
সৌমেন সুর: জলের আরেক নাম জীবন। তাই জলের জন্য যদি জীবন বিপর্যস্ত হয় তাহলে দায়ী আমরাই। আমাদের অসচেতনতা। কারণ অনেক সময় আমরা অযথা জল নষ্ট করি। জল যে আমাদের জীবনে কত বড় বন্ধু, তা মাঝেমাঝে সেটা আমরা ভুলে যাই। সমগ্র মানবকূলকে জলের প্রয়োজনে বাঁচতে প্রথমে চাই গণ-সচেতনতা। জল কোনোভাবেই নষ্ট করা চলবে না। আমাদের এই বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় রাস্তাঘাটে দেখা যায়, কল থেকে জল নির্গত হয়ে চলেছে অনর্গল, অথচ কেউ একজন এগিয়ে এসে কলটা বন্ধ করে দিচ্ছে নানা- এটা সম্পূর্ণভাবে মানব মনের অসচেতনতা। শুধু রাস্তাঘাট নয়, বাড়ির কলের ব্যাপারেও আমাদের জাগ্রত থাকতে হবে। জলের ব্যাপারে যেভাবে ভূগর্ভস্থ থেকে জল তোলা হচ্ছে তাতে একদিন না একদিন হয়তো দেশবাসীকে ওয়াটার ক্রাইসিসে ভুগতে হতে পারে। তাই এখন থেকে যদি আমরা সচেতন হই জল আমরা অযথা নষ্ট হতে দেব নানা, এই ভাবনা নিয়ে এখন থেকেই এগোতে হবে।
মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হয়- তার অনেকগুলি জলবাহিত। সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- আমাশয়, কলেরা, জন্ডিস, চর্মরোগ। ইদানিং কোন কোন অঞ্চলে আর্সেনিক পরিমাণ মাত্রারিক্ত হওয়ার ফলে ভয়ংকর রোগ দেখা দেয়। এইগুলি আমাদের ভালোভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে। এসবের জন্য প্রয়োজন নাগরিক কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়া। ২০০০ সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘ W. H. O মাঝেমধ্যেই বিশুদ্ধ পরিশ্রুত জলের অভাব মেটাতে গড়ে উঠেছে এক নতুন শিল্প। জল শিল্প। কিছু সংস্থা বোতলে মিনারেল ওয়াটার তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে। ১ লিটার মিনারেল ওয়াটার, এক লিটার দুধের দামের মধ্যে সামান্য পার্থক্য। তবে এইসব সংস্থার দাবি মতো, ওই পানীয় জল কতটা বিশুদ্ধ সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
প্রাত্যহিক জীবনে একটা দিন অনাহারে কাটানো যায়, কিন্তু জল ছাড়া একটা দিন ভাবা যায় না। সভ্যতার অগ্রগতি একটার পর একটা প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। এবার জলের পালা। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, সমস্ত প্রাণীকুলকে বাঁচাতে জল যেন আমরা সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। তেড়ে গণ আন্দোলন করা উচিত। আগামী দিনে জল অপচয় যেন আমরা না করি। অপচয় করলে একদিন না একদিন আমাদের বিশাল বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
সৌমেন সুর: দেশপ্রেমের মূল কথা হল দেশকে ভালোবাসা। দেশপ্রেম মানুষের এক মহৎ উত্তরাধিকার। দেশপ্রেম, মানুষের আত্মসুখ বিসর্জন দিয়ে, পরার্থে জীবন দানে প্রেরণা দেয়। বর্তমানে দেশপ্রেম নিয়ে নানা কানাঘুষো শুনি, আসলে যে মানুষটি সত্যি সত্যি দেশপ্রেমে উদার হবে তাকে সর্বপ্রথমে ত্যাগী হতে হবে। সম্পূর্ণ নির্লোভী মানুষ হতে হবে, সংযমী হতে হবে। আহারে, পোশাকে, বাসস্থানে ও ব্যবহার্য জিনিসে, একটা অদ্ভুত অনিহা থাকবে। সর্বসময় তার মনে গুঞ্জরিত হবে দেশের মানুষ কিভাবে শান্তিতে থাকবে, সুখে থাকবে, তার চিন্তাতেই মগ্ন থাকবে তার মন। দেশপ্রেমী মানুষের মনে পরিশুদ্ধ ভাবাবেগের স্রোত প্রবাহিত হবে। এক গভীর আত্মসম্ভ্রম বোধই জন্ম নেয় দেশপ্রেমের। এই বিষয়ে কোনও রকম মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া যাবে না। চতুর্বৃত্তি প্রয়োগ করা যাবে না মানুষের উপর। দেশপ্রেমের উদ্বুদ্ধ মানুষটিকে দেখে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে যাবে, তেমন মানুষ বর্তমানে দেশে কোথায়? যার কথায়, যার ব্যক্তিত্বে মাটি উঠবে কেঁপে, ঝড়ের গতিতে বাতাস বইতে শুরু করবে, তেমন কেউ দেশের মাটিতে এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। দেশপ্রেম তো দুর অস্ত।
দেশকে ভালোবেসে মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসা যায়। ভালোবাসা মানুষের এক চরম উপলব্ধি। দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম সেই উপলব্ধির অভিন্ন সত্তা। যেমন কবি আমাদের অনেক সহজ করে বলেছেন, 'ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা, তোমাতে বিশ্বময়ীর, বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা।' রাজনীতি সর্বস্ব দেশপ্রেম প্রকৃতপক্ষে ধ্বংস ও সর্বনাশের পথকে প্রশস্ত করে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই বর্তমানে মানুষের বৃহত্তর মঙ্গল চেতনায় বিনষ্ট। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হলে নিজেকে সেই ভাবে তৈরি করতে হবে। শুধু মুখের কথায় হবে না। দেশপ্রেম সম্পূর্ণ অন্য অঙ্গ, এক জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। বুঝতে হবে দেশপ্রেমের মধ্যেই মনুষ্যত্বের শুভ বোধন, এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।
