১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে বুধবার ভার্চুয়ালি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে (Partha Arpita) আদালতে তোলা হয়। এদিনও জামিনের আবেদন খারিজ করে দু'জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান ইডি-সিবিআই (ED Court) আদালতের বিচারক। যদিও এই প্রথমবার কোর্টে জামিনের সওয়াল করেন ইডির হাতে গ্রেফতার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। একইভাবে 'আমি অসুস্থ, আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিন, জামিন দিন', কাঁদতে কাঁদতে এই আবেদন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তবে কান্নাকাটি বৃথা, ফের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে (Jail Custody) এই দুই অভিযুক্ত।
এদিন অবশ্য শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কাঁদতে কাঁদতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিচারকের কাছে বলেন, 'আমার চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। আমাকে জামিন দিন, বাঁচতে দিন। ইডি ৩০ ঘন্টা ছিল আমার বিরুদ্ধে কিছুই সংগ্রহ করতে পারেনি। আমি জানতে চাই কে এটা করেছে? ইডি আমার বাড়িতে আসুন। আমার বিধানসভা কেন্দ্রে আসুন। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত। ওর স্বাস্থ্য নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন।'
ভিডিও কলে হওয়া শুনানিতে পার্থর সওয়াল, 'আমি বৃদ্ধ মানুষ, একজন জনপ্রতিনিধি। অর্থনীতিতে স্নাতক। বহুদিনের রাজনীতিবিদ। আমার শারীরিক সমস্যা সংক্রান্ত ইএসআই জোকার রিপোর্ট জমা আছে দেখে নিতে পারেন।'
পার্থর পরেই এদিন কান্নায় ভেঙে জামিনের আবেদন করে অন্যতম অভিযুক্ত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'স্যার আমার বাড়িতে ইডি প্রায় ৩০ ঘন্টা ছিলেন। আমি জানি না কীভাবে তারা নগদ পেলেন। আমি বাথরুমে ছিলাম ৪ ঘন্টা, তারপর বেডরুমে ছিলাম।আমি জানি না কীভাবে এত নগদ উদ্ধার হল। আমার মা অসুস্থ, মায়ের সঙ্গে থাকতে হবে।' এই সওয়ালের পরেই অর্পিতাকে বিচারকের প্রশ্ন, 'টাকা কোথা থেকে পাওয়া গেল? আপনি কি মায়ের সঙ্গে থাকেন? ফ্ল্যাট কার নামে? আপনি টাকার বিষয়ে কিছু জানেন?'
এই প্রশ্নের জবাবে অর্পিতা জানান, ফ্ল্যাট আমার নামে। সেখান থেকেই টাকা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু এই নগদের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবসা আছে। সংস্থার নাম ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট। কিন্তু নগদ উদ্ধার নিয়ে আমি অবগত নই। আমার কাছে এটাই আশ্চর্যের যে আমার বাড়ি থেকে এতো নগদ কীভাবে উদ্ধার হল!
দুই অভিযুক্তের এই সওয়াল পালা শেষে ইডির যুক্তি, 'নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ড ১০০ কোটি টাকার। আরও বাড়তে পারে টাকার অঙ্ক। রাসবিহারী কানেক্টর এবং যামিনী রায় রোডে সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। অর্পিতার অ্যাকাউন্টে আরও ৫ কোটি টাকার হদিশ মিলেছে। যত তদন্ত এগোবে, এই টাকার অঙ্কের পরিমাণ আরও বাড়বে।'
ইডি আইনজীবী আদালতকে জানান, 'আমরা যেদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিলাম উনি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। উনি দলের সেকন্ড ইন কমান্ড। আমরা যে সিজার লিস্ট অনেক দিয়েছিলাম, ওটা উনি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তারপর এসএসকেএম-এ ভর্তি হয়েছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে আরও তিনটি কোম্পানি পাওয়া গিয়েছে। পিংলায় একটি স্কুলের খোঁজও পাওয়া গিয়েছে।' দুই তরফের এই সওয়াল-জবাবের পর এদিন প্রায় ঘণ্টা চারেক রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারক। অবশেষে সন্ধ্যা ৭টার পর জামিনের আবেদন খারিজ করে ফের দু'জনকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (APA) বিচারক বদল। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ ইডি-সিবিআই (ED-CBI Court) আদালতের নতুন বিচারক বিদ্যুৎ কুমার রায়ের এজলাসে হবে জামিন মামলার শুনানি। বিচারক জীবন কুমার সাধু অবসর নেওয়ায় এই রদবদল। বিচার ভবন সূত্রে এমনটাই খবর। এদিকে, বুধবার ভার্চুয়ালি পার্থ-অর্পিতাকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করা হবে। ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত এই দু'জন জামিনের আবেদন করেন কিনা? সেদিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য।
নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভার্চুয়াল শুনানির আবেদন করা হয় জেল কর্তৃপক্ষের তরফে। সেই আবেদন গ্রাহ্য করে এই দুই বিচারাধীন বন্দিকে ভার্চুয়ালি হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে আর্থিক তছরূপের মামলায় এখনও অবধি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছে ইডি। সেই তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এদিনের শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করতে পারেন ইডির আইনজীবী।
গত শুনানিতে যেকোনও শর্তে জামিন চেয়ে আদালতে দরবার করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও ইডির পাল্টা যুক্তিতে খারিজ হয়েছে সেই জামিনের আবেদন। বুধবার শুনানিতে কী ঘটতে পারে, সেদিকে তাকিয়ে রাজ্য রাজনীতি।
রাজ্যব্যাপী একাধিক দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তে জেলে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের একাধিক বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই (CBI)। এই পরিবেশে দুর্নীতি প্রশ্নে বিস্ফোরক মন্তব্য খড়দহের তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Minister Sovondeb)। তিনি জানান, আমি চাই না কেউ আমাকে ব্যবহার করে তাঁর সম্পদ বাড়াক। চাই না কেউ আমার গায়ে কালি ছিটিয়ে দিক। এত বয়স হয়েছে, এতদিন মাথা উঁচু করে বেঁচেছি।
তাঁর মন্তব্য, 'আপনারা যাকে ভোট দেবেন, তাঁর চালচলন, আচরণ দেখবেন না। আমাকেও দেখুন। আমি কাজ করছি না ক্ষমতা বলে সম্পদ বাড়াচ্ছি খেয়াল রাখুন। আমার কিছু ছিল না, একজন বাস কন্ডাক্টর, হঠাৎ করে ৫০ বিঘা জমির মালিক হয়ে গেল! এটা কী করে সম্ভব?' রাজ্যের মন্ত্রীর বক্তব্য, 'আমার বাবা আমাকে বিধায়ক, মন্ত্রী করেনি। দল করেছে, তাই কাউকে টাকা দেবেন না। কেনই বা টাকা দেবেন।'
২০১৪ টেট (TET) মামলার তদন্তে আদালতে ধমক খেল সিবিআই (CBI)। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ যে ১০ জন চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের জেরা ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এমনটাই নির্দেশ আদালতের। এই ১০ জনের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। এঁদের কারও মেধাতালিকায় নাম ছিল না। এমনটাই আদালতে সওয়াল করেন মামলাকারীর আইনজীবী। তাই এই ১০ জনকে জেরা করে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট হাইকোর্টে (Calcutta High Court) জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্যানেল সংক্রন্ত যে নথি জমা দিয়েছে, তা কার্যকরী নয়। শুনানিতে জানিয়ে দিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি নির্দেশে বলেন, ১৭ অগাস্ট বোর্ড প্যানেল সক্রান্ত নথি জমা দিয়েছে। কিন্তু যে দশ জনের বিরুদ্ধে প্যানেলে নাম না থাকা সত্বেও চাকরি পাওয়ার অভিযোগ, তা বোর্ডের আজকের জমা দেওয়া নথি থেকে স্পষ্ট নয়। মোট নম্বর-সহ তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত ব্রেকআপ-সহ কে কত নম্বর পেয়েছে, তা জানতে চায়। তাই এবার মামলারকারীর আইনজীবী ও বোর্ডের আইনজীবীরা এক সঙ্গে পর্ষদের অফিসে বসবেন। প্যানেলে ওই দশ অভিযুক্তর ব্রেকআপ-সহ নম্বর খতিয়ে দেখে যাচাই করবে। দেখা হবে সত্যিই পাস না করে তারা চাকরি পেয়েছে কিনা।'
বিচারপতি জানান, ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোর্ডের অফিসে উভয়পক্ষকে বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে। ২১ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ঠিক কী হয়েছে এদিনের শুনানিতে --
#২০১৪ টেটের ভিত্তিতে যে দুটি নিয়োগপ্রক্রিয়া সংগঠিত হয়েছিল তার মেধাতালিকা আদালতে পেশ করল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ
#২০১৬ এবং ২০২০ সালের প্রাথমিকের মেধাতালিকা পেশ
#চার ব্যাগ নথি পেশ পর্ষদের
#দু'টি ব্যাগ ২০১৬-র এবং দুটি ব্যাগ ২০২০-র
# নম্বর বিভাজন-সহ তালিকা পেশ করা হয়নি। তাই এই মুহূর্তে এই তালিকার এই মামলায় কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই: বিচারপতি
# সব নথি পর্ষদে ফেরত পাঠালেন বিচারপতি।
# যদিও আদালতের নির্দেশ ছাড়া আজকে পেশ করা নথি নষ্ট করা যাবে না: হাইকোর্ট
# এই মামলার সঙ্গে যুক্ত কোন নথিই নষ্ট করা যাবে না: হাইকোর্ট
#গত ১৭ অগাস্ট মেধাতালিকা পেশের জন্য পর্ষদকে নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
