দমদমের (Dumdum) সুভাষনগর এলাকায় মাংসের দোকান বসা ঘিরে স্থানীয় এক দোকানিকে মারধরে অভিযুক্ত কাউন্সিলরের অনুগামীরা। এই ঘটনায় আহত এক স্থানীয় মহিলা। দু'পক্ষের তরফে দমদম থানায় (Dumdum Police Station) অভিযোগ দায়ের। অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল (TMC) কাউন্সিলর ঊষা দেবনাথের স্বামী তাঁর দলবল নিয়ে এসে ওই মাংসের দোকানিকে সংশ্লিষ্ট জায়গায় বসতে বারণ করেন। কাউন্সিলরের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ড কমিটির সদস্য অন্য মহিলারা এসে বলেন, 'বাড়ির মালিকের আপত্তি আছে তাই এখানে মাংসের দোকান বসানো যাবে না।' এই থেকেই শুরু বচসা এবং কাউন্সিলরের অনুগামীদের সেই মাংস বিক্রেতা মহিলার উপর চড়াও হওয়ার ঘটনা। এমনটাই অভিযোগ করেছেন সেই মাংস ব্যবসায়ীর ছেলে।
সেই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন স্থানীয় এক মহিলা প্রিয়াঙ্কা দাস। তাঁর অভিযোগ, 'ঘটনার ভিডিও মোবাইলবন্দি করছি এই সন্দেহে তাঁর উপরও চড়াও হয়েছিলেন কাউন্সিলরের অনুগামীরা।' প্রিয়াঙ্কা দাসের শরীরের একাধিক জায়গায় মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট। যদিও গোটা এই অভিযোগ খারিজ করেছেন কাউন্সিলর ঊষা দেবনাথ এবং তাঁর অনুগামীরা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জানান, বাড়িওয়ালা বাড়ির সামনে থাকা মাংসের দোকান নিয়ে আপত্তি তুলে আমাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তখন আমি কয়েকজনকে পাঠিয়ে ওই মহিলা ব্যবসায়ীকে ওখান থেকে উঠে যেতে বলি। আমাদের মেয়েরা গেলে ওই মহিলা উলটে চপার নিয়ে ওদের পিছু ধাওয়া করে সোনার চেন ছিনিয়ে নিয়েছেন।
তাই অভিযুক্তর শাস্তির দাবিতে আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। এদিকে, ওই মাংস ব্যবসায়ীর ছেলের দাবি, 'যে বাড়ির সামনে তাঁদের দোকান, সেই বাড়ির মালিকের কোনও আপত্তি ছিল না। আমরা কথা বলেই নিয়েছিলাম। সেই প্রমাণও আছে। কিন্তু আমার মা-কে এখান থেকে তুলতে, কাউন্সিলরের দলবল বাড়িওয়ালাকে ভয় দেখিয়ে সিদ্ধান্ত বদল ঘটাতে বাধ্য করে। তারপরেই এই হামলা।'
এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সাংগঠনিক দায়িত্ব অভিষেকের (Abhishek) কাঁধে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ ছাড়াও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও বটে। তাঁর নেতৃত্ব হয়তো মেনেও নিচ্ছেন দলের ছোটবড় নেতারা। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এঁরা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Bandyopadhyay) অস্বীকার করছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে মমতাই দলের মুখ এবং সারা বাংলায় তিনি ভোটের প্রার্থী বলে দাবি করেন, সেখানে নতুন মুখের আবির্ভাব?
দক্ষিণ কলকাতায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই বড় বড় হোর্ডিং (Hoarding) অভিষেকের ছবি সমৃদ্ধ। যেখানে ক্যাপশন আছে "আগামী ৬ মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল"। এছাড়াও হোর্ডিংয়ে আছে "ঠিক যেমন মানুষ চায়"। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই যে, সম্প্রতি দলের জেলা শহর ইত্যাদির নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে। বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রী হয়েছেন, যাঁরা নাকি অভিষেক ঘনিষ্ঠ।
অন্যদিকে, বিরোধীরা বিশেষ করে সিপিএম-কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি ব্র্যান্ড শিন্ডে। অর্থাৎ যেভাবে শিবসেনা ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে এনডিএ, তেমনটাই নাকি হতে চলেছে বাংলায়, অভিষেক হয়তো নতুন মুখ। এ কথাকে আমল দেওয়া হয়নি তৃণমূলের পক্ষ থেকে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, হোর্ডিংয়ে যা লেখা আছে তা তো অভিষেক সরাসরি বলেইছেন। এতে দলে বিভেদের কী আছে?
