নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে তেহট্টের বিধায়ক (Tehatta MLA) তাপস সাহার সঙ্গেই সিবিআই র্যাডারে তৃণমূল মহিলা সেলের নেত্রী ইতি সরকার। এই নেত্রী নাকি তাপস সাহা ঘনিষ্ঠ। এমনটাই স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এদিকে শনিবার ইতির বাড়িতেও ঢুঁ মারে কেন্দ্রীয় সংস্থা। যদিও নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই এদিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন ইতি দেবী। তিনি বলেন, 'আমি নিজেই ধারদেনায় ডুবে রয়েছি। আমি যে দেউলিয়া সেটা সিবিআই (CBI) আমার বাড়িতে এসে নথি ঘেঁটে বুঝে গিয়েছে। আমার বাড়িতে শুধু সরকারি একাধিক প্রকল্পের সাহায্যপ্রার্থীদের নথি মিলেছে। আমি একটা সেলফ হেল্প গ্রুপ চালাই। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে তৃণমূল কংগ্রেস করি। একুশের ভোটে তাপস সাহা দলের প্রার্থী হলে প্রচারে সাহায্য করেছিলাম। সেই সূত্রে শুধু পরিচয়।'
তিনি জানান, 'শুক্রবার তাপস সাহার বাড়িতে সিবিআই এসেছে। আমি একসময় ব্লক নেত্রী ছিলাম, এখন মহিলা সেলের জেলার জেনারেল সেক্রেটারি। যেহেতু আমি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাই হয়তো সিবিআই এসেছে। একুশের প্রার্থী হওয়ার পর থেকে আমার সঙ্গে তাপস সাহার পরিচয়। আমার সঙ্গে কোনও চাকরিপ্রার্থী যোগাযোগ নেই।'
ইতি সরকার জানান, 'আমি চাকরির সুপারিশ কোনওদিন করিনি। আমি শুধুই রাজনীতি করি। তাপস কাকু ভোটের সময় শুধু প্রচারের কাজে এসেছেন আর বাড়িতে কোনওদিন আসেনি। সিবিআই এসে আমার ফোন, কিছু নথি ঘেঁটে দেখেছে। আমি চেয়েছিলাম সিবিআই এসে দেখুক আমি কী অবস্থায় আছি।'
নিয়োগ দুর্নীতির (Scam) তদন্তে তেহট্টের তৃণমূল (Tmc) বিধায়ক (MLA) তাপস সাহার বাড়িতে সিবিআই হানা। আজ অর্থাৎ শুক্রবার সকালে একদল সিবিআই আধিকারিকরা সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এরপরে শুক্রবার বিকেলে তাপস সাহার বাড়িতে হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সূত্রের খবর, হাইকোর্টের নির্দেশের তিন দিনের মধ্যে বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই। গত তিন দিন আগে অর্থাৎ ১৮ই এপ্রিল হাইকোর্ট তাপস সাহার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই মত শুক্রবারই তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার বাড়িতে সিবিআই হানা। সূত্রের খবর, এখনও অবধি তাপস সাহা বাড়িতেই আছেন এবং কেন্দ্রীয় জওয়ানরা তাঁর বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। তাপসাকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
রাজ্য পুলিসের দুর্নীতি দমন শাখার থেকে তদন্তভার সরিয়ে সিবিআইয়ের (CBI) হাতে দিলো কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এ বার নদিয়ার তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার (Tapas Saha) বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার এই নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
তৃণমূল বিধায়ক তাপসের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে অনেক আগেই। মঙ্গলবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, অবিলম্বে পুলিশের কাছ থেকে মামলাটি সিবিআইকে হস্তান্তর করতে হবে। বলা হয়েছে, কেস ডায়েরি-সহ মামলার নথি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দেবে পুলিশ।
গত বছর তাপসের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ১৬ কোটি টাকা নিয়েছেন তাপস। তেহট্টের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে ২০১৮ সাল থেকে চাকরি দেওয়ার নামে ৫ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে হাই কোর্টে মামলা করেন বিজেপি নেতা-আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি।