# আপাতত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডলের যে ১০ ঘনিষ্ঠ পাশ না করে চাকরি পেয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের নথি যাচাই হবে
# মামলাকারী এবং পর্ষদের আইনজীবীরা পর্ষদের অফিসে বসে এঁদের নথি যাচাই করবেন
# ১৬-ই সেপ্টেম্বর এর মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে
# নথি যাচাই করে নম্বর বিভাজন-সহ তালিকা বানাবেন মামলাকরির আইনজীবীরা। নথি সই করবেন পর্ষদের সচিব
# পরবর্তী শুনানি ২১ শে সেপ্টেম্বর।
এদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডল ঘনিষ্ঠ ১০ জনের মধ্যে ৮ জন সিবিআইয়ের কাছে গিয়েছেন ২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা চলছে। ২ জন আসেনি। এদিন আদালতকে এমনটাই জানায় সিবিআই
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (SSC Scam) দুর্নীতি-কাণ্ডে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ফের খারিজ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন। ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আরও ১৪ দিন জেলেই থাকতে হবে পার্থ অর্পিতাকে। যদিও এদিন অর্পিতার তরফে জামিনের আবেদন করা হয়নি। বুধবার দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পরে ঘণ্টাখানেক স্থগিত রাখা হয়েছিল রায়দান বেলা ৪টের কিছু পর আদালতে জানায়, খারিজ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন (Bail Plea)। আগামি ১৪ দিন অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতেই থাকবেন পার্থ-অর্পিতা।
এদিকে, এসএসসি নিয়োগ জামিনের আবেদন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। যেকোনও শর্তে জামিন চেয়ে আবেদন প্রাক্তন মন্ত্রীর আইনজীবীর। প্রয়োজন বাড়িতেই নজরবন্দি বা গৃহবন্দি থাকতে চান তিনি। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে এই আশঙ্কা করে জামিন চাইলেন তিনি। তবে বুধবার জামিনের আবেদন করেনি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
এদিন জামিনের শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী জানান, ইডি বলছে বেশ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি জীবনবিমায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম নমিনি হিসাবে আছে। এতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোন ভূমিকা নেই। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি আমার মক্কেলের নাম ব্যবহার করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে।
আইনজীবীর দাবি,পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ। অর্থোপ্যাডিকেল ও নেফ্রোলজিকাল সমস্যা রয়েছে। এভাবে থাকলে পার্থবাবুর মৃত্যু হতে পারে। জেলে শৌচাগারের সমস্যা রয়েছে। তাঁর মাটিতে বসে কাজে বারণ রয়েছে। কিন্তু জেলে মাটিতে শুতে হচ্ছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ডায়লিসিসের প্রয়োজন রয়েছে।
এই আবেদনের বিরোধিতা করেছেন ইডির আইনজীবী। তিনি জানান, ১০০০ কোটি দিয়ে সিম্বায়োসিস মার্চেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি বিক্রি হয়েছে। এই কোম্পানি থেকে ২.৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে পার্থ ও অর্পিতার নামে। পাশাপাশি সোনারপুর-রাজপুর পুরসভা এলাকার বিভিন্ন কোম্পানিতে সেই অর্থ ঢুকেছে। এই সংস্থার শেয়ার হোল্ডার পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। কালো টাকা সাদা করতে এই কোম্পানি তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে আরও তথ্য পাওয়া যাবে অভিযুক্তদের থেকে। আমরা দু'জনকেই জেল হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই ।
তিনি বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলে আসা এসএমএস প্রমাণ করছে জীবনবিমাগুলোর প্রিমিয়াম দিতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাকা। দু'জনের সোনারপুর এলাকায় প্রচুর সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। গোটা এই বিষয়ের মাস্টারমাইন্ড পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে আমরা জেল হেফাজত রাখতে চাই।
এই দীর্ঘ শুনানির পরেও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর করা আবেদনের বিরুদ্ধেই রায় দেয় আদালত।
