বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে শুনানি ছিল নিয়োগ মামলার দুই মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। সেই মামলায় পার্থ এবং সুজয় দু’জনের জামিন চেয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন রাজ্যের এজি। রাজ্যের এজির সওয়ালে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি। রাজ্যের প্রতিনিধি কেন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করছেন রাজ্যের এজি কিশোর দত্তের কাছে জানতে চান বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। প্রশ্ন করেন, আপনার কাছে অনুমতি আছে? তারপরেই বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন রাজ্যের অনুমতি পত্র ছাড়া সওয়াল শোনা সম্ভব নয়। যার জেরে পিছিয়ে গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের জামিন মামলার শুনানি।
উল্লেখ্য, রাজ্যের এজি পদে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগে থেকেই পার্থ এবং সুজয়ের জামিনের মামলা হাইকোর্টে লড়ছেন কিশোর দত্ত। সেই মামলা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। এই আবহেই রাজ্যের নতুন এজি পদে দায়িত্ব নেন কিশোর। তারপরে বুধবার পার্থ এবং সুজয়ের জামিনের শুনানি পড়ে। নিজের হাতে থাকা পুরোনো মামলা নিজেই লড়তে এসেছিলেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী। কিন্তু সওয়াল করতে এসেই বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। এর পরেই সময় চান রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত। রাজ্যের অনুমতি নিয়ে সওয়ালে অংশ নেওয়ার কথা জানান তিনি। বিচারপতি জানান, রাজ্য যদি অনুমতি দেয়, তবে আদালতের কোনও অসুবিধা নেই।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পার্থের জামিনের মামলার শুনানি হবে। সুজয়ের মামলাটির পরবর্তী শুনানি ৬ ফেব্রুয়ারি।
এসএসকেএম-এ বুধবার সন্ধ্যায় আচমকা নজরে আসে ইডির তৎপরতা। এসএসকেএমে পৌঁছয় জোকা ইএসআই হাসপাতালের 5G অ্যাম্বুলেন্স। CRPF-এর কমান্ডেন্ট ঢুকলেন হাসপাতালে। কার্ডিওলজি বিভাগের সামনে মোতায়েন রয়েছেন CRPF জওয়ান। আজই কি তবে কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠ পরীক্ষা? যদিও এ বিষয়ে এখনও অবধি কোনও কিছু জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়ায় 'কালীঘাটের কাকু' ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর। একাধিকবার তাঁকে জিজ্ঞাসবাদ করে ইডি-সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থা। পরবর্তীকালে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতারির পর কিছুদিন প্রেসিডেন্সি জেলে থাকলেও কালীঘাটের কাকুর বর্তমান ঠিকানা এসএসকেএম হাসপাতাল। একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ইডি। এবার দেখার আজ, বুধবার ইডি আধিকারিকরা এসএসকেএম থেকে বের করতে পারেন কিনা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলে প্রায় থাকেননি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। অসুস্থ থাকার নাম করে হাসপাতালেই কাটছে দিন। ইডি মরিয়া হয়ে উঠেছে কাকুর ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট করার জন্য। কিন্তু এসএসকেএম কোনও অজানা কারণে কাকুর ফিট সার্টিফিকেট দিতেই চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে 'কালীঘাটের কাকু' এখনও এসএসকেএম হাসপাতালেই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করল বিজেপি। অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ না হয়েও অপ্রয়োজনে এসএসকেএম হাসপাতালে শয্যা দখল করে রয়েছেন তিনি। এরফলে রোগী ভর্তি হতে পারছেন না।