জীবজগতে মানুষ হল শ্রেষ্ঠ জীব। কখনো প্রতিকূলতার সঙ্গে সে যুদ্ধ করতে করতে এগিয়েছে আবার কৌশলগত বুদ্ধির প্রয়োগেও কখনো সে এগিয়েছে। এগোনোর পেছনে আছে অনেক রক্তপাত, হিংসা, মারামারি, দলাদলি। আমরা সবাই জানি মানুষের মধ্যে আছে দুটো শক্তি, একটা শুভশক্তি আর একটা পশুশক্তি বা একটা দেবত্ব শক্তি, অন্যটা আসুরিক শক্তি। এই দুই শক্তির সমন্বয়ে মানুষের মধ্যে নিরন্তর দ্বন্দ্ব।
এদিকে মানুষের সভ্যতা ধীরে ধীরে এগিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সময়ে জন্ম নিয়েছেন অনেক মহৎপ্রাণ মহাপুরুষ। তারা বোঝালেন মানুষের ধর্ম কী, বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায়! দেখতে দেখতে জগতে এলো- সনাতন হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, ইসলাম ধর্ম। সব ধর্মের মূল কথা প্রেম। কিন্তু ধর্মের মূল বাণীটা মানুষ ভুলে গেল। সেখানে এলো ধর্মীয় গোঁড়ামি, হিংসা, মারামারি, কাটাকাটি। এর ফলে আমরা দেখতে পেলাম, ধর্মে ধর্মে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বাঁধলো সংঘাত। প্রকৃত ধর্মের মূল সত্যকে জানার বদলে প্রকাশ পেল স্বার্থচিন্তা। ফলে মানুষ ভুলে গেল প্রেম ও মৈত্রীর কথা। পরিবর্তে এলো রক্তপাত ও দাঙ্গা। ব্যক্তিগত প্রাপ্তিকে মানুষ বড় করে দেখলো। ধর্মকে মানুষ ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করলো। অন্যদিকে কিছু মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের হাতিয়ার করলো।
আসলে একটা কথা বুঝতে হবে ঠান্ডা মাথায়, মানুষ কিন্তু মানব ধর্মের দিকে তপস্যা করতে বলছে, সেখানেই মানুষ সর্বজনীন। তাই তো মানুষ নিজের আত্মার মধ্যে অন্যের আত্মাকে, অন্যের আত্মার মধ্যে নিজের আত্মাকে জানে। যে জানে, সেই সত্যকে জানে। এই সত্যই হলো মানবধর্ম। এজন্যই 'সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' এই ধর্মে রয়েছে অপার ধৈর্যশক্তি, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা। যে ধর্মের মধ্যে সহনশীলতা আছে, শান্তির কথা আছে, সেই ধর্মই মানুষের ধর্ম। এই ধর্মেই একমাত্র মানুষ নির্মল নিঃশ্বাস পেতে পারে।
সৌমেন সুর: যে রং তখন ছিল আজও সেই রং বহমান। প্রাচীন লগ্নে মানুষের গুহাবাসকালে হিংস্রতায়, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে দ্বন্দ্বের কারণে জীবন হয়ে উঠেছিল অতিষ্ঠ-আজও তেমনি বার্তা বয়ে চলেছে। সারা দেশ জুড়ে ক্ষমতার লড়াই। কে কাকে কোনঠাসা করতে পারে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষ হিংসার ছোবলে প্রাণ হারাচ্ছে। আজও কত রক্তপাত, কত খুন, নির্লজ্জ বেআব্রুর বীভৎস ছবি। এত খুন এত রক্তপাত স্রেফ হিংসার জন্য। সভ্যতার সেই আদি যুগেও মানুষ মানুষের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চেয়েছে, এই প্রাধান্য বিস্তারের জন্যই সেদিন মারামারি কাটাকাটির শেষ ছিল না। পাশাপাশি রাজ্যগুলোর মধ্যে পরস্পর পরস্পরে ঠোকাঠুকি লেগেই থাকতো।
রাজ্য জয়ের নেশায় মেতে উঠতো দল। শুরু হতো ঘরবাড়ি জ্বালানো, মুড়ি মুড়কির মতো খুন। যুদ্ধ আর রক্তপাতের মধ্যে দিয়েই সূচনা হতো জয়যাত্রা। এমনি করেই দিন বদলায়। সমাজ বদলায়। মেন্টালিটি বদলায়। যুদ্ধ কিন্তু থামেনা। রূপ বদলে নতুন কৌশলে আবার আক্রমণ। আবার রক্তে হোলি খেলা। শুরু হয় অন্য মুডে খেলা। কত যে নিরীহ মানুষের প্রাণ অকালে চলে যায় সেদিকে দলের ভ্রুক্ষেপ নেই। সর্বত্র চলছে স্টান্টবাজির খেলা। বর্তমানে চলছে সমস্ত মানুষের শান্ত রিপুগুলোকে মিথ্যে ভাষণ দিয়ে ধ্বংস করে ফেলে, দলে তুলে নিয়ে এসো তাকে। তারজন্য তৈরি করে হিংসার ছক। যে ছকে পা দিলেই আজ নয়তো কাল মৃত্যু। দেওয়ালে ছবি হয়ে দলের সৌন্দর্য বাড়াও। যত ছবি টাঙ্গানো হবে-তত দলের আপডেট। দলের লোক খারাপ হলেও ভাল। আবার ভাল লোক অন্য দলের হলে খারাপ। এক অদ্ভুত খেলা। অদ্ভূদ যুক্তি।
আমার মতে, যদি আপনার মন সত্যি সত্যি মানুষের কাঁদে তাহলে নিঃস্বার্থভাবে আত্মশুদ্ধি করে, মানুষের পাশে দাঁড়ান। হিংসা দিয়ে সাময়িক ক্ষমতার জয় করা যায় অবশ্য, কিন্তু সেটা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। আজ নয়তো কাল সরে যেতেই হবে। এটাই নিয়ম। কেউ যদি ভাবেন আমি সব পাল্টে দেব ক্ষমতার বলে, হিংসার আশ্রয়ে-তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, হিংসা মানুষের জীবনে সত্য, কিন্তু শেষ সত্য নয়। হিংসা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।
সৌমেন সুরঃ ছুটির দিনে একটু অন্যভাবে দিন কাটাবো, এটা ভাবতেই শরীরের তন্দ্রীগুলো আনন্দে ঝনকে উঠলো। ছুটি মানে একটু থামা। ছুটি মানে চলমান জীবনে ক্ষনিকের বিশ্রাম। বর্তমানে চলমান জীবনে যা ঘটছে- গা যেমন শিউরে উঠছে তেমনি আতঙ্কও বাড়ছে। দেশের বর্তমান অবস্থা বড় ভয়াবহ। কখন যে কী হয়, আমরা কেউ জানি না। যাইহোক এমনি ডামাডোল অবস্থায় হাতে আসছে একটি ছুটির দিন। ভাবতেই মনটা পুলকে ভরে উঠছে। ছুটি মানে জীবনের মধ্যে ছুটি, ছুটি মানে জীবনের ছুটি নয়।
