রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayet Election) প্রায় ৭৫ হাজার মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ৫ দিন। এই সময়সীমা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট (HighCourt)। এই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম (TS Sibagnyam) এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ- "পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে সময়সীমা দিয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এই সময়সীমা আরও বাড়ানো উচিত"। তার পাশাপাশিই, পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে রাজ্যই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়ে দিল উচ্চ আদালত।
উল্লেখ্য, আগামী ৮ জুলাই-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। কমিশন জানিয়েছে, ১৫ জুন পর্যন্ত নমিনেশন জমা দেওয়া যাবে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত মনোনয়ন পেশের সময়। আর তা নিয়েই আপত্তি জানিয়েছে বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি। এবার দুই বিরোধীর পাঁচ দফা আবেদনের শুনানিতে শুক্রবার এ কথা জানাল কলকাতা হাই কোর্ট।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ যে, এক দফায় রাজ্যের এতগুলি আসনে ভোট করালে সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্যই সুষ্ঠুভাবে হতে হবে, এবং এটা মাথা রাখতে হবে যে সিভিক পুলিশকে এই ধরনের কোনও নির্বাচনের কাজে লাগানো যাবে না। সে দিকটাও অবশ্যই রাজ্যকে মাথায় রাখতে হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই একাধিক দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে বিজেপি (BJP)। বৃহস্পতিবার রাজীব সিনহার (Rajib Sinha) সাংবাদিক বৈঠকের পরই জেলা এবং বিভাগীয় স্তরের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। ওই বৈঠকেই আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। বিজেপির অভিযোগ, মনোনয়নের জন্য মাত্র ৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে হবে। এমনই একাধিক দাবি জানিয়ে শীঘ্রই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।
বিজেপি সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটের বিষয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতৃত্বের উপরই ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তারপরেই আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'আমরা চাই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে ভোট হোক। শান্তিপূর্ণ ভোট, রক্তপাতহীন ভোট চাই। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় দেওয়া দরকার। এটা ঠিক হয়নি। তাই আমরা আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayet Election) কবে, তা নিয়ে দফতর কিছু জানে না। সবটাই সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে হবে। বুধবার রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার (Commisioner) হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এমনই জানালেন রাজীব সিনহা (Rajib Sinha)। কয়েকবছর আগে রাজ্যের মুখ্যসচিব ছিলেন তিনি।
রাজীবের দাবি, রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ করে রাজ্য সরকার। তাঁদের কাছে তারিখ জেনে তা ঘোষণা করবে কমিশন। কমিশনের কাজ হবে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। রাজীব সিনহা সবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এখনও নির্বাচনের দিনক্ষণ তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। বুধবার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজীব বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে, তাঁদের মতামত জেনে কমিশন একটি তারিখ ঘোষণা করে।
গত ২৮ মে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার পদের মেয়াদ শেষ হয়েছিল। রাজ্য সরকারই নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাজীব সিনহার নাম প্রস্তাব করে। প্রাথমিকক ভাবে রাজভবন তাতে আপত্তি দেখায়। পরে রাজভবন তাতে সিলমোহর দেয়। যদিও এই অনুমতি দিতে রাজভবনের কিছুটা সময় লাগে।
মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) পঞ্চায়েতের ভোটের (Panchayet Election) প্রার্থীপদ নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তাঁর জেরেই বোমাজিতে মৃত্যু হল তৃণমূল (TMC) সদস্যের ভাইয়ের। রবিবার রাতে এঘটনার পর এখনও উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ব্লকের পাপড়দহ গ্রাম। পুলিস জনিয়েছে এ ঘটনায় বোমাবাজিতে প্রাণ হারিয়েছেন, তৃনমূল কর্মী আমির আলি শেখ (৫০)। পুলিস আরও জানিয়েছে এ ঘটনায় এখনও অবধি ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সফিরুল বাসার, বিরাজ আলম দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা ঘটনা জানার চেষ্টা করছে পুলিস। ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে চার বালতি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিস। যদিও এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধেও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটার প্রার্থীপদ নিয়ে স্থানীয় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত আগেই ছিল। রবিবার ওই ঝামেলা আরও প্রকট হয়। এরপর একপক্ষ বোমাবাজি শুরু করে রবিবার সন্ধ্যা থেকেই। তৃণমূলের নব্য অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে এই যুদ্ধ বেশ কয়েকদিন ধরেই। এমনটা জানাচ্ছেন স্থানীয়রাই। এই বোমাবাজিতে পাপড়দহ গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য জাহিরুদ্দিন শেখের ভাই আমির আলী শেখের মৃত্যু হয়। আর এই ঘটনায় অভিযোগের তীর উঠেছে বিপ্রসেখর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদ্য নিযুক্ত অঞ্চল সভাপতি গোলাম গাউসের বিরুদ্ধে। এঘটনায় স্থানীয় সিভিক ভলান্টিয়ার ইব্রাহিম শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এলাকায় বোমা মজুত করতে সাহায্য করে ওই সিভিক।
এ ঘটনায় যেমন পুলিসের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠছে, তেমন প্রশ্ন উঠছে যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক ও মমতা বন্দোপাধ্যায় শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ ভোট করার বার্তা দিচ্ছেন। তবে এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে? প্রশ্ন উঠছে পঞ্চায়েতের আগে যদি এ পরিস্থিতি হয় তবে ভোটের সময় রাজ্যের সন্ত্রাস কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে?
পঞ্চায়েতের (Panchayet Election) আগে বীরভূম (Birbhum) যেন বারুদের তলায়। কাঁকড়তলা, দুবরাজপুর, খয়রাশোলের পর এবার সাঁইথিয়া ও মল্লারপুর থেকে প্রচুর পরিমাণে বোমা উদ্ধার করল পুলিস। রবিবার এই জেলার দুই জায়গা থেকে প্রায় ১০০টি বোমা উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে প্রায় ৭০টি নিষ্ক্রিয় করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিস।
জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়ার চাঁদপাড়ার একটি ঝোপের আড়ালে বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। স্থানীয়রা তা দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিসকে খবর দেয়। সেখান থেকে ৭০টি হাত বোমা উদ্ধার করে পুলিস।
অন্যদিকে, মল্লারপুরের জোমুনি গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকেও প্রচুর পরিমাণে বোমা উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, ওই বাড়ির মালিক মন্টু শেখ। যিনি মহারাষ্ট্রে থাকেন। সেই বাড়ি থেকে ১৫টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি বোমার খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিস।
পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayet Election) আগে ফের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে টানা ৩২ ঘণ্টা ধরনায় বসেছেন মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার মেয়ো রোডে (Mayo Road) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়েছে এই ধরনা। এই মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে রয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharjee)। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টায় এই ধরনা প্রত্যাহার করা হবে। অর্থাৎ দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা এই ধরনা কর্মসূচি চলবে।
এর আগেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ও বকেয়া আদায়ের দাবিতে রেড রোডে দীর্ঘ দু'দিন ধরনা কর্মসূচি গ্রহণ করে তৃণমূল। ধরনা কর্মসূচি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির দিকে আঙুল তুলে, বিভিন্ন কাজের খতিয়ান দেখান এবং বকেয়ার দাবি করেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচির মাধ্যমে বিজেপিকে তাক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি সাংসদের দল দিল্লি যান, কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী সঙ্গে দেখা না হলেও, ওই দফতরের সচিবের সঙ্গে দেখা করেন ওই দল এবং বৈঠক করে একটি লিখিত আবেদন জানান। যে আবেদনের মাধ্যমে বাংলার বকেয়া টাকার দাবি করা হয়। তাতে অবশ্য কোন লাভ হয়নি এরপরে, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বিভিন্ন সভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ান। এবং কেন্দ্রীয় বকেয়ার দাবি জানান।
ব্যালট, কাগজ সহ, পঞ্চায়েতকে (Panchayet Election) মাথায় রেখে বেশ কিছু প্রস্তুতি আগেই শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। এবার পঞ্চায়েত ভোটকে নজরে রেখে আরও তৎপর রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশন এবার প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক (Administration) নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৮ এপ্রিল জেলাশাসকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছে। আরও খবর, সব জেলার জেলাশাসকদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ১৮ এপ্রিল দুপুর ২টো থেকে এই বৈঠক শুরু হবে। সরকারিভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন কবে হবে তা এখনও পর্যন্ত জানানো না হলেও এই বৈঠকের মাধ্যমে মনে করা হচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল।
কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র নিয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ প্রকাশ হওয়ার কথা ২৮ এপ্রিল। বিধি অনুযায়ী তার ১২ দিনের মধ্যে ভোট করানো সম্ভব নয়। কমিশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ভোট করানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথমে ত্রিস্তরীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জানিয়েছে রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার, সংশ্লিষ্ট সরকারের অধিকৃত সংস্থা পুরসভা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের ভোট কর্মী হিসেবে বাছা যেতে পারে। ভোট কর্মীদের দলে যাতে অন্তত একজন করে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কর্মী থাকেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে জেলাগুলিকে।