গরু পাচার-কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) গ্রেফতার হওয়ার পর খবরে এসেছেন তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল (Anubrata Daughter)। ইতিমধ্যে জনমানসে চর্চায় সুকন্যা (Sukanya Mondal)। এই পাচার-কাণ্ডের তদন্তের মাটি সিবিআই যত খুঁড়ছে, ততই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির মেয়ের নামে একাধিক সংস্থার হদিশ পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা (CBI)। এমনকি, সরকারের খাতায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। যদিও তিনি নাকি স্কুলে যান না, বরং স্কুলের রেজিস্টার খাতা সুকন্যার বাড়িতে আসে। এই ধরনের একাধিক অভিযোগ উঠছে। এমনকি, তিনি নাকি টেট ফেল করেও স্কুলশিক্ষিকার কাজ পেয়েছেন। সম্প্রতি এই অভিযোগ করে হাইকোর্টে মামলা ঠুকেছেন এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করে সুকন্যা মণ্ডলকে টেট নথি-সহ ডেকে পাঠিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই নির্দেশ প্রত্যাহারও করেছেন মাননীয় বিচারপতি
এই আবহে ভাইরাল হয়েছে অনুব্রত-কন্যার এক নাচের ভিডিও। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সিএন ডিজিটাল। তবে ভিডিওয় দেখা গিয়েছে ঘরোয়া পরিবেশে তুঁতে-সোনালি শাড়িতে একদম বাঙালি সাজে সেই ভিডিও বানিয়েছেন সুকন্যা। র্যাপার বাদশার এককালীন জনপ্রিয় রিমেক গান 'বড়লোকের বেটি লো...' গানে একতি রিল বানান সুকন্যা। যে গানে নাচতে দেখা গিয়েছে বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজকে। 'বড়লোকের বেটি লো...' সেই গানের সঙ্গে নেচে বানানো সুকন্যার রিল ঘিরে এখন চর্চা তুঙ্গে।
ইতিমধ্যে সিবিআই অনুব্রত-সহ তাঁর আত্মীয়দের প্রায় ১৭ কোটি টাকার এফডির খোঁজ পেয়েছে। বোলপুরের নিচুপট্টির পৈতৃক ভিটে ছাড়াও অনুব্রতর নতুন একটা বাড়ি গৃহ প্রবেশের অপেক্ষায়। এখন তাই ভাইরাল রিল দেখে নিন্দুকেরা বলছেন, সত্যিই 'বড়লোকের বেটি' সুকন্যা মণ্ডল! এটা একটা ভাইরাল হওয়া ভিডিও, সত্যতা যাচাই করেনি ক্যালকাটা নিউজ
টেট (Primary TET) ফেল করেও প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি। এবার অবৈধ নিয়োগে নাম জড়াল অনুব্রত-কন্যা (Anubrata Daughter) সুকন্যা অধিকারীর। পরেশ অধিকারীর মেয়ের পর এবার কাঠগড়ায় সুকন্যা মণ্ডল। সৌমেন নন্দী নামে এক ব্যক্তি বুধবার এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর দাবি, 'সুকন্যা মণ্ডল-সহ অনুব্রতর (Anubrata Mondal) পরিচিত ৬ জন টেট পাশ না করেই প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছেন।'
এই আবেদনের উপর শুনানির পরেই বৃহস্পতিবার বেলা ৩টের মধ্যে অনুব্রতর মেয়ে-সহ ৬ জনকে টেটের নথি-সহ কোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই নির্দেশ অমান্য হলে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিচারপতি। এমনকি, কোর্ট অর্ডার বীরভূমের পুলিস সুপারের কাছে পৌঁছে দিতে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিস সুপারই ওই ৬ জনকে আদালত অবধি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এমনটাই নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। এদিন সন্ধ্যার পর বোলপুরের বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছে সুকন্যা মণ্ডলকে। সম্ভবত কলকাতার উদ্দেশেই রওয়ানা দিয়েছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মামলাকারী আদালতে দাবি করেছেন, 'কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হলেও, সুকন্যা মণ্ডল স্কুলে যান না। উলটে স্কুলের হাজিরার রেজিস্টার অনুব্রত-কন্যার বাড়িতে পাঠানো হতো। এদিকে, সুকন্যা মণ্ডল ছাড়াও বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন অনুব্রতর পিএ অর্ক দত্ত-সহ'আরও কয়েকজন আত্মীয়। সকলেই চাকরি পেয়েছেন বোলপুর সার্কেলে। এই অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করে অনুব্রতর মেয়ের স্কুলের রেজিস্টার এবং জেলা স্কুল পরিদর্শককে আদালতে তলব।
