তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের বিরুদ্ধে কমিশনের দ্বারস্থ বঙ্গ বিজেপি। অভিযোগ, প্রচারে গিয়ে মালদহ দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থীকে আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই অভিযোগকে সামনে রেখে কমিশনে নালিশ বঙ্গ বিজেপির। অন্যদিকে এই অভিযোগে ইতিমধ্যে ডিজিকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। চারদিনের মধ্যে এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে চাপের মধ্যে ডায়মণ্ডহারবারের বিদায়ী সাংসদ।
গত কয়েকদিন আগে প্রচারে গিয়ে মালদহ দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে আক্রমণ শানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির পোস্ট করা ভিডিও অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারে অভিষেক বলেছিলেন, “আপনি নির্ভয়া নন, আপনি নির্মম, আপনি বেহায়া, আপনি নিরুদ্দেশ, আপনি ব্যর্থ।” এই ‘বেহায়া’ শব্দটি নিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে কমিশনে নালিশ ঠুকেছে গেরুয়া শিবির। মানুষকে বঞ্চিত-লাঞ্ছিত-অত্যাচারিত ও শোষিত করে রাখার দলের প্রতিনিধি বলেও তোপ দাগেন তৃণমূল নেতা। আর তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
এরপরেই এই বিষয়ে ডিজিকে চিঠি জাতীয় মহিলা কমিশনের। কমিশনের দাবি, বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর নামে যে মন্তব্য অভিষেক করেছেন তা সম্মানহানীকর। এর পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে ডিজিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে। এমনকি এই বিষয়ে ডিজিকে রিপোর্ট জমা দিতেও বলা হয়েছে। আর তা আগামী চারদিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
আর এর মধ্যেই এবার অভিষেকের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল বিজেপি। এবার কমিশন ভোটে মহিলাদের সম্মানের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখছে। কু-মন্তব্য যাতে কেউ না করে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এহেন অভিযোগ। বিজেপির দাবি, শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর বিরুদ্ধে যেভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলেছেন তাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছ। এমনকি প্রচার থেকে সাসপেন্ড করার দাবিও জানানো হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় সেদিকেই নজর সবার। তবে অভিষেকের মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক বিতর্ক।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর হামলার ছক জঙ্গিদের। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে কলকাতা পুলিসের অ্যাডিশনাল কমিশনার মুরলীধর শর্মা জানান, অভিষেকের বাড়িতে হামলার ছক কষছে। এমনকি জঙ্গিরা নাকি এরই মাঝে অভিষেকের বাড়িতে রেইকি করেও গিয়েছে। অর্থাৎ বাড়ির চারপাশে নিঃশব্দে তারা ঘুরে বেড়িয়েছে। আর এই পরিকল্পনায় নাম উঠে আসছে রাজারাম রেগির। মুম্বই হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে একজন এই রাজারাম রেগি। সোমবার তাঁকে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিস।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের আপ্তসহায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রাজারাম রেগি। তারপরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে থেকে ঘুরে যায় সে। ২৬/১১-র মুম্বই হামলার তদন্তে এই জঙ্গির নাম প্রকাশ্যে এসেছিল।
কলকাতা পুলিসের অতিরিক্ত সুপার মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, আজ, সোমবার মুম্বইয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজারাম রেগি কেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ভিডিওগ্রাফি করেছিলেন, কেন অভিষেকের এবং তাঁর আপ্তসহায়কের ফোন নম্বর নিয়েছিলেন সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এমনকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামক স্ট্রিটের অফিসেও তিনি গিয়েছিলেন। হঠাৎ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন টার্গেট করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কলকাতা পুলিসের তরফে আরও জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনেও রাজারাম রেইকি করেছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে এই ঘটনার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে।
প্রসূন গুপ্ত: হিন্দিতে প্রবাদ আছে পাহাড় খুদা নিকলে চুঁহা। বাংলা করার দরকার নেই। এই মূহুর্তে সবকটি বিরোধী দলের কাছে সবথেকে সমালোচিত তৃণমূল নেতার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত দুবছর ধরে এমন একটি দিন যায়নি যেদিন বিরোধীরা অভিষেককে গালি না দিয়ে এক ঢোকে জল খেয়েছে। কি না বলা হয়েছে। অথচ এবারে লোকসভা নির্বাচনে সবার নজর ছিল অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে। ভাবা হচ্ছিল তাঁকে জব্দ করার জন্য জবরদস্ত প্রার্থী নিশ্চয়ই দেওয়া। কসরৎ কম হয় নি। জল্পনায় উঠে এসেছে বহু নাম কিন্তু শেষে অভিজিৎ দাস নামক এক অখ্যাত?