তবুও প্রশ্ন উঠছে অনেক। প্রথমত, ২১ জুলাইয়ের আগে দলের কর্মীদের জানানো হয়েছিল, নিজের ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার করা চলবে না। অভিষেক নিজে বিভিন্ন সভায় বলেছেন, দলের একজনই নেত্রী, বাকি সবাই কর্মী। এরপরেও ব্যতিক্রমী ওই হোর্ডিং এল কীভাবে? জানা গেল, 'আশ্রিতা' এবং 'কলরব' নামক দুটি সংস্থা এই হোর্ডিং লাগিয়েছে। যদিও দুটি সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই, কিন্তু ওই সংস্থার মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ঘোরতর তৃণমূলী।
এবার খেলা দিবসের পর নতুন খেলা কোনদিকে যায়, সেটাই দেখার।
উত্তর দিনাজপুরে (North DinajPur) প্রকাশ্যে তৃণমূল (TMC) বিধায়কের সঙ্গে ব্লক সভাপতির সংঘাত। মঙ্গলবার রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে ইসলামপুরের ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক (TMC MLA) আব্দুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, 'আমি মমতা দি-কে বারবার বলে আসছি এই সন্ত্রাসবাদীকে নেতা না করতে। একটা সন্ত্রাসবাদীকে এখানে রাখবেন না। আমি মোট ১১ বার বিধায়ক হয়েছিল। কিন্তু কোনও বার সন্ত্রাস করে ভোট করিনি। সংগঠন এবং মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে লড়েছি।'
তিনি জানান, বুথ ক্যাপচার, হিংসার আশ্রয় নিয়ে ভোট করিনি। কিন্তু এখন এই সন্ত্রাসবাদী হুমকি নিয়ে ভোট করাচ্ছে। অভিষেক নিজেই বলেছে ওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে কথা দিয়েছিল, করিম দা আমি আপনাকে মর্যাদা দেব। আপনি সম্মানীয় ব্যক্তি, আপনার সম্মান ফিরিয়ে দেব। কিন্তু এখন সেই সম্মান দিচ্ছেন না কেন? আগেরবার আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছে, আগামি দিনে দাঁড়ালে আমাকে হারানোর চেষ্টা করবে। এই লোককে কেন দায়িত্ব দিচ্ছেন।
রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষভ উগড়ে দিয়ে ইসলামপুরের বিধায়ক বলেন, 'যে ব্যবহার আমাকে দিচ্ছে নেতৃত্ব, সেই ব্যবহার আমার প্রাপ্য নয়।'
এদিকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই জাকির হোসেন জানান, বাংলায় কারও ব্যক্তিগত এলাকা নেই। বাংলা একটাই, আর সেই একটা বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠন করছে। আমার নিজের কিছু নেই যা আছে দলের। আমার পিছন থেকে তৃণমূলের প্রতীক সরলে সাম্নের দিকে ফাঁকা হয়ে যাবে। দলের শক্তি সর্বশক্তি, আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানুষের সঙ্গে থেকে দলের কাজ করা। আগামি দিনেও নিষ্ঠা ভরে সেই কাজ করব। তিনি বলেন, 'দলের একজন বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনা করব না। উনি কী বলেছেন সেটা দল দেখে বিচার করবে।'
এই সংঘাতকে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। দলের নেতা তাপস বিশ্বাস বলেন, 'তৃণমূলের এক বিধায়ক, তাঁর দলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে বলছে। তৃণমূলের ব্লক, অঞ্চল বা জেলা সভাপতি হতে গেলে তাঁকে বুথ দখল, কাট্মানি আদায়ে পটু হতে হবে। বিরোধী কণ্ঠরোধে পটু হতে হবে। তৃণমূলের ইসলামপুর ব্লক সভাপতির এসব যোগ্যতা আছে। কিন্তু ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক, মানুষের ভোটে জিতে এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বুথ দখল বা সন্ত্রাসের অভিযোগ নেই। উনি ভালো লোক, চাইছেন এখানে দলটা ভালো ভাবে ভালো পথে চলুক।'
নবান্ন অভিযানের (Nabanna Abhijan) দিন বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ঝাণ্ডার সঙ্গে ডাণ্ডা বহনের আবেদন করেছেন দলের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder)। যদিও তাঁর এই আবেদন ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির (BJP) সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের যুক্তি, 'নবান্ন অভিযানের দিন পুলিস জল কামান ছুঁড়বে সেই কামানের মাঝে আমাদের পতাকা সোজা করে ধরে রাখতে ডাণ্ডা দরকার।'
