
রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগড়ে বিজেপির জয়ের রাস্তা মসৃণ। ইঙ্গিত পেতেই বাংলার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংঘাতের ইঙ্গিত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
গত মঙ্গলবার বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন থেকে বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই বিজেপির জয়ের উৎসব পালনে বিধানসভায় যাবেন শুভেন্দু অধিকারী।
রবিবার তিন রাজ্যে জয়ের গন্ধ পেতেই দেশজুড়ে উৎসব শুরু করেছে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। এই নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করা বিজয় মিছিল করবে। বিধানসভার বাইরে রাস্তায় বিজেপি বিধায়করা মিষ্টি বিতরণ করবেন।
ভোটগণনা শুরু হয়ে গিয়েছে মিজোরামে। গণনার শুরুতেই এগিয়ে রয়েছে প্রধান বিরোধী জ়োরাম পিপলস্ মুভমেন্ট, জেডপিএম। এমএনএফ-কে পিছনে ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৫ আসনে। প্রাথমিক ট্রেন্ড অন্তত সেরকমই বলছে।
বেশিরভাগ সমীক্ষা বলছে, এবার মিজোরামে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে পাল্লা ভারী জেডপিএমের দিকেই। কিন্তু, ইতিহাস বলছে, প্রতি দশবছরে মিজোরামে সরকার পাল্টায়। সেক্ষেত্রে, এমএনএফ-এর সবে ৫ বছর হয়েছে। তাহলে, চিরাচরিত ধারা বজায় রেখে এবারও সিংহাসন নিজেদের দখল রাখতে পারবে, এমএনএফ ? তার উত্তর মিলবে ভোটের ফল প্রকাশের পরই।
৪০ আসনের বিধানসভা। তার মধ্যে ৩৩টি আসনে গণনা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ট্রেন্ডে ১৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে জেডপিএম। এমএনএফ এগিয়ে রয়েছে ১১টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৫টি আসনে।
হিন্দিবলয়ে গেরুয়া ঝড়। তিন রাজ্যে বিজেপির জয়ের পর বিরোধী শিবিরে ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। শনিবার লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সর্বদল বৈঠকে তাঁর হয়ে সওয়াল করেছিলেন তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার বিজেপির এই জয়ের পর সোমেও অটুট থাকবে কি ইন্ডিয়া জোটের দলবদ্ধ মনোভাব। কতটা স্নায়ুর চাপে থাকবেন মহুয়া মৈত্র! সোমবারই এথিক্স কমিটির রিপোর্ট প্রস্তাব আকারে পেশ করার কথা স্পিকার ওম বিড়লার।
এথিক্স কমিটির তদন্তের পরই মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত হবে কিনা, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াবে কিনা, তা জানা যাবে সোমবার। তা নিয়ে সরগরম হতে পারে দুই কক্ষ। তবে অনেকের মতে, শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই বিজেপি সাংসদরা লোকসভায় তিন রাজ্যের জয়ের হাওয়া গায়ে নিয়েই ঢুকবেন। কংগ্রেসের থেকে দুটি রাজ্য ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। তাই সাংসদদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকবে। তাতে চাপে থাকবেন বিরোধীরাই।
এদিকে বিজেপির এই জয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেস কিন্তু অধিকাংশ দোষ কংগ্রেসের ঘাড়েই চাপিয়েছে। তাই সংসদে ইন্ডিয়া জোট শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই কতটা জোটবদ্ধ থাকতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল।
ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে জয়ের পর বিজেপির সদর দফতরে এসে লোকসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। জানালেন, এই তিন রাজ্যে জয় ২০২৪ লোকসভার হ্যাট্রিকের গ্যারান্টি।