অবশেষে হাতে এলো ছুটির দিন। মহররমের ছুটি। মানে অফিস ছুটি। এদিকে শ্রাবণ মাস। বৃষ্টি ঝরার মাস। অনর্গল কোথায় বৃষ্টি পড়বে তা নয়, মাঝে মাঝে একটু বৃষ্টি, একটু রোদ, আবার মন ভার করে থাকা উড়ো মেঘের আনাগোনা। গ্লোবালাইজেশনের জন্য সব ভালো মুহূর্তগুলো হারিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে। কী আর করা। সকাল হতেই জলখাবার খেয়ে অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো বলে, সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমি অজ গ্রামে থাকি। আমার সব বন্ধুরা শহরে থাকে। আমার বাড়ি থেকে শহর প্রায় চার মাইল। যাইহোক এক বুক আনন্দ নিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলেছি। আলের দুপাশে ধূ ধূ মাঠ। শুধু ধান আর পাট গাছ সারি সারি। যেদিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। বৃষ্টির জল পড়ে প্রত্যেক গাছের পাতা যেন যৌবনবতী হয়ে গেছে। মাতাল হাওয়ায় ধানের শীষগুলো মাতালের মতো দোল খাচ্ছে। মনটা ভারী ভালো লাগছে। কারণ একটাই- আড্ডায় ছুটিটা উপভোগ করবো।
কথায় আছে- 'Man proposes, God disposes।' হালকা মেঘলা আকাশে হঠাৎ ভিড় করে আসে, পাহাড় প্রমাণ কালো মেঘ। আমি প্রাণপণে সাইকেল চালাতে শুরু করলাম। আমাকে শহরে পৌঁছতেই হবে। কিন্তু হায় যখন দেখলাম পুকুরের হাঁস গুলো সাঁতার কেটে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে এগোতে থাকছে, তখন বুঝলাম- আমার Journey এখানেই শেষ। দেখতে দেখতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি সাইকেলটা নিয়ে একটা বটগাছের তলায় দাঁড়ালাম। ভিজছি অঝোরে। আর ভাবছি ছুটির দিনটা বৃথা গেল। ভাবনাটা এই মুহূর্তে আপনাদের হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার নয়। কারণ দূরে একঝাঁক বাচ্চা ছেলে পুকুরে সাঁতার কেটে খেলছে। আনন্দ করছে। ওদের দেখে তাৎক্ষণিক আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। আমিও তো একসময় ওদের মতই উদ্দাম ছিলাম। মুহূর্তে মনটা আমার আনন্দে ভরে গেল। ছুটির দিনটা আমার বৃথা গেল না। নাই বা দিতে পারলাম আড্ডা। কিন্তু প্রকৃতি তো এখন আমার সঙ্গে ছিল। একেবারে লাজুক বধূর মতো। এই উপলব্ধি যে আমার মনের একটা দরজা খুলে দিল, যা আগের মুহূর্ত পর্যন্ত টের পাইনি।
সৌমেন সুর: যার সম্বন্ধে লিখতে বসেছি তিনি বাংলার মানুষের একমাত্র ম্যাটিনী-আইডল। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন বুঝি? না ভাবনার কিছু নেই। ম্যাটিনী আইডল বাংলা সিনেমা জগতে একজনই, সে উত্তম কুমার। কেন উত্তম কুমার? অন্যদেরই বা মানুষ মনে রাখেন না কেন! সিনেমার জগতে মহানায়ক তিনি উত্তম কুমার। তিনি 'নায়ক' ছবি করেছেন, আবার 'অমানুষ' করেছেন। দুটো ছবি আকাশ পাতাল তফাৎ। অথচ উত্তম কুমারের বিচরণ সর্বত্র। 'নায়ক' এর মত ছবিতে সুপার্ব অভিনয়। উত্তম কুমার আবার অমানুষ ছবিতেও অনবদ্য। আসলে মহানায়ককে বিচার করা বড় দুষ্কর। বাংলা ছবিতে এমন এমন কিছু চরিত্র করেছেন যা আলোচনার ঊর্ধ্বে। তিনি এক কথায় সিনেমা জগতে সব্যসাচী ছিলেন, গান গাইতে পারতেন, সুর দিতে পারতেন, ছবি প্রযোজনা করেছেন, এমনকি পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। এরপরেও তো আছে অভিনয়। আজ ৪৩ বছর হয়ে গেল উত্তম কুমার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এত বছর বাদেও তিনি সমান জনপ্রিয়। 'নায়ক' ছবিতে ওই অসম্ভব সুন্দর সংলাপ ডেলিভারি আজও বহু মানুষের মুখে মুখে, 'I will go to the top, The top, The top'। ৪৩ বছর পেরিয়েও মুছে যাননি মহানায়ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাণিজ্যকারি সংস্থা ছবি প্রদর্শন করেন সেই উত্তম কুমাররেরই। এতেই বোঝা যায়, জনপ্রিয়তা এতটুকু ভাটা পড়েননি। তাঁর ক্রেজ তাঁর ইমেজ, আজও আমরা সিনেমার অভিনয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে উত্তম কুমারের প্রসঙ্গ চলে আসে। বেশ কিছু ছবির মহানায়কের অনবদ্য অভিনয় বাংলার মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। হয়তো ছবি বিশ্বাসকে মানুষ ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু উত্তম কুমার বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আরও অনেক অনেক দিন।