এসএসসি নিয়োগ (SSC Scam) দুর্নীতি-কাণ্ডে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) জামিনের আবেদন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। যেকোনও শর্তে জামিন (Bail Plea) চেয়ে আবেদন প্রাক্তন মন্ত্রীর আইনজীবীর। প্রয়োজন বাড়িতেই নজরবন্দি বা গৃহবন্দি থাকতে চান তিনি। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে এই আশঙ্কা করে জামিন চাইলেন তিনি। তবে বুধবার জামিনের আবেদন করেনি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
এদিন জামিনের শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী জানান, ইডি বলছে বেশ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি জীবনবিমায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম নমিনি হিসাবে আছে। এতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোন ভূমিকা নেই। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি আমার মক্কেলের নাম ব্যবহার করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে।
আইনজীবীর দাবি,পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ। অর্থোপ্যাডিকেল ও নেফ্রোলজিকাল সমস্যা রয়েছে। এভাবে থাকলে পার্থবাবুর মৃত্যু হতে পারে। জেলে শৌচাগারের সমস্যা রয়েছে। তাঁর মাটিতে বসে কাজে বারণ রয়েছে। কিন্তু জেলে মাটিতে শুতে হচ্ছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ডায়লিসিসের প্রয়োজন রয়েছে।
এই আবেদনের বিরোধিতা করেছেন ইডির আইনজীবী। তিনি জানান, ১০০০ কোটি দিয়ে সিম্বায়োসিস মার্চেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি বিক্রি হয়েছে। এই কোম্পানি থেকে ২.৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে পার্থ ও অর্পিতার নামে। পাশাপাশি সোনারপুর-রাজপুর পুরসভা এলাকার বিভিন্ন কোম্পানিতে সেই অর্থ ঢুকেছে। এই সংস্থার শেয়ার হোল্ডার পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। কালো টাকা সাদা করতে এই কোম্পানি তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে আরও তথ্য পাওয়া যাবে অভিযুক্তদের থেকে। আমরা দু'জনকেই জেল হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই ।
তিনি বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলে আসা এসএমএস প্রমাণ করছে জীবনবিমাগুলোর প্রিমিয়াম দিতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাকা। দু'জনের সোনারপুর এলাকায় প্রচুর সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। গোটা এই বিষয়ের মাস্টারমাইন্ড পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে আমরা জেল হেফাজত রাখতে চাই।
সোশাল মিডিয়ায় আকর্ষণীয় প্রোফাইল। নির্দিষ্ট একটি সংগঠনের হয়ে কখনও দুবাইয়ে কখনও বা তিনি ইজরায়েলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি নিজেকে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি হিসেবেও তুলে ধরেছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সেই মিডলম্যান মধ্যমনি পার্থ ঘনিষ্ঠ এই প্রসন্ন রায়কে ৭ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মিলছে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের একাধিক সম্পত্তির হদিস।
নিউটাউনের রবিরশ্মি ভিলার ১২ নম্বরে মাঝে মাঝেই আসতেন প্রসন্ন রায়। তবে এখানকার মানুষরা তাকে চিনতেন রাকেশ নামে। প্রশ্ন একটাই এই রাকেশ আর প্রসন্ন দুজনেই কি এক ব্যক্তি? তাই যদি হয়, তাহলে এই ভিলার মালিকানা কি ছিল প্রসন্ন রায়ের নামে? নাকি এখানেও রয়েছে অন্য সমীকরণ? উত্তরের খোঁজে সিবিআই। পার্থ ঘনিষ্ঠের কুবের সম্পত্তি চমকিয়েছে বাংলাকে। গাদিয়াড়ার পর এবার বাগনান। টাইলস কারখানার হদিস প্রসন্ন রায়ের। সূত্র বলছে ২০১৫ সালে ৩০ বিঘা জমির ওপর এই টাইলস কারখানাটি প্রসন্ন রায় কিনেছিলেন ১২ কোটি টাকায়। কেনার পরে কোম্পানিটির নাম দেয় সালেসার টাইলস প্রাইভেট লিমিটেড। নিউটাউন প্রাইড হোটেলে রয়েছে পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্ন কুমার রায়ের সালেসার টাইলস প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস।
প্রাইড প্লাজার প্রসন্ন রায়ের অফিসে পৌঁছেছিল আমাদের প্রতিনিধি। চোখ ধাঁধানো ইন্টেরিয়ার ডেকরেশন। এই অফিস থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই হোটেলের ৫ তলায় রয়েছে পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্নর পন্টিয়াক মার্চেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস। সেখান থেকে একাধিক ব্যবসা চালাতেন প্রসন্নবাবু। এছাডা়রাও এই হোটেলে রয়েছে একাধিক অফিস, যেখানে প্রসন্নবাবু নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এই হোটেলের ৪ তলায় ৪১৫ নম্বরে রয়েছে সালসার টাইলস প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস।
