
২০২১-এর পরবর্তী হিংসার স্মৃতি এখনও দগদগে রাজ্যবাসীর মনে। যা নিয়ে জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। সেই মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ। ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত মামলায় আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানির জন্য পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করল কলকাতা হাইকোর্ট।
রাজ্যের মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই মামলা শুনবে নতুন বৃহত্তর বেঞ্চে। এই বেঞ্চে হাইকোর্টের দুই প্রবীণ বিচারপতিকে যুক্ত করা হয়েছে। নতুন বৃহত্তর বেঞ্চে থাকবেন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ, বিচারপতি হরিশ টন্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী। ক্ষতিপূরণ না মেলা পর্যন্ত আইনি লড়াই চলবে জানিয়ে দেন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন পরে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে একগুচ্ছ জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। ওই বছর ১৯ অগস্ট ওই মামলাগুলিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছিল, ভোট পরবর্তী হিংসা’র ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে। যদিও আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠে। ফের আদালতের দ্বারস্থ হন মামলাকারীরা। সেই মামলাতেই নতুন বেঞ্চ গঠন কলকাতা হাইকোর্টের।
কলকাতা হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে বদলির সুপারিশ করল সুপ্রিম কোর্ট। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট দেশের হাই কোর্টগুলির ২৫ জন বিচারপতিকে বদলির সুপারিশ করেন। তার মধ্যে ছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের তিন বিচারপতি। এই তালিকায় আছেন বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শীর্ষ আদালতের সুপারিশ অনুযায়ী, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরীকে পটনা হাই কোর্ট, বিচারপতি শেখার ববি সরাফকে এলাহাবাদ হাই কোর্ট ও লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টে বদলির সুপারিশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এলাহাবাদ থেকে এক বিচারপতিকে কলকাতায় আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কলেজিয়ামের পক্ষ থেকে।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তকে কলকাতায় বদলির সবুজ সংকেত দেয় কেন্দ্র। রাষ্ট্রপতি ভবনের থেকে জারি করা হয়েছিল প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
চাকরিপ্রার্থীদের একটি মামলায় বিভিন্ন জেলায় অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই মামলায় প্রিয়াঙ্কা নস্কর সহ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীকে কাঠগড়ায় তুলে সাক্ষ্যগ্রহণ (Withness) করেন বিচারপতি (Judge) গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। জাস্টিস গাঙ্গুলি জেরা করে জানতে পারে টেস্ট তো দূরের কথা কোথাও কোথাও ইন্টারভিউও ঠিক মত হয় নি। যা শুনে রীতিমত নড়েচড়ে বসে জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়।
এবার শিক্ষকদের ডেকে পাঠালেন জাস্টিস গাঙ্গুলি। সে সময় যারা চাকরি পরীক্ষা দিয়েছিল। এবং ইন্টারভিউ দিয়েছিল। জাস্টিস গাঙ্গুলির নির্দেশে ওই শিক্ষকদের আদালতে আসার খরচ বহন করতে হয়েছিল পর্ষদকে। প্রথম পর্যায়েই, হুগলি, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ ইন্টারভিউ নেওয়া শিক্ষকদের তলব করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতির নির্দেশ মতো হাজিরও হয়েছিলেন শিক্ষকেরা। হাইকোর্টের সার্ধশতবার্ষিকী ভবনের ৯ তলায় তাঁদের সবার মুখে শোনেন ইন্টারভিউয়ের গল্প। বিচারপতির গাঙ্গুলির অভয়ে অনেক শিক্ষক স্বীকার করে নেন, কোনও অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি। কেউ কেউ নাকি জানতেনই না, কীভাবে নেওয়া হয় সেই পরীক্ষা। এরপরে তৎকালীন মানিক ভট্টাচার্যকে ডাকা হয়। তাঁকে এ বিষয়ে জিগ্যেস করা হয়। কিন্তু ওনার থেকে সন্তোষজনক কিছু পাওয়া না গেলেও বিচারপতি স্পষ্ট জানান দুর্নীতি হয়েছে। চাকরি সে পায়নি যে অ্যাপ্টিটিউড টেস্টে পাশ করেছে। চাকরি পেয়েছে যে অ্যাপ্টিটিউড টেস্টে পাশই করেনি।
সেই মামলাতেই শুক্রবার (১২ মে) ৩৬ হাজার প্রার্থীর চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। যাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাঁদের চাকরি বহাল থাকছে। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে মামলাকারী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি।
কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) মামলায় রেহাই চেয়ে আবেদন করেছিলেন বৃহস্পতিবার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjeee) আবেদনে একপ্রকার সাড়া মিলল না বিচারপতি (Judge) অমৃতা সিনহার এজলাসে। ফলে অস্বস্তি থেকেই গেল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এক প্রকার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পথেই হাঁটলেন নিয়োগ মামলায় নতুন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