মঙ্গলবার হাই কোর্টের নির্দেশের পর আইনজীবী তিওয়ারি বলেন, ‘প্রাইমারি (প্রাথমিক), আপার প্রাইমারি (উচ্চ প্রাথমিক), এসএসসি, দমকল, ডব্লিউবিসিএস, আইসিডিএস-সহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগে দুর্নীতিতে তাপস সাহার নাম আসে। পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তাপসের আপ্ত সহায়ক গ্রেফতার হন। তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়। এক বছর ধরে চার্জশিট পেশ হয়নি। কেন তাপসকে ডাকা হয়নি, আদালতের এই প্রশ্নে কোনও উত্তর দিতে পারেনি তদন্তকারীরা। এর পরই রাজ্য পুলিশ থেকে এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি মান্থা।’
উল্লেখ্য, তাপসের বিরুদ্ধে তদন্তভার ছিল রাজ্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখার হাতে। নিম্ন আদালতে তারা যে রিপোর্ট পেশ করে, তাতে উল্লেখ করা ছিল বিধায়কের আপ্ত সহায়ক প্রবীর কয়াল জেরায় দাবি করেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে ৩০-৩৬ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা তাঁর মাধ্যমেই তৃণমূল বিধায়কের কাছে গিয়েছে। চাকরি বিক্রির কমিশন হিসাবে তিনি আরও ৩০-৪০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কুন্তল (Kuntal) ঘোষকেও আদালতে তোলা হয়, আদালত (court) থেকে বেড়িয়ে বিস্ফোরক কুন্তল। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনারা যে ইমেজটা আমার এনেছেন সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইডি (Ed) চার্জশিটে আমার কোনও সম্পত্তির হদিশ নেই, আমার সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মানিক ভট্টাচার্যের কোনও সম্পর্ক ছিল না।'
একই সঙ্গে কুন্তল বলেন, 'আমার গ্রেফতারির কারণ একটাই, আমি রাজনৈতিক বিদ্বেষের শিকার। আমি কেমন মানুষ সেটা সামাজিক মাধ্যম থেকে জানতে পারবেন। আপনাদের সামনে গীতায় হাত রেখে বলতে পারি যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্ক ছিল না।' এছাড়া কামদুনি আন্দোলনের প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়ালকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন কুন্তল। মৌসুমীকে তাপস মণ্ডলের এজেন্ট বলে দাবি করেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা। কুন্তল বলেন, 'মৌসুমী তাপসের এজেন্ট ছিল বলে জানতাম। প্রচুর টাকা তুলেছে, অনেক মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।' যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মৌসুমীর দাবি, 'সব মিথ্যে কথা বলছে, কুন্তল যা খুশি তাই বলছে, আমি কুন্তলকে চিনতামও না, তৃণমূলের সবাই চোর হতে পারে, কিন্তু মৌসুমী কয়াল না।'
বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বেড়িয়ে তিনি আরও জানান, 'আমার বিএড কলেজ বিক্রি করে ৭ কোটি টাকা নগদ দিয়েছি গোপাল দলপতিকে। গোপাল ৫ কোটি নগদ নিয়ে গিয়েছিল তাপসের কাছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক মন্তব্য করেন তিনি যে, 'আমার ফ্যামিলি থেকে বিভিন্ন রকম প্রবলেম এসেছে। আমি আমার ছেলের স্কুলের ফিস পর্যন্ত দিতে পারছি না।'
কেউ দুষলেন কুন্তলকে, কেউ সুজন, শুভেন্দুকে। নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে (Education Scam) গ্রেফতার হওয়া পার্থ, তাপস-সহ আরও ৭ অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার আলিপুর বিশেষ সিবিআই কোর্টে (CBI) তুলল কেন্দ্রীয় সংস্থা। আদালতে তোলার সময় তাপসের গলায় শোনা গেল অন্য সুর। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'ম্যাজিশিয়ান কুন্তল সব জানে।' তিনি যে কুন্তলকে টার্গেট করলেন সেটা স্পষ্ট। এই ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল। কুন্তল আপাতত জেল হেফাজতেই আছেন।
ওদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কোর্টে আনার সময় তাঁকে উদ্দেশ্য করে চলতে থাকে 'চোর চোর স্লোগান', যদিও এ ঘটনা নতুন নয়। এর পূর্বেও পার্থকে উদ্দেশ্য করে চোর চোর স্লোগান দিতে শোনা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিককে বলেন, 'এখন দিলীপ বাবু, সুজন বাবু, বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরা নিজের দিকে দেখুন, উত্তরবঙ্গে তাঁরা কী করেছেন? তাঁরা ২০০৯-২০১০-এ সিএজি রিপোর্ট পড়ুন, সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছেন, যেহেতু আমি তাঁদেরকে বলেছি আমি সাহায্য করতে পারবো না, আমি নিয়োগ কর্তা নই, আমি কোনও কাজ বেআইনি করতে পারবো না।'
বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারীকেও টার্গেট করেছেন তিনি। তিনি বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারীর ২০১১-২০১২ সালটা দেখুন না, ডিপিএসসি-টা দেখুন না, কী করেছিল তাঁরা।' প্রসঙ্গত, গত ১৬-ই মার্চ, ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ১৩ জনকে আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হলেও ১৬ তারিখ বিভিন্ন কারণে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৭ জনের শুনানি হয়নি। তাই আদালত পরবর্তী দিন ধার্য করে ২৩ মার্চ। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৭ জনকে আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছে।
সিবিআই জেরার (CBI) সময় কুন্তল-তাপসের তর্ক জারি ছিল জেরা টেবিলে। মুখোমুখি জেরা পর্বেও বেশ কয়েকবার তর্ক জুড়েছেন হেফাজতে থাকা কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে এমনটাই দাবি। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জেরা পর্বে দুই অভিযুক্তর মধ্যে তর্ক বাঁধে, এমনটাই খবর। জেরার সময় একে অপরের বক্তব্য বারেবারে খণ্ডনের চেষ্টা করেছিলেন তাপস-কুন্তল (Tapas-Kuntal) বলে সূত্রের দাবি।
এই দুজনের কলহের জেরে বেশ কিছুক্ষণ জেরা বন্ধ রাখতে হয় সিবিআইকে।দু'পক্ষকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তদন্তকারী অফিসাররা। এমনটাই সিবিআই সূত্রে খবর। এদিকে, কুন্তল ঘোষ এদিন দাবি করেন তিনি কালীঘাটের কাকুকে চেনেন না। তিনি কাকু বলতে, একমাত্র তাঁর বাবার ভাইকেই চেনেন। যদিও কুন্তল 'মিথ্যা বলছে', 'ও সব জানে' বলে বৃহস্পতিবার পাল্টা দাবি করেন তাপস মণ্ডল।
পাশাপাশি এদিন কুন্তল আদালতে থেকে বেড়িয়ে জনৈক হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক 'রহস্যময়ী নারী'র প্রসঙ্গ টানেন। বিস্ফোরক কুন্তল বলেন, 'রহস্যময়ী নারী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় সব জানেন। তদন্তের ভিতরের কথা আর কিছু বলবো না।'
জানা গিয়েছে, তদন্তে চলাকালীন একটি সংস্থার নাম উঠে এসেছে। যেখানে গোপাল দলপতির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সেই অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। সেই অ্যাকাউন্টের খোঁজ নিতে গিয়ে এই হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া যায়।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (Recruitment Case) ফের বড়সড় গ্রেফতারি। বাগদার 'সৎ' রঞ্জনের পর এবার সিবিআইয়ের (CBI Arrest) জালে মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। রবিবার জিজ্ঞসাবাদের জন্য তাপস বাবুকে (Tapas Mondal Arrest) নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়। তারপরেই টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর এই গ্রেফতারি কেন্দ্রীয় সংস্থার। এদিন তাপস মণ্ডলকে গ্রেফতারির পর এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে বেড়িয়ে তাপস মণ্ডল বলেন, 'আমি নির্দোষ। তদন্তে সহযোগিতা করছি এবং করবো। কিন্তু আমি নির্দোষ।'
সিবিআই সূত্রে খবর, তাপস মণ্ডলের বয়ানে অসঙ্গতি এবং প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া, এই দুটি কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন রয়েছে বলে এই গ্রেফতারি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এই তাপস মণ্ডলের বয়ানে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ইডির হাতে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের নাম উঠে আসে। মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতারির পর বহুবার ইডি এবং সিবিআই ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাপস মণ্ডল।
জানা গিয়েছে, এদিন শুধু তাপস মণ্ডল নয়। নিলাদ্রি ঘোষ নামে এক অভিযুক্ত এজেন্টকে নিয়োগ-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
তাপস রায় (বিধায়ক ও বিধানসভার উপ-মুখ্যসচেতক): আরও একটি সাংগঠনিক দায়িত্ব পেলাম বুধবার। দমদম/ব্যারাকপুর অঞ্চলের (জেলা ভিত্তিক) সভাপতির পদ। আমার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বরানগর এই অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। পদ পাওয়া মানেই কাজ করা এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই, মানুষের বিশ্বাস ভরসার জন্য লড়াই করতে আমরা বাধ্য। তবে দায়িত্ব যখন দলনেত্রী দিয়েছেন তখন এলাকার উন্নয়নের কাজ করতে হবে আরও বেশি করে। অবশ্য ২০১১ থেকে বাম জমানার অনিয়মকে ভেঙে এবং পশ্চিমবঙ্গকে উন্নত করতে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিবারাত্র পরিশ্রম করেছেন। সেই কাজকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নেত্রীর নির্দেশে।
আমাদের পরিবার বরাবর কংগ্রেসি ঘরানার। আমি বীরভূমের বদ্যি, একসময় আমরাই চিকিৎসার কাজে নিযুক্ত ছিলাম অবশ্য সেসব আদি ইতিহাস। কলকাতায় বড় হয়েছি, সেন্ট পলস কলেজে পড়তে পড়তেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। আমি কোনওদিন লবির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। কংগ্রেস যখন করেছি তখন দলের নির্দেশ মেনেই রাজনীতি করেছি। স্নাতক হয়ে আইন পাঠে যোগ দিই। পাশ করে একসময় প্রয়াত অজিত পাঁজার সঙ্গে নিয়মিত হাইকোর্ট করেছিলাম। পরে একাই ওকালতি শুরু করেছিলাম। ৮০-র দশকের মধ্যভাগ থেকে যিনি বাংলার রাজনীতিতে উঠে এলেন তিনি আমাদের নেত্রী।
অন্যদিকে আমি পুরোদস্তুর ছাত্র পরিষদের কাজ করছিলাম। ১৯৯০-এ ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হই বাংলায়। সংগঠনের কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার নতুন কাজ কিছু নয়। সারা বাংলায় একটা সময়ে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দৌড়তে হয়েছে। কাজেই আমার নতুন দায়িত্বের অভিজ্ঞতা আমি নিশ্চিত দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে পারবো। আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর কলকাতার দায়িত্বে ছিলাম।
দেখুন রাজনীতিতে ভোট থাকবেই। আমার এই ভোটযুদ্ধের অভিজ্ঞতা প্রথম দিকে সুখের ছিল না। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে বৌবাজারের একটি কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছিলাম, পাশের কেন্দ্রে ছিলেন প্রদীপ ঘোষ। ভোটের দিন বোমাবাজি এবং সিপিএমের গুণ্ডামিতে বুঝলাম ওরা জিততে দেবে না। আমার ওয়ার্ডে প্রবল গণ্ডগোল অথচ প্রদীপবাবুর এলাকায় অবাধ নির্বাচন হয়েছিল। তিনি জিতেও ছিলেন। এরপর ৯১-এ বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়াই সোমেন মিত্রের বাড়ির সামনে একদা বিদ্যাসাগর কেন্দ্র থেকে। ফের বোমাবাজি এবং গুন্ডামি।
তিক্ত অভিজ্ঞতায় বুঝলাম, হয় বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে নতুবা হারতে হবে। কারণ আমার একটা বাম বিরোধী ইমেজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি ১৯৯৬ অবধি ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলাম তার মধ্যে কোনও এক অজানা কারণে আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই দলের উপর একটা অভিমান জন্মে যায়। একদিকে আমরা লড়বো, অন্যদিকে কেন্দ্র-রাজ্যের ভাব-ভালোবাসা চলতে পারে না। গত শতাব্দীর শেষে কংগ্রেস ছেড়ে দিলাম। চিরকালই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছি, শুরু হল তৃণমূল কংগ্রেসে পথ চলা।
আজকেও সেই পথেই চলেছি। আজকের প্রজন্মের তরুণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দারুন কাজ করছেন। নব্য নেতৃত্ব দলের পক্ষে শুভ বলেই মনে করি। এদিকে, আমার দায়িত্ব বাড়ল। নতুন বছরে আশীর্বাদ করুন যেন আপনাদের সবার প্রতিনিধি হয়ে বাংলায় কাজ করতে পারি। আমি নেতা নই আপনার বন্ধু থাকতে চাই। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথস্তরের সভা। দলনেত্রীর আহ্বানেই এই জমায়েত। উপস্থিত থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শোনা যাচ্ছে, দলের কাছে বিশেষ বার্তা থাকবে মমতা এবং অভিষেকের তরফে। মূলত পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এই সভা বলে খবর হলেও ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের ভাবনাও থাকছে এই সভায়। ২১ জুলাই বা ছাত্র সমাবেশের পরে ফের এই সভা। দলের বুথস্তরেরকর্মীদের জন্য খোলা এবং প্রকাশ্যে। উপস্থিত থাকার কথা সর্বস্তরের নেত-মন্ত্রীদের। কাজেই বলে ফেলা যায় হয়তো বা উপস্থিত থাকতে পারেন জহর সরকার কিংবা ইদানিং খানিক বেসুরো হওয়া তাপস রায়। হিসাব মতো জেলার নানা দায়িত্বে থাকা নেতাদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন তাপস রায় কি কোনও বিষয়ে হতাশ দলের উপর। তাপস দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী। প্রথমে ছাত্র পরিষদের সভাপতি হয়েছিলেন। ঘোরতর সিপিএম বিরোধী চরিত্র। তাপস প্রথমে সোমেন মিত্রের ঘনিষ্ঠ ছিলেন পরে তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পরে যোগ দেন ২০০০-এ। মমতা পরের বছর তাঁকে তৎকালীন বড়বাজার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেন, তাপস জিতেও আসেন। এই ছিল আদি ইতিহাস। ২০১১-তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময়ে থেকে তিনি বরানগরের বিধায়ক।
তাপস সেবার মন্ত্রী হননি। ১৬-র ভোট জিতে আসার অনেকদিন বাদে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার ২১-এর ভোটের পর ফের দায়িত্ব নেই তাপসের। গত বছর থেকে একবার উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি হয়েছিলেন বটে কিন্তু সম্প্রতি সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাপস আপাতত বিধানসভার ডেপুটি চিফ হুইপ (এর আগে এমন কোনও পদ ছিল না)। কাজেই তাপস হয়তো ভেবেছিলেন সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভার পরিবর্তনে তাঁর দায়িত্ব আসতে পারে, আসেনি। এরপর থেকে লক্ষ্য করা গিয়েছে, তাপস নাকি খানিক বিষন্ন। হয়তো বা সে কারণেই অবসর নেওয়ার কথা ভেবেছেন। দেখার বিষয় বৃহস্পতিবার দলের বৈঠকে তাঁর ভূমিকা।
রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) তাপস রায়। হঠাৎ কেন এই ইঙ্গিত? নেপথ্যে অভিমান, না অন্য কিছু কারণ? সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তবে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তাপসবাবু (Tapas Ray) বলেন, 'আর কয়েকটা বছর সমাজকর্মী বা রাজনৈতিককর্মী থাকার ইচ্ছা নেই। শুধু দলকে (TMC) জানানোটা বাকি। আপনারা ধরে রাখতে চাইলেও আমাকে আটকে রাখা যাবে না।'
তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'তাপস রায়েরা দলকে গায়ে মেখে ফেলেছেন। দীর্ঘদিনের কর্মী। তৃণমূলের উত্থান-পতন দেখেছেন। তবে দলকে উনাকে কতটা দেখেছে, সেটাও একটা বিষয়। এখন ওদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।'
সম্প্রতি সিবিআই-ইডির তদন্তের সূত্রে জেলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের মতো তৃণমূলের হেভিওয়েট নাম। গত কয়েকমাস একাধিক দুর্নীতির তদন্তের গতি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন জহর সরকার। যদিও প্রাক্তন আমলার এই মন্তব্যকে ভালো চোখে নেয়নি বাংলার শাসক দল।
পারিপার্শ্বিক এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই কি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ তাপস রায়ের? ঠিক সম্প্রতি যেমনটা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজনীতি এত নোংরা জানলে, কবেই ছেড়ে দিতাম।