প্রসূন গুপ্তঃ রবিবারেই ধার্য হয়ে গেলো, এই রাজ্য থেকে আগামীতে রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করবেন কারা? তৃণমূল কংগ্রেস থেকে যে ৪ জন যাচ্ছেন তাঁরা যথাক্রমে নাদিমুল হক, সুস্মিতা দেব, মমতা ঠাকুর এবং নতুন মুখ সাগরিকা ঘোষ। এর মধ্যে ফের আরও একবার সুযোগ পেলেন নাদিমুল, কারণ সংখ্যালঘু মুখ। সুস্মিতা আগেও তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন এবং কাজটিও ভালো করেছিলেন কাজেই ফের একবার ও মমতা ঠাকুর একবার লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে হেরে যান। তিনি মতুয়া প্রতিনিধি এবং ঠাকুর বাড়ির প্রতিনিধি কাজেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে এবারে রাজ্যসভায় পাঠালেন। বাকি সাগরিকা ঘোষ।
সাগরিকা সাংবাদিক। টেলিভিশনের নিয়মিত মুখ ছিলেন। অসাধারণ বাচনভঙ্গি। ইংরেজি ও হিন্দিতেই তিনি তাঁর কাজ করেছেন। দিল্লির প্রবাসী বাঙালি এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা। সাগরিকা কোনও সাক্ষাৎকার নিতে গেলে অতিথির ঘাম ছুটিয়ে দিতেন। তাঁর পিতা ভাস্কর ঘোষ কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ বিভাগে ডিরেক্টর ছিলেন। ভাস্করবাবু দূরদর্শনের অন্যতম পরিচালকও ছিলেন দীর্ঘদিন। কংগ্রেসের পছন্দের মানুষ ছিলেন। সাগরিকার অন্য এক পরিচয়ও আছে। তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজদীপ সারদেশাইয়ের পত্নী। তাঁকে মমতা পাঠালেন সুবক্তা এবং রাজনীতি সচেতক হিসাবেই।
অন্যদিকে অনেক জল্পনা কাটিয়ে বাংলা থেকে একমাত্র আসনে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে আগামীতে দেখা যাবে রাজ্যসভায়। রাজ্য বিজেপিতে অনেক জল্পনা ছিল অনেক নাম নিয়ে। মিঠুন চক্রবর্তী, অনির্বান গাঙ্গুলি, ভারতী ঘোষ, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি নাম নিয়ে ছিল টেনশন। এ বিষয়ে নাকি সম্প্রতি অমিত শাহের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের আলোচনাও হয়েছিল। জল্পনার নামগুলি উঠে এসেছিলো ওই ভাবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের অতি পছন্দের শমীককেই রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। শমীক এক সময়ে বসিরহাট থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন, কিন্তু তারপর নানান নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করেও হেরে গিয়েছেন। শমীক সুবক্তা, রাজনীতির পড়াশুনা অগাধ এবং বিতর্কিত মন্তব্য থেকে দূরেই থাকে পছন্দ করেন। সাগরিকা বা শমীক কিন্তু বক্তা হিসাবে রাজ্যসভায় স্থান করে নেবেন বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলে।
চলতি বছরই লোকসভা নির্বাচন, সম্ভবত এপ্রিলেই। তার আগেই দেশের ১৫টি রাজ্যের ৫৬টি রাজ্যসভা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সোমবার ওই ৫৬ আসনের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রয়েছেন ৫ সদস্য। তাঁরা হলেন, অভিষেক মনু সিংভি, শান্তনু সেন, নাদিমুল হক, শুভাশিস চক্রবর্তী, আবির রঞ্জন বিশ্বাস।
নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২৭ ফেব্রয়ারি রাজ্যসভার নির্বাচন হবে। ১৫টি রাজ্যের ৫৬টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে স্থির হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যসভার নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি।
