বোর্ড (BCCI) সভাপতি বিতর্কের মধ্যেই আরও বড় দুসংবাদ বিসিসিআই কোষাগারে। বিপুল আর্থিক ক্ষতির সামনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ভারত সরকার যদি পরের বছর বিশ্বকাপ (World Cup 2023) আয়োজনের সময় কর ছাড় না দেয়, তা হলে কমবেশি হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম ধনী এই সংস্থার। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। ক্ষতির অঙ্ক জানিয়ে সব রাজ্য সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়েছে বোর্ডের তরফে।
আইসিসির নিয়ম, কোনও দেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চাইলে সরকারের তরফে কর ছাড়ের অনুমতি আদায় করতে হয়। যদি কর ছাড় না পাওয়া গেলে, সেই অর্থ আয়োজক দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে যত টাকা কর দিতে হবে আইসিসিকে, সে টাকা বাদ যাবে আইসিসি থেকে পাওয়া বোর্ডের লভ্যাংশ থেকে।
ভারতের করের নিয়মে এ ধরনের ছাড়ের কোনও নিয়ম নেই। সে কারণে ২০১৬-তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে বিসিসিআইয়ের কোষাগার থেকে বেরিয়েছিল ১৯৩ কোটি টাকা। সেই নিয়ে এখনও আইসিসির আদালতে মামলা চলছে। ক্ষতির পরিমাণ অনেক বাড়তে পারে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গেলে।
একদিনে কেউ সচিন তেন্ডুলকর, নরেন্দ্র মোদী হয় না। বিসিসিআই (BCCI) সভাপতি বিতর্কের মধ্যে প্রথমবার মুখ খুললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। আরও বড় কিছু করার ইঙ্গিত তাঁর গলায়। বৃহস্পতিবার বেসরকারি এক ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর মন্তব্য, 'বড় লক্ষে পৌঁছতে প্রথমে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে হয়। একলাফে সাফল্য পাওয়া যায় না। সেটা সম্ভব নয়। একদিনে কেউ সচিন তেন্ডুলকর, নরেন্দ্র মোদী (Sachin-Modi) হয় না।'
তিনি জানান, আমিও সেভাবে এগিয়েছি। ক্রিকেট খেলা ছেড়ে সিএবি সভাপতি হয়েছি, তারপর বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। সামনের দিনে আরও ভালো কিছু করব। তবে আমার ক্রিকেটার জীবনের ১৫ বছর স্মরণীয়।' ভারতীয় ক্রিকেটের দাদার মন্তব্য, 'সব কিছুর একটা শেষ থাকে। গত তিন বছর ধরে বিসিসিআই করোনা কালে আইপিএল আয়োজন করেছে। মহিলা ক্রিকেটের উন্নতিতে উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছি। কমনওয়েলথ গেমসে আমাদের মহিলা দল রুপো পেয়েছে। ফলে কেরিয়ারে যতটা সময় যে যে জায়গায় কাজ করেছি, আমি সন্তুষ্ট। চেষ্টা করেছি যাতে নিজের কাজ সম্পূর্ণ নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে করতে পারি।'
তাঁকে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। এই মন্তব্য করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেন, 'সবাই শেষটাই দেখে। প্রশাসক হিসেবে হয়তো আমার এখানেই ইতি। আবার নতুন কিছু, সেখানে তো আবার শূন্য থেকে শুরু।'
প্রসূন গুপ্ত: ১৮ অক্টোবর বিসিসিআইয়ের সাধারণ সভা (BCCI AGM) বা এজিএম। সভায় কী হবে মোটামুটি ধারণা হয়ে গিয়েছে। সম্ভাব্য সভাপতি হচ্ছেন ৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য রজার বিনি (Roger Binny)। রজার বিনি খুব শান্ত, মার্জিত প্রকৃতির মানুষ। একটা সময়ে বিশ্বনাথ খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর কিছুদিন কর্নাটকের অধিনায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু দলের খুব কিছু একটা সুবিধা হয়নি। মুম্বই, দিল্লি এবং কর্নাটক চিরকাল ভারতকে সেরা খেলোয়াড় দিয়েছে। কর্নাটক পরবর্তীতে ব্রিজেশ প্যাটেলের পর ভাল ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক দিয়েছে; যেমন রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে প্রমুখ।
সেরা কর্নাটক দলে অবশ্যই বিনি অন্তর্ভুক্ত। একাধারে তিনি ওপেনিং ব্যাটার এবং বোলার ছিলেন। তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ এবং ৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রথম একাদশের সদস্য তথা উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানির মতে, 'বিনির মতো জেন্টলম্যান আর হয় না। কিন্তু বিনি নাকি বরাবরই নীরব কর্মীর মতো খেলে গিয়েছেন।' তিনি ক্রিকেট জীবনে কোনওদিন বিতর্কেও জড়াননি। আবার আগ বাড়িয়ে কোনও উপদেশ দেননি। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে, বিনিকে কাঠের পুতুল বানিয়ে কি জয় শাহ বোর্ড চালাবেন, যা কিনা সৌরভের আমলে সম্ভব ছিল না বলেই গুঞ্জন। কিন্তু সৌরভ কি করবেন এরপর?
অভিষেক ডালমিয়া বর্তমানে বাংলা ক্রিকেট বোর্ড বা সিএবি-র সভাপতি। কিন্তু এবার তাঁর প্রথম টার্ম শেষ হচ্ছে। আগামীতে আইপিএলের সাব কমিটিতে তিনি স্থান পেয়েছেন, অতএব জাতীয় ক্রিকেটে তিনি দায়িত্ববান হচ্ছেন। অভিষেক অবশ্য এই প্রতিবেদককে বললেন, ১৮-র এজিএম পৌরোহিত্য করবেন মহারাজদা অর্থাৎ সৌরভ স্বয়ং। তারপর পরের সভাগুলি হবে ৬ জনের বিশেষ কমিটি সদস্যদের মধ্যে। যেখানে অবশ্যই সৌরভ থাকবেন না। এক বছর বাদে ফের সাধারণ সভায় সব রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
যদিও প্রশ্ন থাকছে এরপর সিএবির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন? সাধারণত এই রাজ্যের শাসক দল পরোক্ষে তা ঠিক করে থাকে। যেমন এক সময়ে সুভাষ চক্রবর্তী, জ্যোতি বসুরা জগমোহন ডালমিয়াকে ওই পদে রাখতে ক্ষমতার কসুর করেননি। আবার ডালমিয়াকে সরিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে সিএবি সভাপতি করেছিলেন। এরপর মমতা ক্ষমতায় আসার পর সৌরভ এবং অভিষেক ক্ষমতায় আসেন। এবার কি ফের মমতা দায়িত্ব নিয়ে সৌরভকে ফের বাংলা ক্রিকেটের মসনদে বসাবেন এবং সৌরভ কি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবেন? ১৮র পর চিত্র পরিষ্কার হবে।
BCCI-র সভাপতি পদ থেকে সরতে পারেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। সূত্রের খবর, তাঁর জায়গায় বসতে পারেন বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন ক্রিকেটার রজার বিনি (Roger Binny)। ১৮ অক্টোবর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক (AGM) সভায় এই রদবদলে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়বে। বিসিসিআই-তে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং জয় শাহদের প্রথম দফায় তিন বছরের টার্ম শেষ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আরও একটা টার্ম অর্থাৎ ২০২৫ পর্যন্ত তাঁদের গদি নিশ্চিত ছিল। সেই মোতাবেক জয় শাহ বিসিসিআই সচিব থাকলেও, বোর্ড সভাপতি পদে রদবদল আসন্ন। সেই সম্ভাবনা ক্রমশ প্রবল। ভারতীয় ক্রিকেটের দাদার উত্তরসূরি হিসেবে উঠে আসছেন কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোশিয়েশনকে প্রতিনিধিত্ব করা রজার বিনি।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে IPL-এর চেয়ারম্যান পদে ব্রিজেশ প্যাটেলের পরিবর্তে আসছেন অরুন সিং ধুমল। সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে ১৮-ই অক্টোবর বোর্ডের বার্ষিক সভায়। সূত্রের খবর, রাজধানীতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে মঙ্গলবার মুম্বই উড়ে যাচ্ছেন 'দাদা'।
সেখানে যোগ দেবেন বোর্ডের শীর্ষ পদাধিকারীদের বৈঠকে। এই বৈঠকের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ১৮ তারিখ বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভার আগে এই বৈঠক কার্যত সেমিফাইনাল। বিসিসিআইয়ের পরবর্তী মুখ কে হবেন? তাঁর সঙ্গেই বা কে কে থাকবেন সেটা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে আজকের বৈঠকে।