অপরদিকে, সিবিআইয়ের ওপর রুষ্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত ১৯শে জুলাই তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিস থেকে যে নথিপত্র উদ্ধার করেছিল, সিবিআই সেগুলো সিএসএফএল দিল্লিতে(ফরেনসিক ল্যাবরেটরি) পাঠাবে। সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর না করায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কেন এখন পর্যন্ত ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে নথি পাঠানো হলো না, এদিন জানতে চান তিনি। আগামি ১০ দিনের মধ্যে সেই নথি পাঠানো হবে। এমনটাই আদালতে জানিয়েছে সিবিআই।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তারক্ষীর হাত ধরে যাঁদের যাঁদের চাকুরী হয়েছে তাঁদের সকলকেই সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা ও প্রয়াত স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তির(property) তথ্য(information) সিবিআইয়ের(CBI) হাতে রয়েছে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের বেনামে কত সম্পত্তি রয়েছে, তার হদিশ পেতে মরিয়া কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আর এই সব বেনামি সম্পত্তির খোঁজে এবার বীরভূমের অন্যতম গরু ব্যবসার(cattle smuggling) সঙ্গে যুক্ত আবদুল লতিফকে হাতে পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, এই সকল বেনামি সম্পত্তির হদিশ দিতে পারেন এই আবদুল লতিফ। এমনই মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
সিবিআইয়ের দাবি, যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গরু পাচার(cow traficking) থেকে আসা লাভের টাকার যে ভাগ অনুব্রত মণ্ডলের জন্য বরাদ্দ থাকত, তা অনেক সময় নিজের হাতে নিতেন না অনুব্রত মণ্ডল। আবদুল লতিফ মারফত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই টাকা লগ্নি হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এমনকি অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে জেরা করেও এই সমস্ত বিনিয়োগের কথা জানা গেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাই বেনামে কোথায় কত বিনিয়োগ হয়েছে, জানতে এই আবদুল লতিফকে হাতে পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রে খবর, গত সপ্তাহে দেওয়া গরু পাচার মামলায় দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে আবদুল লতিফের নাম রয়েছে। তাতে গরু পাচার ও লাভের টাকা কিভাবে আবদুল মারফত প্রভাবশালীদের কাছে গিয়েছে, তা উল্লেখ রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। তদন্তকারী সংস্থার আরও দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশ মেনেই আবদুল লতিফ অনুব্রতর হয়ে সরাসরি বিনিয়োগ করেছেন। তাই জেরা পর্বে অনুব্রত মণ্ডল যখন পুরোপুরি চুপ, তখন বেনামি সম্পত্তির হদিশ পেতে আবদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শ্রেয় বলে মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। চার্জশিটে নাম থাকলেও এখনও পর্যন্ত আবদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠতে পারেনি সিবিআই। তাই এই মুহূর্তে আবদুলের বয়ান হয়ে উঠতে পারে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থার ট্রাম্প কার্ড।
কিন্তু কে এই আবদুল লতিফ? সূত্রের খবর, ইলামবাজারের বেলোয়া গ্রামে আদি বাড়ি এই লতিফের। পারিবারিক সূত্র ধরেই গরু ব্যবসার সঙ্গে যোগ আবদুলের। পরবর্তীতে বীরভূম জেলার ইলামবাজার সহ বিভিন্ন স্থানের পশুহাটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে আসে এই আবদুল লতিফের হাতে। প্রথমে এনামুল হকের এক কর্মী হয়ে বীরভূম জেলাকে গরু পাচারের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করা ও পরবর্তীতে নিজেই এনামুলের অন্যতম পার্টনার হয়ে ওঠেন তিনি। চার্জশিটে নাম থাকলেও এখনও সিবিআই-এর হাতে অধরা এই লতিফ শুধু গরুর ব্যবসা নয়, এলাকায় একাধিক মার্বেল ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত বলে জানা গেছে। এই ব্যবসাগুলিতে তো গরু পাচারের থেকে আসা লাভের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে দাবি করছে সিবিআই।