আসলে সাগরদিঘি ব্র্যান্ড করতে গিয়েই গুবলেট হয়েছে সব। শোনা যাচ্ছিল যে, আইএসএফ প্রধান নওশাদ সিদ্দিকি প্রার্থী হচ্ছেন। তেমন দাবি করেছিলেন নওশাদ। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিজিৎ গাঙ্গুলীও বলেছিলেন তিনি দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ ভোটে জিতবেন। কিন্তু দুজনেই সময় মত সরে গেলেন। নওশাদের যুক্তি অবশ্যই মানার মত। তিনি বুঝতে পারেন যে, সিএএ ইত্যাদি চক্কর তাঁর জমানত যেতে পারে। সিপিএম বা কংগ্রেস তা ঠেকাতে পারবে না। অন্যদিকে বিজেপির ধারনা ছিল যে যদি নওশাদ সংখ্যালঘু ভোটে থাবা দিতে পারে তবে বেশ হেভিওয়েট কাউকে দাঁড় করিয়ে জিতার লড়াই দেওয়া যাবে। কিন্তু নওশাদ রাজি না হওয়ায় সবকটি দলই বিপাকে পড়ল।
মুখ রক্ষায় সিপিএম একজন প্রার্থী দিল এবং দুদিন আগে বিজেপি প্রার্থী করল অনামী অভিজিৎ দাসকে। এই অভিজিৎবাবু আরএসএস করা নেতা। ২০০৯ এবং ২০১৪র লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছেন। ফের তাঁকেই প্রার্থী করা হল মূলত সঙ্ঘ পরিবারের নির্দেশেই বলে খবর। নাম এসেছিল অনেক। যথা কৌস্তভ বাগচী, রূদ্রনীল ঘোষ, শঙ্কুদেব পান্ডা ইত্যাদি কিন্তু সঙ্ঘ মন করেছে এদের বিজেপিতে মোটেই বিশ্বাস যোগ্যতা নেই। হারজিত পরের বিষয় কিন্তু লড়াইয়ে থাকুক আদি বিজেপি। ১ জুন ভোট। ফল ৪ জুন । অভিষেক নিশ্চিন্তে সারা বাংলায় প্রচারই করতে পারবে।
প্রসূন গুপ্তঃ পশ্চিমবঙ্গের আদি শহরের অংশ সুতানটি, যাকে এখন উত্তর কলকাতা বলা হয়। একদিকে বেলগাছিয়া/ কাশিপুর থেকে সেই চৌরঙ্গী। এখানে স্কুল, কলেজে, মেডিকেল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব সুবিধাই আছে। স্বাধীনতা পূর্ব যুগে কত শত গল্প যে উত্তর কলকাতার বাবু সংস্কৃতি নিয়ে পাই তার বিবরণ বিখ্যাত সাহিত্যিকরা লিখে গিয়েছেন। উত্তর কলকাতায় চিরকাল কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল যা এখন দখল নিয়েছে তৃণমূল। শিক্ষিত কলকাতার মানুষ নিজের নিজের জীবন নিয়েই থাকতে ভালোবাসে। দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারি নিয়ে রকে সন্ধ্যার পর আসর গরম হলেও শেষ পর্যন্ত তারা ওই তৃণমূলকেই জিতিয়ে এসেছে। এবারে কি কঠিন লড়াই এই লোকসভায়?