অভিনয় পর্ব ছাড়া দান ধ্যান কর্মে ছিলেন মানুষের মনের মনিকোঠায়। অবশ্য এই পর্বটি ছিল অত্যন্ত গোপন অবস্থায়, কেউ জানতে পারতেন না, একমাত্র গ্রহীতা ছাড়া। যুগে যুগে অবতার যেমনই মাটিতে নামেন তার কর্ম মানুষের কাছে ফলপ্রসূ করতে। তেমনই উত্তম কুমার বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়ে তার কর্মের শিষ্টতা দেখে আজও মানুষ তাকে ভুলতে পারেননি। তিনি যে কত বড় মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়, তার মহাপ্রস্থানের পথের সময় চাক্ষুষ কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল, মহানায়ককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। উত্তম কুমার একবারই জন্ম নেয়, এবার হয়ত তাকে পাবো, অন্য নামে অন্য কোনও খানে, তবে বাংলার মানুষের কাছে উত্তম কুমার ছিলেন, আছেন, থাকবেনও।
সৌমেন সুর: এই বিষয়টি নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। তারাই দেশের আগামী শেকড়। তাদেরকে সুন্দরভাবে বাঁচতে হবে। বাঁচতে গেলে রসদ চাই। সেই রসদের একটা অংশ- সাহিত্য। সাহিত্যকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। এই প্রজন্ম, মন্মথ রায় কে জানে না। রমাপদ চৌধুরীকে চেনে না, প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের নাম শোনেনি, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনে না- শুনে আমি ভীষণ স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এরপর ভাবলাম, আমার কর্তব্যটুকু অন্তত করি। সাহিত্যের উপযোগিতাটা তুলে ধরি। প্রথমে বলি, ' Feeling is not a particular content, but the whole universe Subspecie intuition। ' সাহিত্য সমাজের দর্পণ, তবে হুবহু অনুকরণ নয়, এর সাথে আছে কবি- সাহিত্যিকের আপন মনের মাধুরী, তখনই সৃষ্টি হয় ধ্রুপদী সাহিত্য। সাহিত্যের অর্থ হলো পারস্পরিক যোগ। একেরসঙ্গে বহুর মিলন ঘটিয়ে সাহিত্য আত্মীয়তার সূত্র তৈরি করে। তবে বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে সাহিত্য পাঠের অবকাশ কমলেও এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। মানুষ আর প্রকৃতি নিয়েই সাহিত্যের জীবন। সাহিত্য না পড়লে জ্ঞান সঞ্চয় হয় না। একজন জ্ঞানী মানুষ আর একজন অজ্ঞান মানুষ আকাশ পাতাল তফাৎ।
সাহিত্য সমাজের মাটিতে ফোঁটা ফুল। তবে হুবহু দর্পণ নয়, তার সঙ্গে মিশে আছে আপন মনের মাধুরী। সাহিত্য সমাজের একটি বিচিত্র সুন্দর সংগ্রহশালা। এই সংগ্রহশালা থেকে আহরণ করে নিতে হবে অজানা তত্ত্ব। আসলে পড়তে হবে। পড়লে দোষ কোথায়! পড়লে বরং জ্ঞান বাড়ে। না পড়লে অজ্ঞানী হয়ে থাকতে হয়। কোনটা শ্রেয়, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। কে নাট্যকার, কে কবি, কে সাহিত্যিক, কে লেখক- তারা কি লিখেছেন, তারা কেন নক্ষত্র, এগুলো বুঝতে হবে। জানতে হবে।
সবশেষে বলি, সাহিত্য হল আমাদের আনন্দের আশ্রয়, অবকাশের সঙ্গী, দুঃখের সান্ত্বনা এবং ন্যায় বিচারের হাতিয়ার। সাহিত্য আমাদের হৃদয়কে প্রস্ফুটিত করে। নব প্রজন্মকে অনুরোধ- সাহিত্যকে মনে প্রাণে ভালোবেসে- অফুরন্ত জ্ঞান আহরণ কোরে, নিজেকে প্রকাশ করুন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে।
সৌমেন সুর: আজ বিষয়টা একটু অন্যদিকে ঘোরাবো। প্রতিদিন খুনখারাবি, মারামারি, মিছিল, হাম বড়াভাব, বৌদ্ধত্য এসব দেখতে দেখতে মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। মন একটু বিশ্রাম চাইছে। কিন্তু চাইলে তো সব ঠিকঠাক হয় না। তাই ঠিক করলাম আজ একটু আধ্যাত্মিক পথের কথা বলে মনটাকে অন্য পথে চালিত করবো। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদাকে কে না চেনে, কে না জানে। ঠাকুর অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে অধ্যাত্ম ও উপনিষদের কথা ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এত সহজ কথা অথচ কী গভীর তার অর্থ। আমরা বৃন্দাবনকে চিনি জানি। কিন্তু বৃন্দাবন যে বাংলায় অবস্থিত আছে এটা আমরা অনেকেই জানিনা। ঠাকুর আমাদেরকে নিয়ে গেলেন বিষ্ণুপুর। এখানেই তিনি অনুভব করেন বৃন্দাবনের পরশ। উচ্চারণ করে বলেন এই হল গুপ্ত বৃন্দাবন।
আজ আমি মা সারদাকে নিয়ে বিষয়কেন্দ্রিক গল্প বলতে বলতে এগিয়ে যাব। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা বীরহাম্বিরের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের মানুষ ভেসেছিল বৈষ্ণব ধর্মের জোয়ারে। বিষ্ণুপুরকে সাজানো হয় বৃন্দাবনের মতো করে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাই বিষ্ণুপুর বলতে গুপ্ত বৃন্দাবনের কথা বলতেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও সারদা দেবী কামারপুকুর ও জয়রামবাটী এই দুই স্থানে আবির্ভাব হয়েছিলেন। এই দুই স্থান থেকে বিষ্ণুপুর খুব দূরে নয়। ঠাকুর বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন একটা মামলার সাক্ষ্য দিতে। তখন রাজার তৈরি মায়ের মন্দিরে মৃন্ময়ী মাকে তিনি দর্শন করেন আর সারদা মাকে জানান, 'তুমি বিষ্ণুপুরে গুপ্ত বৃন্দাবন দেখো।' উত্তরে মা সারদা বলেন, 'আমি মেয়েমানুষ, কি করে দেখবো।' ঠাকুর বলেন, 'দেখবে দেখবে, ঠিক দেখবে।' একদিন ঠাকুরের কথা ফলে যায়। বিষ্ণুপুর হয়ে বেঙ্গল নাগপুর ট্রেন চালু