কুন্তল ঘোষ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলায় কুন্তল ঘোষ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঐ নির্দেশকেই আপাতত বহাল রাখলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। ফলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করতে কোন বাধা রইল না ইডি ও সিবিআইয়ের। সিবিআই সূত্রে খবর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রেহাই চাওয়ার আবেদনের শুনানি ফের সোমবার হবে।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি এই সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও কোন রক্ষাকবচ মেলেনি। ফলে বিচারক অর্থাৎ বিচারপতি বদল হলেও একপ্রকার অস্বস্তিতেই ছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি-সিবিআইয়ের জেরা এড়াতে বৃহস্পতিবার তিনি অমৃতা সিনহার এজলাসে ওই মামলার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। সেই মামলায় জট এখনো কাটল না। ফলে ইডি ও সিবিআই কুন্তল ঘোষ ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে পারবেন।
নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি মূল মামলায় বদল হয়েছে বিচারপতি (Judge)। কিন্তু তাতেও যে লাভ হয়নি সেটা অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) পরে টের পেয়েছেন। কুন্তলের মুখে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নাম আসায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের (ED) সওয়ালে ওই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কুন্তল ও অভিষেককে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার নির্দেশ দেয়। তারপরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় রেহাই চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়। সেই মামলার শুনানিতে অভিষেকের পক্ষের আইনজীবী মনু সিংভি নির্দিষ্ট কারণ দর্শিয়ে ওই মামলা থেকে বিচাপতি বদলের কথা বলেন, মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার বিচারপতি পরিবর্তন হয়।
মামলার দায়িত্ব গিয়ে পরে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। অমৃতা সিনহার এজলাসে ওই কুন্তল ঘোষের মামলার শুনানিতে বিপাকে পড়েন অভিষেক। শুনানির দিন বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, 'সিবিআইয়ের মুখোমুখী হতে আপত্তি কোথায়? যদি কোনো আশঙ্কা না থাকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হবেন না কেন?' এরপরে অভিষেকের পক্ষের আইনজীবী জানায়, ওই মামলাও অভিষেককে পার্টি করা হয় নি। যদিও ওই মামলার শুনানি ওই দিন শেষ হয় নি।
এর মধ্যেই আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ওই মামলায় রেহাই চেয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে আবেদন জানায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ,যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার এই মামলার শুনানি অমৃতা সিনহার এজলাসে।
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি (Judge) পদে শপথ গ্রহণ বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের (TS Sivagnanam)। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার কলকাতার হাইকোর্টের ১ নম্বর ঘরে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল তাকে শপথ গ্রহণ করায়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওই একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
এ বছর ৩১ শে মার্চ পদোন্নতি হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি পদে বসেন তিনি। ২০০৯ সালে চেন্নাই হাইকোর্টে প্রথম অতিরিক্ত বিচারপতি পদে বসেন তিনি। এরপর ২০২১ সালে ২৫ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে বদলি হন। এরপর প্রকাশ শ্রীবাস্তব কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে অবসর গ্রহণ করার পর, বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ করা হয়। টি এস শিবজ্ঞানম কলকাতা হাইকোর্টের ৪৩ তম প্রধান বিচারপতি হলেন। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হবার পর তিনি দ্রুত মামলা সমাধানের কাজ করেছেন।
তবে কি বিচারপতি বদল হয়ে কোনও লাভ হলো না! এবার কার্যত আরও বিপাকে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। ইডি ও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে এড়াতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সংশ্লিষ্ট মামলায় বিচারপতি বদল হয়েছিল। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির দুটি মূল মামলায় নতুন বিচারপতি আনা হয়েছিল অমৃতা সিনহাকে। এবার কার্যত অমৃতা সিনহার এজলাসেই বিপাকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত রমেশ নন্দী ও সোমেন নন্দীর দুটি মূল মামলায় বিচারপতি বদল হওয়ার পর, আজ অর্থাৎ সোমবার ওই মামলা দুটির শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে অমৃতা সিনহার এজলাসে। দু'পক্ষেরই আবেদন শোনার পর হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।
সোমবার সেই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি সিনহা মন্তব্য করলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদন্তে সহযোগিতা করতে সমস্যা কোথায়? যে কোনও কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে তদন্তকারী সংস্থা। এতে অসুবিধা কোথায়?’