১৮০/১ বাঙুর এ্যাভেনিউ। এই ঠিকানাটিকে দেখানো হয়েছে দৃষ্টিকোন ইনফাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস হিসেবে, যার ডিরেক্টর ছিলেন প্রসন্ন রায়। প্রাথমিক খোঁজের পর দেখা গেল এই ঠিকানায় বসবাস করেন মহেন্দ্র আগরওয়াল নামে এক ব্যক্তি। এই মহেন্দ্রবাবুর কাছ থেকে রাজারহাট নিউটাউনে প্রায় ২০০ কাঠার বেশি জমি কেনেন প্রসন্ন। এবং এরপর দৃষ্টিকোন ইনফাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামে রিয়েল এস্টেটের একটি ব্যবসা খোলেন। যার অফিসের ঠিকানা দেখানো হয়েছে মহেন্দ্র আগরওয়ালের ঠিকানাতে। আর এই ঘটনাটি ঘটেছে মহেন্দ্রবাবুকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে। মহেন্দ্রবাবুর থেকে জমি কিনে তারই ঠিকানাটিকে কেন প্রসন্ন কুমার রায় নিজের ব্যবসার ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করছিলেন? উঠছে প্রশ্ন।
আমরা কথা বলেছিলাম মহেন্দ্রবাবুর সঙ্গে। তিনি জানান এক দালাল মারফত আলাপ হয় প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে। এরপর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের পর তার ঠিকানাটিকে প্রসন্ন বাবু নিজের অফিসের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এখানেই শেষ নয়। মহেন্দ্রবাবুর আরও অভিযোগ তার ২০৬ লেকটাউনের ঠিকানাটিতেও তার অনুমতি ছাড়া প্রসন্ন রায় একটি অফিস খুলেছেন। যদিও সেই অফিসটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, খোঁজ মিলেছে মধ্য হাটগাছায় প্রসন্ন রায়ের দুটি ভেরির। ১৬ বিঘা জমির ওপর এই ভেরি দুটির দেখাশোনা করতেন কনক মণ্ডল। আমাদের ক্যামেরার সামনে কণকবাবু জানান তিনি বলাকা আবাসনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় প্রসন্নর। কণকবাবু আরও জানান, এই দুটি ভেরি প্রসন্ন দান হিসেবে পেয়েছেন। কীসের দান? প্রসন্ন বাবুকে এই দুটি ভেরি দান করেছিলেন কে? খোঁজ চলছে।
বলাকা আবাসনের বাসিন্দা হিসেবে দুর্গাপুজোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন প্রসন্ন বাবু। তিনি সিবিআই হেফাজতে। তবে পুজোয় তার কোনও প্রভাব পড়বে না। জানালেন পুজো কমিটির সভাপতি। ট্রাভেলিংয়ের ব্যবসা ছিল। বন্ধু হিসেবেই দেখত এলাকার মানুষ। তার এত ব্যবসার কথা বিন্দুবিসর্গ জানতেন না তারা। আপাতত সিবিআই হেফাজতে প্রসন্ন রায়। তার কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। কী হতে চলেছে তদন্তের ভবিষ্যত্ উত্তর দেবে সময়।
আরও বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির (property) হদিস পার্থ (Partha Chatterjee) ঘনিষ্ঠ প্রসন্নকুমার রায়ের (Prasannakumar Roy)। এবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রসন্ন রায়ের হোটেলের (hotel) খোঁজ মিলল উলুবেড়িয়া (Uluberia) গাদিয়াড়ায়। প্রায় দুই থেকে তিন বছর আগে এই হোটেলটি কিনেছিলেন প্রসন্ন। উলুবেড়িয়া গাদিয়ায় হোটেলটির নাম বর্তমানে চলন্তিকা রিসোর্ট। শ্রী দুর্গা ডেলকম প্রাইভেট লিমিটেড নামে। হোটেলে এসে খোঁজখবর নিলে জানা যায়, হোটেলের মালিককে কখনও দেখেননি কর্মচারীরা। বর্তমানে কে ম্যানেজার, তাও তাঁরা জানেন না। তবে হোটেল নেওয়ার পর থেকে প্রায় সময়ই নামিদামি গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন গেস্ট আসতো এখানে। গাদিয়াড়া চলন্তিকা রিসোর্টটি প্রায় সাড়ে আট থেকে দশ বিঘা জমির উপর বিলাসবহুল তৈরি।
এছাড়াও, কয়েক কাটা বা কয়েক বিঘা নয় ১৮৩ একর জায়গাজুড়ে রিসোর্ট এবং খেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছিল। এই সমস্তটাই বেআইনিভাবে জলাভূমি ভরাট করে করা হয়েছিল বলে জনস্বার্থ মামলা হয়, উচ্চ আদালতে এরপরই নির্দেশ দেওয়া হয় বিধাননগর পুরনিগমকে যাতে এই জলাভূমিগুলিকে উদ্ধার করা হয়। এই মুহূর্তে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিসের উপস্থিতিতে বিধাননগর পুর-নিগম সেই জলাভূমিগুলিকে পুনরুদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে। আর এই রিসোর্ট এবং খেলার মাঠ তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন প্রসন্নকুমার রায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী রাজীবলাল ধর। রাজীবলাল ধর এর আগে সিআইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিল, প্রাইমারি শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণার চক্রে মাথা ছিল বলে অভিযোগ রাজীব লাল ধরের বিরুদ্ধে।