হয়। আগে বিষ্ণুপুর দুর্গম ছিল এখন সুগম হয়। মা তখন জয়রামবাটী থেকে বিষ্ণুপুর আসতেন ট্রেনে করে। ঠাকুরের ভবিষ্যৎবাণীকে কেন্দ্র করে মা একদিন সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রাঙ্গণে বসে বলেন, 'ঠাকুরের কথা আজ সত্যি হল। ' মা প্রথম বিষ্ণুপুর যান ১৩১২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে, কলকাতা থেকে জয়রামবাটী যাওয়ার পথে। আরেকবার মা বিষ্ণুপুর স্টেশন এ অপেক্ষা করছিলেন, তখন একজন অব বাঙালি কুলি মাকে দেবী ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। কি করবেন মনস্থির করতে পারেন না- এত আনন্দ উদ্ভব হয়েছিল তার মনে। সম্ভবত স্বপ্নে হয়তো মাকে দেখেছিলেন। ১৯২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মা বিষ্ণুপুর থেকে কলকাতা বাগবাজার অঞ্চলে উদ্বোধনের পথে শেষবার গমন করেন।
ভাবের কথা বললাম বলে সবটাই ভাব নয়। তবে ভাবেই ভক্তি। আর ভক্তিতেই মুক্তি। সংসার আবদ্ধ জীব আমরা। সংসারের মধ্যে থেকে যদি দিনান্তে একবার তাঁকে স্মরণ করা যায়, তাহলে আমাদের উতক্ত রিপু গুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে, মন শান্ত হবে। তখন মনে হবে অনেক ভুলভাল কর্ম করেছি, আর নয়। এবার ঈশ্বরকে স্মরণ করে পথ চলব।
আজ বিষ্ণুপুর তাই শুধু গুপ্ত বৃন্দাবন, মন্দিরের দেশ, সংগীতের পিঠস্থানই নয়, গর্বিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদার পদধূলিতে ধন্য হলো ভুবন।
সৌমেন সুর: এখনো দেশের বহু মানুষ জীবনধারণের জন্য নূন্যতম উপকরণগুলো থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চিতের কারণে তরুণ সমাজকে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা ও কর্তব্য পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যে কোনও কর্মে যুব সমাজের অগ্রাধিকার থাকে। তারা সাহসী, কর্মঠ, সবুজের ন্যায় তারুণ্যে, প্রাণপ্রিয়, সূর্যের মতো উজ্জ্বল। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ভারতের সংবিধান রচনার আগে দেশের মানুষের কোন মৌলিক অধিকার ছিল না। গণপরিষদ মৌলিক অধিকার বিধিবদ্ধ করার ব্যাপারে একটি পরামর্শদাতা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়। এর ফলে ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের সংবিধান রচনা হয়।
দেশের নাগরিক হিসেবে দেশ সেবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তবে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সমস্ত মানুষ অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের পূর্ণ অধিকার হয়তো পাইনি। তাই মানুষের অধিকার কর্তব্য পালনে যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের জন্য আমরা দেশ না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব যে বিপর্যস্ত এ কথা উপলব্ধি করলে দেশ গঠনের উপযোগিতা ধরা পড়বে। অন্যদিকে নাগরিকগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে অধিকার গুলো ভোগ করে সেগুলোর বিনিময়ে রাষ্ট্রকে কর দিতে হয়, সেই কর দেওয়া নাগরিকের কর্তব্য। এজন্য যুব সমাজের এই কর্তব্য পালন করা উচিত। যুব সমাজের কর্তব্য প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। মানুষের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য যুব সম্প্রদায়কে সমাজসেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। দেশের যুবসমাজ যে কোন সংগ্রামে আপোসহীন লড়াই করে। এরাই সমস্ত শক্তির উৎস। দেশের মানুষ যুব সম্প্রদায়ের প্রতি অনেক আশা করে। যুব সমাজ যদি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে সাধারণ মানুষ মনে বলা প্রায়। তাই তাত্ত্বিক ও তুর্কি তরুণেরা যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে একদিন না একদিন শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবেই।
সৌমেন সুর: একটা টিলার ওপর বাদক ঢ্য়ারা পিটিয়ে বলে, 'শুনুন...শুনুন..শুনুন। নিশ্চিন্তপুরের প্রজারা মন দিয়ে শুনুন, আমাদের রাজ্য়ে কৃষিফলনে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান যাতে করতে পারে তার জন্য় দলভিত্তিক কৃষকরা তার জমিতে চাষ করবে। এক একটা দলে ৪ জন করে থাকবে। যে বেশী ফলন দেখাতে পারবে- সে রাজার তরফ থেকে পুরস্কার পাবে। ...ঘোষণা করতে করতে বাদক চলে যায়। এদিকে প্রচুর কৃষক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যথারীতি শুরু হয় চাষ। মন্ত্রীরা রাজাকে বলে, সারা রাজ্য়ে কৃষি ফলন দেখবার মতো। সারা মাঠ ধনধান্য়ে পুষ্পে ভরা। অনেক চাষী তাঁদের সর্বস্ব দিয়ে এই ফলন করেছে। তবে সব থেকে বেশী উলন ফলিয়েছে হোসেন মিঞা। সবাই হোসেনকে প্রশংসা করতে থাকে। মন্ত্রীরা রাজার কাছে গুনাগুন গায়। বলে, হোসেন মিঞা আমাদের রাজ্য়ে সেরা কৃষক। ওর হাতে জাদু আছে। ও আমাদের দেশের গর্ব। রাজামশায় আপনি একবার নিজের চোখে দেখে আসুন।
রাজা একদিন রাজ্য়বিহারে বের হন। নিজের চোখে হোসেনের কৃতকর্ম দেখে মুগ্ধ হন। তিনি নির্দেশ দেন, হোসেন মিঞাকে পাঁচটা মোহর আর মানপত্র দিয়ে পুরস্কৃত করো। রাতারাতি হোসেন মিঞার মানে লেখা হলো মানপত্র। এবার পাঁচটা মোহর থেকে একটা মোহর সরিয়ে রেখে প্রথম মন্ত্রী দায়িত্ব দিলো দ্বিতীয় মন্ত্রীকে। দ্বিতীয় মন্ত্রী একটা মোহর সরিয়ে তৃতীয় মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলো। তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্রী মোহর সরিয়ে রাখলো। পঞ্চম মন্ত্রী শেষ মোহরটা নিজে সরিয়ে রেখে, শুধু মানপত্রটা নিয়ে হোসেনের বাড়ির পথে রওনা হয়।
এদিকে রাজা সিংহাসনে বসে ভাবতে লাগলেন, রাজ্য়ে যা কৃষিফলন হয়েছে তা, কয়েক হাজার কোটি টাকার মতো। আমি সব ফলন বিক্রি করে দেবো। রপ্তানি করবো বিদেশে। যে অর্থ পাওয়া যাবে তার ফিফটি পারসেন্ট আমি আমার পরিচিত জনের নাম দিয়ে বিদেশের ব্য়াংকে টাকাটা গচ্ছিত রাখবো।
ওদিকে হোসেন মিঞার বাড়িতে ৫ম মন্ত্রী ও পেয়াদা এসে হাজির। মন্ত্রী হোসেন মিঞাকে রাজার কথা বলে, রাজা তার কাজে ভীষণ খুশি হযেছেন। তাই রাজা এই মানপত্র দিয়ে তোমায় সম্মান জানিয়েছেন। হোসেন মিঞা মানপত্রটা এদিক ওদিক দ্য়াখে। এটার মর্ম উদ্ধার হয় না তার মাথায়। শুকনো মুখে মন্ত্রীকে হোসেন মিঞা বলে, রাজামশাইকে বলবেন- মানপত্রের দরকার নেই। আমরা পেটভরে দুমুঠো ভাত খেতে চাই। মন্ত্রী কথাটা শুনে চমকে ওঠেন। আজ অস্তাচলের সূর্যের রং বড় ফ্য়াকাশে। ম্রিয়মান। (সমাপ্ত)
সৌমেন সুর: রাজ্যের নাম নিশ্চিন্তপুর। নিশ্চিন্তপুরের সমস্ত প্রজারা বেশ সুখেই আছে। এই খবরটা রাজ্যের মন্ত্রীরা রাজাকে রিপোর্ট করেছে। কী কৃষিতে, কী শিল্পে, কী সাহিত্যে, কী সংস্কৃতিতে আমাদের রাজ্য একমেবাদ্বিতীয়ম্। রাজা শুনে পরম আহ্লাদিত। ভাবলেন-আমাদের রাজ্য তাহলে কোথায় পৌছে গেছে। মন্ত্রীদের চোখে ঘুম নেই, প্রজারা যাতে ভালো থাকতে পারে, তারজন্য কত পরিশ্রম করছে।
রাজা রাতে বিছানায় শুয়ে আপনমনে বলতে থাকেন- আমি তো মূর্খ, অশিক্ষিত। গায়ের জোরে রাজা হয়েছি। রাজা হওয়ার মতো কোনো ক্যালি আমার নেই। তবু রাজা হয়েছি বুদ্ধির জোরে। কিন্তু একদিন তো আমার গদির আয়ু শেষ হয়ে যাবে- তখন আমার দশা তো ছাতু মাখার মতো হয়ে যাবে, তাহলে? এক কাজ করি, এখন থেকে প্রজাদের ভয় দেখাতে থাকি, আইনি প্যাচে ব্যাতিব্যাস্ত করে তুলি- তাতে ওরা সবাই আতঙ্কে দিন কাটাতে থাকবে, আর আমার অস্তিত্ব টিকে থাকবে বছরের পর বছর। আমার মন্ত্রীগুলোও হয়েছে একেবারে চুপ শয়তান। কোনোটা ভালো নয। ওপর ওপর দেখায় ভালো, ভেতরে চরম শয়তানী। তার চেয়ে আমি এক কাজ করি, আমি আমার আখের গুছিয়ে নিই। যখন ক্ষমতা থাকবে না তখন ঠ্যাংয়ের ওপর ঠ্যাং তুলে আরাম করে দিন কাটাবো। এবার থেকে যা ভেবেছি তাই করবো। তার আগে আমাকে কয়েকটা চমক দিতে হবে। এমন কিছু প্রচার করবো যাতে প্রজারা নিঃশর্তে সেটা মেনে নেয়। তবে যে প্রতিবাদ করবে তার আর রক্ষে নেই। প্রতিবাদ করলেই ফাঁসি নয়ত কারাগারে সারাজীবন বন্দী। জীবন একেবারে বরবাদ করে ছাড়বো। স্টেস্টাস, সম্মান একেবারে ধূলোয় মিশিয়ে দেবো। মুর্খ প্রজাদের থেকে শুষে শুষে সব খেয়ে নেবো। ওদেরকে ফকির বানিয়ে ছাড়বো, আর আমরা আমির হয়ে থাকবো। কিন্তু একটা ছুঁতো বার করতে হবে- এমন কিছু জিনিস, যা দেখে বা শুনে প্রজারা মোহিত হয়ে যাবে। কাল থেকেই প্রচার কার্য শুরু হয়ে যাক। (চলবে)
সৌমেন সুর: ভারতের প্রাণস্পন্দনকে ধরে আছে দুই মহাকাব্য। রামায়ণ ও মহাভারত। ভারতের রাজনীতি, জাতীয় জীবনের ইতিহাস, ধর্মীয় চেতনা, সামাজিক ঐতিহ্য, নীতিবোধ, আধ্যাত্মিকতা-সবকিছুর ধারক ও বাহক এই দুই মহাকাব্য।
কেন্দ্র ও রাজ্য- দুজনেই উল্লেখিত বিষয়গুলির ধারক ও বাহক। যদি তাই হয় তাহলে এত হানাহানি, মারামারি কেন? একটু চিন্তা করলে দৃশ্যত ধরা পড়ে-কোনো জিনিসই Moveable নয়। দেহ যখন থাকবে না তখন কোনোকিছুই সাথে যাবে না-তাহলে? তাহলে পড়ে থাকবে শুধু সুকর্ম আর ব্যবহার। এখন যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সখ্যতায় বাসা বাঁধে, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো মলিনতা থাকে না। তবে বাধা কিসের! কিসের এত ইগো!
রামের প্রজাবাত্সল্য, লক্ষণের স্বেচ্ছায় দুঃখবরণ, ভারতের অমায়িক ভাতৃপ্রেম, সীতার পরিভক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তা-এসবই প্রাচীনকাল থেকে ভারতবাসীর কাছে পরম আদর্শ বলে বিবেচিত হয়েছে। রামায়ণের প্রভাব ভারতীয় সমাজকে বিশ্বের যে কোনো জনসমাজ থেকে পৃথক এক স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। তাহলে দেশে এখনো কেন জাতপাত নিয়ে নৃশংস ধাষ্টামী, কেন এত দাঙ্গা, কেন এত লোভ! যখন রামায়ণের সার জিনিসটা আমরা বুঝতে পারি, তাহলে এত বৈষম্য কেন? চারিদিকে এত শোকের ছায়া কেন! তাহলে সবটাই কি গিমিক?