এদিন বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন, "কিছু লোকজন বলছেন, এদিনের হ্যাটট্রিক হওয়ার পর এবার ২৪-এ লোকসভা নির্বাচনেও হ্যাটট্রিকও নিশ্চিত করেছে। পরিবারতন্ত্র, তোষণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ জিরো টলারেন্স নীতি সমর্থন করেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ ভোটবাক্সে জবাব দিয়েছে।"
শুধু তাই নয়, বিরোধীদের আক্রমণ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, এবার শুধরে যান। না হলে মানুষ ও উন্নয়ন তাঁদের ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
লোকসভা ভোটের আগে দক্ষিণের রাজনীতিতে বিরাট স্বস্তি কংগ্রেসের। অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের পর এই প্রথম তেলঙ্গনায় সরকার গঠনের পথে শতাব্দী প্রাচীন এই রাজনৈতিক দল। ১১৯ আসনের রাজ্য বিধানসভায় গণনার দু ঘণ্টার মধ্যেই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাহুল গান্ধীর ভারত জড়ো যাত্রার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে দক্ষিণের এই রাজ্যে। সেই আবেগকে এই ভোটে কাজে লাগিয়েছেন কংগ্রেস কর্মীরা। পাশাপাশি চন্দ্রশেখর রাও সরকারের দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে আগাগোড়া বিধানসভায় প্রচার চালিয়ে ছিল কংগ্রেস। তাতেও ফল এসেছে।
প্রাথমিক ভাবে যা খবর, তাতে গ্রামীণ তেলঙ্গনায় ভাল ফল করেছে কংগ্রেস। আর সেটাই অক্সিজেন দিয়েছে প্রদেশ নেতৃত্ব। শহরের ফল আড়াআড়ি ভাগ হয়েছে কংগ্রেস এবং বিআরএসের মধ্যে। বেলা বাড়লে ছবি আরও স্পষ্ট হবে।
ভোপালের মসনদে কমল ফুটল। কমল নাথ কিছু করতে পারলেন না। মোদী ম্যাজিকে এবারও মধ্যপ্রদেশ কার্যত নিজেদের দখলে রাখল বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে অন্যতম বড় রাজ্য নিজেদের দখলে রেখে স্বস্তিতে দিল্লিতে গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা।
প্রাথমিক গণনার পর কংগ্রেস নেতা কমল নাথ দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস আসছে। কিন্তু বেলা বাড়তে ফল পাল্টে গেল। ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে কার্যত ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে বিজেপি।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে ভোপালের গদিতে শিবরাজেই আস্থা ঢেলে দেবেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের ফল সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দিল বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাকেও।
লোকসভা ভোটের আগে রাজস্থান স্বস্তি দিল বিজেপিকে। মরুরাজ্যে ফের পদ্ম ফোটা এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। ২০০ আসনের বিধানসভার ম্যাজিক ফিগার ১০০। গণনার এক ঘণ্টার মধ্যেই তা পেরিয়ে দুর্বার গতিয়ে এগিয়ে চলেছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের দাবি, জয়পুরের তখতে বসুন্ধরার রাজ এখন সময়ে অপেক্ষা।
গত পাঁচ বছর গেটলট বনাম পাইলট এই লড়াইয়ে ব্যস্ত থেকেছে কংগ্রেস। পাঁচ বছর আগে ভাল ফলেও রাজ্যে এই দুই নেতার লড়াইয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে দিল্লিকে। সচিনকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েও অস্বস্তি কাটেনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, মরু রাজ্যে উন্নয়নের বদলে দলীয় কোন্দলই ডোবাল কংগ্রেসকে। যেখানে ছত্তীশগড় ও তেলঙ্গনা রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা থেকে ফায়দা তুলল, সেখানে পিছিয়ে পড়ল রাজস্থান।
রাজস্থান রাজনীতিতে পালাবদলের দস্তর রয়েছে। সেই দস্তর মেনেই রাজ্যে সরকার গড়ার পথে বিজেপি। রাজস্থান নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার গোড়া থেকেই দাবি ছিল ফিরে আসার। গণনার ফলে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