অভিযোগের আরও বলা হয়, হাসপাতালে থাকার জন্য নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে দেরি হচ্ছে ইডির। ইডি হেফাজতের দাবি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হয়। প্রধান বিচারপতি জানান, বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, এসএসকেএম হাসপাতালের তরফ থেকে একটার পর একটা স্বাস্থ্য পরীক্ষা সুজয় কৃষ্ণের ক্ষেত্রে করানোর কথা বলা হয়েছে। কখনও মায়োকার্ডিয়াল স্পেস পারফিউশন টেস্ট, আবার কখনও মেন্টাল টাফনেস টেস্ট-স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যেই আবদ্ধ কালীঘাটের কাকু। শুধু কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে না। অন্যদিকে, আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালের কাছ থেকে কাকুর সমস্ত শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলে প্রায় থাকেননি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। অসুস্থ থাকার নাম করে হাসপাতালেই কাটছে দিন। ইডি মরিয়া হয়ে উঠেছে কাকুর ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট করার জন্য। কিন্তু এসএসকেএম কোনও অজানা কারণে কাকুর ফিট সার্টিফিকেট দিতেই চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে এবছর জেলেই থাকতে হচ্ছে কালীঘাটের কাকুকে। জামিনের জন্য নতুন বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাঁকে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের জামিনের আবেদনের মামলায় SSKM-এর কাছে ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে রিপোর্ট চাইলো আদালত। আগামী ৫ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।
১ জানুয়ারি SSKM-এর MSVP রিপোর্ট দেবে আদালত বান্ধব রুদ্র নন্দীকে। আইনজীবী রুদ্র নন্দীর সেই রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের কাছে জামা দিতে হবে। এর আগে SSKM ইডির হাতে কাকুর যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল মঙ্গলবার ইডির আইনজীবী আদালতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সেই মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিল। রিপোর্টে আছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের চিকিত্সক পীযূষ রায় ইডিকে জানান অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়েছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। হৃদরোগের কিছু চিকিৎসা হয়। মানসিক চাপ ছাড়া কিছু নয়। তবুও গলার স্বর পরীক্ষা করা যাবে না সুজয়কৃষ্ণের। ৩০ মে থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্যারল ছিল। তারপর বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা হয়।তারপর তিনি কিছুদিন জেলে ছিলেন। এরপর আবার এসএসকেম-এ ভর্তি হয়েছেন।
বিচারপতি বলেন গত চার মাসের মধ্যে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ভয়েস স্যাম্পেল নেওয়া গেলো না? কতদিন ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পেরেছে? কতবার SSKM-এ গেছে ইডি?
ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি জানান, ইডি অফিসাররা ভয়েস টেস্টের জন্য SSKM-এ গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানান কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে গেছেন। সামান্য কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে গত কয়েক মাস ধরে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে ইডিকে, ইডি আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামার মধ্যেই আইসিসিইউ থেকে কেবিনে দেওয়া হয় সুজয়কৃষ্ণকে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা সেই কেবিনের বাইরে পাহারায় রয়েছেন। সুজয়কৃষ্ণের জোকা যাত্রা নিশ্চিত করতে তৎপর হয়েছে ইডি। তারই মাঝে এসএসকেএমের তরফে কাকুর হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে নতুন পরীক্ষার কথা সামনে আনছে এসএসকেম কর্তৃপক্ষ।