বারাসাতের এক রক্তদান শিবিরে থেকে বিজেপি সাংসদ বলেন, 'তৃণমূল নেতারা আমাদের নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চুরি করছে। তার বিরুদ্ধে নবান্ন অভিযান হবে। সেখানে ঝাণ্ডা নেবেন, ঝাণ্ডার সাথে ডাণ্ডাও নেবেন।' এরই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সুকান্ত জানান, নবান্ন অভিযানে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়বে, জলকামান চালাবে। সেখানে আমাদের আমাদের পতাকা শক্ত করে ধরে থাকতে হবে এবং তার জন্য ডাণ্ডাই লাগবে।' হিংসার বদলে হিংসার রাজনীতি ভারতীয় জনতা পার্টি সমর্থন করে না। আমরা সংবিধানে বিশ্বাসী।
পাশাপাশি তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, 'আমাদের কর্মীদের গায়ে হাত দিয়ে যদি ভাবেন বেঁচে যাবেন তবে ভুল। আজ না হয় কাল আপনাদের কীভাবে ট্রিটমেন্ট করতে হয় তার ব্যবস্থা করব।' এদিন বাইক র্যালির মাধ্যমে মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসাত ডাকবাংলো মোড় হয়ে সেই রক্তদান শিবিরে অংশ নিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি।
এদিকে, সুকান্ত মজুমদারের এই হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'গণআন্দোলন কাকে বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম জমানায় শান্তিপূর্ণ ভাবে করে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর এই যে ঝাণ্ডার সঙ্গে ডাণ্ডার তুলনা টেনে হিংসা, সন্ত্রাসে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। এই মন্তব্য প্ররোচনামূলক।'
দলনেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যব্যাপী তৃণমূল পালন করছে খেলা হবে দিবস (Khela Hobe Diwas)। মঙ্গলবার দুটি পৃথক মিছিল (TMC Rally) বের হয়েছিল মানিকতলা এবং সল্টলেকে। মানিকতলার মিছিলে দেখা গিয়েছে অভিনব প্রতিবাদ। এক ব্যক্তিকে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary) সাজিয়ে মিছিলে হাঁটানো হয়। সেই ব্যক্তির দেহ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল ফ্লেক্স। যাতে লেখা, 'আমি শুভেন্দু অধিকারী আমি চোর।' এই প্রতিবাদ বিষয়ে তৃণমূলের এক নেতা বলেন,'আমরা আজ কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে, মমতা সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পক্ষে সোচ্চার হতে পথে নেমেছি।'
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জুজু দেখিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে না। নারদা-কাণ্ডে শুভেন্দু অধিকারীর নামে এফআইআর আছে, সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নাম আছে। তারপরেও ইডি এবং সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই মিছিলের অন্যতম আয়োজক সেই তৃণমূল নেতার দাবি, 'শীত গ্রীষ্ম বর্ষা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভরসা।'
এই মিছিলের সমালোচনায় সরব বিজেপি। দলের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'যারা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, তাদের মুখে দড়ি পরিয়ে সিবিআই গামছা বেঁধে জেলে নিয়ে যাবে। এঁরা প্রত্যেকেই জেলে যাবেন। খেলা হবে দিবসের নামে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি চেষ্টা করছে। নিজেদের দুর্নীতি থেকে মুখ ঘোরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এঁদের রাস্তায় নামিয়েছে।'
মঙ্গলবার রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে খেলা দিবস (Khela Hobe Diwas)। রবিবার বেহালার সভামঞ্চ থেকে এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। এবার এই 'খেলা হবে' দিবসে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি (BJP)। ফের রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার মতো পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এদিন রাজ ভবনের (Raj Bhawan) সামনে দাঁড়িয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, 'বিজেপিও ভালো খেলতে পারে। কিন্তু আমাদের খেলার মতো মাঠ তৈরি করে দিন, আমরা ভালোই ব্যাটিং করব। শুধু মাঠ থেকে পুলিসকে সরিয়ে দিন। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর মিথ্যা মামলা চাপানো বন্ধ করুন।'
