পাচারের (Smuggling) আগেই উদ্ধার হল বিরল প্রজাতির দুটি রেড পাণ্ডা (Red Panda) এবং একটি চিতাবাঘের (Leopard) চামড়া। গ্রেফতার ভিনদেশি তিনজন পাচারকারী। জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর বন বিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জের অভিযানে এই সাফাল্য মেলে। জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে নেপালের (Nepal) তিনজন পাচারকারী একটি মোটরবাইকে পাচারসামগ্রীগুলি নিয়ে শিলিগুড়ির (Siliguri) দিকে আসছিল। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করেন বেলাকোবা রেঞ্জের রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত ও তার দলের বনকর্মীরা। শিলিগুড়ি সংলগ্ন শক্তিনগর এলাকার ৩১ নং জাতীয় সড়কে এসে ওই মোটরবাইক সহ তিনজনকে ধরে ফেলেন তাঁরা।
তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় দুটি রেডপাণ্ডার চামড়া এবং একটি চিতাবাঘের চামড়া। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। জানা গিয়েছে, ধৃত তিনজনই নেপালের বাসিন্দা। এদের মধ্যে একজন নেপালের বিরাটনগরের একটি হোটেলের মালিক। আজ ধৃতদের জলপাইগুড়ি আদালতে পেশ করা হবে। ধৃতদের জেরা করে বনাধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, সামগ্রীগুলি ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভুটানে পাচারের ছক কষা হয়েছিল। তবে রেড পাণ্ডার চামড়া উদ্ধারের ঘটনা প্রায় নজীরবিহীন। এই এলাকায় এর আগে চিতাবাঘের চামড়া, হাতির দাঁত, সাপের বিষ, গণ্ডারের শিং-এর মতো জিনিস উদ্ধার হয়েছে। তবে রেডপাণ্ডার চামড়া উদ্ধার হয়নি। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে সিএন ডিজিটালের এই প্রতিবেদন।
গরু (Cow) ও কয়লা পাচারকাণ্ডে (Coal Smuggling) অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলের ৪৩ টি সম্পত্তির (Property) হাদিশ পেয়েছে সিবিআই (CBI)। এর মধ্যে তাঁর দেহরক্ষী সায়গলের (Saigal) সঙ্গে যৌথভাবে রয়েছে বেশ কিছু সম্পত্তি। বাকি সম্পত্তি রয়েছে তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে। সেই বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁর আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে সিবিআইয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।
সিবিআই সূত্র অনুযায়ী, এনামুল বীরভূম থেকে যে সব গরু পাচার করত, তার সবটাই জানতেন অনুব্রত। তাঁকে না জানিয়ে একটি গরুও পাচার হয়নি। এমনটাই বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয়েছে সিবিআই। এখান থেকেই গরু পাচারের সঙ্গে অনুব্রত সরাসরি যুক্ত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে বলে সিবিআই মনে করছে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে যাওয়া গরু, কয়লা, বালি ও পাথরভর্তি গাড়ির নম্বর পাঠানো হত অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গলের কাছে। পাচারের পথ নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিস কর্তাদেরও তা আগাম জানিয়ে রাখতেন অনুব্রত। এই কাজে ব্যবহারের জন্য সায়গলের কাছে ছিল ২২টি মোবাইলের হ্যান্ডসেট। নেওয়া হয়েছিল ৫০টি সিম। মৃত অথবা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির নথি ব্যবহার করে সেগুলি সংগ্রহ করা হয় বলেই অভিযোগ। কললিস্ট ঘেঁটে সংশ্লিষ্ট জেলার ওসি-আইসিদের সঙ্গে ফোনালাপের তথ্য সামনে এসেছে। অফিসারদের দাবি, পাচার কারবার থেকে উঠে আসা যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করতেন সায়গল।
অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal) জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য সিবিআই-এর হাতে। পাচার হওয়া গরু পিছু আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা কমিশন (Commission) ধার্য করে দিয়েছিলেন কেষ্ট। পাশাপাশি তা বেড়ে দাঁড়াত পাঁচ থেকে ছ’হাজারে। আবার কয়লার ক্ষেত্রে গাড়ি পিছু ১০ হাজার টাকাই ছিল ফিক্সড রেট। অর্থাৎ শুধু গরুই নয়, পাশাপাশি কয়লাতেও অনুব্রত মণ্ডলের যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, সেটাও সিবিআই-এর (CBI) তদন্তে উঠে এসেছে। ২০১৫ থেকে শুরু গরু পাচারের ডিল। তিন মাসে ৬ কোটির ডিল হয়েছিল। এনামুল টাকা দিত সায়গলকে, সায়গলের কাছ থেকে অনুব্রতর কাছে টাকা আসত। সূত্রের খবর, এমনই প্রমাণ এসেছে সিবিআই-এর কাছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে অনুব্রত বাহিনীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চলেছে সিবিআই।
গরু পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের বাহুবলী হিসাবে পরিচিত অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু কীভাবে পরিচালিত হত এই চক্র?