জাতীয় সঙ্গীত 'অবমাননা'র অভিযোগে তলব করা হল বিজেপির (BJP) আরও ৩ বিধায়ককে। মঙ্গলবার ৩ বিজেপি বিধায়ককে তলব করল লালবাজার। প্রথম এফআইআরে নাম থাকা ৫ বিজেপি বিধায়ককে সোমবার হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবারে ৩ বিজেপি বিধায়ককে তলব করল কলকাতা পুলিসের গুন্ডা দমন শাখা।
বিধানসভায় জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ করে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিল তৃণমূল। ১১ জন বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ যায় লালবাজারে। প্রথম এফআইআর-এ নাম থাকা ১১ জনের মধ্যে এবার আরও তিন বিজেপি বিধায়কদের তলব করল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন শাখা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় যাঁদের লালবাজারে ডাকা হয়েছে, তাঁরা হলেন চন্দনা বাউরি, মিহির গোস্বামী, মালতী রাভা রায়।
শুক্রবার বিধানসভা চত্বরে আবারও নাটকীয় পরিস্থিতি। বি আর আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের ধরনাস্থল গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধিকরণ করেন বিজেপি বিধায়করা। তার পর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গান তাঁরা। গোটা কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুক্রবার সকালে শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ায় বিধানসভা চত্বরে। উল্লেখ্য, গত তিন ধরে ওই আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশেই ধরনায় বসেছিল তৃণমূল। শুভেন্দুর কথায়, চোরেদের জন্য ওই স্থান অপবিত্র হয়েছে। তাই গঙ্গাজল ধুইয়ে স্থানটি পবিত্র করছেন তাঁরা।
শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য বিধানসভা। একদিকে রাজ্যের শাসক শিবিরের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে বি আর আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের ধরনা, অন্যদিকে রাজ্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপির পাল্টা ধরনা কর্মসূচি বিজেপির। যাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা। চোর পাল্টা চোর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিধানসভা চত্বর।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগ তোলে তৃণমূল শিবির। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রীদের এফআইআর-এর ভিত্তিতে ৫ বিজেপি বিধায়ককে সোমবার লালবাজারে তলব করা হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ৩ দিন ধরে চলা তৃণমূলের ধরনাস্থল গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধিকরণ করল বিজেপি। শুক্রবার সকালে বিধানসভার বাইরে দেখা যায় মাথায় গামছা-কলসি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শুভেন্দু ও বাকি বিজেপি বিধায়করা। ওই জায়গার পবিত্রতা ফেরাতে গঙ্গাজল নিয়ে আসেন বিজেপি বিধায়করা। সেই জল আম্মেদকর মূর্তির পাদদেশে ঢেলে চলে পবিত্রতা অভিযান। এর পর গামছা দিয়ে মূর্তির ফলক মুছতে দেখা যায় বিজেপি বিধায়কদের। তার পর ওই জায়গায় ফুল ছড়িয়ে দেন তাঁরা। চোরেরা আম্বেদকরের মূর্তিকে অপবিত্র করেছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা।