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট নিয়ে জট এখনও অব্যাহত। এখনও এসএসকেএম-এ ভর্তি রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ওরফে কালীঘাটের কাকু। ফলে ইডির পক্ষে এখনও কাকুর ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা যে অতি প্রয়োজন তা আদালতে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকরা। অন্যদিকে, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন রয়েছে, তা জানতে চায় এসএসকেএম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে মেন্টাল টাফনেস পরীক্ষা করানোর কথা জানিয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিল। এবার জেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, আদৌ কি তারা সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম এর আবেদনে সাড়া দেবে, নাকি আদালতকে জানিয়ে তবেই অনুমতি দেবে তারা, সেটাই দেখার।
প্রসঙ্গত, কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ কাজ কবে সম্পন্ন করা যাবে তা নিয়ে ধন্ধে রয়েছেন ইডির আধিকারিকরা। এসএসকেএম থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছে না ইডি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ইডির তরফে এসএসকেএম থেকে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।
এবার কালীঘাটের কাকুকে 'স্ট্রেস মায়োকার্ডিয়াল পারফিউশন স্ক্যান' টেস্টের পরামর্শ এসএসকেএমের চিকিৎসকদের। সঠিক কাঠামো না থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষা করানোর নিদান এসএসকেএমের। প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানিয়েছে এসএসকেএম।
দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে এসএসকেএমের বেড আগলে বহাল তবিয়তে রয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের অন্যতম অভুযুক্ত কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এই 'ভদ্র' কাকুর কন্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির আধিকারিকরা বারংবার এসএসকেএমে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এসএসকেএমের ছত্রছায়ায় কাকু রীতিমতো ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন ইডি আধিকারিকদের। পাশাপাশি এসএসকেএম নিয়েও শুরু হয়েছে বহু বিতর্ক। ইতিমধ্যেই রাজ্যের এই প্রথম সারির হাসপাতালের বিরুদ্ধে কাকুর মেডিক্যাল রিপোর্ট বিকৃতির অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এরপরই শনিবার সুজয়কৃষ্ণকে "স্ট্রেস মায়োকার্ডিয়াল পারফিউশন স্ক্যান' টেস্ট অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের মাংসপেশীর সক্ষমতা যাচাইয়ের পরামর্শ দিলেন এসএসকেএমের চিকিৎসকরা। তবে এই পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালের কোথাও না হওয়ায় বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে করতে হবে বলে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে এসএসকেএম।
যদিও সূত্রের খবর এসএসকেএমেই রয়েছে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশীর সক্ষমতা যাচাইয়ের যন্ত্র। যদিও অভাব রয়েছে যন্ত্রীর। অর্থাৎ মেশিন চালানোর জন্য কোনও লোকই নেই। আর এই কারণেই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় এসএসকেএমে পড়ে রয়েছে যন্ত্রটি। এই মেশিনের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। উল্লেখ্য ২০১০ সালে বাম আমলে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে উদ্বোধন হয় পারফিউশন স্ক্যানের যন্ত্রের। ২০১৩ সালে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় সেই পরিষেবা। অভিযোগ, ১০ বছরে এই বিষয় নিয়ে একাধিক আবেদনেও মেলেনি সাড়া। এমনকি স্বাস্থ্য ভবনে এ সংক্রান্ত মঞ্জুর ফাইলও পড়ে রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এসএসকেএমে কাকুর স্বাস্থ্যের এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে ফের শনিবার এসএসকেএমে হাজির হয়েছিলেন ইডির দুই আধিকারিক। আপাতত কাকুর ভবিষ্যত কী? এ নিয়ে জল্পনা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। আদৌ কি কথা কইবেন কালীঘাটের কাকু? পাশাপাশি কাকুকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল।