পাশাপাশি তাঁর আশঙ্কা, 'সাম্প্রতিককালে শাসক দলের একের পর এক নেতামন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তাতে সামগ্রিকভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলায় প্রভাব পড়তে পারে। ১৬ অগাস্ট ১৯৪৬ সালে কুখ্যাত গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং সংগঠিত হয়েছিল। আর ১৬ অগাস্ট মুখ্যমন্ত্রী খেলা হবে দিবসের ডাক দিয়েছেন। অর্থাৎ বিরোধীদের উপর হামলায় ইন্ধন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, আমরা সেটাও রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।'
বিজেপির এই রাজ ভবন সফরকে পাল্টা কটাক্ষের সুরে বিঁধেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, 'যারা উন্নয়নের পরিবেশে বেড়ে ওঠে না, যাদের কোনও জনভিত্তি নেই, যারা মানুষের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, তাঁরাই অন্য কোনওভাবে না পেরে শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ তৈরি চেষ্টা করছে। তারা জেনে রাখুক বাংলায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আছে। তাই শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করলে প্রশাসন তাদের মতো করেই ব্যবস্থা নেবে।'
পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, 'সন্ত্রাসের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে বাংলা দখলের চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কিন্তু মানুষ প্রত্যাখ্যাত করেছে। তাই আগামি দিনে ওরা হিংসার আশ্রয় নিলে বাংলার মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'
কামারহাটির জনসভায় সৌগত রায়ের (TMC MP Sougata Ray) মন্তব্য ঘিরে শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। একযোগে সমালোচনার সুরে বিঁধেছে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের (BJP) রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, 'একজন অধ্যাপকের মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনে লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের (TMC) দৌলতে বাংলার রাজনীতি একদম নর্দমায় পরিণত হয়েছে।' সরব সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও (Sujan Chakraborty)।
তিনি বলেন, 'সৌগত রায় আজ নোংরা, ফ্যাসিস্টদের মতো কথা বলেছে। হিম্মত আছে, কারণ আমরা সমালোচনা করবই। রাজ্যজুড়ে যা চলছে, তার সমালোচনা হবে না? এই মুহূর্তে তৃণমূলের বড় সমালোচক সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা।'
একধাপ এগিয়ে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, 'চাপে পড়ে উনি এ কথা বলেছেন। সৌগত দা-কে যতটা চিনি এই ধরনের কথা বলার মানুষ নয়।'
আর কী বললেন বিরোধী নেতারা?
এদিকে, কামারহাটির জনসভায় দমদমের সাংসদ মন্তব্য করেন, 'তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে। সেইদিনের জন্য অপেক্ষা করুন।' এতেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। যদিও সমালোচনা শুরু হতে ঢোক গিলেছেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেছেন,'এই মন্তব্য রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম। না করলেই ভালো হত। ভুল হয়েছে।'
তৃণমূলের (TMC) সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো (Shoe) তৈরি হবে। সেইদিনের জন্য অপেক্ষা করুন। রবিবার কামারহাটির (Kamarhati) এক জনসভায় এমনই মন্তব্য করলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)।
তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ছিল, আছে এবং থাকবে। পশ্চিমবাংলার মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল তৃণমূল কংগ্রেস। আমরা ২০২৬ পর্যন্ত ম্যানডেট পেয়েছি, আমাদেরই সরকার চলবে। আর যারা আমাদের বেশি নিন্দা করছে, এরপর আমি বলব, তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে।
তাই আজ থেকে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করুন। দল যে সব প্রোগ্রাম দেবে, সেইসব অনুসরণ করে চলুন।
এবার নিজের কানে শুনুন, সৌগত রায়ের সেই মন্তব্য।
সৌগত রায়ের মন্তব্য ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল প্রবীণ সাংসদের বিতর্কিত ওই মন্তব্য। তিনি এদিন আরও বলেন, তৃণমূল কিন্তু রাস্তায় আছে। আমরা কোনও দোষ করিনি যে আমাদের ঘরে ঢুকে যেতে হবে। বিজেপি, সিপিএমকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি, কামারহাটিতে তৃণমূলের সব চোর বলে মিছিল করলে তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেব যে পার্টি অফিসে ঢুকে যেতে হবে। সাবধান থাকবেন।