এবার আসি মহাভারতে। মহাভারতে পরিবেশিত রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, ভারতীয় সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতীক। মহাভারতের মূলকথা ধর্মের জয়, অধর্মের পরাজয়। ভোগ যে মানব জীবনের কাম্য নয়, বৈরাগ্যেই মুক্তি- এই মর্মকথা মহাবারতের কাহিনীতে ফুটে উঠেছে। তাহলে বাজারে এত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি কেন? কাদের স্বার্থে? চাহিদার তো শেষ নেই। থামবে কখন? একটা মানুষের কত দরকার একসময় না থাকলে, পরিস্থিতির চেহারা তো রণভূমিতে পরিণত হবে। তাহলে আমাদের মূল্যবান এই দুই মহাকাব্যের দাম কোথায় রইল! সবটাই কি ক্তঁ গঙ্গায় নমঃ। দুটো মহাকাব্য শুধু আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবই নয়, ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের মূর্ত প্রতীক। পথপ্রদর্শক। দুটি মহাকাব্যের সারবস্তু বুঝে শয়তানী না করে, যদি সত্ভাবে সবাইকে নিয়ে চলতে পারা যায়, তাহলে একদিন ভারতবর্ষ হবে সূর্যের আর এক নাম।
সৌমেন সুরঃ সুপ্রিয় হিয়াকে বসতে বলে। হিয়া চেয়ারে বসে। 'আপনি একটু বসুন, আমি খাবার নিয়ে আসছি।' কথাটা বলে সুপ্রিয় বেরিয়ে যায়।
হিয়ার চোখে মুখে শূন্যতা। এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা দৃশ্য। সুনিতা একটা রেকাবিতে কিছু ফুল আর একটা ছোট্ট দইয়ের ভার হাতে নিয়ে ডাকেন, হিয়া...হিয়া..।
হিয়া কাঁধ ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
সুনিতা মন্দির থেকে পুজোর সামগ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, হিয়া ঘরে ঢুকে বলে, 'আমাকে ডেকেছো মামী?' 'হ্যাঁ.. দেখি' বলে কপালে দইয়ের একটা ফোঁটা দিয়ে দেন। তারপর একটা জবা ফুল নিয়ে বলেন, 'এই ফুলটা কাছে রেখে দে, মায়ের আশীর্বাদী ফুল।' হিয়া ফুলটা হাতে নিয়ে ওর ব্যাগে রাখে। তারপর প্রণাম করে মামীকে। মামী হিয়ার চিবুক ছুঁয়ে বলেন, 'তোর পরীক্ষা ভালো হোক, এই আশীর্বাদ করছি।'
হঠাৎ ধুমকেতুর মতো প্রবেশ করে রিনি। রিনি সুনিতার একমাত্র মেয়ে। বলে ওঠে, ' আচ্ছা ওর বেলায় দইয়ের ফোঁটা, আশীর্বাদী ফুল। আর আমার বেলায় কিছুই না।' আঃ রিনি। ওভাবে বলছিস কেন, ও তোর দিদি। 'নিজের দিদি তো নয়, দূর সম্পর্কের দিদি।' সুনিতা ধমকে ওঠেন, 'রিনি..' 'হিয়া তুই যা তো। সাবধানে পৌঁছাস, যা।' হিয়া মুখ হাঁড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
একটা মালবাহী ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে গর্জন করতে করতে পাস করে।
হিয়া গুম হয়ে বসে আছে চেয়ারে। সুপ্রিয় ক্যারিব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করে। 'এত রাতে খাবার পাওয়া যায়!' অনেক কষ্টে পেলাম ডিম টোস্ট। নিন ধরুন। হিয়া খাবারটা হাতে নেয়। সুপ্রিয় পাশের বেঞ্চে বসে খেতে শুরু করে। হিয়াও খেতে থাকে।
সুপ্রিয় বলে ওঠে, 'খেতে খেতে বলুন তো কেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন?' হিয়া তাকায় সুপ্রিয়র দিকে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে স্থির হয়ে বলে, 'মানুষ অনেক কষ্ট পেলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। জানেন, দিনগুলো ভালো কাটছিল। মা,বাপ মরা মেয়ে মামার বাড়িতে মানুষ হচ্ছিলাম। মামা আমি দু'জনেই ভালো মানুষ। কিন্তু মামাতো বোন রিনি ছিল আমার বিরুদ্ধে, আমাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। কেন যে ওসব করতো তার কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একদিন'....
রিনি রাগের মাথায় ঘরের জিনিসপত্র হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলছে, শব্দ শুনে সুনিতা দেবী দ্রুত ঘরে আসেন। রিনির কাণ্ড থেকে চিৎকার করে ওঠেন, 'কি হচ্ছে কি?' রিনি... রিনি আরও উচ্চ গলায় বলে ওঠে, কেন আমার শাড়ি হিয়াকে পড়তে দিয়েছ? কেন..?' একটু পরেছে তাতে দোষের কি হয়েছে!' 'দোষের হয়েছে তোমার শাড়ি তো ছিল, তাই দিলে না কেন...? আচ্ছা আমার শাড়ি পরে ইন্টারভিউ যাওয়া যায়! তাইতো তোর শাড়ি... এমন সময় হিয়া ঘরে ঢোকে।
সৌমেন সুর: একটা চায়ের দোকান। বলা যায় রাতের চায়ের দোকান। দুজনে একটা বেঞ্চে বসে। সুপ্রিয় বলে ওঠে, 'ভজনদা, দুটো কেক দাও।' মেয়েটি সুপ্রিয়র দিকে জিজ্ঞাসুনেত্রে তাকায়।
--'আমার চেনা দোকান। হালিশহরে আমি বছর দুয়েক আছি। এই চায়ের দোকানটা সারা রাত খোলা থাকে। কারন, রাত দুটোর পর সবজীওয়ালারা আসতে থাকবে। তারা প্রথম ট্রেন ধরে কলকাতায় যায়।'
কেক, চা চলে আসে। বেঞ্চের ওপর চায়ের ভাঁড় দুটো রাখে সুপ্রিয়।
--'দাঁড়ান, চা খাবার আগে একটু জল খান। বাচ্চা...বড় কাগজের কাপে জল দেতো।' একটু হাঁক দেয় সুপ্রিয়।
মেয়েটি জড়সড় হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ভাবনাগ্রস্ত হয়ে বসে আছে।
--নিন, জলটা খান।
মেয়েটির সম্বিত্ ফেরে। সুপ্রিয়র দিকে তাকায়। সুপ্রিয় ইশারায় জলটা খেতে বলে। মেয়েটি জলটা খায়। সুপ্রিয় চায়ের ভাঁড়টা এগিয়ে দিয়ে বলে,'চা'টা খান। একটু কেকের কামড়, আর এক সিপ চুমুক, ভালোলাগবে। নিন।
মেয়েটি হাতে নেয় কেকটা। এইসময় সুপ্রিয় বলে, 'আমি সুপ্রিয়। সুপ্রিয় রায়। আপনি?' মেয়েটি ওর দিকে তাকিয়ে বলে, 'আমি হিয়া মিত্র।' খেতে খেতে সুপ্রিয় বলে, 'আজ আপনি এই অঘটন ঘটাচ্ছিলেন কেন?' হিয়া কোনো কথা বলে না। রেল লাইনের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
---কিছু না বললে বুঝবো কেমন করে!