আসুন দেখে নি করা বসবাস করে এই উত্তর কলকাতায়। প্রথমত এখানে বাঙালিদের ৮৫ শতাংশই 'ঘটি' বা এদেশীয়। মোহনবাগান সমর্থক। এছাড়া ২৫-৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু বা মুসলিমদের বাস। অবাঙালি হিন্দু ব্যবসায়ীদের ৬-৭% এখানেই বাস করে তথা চৌরঙ্গী অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষাভাষীর বাস। ২৫/৩০ বছর ধরে এখানে প্রথমে কংগ্রেস পরে তৃণমূলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময়ে উত্তর কলকাতা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। উত্তর পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিম। উত্তর পূর্বে দাঁড়াতেন অজিত পাঁজা। অজিতবাবু আর ডিমিলিটেশন দেখে যেতে পারেন নি। এবারে একসময়ের ছাত্র পরিষদের সভাপতি এবং সদ্য তৃণমূলত্যাগী তাপস রায় এবারে এখানে বিজেপির প্রার্থী এবং কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদীপবাবু যথেষ্ট বৃদ্ধ, এখন তেমন দৌড়ঝাঁপ করতে পারেন না কাজেই বলা যেতে পারে লড়াই সুদীপ ও তাপসের।
তাপস একপ্রকার সুদীপের উপর ক্ষোভে দল ছেড়েছেন। ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় তিনি কমতি যান না। একরোখা সিপিএম বিরোধী লড়াকু নেতা। পক্ষান্তরে সুদীপবাবু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকেন। তাঁর ইতিবাচক দিক দীর্ঘদিন সাংসদ থেকেছেন এবং অনেকেই বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের প্রিয় বিরোধী নেতা। খোদ প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের মুখ সুদীপবাবু কিন্তু লড়াই তো পছন্দের উপর চলবে না। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে সুদীপ পেয়েছিলেন মাত্র ৩৫.৯৪ % ভোট এবং জিতেছিলেন। পরের বার কিন্তু তিনিই ৪৯.১৮ % পেয়ে অনেকটাই শক্তি বৃদ্ধি করেছিলেন। এখন প্রশ্ন কে এগিয়ে? লড়াকু তাপস দাবি করেছেন তিনি সুদীপকে হারাবেন। কিন্তু আবেগ নির্ভর তাপসকে অনেক অঙ্ক পার করতে হবে যা যথার্থই কঠিন।
মাত্র কয়েক মিনিটের ঝড়। আর তাতেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। তছনছ হয়ে গেল বহু মানুষের সাজানো ঘর-বাড়ি। প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ জন। প্রিয়জনকে হারিয়ে সর্বহারা হয়েছেন জলাপাইগুড়ির এক অংশের মানুষ। ঝড়ে উড়েছে চাল, ভেঙেছে বহু ঘর। এখনও চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ।
রবিবার রাতে খবর পেয়ে বিশেষ বিমানে উত্তরবঙ্গে পৌঁছন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। রাতেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সকালে ঝড়ে পরিস্থিতি দেখতে জলপাইগুড়ি যান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।
সূত্রের খবর, রবিবার ঝড়ের পর ১৬৬ জনকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। যদিও অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্য়ে দুজন শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
আজ থেকে লোকসভা ভোটের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরে প্রথম সভা করেন তিনি। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে প্রচার শুরু করলেন তিনি। মহুয়াকে কেন লোকসভা থেকে ‘তাড়িয়েছে’ বিজেপি, সেই ব্যাখা দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থী ‘রাজমাতা’ অমৃতা রায়ের পরিবারকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে খোঁচা দিলেন মমতা।
জনসভায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহুয়াকে জেতাবেন। আপনারা জেতানোর পরেও ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ মহুয়া জোরে জোরে কথা বলত। বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলত। ওকে জেতালে ও যোগ্য জবাব দিতে পারবে। বিজেপির মুখোশ টেনে ছিঁড়ে দিতে পারবে।’ পাশাপাশি ধুবুলিয়ার সুকান্ত স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ থেকে বিজেপির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মমতা। বলেন, জেতার বিষয়ে নিশ্চিত হলে কেন রাজ্যে ইডি? কেন সিবিআই? কেনই বা ইনকাম ট্যাক্স অফিসাররা?