কিভাবে যোগ অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে? সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের সূত্র ধরেই যোগাযোগ হয় অনুব্রত ও আবদুলের। এমনকি সায়গল হোসেন মারফত অনুব্রতর নির্দেশ পৌঁছে যেত এই আবদুল লতিফের কাছে, দাবি গোয়েন্দাদের। এনামুল হক ও আবদুল লতিফ দুজনেই বীরভূমকে গরু পাচারের সেফ প্যাসেজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুব্রত মণ্ডলের কাছে পৌঁছে দিতেন নগদ টাকা সেই তথ্য হাতে রয়েছে তদন্তকারীদের।
বোলপুরে অনুব্রতর গড়ে ফের সিবিআই(CBI) হানা? বীরভূমে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালাতে পারে সিবিআই আধিকারিকদের দল। ইতিমধ্যেই অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) একাধিক সম্পত্তির(property) হদিশ পেয়েছে সিবিআই। বিভিন্ন মিল, তেলকল, জমি, প্লট মিলেছে। সেইসব এলাকায় গিয়ে সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্যের(information) খোঁজে এ সপ্তাহে ফের সিবিআই হানা দিতে পারে বলে সূত্রের খবর। এছাড়া বোলপুরে অনুব্রতর নিচুপট্টির বাড়িতেও ফের যেতে পারেন সিবিআই আধিকারিকরা।
ইতিমধ্যেই অনুব্রত কন্যার দুটি কোম্পানির হদিশ পেয়েছে সিবিআই। সেই সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে এবার সুকন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিবিআই বলে সূত্রের খবর।
অন্যদিকে এবার সিবিআই স্ক্যানারে বোলপুর পুরসভার কর্মী বিদ্যুত্ বরণ গায়েন। তিনি অনুব্রত কন্যার দুটি সংস্থার একটিতে ডিরেক্টর(director) পদে বহাল। একজন সরকারি কর্মী হয়েও কী করে তিনি বেসরকারি কোম্পানির (private company)এই পদে আছেন, তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি সিবিআই জানতে পেরেছে, বোলপুরে ২২ নং ওয়ার্ডে একাধিক বাড়ি রয়েছে বিদ্যুৎবরণ গায়েনের, রয়েছে একাধিক প্লটও। ইতিমধ্যেই ৪ টি বাড়ির হদিশ মিলেছে। এমনকী বিদ্যুতের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন অনুব্রতর এক দেহরক্ষী, এই খবর জানা গেছে সিবিআই সূত্রে। এই সব কিছুর লিঙ্ক ধরে তল্লাশি করতেই ফের সিবিআই বোলপুরে হানা দিতে পারে বলে সূত্রের খবর।
যদিও এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ।
সিএনের প্রতিনিধি বিদ্যুৎবরণ গায়েনের বাড়িতে হাজির হলে বাড়ির তরফে জানানো হয়, তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার কারণে বাড়িতে নেই।
আমি জানতাম, দিদি বুঝতে পারবে, আমি কোনও অপরাধ করিনি। আমি কোনওভাবে এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নই। সোমবার নিজাম প্যালেসে (Nizam Palace) এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা। অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করার পর বাইরে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, অনুব্রত (Anubrata) এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী (Self Confident)। উনি আগে থেকেই জানতেন যে মুখ্যমন্ত্রী (CM) উনাকে সাপোর্ট (Support) করেছেন। উনাকে ভরসা জুগিয়েছেন। বলেছেন যে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, যেটা আমরা আদালতেও বারবার বলেছি। দলনেত্রী সমর্থন করায় উনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুব্রত বলেছেন, আমি জানতাম, দিদি আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন।
অনির্বাণবাবু বলেন, শারীরিকভাবে উনি (অনুব্রত) অত্যন্ত অসুস্থ। এই অবস্থার মধ্যেও উনার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস অবশ্যই এসেছে। আমরা আদালতে বারবার বলেছি, গরু পাচারের সঙ্গে উনার কোনও সম্পর্ক নেই। গরু পাচার যদি হয়ে থাকে, সেটা সীমান্তের সমস্যা। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় এজেন্সির সম্পর্ক রয়েছে। কাস্টমস এবং বিএসএফ, তারাই সীমান্তের দায়িত্বে থাকে। যদি পাচার হয়ে থাকে, তাহলে ওই বিভাগের অফিসাররা যুক্ত। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়নি। এফআইআরে নাম থাকা একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে, তাও ৩২ দিনের মাথায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন। অথচ এঁদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই একই অভিযোগ ফুটে উঠেছে উনার দলনেত্রীর কথায়। সেই কারণেই উনি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন।