বিধাননগর পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড ছয়নাবি কুলিপাড়া এলাকায় শুধুমাত্র দুর্নীতির টাকা খাটিয়ে সম্পত্তি বিস্তার নয় বেআইনিভাবে একাধিক জলাভূমিও ভরাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এখানে কাজ করতে আসা কর্মীদের দাবি, দীর্ঘ বছর ধরে চলছে এই কাজ, জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে, সেখানে রিসোর্ট এবং খেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছে। এগুলো কি কারও চোখে পড়লো না পুলিস-প্রশাসন বা পুরনিগম আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিদের।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে সাড়ে চার লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। গঙ্গারামপুর থানায় এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে৷ এই মামলায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল মাথা হিসাবে নাম উঠে আসে রাজীব লালধর নামে এক ব্যক্তির। তাকেও পরবর্তী সময় অর্থাৎ চলতি বছরের মার্চ মাসে নিউটাউন থেকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। আর এই রাজীব লাল ধর তিনি হলেন প্রসন্নকুমার রায়ের ঘনিষ্ঠ। বিধাননগরের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১৮৩ একর জলাভূমি ভরাট করে রিসোর্ট এবং খেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছিল, সূত্রের খবর, রাজিব লাল ধর এর এই রিসোর্ট এবং খেলার মাঠ তৈরি করার মূল দায়িত্বে ছিল।
শিক্ষক নিয়োগ (Teacher Recruitment) দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের (CBI Arrest) হাতে গ্রেফতার আরও এক মিডলম্যান প্রসন্ন রায়। এই অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ভাগ্নি জামাই। প্রসন্নকে, ধৃত প্রদীপ সিংয়ের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার সম্ভাবনা। সিবিআই সূত্রে খবর, প্রদীপ সিংকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পারেন প্রসন্নকুমার রায়ের সল্টলেক জিডি-২৫৩ ফ্ল্যাটে গাড়ি ভাড়ার দেওয়ার কাজ করতেন প্রদীপ। এরপরেই তদন্তকারীরা প্রসন্নকুমারকে গ্রেফতার করেন।
জানা গিয়েছে, নিউটাউনের বলাকা আবাসনে B-6 2/3-এ ফ্ল্যাট রয়েছে প্রসন্নর। পাশাপাশি কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স থানার অধীনে অভিজাত ভিলা রয়েছে তাঁর। রাজারহাট ধারসাইয়ে রয়েছে বাগান বাড়ি-সহ একাধিক জমির খোঁজ মিলেছে তদন্তকারী আধিকারিকদের। তদন্তকারী আধিকারিকরা নিশ্চিত নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিপুল অংকের টাকা সম্পত্তি ক্রয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
শুক্রবার প্রসন্নকে গ্রেফতারের পর রাখা হয়েছে নিজাম প্যালেসে। আজ তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য। এরপর আলিপুরে সিবিআই এর বিশেষ আদালতে তোলা হবে তাঁকে।
দলের সঙ্গে ছিলাম এবং দলের সঙ্গে আছি। শনিবার ফের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। মেডিক্যাল পরীক্ষার পর তাঁকে যখন ফের জেলে ফেরানো হচ্ছিল, তখনই সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্যে এই মন্তব্য করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার বিকেলে যখন তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়, তখন অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন শরীর ভালো নেই। এদিকে, তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিবের এই মন্তব্য ঘিরে শোরগোল পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, 'তদন্ত সম্পূর্ণ হয়ে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয় এলে, নিশ্চয় দল তাঁকে সম্মান ফিরিয়ে দেবে। এমনটা আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব আগেই জানিয়েছে। কেউ যদি বলি আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আছি, তাতে দলের অস্বস্তি কেন হবে? দল পাল্টা কী অবস্থান নিয়েছে, বা কী বলছে সেটাই বিবেচ্য। তৃণমূল ইতিমধ্যে অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে অবশ্যই দল এবং মন্ত্রিসভা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।'