২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মালদহ, মুর্শিদাবাদ সীমান্তে ২০ হাজার গরু ধরা পড়ে। কিন্তু পাচারের অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং খাতায় গরুগুলিকে বাছুর দেখানো হয়। সিবিআই তদন্ত করে আরও জেনেছে,
সেই গরুগুলিকে বাছুর দেখিয়ে কম দামে নিলামে বিক্রি করা হত। এরপর সেই গরুগুলিকে এনামুলের সিন্ডিকেটের হাতে বিক্রি করা হত। নিলামে কেনার পর সেই সব গরুর বেশিরভাগ চলে যেত ইলামবাজারের হাটে। অভিযোগ, এখান থেকে দুভাবে লাভবান হতেন অনুব্রতর মতো প্রভাবশালীরা। গরুর লরি জেলাতে প্রবেশ করতে দেওয়া বাবদ টাকা। তারপর ইলামবাজার হাট থেকে সীমান্ত পার করতে সেফ প্যাসেজ করে দেওয়া বাবদ টাকা।
অভিযোগ, হাট থেকে শুরু করে বাংলাদেশে গরু পাচারের ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই কাজ দেখভাল করত সায়গল।
অনুব্রত মণ্ডলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। শুক্রবার আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে তাঁকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ফিরে সিজিও কমপ্লেক্সে চা খেয়েছেন তিনি। এদিন সকালে একবার অনুব্রত মণ্ডলের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। দু'বার নেবুলাইজার নিয়ে আপাতত স্বাভাবিক তিনি। শুক্রবার বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এক সিবিআই কর্তার উপস্থিতিতে স্পিকার অন করেই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন অনুব্রত। আধ ঘণ্টার জন্য তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে গিয়েছেন আইনজীবী।
জানা গিয়েছে, রাতে সিপিডব্লিউডি ক্যান্টিন থেকে আনা খাবার খেয়েছেন তিনি। সকালে খাচ্ছেন ভাত, রাতে রুটি-সবজি। শুক্রবার রাতে তাঁকে গেস্ট রুমে রাখা হবে। দেওয়া হবে তক্তার বিছানা। টিভি দেখার ইচ্ছা হলে তাঁর ঘরে লাগতে পারে টিভিও। সম্ভবত শনিবার থেকে পুরোদমে তাঁকে জেরা শুরু করবে সিবিআই।
সূত্রের খবর, তাঁর গ্রেফতারিতে দলের প্রতিক্রিয়া এবং মানুষের প্রতিক্রিয়া কী? এক সঙ্গীর থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন অনুব্রত। তাঁর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টাই একজন সঙ্গী থাকছেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। বীরভূম থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা তাঁর জন্য মুড়ি ও জামাকাপড় পাঠিয়েছেন। এসএসকেএম হাসপাতালের লিখে দেওয়া ওষুধেই এদিন সায় দিয়েছে কমান্ড হাসপাতাল।
এদিকে, তাঁর গেস্ট রুমের নজরদারিতে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি একা থাকতে পারতেন না। তাই তাঁর ঘরে একজন করে সঙ্গী থাকতে অনুমতি দিয়েছে সিবিআই।
বৃহস্পতিবার অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal) আদালতে তুলে সিবিআই দাবি করেছিল, তৃণমূল নেতার দেহরক্ষী সায়গল হোসেন অনুব্রতর হয়েই টাকা তুলত। সিবিআই (CBI) সূত্রের খবর, গরু পাচার করার জন্য অনুব্রতর সঙ্গে এনামুল হকের (Enamul Haq) একটা রফা হয়েছিল। সেই রফায় বলা ছিল, প্রত্যেক তিন মাস অন্তর ছয় কোটি টাকা করে দিতে হবে এনামুলকে। এমনকি, এই কথোপকথন হত ফোনের মাধ্যমেই।
এদিকে, অনুব্রতকে গ্রেফতারের দিনেই তাঁর চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারীর বয়ান রেকর্ড করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি সিবিআই র্যাডারে আসতে চলেছে বোলপুর হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মুও। বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মুকে সিবিআইয়ের নোটিস পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, শুক্রবার ভোররাতে অনুব্রতকে নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌছয় সিবিআই। তারপর সেখানেই অস্থায়ী ভাবে ক্যাম্প খাটে তৃণমূল নেতার বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদিন সকাল থেকেই ফের কেন্দ্রীয় সংস্থার জেরার মুখে অনুব্রত মণ্ডল। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন আধ ঘণ্টা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন তৃণমূল নেতা।
জানা গিয়েছে, সায়গল হোসেনের বয়ানের ভিত্তিতে অনুব্রতকে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে পারেন সিবিআই অফিসাররা। কারণ, সায়গলের সঙ্গে অনুব্রতর বেশ কিছু ফোনের রেকর্ডিং মিলেছে। এমনকি, একজন নিরাপত্তারক্ষী হয়ে কীভাবে তার এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হল, এর উৎস কোথায়? সেই বিষয় সেসময়ে সেহগালকে প্রশ্ন করা হয়। সেই সংক্রান্ত বিষয়ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অনুব্রতকে।
বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির নেপথ্যে কী রয়েছে এই গরু পাচার। এই সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখতে চাইছেন সিবিআই অফিসাররা।
যাঁর নামে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত, আজ কিনা তাঁর চোখে জল!ভোট আসলেই বীরভূমের (Birbhum) বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) সামলাতে কাল ঘাম ছুটত পুলিস থেকে শুরু করে কমিশনের কর্তাদের। কখনও প্রকাশ্যে পুলিসকে বোমা মারার হুমকি দিয়েছেন তো, আবার কখনও গাঁজা কেসে জেলে ঢোকানোর। আজ সেই দাপুটে নেতা একেবারে নির্বাক। কার্যত ভেঙে পড়লেন বীরভূম জেলা তৃণমূল (TMC) সভাপতি। বৃহস্পতিবার রাতে নিজাম (Nizam) প্যালেসে নিয়ে আসার পথে দৌর্দণ্ড্যপ্রতাপ নেতার এহেন অবস্থা লেন্সবন্দি হল। যা দেখে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অনেকেই।
গরু পাচার মামলায় বৃহস্পতিবার বীরভূমের বাড়ি থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই। আগামী ১০ দিন তাঁকে সিবিআই হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে আসানসোলের বিশেষ আদালত। ২০ অগাস্ট পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে পেয়েছে তাঁকে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুব্রতকে সিবিআইয়ের গাড়িতে করে কলকাতার নিজাম প্যালেসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তবে ধনেখালিতে যানজটে আটকে যায় গাড়ি। একদা বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডল বাড়ি থেকে বেরোলেই অনায়াসে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যেত। কোনও বাধা বিপত্তি ছাড়াই তিনি পৌঁছে যেতেন গন্তব্যে। একাধিকবার কলকাতায় এসেছেন বাধা-বিপত্তি ছাড়াই। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার পরে কলকাতায় ফিরতে গিয়ে বেগ পেতে হল অনুব্রত মণ্ডলকে। গোটা জাতীয় সড়কে কার্যত গাড়ি বন্দী হয়ে থাকতে হল দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল সভাপতিকে। জাতীয় সড়কে প্রায় এক ঘন্টা আটকে ছিলেন তিনি। এরপর স্থানীয় পুলিসের সহযোগিতায় কনভয় ফের কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আর ফেরার পথে কিছুক্ষণের জন্যে পালসিটের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পে দাঁড়ায় সিবিআইয়ের গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে অনুব্রত মন্ডলের দিকে ছুটে যান সাংবাদিকরা। একাধিক প্রশ্ন করা হলেও একেবারে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন তিনি। কেবল ক্যামেরায় ধরা পড়ল অনুব্রতের চোখের জল। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। সাড়ে সাত ঘণ্টা পর অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে মধ্যরাত ২ টো ৪৫ মিনিট নাগাদ নিজাম প্যালেসে প্রবেশ করেন সিবিআই আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে অনুব্রতর বাড়ি ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। তারপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে টানটান উত্তেজনার শেষে গ্রেফতার হন বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সিবিআই আধিকারিকেরা একেবারে বাড়ির ভিতরে দোতলায় অনুব্রতর ঘরে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতারি পরোয়ানাতে স্বাক্ষর করিয়ে গ্রেফতার করেন।
সূত্রের খবর, সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন অনুব্রতর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আলিপুরের কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া তাঁর জন্য একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে একাধিক তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এমনকি অনুব্রত মন্ডলের দেহরক্ষী সায়গলের বিপুল সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে সিবিআই। তাঁর ফোন রেকর্ড থেকেও উদ্ধার করা হয়েছে একাধিক তথ্য। যা এখন সিবিআইয়ের হাতে। জানা গিয়েছে, গরু পাচার মামলার একাধিক তথ্য এখন সিবিআইয়ের কাছে। সেই সব বিষয়কে সামনে রেখেই আজ থেকে আগামী কয়েকদিন লাগাতার জেরা করবেন সিবিআই আধিকারিকরা বলে মনে করা হচ্ছে।
গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই (CBI) অনুব্রত মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার আসানসোলে নিয়ে যায়। কিন্তু এদিন সকালে যখন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতিকে (Anubrata Mondal) যখন গ্রেফতার করে তখন লোকে-লোকারণ্য তাঁর বোলপুরের বাড়ি। কিন্তু বেলা গড়াতেই শুনশান হয়ে যায় সেই এলাকা। পাশাপাশি তালা পড়ে অনুব্রতর বাড়ি এবং অফিসে। কিন্তু সেই ফাঁকা বাড়ির সময় ঘুরতে দেখা যায় এক গরুকে। কিছুক্ষণ সেই গরু, অনুব্রতর বাড়ির মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়েও থাকে। আবার রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করে।
এদিকে, বীরভূম থেকে অনুব্রতকে যখন আসানসোল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন রাস্তায় একাধিকবার তাঁকে গরু চোর কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। এমনকি, আসানসোল আদালতেও বিক্ষোভ দেখায় বাম কর্মী-সমর্থকরা। তাঁর উদ্দেশে ছোড়া হয় জুতোও।
এদিন তাঁকে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই অনুব্রতকে আনা হয়েছে কলকাতায়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কলকাতা আসার পথে একাধিকবার তাঁর কনভয় দাঁড়ায়। তাঁর কাছে গিয়ে সংবাদমাধ্যম কিছু জানতে চাইলে অনুব্রত মণ্ডল কিছুই জানাবেন না বলে হাত নেড়ে জানিয়ে দিন।
কোনও অনৈতিক কাজ এবং দুর্নীতিকে তৃণমূল (TMC) প্রশ্রয় দেয় না। দুর্নীতির (Corruption) বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দলের। অনুব্রতর (Anubrata Mondal) গ্রেফতারির পর জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার শাসক শিবিরের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Minister Chandrima Bhattacharya) এবং প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। চন্দ্রিমাদেবী জানান, দলনেত্রী-সহ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছেন, মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর বা মানুষকে যদি কেউ ঠকায়, সেই কাজকে দল সমর্থন করে না। আগে এবং আজও তৃণমূলের এই বিষয়ে অবস্থান একই। মানুষের সমর্থনে তিন বার তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই মানুষের আশীর্বাদ ছাড়া কোনও সম্পদে তৃণমূলের আর কোনও আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো নিরপেক্ষ চেহারা হারিয়ে ফেলছে। সবার সঙ্গে নিরপেক্ষ ব্যবহার করুক তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এটুকু আশা আমরা করতেই পারি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দলের কারও বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু কেন্দ্রের শাসক দলের পক্ষে কেউ অভিযুক্ত হলে, সেই তৎপরতা দেখা যায় না।' এই অভিযোগ তোলার সময় তিনি সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের তিন বিধায়কের গাড়ি থেকে অর্থ উদ্ধারের প্রসঙ্গ তোলেন। এবং একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়েও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এভাবেও ঘুরিয়ে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।
তাঁর দাবি, 'বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা কর্তার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিরোধী দলনেতাকে ডাকাডাকি নেই, তাঁর বিরুদ্ধে কোণও কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা নেই। শুধু বিরোধী দলনেতা নয়, তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। কিন্তু ইডি, সিবিআই কেউই তাঁদের তদন্তের আওতায় আনছে না।'
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও জানান, বিচারব্যবস্থা, মাননীয় বিচারপতি সবার প্রতি আমাদের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। সবদিক খতিয়ে দেখেই বিচারব্যবস্থা পদক্ষেপ নেবে। তৃণমূলের তরফে আগামি দুই দিন সিবিআই-ইডির নিরপেক্ষতা চেয়ে এবং কেন্দ্রের সরকার দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার দাবিতে জেলায় জেলায় মিছিল করবে দল। এদিন জানান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সমীর ভট্টাচার্য। পাশাপাশি তাঁরা জানান, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা? যথা সময়ে সংবাদ মাধ্যম জানতে পারবে। দলনেত্রী এবং শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হবে। এমনটাই বৃহস্পতিবার জানান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সমীর চক্রবর্তী। দুর্নীতিতে কেউ অভিযুক্ত হলে তৃণমূল তাঁকে সমর্থন করবে না। এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন ওই দুই নেতা।