অন্যদিকে, অনুব্রত মণ্ডলের গড়ে ফের হানা দিতে চলেছে সিবিআই। চলতি সপ্তাহে বোলপুরে যাচ্ছে সিবিআইয়ের বিশাল টিম। অনুব্রতর নামে যে ৪৩ টি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে, তা নিয়ে তল্লাশি চালানো হতে পারে বলে সূত্রের খবর। একইসঙ্গে তদন্ত চলাকালীন উঠে আসা বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে বীরভূম জেলার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হতে পারে সিবিআইয়ের তরফে।
সিবিআই সূত্রে খবর, আজ ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অনুব্রত মণ্ডলকে। আগামীদিনে ডাকা হতে পারে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়েকেও। ইতিমধ্যে সিবিআই-এর হাতে এসেছে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ের নামে থাকা দুটি কোম্পানির তথ্য। গরুপাচারের টাকা কি কোনওভাবে এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে ইনভেস্ট করা হত, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বেহালায় তৃণমূলের অনুষ্ঠানে ঘুরিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই অবস্থানকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছে বিরোধী দলগুলো। একযোগে আক্রমণ করেছে বিজেপি-কংগ্রেস। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'তৃণমূলের নৌকা ডুবতে চলেছে। মানুষ বুঝতে পারছে তৃণমূল চোরদের দল। অনুব্রত মণ্ডল সাংসদ, বিধায়ক না হয়েও মেডিক্যাল কলেজের মালিক। এমনটা শোনা যাচ্ছে। চুরি না করলে এমনটা কী করে হয়? আগে শুনতাম চোরের মায়ের বড় গলা, এখন চোরের দিদির বড় গলা।'
এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ঝাড়খণ্ডে বিধায়ক কেনবেচা বাংলার পুলিস আটকেছে। এদিন সেই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের পাল্টা, 'উনি এ রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক চুরি করে পিএসির চেয়ারম্যান করেছে। আরও অনেক বিরোধী বিধায়ককে কিনেছেন।'
একই সুর শোনা গিয়েছে সিপিএম-র গলায়। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'বেহালার যিনি বিধায়ক আগে জেলে গিয়েছেন। বেহালায় বসে তিনি অনুব্রতর কথাই বলে গেলেন। অনুব্রত মণ্ডল কেন এমএলএ, এমপি না, সেটা দলনেত্রীর বিষয়। উনি যা বলেছেন তার কোনও ব্যাখ্যা বা যুক্তি নেই। যেহেতু অনুব্রতর কাছে মধুভান্ড আছে, তাই বেহালায় দাঁড়িয়ে অনুব্রতর কথা বলে গেলেন। আসলে ভয় পেয়ে হালুম করলেন।'
এদিন বেহালার জনসভায় মমতার প্রশ্ন, 'কেষ্ট কী করেছিল? ওকে ধরলে কেন? একটা কেষ্টকে জেলে পুরলে হাজার কেষ্ট তৈরি হবে। কেষ্টরা এজেন্সিকে ভয় পায় না। প্রতি ভোটে ওকে নজরবন্দি করে রাখে।'
গ্রেফতারির দিন তিনেক পর ঘুরিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) পাশে থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। রবিবার বেহালায় (Behala) স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকেই মমতার প্রশ্ন, 'কেষ্ট কী করেছিল? ওকে ধরলে কেন? একটা কেষ্টকে জেলে পুরলে হাজার কেষ্ট তৈরি হবে। কেষ্টরা এজেন্সিকে ভয় পায় না। প্রতি ভোটে ওকে নজরবন্দি করে রাখে।' এভাবেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের খাসতালুকে দাঁড়িয়ে বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতির পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি। যদিও প্রায় ঘণ্টাখানেকের বক্তৃতায় নেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গ।