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগের দিন বলছিলেন কেউ ছাড় পাবে না। তাই শাসক দল আকার-ইঙ্গিতে বলে দিয়েছে, যেহেতু টাকা পাওয়া গিয়েছে তাই সরাসরি বলতে পারেনি, যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দল আছে, এবং পাল্টা উনি বললেন আমি দলের সঙ্গে আছি।' বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ কটাক্ষের সুরে বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো উনার উপর থেকে ভরসার হাত তুলে নিয়েছেন। কেউ একবারও ওর না করছে না। উনি তো বলবেনই দলের সঙ্গে আছি এবং দলের সঙ্গে থাকবো। কিন্তু দল কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছে? এখন তো শুধু ইডি-সিবিআই সঙ্গে আছে।'
পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তৃণমূল (TMC) পরিচালিত নিউ ব্যারাকপুর (New Barrackpur) পুরসভার চেয়ারম্যান। দলীয় এক সভায় প্রবীর সাহা জানান, চায়ের দোকানে তোলপাড় করে লাভ নেই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় অন্যায় করেছে তৃণমূল তাকে কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছে। শরীরের কোনও অংশে ক্যান্সার হলে কেটে বাদ দিয়ে দিতে হয়। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় এখন রাজ্য রাজনীতি। প্রবীর সাহা যে দলের নেতা, সেই তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র আবার মন্তব্যে নারাজ।
কুণাল ঘোষকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি খানিকটা রসিকতার সুরে বলেন, 'আমি অঙ্কোলজিস্ট বা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ নয়। তাই এই বিষয়ে মন্তব্য করব না। বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আবার সুর চড়া। তিনি বলেন, 'উনি কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন খুব খুব ভালো কথা। কিন্তু উনি নিজে পুলিসকে সরিয়ে দিন, পুরসভার যারা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, তাঁরা গিয়ে থাপ্পড় মেরে আসবে।'
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে বলেন, 'একটা ক্যান্সার বড় হয়ে ফুলে গিয়েছে তাই দেখা গিয়েছে। কিন্তু ক্যান্সারের একাধিক স্টেজ রয়েছে, স্টেজ ওয়ান, স্টেজ টু। পুরো দলটাই ক্যান্সারে আক্রান্ত, লুঠের ক্যান্সার হয়েছে। মন্ত্রী ধরা পড়েছেন, জেলা সভাপতি ধরা পড়েছেন।'
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার পুরপ্রধানের। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে ক্যানসার (cancer) বলে সম্বোধন নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার পুরপ্রধান প্রবীর সাহার। সোশ্যাল মিডিয়ায় (social media) ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও, তাতে দেখা যাচ্ছে নিউ বারাকপুর (New Barrackpore) পুরসভার পুরপ্রধানের এমন মন্তব্য ঘিরেই শোরগোল পড়েছে। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ক্যালকাটা নিউজ ডিজিটাল।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ শে অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস, আর সেই প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে নিউ ব্যারাকপুর শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তুতি সভা করা হয়। সেই মঞ্চেই পুর চেয়ারম্যান প্রবীর সাহার মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে শোরগোল। তিনি সেদিন সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, "চায়ের দোকানে তোলপাড় করে লাভ নেই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় অন্যায় করেছে তৃণমূল তাকে কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছে। শরীরের কোনও অংশে ক্যান্সার হলে কেটে বাদ দিয়ে দিতে হয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই ক্যান্সার, তাই দল বাদ দিয়ে দিয়েছে। দল দলের মত চলছে।
ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ক্যালকাটা নিউজ ডিজিটাল
প্রসঙ্গত, তৃণমূল প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরই অস্বস্তিতে শাসক দল। এরপরই তৃণমূলে তাঁর সব পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে। মমতা ক্যাবিনেট থেকেও সরানো হয়েছে তাঁকে।
রবিবার, ১৪ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বেহালায় যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata banerjee)। প্রতি বছর তিনি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু এ বছর চিত্রটা ভিন্ন। এই বেহালার (Behala) এক বিধানসভা আসনের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) আপাতত জেলবন্দি। প্রতিবার বেহালার এই অনুষ্ঠানে 'দিদি'র পাশেই দেখা যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে আপাতত তিনি দলের কোনও পদে নেই। তাঁকে সরানো হয়েছে রাজ্য ক্যাবিনেট থেকে।