হিয়া তাকায় সুপ্রিয়র দিকে। সু্প্রিয় আশ্বাস দেয়, 'ঠিক আছে এখানে বলতে হবে না, অন্য জায়গায় বলবেন।' তার আগে চা'টা খেয়ে নিন, ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
হিয়া চায়ে চুমুক দেয়। 'কেকটা খান। লজ্জা না করে খান। মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে পেটে কিছু পড়েনি। ঠিক আছে এটা খান, আমি খাবার আনছি। আমারও খিদে পেয়েছে।' সুপ্রিয় ক্যাজুয়ালী কথাটা বলে।
হিয়া কেক-এ কামড় দেয়।
দুজন RPF প্ল্যাটফর্মে হেটে টহল দিচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের ঘড়িতে রাত একটা দশ।
স্টেশন মাষ্টারের ঘর। হিয়া ও সুপ্রিয় ঘরে প্রবেশ করে। স্টেশন মাষ্টার দুজনকে দেখে অবাক হয়ে বলে, 'কি ব্যাপার, শেষ ট্রেনটা তো অনেক আগে বেরিয়ে গেছে।' সুপ্রিয় কথায় যোগ দেয়, 'সেইজন্যই তো বিপদে পড়েছি অশোকদা।' 'তোমার আবার বিপদ কিসের, তুমি তো এই এলাকার।' 'না আমি নয়, মানে আমার বান্ধবী। লাষ্ট ট্রেনটা মিস করেছে বলেই তো যত হ্যাপা।' 'তা কি করবে এখন।' 'বলছিলাম, আপনার পাশের ঘরটা তো ফাঁকাই থাকে, ওখানে না হয় রাতটা কোনোমতে--' 'ঘুমোতে পারবে কি! বসে বসে ঘুমোতে হবে।' 'ওতেই হবে অশোকদা, রাতটা কোনমতে কাটাতে পারলেই চলবে।' 'তাহলে যাও, দেখো বসে বসে যদি ঘুমোতে পারো।' দুজনে পাশের ঘরটায় চলে যায়।
সৌমেন সুরঃ মানুষের কল্যাণে সমাজ। সমাজের কল্যাণেই মানুষ। সমাজের ভালখারাপ মানুষের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে। আমরা মোদ্দা কথাটা জানি, মনুষ্যত্ব নিয়েই মানুষ। মনুষ্যত্ব বিহীন মানুষ-অমানুষ। যে জীবন নিজের সুখে মগ্ন, সে জীবন স্বার্থপর। সে জীবন অমানবিকতায় পঙ্কু। তাই চোরাপথে জীবনের যে সাফল্য, তা বেশিদিন টেকে না। আসলে নীতিবোধ মানুষের জীবনে বড় আশ্রয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সমাজ জীবনের সম্পর্ক নিবিড়। আজকের ব্যবসায়, স্বার্থটা-বড়। অভাব হলো নীতিবোধের। সর্বত্র ভেজালের মহিমা। ওষুধে ভেজাল, চাল, ডাল তেল, আটা এমনকি রান্নার মশলাপাতিতে পর্যন্ত ভেজাল। পোস্তয় ভেজাল। শাকসবজি, বেগুন, পটলে তীব্র পরিমাণে বিষ তেলের প্রয়োগ। শরীরের পক্ষে কত অস্বাস্থ্যকর। পৃথিবীতে ভারতের মতো আর কোনো দেশে খাদ্যে এত ভেজাল মেশানো হয় না। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ বোধহয় শীর্ষে। বাড়ি তৈরী করবেন? গালে হাত দিয়ে ভাবতে হবে আপনাকে, কারণ সিমেন্টে ভেজাল। এমনকি যে শাকসবজি খেয়ে একটু স্বস্তি পাবেন, তাতেও ভেজাল, কারণ তাতে রং করানো হয়। এভাবেই বেড়ে চলে অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফার অঙ্ক।
ভেজাল ব্যবসায়ীদের রোধ করা যাচ্ছে না কেন? ভেজাল খাবার খেয়ে কত মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। কেউ কেউ মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ে। এসব দেখেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কোনো চেতনা নেই। তারা মুনাফা লুটতেই ব্যস্ত। ঘৃণ্য ব্যবসায়ীদের এখানে কঠোর শাস্তি হয় না। তবে দুর্নীতি দমনের জন্য একসময় গঠিত হয়েছিল 'সদাচার সমিতি'। কিন্তু কোনো কার্যকর হলো না। সদাচার সমিতি ভরে উঠলো বাস্তু ঘুঘুদের নিয়ে। অবশেষে তৈরি হলো ভেজালরোধে 'খাদ্য ভেজাল নিবারনী বিধি।'সে আইনেও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঘায়েল করা গেল না। আসলে আইন দিয়ে কখনও মানুষের হৃদয় পরিবর্তন করা যায় না। দরকার মানবিক বোধ। এই চেতনা যতদিন ব্যবসায়ীদের না হচ্ছে ততদিন সমাজে ভেজাল অটুট থাকবে। ভেজালের সর্বনাশা বিভীষিকা থেকে মানুষের কি কোনো মুক্তি নেই? ভেজাল সমাজের একটা রীতিমত ভয়ানক অপরাধ। এক্ষেত্রে সরকারের দিকে তীব্র দৃষ্টি আকর্ষন করছি।