Breaking News
Mahua Moitra: 'বস্ত্রহরণ শুরু করেছে, মহাভারতের যুদ্ধ দেখতে পাবেন,' সংসদে ঢোকার মুখে হুঙ্কার মহুয়ার      ED: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষকের বাড়িতে ইডি হানা!      Ragging: যাদবপুরে ফের র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ! প্রথম বর্ষের ছাত্রকে ফোন করে দেওয়া হত হুমকি...      Film Festival: শুরু ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, উদ্বোধনে 'বাদশা' নয় ভাইজান      SSKM: বেড নেই এসএসকেএম-এ! দেড় বছরের শিশুকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে      BJP: জাতীয় সঙ্গীত 'অবমাননা' মামলায় জোর ধাক্কা রাজ্যের! বিজেপি বিধায়কদের গ্রেফতারে 'না' হাইকোর্টের      Recruitment Scam: ফের তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে উদ্ধার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি ও অ্যাডমিট কার্ড!      Congress: স্বাধীনতার পর প্রথম তেলেঙ্গানায় সরকার গঠনের পথে কংগ্রেস      Deganga: গুরুতর অভিযোগ! মিড ডে মিলের চাল লুকিয়ে রাখা হচ্ছে স্কুলের শৌচালয়ে      Sujoykrishna: সুজয়কৃষ্ণের ভয়েস স্যাম্পেল টেস্টে 'ঢিলেমি'! এসএসকেএম-এর ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন     

SpecialStory

Special: সত্য-মিথ্যা মাপকাঠিতে কোনটা গ্রহণ, কোনটা বর্জন কীভাবে বিবেচ্য জানুন

সৌমেন সুর: বিধাতার কাছ থেকে প্রত্যেক মানুষই নিজস্ব বৈশিষ্ট নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। নিজের সেই বৈশিষ্ট বিকাশের মধ্যেই আছে মানুষের প্রকৃত পরিচয়। নিজ গুনের প্রকাশই মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ, তার গৌরব। কিন্তু সংসারে এমন মানুষও আছে, যারা নিজের মহিমা বুঝতে পারে না। যারা পরের অনুকরণের মধ্যে অন্তঃতৃপ্তি বোধ করে। সেটাকেই ব্যাক্তিত্ব বিকাশের একমাত্র উপায় মনে করে। নিজের নিজস্বতাকে বিসর্জন দিয়ে পরের অন্ধ  অনুসরণে তাঁরা জীবন অতিবাহিত করে। তাঁরা আসল ভুলে নকলের পেছনে ছোটে।  এভাবেই জীবনকে তারা ব্যর্থতায় ভরে তোলে। পরানুকারণ মানুষকে কোনও সত্যের সন্ধান দেয় না।

বর্তমানে অর্থের মাপকাঠিতে ছোট-বড় বিচার করা হয়। বিত্তশালী ব্যক্তিরাই সমাজে বড় মানুষ বলে পরিচিত। কিন্তু অতীতে ভিতরের গুণাবলী দিয়েই ছোট-বড় নির্ধারিত হত।  পার্থিব ভোগের আকাঙ্খা ত্যাগ করে সত্তা অনুসন্ধানই ছিল বড় হওয়ার প্রকৃত উপায়। ঐশ্বর্য, জাঁকজমক, বিলাপের মধ্যে কোনো বড়ত্ব নেই।  বরং এগুলো সত্য জানার পক্ষে ছিল প্রতিবন্ধক। আসলে অনেক দুঃখ কষ্টর মধ্যে দিয়েই সত্যকে পেতে হয়।  তাই সত্য মিথ্যার মাপকাঠিতে কোনটা গ্রহণ করব আর কোনটা বর্জন করব-সেটা নির্ভর করে নিজের উপর।


11 months ago
Devi: বর্ধমান নারকেলডাঙায় দেবী জগৎগৌরী (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: অনেক নদীপথ পার হয়ে অবশেষে বেলায় ভাসতে ভাসতে লখিন্দরকে নিয়ে বেহুলা পৌছলেন বর্ধমানের নারকেলডাঙায়। এখানে তাঁর চোখে পড়ে একটা মন্দির। মন্দিরটি মা মনসার। মায়ের কাছে স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন। মন্দিরের মা হলেন দেবী জগৎগৌরী। পুরানে আছে জগৎগৌরীই মা মনসা। দেবী জগৎগৌরি কিভাবে এখানে আবির্ভূত হলেন, সে ব্যাপারে একটা গল্প আছে। প্রথম পর্বের পর...

দেবী জগৎগৌরীর মাহাত্ম্য লোকের মুখে মুখে। নানা গ্রামের লোক দেবীর জন্য মন্দির গড়েছে। যেমন বৈচি বৈদ্যপুর তেহাটা, রামনগর, পলতাপাড়া, আটকোটিয়া, হাসনহাটিতে গ্রামবেড়ানি করেন দেবী জগৎগৌরী। দেবী মায়ের ঝাঁপান উৎসব হয় আষাঢ় মাসের পঞ্চমীতে। মাকে মন্দির থেকে ঝাঁপানতলায় নিয়ে আসা হয়। চতুর্দোলায় চড়িয়ে মাকে নাচতে নাচতে নিয়ে আসা হয়। ঝাঁপানের আগের দিন দেবীকে পরানো হয় রাজবেশ। চলে অধিবাস। সারাদিন চণ্ডীপাঠ, পুজো চলে, বলি হয়। গ্রামের মেয়েরা ফলাহার করেন।

নারকেলডাঙার ঝাঁপান উৎসব বর্ধমানের সেরা উৎসব বলে বিবেচিত। মাল সম্প্রদায়ের বেদেরা সাপ খেলার সঙ্গে মা মনসার গান গায়। আষাঢ় মাসের বৃষ্টি কাদা মেখে সাঁওতালরা আসে ধামসা বাজিয়ে। চতুর্দোলার সঙ্গে নাচতে নাচতে যায় বামুন, বাউরি, তিলি, সদগোপ, কায়স্থ, কোঁড়া। মা জগৎগৌরীর কাছে সবাই সমান। সবাই মায়ের সন্তান। দেবী জগৎগৌরীর স্বপ্নে, নন্দীদের মেজ পরিবার নারকেলডাঙায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবীকে। সেই থেকে দেবী জগৎগৌরীর বাপের বাড়ি নন্দীপারেই। প্রতি বছর গ্রামবেড়ানিতে বৈদ্যপুরের এ বাড়িতে তিনদিন কাটান এখানে। মা জগৎগৌরীর মহিমা বর্ধমানের সেরা মহিমা, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

11 months ago
Special: ফিরে দেখা স্কুলজীবন এবং নস্টালজিক বর্তমান

সুজিত সাহা: শীত এলেই বেড়িয়ে পড়ি হাঁটতে। সঙ্গী হয় আমার পাগল বন্ধু। সময়ের ঠিক নেই-- উদ্দেশ্যহীন যখন যেখানে মন চায়। তেমনি গত ১১ জানুয়ারি যশোর রোড ধরে মাইকেল নগরের কাছে আসতেই কানে এলো মাইকের শব্দ। কৌতুহলবশত শব্দকে অনুসরণ করে পৌঁছলাম গন্তব্যে। করোনাকালে প্রায় তিন বছর চোখে পড়েনি এমন সুন্দর দৃশ্য। কেমন যেন ফিরে গেলাম ছোটবেলায়। সবুজ সুন্দর স্কুল প্রাঙ্গণের একপ্রান্তে নীল-সাদা মঞ্চের উপর মাইকেল নগর শিক্ষা নিকেতন (উচ্চ মাধ্যমিক)-Annual Meet 2023। মাইকে ভেসে এলো স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এখনই শুরু হতে চলেছে। উপভোগ্য পরিবেশে জায়গা মতো দাঁড়িয়ে পড়লাম দু'জনে। ছোটবেলার ইতিউতি কথা মনকে নস্টালজিক করে তুললো।

মান্যবরদের উপস্থিতিতে প্রদীপ জ্বালালেন মধ্যমগ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান। শুরু হল ক্রীড়া অনুষ্ঠান। অসামান্য দক্ষতায় ছাত্রছাত্রীরা human formation দ্বারা বিভিন্ন form সৃষ্টি করলো। সারা মাঠ করতালিতে ভরে উঠলো। একে এক শুরু হলো Obstacle Race, Hurdle Race, shot put, javelin throw আরও কত কি! একদল কিশোরের সবুজ গালিচার বুক চিরে ছুটে আসা অনবদ্য দৃশ্য। সত্যি বারেবারে হারিয়ে ফেলছিলাম নিজেকে।


মাননীয় প্রধান শিক্ষক মহাশয় শ্রী অমিয়কান্তি বিশ্বাস ও তাঁর সুযোগ্য শিক্ষকবৃন্দের প্রচেষ্টায় মাঠ প্রাঙ্গণে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। যে কোনও পেশাদার event গ্রুপকে হার মানাতে পারে তাঁদের ব্যবস্থাপনা। কঠোর অনুশাসন ও নিয়মানুবর্তিতা মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রছাত্রীদের সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব আগামি দিনের পথচলাকে সুদৃঢ় করবে বলে আমার বিশ্বাস। Go As You Like শুরু না হলে বুঝতেই পারতাম না কখন দুপুরে গড়িয়ে বিকেল হলো। কেন যে মাইকেল নগর শিক্ষা নিকেতন স্কুলটি এই অঞ্চলের সেরা স্কুল হয়ে উঠেছে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। (সমাপ্ত)      

11 months ago


Devi: বর্ধমান নারকেলডাঙায় দেবী জগৎগৌরী (১ম পর্ব)

সৌমেন সুরঃ অনেক নদীপথ পার হয়ে অবশেষে বেলায় ভাসতে ভাসতে লখিন্দরকে নিয়ে বেহুলা পৌছলেন বর্ধমানের নারকেলডাঙায়। এখানে তাঁর চোখে পড়ে একটা মন্দির। মন্দিরটি মা মনসার। মায়ের কাছে স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন। মন্দিরের মা হলেন দেবী জগৎগৌরী। পুরানে আছে জগৎগৌরীই মা মনসা। দেবী জগৎগৌরি কিভাবে এখানে আবির্ভূত হলেন, সে ব্যাপারে একটা গল্প আছে।

নারকেলডাঙায় বর্ধিষ্ণু জমিদার নন্দী পরিবার। এই পরিবারের একজন ভক্তিময়ী মহিলা স্বপ্নে দেখলেন মা জগৎগৌরীকে। তিনি বলছেন, পুকুরে আমার মূর্তি পড়ে আছে। ওটা তুলে এনে আমাকে প্রতিষ্ঠা কর। নন্দী পরিবারের মেজকর্তা পুকুরে সারাদিন জাল ফেলেন, অবশেষে উদ্ধার করেন মাকে। তারপর ধুমধাম করে পুজো করে নিজের বাড়িতে জগৎগৌরীকে প্রতিষ্ঠা করেন। মা ফের স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, 'তোদের পাশেই এক ব্রাহ্মণ পরিবার আছে- সেখানে আমাকে প্রতিষ্ঠা কর।'

দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক সৎ ব্রাহ্মণের বাড়িতে মা চলে আসেন। এরপর মা জগৎগৌরীর মাহাত্ম্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। দেবী নারকেলডাঙায় শুধু থাকেন না। আশেপাশের গ্রামে তাঁর অবাধ বিচরণ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাসে আশেপাশে গ্রাম দেখতে মা বেরিয়ে পড়েন। মাকে চতুর্দোলায় চাপিয়ে ঘোরানো হয় বেশ কয়েকটি গ্রাম। (চলবে)

11 months ago
Winter: শীতের রোমাঞ্চ (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: এখন প্রায় শীতের মাঝামাঝি। গাছে গাছে পাতা ঝরার আগাম ডাক। চারদিকে যেন এক উদাসী রুক্ষতা। রোজ যেমন রাত যায়, দিন আসে আজও তেমনি এসেছে। প্রকৃতির মেজাজ যেন একটু অন্যরকম। আজ ছুটির দিন। চোখে তখনও ঘুমের আবেশ। বেলা কত হয়েছে বোঝার উপায় নেই। দরজা জানলা সব বন্ধ। বিছানায় লেপের উষ্ণতা ছেড়ে উঠে পড়তে কিছুতেই মন চায় না। আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার আলসেমি ভর করে আছে। এর মধ্যেই মা দু'বার তাড়া লাগিয়ে চলে গিয়েছেন। ডাক কানে আসলেও, উঠতে মন চায় না। রাস্তায় রিক্সার হর্নের আওয়াজ ভেসে আসে। কিন্তু আলস্য কিছুতেই কাটছে না।

ঘন কুয়াশা একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করেছে। আবার উত্তুরে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে আকাশে সূর্য-তারা প্রভা বিস্তার করে দেয়। তবে রোদের তেমন ঝাঁঝ নেই। বুঝতে পারলাম বেলা বাড়ছে। বাড়ির বারান্দা থেকে শিশুদের পার্কে দেখা যায়। গুটি গুটি পায়ে দু-চারজন বয়স্ক লোক, তাঁদের শিশুদের নিয়ে একবারে পার্কের স্লিপে। এরই মধ্যে হইহই করে বন-ভোজনে বেড়িয়ে পড়ছে মানুষ।

কেউ আবার বাজার ফেরত ফুলকপি, টমাটো, নিয়ে বাড়ি ফিরছে। এসব ছবি দেখতে দেখতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যাই। শীত আসে তার খুশির মেজাজ নিয়ে। দূরে বেশ কয়েকটা বাড়ির ছাদে চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, গাঁদা ফুটে আছে। এত অপূর্ব লাগছে, মনে হচ্ছে প্রকৃতি যেন তার সব রং ঢেলে দিয়েছে। শীতের একহাতে একতারা, অন্যহাতে বৈরাগ্য-- এটাই তার পরিচয় নয়। শীত যেন প্রাণচঞ্চল জীবনের কথা বলে।

সব মানুষকে আনন্দমুখর করে তোলে। মনে শুধু খুশির ছোঁয়া, ছোঁয়া আর ছোঁয়া।

11 months ago


Woman:বাংলার অগ্নিদূত নারী শেষ পর্ব (দৌলতউন্নিসা)

সৌমেন সুরঃ ছোটগল্প, উপন্যাস ও শিশুসাহিত্যে দৌলতউন্নিসার বিশেষ দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'পরশপাথর'। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যুক্ত হন দৌলতউন্নিসা। ওঁর শ্বশুরবাড়ি গাইগান্ধা। গাইগান্ধা মহিলা সমিতির সম্পাদক তিনি। তাঁর জ্বালামুখী বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে ৭/৮ গ্রামের মেয়েরা, এমন কি মুসলিম সম্প্রদায়ের মেয়েরা পর্দা সরিয়ে ছুটে আসত তাঁর সভায় যোগ দিতে। রাগে-ক্ষোভে ব্রিটিশ পুলিসরা যোগদানকারীদের বসত বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দিত। তবু দৌলতকে দিমিয়ে রাখতে পারেনি। সভার পর সভা করে গেছিলেন। অবশেষে পুলিস ফুলছড়ি গ্রামের সভা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকায়। তবু আন্দোলন থেমে থাকেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম মেয়েরাও যে ঘর ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে প্রতিবাদ করতেন তার প্রামাণ দৌলতউন্নিসা।

অথচ ওঁর ত্যাগ, সংগ্রামী চেতনা, নাম, আমরা কজনই বা জানি। ইতিহাসের অন্তরালে হারিয়ে গেছে এমন অনেক অজানা আত্মত্যাগী মানুষ। যখন পুলিস দৌলতউন্নিসাকে ধরে, তখন তাঁর শাস্তি ছিল এমন, রাজশাহী, প্রেসিডেন্সি, বহরমপুর প্রভৃতি জেলে তাঁকে পাল্টে পাল্টে রাখা হতো। যাইহোক দৌলতউন্নিসা যে ব্রিটিশদের একসময় ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল, একথা প্রমাণিত সত্য। শুধু মুসলিম পুরুষরা নয়, মেয়েরা স্বাধীনতা সংগ্রামে যে বীরত্ব দেখিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। (সমাপ্ত)

তথ্যঋণ: সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

12 months ago
Woman:বাংলার অগ্নিদূত নারী দ্বিতীয় পর্ব (সত্যবতী ও দৌলতউন্নিসা)

সৌমেন সুর: ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার মেয়েদের বাড়ির সদর দরজার বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। তাঁরা পর্দাসীন ছিল। তবু শত শত নারী তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিল স্বাধীনতার নিরিখে। নিজেদের নাম, যশ, মোহ ত্যাগ করে স্বাধীনতার সংগ্রামে জড়িয়েছিলেন বহু নারী। তৎকালীন সমাজে কোণঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরা নিজের নিজের জায়গা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের কাজ করেছেন গোপনে বা প্রকাশ্যে। কেউ সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেউ প্রাণ দিয়েছেন, কেউ বা ব্রিটিশ পুলিসের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজের প্রাণকে আত্মহুতি দিয়েছে দেশমাতৃকার চরণে। প্রথম পর্বের পর...

সত্যবতীকে পুলিস জেলে চালান করে। তিন মাস জেল খেটে মুক্তি পেয়ে আবার দেশের হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলনে নেমে পড়েন। ১৯ ফেব্রুয়ারি নন্দীগ্রামে এক রাজনৈতিক সভায় যোগ দিতে গিয়ে আবার গ্রেফতার হন সত্যবতী। এদিকে সূত্র মারফৎ পুলিস জানতে পারে সত্যবতী গোপনে খবর চালান করে বিপ্লবীদের। যার ফলে পুলিস ঘটনাস্থলে পৌছনোর আগেই বিপ্লবীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হত। এই খবর জানতে পেরে পুলিস সত্যবতীর উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। অত্যাচারের ফলে সত্যবতীর কিডনি ও অন্ত্র খারাপ হয়ে যায়। হাসপাতালে এই ক্ষতের চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। ফলে সত্যবতী শহিদ হন।

দেশের কাজে তাঁর আত্মত্যাগ ভোলা সম্ভব নয়। তবু দেশের স্বাধীনতার কাজে তাঁর ভূমিকা আজও মানুষের কাছে অধরা হয়ে আছে। কজনই বা তাঁকে আমরা স্মরণ করি। এবার আপনাদের সামনে হাজির করছি বিপ্লবি দৌলতউন্নিসাকে। ইনিও হারিয়ে গিয়েছে অবহেলার স্রোতে। ছোট বয়স থেকে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি লিখতে শুরু করে যশোরের এই প্রতিভাবান ছাত্রী। ঢাকার ইডেন স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া দেশ, বঙ্গশ্রী ও বিচিত্রা পত্রিকায় তিনি লেখালেখি করতেন। তখনকার দিনে মেয়েদের পড়াশোনা এমনকি কোনও সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকা সমাজ পছন্দ করতো না। তাছাড়া মুসলমান সমাজের কোনও মেয়ে পড়াশোনা করে উন্নতি করুক এটা তখনকার সময়ে সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল।  কিন্তু দৌলতউন্নিসার বাবা, মা এবং স্বামীর সমর্থনে পড়াশোনার দরজা খুলে যায়। (চলবে)

তথ্যঋণ: সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 

12 months ago
Childhood: ফিরে দেখা শৈশব

সৌমেন সুর: নেই সেই আইসক্রিম, নেই সেই হজমি কেনার ছুট, নেই সেই এক মুঠো সোনালী শৈশব। এখন সবকিছুই ফিকে। আছে শুধু সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পড়ার চাপ আর শাসনের ভ্রুকুটি। চোখের সামনে ফুটে ওঠে কবি ভবানীপ্রসাদের কয়েকটা লাইন। " কেউ বলে না তোমরা সবাই ফুলের মতো ফোটো/ কেউ বলে না সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠো/ একটা কথা রাখবে মনে মাস্ট/ সবকিছুতেই হতেই হবে ফার্স্ট।" ফার্স্ট হওয়া ছাড়া মা-বাবার মুখে যেন অন্য কথা নেই। যেমন করে হোক তোমাকে ফার্স্ট হতেই হবে।

অদ্ভুত লাগে এই সময়কে। আমরাও তো একসময় শিশু ছিলাম। কত রকম খেলা খেলেছি শৈশবে। আবার নিয়মের বেড়াজালে মানুষ হয়ে শাসনের মতো বার্তাও পালন করেছি। তবে শাসন সেই সময় ছিল একটু অন্য ধাঁচে। সেটা শৃঙ্খলায় ভরা এক নরম গরম স্বভাবের শাসন। মন চলে যায় শৈশবে। ধুলোবালি মেখে নিজেকে ফিরে দেখার সেই শৈশব। অজান্তে আকাশের পানে চলে যায় মায়াবী চোখ। নীলাকাশে খন্ড খন্ড মেঘগুলো দেখে মনে হয়— আমারই মতো সবাই শৈশবে ফিরে পেতে চায়। সবাই ব্যস্ত। শুধু ছুট-ছুট আর ছুট। অর্থই কি জীবনের লক্ষ্য? এই যন্ত্রের চাকায় প্রতিমুহূর্তে মরে যাচ্ছে আমাদের মন। লোকদেখানো আর যান্ত্রিকতাই হয়েছে মূল লক্ষ্য।

শিক্ষা উদারতা আনে। শান্তি জীবনকে তৃপ্তি দেয়।  এ কোন সময়! যেখানে আদর্শ, সারল্য এই শব্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী শৈশবের মতো। যেন রাতের তারারা লুকিয়ে আছে দিনের আলোর গভীরে। শব্দ নেই, গুঞ্জন নেই। বেঁচে আছে মৃতের মতো।

one year ago