তাই তৃণমূল তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার একদা নাম্বার দুয়ের অনুপস্থিতিতে বেহালাবাসীকে কী বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী? সেদিকে তাকিয়ে বিরোধীরা। এদিকে, জানা গিয়েছে প্রেসিডেন্সি জেলে এদিন পরিদর্শন করল ৮ জন ডাক্তারের একটি টিম। টিমের সদস্যরা সকলেই এসএসকেএমের চিকিত্সক বলে জানা গিয়েছে। মূলত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখতেই এই মেডিক্যাল টিম বলে জেল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে জেলেরই অন্য সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই আছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
খাওয়াদাওয়াও করছেন স্বাভাবিকভাবেই। গত দুদিনে পায়ের ব্যথা কিছুটা বেড়েছে। তাই মাঝেমধ্যেই সেলের বাইরে হাঁটাহাঁটি করছেন।
জেলে একদিন মাছ, একদিন মাংস, একদিন ডিম, একদিন সোয়াবিন ও বাকি দিন নিরামিষ খাচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পড়ছেন রামকৃষ্ণদেবের কথামৃত। অর্থাত্, টাকা মাটি মাটি টাকার সেই মূল মন্ত্রকেই এখন জেলের নিস্তরঙ্গ সেলে নিজের সঙ্গী করে নিয়েছেন পার্থবাবু।
সূত্রের খবর, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পার্থর খাওয়ার আবদারে প্রায় প্রতিদিনই দুবেলা ভাত দিতে হচ্ছে। কখনও আবার বিকালের দিকে চপ, বেগুনি এনে দিতে হচ্ছে জেলের ক্যান্টিন থেকে অনেক জোরাজুরিতে। এর মধ্যে একদিন খাসির মাংসের ঝোল ও ভাত দিতে হয়েছে তাঁকে। যদিও গতকাল রাখি পূর্ণিমার দিন জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাতে আমিষ পড়েনি। গতকাল তাঁর দুপুরের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল এবং দু-রকমের তরকারি। যা খাবার দেওয়া হয়েছে সবটুকুই খেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মহাসচিব। পাশাপাশি তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
প্রসূন গুপ্ত: প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের ডাকসাইটে নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর টেলিভিশনে ঘন্টার পর ঘন্টা খবর ছিল তাঁকে নিয়ে। খবরের কাগজে পাতার পর পাতাজুড়ে পার্থ-অর্পিতার খবর। প্রাক্তন মন্ত্রীর কতজন বান্ধবী, তাঁদের কোথায় বাড়ি, আরও কত টাকা উদ্ধার হল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখানেই শেষ নয় পার্থ কতটুকু বললেন ইডিকে, পার্থ অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরায় কী বেরোল। এই ধরনের খবরে ঝোঁক থাকতো আম আদমির। ট্রাম-বাস, ট্রেনে আলোচনার বিষয়বস্তুও তাঁরাই। পার্থ কী খেলেন, কোথায় শুলেন এই করতে করতে পার্থর খবরে ম্রিয়মান হয়ে গেলো অনুব্রত-কাণ্ডে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে শুধুই অনুব্রত। বাড়ি ঘিরে নিয়ে প্রথমে আটক, তারপর বিকেলের দিকে গ্রেফতার। লহমায় লহমায় পরিবর্তন হলো অনুব্রত-কাণ্ড। বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরে। তারপর এদিন সকাল থেকে মাত্র একটাই খবর, অনুব্রত সকালে ডায়বেটিক ডায়েট মেনে চিনি ছাড়া চা, বিস্কুট এবং মুড়ি খেয়েছেন। এরপর আর খবর নেই, রহস্য এখানেই কেন অনুব্রতর অবস্থান পাওয়া যাচ্ছে না?
পার্থ ও অনুব্রতর মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রথমত অনুব্রত সংগঠন করা নেতা। বীরভূম জেলার পাতা নড়তো না তাঁর আদেশ ছাড়া। রাঙা মাটির দেশে একপ্রকার 'মুকুটহীন সুলতান' ছিলেন তিনি। এই জনপ্রিয়তা পার্থর কোথায়? পার্থকে গ্রেফতারের সঙ্গে ইডির হাতে এসেছিলো কোটি কোটি টাকার বান্ডিল এবং মহিলা বান্ধবীর প্রসঙ্গ। এই অবস্থান পার্থর বিপক্ষে গিয়েছে। দলও তাঁর দায় ঝেড়ে ফেলেছে। অনুব্রতর ক্ষেত্রেও দলের অভিমত অপরাধ প্রমাণ হলে রাজ্য রাজনীতির কেষ্ট মণ্ডলকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত অপরাধের দায়িত্ব নেবে না দল। কিন্তু হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে অনুব্রতর নাম আসা সত্বেও তৃণমূলের হাজার হাজার সমর্থক তা মানতে নারাজ। তাঁরা ক্ষিপ্ত, তাঁদের বক্তব্য মদন মিত্রদের মতোই অনুব্রত ফেঁসে গিয়েছেন। দুটি ঘটনাই দলের উচ্চ নেতাদের নজরে এসেছে।
আজ এবং আগামীকাল এই নিয়ে রাজ্যের জেলায় জেলায় আন্দোলনে নামছে তৃণমূল যদিও প্রসঙ্গ অনুব্রত নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা।