জিটিএ-তে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিঙ্গেল বেঞ্চের সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আজ, শুক্রবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি হরিশচন্দ্র টন্ডন ও মধুরেশ প্রসাদ-এর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় সিবিআই অনুসন্ধান হোক। অনুসন্ধানের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান বিচারপতি।
পাহাড় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ সিঙ্গেল বেঞ্চ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন মেনে আবেদন করেছিল রাজ্য। রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি বৃহস্পতিবারই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ, শুক্রবার তারই রায়দান হল। রায় দান করতে গিয়ে বিচারপতি হরিশচন্দ্র টন্ডন ও মধুরেশ প্রসাদ জানান, রাজ্যের আবেদনের কোনও গুরুত্ব নেই। সিবিআই অনুসন্ধান রিপোর্ট দেওয়ার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। আপাতত সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের আবেদন খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট।
সন্দেশখালির একদা ত্রাস শেখ শাহজাহানের স্ত্রী তসলিমা বিবিকে ফের জেরা ইডির। প্রসঙ্গত, এর আগেও একাধিকবার কেন্দ্রীয় জেরার মুখে পড়েছিলেন শাহজাহানের স্ত্রী। এবার বুধবারের দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হাতে উঠে এসেছে একাধিক বিস্ফোরক তথ্য।
শাহজাহান ও তাঁর স্ত্রী তসলিমা বিবির রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত নথির সূত্র ধরেই, তসলিমার নামে একাধিক জমি, হোটেল এবং গেস্ট হাউসের সন্ধান পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে খবর, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছিল এই সমস্ত ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় তদন্তে উঠে এসেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয়, শেখ শাহজাহানের অনুগামীদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী তসলিমা বিবির যৌথ অংশীদারী রয়েছে। যদিও তসলিমা বিবিকে এই বিপুল সম্পত্তি কেনার জন্য, টাকার উৎসের কথা জানতে চাইলে জানান, কিছুই জানেন না তিনি। শেখ শাহজাহান তাঁকে বিভিন্ন নথিতে সই করতে বলতেন। সেই মতো তিনিও সই করতেন। এমনকি তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপুল অর্থ কোথা থেকে এলো সে বিষয়েও কিছুই জানেন না শাহজাহানের স্ত্রী তসলিমা বিবি। এই সমস্ত বিষয়ে একমাত্র জানেন শেখ শাহজাহান, ইডির জেরার মুখে এমনটাই জানালেন তসলিমা বিবি।
ঘুরপথে কালো টাকা সাদা করতেই, শেখ শাহজাহানের দুর্নীতির জাল বিছানো তাঁর পরিবারের মধ্যেও। নিজের দুর্নীতির স্বার্থে শাহজাহান ব্যবহার করেছেন নিজের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। এমনিতেই সন্দেশখালির একদা ত্রাসের নামে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ। সে অভিযোগ এতটাই গুরুতর যে বারংবার শাহজাহানের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছে সন্দেশখালি। তার ফাঁসির দাবিতে গর্জে উঠেছেন রাজ্যের আইনজীবীদের একাংশও। বিপদে পড়েছেন বুঝে একাধিকবার ইডির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন শাহজাহান। কিন্তু তার দুর্নীতির শেষ কোথায়? দুর্নীতির তল খুঁজে পেতেই আপাতত মরিয়া কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এখন দেখার যে শাহজাহানের এই দুর্নীতির জাল আর কতদূর বিস্তৃত। শুধুই কি শাহজাহান, নাকি নেপথ্যে রয়েছেন কোনও প্রভাবশালী? সেই সব উত্তরের খোঁজেই চর্চা তুঙ্গে।
মণি ভট্টাচার্য: পাহাড়েও নিয়োগ দুর্নীতি, এই অভিযোগে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে সিবিআই অনুসন্ধানের প্রসঙ্গ। জিটিএ-তে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের বিরুদ্ধে এবার হাইকোর্টে আবেদন রাজ্যের। সূত্রের খবর, ৯-ই এপ্রিল হাইকোর্ট জিটিএ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। ২৫ তারিখ অর্থাৎ ১৫ দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট সিবিআইকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এবার সিবিআই অনুসন্ধান বন্ধের দাবিতে প্রধান বিচারপতির কাছে মামলা করতে চেয়ে আবেদন রাজ্যের। মামলার অনুমতি প্রধান বিচারপতির, চলতি সপ্তাহে শুনানির সম্ভাবনা।
