেরামতি কিংবা ক্যালমা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন! যদিও ইডির দেওয়া চার্জশিটে এমন কোনও উল্লেখ নেই, যেখানে স্পষ্ট হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটের কাকুর কেরামতি অর্থাৎ নিয়োগ সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা জানতেন।
ইডি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নামার পর, ধাপে ধাপে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল নেতা থেকে মন্ত্রীরা। একদিকে যখন মানিক ভট্টাচার্য, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়রা গ্রেফতার হয়েছেন, ঠিক তেমনও গ্রেফতার হয়েছেন সৃজয় কৃষ্ণ ভদ্র ও কুন্তল ঘোষ ও তাপস মন্ডলরা। ইডি তার দেওয়া চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রই নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম কান্ডারী। এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রই, কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি কে কত টাকা পাবে! কিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া আয়োজন করা হবে! এবং কত টাকা কার থেকে নেওয়া হবে! সেই বিষয়েও দেখভাল করতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ইডির দেয়া চার্জশিটে উল্লেখ আছে ৩২৫ জন, ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া এবং তাদের নিয়োগের জন্য মাথাপিছু এক লক্ষ টাকা করে নিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ এবং ওই টাকার একটি অংশ পৌঁছে গিয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যের কাছেও, এবং সবটাই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নির্দেশেই হয়েছিল বলে ইডির উল্লেখ।
ইডির দাবি তিনি রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক চরিত্র নয়, এমনকি শিক্ষা দফতরেরও কোনও আধিকারিক কিংবা কেউ নন। তবে কিভাবে উনি এত ক্ষমতাবান হলেন! যেখানে বিভিন্ন পরীক্ষার্থীরা তার কাছে চাকরির জন্য সুপারিশ চাইতেন। এমনকি ইডির দাবি প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ঘরে তার প্রতিনিয়ত এবং বিনা বাধায় আসা যাওয়া ছিল।
এখানেই শেষ নয় ১২৬ পাতার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে ইডির উল্লেখ, এম এস ওয়েলথ উইজার্ড প্রাইভেট লিমিটেড ও লিপস এন্ড বাউন্স প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে, এই নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা বিভিন্নভাবে শেয়ার কিনে, বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে, সাদা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারও একটি খতিয়ান চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে। যদিও এই চার্জশিট তত্ত্ব উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, চার্জশিট মানেই অপরাধ প্রমাণ হওয়া নয়। এ বিষয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, 'ইডির চার্জশিট প্রমান করে না তারা অন্যায় করেছে। চার্জশিট প্রাথমিক পর্যায়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে শুনানিতে গিয়ে এই ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে।'
যদিও কোনও ভাবেই হাল ছাড়ছে না ইডি, পাশাপাশি এই চার্জশিটের পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কোন ক্ষমতা বলে, কিংবা একটি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও কোন ক্ষমতায় তিনি এই নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম পরিচালক ছিলেন? যদি কেবল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হবার জন্য এত ক্ষমতাবান তিনি হয়ে থাকেন, তবে কাকুর এহেন ক্যালমা কি সত্যিই অভিষেক জানতেন না! এ প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।
এবার আরও বিপাকে 'কালীঘাটের কাকু'। বৃহস্পতিবার তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চের নির্দেশ, নিম্ন আদালতের নির্দেশে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে ইডি। ফলে এটা স্পষ্ট যে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের আবেদন মঞ্জুর করল না কলকাতা হাই কোর্ট। কণ্ঠস্বর নমুনার পরীক্ষার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয় উচ্চ আদালত। তদন্তের স্বার্থে এখনই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না আদালত।
হাই কোর্টের মতে, তদন্তের এই পর্যায়ে এসে আদালত নমুনা সংগ্রহের উপর কোনও বাধা দিতে চাইছে না। তবে এই নমুনা তথ্যপ্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হবে কি না, পরবর্তী কালে আদালত তা বিবেচনা করবে।
বিচারপতি ঘোষের পর্যবেক্ষণ, নমুনা পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে? কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারকের নির্দেশের উপর কেন হাই কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে, তা পরিষ্কার নয়! তদন্তের প্রয়োজনের স্বার্থে এই নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। বেআইনি ভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হলে তা নিয়ে এই আদালতের মতামত থাকতে পারে। কিন্তু তদন্তের প্রয়োজনে কোনও নমুনা সংগ্রহের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করবে না। পাশাপাশি, বিচারপতি ঘোষ জানান, এটা তথ্যপ্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু ইডি কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে।
ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজির সওয়াল, সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ কী ভাবে হবে, তা বোধগম্য নয়। প্যারোলে মুক্ত হওয়ার পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন। এসএসকেএম হাসপাতালে রয়েছেন। এই মামলায় এই নমুনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেলের মধ্যে থাকলে নমুনা সংগ্রহের কাজ করতে পারবে ইডি। হাই কোর্ট জানায়, এ নিয়ে আদালত কোনও নির্দেশ দেবে না। নির্দিষ্ট বেঞ্চে গিয়ে আবেদন করতে পারবে ইডি।
দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন (Under Treatment) ছিলেন। অবশেষে সোমবার রাত ১টায় মৃত্যু হল কালীঘাটের কাকুর (Kalighat Kaku) স্ত্রী বাণী ভদ্রের। রাজ্যে শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে সম্প্রতি ইডির (ED) হাতে গ্রেফতার হয় কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত ৩০ মে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। বর্তমানে প্রেসিডেন্সি সংশোধানাগারে রয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন সুজয়।
নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্তের মধ্যে সুজয়ের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, ‘কাকু’র স্ত্রী অসুস্থ। স্ত্রীর দেখাশোনা করেন সুজয়। এর মধ্যে সুজয়ের জামিনের আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। ফলে এর মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে দেখাও হয়নি তাঁর।
সুজয়কৃষ্ণকে নিয়ে আদালতে বিস্ফোরক দাবি ইডির (ED)। সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’ কুন্তল ঘোষের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছেন। সেই টাকার পরিমাণ ছিল ৭০ লক্ষ টাকা। সুজয় শুধু একাই টাকা নেননি, তিনি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও টাকা দিতে বলেছিলেন।
আদালতে ইডির তরফে দাবি করা হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি এবং ২ ফেব্রুয়ারি আর্থিক তছরুপ নিয়ন্ত্রক আইনের ৫০ নম্বর ধারা অনুসারে কুন্তলের যে বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়, তাতে তিনি জানান, ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীকে বেআইনি ভাবে টেট পাশ করিয়ে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করাতে চেয়েছিলেন কুন্তল। সুজয় তখন কুন্তলকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, পার্থের সঙ্গে কথা বললেই তাঁর কাজ হয়ে যাবে। এই সময়ে কুন্তল ৭০ লক্ষ টাকা দেন সুজয়কে। সুজয়ের কথাতেই তিনি পার্থকে দেন আরও ১০ লক্ষ টাকা। যদিও ইডি জানিয়েছে, ৩০ মে ‘কালীঘাটের কাকু’ তাদের প্রশ্নের মুখে এই লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অপর ধৃত তাপস মণ্ডলও ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে বেআইনি নিয়োগ সংক্রান্ত যোগাযোগের কথা ইডিকে জানিয়েছিলেন। গত বছর নভেম্বরে তাপসের বয়ান অনুযায়ী, ৩২৩ জন টেট প্রার্থীর তালিকা সুজয়কে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর কাছ থেকে সেই তালিকা পাঠানো হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে। ইডি আদালতে এ-ও জানিয়েছে যে, সুজয় তাঁর বয়ানে দাবি করেছেন, তিনি মানিককে ২০২১ সালের আগে চিনতেন না। মানিকের সঙ্গে তাঁর কোনও রকম যোগাযোগ আগে ছিল না। কিন্তু তদন্তে ইডির হাতে আসা তথ্য অন্য কথা বলছে। মানিকের হোয়াটস্অ্যাপ কথোপকথন ঘেঁটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা দেখেছেন, তাঁর সঙ্গে সুজয়ের যোগাযোগ রয়েছে অন্তত ২০১৮ সাল থেকে। ওই সময় থেকেই মানিককে বহু টেট প্রার্থীর নথি সুজয় পাঠিয়েছিলেন। পাঠানো হয়েছিল মার্কশিট এবং অ্যাডমিট কার্ডও। অর্থাৎ, সুজয় তথ্য গোপন করতে চাইছেন, সত্যি কথা বলছেন না, দাবি ইডির।
মণি ভট্টাচার্যঃ আপাতত কালীঘাটের কাকুর ঠিকানা বেহালা (Behala) ফকির পাড়া নয়। আগামী ১৪ দিনের জন্য কাকু অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের ঠিকানা ইডির (ED) হেফাজত। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অভিষেক-কুন্তলের একটা পৃথক মামলায় সিবিআই অস্বস্তিতে রয়েছেন অভিষেক। এবার কালীঘাটের কাকুর গ্রেফতারি। এতে কি কোনও ভাবে অস্বস্তি বাড়াবে যুবরাজ অর্থাৎ অভিষেকের। যদিও এ ঘটনায় বিজেপি সহ বাদবাকি বিরোধী দল গুলি কাকুকে কান স্বরূপ অভিষেককে মাথা হিসেবেই দাবি করছেন। তাঁদের মত কানে টান পড়ছে, এবার মাথার পালা। যদিও এসব তথ্য উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি 'নবজোয়ার'কে ঢাকতেই এই চক্রান্ত।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে ইডির দফতরে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইডি সূত্রে খবর, অভিযুক্ত এই কাকু তাঁর ফোন থেকে নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কিত সমস্ত চ্যাট তদন্তের গতি বুঝে উড়িয়ে ফেলতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু আগেই তাঁর মোবাইল গুলি বাজেয়াপ্ত করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেই মোবাইলের তথ্য নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা করে সমস্ত কথা তিনি অস্বীকার করেন। এই বিষয়ে উত্তর দিতে চান নি। এছাড়া ইডির সূত্রে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নাম উঠেছে কাকুর ৩ টি কোম্পানির নাম। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল লিপ্স এন্ড বাউন্স। অভিষেকের এই কোম্পানির সিইও ছিলেন কাকু। সে সঙ্গেই এই কোম্পানির জয়েন্ট ডিরেক্টর ছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের পরিবার। অভিযোগ এই কোম্পানি থেকে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।
যদিও কালীঘাটের কাকু বা কুন্তল এই প্রসঙ্গে অভিষেকের মুখে কিন্তু অন্য সুর। অভিষেক জানিয়েছেন তিনি কুন্তলকে চেনেনই না। চেনেন না কাকুকেও। সূত্রের খবর, কালীঘাটের কাকু এবং কুন্তল দুজনেই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা লেনদেনে যুক্ত বলে দাবি ইডির। অভিযোগ কুন্তলকে পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড দিতেন কাকু। কুন্তল ওই তথ্য দিতেন মানিককে। ওই চাকরি বিক্রির টাকা পৌঁছে যেত পার্থ, মানিক ও কাকুর কাছে। গ্রেফতার হওয়ার পর বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তলের মুখে শোনা গিয়েছিল এই কালীঘাটের কাকুর নাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ঘটনায় কিভাবে জড়িয়ে গেল অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
পূর্বেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কুন্তলের চিঠি প্রসঙ্গে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। জেরা শেষে বেরিয়ে এসে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে তোপ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা উল্টো। বিজেপির আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারির মতে, 'কালীঘাটের কাকু অভিষেকের যুবা দলের সংঘটক। এই কুন্তল, শান্তনু, এদেরকে বাছাই করে তুলে আনা। আর ওই কোম্পানির মাধ্যমে এই দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হত। আর ভাগ পৌঁছে যেত অভিষেকের কাছেও।' একই দাবি বাম নেতা শতরুপ ঘোষের। শতরুপের দাবি, 'কালীঘাটের কাকু নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম হোতা। মাথা কে সেটা সবাই জানে। তদন্ত ঠিক চললে এর পরে কালীঘাটের ভাইপো, তারপর কালীঘাটের পিসি সব গারদে যাবে।'
যদিও এমন দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের পক্ষে কুনাল ঘোষের দাবি, অভিষেকের নবজোয়ারে পরিকল্পিতভাবে হামলা আর এই হামলার দায় চাপতেই এই চক্রান্ত করেছে বিজেপি। পাশাপাশি 'নবজোয়ার' প্রকল্পকে ভয় পেয়েছে বিজেপি। কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে দলের বা অভিষেকের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। তাও স্পষ্ট করেন তিনি।
কালীঘাটের (KalighatKaku) কাকুকে কি আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলতে চাইছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সম্প্রতি কালীঘাটের কাকুকে বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি (ED)। শনিবার দীর্ঘ সময় ধরে বেহালায় তাঁর একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সে দিন কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল তাঁকে। এ বার সেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujay Krishna Bhadra) ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হল। ইডি সূত্রের খবর, আগামী মঙ্গলবার (৩০ মে) ইডির দফতরে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের প্রাক্তন কর্মী সুজয়কৃষ্ণের পাশাপাশি গত শনিবার তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য জ্ঞানানন্দ সামন্তের বিবিরবহাটের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাহুল বেরা নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকেও তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর। গত শনিবার বেহালার ফফিরপাড়া রোডে তল্লাশি অভিযানের সময় সুজয়ের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ইডি সূত্রের খবর, সেই মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া কিছু ‘তথ্য’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে তাঁকে।
হাজিরা এড়ালেন কালীঘাটের (Kalighat) কাকু, কিন্তু সিবিআইয়ের (Cbi) চেয়ে পাঠানো নথি আইনজীবী মারফত পাঠালেন নিজাম প্যালেসে (Nizam palace)। কয়েকদিন আগেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল সিবিআইয়ের তরফে। আজ অর্থাৎ সোমবার তাঁকে সম্পত্তির নথি-সহ দেখা করতে বলা হয়েছিল বলেই সূত্রের খবর, কিন্তু সুজয় ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু, তিনি আজকে হাজিরা দিতে এলেন না। তার সমস্ত নথি তার আইনজীবী মারফত নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতর পাঠালেন। আইনজীবী নাজমুল আলম সরকার ১০টা বেজে ৩৩ মিনিটে নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরে এলেন।
সূত্রের খবর, গোপাল দলপতি এবং তাপস মণ্ডলের মুখে উঠে আসে এই ‘কাকুর’ কথা। তিনি বেহালার সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র। তিনিই সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছিলেন তাঁর বসের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ফের সিবিআই অফিসে যাওয়ার কথা প্রসঙ্গে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'সিবিআই ডাকেনি। শুধুমাত্র নথি চেয়েছে। তাই প্রতিনিধি যাচ্ছেন তা জমা দিতে।'