এদিন এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ দেয়নি বিচারপতি সিনহার বেঞ্চ। আগামী ১২ মে ফের শুনানি হবে। তবে নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে সিবিআই যে অফিসার বদলের আর্জি জানিয়েছিল তাতে সায় দিয়েছে হাইকোর্ট। এবার থেকে ধরমবীর সিংয়ের জায়গায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার হবেন কল্যাণ ভট্টাচার্য।
অভিষেকের তরিফে আইনজীবী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই মামলায় তো তাঁর মক্কেলকে পক্ষই করা হয়নি। শুধু পর্যবেক্ষণ রাখা হয়েছে। তার ভিত্তিতে কীভাবে জেরা করা যায়?
পাল্টা বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, আপনি নিজে আসেননি কেন? পক্ষ হওয়ার অপেক্ষা কেন করছিলেন? আপনার কিছু আশঙ্কা আছে? তদন্তে সমস্যা কোথায়?
আগামী ১২ মে ফের এই মামলার শুনানি হবে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। সেদিনই স্পষ্ট হবে, আদৌ অভিষেক-কুন্তলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার নির্দেশ দেওয়া হবে কিনা। সেইসঙ্গে, অভিষেককে এই মামলায় পক্ষ করা হবে কিনা তাও বোঝা যাবে ওইদিন।
নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam case) মামলায় বিচারপতি (Judge) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সিবিআই, এক প্রকার ভৎসনার মুখে পড়েছিল সিবিআই (CBI)। এবার নিয়োগ সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ফের ভৎসনার মুখে সিবিআই। রাজ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার তদন্তে সিবিআই-ইডি জুড়ে যায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে। তারপর থেকে একে একে সামনে এসেছে বহু মহারথীদের নাম, জেলের পেছনে রয়েছে ১ ডজনের উপরে নেতা-মন্ত্রী।
এবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ল তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এর নিম্ন আদালতে একাধিকবার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সিবিআইকে একাধিকবার প্রশ্নবাণ ছুড়েছেন বিচারক। এবার হাইকোর্টে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এদিন হাইকোর্টে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আবদুল খালেকের জামিনের মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। সেই শুনানিতে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, যে বা যারা এইসব বেআইনি নিয়োগের মামলায় মূল সুবিধাভোগী, তাঁরা কি গ্রেফতার হয়েছেন?
এদিন নাম না করে দুর্নীতি মামলায় পরেশ অধিকারী ও তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী গ্রেফতার হয়েছেন কিনা, নাম না করে সিবিআইয়ের কাছে কৈফিয়ত চান বিচারপতি। সিবিআইকে বিচারপতির প্রশ্ন, সিবিআই এতদিন তদন্ত করছে, তাহলে মূল সুবিধাভোগীদের কেন গ্রেফতার করা হয়নি? আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এদিন আদালতে অভিযোগ করেন, আবদুল খালেকের নাম এফআইআর বা চার্জশিটে নেই। অথচ তাঁকে ৭৬ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মূল ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই।’
এরপরই তিনি আবদুল খালেককে আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তিনি সিবিআইয়ের থেকে জানতে চান, ‘ধৃত অভিযুক্তর থেকে কী কী তথ্য নথি পাওয়া গেছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘কতদিন সময় লাগবে এই তদন্ত শেষ করতে? ধৃতের নাম চার্জশিটেও নাম নেই। শুধু সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে নাম দেবে বলে কি এইভাবে সিবিআই আটকে রাখার আবেদন করতে পারে?’ শুনানি শেষে বিচারপতি জানান, এই মামলায় যেহেতু জালিয়াতির ধারা যুক্ত হয়েছে, তাই মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রসূন গুপ্তঃ টানাপোড়েনের পরে এই মুহূর্তে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলির (Education Scam) প্রাথমিকের একটি মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিচারপতি (Judge) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Abhijit Ganguly)। তাঁর হাত থেকে এই বিশেষ অংশটি নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওআই চন্দ্রচূড়। মামলা হয়েছিল এই প্রকার যে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর এজলাসে থাকা মামলার বিষয় মুখ খুলেছিলেন একটি বেসরকারি চ্যানেলে। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে এবং কৌঁসুলি ছিলেন অভিষেক মনু সিংভি।
সমস্ত তথ্য জানার পর বিচারপতি চন্দ্রচূড় আদেশ দিয়েছিলেন যে, শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাথমিক একটি মামলার শুনানি আর করতে পারবেন না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বাকি দায়িত্ব ন্যস্ত করবেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। সেই মোতাবেক গত ২৮ এপ্রিল রাতে কোর্ট থেকে বেরোনোর পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিচারপতি। তিনি জানান, এই মামলা ৬ মাসে হবে নাকি ৬০ বছর লাগবে তা তাঁর জানা নেই। তিনি আরও বলেন, তাঁর লড়াই জারি থাকবে ইত্যাদি।
এবারে সম্পূর্ণ বিষয়ের বাকি অংশের কী হবে বা কার এজলাসে যাবে তা তো ঠিক করবেন বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। শনিবার এই বিষয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন যে , যিনিই দায়িত্বে আসুন, তাঁরা চান দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হোক, দু তিন মাসের মধ্যে হোক। অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে যে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিস্পত্তি হোক এবং অপরাধ করলে শাস্তি বিধান হোক।
অন্যদিকে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সরে যাওয়াতে কোথাও ব্যথিত হয়েছে বিরোধী নেতারা। অবশ্য এই বিচারালয়ের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশে থাকার বক্তব্য রেখেছেন প্রায় সব দলই। এবারে দেখা বিষয় এই সংক্রান্ত মামলার দায়িত্ব কে পান।
সুপ্রিম পর্যবেক্ষণের পর দু’টি মামলা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Gangopadhyay) এজলাস থেকে সরাল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। তাঁর দেওয়া দু’টি নির্দেশে স্থগিতাদেশও জারি করল একই দিনে। এর পর বিচারপতি (Judge) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে সব মামলাই সরিয়ে নেওয়া হবে তাঁর হাত থেকে। শুক্রবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের শেষ আদেশ শোনার পর কলকাতা হাইকোর্ট ছেড়ে বাইরে এসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আমার কাছে স্পষ্ট নয়। পড়ে দেখব। আমার ধারণা, এরপর আমার এজলাস থেকে সব মামলাই সরিয়ে নেওয়া হবে।’