জিটিএ নিয়োগে দুর্নীতিতে বিনয় তামাং, অনীত থাপার হাত ধরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ক্যান্ডিডেট লিস্ট, বিচারপতির কাছে একটি বেনামী চিঠি। স্বতঃপ্রনোদিত মামলা করেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। সেই মামলায় গত সপ্তাহে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের নাম যুক্ত হয় মামলায় । জিটিএতে নিয়োগ দুর্নীতিতে ৭০০-১০০০ জন নিয়োগ হয়েছে। হাইকোর্ট সিবিআই অনুসন্ধান দিতেই জিটিএ-র নিয়োগ দুর্নীতিতে এফআইআর দায়ের রাজ্যের। এফআইআর-এ পার্থ সহ একাধিক তৃণমূল নেতার নাম। বিধাননগর উত্তর থানায় এফআইআর। এবার এই এফআইআর-এর দোহাই দিয়ে সিবিআই অনুসন্ধান বন্ধের আর্জি রাজ্যের। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এটাই প্রত্যাশিত। সিবিআই অনুসন্ধান যাতে সিবিআই তদন্তে রূপান্তরিত না হয়, তাই এফআইআর রাজ্যের। কারণ এই নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ঢুকে পড়লে কানের সঙ্গে মাথাদের ধরা পড়ার আশঙ্কায় কি থরহরিকম্প রাজ্য, উঠছে প্রশ্ন।
মণি ভট্টাচার্যঃ পাহাড়ে জিটিএ-র শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে শিক্ষা দফতর। উত্তর বিধাননগর থানায় এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জিটিএ-র স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবার সিএন-এর হাতে এল জিটিএ-তে নিয়োগ পাওয়া ৩১৩ জন অস্থায়ী শিক্ষককে স্থায়ীকরণের তালিকা। উল্লেখ্য, ৩১৩ জন অস্থায়ী শিক্ষককে আপার প্রাইমারি ও ১২১ জন শিক্ষককে প্রাইমারিতে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ প্রকাশ্যে।
আরও ভয়ানক অভিযোগ, এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির কথা জানত সিআইডি, স্টেট ভিজিল্যান্স কমিশন সবাই। ২০২২ সালে জিটিএ-তে শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়ম নিয়ে সুমন গুরুং নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে শিক্ষা দফতর। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করে ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। গোটা ঘটনার তদন্তের নামে একটি রিপোর্ট শিক্ষা দফতরকে জমা করে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম।
ওই কমিটি ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে একটি রিপোর্টের মাধ্যমে শিক্ষা দফতরকে জানায় জিটিএ-র স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের স্থায়ীকরণে বেনিয়ম হয়েছে। তাতে শিক্ষা দফতরের বেশ কিছু আধিকারিক সহ কিছু নেতৃত্বরা জড়িত বলে জানায় ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।
এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারি মাসে জিটিএতে ৩১৩ জন অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে একটি চিঠি পৌঁছয় শিক্ষা দফতরে। শিক্ষা দফতর সেই চিঠি ডিআইজি, সিআইডিকেও পাঠায়। এমনকি শিক্ষা দফতর এই চিঠি ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য ভিজিলেন্স কমিশনকেও পাঠায়। সবকিছু জেনেও চুপ ছিল রাজ্য সিআইডি এবং রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশন? কেন এই দুর্নীতির কথা জেনেও চুপ ছিল রাজ্য! উঠছে প্রশ্ন।
রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় আজ, শুক্রবার তৃতীয় চার্জশিট পেশ করতে চলেছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, তৃতীয় চার্জশিটে ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসের নাম থাকার সম্ভাবনা। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নগদ রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় ৩৫০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের অনুমান জ্যোতপ্রিয়র সেই অর্থ এজেন্ট মারফত নগদে বিশ্বজিতের কাছে পৌঁছে যেত। এরপর তিনি সেই টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে দিতেন। চার্জশিটে এই বিষয়ে উল্লেখ থাকতে চলেছে। এছাড়া বিশ্বজিৎ দাসের সোনার ব্যবসা ছাড়াও একাধিক ব্যবসার হদিশ মিলেছে নতুন করে, সেই সমস্ত বিষয় উল্লেখ করা থাকবে চার্জশিটে।
প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বাকিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছিল ইডি। সেখানে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা রেশন দুর্নীতি মামলায় বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে ইডি চার্জশিটে উল্লেখ করেছে। ইডি-র দাবি, সেই টাকা শঙ্কর আঢ্যের নামে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সেই সূত্রেই শঙ্করকে গ্রেফতার করা হয়। শঙ্করের নামও দ্বিতীয় চার্জশিটে উল্লেখ করে ইডি। এবার তৃতীয় চার্জশিটে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসের নাম থাকবে বলেই খবর।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অবশেষে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার মোবাইল আনলক করতে সক্ষম হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আশা এই মোবাইলে থেকে মিলতে পারে জরুরি তথ্যপ্রমাণ। এবার তাই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার চ্যাট হিস্ট্রিতে নজর তদন্তকারীদের।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। প্রায় ১৪ ঘণ্টার তল্লাশিতে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল মন্ত্রীর ফোন। পরবর্তীতে, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে ইডির সদর দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তরফে। যদিও মন্ত্রীর পরিবার সূত্রে দাবি ছিল, তাঁকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র উদ্ধার হওয়া টাকা, মোবাইল ফোনের সমস্ত রকম ডিটেলস এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ইডির তরফে।
এছাড়াও ইডির নির্দেশ ছিল মন্ত্রীর বাজেয়াপ্ত মোবাইল ফোন আনলক করার। এরপরেই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার একজন প্রতিনিধিকে সমস্ত নথি-সহ পাঠানো হয় সিজিও-তে। তিনিই তদন্তকারী আধিকারিকদের সামনে আনলক করেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথের মোবাইল। ইডির দাবি, মন্ত্রীর মোবাইল থেকে খুলতে পারে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের রহস্যের জট। আর তাই এবার ইডির আতস কাঁচের নিচে মন্ত্রীর বাজেয়াপ্ত মোবাইল।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে বলাগড়ের বহিঃস্কৃত এক যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বাড়িতে তল্লাশির সূত্র ধরেই মন্ত্রী চন্দ্রনাথের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। এখন মন্ত্রীর মোবাইল থেকে, নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কে আর কী তথ্য উঠে আসে ইডির হাতে, সেটাই দেখার। তবে যেভাবে রাজ্যের একের পর এক দুর্নীতি কাণ্ডে, শাসকদলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়াচ্ছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে বারংবার দুর্নীতিতে তৃণমূলই কেন? এই দুর্নীতির জাল শাসকদলের মধ্যে কতদূর অবধি বিস্তৃত? শাসকদলের দুর্নীতির কারণে কেন বারবার বঞ্চিত হতে হবে রাজ্যবাসীকে? জবাব চাইছে বাংলার ওয়াকিবহাল মহল।
ইডি হেফাজতে পাওয়ার পরে, একদিকে ইডির ওপর হামলার মামলায় সিবিআই, অপরদিকে জমি দখল মামলায় ইডির সাঁড়াশি চাপ পড়েছে শাহজাহানের ওপর। ইতিমধ্যেই ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন ৫০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ছাপিয়ে গিয়েছে শাহজাহানের। বুধবার সকালবেলা স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য শাহজাহানকে আনা হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, সবটাই নাকি রাজনৈতিক চক্রান্ত।
আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত শাহজাহানের ঠিকানা সিজিও কমপ্লেক্স। সেখানেই জমি দখল মামলার তদন্তে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ইডির আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই মামলায় প্রায় ৩১ কোটি ২০ লক্ষ দুর্নীতির টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুধু জমি দখল মামলাতেই এখনও অবধি প্রায় ১৩৭ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে ইডির কাছে। ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন, কম করে ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি করেছে শেখ শাহজাহান।
ইডির কাছে শাহজাহানকে নিয়ে, শাহজাহানের জমি দখল মামলা নিয়ে যখন এমন তথ্য প্রমাণ আসছে, তখন সবটাকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে দাগিয়ে দেওয়ার চাল যে নিজেকে বাঁচানোর জন্যই, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু তা বললে আর শুনছেই বা কে!
সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাহ শাহাজাহানের সাম্রাজ্যের পরতে পরতে লুকিয়ে রহস্য। ইডির তদন্তে ক্রমশ খুলছে সেই দুর্নীতি রহস্যের জট। তদন্তে উঠে এসেছে মেসার্স শেখ সাবিনা ফিশারির মালিক ধৃত শাহজাহান। যে ফিশারির অ্যাকাউন্টে ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এই ১০ বছরে কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করার কারবার বহাল তবিয়তে করেছে শাহজাহান। আর কালো টাকা সাদা হত ম্যাগনাম এক্সপোর্ট কোম্পানির মাধ্যমে। আপাতত ওই এক্সপোর্ট কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। অরূপ কুমার সোম ম্যাগনাম এক্সপোর্ট কোম্পানির মালিক। আর পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত ও অরুণ সেনগুপ্ত কোম্পানির পার্টনার। যাদের বয়ানের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দামহল।তদন্তের স্বার্থে তাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডিজিটাল ডিভাইস সিজও করেছে ইডি।
চাপে পড়তেই ফিশারির ম্যানেজার মইদুলের দাবি, এলাকায় শাহজাহানের দাদাগিরিতেই চলত ব্যবসা।স্থানীয় ব্যবসায়ীদের রীতিমতো শাসাতো শাহজাহান। তাদের কোম্পানিতে মাছ বিক্রি করতে হবে অন্যথায় ব্যবসায়ীদের মাছ ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিত সন্দেশখালির ত্রাস শাহজাহান। ইডি সূত্রে খবর ৫০% মাছই মাছ ব্যবসায়ীদের থেকে আসত। আর ৩০% থেকে ৪০% মাছ বেআইনি ভাবে গ্রামবাসীদের থেকে ছিনিয়ে নিত শাহজাহানের বাহিনী। গোটা কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিশেষ দলও গঠন করেছিল শাহজাহান।
শুধু তাই নয়, তদন্ত যতই এগোচ্ছে ততই উঠে আসছে শাহজাহানের এই কীর্তিকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে একাধিক ব্যক্তির নামও। শাহজাহান ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে ফিশারির টাকা লেনদেন হত বলে দাবি ইডির। আদালতে ইডির গোয়েন্দাদের জমা দেওয়া তথ্য বলছে, শাহজাহান ঘনিষ্ঠ ১০ জনের মাধ্যমে ফিশারি কোম্পানিতে টাকা লেনদেন হত। টাকা লেনদেনে কাজে লাগানো হত হাজরা এন্টারপ্রাইস, বসুন্ধরা ট্রেড, রিন্টু এন্টারপ্রাইজসহ একাধিক কোম্পানিকেও।এমনকি শাহজাহানঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতেন শাহাজাহান নিজেই। ফিশারির টাকা তার অঙ্গুলিহেলনেই ব্যবহৃত বিভিন্ন খাতে।তার নির্দেশেই সেই টাকায় কেনা হত জমি, সম্পত্তি।
একাধিক অসাধু কারবারের আখড়া শাহজাহানের সাম্রাজ্য তা বলাই বাহুল্য। ইডির তৎপরতায় এখন সেই তথ্যই ক্রমশ আসছে প্রকাশ্যে। ইডির হেফাজতে এদিকে চলছে শাহজাহানের জিজ্ঞাসাবাদপর্বও। আগামীদিনে শাহজাহানের বয়ানে আদৌ নতুন কোনও তথ্য উঠে আসবে নাকি সুকৌশলে প্রশ্ন এড়িয়ে জারিজুরি লোকাবে সে? লোকসভা নির্বাচনের গুরুগম্ভীর আবহে ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নটাই।
বসিরহাট মহকুমা আদালতের নির্দেশে শেষ কয়েকদিন জেল হেফাজতে ছিলেন শাহজাহান। যদিও শনিবার শাহজাহানকে শোন এরেস্ট করে ইডি। সেই সংক্রান্ত মামলা ইডি বিশেষ আদালতে হয় সোমবারে। শুনানির শেষে জেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে সোমবার বিকেল ৪টেয় শাহজাহানকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন বিচারক শুভেন্দু সাহা।
বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, গত ৩০ মার্চ বসিরহাটে শাহজাহানকে শোন এরেস্ট করছিল ইডি। সেদিন জেরা করার সময় বারবার তদন্তকারীদের তিনি বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন বলেও বিচারকের কাছে জানান ইডির আইনজীবী। জানান, তদন্তে এখন আরও কিছু নাম উঠে এসেছে। এখন শাহজাহানকে হেফাজতে নিয়ে জেরা না করা হলে, সন্দেহভাজনরা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারেন বা পালিয়ে যেতে পারেন। তাই আর দেরি নয়, সোমবারেই শাহজাহানকে হেফাজতে চায় ইডি। যদিও, সোমবার তড়িঘড়ি কীভাবে তা সম্ভব জানতে চেয়ে বিচারক প্রশ্ন করলে, ইডির আইনজীবী জানান, রাস্তা মাত্র ২ ঘণ্টার। এরপরেই বন্দি শাহজাহানকে বসিরহাট থেকে আদালতে হাজির করানোর জন্য রওনা দেন ইডির আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে খবর ছিলই, জমি দখল, ভেরি দখল এবং মাছের আমদানি-রপ্তানিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইসিআইআর করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এখন নিজেদের হেফাজতে নিয়ে বেতাজ বাদশার 'অত্যাচার রহস্য' কতটা উদ্ঘাটিত হয়, সেটাই দেখার।
ইডির আবেদনে সাড়া দিয়ে বসিরহাট জেলে শেখ শাহজাহানকে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিল বসিরহাট মহকুমা আদালত। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ বসিরহাট মহকুমা আদালতে পৌঁছন ৫ সদস্যের ইডির একটি প্রতিনিধি দল। সঙ্গে ছিলেন ইডি ও সিবিআই-এর একজন করে আইনজীবি। ইডি-র উপর হামলার ঘটনায় ধৃত শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু জমির হদিশ মেলে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩১ কোটি টাকা। এই ৩১ কোটি টাকার মধ্যে ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ইডির তরফে। এ বিষয়ে বসিরহাট জেলে জিজ্ঞাসাবাদ করার সম্ভাবনা সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহানকে, খবর ইডি সূত্রে। শনিবার আদালতের নির্দেশ মিলতেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি, ল্যাপটপ এবং প্রিন্টার সহ জেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রবেশ করেন ইডির ৩ আধিকারিক।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ন্যাজাট থানার ৮ নম্বর মামলায় শেখ শাহজাহান, মেহেবুব মোল্লা এবং সুকমল সর্দারকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। অপরদিকে, ন্যাজাট থানার ৯ নম্বর মামলায় আইজুল শেখ, এনামুল শেখ, হাজিনুর শেখ, সঞ্জয় মণ্ডল, আলি হোসেন ঘরামি, ফারুক আকুঞ্জি এবং সিরাজুল মোল্লাকে ২ এপ্রিল অর্থাৎ ৫ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল বসিরহাট মহকুমা আদালত।
বসিরহাট জেলে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই মামলায় তাঁকে ন'বার তলব করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। কিন্তু, একবারও তিনি হাজিরা দেননি। দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য রক্ষাকবচ চেয়েছিলেন কেজরিওয়াল। তবে সেই আর্জি খারিজ হতেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাসভবনে তল্লাশি চালাতে পৌঁছয় ইডি। ঘণ্টা দুয়েকের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইডি হেফাজতেই কেটেছে রাত। সকাল হতেই জামিনের আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আজই, শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে হেফাজতে চেয়ে রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে পেশ করে ইডি। রাতে তাঁকে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে। আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে কেজরিওয়ালের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৭০,০০০ টাকা পেয়েছে মাত্র তদন্তকারীরা। স্বাভাবিকভাবে ঘটনায় ক্ষুব্ধ আম আদমি পার্টির কর্মী সমর্থকেরা।
এদিকে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির পরেই দিল্লিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আজ কেজরিওয়ালের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এদিকে দিল্লিতে উত্তেজনা সামাল দিতে আম আদমি পার্টির সদর কার্যালয়ের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির প্রতিবাদে আজ দেশজুড়ে প্রতিবাদে পথে নামছে আম আদমি পার্টি।
জানা গিয়েছে, ইডি সকালে কেজরিওয়ালের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পর তাঁকে আদালতে পেশ করবে। মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন কাউকে গ্রেফতার করার ঘটনা এই প্রথম। এর আগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেফতার করেছে ইডি। তবে সেটা মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে আগে ইস্তফা দিয়েছিলেন, তারপরে ইডি তাঁকে গ্রেফতার করেছিল।
কেজরিওয়ালকে হেফাজতে নিয়ে তাঁকে জেরা করতে চাইছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। পুরো জেরাটি লিখিত হবে এবং তার ভিডিওগ্রাফি করা হবে বলে সূত্রের খবর। এদিকে দিল্লির রাস্তায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে দিল্লিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কেজরিওয়ালের বাড়ির চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে কোনও রকম জমায়েত করতে দেওয়া হচ্ছে না।
রেশন দুর্নীতি মামলা নিয়ে পরপর ঘটনাক্রম কী, তা অজানা কারোও নয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে রেশন দুর্নীতি মামলায় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই গতি পায় তদন্তে। এরপর বালুর সূত্র ধরে শঙ্কর আঢ্য, শেখ শাহজাহান। এমন পরিস্থিতিতেই হঠাৎ কলকাতা পুলিস তৎপর হয়ে উঠল রেশন দুর্নীতি নিয়ে।
জানা গিয়েছে, শুক্রবারের মধ্যেই লালবাজারকে, কলকাতা পুলিসের অন্তর্গত প্রত্যেক ডেপুটি কমিশনারকে তথ্য দিয়ে জানাতে হবে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত কত অভিযোগ জমা পড়েছে? সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? এই সবটা শুক্রবারের মধ্যেই জানতে চায় লালবাজার।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রেশন দুর্নীতি মামলায় যখন কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর বর্তমানে তদন্তাধীন, তখন হঠাৎ কলকাতা পুলিস কেন সে সংক্রান্ত অভিযোগ দেখতে তৎপর হয়ে উঠল? এর নেপথ্যে কোন উদ্দেশ্য কাজ করছে রাজ্য পুলিসের- তারই হদিশ খুঁজছে ওয়াকিবহল মহল। বিরোধী মহলের দাবি, আবার বড় কোনও লিঙ্ক কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে আসার আগেই ঢেকে দেওয়ার জন্য পুলিসের এই চাল নয় তো?
সন্দেশখালিতে ইডির উপর হামলার ঘটনায় শেখ শাহজাহান এখন সিবিআই হেফাজতে। ইডি যাতে তাঁকে গ্রেফতার করতে না পারে, সেজন্য আগাম জামিনের আবেদন তিনি জানিয়েছিলেন। সেই জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বার রশিদীর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে৷
রাজ্য পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশ মতো এখন শেখ শাহজাহান সিবিআই হেফাজতে। ইডিও মামলা করেছে কলকাতা হাইকোর্টে। ইডি যেন তাঁকে গ্রেফতার না করে। সেই কারণেই আগাম জামিনের আবেদন জানান শেখ শাহজাহান।
ইডি কলকাতা হাইকোর্টে সওয়াল করেছে ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে হামলার ঘটনায়। হেফাজতে থাকা এক অভিযুক্তের সূত্রে তারা শেখ শাহজাহানের নাম জানতে পেরেছে। তার নিজের হাতে লেখা চিঠি থেকে শেখ শাহজাহানের নাম উঠে এসেছে। সওয়ালে দাবি করেছে ইডি। সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় তাদের মারধর করা হয়। আদালতের দ্বারস্থ হয় ইডি। পরে আবার তল্লাশি চালাবার আগেই সব সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এমনই আদালতে দাবি করেছে ইডি।
এখন চার দিনের সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন শেখ শাহজাহান। চলতি সপ্তাহতেই ফের তাকে বসিরহাট আদালতে তোলা হবে। এদিকে শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ জিয়াউদ্দিন মোল্লাকেও সিবিআই গ্রেফতার করেছে। গতকাল, সোমবার সিবিআই তাঁকে তলব করেছিল। তিনি নিজাম প্যালেসে সিবিআই জেরার মুখোমুখি হন। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
সন্দেশখালির পর এবার ইডির উপর হামলার তদন্তে বনগাঁয় গেল সিবিআই। সোমবার সকালে ফরেনসিক টিম ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। বাড়ি পুরো ঘিরে রেখেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে গত ৫ জানুয়ারি তল্লাশি চালাতে যায় ইডি। প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পথে বাড়ির বাইরে মব তৈরি হয়। হামলা চালানো হয় ইডি আধিকারিকদের গাড়ির উপর। ইডি আধিকারিকদের গাড়ির উপরে হামলার ঘটনায় বনগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ইডির তরফে। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্ট সেই তদন্তভার দেয় সিবিআই-এর হাতে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিবিআই আধিকারিকরা শঙ্করের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় আসেন এবং সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেন। ভিডিওগ্রাফি করে নিয়ে যান। সোমবার ফের ইডির উপর হামলার ঘটনায় বনগাঁয় তদন্তে যায় সিবিআই ও তাদের ফরেনসিক টিম। সমস্ত তদন্ত প্রক্রিয়া ডিজিটাল এভিডেন্স হিসেবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর পরবর্তীতে সিবিআই আধিকারিকরা বনগাঁ পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ-এর বাড়িতে যান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা ধরে তদন্ত চালায় সিবিআই।
তদন্তে জানা যায়, শঙ্করের বাড়ির ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা CCTV ক্যামেরার তার খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই ঘটনা নিছকই কাকতালীয় নাকি এর পিছনেও লুকিয়ে কোনও রহস্য? ধন্দ কাটাতে বনগাঁ পুরসভায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে নোটিশ সিবিআই এর। ফুটেজ চেয়ে নোটিশ তলব গোপাল শেঠকেও।
শেখ শাহজাহানকে রবিবার বসিরহাট আদালতে পেশ করল সিবিআই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে সকাল ৮.৩০ টায় নিজাম প্যালেস থেকে বের করে বসিরহাট আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন সিবিআই আধিকারিকরা।
২৮ ফেব্রুয়ারি বসিরহাট জেলা পুলিসের পক্ষ থেকে গ্রেফতার করার পর ২৯ তারিখ তাকে পেশ করা হয় আদালতে। আদালতের পক্ষ থেকে দশ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি। হাইকোর্টের নির্দেশেই শেখ শাহজাহানকে হেফাজতে নেয় সিবিআই। শাহজাহানের ঠিকানা হয় নিজাম প্যালেস। সিবিআই হেফাজতে এই ৫ দিন শাহজাহানকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বসিরহাট মহকুমা আদালতে শাহজাহানকে পেশের পর বাকি চার দিনের হেফাজতের আবেদন জানায় সিবিআই।
আদালতে সিবিআই জানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তে এখনও অনেক তথ্য নতুন করে পাওয়ার আছে তাই আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।সিবিআই-এর আইনজীবী আদালতে আরও জানান তদন্তে অসহযোগিতা করছেন শেখ শাহজাহান। তাই তদন্তকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।
শেখ শাহজাহান সিবিআইয়ের হেফাজতে এলেও এখনও উধাও মোবাইল ফোন।তাই শেখ শাহজাহানের ফোনের খোঁজে সিবিআই। পুলিস জানিয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের সময় তার ফোনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।কিন্তু সিবিআই দাবি করেছে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শেখ শাহজাহানের মোবাইল ফোন। এমনকি সিবিআই যখন পরবর্তীতে শাহজাহানের আকুঞ্জিপাড়ার বাড়িতে তল্লাশি চালায় তখনও তারা শাহজাহানের দুটি ফোনের কোনও হদিশ পায়নি বলেই দাবি করেছে সিবিআই। বসিরহাট আদালতে প্রবেশের সময় সাংবাদিকরা একাধিকবার শাহজাহানকে প্রশ্ন করেন আপনার মোবাইল ফোন দুটি কোথায়? নিরুত্তর থাকেন শাহজাহান।
অন্যদিকে এদিন শেখ শাহজাহানের তরফে জামিনের আবেদন করা হয় বসিরহাট মহকুমা আদালতে। ইডির উপরে হামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন শাহজাহান বলে আদালতকে জানান শেখ শাহজাহানের আইনজীবী। মূলত ইডির ওপর হামলার ঘটনায় যে মামলা সেই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। সেই মামলাতেই এদিন বসিরহাট আদালতে পেশ করা হয় শাহজাহানকে।
ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে ন্যাজাট থানায় ২ টি এফআইআর করা হয়। একটি এফআইআর নম্বর ৯ ইডির ওপর হামলার ঘটনায়, অপরটি ৮ যা রাজ্য পুলিস সুয়ো মোটো করেছে।এদিন শুনানি শেষে ৪দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয় বসিরহাট মহকুমা আদালত। আগামী ১৪ তারিখ ফের শেখ শাহজাহানকে বসিরহাট মহাকুমা আদালতে পেশ করা হবে।