সূত্রের খবর, ভিন রাজ্যেও প্রচারে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। অসমে দুটি সভা করবেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। আগামী ১৭ এবং ১৮ এপ্রিল অসমে দুটি জায়গায় সভা করবেন তিনি।
লোকসভা ভোটের আগে নিজের বাড়িতে পড়ে গিয়েই মাথায় চোট পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কপালে চারটে সেলাই পড়েছিল। তারপরে বিশ্রামেই ছিলেন তিনি। আজ অর্থাৎ রবিবার থেকে লোকসভা ভোটের প্রচারে নেমেছেন তিনি। প্রথমেই বেছে নিয়েছেন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রকে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও কৃষ্ণনগরে সভা করে গিয়েছেন।
২৪ ঘন্টার মধ্যেই রাজ্যে ডিজি পরিবর্তন। ১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে রাজ্য পুলিসের ডিজি করল নির্বাচন কমিশন। সোমবারই রাজ্য পুলিসের ডিজির পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়েছিল কমিশন। নতুন ডিজির জন্য রাজ্যের কাছে তিনটি নাম চাওয়া হয়েছিল। তিন জনের মধ্যে বিবেককে বসানোর অনুমতি রাজ্যকে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার সকালেই বিবেক সহায়কে সরিয়ে ভোটের সময় রাজ্য পুলিসেরর ডিজি করা হল সঞ্জয়কে।
সোমবার রাজ্যের মুখ্য সচিব বিপি গোপালিককে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। সেখানেই, রাজ্য পুলিসের ডিজির পদ থেকে অবিলম্বে রাজীব কুমারকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্দেশিকায় জানানো হয়, রাজীব কুমারকে এমন পদে নিয়োগ করতে হবে, যার সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনের কোনও যোগ থাকবে না। ডিজি পদে নতুন নিয়োগের জন্য বিকেল ৫টার মধ্যে রাজ্য সরকারকে তিনটি নাম পাঠাতে নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সেই মোতাবেক তিন জনের নাম পাঠায় রাজ্য। বিবেক সহায়ের পাশাপাশি আরও দুই সিনিয়র আইপিএস অফিসার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় এবং রাজেশ কুমারের নাম পাঠানো হয়েছিল কমিশনে। তাঁদের মধ্যে থেকে সোমবার বিবেককেই ডিজি পদে বসায় কমিশন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে আবার সেই পদে বসানো হল সঞ্জয়কে।
প্রসূন গুপ্ত: স্বাধীনতা উত্তর যুগে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সৌজন্যতা ভীষন ভাবেই ছিল। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু মনে করতেন স্বাধীনতা সংগ্রামে সবারই দান আছে। অন্যদিকে এ রাজ্যে দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধানচন্দ্র রায়ও ঐ একই ভাবনায় বিশ্বাস করতেন। এ কারণে দুটি জায়গা থেকে দুই ভবিষ্যতের নেতার পরিচিতি হয়েছিল। একজন অটল বিহারী বাজপেয়ী অন্যজন জ্যোতি বসু।
আইনসভায় বা ভোটের সময় যতই এক দল অন্য দলকে আক্রমন করুক না কেন ব্যক্তিগত কুৎসা কখনও হতো না। এটির জন্ম ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে। বাংলাদেশ যুদ্ধের পরে ইন্দিরা কিংবদন্তী হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু জরুরি অবস্থার পরে তিনিই হয়ে গেলেন বিরোধীদের ঘৃণার পাত্রী। কারণও ছিল, ঐ সময় নতুন আইন চালু করে ইন্দিরা, বিরোধীদের জেলে পরেছিলেন। কাজেই বিষয়টি শত্রুতায় পরিনত হলো। ১৯৭৭ এর লোকসভা ভোট থেকে রাজনৈতিক দলগুলি ইন্দিরাকে প্রচারে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে দলীয় আক্রমনে তুলোধনা করেছিল। ৭৭ এ হেরে ফের ক্ষমতায় ফের ইন্দিরা কংগ্রেস এবং ঐ সময় থেকে কংগ্রেসও বিরোধীদের ভয়ঙ্কর প্রচারে নাস্তানাবুদ করেছিল। এটা পরিবর্তিত হয় রাজীবের আমলে। পরে নরসিমা রাও, অটলবিহারী বা ড. মনমোহন সিং কিন্তু যথেষ্ট সৌজন্য দেখান বিরোধীদের।
কিন্তু এ বাংলায় বামেরা ৭৭এ ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্র তথা রাজ্যের বিরোধীদের যে ভাষা ব্যবহার করতো তা বোধকরি বটতলা নিষিদ্ধ বইয়ের ভাষাকে লজ্জা দেবে। আজকে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের ভাষা আক্রমন বিন্দুমাত্র কমে নি। সংস্কৃতি হাত বদল হয়। ২০১১ এ ক্ষমতায় এসে ভাষা আক্রমনে তৃণমূল যেন ৩৪ বছরের ক্রোধ উসুল করে নিয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী আসনে বিজেপি। মোদী জমানা থেকে কেন্দ্র বা রাজ্যে বিজেপি বিরোধীদের একপ্রকার পাত্তাই দেয় না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিভিন্ন ভোট প্রচারে ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক। এদের স্ট্র্যাটেজিই তাই। এ রাজ্যে কুবচন যেন এক সংস্কৃতি। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদী কিন্তু যথেষ্ট সংযত। ব্যক্তি আক্রমণে যাচ্ছেন না মোটেই। বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি ফের ক্ষমতায় ফিরছেন কাজেই হালকা ভাষনে ব্যস্ত থাকছেন।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের নানান কেন্দ্রে সৌজন্যের প্রচার দেখা যাচ্ছে। হুগলি কেন্দ্রে দুই বন্ধু লকেট ও রচনা কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেন নি। ব্যারাকপুর কেন্দ্রে পার্থ ভৌমিক বা অর্জুন সিং প্রচারে পরস্পরকে "বন্ধু" বলছন। যাদবপুর কেন্দ্রে অনির্বাণ বা সায়নী পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখছেন। কিন্তু ব্যাতিক্রমও আছে। তমলুক কেন্দ্রে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী ও তৃণমূলের দেবাংশু তীব্র আক্রমনেই রয়েছেন।সৌজন্যের রাজনীতি আজ আর কোথায়।
মাঝরাতে গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে বড়সড় দুর্ঘটনা। সকাল হতেই মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা অবস্থায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল ৯টার একটু পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে যান গার্ডেনরিচের ফতেপুর ব্যানার্জি বাগান লেনের ওই এলাকায়। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই এলাকা পরিদর্শন করেন। দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। মৃতদের পরিবার পিছু ৫লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসায় ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। রাতেই সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে মৃতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ”রমজান মাসে এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা সকলে অত্যন্ত মর্মাহত। অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা এটা এবং বেআইনি কাজের জন্য এই ঘটনা ঘটল। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কড়া অ্য়াকশন নেওয়া হোক। উদ্ধারকাজ দ্রুত হচ্ছে।”
সাতসকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল বহুতল সেকারণেই এই ঘটনা।
মেয়র জানিয়েছেন, কোনও অনুমতি না নিয়েই প্রমোটার বহুতলটি নির্মাণ করছিল। পুরো ঘটনার তদন্ত হবে। তবে আগে ঘটনাস্থল থেকে আটকে থাকাদের উদ্ধার করা জরুরি। কিন্তু কীভাবে পুরসভার নজর এড়িয়ে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে গার্ডেনরিচ মেয়রের নিজের এলাকা। সেখানে এই ধরনের ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
ফিরহাদ হাকিম বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে উদ্ধারকাজ আগে শেষ করতে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। কিন্তু ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় সেখানে দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের পৌঁছতে সময় লেগেছে। স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজ শুরু করে দিয়েছিল। মেয়র ফিরহাদ হাকিম আরও জানিয়েছেন, বাম আমল থেকেই বেআইনি ভাবে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এলাকায়। এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে পরিস্থিতি। তারপরেও কোন গলিতে কে বেআইনিভাবে নির্মাণ করছে তা বোঝা অত্যন্ত কঠিন। দোতলার অনুমোদন নিয়ে পাঁচ তলা বাড়ি বানানো হচ্ছিল। সেকারণেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
প্রসূন গুপ্তঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের দীর্ঘ ৪০ বছরের আলাপ। অত্যন্ত কাছের থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেছি। বহুবার তাঁর বাড়িতে গিয়েছি কাজে বা আমন্ত্রণেও। তাঁর সঙ্গে বহু সফরের অভিজ্ঞতা আছে কাজেই এখন, যখন বৃহস্পতিবার তিনি পরে গিয়ে মারাত্মক আহত হন, তখন বিভিন্ন মহল বিভিন্ন ভাবে তার বিবরণ দিচ্ছে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, তিনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নাকি বাড়িতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে গেলেন অথবা কেউ পিছন থেকে ধাক্কা দিলো?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংঘাতিক মানসিক শক্তির অধিকারী। যে কোনও মহিলার থেকেও সৃষ্টিশীল শক্তি তাঁর বেশি। রোজ বাড়িতে বা ট্রেডমিল মারফত প্রচুর হাঁটাহাঁটি করেন যা কল্পনাতীত। সেই তিনি সন্ধ্যায় হাটতে গিয়ে পরে গেলেন এবং মারাত্মক আঘাত পেলেন, বিষয়টি আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি পরে যাওয়ার পরেই তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ফেটে যাওয়া মাথায় তিনটি এবং নাকে একটি সেলাই করা হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন, শুক্রবার দুপুর বারোটায় এই খবর পেলাম কালীঘাট সূত্রে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচুর পরিশ্রম করতে পারেন এবং একটি শিশুর থেকেও কম খাওয়া দাওয়া করেন। সারাদিন চা, কখনও এক আধটা বিস্কুট কিংবা ছোলা ভাজা খান। যা খাওয়ার রাতে খান। ইদানিং যথেষ্ট টেনশনে রয়েছেন। সামনে নির্বাচন। এছাড়া দলের অন্দরে নানান চাপ ইত্যাদি আছেই। মমতা যা দশ বছর আগে পারতেন তা আজকেও একই ভাবে চালিয়ে যাবেন এটা ভাবাও ভুল। কাজেই নিজের শরীরের দিকে নজর তো রাখতেই হয়। যা তিনি পরোয়া করেন না।
বৃহস্পতিবার প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন একডালিয়ায়। খুবই ক্লান্ত লাগছিলো। সুব্রতবাবুর কথা স্মরণ করে ভীষণই আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছিলেন। কিন্তু একই সাথে তাঁকে ক্লান্তি সম্ভবত চেপে ধরেছিলো। ভাষণ দিতে গিয়ে আটকে যাচ্ছিলো কথা। আমার কেন মনে হচ্ছিলো উনি কি অসুস্থ বোধ করছেন? সব মিলিয়ে পুরাতন মমতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তারপর বাড়ি ফিরেই তো এই কান্ড।
তবে চিকিৎসকদের কথা, তাঁর মনে হতে পারে পিছন থেকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু তেমনটি নয়। আসলে নাকি মাথা ঘুরে যাওয়ার সময়ে এতটাই বিশৃঙ্খল ছিল তাঁর মগজশক্তি যা মনে হতে পারে কেউ ধাক্কা দিয়েছে। সে যাই হোক না কেন দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে বিভিন্ন রাজনৌতিক ও অন্য পেশার ব্যক্তিরা তাঁর সুস্থতা কামনা করেছে। আমরাও কামনা করি।
কপালে চারটে সেলাই নিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসএসকেম হাসপাতালে চিকিৎসকরা মুখ্যমন্ত্রীর এই পড়ে যাওয়ার নেপথ্যে ‘পুশ ফ্রম বিহাইন্ড' কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন। অর্থাৎ পিছন থেকে ধাক্কা। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল বিভিন্ন মহলে। বাড়িতে কীভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারে, তা নিয়ে নানামহলে নানা প্রশ্ন। এরই মাঝে ‘পুশ ফ্রম বিহাইন্ড’-এর ব্যাখ্যা দিল এসএসকেএম।
এসএসকেএম-এর ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিষয়টা আদতে পিছন থেকে কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছেন তা একেবারেই নয়। উনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন। সেই সময় কেউ ধাক্কা দিলে যেমন অনুভূত হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সেরকম মনে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকদের। সেটাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু সেটা কোনওভাবেই কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন তেমনটা নয়।
পুলিস সূত্রে খবর, চিকিৎসকের তরফে কোনও ধাক্কা দেওয়া হয়নি জানানোই, আপাতত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ধাক্কা তথ্য না থাকলে অভিযোগ দায়ের করবে না পুলিস। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে এসেছিলেন কলকাতা পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আসা হয়েছিল হাসপাতালে। তাঁর কপালে গুরুতর আঘাত ছিল। কপাল ফেটে রক্ত বেরোয়। হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর এমআরআই, সিটিস্ক্যান করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই হইহই পড়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ছবি শেয়ার করে তাঁর আরোগ্য কামনা করতে অনুরোধ জানিয়েছিল অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর আরোগ্য কামনা করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই তাঁর চিকিৎসায় কার্ডিও,মেডিসিন, সহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। আপাতত শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল মুখ্যমন্ত্রীর। তবে আজ, শুক্রবার ফের শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
গুরুতর আহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটের বাড়িতে হাঁটাহাটি করার সময় আচমকা পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই সূত্রের খবর। কপাল ফেটে রক্ত বেরোতেই তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন তিনি। একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আঘাত কতটা গুরুতর তা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকরা। এমআরআই, সিটি স্ক্যান করা হবে।
লোকসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার সংবাদে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন অনুরাগীরা। এই দুঃসংবাদ জানানো হয়েছে তৃণমূলের সোশাল মিডিয়া পেজে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কপাল থেকে নাক বেয়ে রক্ত পড়ছে, হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে রয়েছেন মমতা। ক্যাপশনে লেখা, 'আমাদের চেয়ারপার্সন গুরুতর আহত হয়েছেন। উনার জন্য প্রার্থনা করুন আপনারা।' তাঁর সুস্থতা কামনায় ভক্তরা ভিড় করেছেন হাসপাতালে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির উদ্বোধন করেন মমতা। এর পর তিনি বাড়ি চলে যান। ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরাই দ্রুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছয়। এই নিয়ে পর পর বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনায় আঘাত পেলেন তিনি।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। ভোটের দিন ঘোষণা হয়নি এখনও। তৃণমূল, বিজেপির পর এবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বামফ্রন্ট। প্রার্থী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেইন শরিকদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বৃহস্পতিবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক বৈঠক করে ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন। তাঁদের মধ্যে সিপিএমের ১৩ জন এবং বাকি ৩ প্রার্থী শরিকদের। একনজরে দেখে নিন প্রার্থীতালিকা।
কোচবিহার: নীতীশচন্দ্র রায় (ফরওয়ার্ড ব্লক)
জলপাইগুড়ি: দেবরাজ বর্মন (সিপিএম)
বালুরঘাট: জয়দেব সিদ্ধান্ত (আরএসপি)
কৃষ্ণনগর: এস এম শাদি (সিপিএম)
দমদম: সুজন চক্রবর্তী (সিপিএম)
যাদবপুর: সৃজন ভট্টাচার্য (সিপিএম)
কলকাতা দক্ষিণ: সায়েরা শাহ হালিম (সিপিএম)
হাওড়া: সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় (সিপিএম)
শ্রীরামপুর: দীপ্সিতা ধর (সিপিএম)
হুগলি: মনোজিৎ ঘোষ (সিপিএম)
তমলুক: সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (সিপিএম)
মেদিনীপুর: বিপ্লব ভট্ট (সিপিআই)
বাঁকুড়া: নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত (সিপিএম)