বেশ কয়েকমাস ধরেই এসএসকেএমের নিরাপদ আশ্রয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও এখনও অবধি কাকুর টিকিও ছুঁতে পারেননি ইডি সিবিআই আধিকারিকরা। গত শুক্রবার থেকে এসএসকেএম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে আইসিসিইউতে শিশুদের সংরক্ষিত বেডে ভর্তি রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ। মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে পড়ল কাকুর এই আইসিসিইউ যাত্রা। ইতিমধ্যেই কাকুর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির রিপোর্ট এসে গিয়েছে এবং সেই রিপোর্টে তেমন ভয়ের কারণ উঠে আসেনি। আর এই সুযোগকেই এবার কাজে লাগাতে চাইছে ইডি। গত সোমবার সরাসরি এসএসকেএমের আইসিসিইউতে পৌঁছে গেলেন ইডি আধিকারিকরা। এই কদিনে শারীরিক অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে ভদ্র কাকুর, তা খতিয়ে দেখতেই এসএসকেএমে পৌঁছন ইডি কর্তারা।
সূত্রের খবর, আইসিসিইউ থেকে বার করা হলেই, সুজয়কৃষ্ণকে নিয়ে যাওয়া হবে, জোকা ইএসআই হাসপাতালে কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য। এই কারণে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে, এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিসিইউ -এর বাইরে। পাশাপাশি গত সোমবার থেকেই ২ জন করে ইডি আধিকারিক এবং দুজন সিআইএসএফ এর নিরাপত্তারক্ষী থাকছেন কালীঘাটের কাকুর নজরদারিতে। এমনকি কাকুর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ৫জি অ্যাম্বুলেন্সেরও।
তবে বিভিন্ন টালবাহানায় আটকে রয়েছে সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের পরীক্ষা। এক্ষেত্রে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগও উঠে এসেছে। আর ঠিক কতদিন এসএসকেএমের শিশুর বেড দখল করে থাকবেন কালীঘাটের কাকু? এ প্রশ্নের উত্তরে কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান জানান, বেশি দিন রাখা সম্ভব নয় আইসিসিইউতে, তবে সব কিছুই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। প্রায়শই বেড না পাওয়ার অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায় এসএসকেএমের বিরুদ্ধে। তারপরেও রীতিমত শিশুর বেড দখল করে ৫ দিন ধরে সেখানে রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। বেশ কয়েক মাস ধরে কী এমন চিকিৎসা চলছে তাঁর? পাশাপাশি কাকুর ভবিষ্যতই বা কী? আদৌ কি তিনি কথা বলবেন? আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল।
এসএসকেএম হাসপাতালের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউতে শিশুদের জন্য সংরক্ষিত বেড আঁকড়ে রয়েছেন কালীঘাটের কাকু। ৩ দিন হয়ে গেল, শিশুদের বেডেই আছেন কাকু। এই কদিনে কাকুর শারীরিক পরিস্থিতির কি কোনও উন্নতি হয়নি? তা খতিয়ে দেখতেই সোমবার সকাল ১০.৫০ নাগাদ SSKM হাসপাতালে এলেন ইডির এক আধিকারিক।
উল্লেখ্য, কালীঘাটের কাকু এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিইউতে আসার পর, এই প্রথম ইডির কোনও আধিকারিক তাঁকে দেখতে এলেন। আর কতদিন আইসিইউতে একজন শিশুর জন্য সংরক্ষিত বেড আটক রাখবেন কাকু?
আর কতদিন লাগবে কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা পেতে, শারীরিক ভাবে আদতে কেমন আছেন কালীঘাটের কাকু? শারীরিক অসুস্থতার গুরুত্ব ঠিক কতটা- এই সবটা নিজের চোখে খতিয়ে দেখতেই ইডির আধিকারিক আসেন SSKM হাসপাতালে। এর আগেও দেখা গিয়েছে কার্ডিওলজি বিভাগের একটি কেবিন আঁকড়ে কালীঘাটের কাকুকে সেখানে থেকে যেতে, এখন দেখা যাচ্ছে একেবারে শিশুর বেড দখল করে হাসপাতালে রয়েছেন তিনি। তাই এখানেই প্রশ্ন জাগছে কাকুর ভবিষ্যৎ তবে কী? ছিলেন জেলে, সেখান থেকে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এলেন হাসপাতালে। অতঃপর সেখানেই রয়ে গেলেন। সেই কারণেই কাকুর ভবিষ্যৎ কী আর কাকুর কণ্ঠস্বর নমুনা নেওয়ার ভবিষ্যৎই বা কী? সেই নিয়ে কাটছে না ধোঁয়াশা। ইডির আধিকারিকের আসার পর কী এবার কাকুর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহে খানিক তৎপরতা দেখা যাবে ? প্রশ্নগুলো থেকেই যাচ্ছে।