এদিন তাঁর বক্তব্যের প্রথম থেকেই রাজ্যের তিন বিরোধী দলকে আক্রমণ শানিয়েছেন। সারদা-কাণ্ডের উত্থান প্রসঙ্গে নাম না করে সুজন চক্রবর্তী, খুনের মামলা প্রসঙ্গে ঘুরিয়ে অধীর চৌধুরী এবং মির্জাফর নাম উচ্চারণ করে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, 'মাঝরাতে কেন অনুব্রতর বাড়িতে ঢুকেছে এজেন্সি, ওর ঘরবাড়িতে তাণ্ডব করে তছনছ করে দিয়ে এসেছে। তৃণমূলকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ২০২৪-এ মোদী সরকারই থাকবে না।'
এদিন আর কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
গরু (Cow) ও কয়লা পাচারকাণ্ডে (Coal Smuggling) অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলের ৪৩ টি সম্পত্তির (Property) হাদিশ পেয়েছে সিবিআই (CBI)। এর মধ্যে তাঁর দেহরক্ষী সায়গলের (Saigal) সঙ্গে যৌথভাবে রয়েছে বেশ কিছু সম্পত্তি। বাকি সম্পত্তি রয়েছে তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে। সেই বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁর আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে সিবিআইয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।
সিবিআই সূত্র অনুযায়ী, এনামুল বীরভূম থেকে যে সব গরু পাচার করত, তার সবটাই জানতেন অনুব্রত। তাঁকে না জানিয়ে একটি গরুও পাচার হয়নি। এমনটাই বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয়েছে সিবিআই। এখান থেকেই গরু পাচারের সঙ্গে অনুব্রত সরাসরি যুক্ত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে বলে সিবিআই মনে করছে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে যাওয়া গরু, কয়লা, বালি ও পাথরভর্তি গাড়ির নম্বর পাঠানো হত অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গলের কাছে। পাচারের পথ নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিস কর্তাদেরও তা আগাম জানিয়ে রাখতেন অনুব্রত। এই কাজে ব্যবহারের জন্য সায়গলের কাছে ছিল ২২টি মোবাইলের হ্যান্ডসেট। নেওয়া হয়েছিল ৫০টি সিম। মৃত অথবা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির নথি ব্যবহার করে সেগুলি সংগ্রহ করা হয় বলেই অভিযোগ। কললিস্ট ঘেঁটে সংশ্লিষ্ট জেলার ওসি-আইসিদের সঙ্গে ফোনালাপের তথ্য সামনে এসেছে। অফিসারদের দাবি, পাচার কারবার থেকে উঠে আসা যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করতেন সায়গল।
অনুব্রত মণ্ডলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। শুক্রবার আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে তাঁকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ফিরে সিজিও কমপ্লেক্সে চা খেয়েছেন তিনি। এদিন সকালে একবার অনুব্রত মণ্ডলের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। দু'বার নেবুলাইজার নিয়ে আপাতত স্বাভাবিক তিনি। শুক্রবার বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এক সিবিআই কর্তার উপস্থিতিতে স্পিকার অন করেই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন অনুব্রত। আধ ঘণ্টার জন্য তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে গিয়েছেন আইনজীবী।
জানা গিয়েছে, রাতে সিপিডব্লিউডি ক্যান্টিন থেকে আনা খাবার খেয়েছেন তিনি। সকালে খাচ্ছেন ভাত, রাতে রুটি-সবজি। শুক্রবার রাতে তাঁকে গেস্ট রুমে রাখা হবে। দেওয়া হবে তক্তার বিছানা। টিভি দেখার ইচ্ছা হলে তাঁর ঘরে লাগতে পারে টিভিও। সম্ভবত শনিবার থেকে পুরোদমে তাঁকে জেরা শুরু করবে সিবিআই।
সূত্রের খবর, তাঁর গ্রেফতারিতে দলের প্রতিক্রিয়া এবং মানুষের প্রতিক্রিয়া কী? এক সঙ্গীর থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন অনুব্রত। তাঁর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টাই একজন সঙ্গী থাকছেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। বীরভূম থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা তাঁর জন্য মুড়ি ও জামাকাপড় পাঠিয়েছেন। এসএসকেএম হাসপাতালের লিখে দেওয়া ওষুধেই এদিন সায় দিয়েছে কমান্ড হাসপাতাল।
এদিকে, তাঁর গেস্ট রুমের নজরদারিতে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি একা থাকতে পারতেন না। তাই তাঁর ঘরে একজন করে সঙ্গী থাকতে অনুমতি দিয়েছে সিবিআই।