বিষ্ণুপুর: শীতল কৈবর্ত (সিপিএম)
বর্ধমান পূর্ব: নীরব খান (সিপিএম)
আসানসোল: জাহানারা খান (সিপিএম)
তবে এদিন যে ১৬ টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানের ১৪ জনই ওনতুন মুখ। ভোট বৈতরণী পার হতেই তরুণ মুখেদের উপরেই ভরসা রেখেছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ম্যানেজাররা। তবে কয়েকটি আসন নিয়ে রীতিমত চাপের মুখে পড়তে হয়েছে বামফ্রন্টকে।
তবে এদিন ডায়মণ্ডহারবার কেন্দ্রের জন্য কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই কেন্দ্র থেকে নওশাদ দাঁড়াতে পারে বলে জোর জল্পনা চলছে। তবে এই বিষয়ে আলোচনা চলতেই পারে বলে দাবি বিমান বসুর। তবে জোট নয়, আসন সমঝোতার উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “বামফ্রন্টের শরিকদলগুলি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কোনওদিনই জোট ছিল না। ভোটে লড়ার জন্য আসন সমঝোতা হয়েছিল। এবারেও হতে পারে।”
ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস। বেশ কয়েকটি আসনে বদলানো হলো প্রার্থী। ফলে বিদায়ী অনেক সাংসদই টিকিট পেলেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় একঝাঁক নতুন মুখ। নজিরবিহীনভাবে লোকসভার ৪২ প্রার্থী নিয়ে র্যাম্পে হাঁটলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রার্থী তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, দেখে নিন একনজরে-
কোচবিহার থেকে লড়বেন- জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া
আলিপুরদুয়ার- রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বড়াইক
জলপাইগুড়ি- সাংসদ নির্মল চন্দ্র রায়
দার্জিলিং- গোপাল লামা
রায়গঞ্জ- কৃষ্ণ কল্যানী
বালুরঘাট- মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র
মালদা উত্তর- প্রাক্তন আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
মালদা দক্ষিণ- শানোয়াজ আলী রেহান
জঙ্গিপুর- খলিলুর রহমান
বহরমপুর- ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান
মুর্শিদাবাদ- আবু তাহের খান
কৃষ্ণনগর- মহুয়া মৈত্র
রানাঘাট- মুকুটমণি অধিকারী
বনগাঁ- বিশ্বজিৎ দাস
ব্যারাকপুর- পার্থ ভৌমিক
দমদম- প্রফেসর সৌগত রায়
বারাসত- ডক্টর কাকলি ঘোষ দস্তিদার
বসিরহাট- হাজী নুরুল ইসলাম
জয়নগর- প্রতিমা মণ্ডল
মথুরাপুর- যুবনেতা বাপি হালদার
ডায়মন্ড হারবার- তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর- সায়নী ঘোষ
কলকাতা দক্ষিণ- মালা রায়
কলকাতা উত্তর- সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
হাওড়া- ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
হুগলি- অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
আরামবাগ- মিতালী বাগ
তমলুক- আইটি সেলের রাজ্যের ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য
কাঁথি- উত্তম বারিক
ঘাটাল- দীপক অধিকারী (দেব)
মেদিনীপুর- জুন মালিয়া
ঝাড়গ্রাম- কালিপদ সরেন
পুরুলিয়া- শান্তি রাম মাহাতো
বর্ধমান-দুর্গাপুর- কীর্তি আজাদ
আসানসোল- শত্রুঘ্ন সিনহা
বাঁকুড়া- অরূপ চক্রবর্তী
বোলপুর- অসিতকুমার মাল
বীরভূম- শতাব্দী রায়
বিষ্ণুপুর- সুজাতা খাঁ
“জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন।” ব্রিগেড গ্রাউন্ডের মঞ্চে নতজানু হয়ে, মাথা ঠেকিয়ে উপস্থিত সাধারণ মানুষকে প্রণাম করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাঁর কণ্ঠেই শোনা যায় এমন শ্লোগান।
গর্জে ওঠেন অভিষেক। ১২ দিনের মধ্যে ব্রিগেড করে দেখিয়ে দিলাম। কেউ বলেছিল একে একে দল ছাড়ছে, তৃণমূল দলটা উঠে যাবে। কিন্তু এই ব্রিগেড থেকেই বিজেপির বিদায়ের সূচনা হয়ে গেল। মঞ্চে দাঁড়িয়ে হুঁশিয়ারি তৃণমূল সেকেন্ড ইন কমাণ্ডের। শুধু তাই নয়, বাংলা বিরোধী বিজেপি, ইডি-সিবিআই ভোট দেবে না। তা বলেও আক্রমণ শানান তিনি।
আরও বলেন, 'জনগর্জন কী আজকে তো ট্রেলার দেখালাম। আসল সিনেমা নির্বাচনের দিন আপামর বাংলা দেখাবে বিজেপিকে।' একইসঙ্গে দিল্লিতে ‘ভূমিকম্পে’র ডাক দেন তিনি।