কালীঘাটের কাকু এখনও রয়েছেন শিশুদের জন্য সংরক্ষিত বেডে। শিশুর বেড আঁকড়ে আর কতদিন ইডির হাতে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়া থেকে তিনি বিরত রাখবেন নিজেকে, তা এখনও অজানা। ঠিক এই কারণেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা। শুক্রবার তাঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল জোকা ইএসআই হাসপাতালে কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য। তবে হঠাৎ দেখা গেল কার্ডিওলজি বিভাগের উপরের কেবিনে কালীঘাটের কাকু অনুপস্থিত। তিনি কোথায়, এই রব উঠলে জানা যায়, তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে কার্ডিওলজি জরুরি বিভাগের অ্যাডাল্ট এবং পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। সেখানে ২০ টি বেড রয়েছে। যার মধ্যে শিশুদরে জন্য রাখা ১৮ নম্বর বেডে সন্ধান মিলল কালীঘাটের কাকুর। এরপর শনিবার ইডির হাতে SSKM হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাকুর সমস্ত শারীরিক রিপোর্ট তুলে দেয়। তারপরে রাতে কালীঘাটের কাকুর ইসিজি, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ইত্যাদি শারীরিক পরীক্ষাও হয়।
শুধু কি তাই? সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা পাওয়া গেলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের মোড় ঘুরে যেতে পারে, বারবার এমন দাবি করতে দেখা গিয়েছে ইডিকে। এর আগেও দেখা গেছিল কাকুর শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে এসএসকেএম -এর উপর ভরসা হারিয়ে দিল্লি AIIMS-এর সাহায্য নিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকরা। এখন দেখার কাকুকে আইসিইউ মুক্ত করতে কী ব্যবস্থা নেয় তাঁরা। তবে এসএসকেএম হাসপাতালের অব্যবস্থার চিত্র দিনদিন কাকুর কীর্তিতে আরও বেশি সামনে আসছে। আর কতদিন সাধারণ মানুষ বেড না পেয়ে প্রাণ হারায়, চূড়ান্ত হেনস্থার মুখে পড়তে হয়, তার উত্তর হয়ত একমাত্র দিতে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই।
সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে জল্পনা কাটতে চাইছে না কিছুতেই। শুক্রবার দেখা গিয়েছিল, এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিসিইউতে শিশুদের জন্য সংরক্ষিত বেড দখল করে সেখানে থেকে যান কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এদিকে পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাকুর কণ্ঠস্বর নমুনা সংগ্রহের জন্য ইডির আধিকারিকরা শুক্রবার সকাল সকাল এসএসকেএম হাসপাতালে এসে পৌঁছেছিলেন কাকুকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কাকুর শারীরিক অবস্থা ভালো নেই, সাফ জানান হাসপাতাল সুপার। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে তাঁদের মধ্যে বৈঠক হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কাকুর কণ্ঠস্বর নমুনা সংগ্রহ না হওয়ায় একেবারেই সন্তুষ্ট নন ইডির আধিকারিকরা। কাকুকে কেন ইডির হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হল না, তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি আদতে ঠিক কীরকম- সেই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তলব করে ইডি। সেই তথ্য ইতিমধ্যেই ইডির হাতে তুলে দিয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে তাঁকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার কথা ভাবা হবে। তবে, কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর নমুনা সংগ্রহের জন্য এভাবে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বারবার ইডির আধিকারিকরা বলেছেন, কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা পাওয়া গেলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের মোড় ঘুরে যেতে পারে, বেরিয়ে আসতে পারে নানা অজানা তথ্য। তবে তা সত্বেও এসএসকেএম হাসপাতালের কোনও সক্রিয় ভূমিকা দেখছেন না ইডির আধিকারিকরা। তাই এবার আবারও এই বিষয়ে আদালতের মুখাপেক্ষী হতে পারে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। না হলে কাকুর কণ্ঠস্বর নমুনা সংগ্রহে আরও কত বিপাকে ইডিকে পড়তে হতে পারে, সেই নিয়েই দ্বন্দ্বে আছেন ইডির আধিকারিকরা।