পূর্ব ঘোষণা মতো সেপ্টেম্বরে নবান্ন অভিযানের ডাক বিজেপির। ৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গ বিজেপির তরফে এই কর্মসূচি ডাকা হয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করতে সমাজের সবস্তরকে যোগ দিতে আহ্বান জানান বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর আবেদন, 'মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে এই লড়াই। তাই সাধারণ নাগরিক কোনও দল করে না কিন্তু প্রসাশনিক বঞ্চনার স্বীকার, চাকরিপ্রার্থী যারা দীর্ঘদিন অবস্থান করছেন, প্রকৃত বুদ্ধিজীবী, যাদের মেধা পয়সার কাছে বিক্রি হয় না। এঁরা সবাই এই কর্মসূচিতে যোগ দিন'।
এদিন সুকান্ত মজুমদার একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন। অনুব্রতর গ্রেফতারি থেকে রাজ্যের তিন মন্ত্রীর হাইকোর্টে দ্বারস্থ হওয়া। এই জাতীয় নানা ইস্যুতে সরব ছিলেন তিনি। এদিন রাজ্যের তিন মন্ত্রী হাইকোর্টে আবেদন করেছে, সম্পত্তিবৃদ্ধি সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামালায় যাতে ইডিকে যুক্ত না করা হয়।
এই পদক্ষেপকে খোঁচা দিয়ে বিজেপি সাংসদ বলেন, 'এটা খানিকটা ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি মতো। এতদিন আমরা টাকার পাহাড় দেখেছি। এবার টাকার এভারেস্ট দেখবো। তাই যেসব মন্ত্রীদের সম্পত্তিবৃদ্ধি পেয়েছে তাঁরাই আদালতে গিয়েছিলেন।'
বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) গ্রেফতারি (arrest) নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতার দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর (West Medinipur), বীরভূম (Birbhum) জেলার একাধিক জায়গায় শুক্রবারই বের হয় তৃণমূলের মিছিল। অন্যদিকে, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর কলকাতায়ও (Kolkata) মিছিল বের করে তৃণমূলের ছাত্র-যুব শাখা। "তদন্তের নামে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ চলছে না, চলবে না"- স্লোগানে উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এই মিছিলটি রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটি (Rabindrabharati University) থেকে চিড়িয়ামোড় (chiriamore) পর্যন্ত যায়। মিছিলে পা মেলায় বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।
পাশাপাশি ইডি, সিবিআই (CBI) পক্ষপাতদুষ্ট। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ পূরণে ইডি, সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনই অভিযোগ তুলে শুক্রবার শহর শিলিগুড়ির রাজপথে নামল দার্জিলিং জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বরা। শিলিগুড়ি (Siliguri) কলেজের গেট সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। সেই মিছিলে অংশ নেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি, চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যরাও। তাঁদের দাবি, নিরপেক্ষ তদন্ত করে দুর্নীতিগ্রস্থ সকলকে গ্রেফতার করতে হবে।
একই সঙ্গে "ইডি, সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো যাবে না" পাশাপাশি একাধিক প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল সমর্থিত মহিলারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের খালিনা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে তৃণমূল কর্মীরা। বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি ঘোষণার পর অভিনব প্রতিবাদে অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে সিবিআই বোলপুরে অনুব্রত-র বাড়িতে যে নোটিস দেয় তাতে তাঁকে গরু পাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। পরে বিকেলের দিকে তাঁকে গ্রেফতার বলে ঘোষণা করা হয়। অনুব্রতর বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। বুধবার মাঝরাতে বোলপুরে পৌঁছয় সিবিআই টিম। বৃহস্পতিবার সকাল ৯.৪৫ মিনিট নাগাদ সিবিআইয়ের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে। সূত্রের খবর, তাঁকে হাজিরা এড়ানো প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেন আধিকারিকরা এবং আটক করে আসানসোলে নিয়ে যায়।
প্রসূন গুপ্ত: প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের ডাকসাইটে নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর টেলিভিশনে ঘন্টার পর ঘন্টা খবর ছিল তাঁকে নিয়ে। খবরের কাগজে পাতার পর পাতাজুড়ে পার্থ-অর্পিতার খবর। প্রাক্তন মন্ত্রীর কতজন বান্ধবী, তাঁদের কোথায় বাড়ি, আরও কত টাকা উদ্ধার হল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখানেই শেষ নয় পার্থ কতটুকু বললেন ইডিকে, পার্থ অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরায় কী বেরোল। এই ধরনের খবরে ঝোঁক থাকতো আম আদমির। ট্রাম-বাস, ট্রেনে আলোচনার বিষয়বস্তুও তাঁরাই। পার্থ কী খেলেন, কোথায় শুলেন এই করতে করতে পার্থর খবরে ম্রিয়মান হয়ে গেলো অনুব্রত-কাণ্ডে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে শুধুই অনুব্রত। বাড়ি ঘিরে নিয়ে প্রথমে আটক, তারপর বিকেলের দিকে গ্রেফতার। লহমায় লহমায় পরিবর্তন হলো অনুব্রত-কাণ্ড। বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরে। তারপর এদিন সকাল থেকে মাত্র একটাই খবর, অনুব্রত সকালে ডায়বেটিক ডায়েট মেনে চিনি ছাড়া চা, বিস্কুট এবং মুড়ি খেয়েছেন। এরপর আর খবর নেই, রহস্য এখানেই কেন অনুব্রতর অবস্থান পাওয়া যাচ্ছে না?
পার্থ ও অনুব্রতর মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রথমত অনুব্রত সংগঠন করা নেতা। বীরভূম জেলার পাতা নড়তো না তাঁর আদেশ ছাড়া। রাঙা মাটির দেশে একপ্রকার 'মুকুটহীন সুলতান' ছিলেন তিনি। এই জনপ্রিয়তা পার্থর কোথায়? পার্থকে গ্রেফতারের সঙ্গে ইডির হাতে এসেছিলো কোটি কোটি টাকার বান্ডিল এবং মহিলা বান্ধবীর প্রসঙ্গ। এই অবস্থান পার্থর বিপক্ষে গিয়েছে। দলও তাঁর দায় ঝেড়ে ফেলেছে। অনুব্রতর ক্ষেত্রেও দলের অভিমত অপরাধ প্রমাণ হলে রাজ্য রাজনীতির কেষ্ট মণ্ডলকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত অপরাধের দায়িত্ব নেবে না দল। কিন্তু হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে অনুব্রতর নাম আসা সত্বেও তৃণমূলের হাজার হাজার সমর্থক তা মানতে নারাজ। তাঁরা ক্ষিপ্ত, তাঁদের বক্তব্য মদন মিত্রদের মতোই অনুব্রত ফেঁসে গিয়েছেন। দুটি ঘটনাই দলের উচ্চ নেতাদের নজরে এসেছে।
আজ এবং আগামীকাল এই নিয়ে রাজ্যের জেলায় জেলায় আন্দোলনে নামছে তৃণমূল যদিও প্রসঙ্গ অনুব্রত নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা।
বৃহস্পতিবার অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal) আদালতে তুলে সিবিআই দাবি করেছিল, তৃণমূল নেতার দেহরক্ষী সায়গল হোসেন অনুব্রতর হয়েই টাকা তুলত। সিবিআই (CBI) সূত্রের খবর, গরু পাচার করার জন্য অনুব্রতর সঙ্গে এনামুল হকের (Enamul Haq) একটা রফা হয়েছিল। সেই রফায় বলা ছিল, প্রত্যেক তিন মাস অন্তর ছয় কোটি টাকা করে দিতে হবে এনামুলকে। এমনকি, এই কথোপকথন হত ফোনের মাধ্যমেই।
এদিকে, অনুব্রতকে গ্রেফতারের দিনেই তাঁর চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারীর বয়ান রেকর্ড করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি সিবিআই র্যাডারে আসতে চলেছে বোলপুর হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মুও। বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মুকে সিবিআইয়ের নোটিস পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, শুক্রবার ভোররাতে অনুব্রতকে নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌছয় সিবিআই। তারপর সেখানেই অস্থায়ী ভাবে ক্যাম্প খাটে তৃণমূল নেতার বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদিন সকাল থেকেই ফের কেন্দ্রীয় সংস্থার জেরার মুখে অনুব্রত মণ্ডল। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন আধ ঘণ্টা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন তৃণমূল নেতা।