বিজেপি কর্মীকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দুপুরে কল্যাণীর চাঁদমারি এলাকায়। জানা গিয়েছে, আহত ব্যক্তির নাম মিহির বিশ্বাস। বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। অভিযোগ বিজেপি কর্মীকে মাটিতে ফেলে কোপানো হয়। অভিযুক্ত আরমান তরফদার ও তাঁর ভাইকে স্থানীয়রা পাকড়াও করে গণধোলাই দেয়। ঘটনাস্থলে যায় কল্যাণী থানার বিশাল পুলিসবাহিনী। পুলিস জনরোষের হাত থেকে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে কল্যাণীর জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, মিহির বিশ্বাস মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আক্রমণের জেরে ঘটনাস্থলেই আক্রান্তের হাতের একটি আঙুল কেটে গিয়েছে। এমনকি ঘাড়ের পিছনেও হাঁসুয়ার কোপ মেরেছে। জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতো ঘটনার দিন সকালে সেলুন খোলেন মিহির বিশ্বাস। হঠাৎই পিছন থেকে এসে আরমান তাঁকে হাঁসুয়ার কোপ মারেন। সে ঘুরে দাঁড়াতে হাতেও কোপ মারেন বলে অভিযোগ। যার দরুন মিহিরের একটি আঙুল কেটে যায়।
উত্তেজিত স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্তকে ধরে ফেলেন। চলে গণপ্রহার। আরমানকে বাঁচাতে এসে আহত হয় তাঁর ভাইও। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে কল্যাণী থানার পুলিস। তবে কী কারণে এই খুনের চেষ্টা তা জানা যায়নি। অন্যদিকে আহত আরমান ও তাঁর ভাইও চিকিৎসাধীন কল্যাণী জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিস বাহিনী।
প্রসূন গুপ্ত: প্রায় ২৫ বছর ধরে বেসরকারি চ্যানেলে কোনও রাজ্য বা দেশের ভোটের আগে পরে ওপিনিয়ন পোল বা ভোটের আগের সমীক্ষা এবং ভোট শেষ হলেই এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত সমীক্ষা তুলে ধরা হয়। এখন প্রশ্ন থাকে কি করে এই আগাম ফলের চিত্র চ্যানেলগুলি তুলে ধরছে? জানা যায় যে, ভোটদানের পরে নাকি নানান প্রশ্ন করে ভোটদাতাদের কাছ থেকেই এর উত্তর পাওয়া যায়। এবারে ফল জানাতে গিয়ে অনেকটা শেয়ার বাজারের মতো তারা বলে যে, এই ফলাফল সর্বদা যে সঠিক হবে এমন গ্যারান্টি নেই। তা যাই হোক না কেন কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে অনেক সময়েই এই আগাম ফল বাস্তবে পরিণত হয়েছে, আবার তাদের সকলকেই বোকা হতেও হয়েছে। একেবারে উল্টো ফল হয়েছে। তবে মনে করি সারা ভারতে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায় এই এক্সিট পোল। কারণ আমাদের রাজ্যে সেই বাম আমল থেকে ভোটারদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সরকারের প্রতি দীর্ঘসূত্রী আনুগত্য যা বামেরা পেয়েছে এবং সরকার বিরোধী ভোট। ব্যতিক্রম হয়েছিল ২০১১-তে যেবার মমতা ক্ষমতায় এসেছিলেন।
ইদানিং মোদী জমানায় দেশের সিংহভাগ চ্যানেল তাদের আনুগত্য কেন্দ্রের প্রতি রেখে খবর কর। কাজেই গত বেশ কয়েক বছর ধরে এই এক্সিট পোল সঠিক তথ্য দিতে পারছে না। এইতো এ বছরের গোড়ায় কর্ণাটক নির্বাচনে অনেকেই কংগ্রেসকে কিছুটা এগিয়েও জনতা দল (এস) ফ্যাক্টর হবে জানিয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলো বিপুল আসন পেয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলো এবং জনতা দল প্রায় নিঃশেষিত হয় গেলো। এবারে মানুষের নজরে ছিল সদ্য সমাপ্ত হওয়া ৫ রাজ্যের এক্সিট পোলের দিকে। বৃহস্পতিবার তেলেঙ্গানার ভোটপর্ব শেষ হতেই আধা ডজন ন্যাশনাল চ্যানেল এক্সিট পোল বের করলো। কিন্তু অদ্ভুতুড়ে এই ফলের নমুনা। একেক চ্যানেল একেক রকম ফল দেখাচ্ছে। কোথাও ছত্রিশগড়ে দেখাচ্ছে ফের কংগ্রেস আসছে আবার কেউ দাবি করছে বিজেপি ০.৫ শতাংশ ভোট এদিক ওদিক হলে ক্ষমতায় চলে আসবে। মধ্যপ্রদেশ নিয়েও একই মত। দুটি সংস্থা দাবি করছে বিজেপির বিপুল জয়, আবার ৪টি সংস্থা বলছে না কংগ্রেস কোনওক্রমে চলে আসবে। একই হিসাব রাজস্থান নিয়েও। ৪টি সংস্থা দেখাচ্ছে বিজেপি আসছে আবার দুটি সংস্থা বলছে কংগ্রেস শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করবে। কাকে ভরসা করবে মানুষ?
বাংলার সরকারের লাগামছাড়া দুর্নীতি ও অপশাসনের প্রতিবাদে ধর্মতলায় মেগা সমাবেশ বিজেপির। এই সমাবেশ থেকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর শাহি সমাবেশের দিনই বিধানসভায় আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে কালো পোশাক পরে ধরনা তৃণমূলের বিধায়কদের। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
১০০ দিনের কাজ সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ বাংলার শাসকদলের। সম্প্রতি এই ইস্যুতে দিল্লিতে গিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন -কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও বারবার শোনা গেছে কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গ। আর এই ইস্যুতেই মঙ্গলবার বিধানসভায় আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে ধরনা দেন তৃণমূলের বিধায়করা। সেই সঙ্গে এই ইস্যুতে বুধবার দলের তরফে কালা দিবস পালন করা হবে বলেও জানানো হয়। সেইমতো এদিন তৃণমূলের বিধায়করা কালো পোশাক পরে বিধানসভায় আসেনতাঁরা। তৃণমূলের এই ধরনা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, এদিন বিধানসভায় উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার তৃণমূল নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে জেলা দেখার জন্য ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
বুধবার বিধানসভায় বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিল পাস হয়। বিরোধী বিধায়কদের অনুপস্থিতিতে বিধানসভায় সহজেই এই বিল পাস করিয়ে নেয় বাংলার শাসকদল। এদিন বিধানসভায় বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদের চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, অনেক বিধায়কের কোটি কোটি টাকা রয়েছে। তাঁদের ভাতা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁরাই বেতন বৃদ্ধির বিরোধিতা করছেন। তাঁর দাবি, তৃণমূলের অনেক বিধায়ক রয়েছেন, যাঁদের মাটির বাড়ি, কোনও সম্পদও নেই। পাশাপাশি, এক লক্ষ কৃষকের জন্য ২,৮০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রেখেছেন বলেও জানান। বিরোধীদের আক্রমণ করে তিনি বলেন, বেতন বাড়িয়েছি, বেশ করেছি। সুযোগ পেলে আবার বাড়াব।
এদিন বকেয়া ডিএ-র জন্য বামেদের ঘাড়ে দোষও চাপান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ ডিএ বকেয়া রেখেছিল বামেরা। আমাদের সরকার পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশকে মান্যতা দিয়ে ধাপে ধাপে ৯০ শতাংশ ডিএ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতা অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, বকেয়া ডিএ নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে বর্তমান রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। এ নিয়ে রাজপথে নেমে অবস্থান, বিক্ষোভ কর্মসূচিও তাঁরা পালন করেছেন। বিষয়টির জল গড়িয়েছে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত।যদিও এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই বাংলার সরকারের। তাদের সাফাই, সরকারের ভাঁড়ার শূন্য। তাই ইচ্ছে থাকলেও কর্মচারীদের প্রাপ্য ডিএ দেওয়া যাচ্ছে না। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার মেলা, খেলার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় করছে। কিন্তু কর্মচারীদের ডিএ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই বলা হয়, টাকা নেই। এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, সরকারের ভাঁড়ার শূন্য হলে বিধায়কদের বেতন, ভাতা বাড়ানো হচ্ছে কি করে ? নাকি দল ধরে রাখার জন্য বিধায়কদের খুশি রাখতেই এই পদক্ষেপ ? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