রাত ৯টা ৩৯ মিনিটে হাইকোর্ট চত্বর ছেড়ে বাইরে আসেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের অপেক্ষারত প্রতিনিধিরা নানা প্রশ্ন করতে শুরু করেন তাঁকে। এর মধ্যেই একজনের জিজ্ঞাসা ছিল, ‘নিয়োগের কোনও মামলাই কি আর আপনার এজলাসে থাকছে না?’ জবাবে বিচারপতি ওই জবাব দেন। একই সঙ্গে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা মেনে চলাই আমার কাজ। আমরা হাইকোর্টের বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট যা বলবে আমরা তা-ই করব।’
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অবশ্য আরও অনেক কথাই বলেছেন বিচারপতি। এক সময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি বলেছিলেন ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেল। সত্যিই কি মিলে গেল?’ দুপুরে নিজের এজলাসে অল্প সময়ের জন্য বসে ভবিষ্যদ্বাণী সংক্রান্ত মন্তব্যটি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সম্পর্কে করেছিলেন বিচারপতি। বলেছিলেন, ‘কুণাল ঘোষকে আমার প্রণাম জানাবেন। উনি যে এত ভাল ভবিষ্যদ্রষ্টা, তা জানা ছিল না।’ রাতে অবশ্য কুণালের নাম না করেই বিচারপতি বলেন, ‘মিলে গেল তো! ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেল কী করে তা ভেবে আমি সত্যিই আশ্চর্য। আবার বলতে পারি, আশ্চর্য নইও।’ বিচারপতি অবশ্য একই সঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি পালিয়ে যাওয়ার লোক নন। বলেছেন, ‘যত দিন বিচারপতি থাকব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ব। যখন থাকব না, যখন অন্য কাজ করব, তখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ব।’
কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর চলে যাওয়া কি তদন্তকে প্রভাবিত করবে? বিচারপতি জবাব দেন, ‘প্রত্যেকের বিচারের করার স্টাইল আলাদা। আমি যা ৬ মাসে করতে চেয়েছিলাম, সেটা কেউ ৬০ বছর ধরে করবে। তাতে আমারও কিছু বলার নেই। সুপ্রিম কোর্টেরও কিছু বলার নেই।’
বিচারপতি (Judge) গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে চাকরি গিয়েছে কয়েক শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর। এবার তাঁদের মধ্যে থেকেই ১০ জনকে জেরার জন্য ডেকে পাঠাল সিবিআই (CBI)। আগামী সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে তাঁদের এক এক করে ডাকা হয়েছে। এই ১০ জনকে ঠিক কবে নোটিস পাঠানো হয়েছে, সেই সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। হতে পারে কাকতালীয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে দুটি মামলা সরানোর ব্যাপারে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তা নিয়ে যখন গোটা বাংলা আন্দোলিত, ঠিক সেই সন্ধেতেই নোটিস পাঠানো হয়েছে এঁদের। অর্থাৎ বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়া ও পাওয়া নিয়ে যে বিতর্ক ও আলোচনা শুরু হয়েছে সেই তাওয়া তপ্তই থাকবে আপাতত।
বেআইনি ভাবে যাঁরা চাকরি পেয়েছে তাঁদের অনেকেই মিডলম্যান বা ফড়ে ধরেছিলেন বলে অভিযোগ। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন বারাসতের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া প্রধান শিক্ষক তাপস মণ্ডল, প্রাক্তন তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে অয়ন শীলকে। সূত্রের খবর, যারা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছিলেন, অর্থাৎ অযোগ্যদের ডেকে জিজ্ঞাসা করা হবে তাঁরা কাউকে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন কিনা। সেই টাকা নগদে দিয়েছিলেন নাকি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইত্যাদি।
হাইকোর্টের নির্দেশে এভাবে চাকরি যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও হয়েছে। তৃণমূল বারবার বোঝাতে চেয়েছে, দুর্নীতির তদন্ত হোক, কিন্তু কারও চাকরি চলে যাওয়াকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করেন না। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সেকথা বলেছিলেন। এদিকে অযোগ্য বলে যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের অনেকে হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন। তাঁদের পক্ষে সওয়াল করছেন দুঁদে আইনজীবী মুকুল রোহতগি। উল্লেখযোগ্য হল, এই মুকুল রোহতগিও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, যাঁদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের কথা শোনা হয়নি। সকালে নির্দেশ দিয়ে বিকেলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট যাতে রুল ইস্যু করে সেই আবেদনও জানিয়েছিলেন মুকুল রোহতগি।
'অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay) আমাদের ভগবান। বিচারপতি (Judge) হিসেবে আমরা জাস্টিস গাঙ্গুলিকেই চাই।' এমন পোস্টার (Poster), প্ল্যাকার্ড নিয়ে পথে নামলেন সরকারি চাকরি প্রার্থীরা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা সরানোর জন্য হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। শুক্রবার শহরে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে অবস্থানরত উচ্চ প্রাথমিকের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা হাতে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। অধিকাংশ পোস্টারে লেখা ছিল, 'বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে ফেরত চাই।'
অবস্থানরত চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, নিয়োগ দুর্নীতিতে ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া সোজা রেখে লড়াই করে গিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের চাকরি গিয়েছে বলেও জানান তাঁরা। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তাঁরা হতাশ হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা।
শুক্রবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে এই মর্মে নির্দেশ পাঠায় যে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ সংক্রান্ত যেসব মামলা শুনছিলেন, সেগুলি শোনার জন্য অন্য বিচারপতি নিয়োগ করা হোক। তবে আইনজীবী মহলের দাবি, শুধুমাত্র তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা মামলা থেকেই সরানো হল, নাকি নিয়োগ সংক্রান্ত সব মামলা থেকে, তা নির্দেশের কপি হাতে এলে স্পষ্ট হবে।
নিয়োগ দুর্নীতি (Scam) মামলায় বড়সড় বদল। বিচারপতি (Judge) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Abhijit Gangopadhyay)নিয়োগ দুর্নীতি মামলা থেকে সরানোর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। আজ অর্থাৎ শুক্রবার এই নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে বিচারপতি মনু সিংভি ও কপিল সিব্বাল সওয়াল করেন, যে অভিজিৎ গাঙ্গুলী সংবাদমাধ্যমের কাছে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
এরপরেই সেই মামলা সংক্রান্ত রিপোর্ট, শুক্রবারের মধ্যে জানতে চাওয়া হয় কলকাতার অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে। সেই মামলার শুনানি আজ অর্থাৎ শুক্রবার ছিল। রাজ্যের রিপোর্টের পর আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নিয়োগ দুর্নীতি মামলা থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাছে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
মনি ভট্টাচার্য: অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly) ও কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh), বর্তমানে দু'জনই এরাজ্যের বিস্তর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একজন কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি (Judge), অপরজন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র। জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বারবার পরোক্ষে শাসকদলকে কটাক্ষ করেছেন। তেমনই শাসক দলের পক্ষে যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
নিয়োগ দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন এ রাজ্যের শাসকদলের তিন বিধায়ক। পাশাপাশি গারদের পিছনে রয়েছেন আরও বেশ কিছু তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা। শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তাও নিয়োগ-কাণ্ডে জেলে। নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্তের ভার দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যে কারণে শাসক দলের কটাক্ষের শিকার হয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, তেমনই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম না করে কটাক্ষ করেছেন 'অরণ্যদেব গাঙ্গুলী' বলে। পাশাপাশি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নিজের এজলাসে কুণাল ঘোষের নাম না করে, তাঁকে সমঝে দিতে চেয়েছেন।
সম্প্রতি কলকাতার একটি প্রচার মাধ্যমের অনুষ্ঠানে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে দেখা গিয়েছে সৌজন্য বিনিময় করতে। সৌজন্যের এ ছবি তাঁর নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছেন কুণাল ঘোষ। যার পরে শুরু হয়েছে নেটিজেনদের কটাক্ষ। কুণাল ঘোষ ও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই প্রথম সাক্ষাতে কী বার্তালাপ হলো! এই প্রসঙ্গে সিএন-ডিজিটালের তরফে, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ঠিক কী বলেছেন!