জানা গিয়েছে, সায়গল হোসেনের বয়ানের ভিত্তিতে অনুব্রতকে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে পারেন সিবিআই অফিসাররা। কারণ, সায়গলের সঙ্গে অনুব্রতর বেশ কিছু ফোনের রেকর্ডিং মিলেছে। এমনকি, একজন নিরাপত্তারক্ষী হয়ে কীভাবে তার এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হল, এর উৎস কোথায়? সেই বিষয় সেসময়ে সেহগালকে প্রশ্ন করা হয়। সেই সংক্রান্ত বিষয়ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অনুব্রতকে।
বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির নেপথ্যে কী রয়েছে এই গরু পাচার। এই সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখতে চাইছেন সিবিআই অফিসাররা।
গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই (CBI) অনুব্রত মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার আসানসোলে নিয়ে যায়। কিন্তু এদিন সকালে যখন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতিকে (Anubrata Mondal) যখন গ্রেফতার করে তখন লোকে-লোকারণ্য তাঁর বোলপুরের বাড়ি। কিন্তু বেলা গড়াতেই শুনশান হয়ে যায় সেই এলাকা। পাশাপাশি তালা পড়ে অনুব্রতর বাড়ি এবং অফিসে। কিন্তু সেই ফাঁকা বাড়ির সময় ঘুরতে দেখা যায় এক গরুকে। কিছুক্ষণ সেই গরু, অনুব্রতর বাড়ির মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়েও থাকে। আবার রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করে।
এদিকে, বীরভূম থেকে অনুব্রতকে যখন আসানসোল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন রাস্তায় একাধিকবার তাঁকে গরু চোর কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। এমনকি, আসানসোল আদালতেও বিক্ষোভ দেখায় বাম কর্মী-সমর্থকরা। তাঁর উদ্দেশে ছোড়া হয় জুতোও।
এদিন তাঁকে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই অনুব্রতকে আনা হয়েছে কলকাতায়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কলকাতা আসার পথে একাধিকবার তাঁর কনভয় দাঁড়ায়। তাঁর কাছে গিয়ে সংবাদমাধ্যম কিছু জানতে চাইলে অনুব্রত মণ্ডল কিছুই জানাবেন না বলে হাত নেড়ে জানিয়ে দিন।
বৃহস্পতিবার সকালে অনুব্রতর গ্রেফতারিকে (Anubrata Arrest) স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলো। এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary) বলেন, 'সিবিআইয়ের দেশে গরিমা আছে। তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলছিল মানুষ। তাই সিবিআই সঠিক কাজ করেছে। আইনের আওতায় এনে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাবে সিবিআই। অনুব্রত মণ্ডল একজন মাফিয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata) প্রশ্রয়ে-আশ্রয়ে একজন মুদির দোকানি থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক।'
এদিন সিপিএম-র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'বিড়াল যদি বলে মাছ খাব না, তাহলে কে বিশ্বাস করবে? কয়লা পাচার-কাণ্ডে নাম না জড়ালে কেউ নাম জানত অভিষেকের। আর ওই বৈভবের টাকায় তো শহরজোড়া হোর্ডিং।'
শুধু বিজেপি বাম-নয় সরব ছিল কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'বাংলার এই দুর্নীতি নিয়ে আমরা আগেও বলেছি। এখন যেটা দেখছেন সেটা হিমশৈলের চূড়া।' দেখুন আর কী বললো বাম-বিজেপি-কংগ্রেস।
এদিকে, কোনও অনৈতিক কাজ এবং দুর্নীতিকে তৃণমূল প্রশ্রয় দেয় না। দুর্নীতির (Corruption) বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দলের। অনুব্রতর (Anubrata Mondal) গ্রেফতারির পর জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার শাসক শিবিরের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Minister Chandrima Bhattacharya) এবং প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। চন্দ্রিমাদেবী জানান, দলনেত্রী-সহ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছেন, মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর বা মানুষকে যদি কেউ ঠকায়, সেই কাজকে দল সমর্থন করে না। আগে এবং আজও তৃণমূলের এই বিষয়ে অবস্থান একই। মানুষের সমর্থনে তিন বার তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই মানুষের আশীর্বাদ ছাড়া কোনও সম্পদে তৃণমূলের আর কোনও আগ্রহ নেই।