বিশাল রদবদল হতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিসিআইতে (BCCI)। খবরটি এক হিন্দি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং বোর্ডের তরফ থেকে সংবাদটির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেননি। বরং কেউ কেউ বলছেন এমনটাই নাকি হতে চলেছে।
প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) সরে যাবেন। এবং তাঁর জায়গায় আসতে পারেন অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ। সংবাদটি অনেক মিডিয়ায় বেরিয়ে গিয়েছিল যে সৌরভ জয়দের ক্ষমতায় থাকার সময়সীমা ২০২৫ অবধি থাকছে। এবং তারপর ৩ বছরের জন্য তাঁদের কুলিং পিরিয়ডে যেতে হবে অর্থাৎ ওই তিন বছর তাঁরা বোর্ডের কোনও পদে থাকতে পারবেন না।
এখানেই বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, জয় ২০২৮ এ ফের ক্ষমতায় আসতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। কাজেই অবিলম্বে বোর্ড সচিবের পদ ছেড়ে তিনি হয়ত সভাপতির পদে যেতে চাইবেন। অন্যদিকে সৌরভ চেষ্টা করবেন বিশ্ব ক্রিকেটের সভাপতি হওয়ার।
কিন্তু সংবাদ মাধমের কাছে নতুন তথ্য আসছে নিয়মিত। শোনা যাচ্ছে যা, সৌরভকে পদ ছাড়তেই হচ্ছে এবং সৌরভ প্রস্তুতও রয়েছেন। জয় শাহও নাকি সভাপতির দাবিদার হচ্ছেন না। তিনি ফের নির্বাচনে দাঁড়াবেন ওই সচিব পদের জন্য। এই মানসিকতার কারণ সূত্র মারফত যা জানা যাচ্ছে যে, জয় ক্রিকেট জগতের কেউ ছিলেন না। এমনকি পাড়ার ক্রিকেট খেলেছেন বলেও সংবাদ নেই।
কাজেই বিজেপির একটি অংশ নাকি চাইছেন যে, এমন কেউ আসুন যিনি ক্রিকেটটা খেলেছেন। অবশ্য এর আগে মাঠের বাইরের মানুষরাই তো বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, কিন্তু বর্তমান শাসক দল ওই পদ্ধতিতে বিশ্বাসী নয়। এই জটিলতার ফাঁকে বোর্ড সভাপতির প্রার্থী হিসাবে নাম উঠে এল ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম রজার বিনির নাম। তিনি প্রার্থী হচ্ছেন।
অন্যদিকে, সৌরভ সাধারণ সদস্য হিসাবে বোর্ডে থাকছেন। থাকার কথা বাংলা ক্রিকেট বোর্ডের অভিষেক ডালমিয়ার কিন্তু তাঁর জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করবেন সৌরভ। আগামী ১২ অক্টোবর নমিনেশন জমা হবে এবং যদি ভোটের প্রয়োজন হয় তবে নির্বাচন হবে ১৮ অক্টোবর।
অসুস্থ ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় (Dona Ganguly)। চিকেনগুনিয়ায় (Chikungunya) আক্রান্ত ডোনা। বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) স্ত্রীকে নবমীর রাতেই ভর্তি করা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে (Hospital)। বর্তমানে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, গায়ে জ্বর ও র্যাশ দেখা গিয়েছে ডোনার। পুজোর মধ্যেই বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থতা বোধ করছিলেন সৌরভ-জায়া। ঝুঁকি না নিয়ে মঙ্গলবার রাতে তাঁকে বেহালার বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে, তিনি চিকেনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসুর অধীনে ভর্তি রয়েছেন সৌরভ-পত্নী। আপাতত ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাঁকে। তবে তিনি কবে সুস্থ হয়ে বাড়ি আসবেন সে ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। খুব স্বাভাবিকভাবে এই অসুস্থতা গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।
প্রসূন গুপ্ত: হাওয়ায় ভাসছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আরও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেলেও তিনি কি ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থাকতে পারবেন? বৃহস্পতিবার সিএন পোর্টালে লেখা হয়েছিল, সৌরভ নয় বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা জয় শাহর। অন্য জাতীয় সংবাদ মাধ্যমও সেই দাবি করছে।
তবে ক্রীড়া প্রশাসকের রাজনীতি কখনই প্রত্যক্ষ রাজনীতিমুক্ত নয়। সবাই জানে বিসিসিআই বা এআইএফএফ স্বসাশিত সংস্থা। শাসক দল চেষ্টা করে নানাভাবে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত স্বশাসিত সংস্থাগুলোয় ক্ষমতা বিস্তার করা। কেন্দ্রে যখন ইউপিএ সরকার তখনও বিসিসিআই, এআইএফএফ কিংবা আইওসি-র মতো সংস্থায় প্রধান শাসক দল কংগ্রেসের পছন্দের লোক বসানো হয়েছিল। সে সুরেশ কালমাডি হোক, শরদ পাওয়ার কিংবা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি হোক। এই রীতির ব্যতিক্রম ছিল না বাংলার পূর্বতন বাম জমানা।
আমরা দেখেছি, বামফ্রন্ট বিশেষ করে সিপিএম রাজ্যের শাসনভার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গেই ক্লাব, লাইব্রেরি, ক্রীড়া, সিনেমা জগৎ থেকে শুরু করে সামাজিক সব জায়গাতেই তাদের দলের লোককে বকলমে বসিয়েছিল। সেই একই পথে কি হাঁটছে বিজেপি? সম্প্রতি ফুটবল, হকি ইত্যাদি সব জায়গাতেই তাদের কাছের লোক জায়গা পেয়েছে। তাহলে ক্রিকেট কেন ব্যতিক্রম হবে? বিসিসিআই শীর্ষ পদে জয় শাহের উত্তরণ সম্ভাবনা জোরালো করে এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
জয় শাহ এখনই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষপদ না পেলে তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৮ অবধি। তাই কি এবারেই সৌরভকে সরিয়ে জয় শাহকে বিসিসিআই সভাপতি করতে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির?
যদি তাই হয়, তাহলে সৌরভ গাঙ্গুলির ভবিষ্যৎ কী? সৌরভ হয়তো চাইতে পারেন আইসিসির সভাপতি হতে, কিন্তু সেখানেও হার্ডল। দাবিদার অনেক, বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থার বর্তমান সভাপতি আরও দু'বছর মেয়াদবৃদ্ধি চেয়েছেন। হয়তো পেয়েও যাবেন, এছাড়া চেন্নাই ক্রিকেট বোর্ড চাইছে তাঁদের প্রতিনিধি আইসিসি সভাপতি হোক। শোনা যাচ্ছে বর্তমান সে রাজ্যের শাসক দল এবিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা বলে রেখেছে।
তাহলে সৌরভের হয়ে গলা ফাটাবে কে? সম্ভবত আইসিসি-র শীর্ষপদে যাওয়ার কাজ এখন কঠিন তাঁর পক্ষে। সেক্ষেত্রে তিনি কি ক্রীড়া ভাষ্যকার হয়ে ফিরবেন? সেখানেও বাধা, স্বার্থের সংঘাতে ভুগবেন তিনি। তাহলে রাস্তা খোলা একমাত্র রাজনীতিবিদ হওয়ার। অমিত শাহ তাঁর বাড়িতে যাওয়ার পর এই জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছিল। কিন্তু কোনওপক্ষ থেকেই উত্তর আসেনি। সৌরভ ভোটে দাঁড়াতে চাইবেন না। সম্প্রতি ইউনেস্কোর অনুষ্ঠানে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে মহারাজকে দেখা গিয়েছে। তাই নিরাপদ ভাবে জিততে রাজ্যসভা তাঁর জন্য আদর্শ। প্রশ্ন এ রাজ্য থেকে কি তিনি রাজ্যসভায় যাবেন বিজেপির সমর্থনে?
এমনও হতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য হিসেবে তিনি তৃণমূলের সাংসদ হতে পারেন। কারণ যাই হোক না বাংলার মহারাজ লম্বা রেসের ঘোড়া এবং ক্যালকুলেটিভ। তাই সময় সুযোগ বেছে সেরাটাই বাছবেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা, এমনটাই ধারণা দাদা অনুরাগীদের।
প্রসূন গুপ্ত: বুধবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০২৫ অবধি বর্তমান ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্বে থাকতে পারবেন। কার্যত খুশি সৌরভ ভক্তরা বিশেষ করে বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু এখানেই অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে যে দায়িত্বে থাকার অধিকার পেয়েছেন ঠিকই সৌরভ এন্ড কোম্পানি। কিন্তু স্বপদে অর্থাৎ সভাপতির পদে সৌরভ কতদিন থাকতে পারবেন?
প্রথমত বিশ্ব ক্রিকেট বোর্ড বা আইসিসির সভাপতির পদ খালি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা ওই পদে সৌরভ গাঙ্গুলিকে চাইছেন। পাকিস্তান থেকে নিউজিল্যান্ড চাইছে, সৌরভকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। দু-একটি দেশের আপত্তি থাকলেও সেসব ম্যানেজ করা যাবে বলেই ধারণা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। কিন্তু সৌরভ শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন কি? একবার ওই পদে গেলে ফের ফিরে এসে দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব পাওয়া কঠিন। ডালমিয়া ছাড়া আর কেউই ফিরে পাননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের গুরু দায়িত্ব।
দ্বিতীয় সমস্যা ঘরের অন্দরেও। আপাতত বোর্ড সচিব হিসেবে অমিত শাহর পুত্র জয় ২০২৫ অবধি কমিটিতে থাকছেন মহারাজের সঙ্গে। কিন্তু ২০২৫ এর পর ৩ বছর এঁরা কেউই ক্রিকেট বোর্ডের কোনও পদে থাকতে পারবেন না, যাকে প্রশাসনিক পরিভাষায় কুলিং পিরিয়ড বলছে। এমনটাই এটিই ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৮ এর আগে জয় আর ফিরতে পারবেন না বোর্ডের কোনও দায়িত্বে। জয় শাহ কি এটা মেনে নেবেন?
ইতিমধ্যে ফুটবল বোর্ডের বা এআইএফেরের সভাপতি হয়েছেন বিজেপি সদস্য কল্যাণ চৌবে। বাইচুং ভুটিয়াকে রীতিমতো হেলায় হারিয়েছেন তিনি। তাই ক্রিকেট পিচে জোর গুঞ্জন বোর্ড সভাপতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জয় শাহের। সেখানে বর্তমান বোর্ড সভাপতি সৌরভকে আইসিসি-তে পাঠিয়ে ফাঁকা আসন পূর্ণ করার উদ্যোগ নিতেই পারেন অমিত পুত্র।
২০২৫ অবধি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) সভাপতি এবং সচিব হিসেবে থাকছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) এবং জয় শাহ (Jay Shah)। প্রশাসনিকস্তরে কুলিং অফ পিরিয়ড নিয়ে বিসিসিআইকে স্বস্তি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত জানাল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনে দেওয়া পূর্বতন রায় বুধবার পুনর্বিবেচনা করেছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট আগে জানিয়েছিল রাজ্য সংস্থা এবং বোর্ড মিলিয়ে সর্বোচ্চ ছ'বছর প্রশাসনিক পদে থাকা যাবে। তারপর যেতে হবে কুলিং অফ পিরিয়ডে। অর্থাৎ পদ ছাড়তে হবে ক্রীড়া প্রশাসককে।
কিন্তু বুধবার বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং হিমা কোহলির বেঞ্চ জানিয়েছে, রাজ্য সংস্থায় ৬ বছর এবং বোর্ডে ছয় বছর অর্থাৎ ১২ বছর প্রশাসক পদে থেকে তারপর কুলিং অফে যাওয়া যাবে। সেই হিসেব ধরলে ২০২৫ পর্যন্ত বিসিসিআইয়ের সভাপতি এবং সচিব পদে বহাল থাকছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং জয় শাহ।
সৌরভ এবং জয় দু'জনেই রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার পদে ছিলেন। ২০১৯ সালে সৌরভ বিসিসিআই সভাপতি হলে ছাড়েন সিএবি-র পদ। ২০১৫ থেকে সিএবি সভাপতি সৌরভ। একইভাবে গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার পদেও দীর্ঘদিন ধরে আসীন জয় শাহ। তাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে এই দুয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট পূর্বতন রায়ে স্থির থাকলে পদত্যাগ করতে হবে সৌরভ এবং জয় শাহকে। এই আশঙ্কার মধ্যেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জেরে আরও তিন বছর পদে থেকে গেলেন এই দু'জন।
এশিয়া কাপ (Asia Cup 2022) টি ২০ থেকে বিদায় নিয়েছে ভারত। দুর্দান্ত ভাবে শুরু করেও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল ল্যাপে শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka) ও পাকিস্তানের (Pakistan) কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে ভারতকে। ইদানিং কয়েক বছর ধরেই ভারতের (Indian Cricket Team) ধারাবাহিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে নিয়মিত ভাবেই।
এর দায়ে কাকে ফেলা যাবে? যদিও টেস্ট, একদিবসীয় এবং ২০ ওভারের খেলতে দল গঠনের একটি সিলেকশন কমিটি রয়েছে। কিন্তু তবুও আজ একথা সকলেরই জানা যে শেষপর্যন্ত বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি এবং সম্পাদক জয় শাহের একটা ভূমিকা আছেই। ক্রিকেটের দল নিয়ে এত পরীক্ষা নিরীক্ষা এর আগে ৫০/৬০ বছরে কেউ দেখেননি। অধিনায়কের কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। অন্তত ৭ জন অধিনায়ক দলের মধ্যে রয়েছেন। কখনও রোহিত কখনও কে রাহুল থেকে ঋষভ পন্থ হয়ে কে নয়? দল নায়কের একটা ভূমিকা থেকেই যায় সেটি নিশ্চয় সৌরভের থেকে ভালো কেউ জানেন না।
অন্যদিকে, সৌরভের প্রিয় বন্ধু রাহুল দ্রাবিড় বর্তমানে দলের সব ধরনের টুর্নামেন্টের কোচ। তিনিও এক সময়ে অধিনায়ক ছিলেন। এছাড়া দলে রয়েছেন প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এঁরা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে কোথাও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এর ফলে বারবার তীরে এসে তরী ডুবছে। দলের অবস্থায় তাই। অন্তত ৩০ জন খেলোয়াড়কে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হচ্ছে। এতে একটা টিম ওয়ার্ক গড়ে উঠছে না। ওপেনিং করবে কে তারও কোনও ঠিক নেই। শেষ ম্যাচে কোহলিকে দিয়ে ওপেন করানো হয়েছিল।
সামনেই টি ২০ বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়াতে। এই টুর্নামেন্টের বিভিন্ন খেলোয়াড় আইপিএলে নিয়মিত খেলে থাকেন। এদের খেলার ধার দুর্দান্ত। কাজেই সেরা ১৪ জন খেলোয়াড়কে বেছে নেওয়াটাই এখন আসল কর্তব্য। শোনা যাচ্ছে, দুবাইতে ফাস্ট বোলাররা ডুবিয়েছে দলকে। ফলে বুমরা শামি এবং সিরাজকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই বুমরাকে বেঙ্গালুরুতে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ভিভিএস লক্ষণ পরীক্ষা করে দেখবেন বুমরা খেলতে পারবেন কি না। সৌরভকে কিন্তু অনেক দায়িত্ব নিতে হবে।