উল্লেখ্য, ১৩টি রাজ্যের ৫০টি আসনের সদস্যদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২ এপ্রিল। আর দুই রাজ্যের ৬টি আসনের সদস্যদের মেয়াদ শেষ হবে ৩ এপ্রিল। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও যে সব রাজ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা নির্বাচন হবে, সেগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান, কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, হরিয়ানা এবং হিমাচল প্রদেশ।
রাজ্যের ৫টি আসনে রাজ্যসভা নির্বাচন, লোকসভা ভোটের আগেই কি এই পাঁচ আসনে ভোট, এই প্রশ্ন উঠছে। কারণ ২রা এপ্রিল বাংলার পাঁচ রাজ্যসভা আসনে নির্বাচিত সাংসদদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অতএব তার আগেই ভোট করাতে হবে এই পাঁচ আসনে, এমনটাই নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। সম্ভবত মার্চে কিংবা এপ্রিলে এই পাঁচ আসনে রাজ্যসভা ভোটের সম্ভাবনা। জানা গিয়েছে, তৃণমূলের চার সাংসদ নাদিমূল হক, আবীররঞ্জন বিশ্বাস, শুভাশিস চক্রবর্তী এবং শান্তনু সেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২ এপ্রিল। এঁদের সঙ্গেই বাংলা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভিরও মেয়াদ শেষ চলতি বছর এপ্রিলে।
এবার রাজ্যসভার এই পাঁচ আসনে ভোট করাবে নির্বাচন কমিশন। গতবার তৃণমূলের সমর্থনে অভিষেক মনু সিংভিকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পেরেছিল কংগ্রেস। কিন্তু এবার কংগ্রেসের এই আসন ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। ফলে বিজেপির দিকেই পঞ্চম আসন যাওয়ার সম্ভাবনা। তবে, শাসক দলের যে চার জনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এবার, তাঁরাই কি এবার প্রার্থী? এই প্রশ্নের জবাব দেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই তৃণমূল সূত্রে খবর। এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা ধরলে চার আসনে শাসক দলের জয় নিশ্চিত। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে পঞ্চম আসনে ভোটাভুটি ছাড়া তাদেরও জয় নিশ্চিত। এখন দেখার পাঁচ আসনে ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঘোষণা কবে।
সংসদে ধোঁয়া কাণ্ড (Parliament Smoke Case) নিয়ে সোমবার সকাল থেকেই বিরোধীদের বিক্ষোভে উত্তাল লোকসভা ও রাজ্যসভা। সোমবার হইচইয়ের জেরে লোকসভার অধিবেশন বেলা ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি। কিন্তু অবশেষে বিরোধীদের তুমুল হৈ-হট্টগোলের মধ্যেই শুরু হয় লোকসভার কাজ। তবে রাজ্যসভা দুপুর ২ টো পর্যন্ত স্থগিত। শুক্রবারের মতো আজও সংসদের উভয় কক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে সরব হবেন বিরোধীরা বলেই সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় সংসদে ধোঁয়া কাণ্ড নিয়ে আলোচনার জন্য কুড়িটির বেশি নোটিশ জমা পড়েছে। ফলে সবকিছু মিলিয়ে আজও সংসদ ভবন এই সমস্ত ইস্যুতে যথেষ্ট উত্তপ্ত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সোমবার সকাল থেকেই রাজ্যসভা ও লোকসভায় বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে লোকসভার অধিবেশনে স্পিকার ওম বিড়লা জানান, সংসদে হামলা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হচ্ছে। এছাড়াও তিনি বলেন, যেভাবে বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, স্লোগান দিচ্ছেন, তা লোকসভার মর্যাদার পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, এই ধোঁয়া কাণ্ড নিয়ে রাজনীতি করা দুঃখের বিষয়। তিনি বিরোধীদের অনুরোধ করেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য।
অপরদিকে আইপিসি সিআরপিসি সংশোধনী বিল নিয়ে আজ আলোচনায় মরিয়া চেষ্টা চালাবে সরকার পক্ষ। সবকিছু মিলিয়ে আজও সংসদ ভবন এই সমস্ত ইস্যুতে যথেষ্ট উত্তপ্ত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রসূন গুপ্তঃ কংগ্রেস এবং তৃণমূল কতটা কাছাকাছি এলো তাই নিয়ে চলেছে অনেক জল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কি এই রাজ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট হচ্ছে? উত্তর নিশ্চই আছে, তবে তা ১৯ ডিসেম্বরের 'ইন্ডিয়া' জোটের বৈঠকের পরে। আপাতত এই জোট বৈঠকে ২৬ দল ছাড়াও আরও নতুন দল যোগ দিতে পারে বলে খবর। নতুন বলতে ওই তারাই যারা এবারের তিন রাজ্যের কংগ্রেসের পরাজয়ের অন্যতম হোতা। তবে পশ্চিমবঙ্গে জোটের বিষয় যে, এই বৈঠকে দীর্ঘ সময়ের আলোচনার নয় তা এক প্রকার নিশ্চিত। কিছুদিন আগেই নাকি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টেলিফোনে কথা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, কংগ্রেসকে দুটি আসন হয়তো ছাড়বে তৃণমূল, হয়তো তিনটিও হতে পারে। এই আসন অবশ্যই উত্তরবাংলায় কারণ দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল একাই লড়বে বলেই জানা গিয়েছে। আরও একটি বিষয় পরিষ্কার সিপিএমকে বা বামেদের কোনও আসন ছাড়বে না তৃণমূল। বামেরাও তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যেতে আগ্রহী নয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সিপিএম/ কংগ্রেসের জোটের কি হবে? এক দিল্লির কংগ্রেসি নেতা নাকি জানিয়েছেন যে এই রাজ্যে সিপিএমের এমন কোনও ভোট নেই যার উপর ভরসা করে তাদের সাথে জোট করতে হবে। আসলে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বামেদের উপর ভরসা হারিয়েছে।
এবারে মূল চমক কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি নাকি ফের এই রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন থাকতেই পারে যেখানে বিধায়কদের ভোট রাজ্যসভার সদস্য হওয়া যায় সে ক্ষেত্রে বিধায়কহীন পশ্চিমবঙ্গ থেকে কি করে কংগ্রেসের কেউ রাজ্যসভায় যাবেন? উত্তরে জানা যাচ্ছে, স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি উদ্যোগ নিয়ে তৃণমূলের ভোট দিয়ে মনু সিংভিকে রাজ্যসভায় পাঠাতে আগ্রহী। যদিও এই বিষয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় নি। শোনা গেলো এটি নাকি তৃণমূলের তরফ থেকে কংগ্রেসকে 'উপহার'।
মনু সিংভি এই রাজ্য থেকে সংসদে গেলেও রাজ্য কংগ্রেস নিয়ে তাঁর কোনও উৎসাহ নেই। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিখ্যাত আইনজীবী। তিনি এ রাজ্যের নানান প্রশাসনিক আইনি বিষয়টিতে রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করেন কোর্টে, তার সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেস তো আছেই। সুতরাং ....
বাদল অধিবেশনের (Monsoon Session) শেষ দিনে রাজ্যসভা (RajyaSabha) থেকে সাসপেন্ড (Suspend) করা হল আপ নেতা রাঘব চাড্ডাকে (Raghav Chadha)। তাঁকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। সূত্রের খবর, চারজন সাংসদের সই নকল করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সাংসদদের বিনা অনুমতিতে, প্যানেলের সদস্যদের জন্য তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। ফলে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে আপ নেতা রাঘব চাড্ডাকে। তাঁর এই সাসপেনশনের পরই তিনি এবারে সমাজমাধ্যমে এসে নিজের বক্তব্য রাখলেন। প্রথমেই তাঁকে বলতে শোনা গেল, 'কেন আমাকে সাসপেন্ড করা হল?'
My statement on suspension from Rajya Sabha
— Raghav Chadha (@raghav_chadha) August 11, 2023
राज्य सभा से निलंबित होने पर मेरी प्रतिक्रिया pic.twitter.com/0jM3DS6M7I
শুক্রবার সাসপেনশনের পর নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন রাঘব চাড্ডা। তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেছেন, 'কেন আমাকে সাসপেন্ড করা হল? কী অপরাধ আমার? আমার কী এটাই অপরাধ যে, আমি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পার্টি বিজেপির নেতাদের প্রশ্ন করেছি?' তাঁর বিরুদ্ধে সই নকল করার যে অভিযোগ উঠেছে, সেই বিষয়ে তিনি যুক্তি দিয়ে জানিয়েছেন, কোনও সিলেক্ট কমিটির সদস্যের জন্য কিছু সাংসদের নাম প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। এমনটা অধিকার রয়েছে একজন সাংসদের। এই ক্ষেত্রে কোনও সাংসদের অনুমতি বা সইয়ের দরকার পড়ে না। কোনও সাংসদের আপত্তি থাকলে তাহলে তাঁর নাম তুলে নিতে পারেন। এসব বলেই তিনি নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দেন। এখন এটাই দেখার অবশেষে প্রিভিলেজ কমিটির রিপোর্টে কী আসে। উল্লেখ্য, এই রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত রাজ্যসভার সমস্ত কাজ থেকে নির্বাসিত থাকবেন চাড্ডা, এমনটাই জানিয়েছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়।
মঙ্গলবার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েনকে (Derek O'Brien) 'অসংসদীয় আচরণ' ও 'চেয়ারের অবমাননা'র কারণে রাজ্যসভার বাদল অধিবেশন (Monsoon Session) থেকে সাসপেন্ড করা হয়। আজ সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্যসভা (Rajya Sabha)। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে ডেরেক বারবার আলোচনা করতে বললে তাঁকে সাসপেন্ড করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। কিন্তু এরপর তাঁর সাসপেনশন নিয়েই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অবশেষে কী হল, তিনি কি বাকি বাদল অধিবেশনে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। তবে এবারে জগদীশ ধনখড় নিজেই পুরো বিষয় খোলসা করে বলেন, 'সুদূরপ্রসারী' চিন্তাভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ডেরেককে সাসপেন্ড করা হচ্ছে না। অর্থাৎ বাকি অধিবেশনে তিনি অংশ নিতে পারবেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে জগদীপের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন ডেরেক। এরপরই বিজেপি সাংসদ পীযুষ গোয়াল ডেরেককে সাসপেন্ড করার প্রস্তান আনেন। এরপর তাঁকে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও চেয়ারম্যানের নির্দেশ অবমাননা করার কারণে সাসপেন্ডও করা হয়। এরপর এই সাসপেনশনের বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদরা বিক্ষোভ দেখালে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মুলতুবি করে দেওয়া হয় অধিবেশন। কিন্তু পরে ডেরেকের সাসপেনশন নিয়ে কোনও ভোটাভুটি হয় নি। সূত্রের খবর, জগদীপ ধনখড় জানিয়েছেন, ডেরেক ও'ব্রায়েনের সাসপেনশন নিয়ে তিনি সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করে আর এই ব্যাপারটিতে এগোননি। ফলে আর ভোটাভুটিও হয় নি। ফলে বাকি অধিবেশনে থাকবেন ডেরেক ও'ব্রায়েন।
পশ্চিমবঙ্গে আর রাজ্যসভার ভোট হচ্ছে না। শনিবার বিধানসভায় এসে বিজেপির ডামি প্রার্থী তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করতেই তৃণমূল এবং বিজেপির সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলেন। বিধানসভা সূত্রে খবর, আগামী সোমবার নির্বাচনে ছয় জন এবং উপনির্বাচনে এক জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের শংসাপত্র দেওয়া হবে। ফলে এই রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন তৃণমূলের ডেরেক ও ব্রায়েন, সুখেন্দুশেখর রায়, দোলা সেন, অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম এবং আলিপুরদুয়ার তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রকাশ বড়াইক। বিজেপির হয়ে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন অনন্ত মহারাজ।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে পরে রাজ্যসভার ভোটে চমক দিতে চেয়েছিল গেরুয়া শিবির। সেই কারণে রথীন্দ্র বসুকে এই নির্বাচনে সামিল করেছিলেন নেতারা। ফলে একটি আসনে নির্বাচন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শনিবার ছিল রাজ্যসভার ভোটে নাম প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওই দিন বিধানসভায় এসে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন রাজ্য বিজেপির এই নেতা। রথীন্দ্রকে প্রার্থী করা তাদের কৌশলগত দিক ছিল বলেই দাবি করেছে বিজেপি।
এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ হচ্ছেন। সেই আসনে জয়ী হয়ে রাজ্যসভায় যাবেন অনন্ত। আর যে একটি আসনে উপনির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই আসনেও বিনা প্রতিন্দ্বিতায় জয়ী হবেন দিল্লির বাসিন্দা তথা সমাজকর্মী সাকেত গোখলে।
প্রসূন গুপ্ত: পশ্চিমবঙ্গের ৭টি রাজ্যসভার আসনে পদে থাকা সদস্যদের পালা শেষ হচ্ছে এ মাসের শেষে। কাজেই দ্রুত নতুন সদস্যদের পাঠাবার পালা তৃণমূল ও বিজেপির। এই প্রথম এই রাজ্য থেকে কেউ একজন বিজেপির সদস্যপদ পাবে উচ্চকক্ষে। তৃণমূল ইতিমধ্যেই ৫ সদস্য এবং গোয়ার ফেলেইরো পদত্যাগ করায় ১ টি আসন অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৬ জনকে সদস্য করতে পারবে। তাদের বিধানসভার জোর যথেষ্ট। এই মুহূর্তে প্রায় ২২০ জন। এছাড়া একজন আইএসএফ এবং এক পাহাড়ের প্রতিনিধি আছে। বিজেপির সংখ্যা ৬৯-এর মতো। বিজেপি বড়োজোর ১ জন প্রার্থী পাঠাবার মতো শক্তি বিধানসভায় আছে। নিয়ম হচ্ছে বিধানসভার প্রত্যেক সদস্য ভোট দিতে পারেন। প্রতিটি ভোটের প্রাথমিক মূল্য ১, কিন্তু তারা তাদের দ্বিতীয় পছন্দকেও ভোট দিতে পারেন। কিন্তু প্রথম ভোট গণনা হয়ে যাওয়ার পর প্রার্থী নির্বাচনে সমস্যা হলে দ্বিতীয় পছন্দের প্রার্থীকে গণনায় নেওয়া যেতে পারে।
বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে বৃহস্পতিবার। অবিশ্যি দ্বিতীয় ড্যামি প্রার্থীর নামও দিয়েছিলে বিজেপি, কিন্তু শুক্রবার তাঁর নাম তুলে নেওয়া হয়। অতএব প্রথম পছন্দের অনন্ত মহারাজ রায় নির্বাচিত হলেন। আর ভোটের প্রয়োজন নেই, যেহেতু ৬টি আসন এবং একটি উপনির্বাচনের প্রার্থী, সে ক্ষেত্রে ৭ জন প্রার্থীই নমিনেশন দিয়েছেন এবং প্রত্যেকেই নির্বাচিত। এবারে প্রশ্ন কে এই অনন্ত মহারাজ। প্রথমত, তিনি রাজবংশী প্রতিনিধি। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে রাজবংশীরা ঢেলে ভোট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। সামনেই লোকসভা নির্বাচন কাজেই রাজবংশী ভোটকে টার্গেট করেই কিন্তু অনন্ত মহারাজকে প্রার্থী করা। এই অনন্ত মহারাজকে নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্যের অন্যতম দাবিদার তিনি। এক্ষেত্রে এ রাজ্যে থাকা বাঙালিদের কাছে এই নব বঙ্গভঙ্গ মোটেই কাম্য নয়। এ নিয়ে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাও বিভেদের রাজনীতি করেছিলেন। মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি, ফলে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির ফলাফল পঞ্চায়েতে খুবই খারাপ হয়েছে। এবারে দেখার বিষয় অনন্ত মহারাজ সাংসদ হওয়াটাকে কি ভাবে নেয় উত্তরবঙ্গ।
লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও (Rajya Sabha) বৃহস্পতিবার বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদী (PM Modi)। এদিনও আদানি-কাণ্ডে (Adani Row) সরব হওয়া বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ করতে পাল্টা আক্রমণের পথ নিয়েছিলেন তিনি। এদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'বিরোধীদের হাতে কাদা রয়েছে বলেই ছুড়ছেন। যত কাদা ছুড়বেন, ততই পদ্ম ফুটবে।' লোকসভার ভঙ্গিতেই রাজ্যসভায় এদিন সরব ছিলেন মোদী।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, 'নেহরুকে নিয়ে অবহেলা হলে কয়েকজন অভিযোগ করেন। গান্ধী-নেহরু পরিবারের কেউ নেহরু পদবি ব্যবহার করেন না কেন? রাজ্যের সরকার ফেলতে ৫০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।'
বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চকক্ষে বিরোধীদের হল্লাকে খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, 'আপনারা এখানে চেঁচামেচি করছেন। মানুষ আপনাদের কথা শুনছে না। আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। কংগ্রেসকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ওদের দুর্দশা বুঝতে পারছি। ভারতে কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি। উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছে কংগ্রেস।'
প্রসূন গুপ্ত: এক সপ্তাহ আগে এই পোর্টালে এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল সৌরভের সঙ্গে তৃণমূল কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ হচ্ছে নিয়মিত। ফের সোমবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হাজির হলেন নবান্নে, একান্ত সাক্ষৎকার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রশ্ন এবং জল্পনা ফের শুরু রাজ্য রাজনীতিতে! ফের একবার পাঠকদের মনে করিয়ে দেওয়া উচিত, আগামী দিনে কি নতুন পরিকল্পনা? সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন মহারাজ, এমন গুঞ্জন আছে। তবে এটাও বাস্তব, ভাগ্য বিড়ম্বনা তাঁর জীবনে এসেছে অনেকবার। আবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা। ১৯৯২-এ প্রথম ভারতীয় দলে নাম ওঠে তাঁর। কিন্তু মাত্র একটি ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিসের সঙ্গে, তারপর ৪ বছরের অপেক্ষা।১৯৯৬-এ ভারতীয় বোর্ডের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। জগুবাবুর স্নেহাশিসে, দাদা তাঁর নিজের দাদা স্নেহাশিসকে টপকে ফের সুযোগ পান ভারতীয় দলে। তারপর থেকে অন্তত ১০ বছর ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলার মহারাজকে।
সৌরভের সঙ্গে একসময় বাম মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ছিল। মমতা ক্ষমতায় আসার পর সৌরভের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যোগাযোগ নিয়মিত হয়। মমতার কল্যাণে সৌরভ বাংলা ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হন। এই সময়ে শোনা গিয়েছিল কেন্দ্রের সরকার বা বিজেপির সঙ্গে বিশেষ করে অমিত শাহর সঙ্গেও সুসম্পর্ক তৈরি হয় 'দাদা'র।
অনেককে পিছনে ফেলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিও হন তিনি। জোর গুঞ্জন ছিল একুশের ভোটে সৌরভ হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হতে পারেন। কিন্তু সৌরভ সূক্ষ্ম বুদ্ধি খাটিয়ে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে যান। এবার হয়তো সে কারণেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁর উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এমন গুঞ্জনও চলছে জাতীয় রাজনীতির অন্দরে। বিসিসিআই থেকে তাঁর বিদায় একপ্রকার নিশ্চিত হয়।
এরপর দ্রুত নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। দুর্গাপুজোর প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানে মমতার মঞ্চে সৌরভকে হাজির থাকতে দেখা যায়। তাঁকে দেখা যায় ফিল্ম ফেস্টিভেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সৌরভের খবরও নিয়মিত রাখতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি শিক্ষাবিদ সত্যম রায়চৌধুরীর ডাকে তাঁর সাহিত্য অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে বাংলা সংস্কৃতির ভূয়সী প্রশংসা করেন দাদা। এতেই জল্পনা আরও বাড়ে।
সোমবার ঠিক বিকেল ৪টের সময় হঠাৎই সৌরভ হাজির হন নবান্নের ১৪ তলায়। সূত্র জানাচ্ছে, দিদির ডাকেই দাদা নাকি গিয়েছিলেন রাজ্য সচিবালয়ে। কিন্তু কেন? নিজের বাণিজ্যের কাজে? সে তো ফোনেই সেরে ফেলা যায়, তবে? শোনা যাচ্ছে ২০২৩-র অগাস্টে বাংলা থেকে রাজ্যসভার একাধিক আসনে নির্বাচনের সম্ভাবনা। তবে কি দেওয়াল লিখন এখন থেকেই পড়া শুরু দাদা অনুরাগীদের?