একদিকে শ্যূন্যপদ ও বেআইনি নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রিসভাকে কড়া বার্তা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। আর সেই আবহেই এবার রাজ্যের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এবার নড়েচড়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিরিখে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal)। আর এতেই চিন্তার ভাঁজ স্বাস্থ্য দফতরের (Health Department) কপালে। আর তাই এবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে কড়া অবস্থানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধায় প্রবর্তন করা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড (Swastha Sathi) নিয়ে প্রথম থেকেই রয়েছে একাধিক টানাপোড়েন।
কারণ কলকাতা (Kolkata)-সহ রাজ্যের প্রায় অধিকাংশ জায়গায় হাতে গোনা কয়েকটি চিকিৎসাকেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও এই কার্ড নিতে সরাসরি অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে একাধিক বাইকার টাকা বাকি পড়ে রয়েছে বলেও উঠেছে অভিযোগ। তবে সেক্ষেত্রে এরকম কোনওরকমের অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তবে এবার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেন, 'আগে রোগীকে ভর্তি করুন, অক্সিজেন, স্যালাইন দিন রোগীকে। সব রোগী সঠিক চিকিৎসা পাক, প্রাণে বাঁচুক।' এরই পাশাপাশি রাজ্যের কোনও সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্র যদি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিতে অস্বীকার করলে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়ার তীব্র হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন যথেষ্ট কড়া নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেন, 'হাসপাতালে দালাল চক্র থাকলে ধরবেন। এদের পেলেই ধরবেন।' এছাড়াও তিনি যে এই দালাল চক্র বিন্দুমাত্র সমর্থন করেন না, তাও এদিন স্পষ্ট জানান মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবুজ সাথী প্রকল্প, সাইকেল দেওয়া, মোবাইল-ট্যাব দেওয়া, সবটাই প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন। একইসঙ্গে রাজ্য যে ট্যুরিজম হাব হয়েছে, সেটাও উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার শিশু দিবস (Children's Day) উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পড়ুয়াদের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজ্য সরকার। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এদিন পড়াশোনা করার জন্য খুদেদের হাতে ট্যাবও (Tab) তুলে দেন তিনি। মূলত অনলাইন পড়াশোনা করার সুবিধার জন্য এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭ লক্ষ পড়ুয়ার হাতে ট্যাব তুলে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ১০ হাজার টাকা করেও দেওয়া হচ্ছে। এরপরেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাঁর দলের এবং সরকারের (TMC) বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে মন্তব্য করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। নিয়োগ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ, এরকম একাধিক বিষয় উঠে আসে তাঁর মুখে।
"কাজ করতে গেলে যদি কেউ ভুল করেন তাহলে তা শুধরে নেওয়া দরকার। ভুল ভ্রান্তি হলে শুধরে নেওয়া হবে। আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু কিছু লোক বাংলাকে ভালোবাসে না। সারাক্ষণ অপপ্রচার আর কুৎসা করেন।" এভাবেই নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে শাসক দলের প্রতি বিরোধীদের চলা লাগাতার আক্রমণের জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো।
চলতি দিনে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে তৃণমূল নেতা অখিল গিরির কুরুচিকর মন্তব্য থেকে শুরু করে নাম না করেই পার্থ, অনুব্রত প্রসঙ্গে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের 'এনার্জি বুস্ট' করতে কোনও বিপদে ভয় না পাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
অপরদিকে এদিন শিক্ষা সংক্রান্ত নিয়োগ প্রসঙ্গেও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল জমানায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়েছে জানিয়ে তার পরিসংখ্যানের খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা। "আমাদের সময়ে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিকে ২লাখ ৫৩ হাজারেরবেশি নিয়োগ হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষক প্রায় দেড় লাখ ইতিমধ্যেই নিয়োগ হয়েছেন। ১০ হাজার অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়েছেন" বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে এদিন নাম না করেই একদিকে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। "বাংলায় বসে বাংলার খেয়ে-দেয়ে পরে দিল্লিকে বলছে বাংলায় টাকা দিও না। আমার বয়ে গিয়েছে দিল্লির টাকা নিতে। বাংলা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। দিল্লিকে মনে রাখতে হবে আমাদের আত্মসম্মান সবথেকে বড় জিনিস, এটা আমাদের গর্ব, আমরা ছিনিয়ে নিতে দেব না।" এককথায় এভাবেই নেতাজি ইন্ডোরের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের দিকে নিশানা সাধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইতিহাস সমৃদ্ধ বাংলার পট (pot)। বিশ্ব দরবারে সমাদৃত পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Medinipur) নয়ার পটচিত্র। পিংলার পটচিত্র পরিদর্শনে এলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক আয়েশা রানী। পিংলা (pingla) ব্লকের একটি ছোট্ট গ্রাম নয়া। এই গ্রামের সঙ্গে মিশে আছে পশ্চিমবঙ্গের এক অন্যতম শিল্পমাধ্যমের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ইতিহাস। যা শুধু রাজ্য নয় বিশ্বের দরবারে আজ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পিংলা ব্লকের নয়া গ্রাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে একমাত্র পটচিত্র গ্রাম। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে এবং উঠোনে এই পটচিত্রের ছাপ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাড়ির সামনেই পটচিত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন, আবার কেউ কেউ ঘরের সামনে বসেই ছবি আঁকেন।
সংস্কৃতে ‘পট’ শব্দের অর্থ হল কাপড়, আর ‘চিত্র’ মানে ছবি অর্থাৎ পটচিত্র বলতে কাপড়ের উপর অঙ্কিত চিত্রকে বোঝানো হয়। এই চিত্র অঙ্কন করার জন্য প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সমস্ত রং ব্যবহার করা হয়। যেমন- গাছের সিম দিয়ে সবুজ রং, ভুসোকালি দিয়ে কালো রং, অপরাজিতা ফুল দিয়ে নীল রং, সেগুন গাছের পাতা দিয়ে মেরুন রং, পান-সুপারি চুন দিয়ে লাল রং, পুঁই ফল দিয়ে গোলাপি রং, কাঁচা হলুদ দিয়ে হলুদ রং, পুকুর খনন করে মাটি বের করে তা দিয়ে সাদা রং ইত্যাদি। সাধারণত এই সমস্ত প্রাকৃতিক রং দিয়ে ছাতা, হাতপাখা, হ্যান্ডব্যাগ, মোড়া, লন্ঠন, কেটলি ইত্যাদি আঁকা হলেও শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট-এ শিল্পীরা ফেব্রিক রং ব্যবহার করে থাকেন।
জানা যায়, এই গ্রামের বেশিরভাগ পটুয়ারাই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তবুও তাঁরা রামায়ণ, মহাভারত, দুর্গা কাহিনী মঙ্গলকাব্যের বিভিন্ন পটচিত্র এঁকে থাকেন। সে জন্যই হয়ত ধর্মীয় সম্প্রীতির মেলবন্ধনের ছবি এই গ্রামেই ধরা পরে। আর এমনই একটি গ্রামের পটচিত্র পরিদর্শনে এলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক আয়েশা রানী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পিংলা সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন চক্রবর্তী, পিংলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত কীর্তনীয়া, পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ মাইতি সহ প্রশাসনিক একাধিক কর্মকর্তারা। এদিন তাঁরা ঘুরে দেখেন প্রতিটি কার্যকলাপ। পরে পটুয়াদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন জেলাশাসক।