প্রসূন গুপ্ত: আজ থেকে ৯ বছর আগে এই ধর্মতলাতে ৩০ নভেম্বর জনসভা করেছিল তৎকালীন রাজ্য বিজেপির পরিচালন মন্ডলী। সেদিনও প্রধান বক্তা ছিলেন অমিত শাহ , যদিও তখন তিনি সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন বিজেপির। বেশ ভিড় হয়েছিল রাহুল সিনহার নেতৃত্বে। এটা বাস্তব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১ জুলাইয়ের বিষয় একেবারেই ভিন্ন সুতরাং ওই দিনের সঙ্গে তুলনা করা ছেলেমানুষি হবে। সেবারে উদ্দেশ্য একটি ছিল নিশ্চই যে সদ্য ক্ষমতায় এসেছিলো বিজেপি কেন্দ্রে এবং নতুন সভাপতিকে বরণের বিষয় ছিল কিন্তু বুধবার রাজ্য বিজেপির কোনও এজেন্ডাই ছিল না। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সামনে লোকসভা নির্বাচন কাজেই ধর্মতলায় ভিড় জমিয়ে তাঁর কোনও সুবিধা নেই কিন্তু ভোট প্রচারের টেম্পোটি তুলে দিলে মন্দ কি। অন্যদিকে বিধানসভার বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বছর দুয়েক আগেও তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী ছিলেন কাজেই তিনি জানেন ধর্মতলার মহিমা কিন্তু যে কোনও এই ধরণের হাই প্রোফাইলের নেতাকে নিয়ে জনসভার নিশ্চই কোনও উদ্দেশ্য থাকবে যা কিনা অনুপস্থিত ছিল আজ।
সভা শুরু হয়ে যায় দুপুরের আগেই। তখন কোনও কোনও নেতারা ভাষণ দিতে থাকেন। কিছু গান বাজনা ইত্যাদি ছিল। এরপরেই মূল সভা শুরু হয়ে যায় মধ্য দুপুরে। মঞ্চে দিলীপ ঘোষ , সুকান্ত মজুমদার বা শুভেন্দুকে অন্যান্য নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। ভিড়ে বাড়তে শুরু হয় তখনই যদিও রাহুল সিনহার ২০১৪ র জনসভাকে টেক্কা দিতে পারলো না আজকের জনসভা।
যতটা ঝাঁজ ছিল শুভেন্দু বা অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যে ততটাই মামুলি ছিল প্রধান বক্তা অমিত শাহের ভাষণ। ধুরন্ধর এই রাজনৌতিক নেতা যেন কিছুটা বাংলার নেতাদের আবদার রাখতেই মঞ্চে উঠেছিলেন। অমিত ভাষণে বারবার নরেন্দ্র মোদির কৃতিত্ব তুলে ধারা হয়। অমিত একেবারে কাগজ তুলে জানান যে ইউপিএর আমলে বাংলা যতটা বঞ্চিত হয়েছে ততটাই সুবিধা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আসন্ন লোকসভাতে রেকর্ড ভোট যাতে বাংলার মানুষ দেয় তার আবেদনও ছিল ভাষণে। তিনি বার দুয়েক জানালেন যে আসন্ন ২০২৬ এর নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্য থেকে দুই তৃতীয়াংশ আসন পাবে। কিন্তু বুদ্ধিমান অমিত জানেন এতো দ্রুত বিধানসভার প্রচার করে লাভ নেই। একবার জেলে বন্দি তৃণমূল নেতাদের নাম করলেন, একবার 'ভাতিজা' কথাটি উঠে এলেও বেশি আক্রমণে গেলেন না তিনি। দ্রুত শেষ করলেন তাঁর বক্তব্য। শেষ পর্যন্ত বোঝা গেলো না বুধবারের ধর্মতলার জনসভার উদ্দেশ্যটি কি ছিল ?
২৪ এর মহা-যুদ্ধ। এর আগেই কলকাতায় মেগা সভা বিজেপির। সেই সভায় যদি দিতে কলকাতায় আসছেন অমিত শাহ। একদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুর তুলে মমতা ও তৃণমূলকে টার্গেট করতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ। অন্যদিকে অমিত শাহ কলকাতায় পা দেওয়ার আগেই বিজেপির ভোট ব্যাংকে টার্গেট করে পোস্টার ছেয়ে গেল গত কলকাতায়। বুধবার ধর্মতলার সভার অনুমতি ছিল না কলকাতা পুলিশের তরফে। সেখানে হাইকোর্টের অনুমতিতে ধর্মতলায় সভা করছে বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপির কাছে এই মেগা সভা প্রেস্টিজ ফাইট।