কুণাল ঘোষ বলেন, 'শুক্রবার কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে ওনার সঙ্গে দু'বার দেখা হয়। যা একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাৎ। আর এটাই বাংলার আসল ছবি।' এর পরে তৃণমূল মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয় তবে কি কোথাও নিজের আক্রমণাত্মক জায়গা থেকে পিছিয়ে আসলেন? এর উত্তর তিনি বলেন, 'আমি একটা ভদ্র লোক, উনিও একজন ভদ্রলোক। উনি একজন বিচারপতি, ওনার কাজ উনি করছেন, আমার কাজ আমি করছি। উনি আইনের এক্তিয়ারের বাইরে কিছু বললে আমি প্রতিবাদ করব, উনি আইনি কথা বললে তো আমি কিছু বলি না, আমার যদি মনে হয় আইনের বাইরে উনি আমার দলকে আক্রমণ করছেন, সেক্ষেত্রে আমি অবশ্যই প্রতিবাদ করব, সেটা উনিও স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন আমিও স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছি। সেখানে এগোনো বা পিছন বা মানিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না।'
এছাড়া ওদের মধ্যে কী কথা হলো! এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ, দুজনেই হাসিমুখে, করমর্দন ভঙ্গিতেই, আমাদের কথা শেষ হয়েছে। কী কথা হয়েছে এটা নিতান্ত ব্যক্তিগত।' একদিকে আক্রমণ, অপরদিকে ওনার সঙ্গে একফ্রেমে থাকা ছবি ফেসবুকে পোস্ট। এই বিষয়ে বিচারপতিকে নিয়ে ব্যক্তিগত ধারণা সমন্ধে প্রশ্ন করা হয়, তার উত্তরে কুণাল ঘোষ বলেন, 'অভিজিৎ গাঙ্গুলি ফর্সা মানুষ, সুন্দর দেখতে, সুন্দর কোট পড়েন, একটা লোককে একমুখী ভাবে মূল্যায়ণ করা যায় না।' তিনি জানান, উনি একজন সন্মানীয় মানুষ উনিও সৌজন্য দেখিয়েছেন, আমিও সৌজন্য দেখিয়েছি। এর মধ্যে আর অন্য কিছু নেই।
পরপর বিস্ফোরক হাইকোর্টের বিচারপতি (Judge) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। যারপরেই তৃণমূলের নিশানায় বিচারপতি। নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা অবধি পৌঁছাতে না পারলে, আমি জানি কি করতে হয়। সিবিআই-ইডিকে উদ্দেশ্য করে এমনটাই বললেন বিচারপতি অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বৃহস্পতিবার সিবিআই-ইডির বিরুদ্ধে করা কুন্তলের অভিযোগ নিয়ে বিশেষ নজর দেন। নির্দেশ দেন সিবিআই-ইডিকে নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিস। এমনকি তিনি নির্দেশ দেন, প্রয়োজনে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে কুন্তলের সামনে বসিয়ে জেরা করতে পারবে ইডি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রথমবার বিচারপতির মুখে নাম এলো অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের। যারপরেই তৃণমূলের নিশানায় কুনাল ঘোষ। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কুনাল ঘোষ একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে কটাক্ষ করেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি লেখেন, 'যদি রাজনীতি করতে হয় চেয়ার ছেড়ে আসুন, চেয়ারে বসে রাজনীতি করবেন না।' এর পরেই নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, 'তৃণমূল কাউকে সন্মান করতে জানে না, সন্মানীয় বিচারপতিকে এভাবে হুমকি দিয়ে বিচার ব্যাবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তৃণমূল।'
পাশাপাশি সোমবার ইডি-সিবিআইয়ের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি ইডির আধিকারিকদের বলেন, 'নিয়োগ দুর্নীতির '‘মাথা’' তো দূর অস্ত, তদন্তে নেমে দুর্নীতির ‘'কোমর'' পর্যন্ত ঠিকভাবে পৌঁছতে পারেননি। তবে এবার যদি নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি, তা হলে আমি জানি কী করতে হবে।' বৃহস্পতিবার কুন্তলের চিঠির মামলার শুনানি চলাকালীন কড়া বার্তা দিয়ে এমনটাই জানালেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি শুনানি চলাকালীন নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুললেন। বিচারপতির দাবি, নিয়োগ মামলায় যাঁদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা ‘দালাল’। অবৈধ ভাবে নিয়োগের টাকা আসলে কোথায় পৌঁছেছে, তা দ্রুত তদন্ত করে বার করার বার্তাও তিনি দিয়েছেন।