সামনের বার অধীরের বিজেপি ছাড়া আর কোথাও যাবার জায়গা নেই। বিজেপিতে গিয়েও অধীর চৌধুরী জিতবেন না। শুভেন্দু অধিকারী নাম নারদ কেলেঙ্কারিতে ছিল। অথচ একবারও শুভেন্দুকে ডাকেনি সিবিআই।
সৌগত বলেন, দুর্নীতি থেকে আমরা দলকে আলাদা করছি। কিন্তু নিরোপেক্ষ তদন্ত যদি না হয়, শাসকদল আবার রাস্তায় নামবে। ইডি-সিবিআইয়ের কলকাতার অফিস অবরুদ্ধ করে দেব।
শুক্রবার রাতে তুফানগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত শালবাড়ি দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস (Panchayet Office) খোলা ছিল রাতেও। রাতে পঞ্চায়েত অফিস খোলা কেন? তা নিয়ে যথারীতি রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো বিরোধীরা তালাবন্ধ করে বিক্ষোভ (Agitation) দেখালেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় গতকাল গভীর রাতে শালবাড়ি থেকে তিনজন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে আনে বক্সিরহাট থানার পুলিস। এর বিরুদ্ধে বক্সিরহাট থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। উপস্থিত ছিলেন কোচবিহারের বিজেপির সমস্ত বিধায়ক (BJP MLA)।বিধায়কদের দাবি, গতকাল যে সমস্ত বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেনি। মিথ্যা অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বক্সিরহাট থানার ওসি তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়ে তৃণমূলেরই অঙ্গুলি হেলনে এই সমস্ত কাজ করছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূলের অভিযোগ, সরকারি কর্মীদের কাজ করা নিয়ে বিজেপির চার বিধায়ক যা করলেন, তাতে তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকারের জনহিতকর প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে। তাই সরকারি অফিসে কাজও বেড়েছে। সেইসব কাজ অনেক সময় ৮ ঘণ্টা ডিউটি আওয়ার্স-এর মধ্যে করা সম্ভব নয়। তাই কর্মীরা বেশি সময় কাজ করছেন। কিন্তু বিজেপি অযথা বিক্ষোভ দেখিয়ে সব পণ্ড করে দিচ্ছে।
"বোম (bomb) ফাটিয়ে বিজয় উল্লাস করা বিজেপি (BJP) কর্মীদের এক মিনিটে শায়েস্তা করতে পারি। আমাদের লাখো অনুব্রত তৈরি রয়েছে।"- বিতর্কিত মন্তব্য আউশগ্রাম দু নম্বর ব্লকের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অরূপ মিদ্দার (Arup Middya)। তাঁর এমন মন্তব্যে তোলপাড় বর্ধমানের (Burdwan) রাজনৈতিক মহল। একটি দলীয় সভায় তিনি বলেন, "ফের খেলা হবে বিজেপির সঙ্গে, খেলা হবে সিপিএমের (CPIM) সঙ্গে এবং যারা আমাদের সঙ্গে থেকে বেইমানি করছে তাদের বিরুদ্ধেও খেলা হবে।"
তিনি আরও বলেন, "এখানে আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে খেলবো, বিজেপির বিরুদ্ধে খেলবো। আমাদের মধ্যে থেকে যারা আমাদের সঙ্গে বেইমানি করছেন, তাদের সঙ্গেও খেলব। গতকাল খবর পেয়েছি ভালকি এলাকায় বোম ফাটানো হয়েছে রাত্রি সাড়ে আটটা পর্যন্ত। আমি পুলিসকে বলে দিয়েছি সরকারটা এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের আছে। আমি যদি আমার ছেলেদের বলে দিই তাহলে ওদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিজেপি যে কটা করছে, খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের ব্লক সভাপতি থেকে এমএলএ সবাই বলেছেন শান্ত থাকতে, তাই এই সময় আমাদের শান্ত থাকতে হবে। আমাদের নেতাকে ধরে ওরা যদি মনে করে থাকে আমাদের সংগঠনকে শেষ করে দেবে, অত সোজা নয়। উনি যে বীজ বপন করে গিয়েছেন, আমাদের প্রত্যেকটি নেতারা সবাই নিজেরা অনুব্রত মণ্ডল তৈরি হয়ে আছে। আমাদের ভয় পাবার কিছু নেই। এলাকায় লাখো লাখো অনুব্রত মণ্ডল আছে।"
তবে এখানেই থামেননি তিনি, আরও জানান, "গতকাল বোলপুরে যে খেলা খেলেছে, সেটা গোটা ভারতবর্ষের বুকে কলঙ্ক। একটা অসুস্থ লোককে ধরতে ৪৭ টা গাড়ি নিয়ে
গিয়েছে। এটা গণতন্ত্রের লজ্জা। এটা বিজেপির লজ্জা। গরু ডানা গজিয়ে যায়নি। তুমি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তুমি সেনাবাহিনী, বিএসএফের হেড। তাহলে তুমি কী করছিলে? তোমাকে প্রথমে অ্যারেস্ট করতে হবে। কারণ, গরু পাচার যদি হয়ে থাকে তাহলে আমার নেতারা করেনি, তুমি করেছ। সেটা মিথ্যে করে আমার নেতাদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।"
তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতির এমন বক্তব্যে শোরগোল পড়েছে এলাকায়। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানান, "তৃণমূল তো চোর, তোলাবাজদের দল, তা অরূপ মিদ্দার কথাতেই প্রমান হচ্ছে। কী খেলা হচ্ছে তা মানুষ দেখছে।"
বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণের রাস্তায় রাজ্যের বিরোধী দলগুলো। এদিন ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে বঙ্গ বিজেপির ধর্নামঞ্চে বীরভূম তৃণমূলের সভাপতি-সহ রাজ্যের শাসক দলকে তীব্র কটাক্ষ করেন সুকান্ত মজুমদার। একই চড়া সুর শোনা গিয়েছে বাম এবং কংগ্রেসের গলায়। তবে বিরোধীদের এই সমালোচনার জবাব দিয়েছে ঘাসফুল শিবিরও। সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিন এই অভিযোগ করেন শাসক দলের সাংসদ সৌগত রায়।
শুক্রবার ওয়াই চ্যানেলের কর্মসূচি থেকে বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা, যিনি বলতেন শুঁটিয়ে লাল করে দেব। তিনি এখন ইডি-সিবিআইয়ের ভয়ে নিজেই লাল হয়ে গিয়েছেন। সিবিআই থেকে বাঁচতে বলছেন আমার পিছনে অপারেশন করে দিন।'
কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর খোঁচা, 'একে তো অনুব্রত গ্রেফতার, তারপর যদি শোনেন দলের কোনও পদ নেই তাহলে তো অক্সিজেন যাওয়া আরও বন্ধ হয়ে যাবে। প্রকৃত বিচার হোক। আমার কারও প্রতি প্রতিহিংসা নেই।' সুর চড়িয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, 'অনুব্রতকে বহিষ্কার করতে হবে। কিন্তু কিন্তু এঁরা সব চুনোপুটি, আসল কারা, মানুষ বলছে হাওয়াই চটি, কোটিপতি।'
কী বলছে বিজেপি
কী প্রতিক্রিয়া বাম-কংগ্রেসের
তবে বিরোধীদের এই আক্রমণের জবাবে দমদমের সাংসদ সৌগত রায় জানান, ইডি- সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইডিকে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটাও রাজনৈতিক বিষয়। অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে এখনই পার্টির কোনও স্ট্যান্ড নেই।
তাঁর নামে কোনো চার্জশিট নেই। দলের কাছে গোটা বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়।
বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) গ্রেফতারি (arrest) নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতার দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর (West Medinipur), বীরভূম (Birbhum) জেলার একাধিক জায়গায় শুক্রবারই বের হয় তৃণমূলের মিছিল। অন্যদিকে, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর কলকাতায়ও (Kolkata) মিছিল বের করে তৃণমূলের ছাত্র-যুব শাখা। "তদন্তের নামে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ চলছে না, চলবে না"- স্লোগানে উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এই মিছিলটি রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটি (Rabindrabharati University) থেকে চিড়িয়ামোড় (chiriamore) পর্যন্ত যায়। মিছিলে পা মেলায় বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।
পাশাপাশি ইডি, সিবিআই (CBI) পক্ষপাতদুষ্ট। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ পূরণে ইডি, সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনই অভিযোগ তুলে শুক্রবার শহর শিলিগুড়ির রাজপথে নামল দার্জিলিং জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বরা। শিলিগুড়ি (Siliguri) কলেজের গেট সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। সেই মিছিলে অংশ নেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি, চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যরাও। তাঁদের দাবি, নিরপেক্ষ তদন্ত করে দুর্নীতিগ্রস্থ সকলকে গ্রেফতার করতে হবে।
