প্রসূন গুপ্ত: প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের ডাকসাইটে নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর টেলিভিশনে ঘন্টার পর ঘন্টা খবর ছিল তাঁকে নিয়ে। খবরের কাগজে পাতার পর পাতাজুড়ে পার্থ-অর্পিতার খবর। প্রাক্তন মন্ত্রীর কতজন বান্ধবী, তাঁদের কোথায় বাড়ি, আরও কত টাকা উদ্ধার হল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখানেই শেষ নয় পার্থ কতটুকু বললেন ইডিকে, পার্থ অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরায় কী বেরোল। এই ধরনের খবরে ঝোঁক থাকতো আম আদমির। ট্রাম-বাস, ট্রেনে আলোচনার বিষয়বস্তুও তাঁরাই। পার্থ কী খেলেন, কোথায় শুলেন এই করতে করতে পার্থর খবরে ম্রিয়মান হয়ে গেলো অনুব্রত-কাণ্ডে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে শুধুই অনুব্রত। বাড়ি ঘিরে নিয়ে প্রথমে আটক, তারপর বিকেলের দিকে গ্রেফতার। লহমায় লহমায় পরিবর্তন হলো অনুব্রত-কাণ্ড। বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরে। তারপর এদিন সকাল থেকে মাত্র একটাই খবর, অনুব্রত সকালে ডায়বেটিক ডায়েট মেনে চিনি ছাড়া চা, বিস্কুট এবং মুড়ি খেয়েছেন। এরপর আর খবর নেই, রহস্য এখানেই কেন অনুব্রতর অবস্থান পাওয়া যাচ্ছে না?
পার্থ ও অনুব্রতর মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রথমত অনুব্রত সংগঠন করা নেতা। বীরভূম জেলার পাতা নড়তো না তাঁর আদেশ ছাড়া। রাঙা মাটির দেশে একপ্রকার 'মুকুটহীন সুলতান' ছিলেন তিনি। এই জনপ্রিয়তা পার্থর কোথায়? পার্থকে গ্রেফতারের সঙ্গে ইডির হাতে এসেছিলো কোটি কোটি টাকার বান্ডিল এবং মহিলা বান্ধবীর প্রসঙ্গ। এই অবস্থান পার্থর বিপক্ষে গিয়েছে। দলও তাঁর দায় ঝেড়ে ফেলেছে। অনুব্রতর ক্ষেত্রেও দলের অভিমত অপরাধ প্রমাণ হলে রাজ্য রাজনীতির কেষ্ট মণ্ডলকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত অপরাধের দায়িত্ব নেবে না দল। কিন্তু হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে অনুব্রতর নাম আসা সত্বেও তৃণমূলের হাজার হাজার সমর্থক তা মানতে নারাজ। তাঁরা ক্ষিপ্ত, তাঁদের বক্তব্য মদন মিত্রদের মতোই অনুব্রত ফেঁসে গিয়েছেন। দুটি ঘটনাই দলের উচ্চ নেতাদের নজরে এসেছে।
আজ এবং আগামীকাল এই নিয়ে রাজ্যের জেলায় জেলায় আন্দোলনে নামছে তৃণমূল যদিও প্রসঙ্গ অনুব্রত নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা।
এসএসসি (SSC) দুর্নীতিতে সম্প্রতি গ্রেফতার (Arrest) হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। বর্তমানে তিনি রয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলে (Presidency Jail)। কিন্তু কেমন আছেন পার্থ? সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি জেলের নিচুতলার কর্মীরা হুইল চেয়ার জোগাড় করে দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সেই হুইল চেয়ার নিয়ে ঘুরতে দেখে ধমক দেন জেলার-রা। কোনও ধরনের অতিরিক্ত সুবিধা যাতে না দেওয়া হয় প্রাক্তন মন্ত্রীকে সেই বিষয়েও কড়া নজর রাখছে জেল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পার্থ ঘণিষ্ট বান্ধবী অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee) রয়েছেন আলিপুরের মহিলা সংশোধনাগারে (Alipore Correctional Institution for Women)। তবে অর্পিতা রানির মতো রয়েছেন জেলে, এমনটাই সূত্রের খবর। বেশ কয়েকটি ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখেছেন জেলের সহ বন্ধিরা। ফলে অর্পিতার বিছানা করা থেকে, জামা কাপড় পরিষ্কার করে দিচ্ছেন বাকিরা। কেউ বা আবার বিছানা পেতেও দিচ্ছেন।
এবার দেখা যাক প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে খাদ্য রসিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের খাদ্যের তালিকা- যা বর্তমানে যথেষ্ট চর্চার বিষয়।
সূত্রের খবর, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পার্থের খাওয়ার আবদারে প্রায় প্রতিদিনই দুবেলা ভাত দিতে হচ্ছে। কখনও আবার বিকালের দিকে চপ, বেগুনি এনে দিতে হচ্ছে জেলের ক্যান্টিন থেকে অনেক জোরাজুরিতে। এর মধ্যে একদিন খাঁসীর মাংসের ঝোল ও ভাত দিতে হয়েছে তাঁকে। যদিও গতকাল রাখী পূর্ণিমার দিন বৃহস্পতিবার জেলবন্দী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাতে আমিষ পড়েনি। গতকাল তাঁর দুপুরের মেনুতে ছিল- ভাত, ডাল এবং দু-রকমের তরকারী। যা খাবার দেওয়া হয়েছে সবটুকুই খেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মহা সচিব। পাশাপাশি তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
আজ শুক্রবার আবার তাঁর খাবারের মেনুতে রয়েছে আমিষ খাবার। সকালে উঠে চা খেয়েছেন তিনি। তবেআপাতত বই পড়ায় মগ্ন রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর জেলের মধ্যে বইয়ের তালিকায় রয়েছে কথামৃত, মহাশ্বেতা দেবীর একটি বই।