একই সঙ্গে "ইডি, সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো যাবে না" পাশাপাশি একাধিক প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল সমর্থিত মহিলারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের খালিনা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে তৃণমূল কর্মীরা। বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি ঘোষণার পর অভিনব প্রতিবাদে অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে সিবিআই বোলপুরে অনুব্রত-র বাড়িতে যে নোটিস দেয় তাতে তাঁকে গরু পাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। পরে বিকেলের দিকে তাঁকে গ্রেফতার বলে ঘোষণা করা হয়। অনুব্রতর বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। বুধবার মাঝরাতে বোলপুরে পৌঁছয় সিবিআই টিম। বৃহস্পতিবার সকাল ৯.৪৫ মিনিট নাগাদ সিবিআইয়ের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে। সূত্রের খবর, তাঁকে হাজিরা এড়ানো প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেন আধিকারিকরা এবং আটক করে আসানসোলে নিয়ে যায়।
এক বছরের মধ্যেই তৃণমূল (TMC) ছাড়লেন প্রাক্তন সাংসদ পবন বর্মা (Pawan Verma)। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata banerjee) উদ্দেশে ট্যুইট করে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন এই প্রাক্তন সাংসদ। একুশের ভোট পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দিল্লিতে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন জেডিইউয়ের (JDU) প্রাক্তন সাংসদ পবন বর্মা। সে সময় তাঁর সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেন হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা অশোক তানওয়ার এবং প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ কীর্তি আজাদ। অশোক তানওয়ার ইতিমধ্যে ঘাসফুল সঙ্গ ত্যাগ করে আপে (AAP) যোগদান করেছেন।
তৃণমূলে থাকলেও জাতীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় কীর্তি আজাদ। এবার একদা নীতীশ কুমার ঘনিষ্ঠ পবন বর্মা তৃণমূল ছাড়ায় জাতীয়স্তরে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঘাসফুল শিবির। এদিন নিজের ইস্তফাপত্রে পবন বর্মা লেখেন, ‘প্রিয় মমতাজি, অনুগ্রহ করে তৃণমূল থেকে আমার ইস্তফা গ্রহণ করুন। আমাকে দলে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো এবং আপনার সমর্থন ও সৌজন্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যোগাযোগের অপেক্ষায় রইলাম। আপনাকে শুভকামনা জানাই।’
এদিকে, রাজ্যে সিবিআই-ইডির জোড়া তদন্ত চাপে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল। এই দু'জনকে নিয়ে জাতীয়স্তরে কিছুটা হলেও মুখ পুড়েছে তৃণমূলের। তাই পবন বর্মা পদত্যাগ করে থাকতে পারেন। এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তবে আরও একটি সূত্র বলছে, একদা নীতীশ ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন এই আইএফএস ২০২০ সালে জেডিইউ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গেই বহিষ্কার করা হয় ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে।
কিন্তু সেই নীতীশ কুমার এখন বিজেপি সঙ্গ ছেড়ে মহাজোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। তাই সেই বৈরিতা ভুলে ফের জেডিইউ ফিরতেই তৃণমূল ছাড়লেন পবন বর্মা। ভূটান এবং সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করা পবন বর্মাকে ২০১৪ সালে রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল জেডিইউ-ই। তৃণমূলে তিনি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
কোনও অনৈতিক কাজ এবং দুর্নীতিকে তৃণমূল (TMC) প্রশ্রয় দেয় না। দুর্নীতির (Corruption) বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দলের। অনুব্রতর (Anubrata Mondal) গ্রেফতারির পর জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার শাসক শিবিরের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Minister Chandrima Bhattacharya) এবং প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। চন্দ্রিমাদেবী জানান, দলনেত্রী-সহ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছেন, মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর বা মানুষকে যদি কেউ ঠকায়, সেই কাজকে দল সমর্থন করে না। আগে এবং আজও তৃণমূলের এই বিষয়ে অবস্থান একই। মানুষের সমর্থনে তিন বার তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই মানুষের আশীর্বাদ ছাড়া কোনও সম্পদে তৃণমূলের আর কোনও আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো নিরপেক্ষ চেহারা হারিয়ে ফেলছে। সবার সঙ্গে নিরপেক্ষ ব্যবহার করুক তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এটুকু আশা আমরা করতেই পারি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দলের কারও বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু কেন্দ্রের শাসক দলের পক্ষে কেউ অভিযুক্ত হলে, সেই তৎপরতা দেখা যায় না।' এই অভিযোগ তোলার সময় তিনি সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের তিন বিধায়কের গাড়ি থেকে অর্থ উদ্ধারের প্রসঙ্গ তোলেন। এবং একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়েও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এভাবেও ঘুরিয়ে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।
তাঁর দাবি, 'বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা কর্তার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিরোধী দলনেতাকে ডাকাডাকি নেই, তাঁর বিরুদ্ধে কোণও কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা নেই। শুধু বিরোধী দলনেতা নয়, তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। কিন্তু ইডি, সিবিআই কেউই তাঁদের তদন্তের আওতায় আনছে না।'
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও জানান, বিচারব্যবস্থা, মাননীয় বিচারপতি সবার প্রতি আমাদের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। সবদিক খতিয়ে দেখেই বিচারব্যবস্থা পদক্ষেপ নেবে। তৃণমূলের তরফে আগামি দুই দিন সিবিআই-ইডির নিরপেক্ষতা চেয়ে এবং কেন্দ্রের সরকার দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার দাবিতে জেলায় জেলায় মিছিল করবে দল। এদিন জানান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সমীর ভট্টাচার্য। পাশাপাশি তাঁরা জানান, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা? যথা সময়ে সংবাদ মাধ্যম জানতে পারবে। দলনেত্রী এবং শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হবে। এমনটাই বৃহস্পতিবার জানান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সমীর চক্রবর্তী। দুর্নীতিতে কেউ অভিযুক্ত হলে তৃণমূল তাঁকে সমর্থন করবে না। এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন ওই দুই নেতা।
অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) গ্রেফতার হওয়ার পরেই বিতর্কিত পোস্ট তৃণমূল নেতা কাজল শেখের (Kajal Seikh)। বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল বৃহস্পতিবার গ্রেফতার (Arrest) হয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের (CBI) হাতে। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরই নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখের ফেসবুক ওয়ালে (Facebook Wall) দেখা গেল একটি বিতর্কিত পোস্ট। যেখানে তিনি লিখেছেন 'চেহারা, দাপট, অবস্থান, ক্ষমতা ও শক্তি চিরস্থায়ী হয় না।' পাশাপাশি তিনি লিখেছেন 'দুঃখের বিষয় অনেকেই এটা ভুলে যায়'।
বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের এই নেতা কাজল শেখকে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা গেলেও দুজন চির প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই পরিচিত এলাকায়। এমন পরিস্থিতিতে অনুব্রত মণ্ডল বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হওয়ার পর কাজল শেখের এহেন ফেসবুক পোস্ট সেই বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে দিল বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
উল্লেখ্য, অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত বিজেপি। সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। বিজেপির কর্মী-সমর্খকরা অনুব্রতর অস্ত্রেই তাঁকে কটাক্ষ করতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। কোথাও চড়াম চড়াম শব্দে ঢাক বাজানো চলছে, কোথাও বিলি হচ্ছে নকুলদানা, গুড়বাতাসা। কোথাও আবার অনুব্রতকে দেখলেই আওয়াজ উঠছে গোরু চোর, গোরু চোর।
কিন্তু দলের মধ্যেই যেভাবে তির্যক মন্তব্য এল, তাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চেহারাটা আরও একবার প্রকাশ্যে এল বলেই অনেকে মনে করছেন।