২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে নেতাজির নাম। মঙ্গলবার নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে তাঁর মৃত্যুরহস্য নিয়েই প্রশ্ন তুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের জন্য লড়াই করতে গিয়ে উনি কোথায় হারিয়ে গেলেন, তা আমরা আজও জানতে পারলাম না।
নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে তোলা মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই সুর মেলালেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর দাবি, নেতাজির অন্তর্ধানের সমস্ত রহস্য প্রকাশ্যে আনতে হবে।
নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার দাবি, দুর্নীতির ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূলের জমানায় চাকরি চুরি, গরিব মানুষের রেশনের চাল চুরি সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের সাক্ষী থেকেছে এই বাংলা। যা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে বাংলার শাসকদল। এই অবস্থায় দুর্নীতির ইস্যু থেকে মানুষের নজর ঘোরানোর জন্যই কি নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী?
গোটা দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৭ তম জন্মবার্ষিকী। পতাকা উত্তোলন ও মাল্য়দানের মাধ্যমে নেতাজি স্মরণ করছেন দেশবাসী। আজকের দিনটা যেন একটা উৎসবের দিন সমস্ত স্কুল-কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলির জন্য।
মঙ্গলবার সকালে বালুরঘাটে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপি কার্যালয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। জন্মজয়ন্তীতে অবহেলায় নেতাজীর মূর্তি, ঝাড়ু পোছা দিয়ে নিজ হাতে পরিষ্কার করে মাল্যদান করলেন দিলীপ ঘোষ। পাশাপাশি খড়্গপুরের পুরাতন বাজার মোড়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করেন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। সেই সঙ্গে ঝাড়ু হাতে এবং জল পোছা দিয়ে পরিষ্কার করেন নেতাজির মূর্তি ও তার চারপাশ।
মঙ্গলবার সকাল ৯ টা ৩০ নাগাদ তারকেশ্বর ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৭ তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে তারকেশ্বর স্কুল রোড এলাকায় নেতাজির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে। এরপর ব্যবসায়ী সমিতির তরফ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা তারকেশ্বর শহরে পরিক্রমা করে।
রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক ভিটেতে জন্ম জয়ন্তী বর্ষ পালিত হয় খুব ধুমধামের সহিত। সকাল সাড়ে ন'টায় নেতাজির পৈতৃক ভিটেতে পাতাকা উত্তোলন করে। আজকের বিশেষ দিন উপলক্ষে তাঁর পৈতৃক ভিটের দরজা খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের জন্য। সারা দেশের সঙ্গে মালদহে ধুমধাম করে পালিত হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম দিবস।
২১ জুলাইয়ের সভার আগে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে থেকে পাকড়াও নূর আমিন নামে এক যুবক। পুলিশের প্রাথমিক জেরায় নূর জানিয়েছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। সতর্ক করতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন তিনি।
নূরের স্ত্রী পুনম বিবি শুক্রবারই জানান, মানসিক অসুস্থতা আছে তাঁর স্বামীর। পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁর মানসিক রোগের চিকিৎসাও চলছে। তাঁর গাড়ি থেকে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র আসল নয় বলেও দাবি করেছেন নূরের স্ত্রী। তবে তাঁর গাড়িতে বিএসএফ, আইবি-সহ একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার ভুয়ো পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে। আইপিএস লেখা বেল্টও পাওয়া গিয়েছে। কী কারণে এসব রেখেছিল, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ, হাজরা রোডের উপর কালো গাড়ি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশকর্মীদের। নূরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ আধিকারিকরা। প্রথমে নিজেকে বিএসএফের ডিজি বলে পরিচয় দেন। একটি ভোজালি, একটি কলকে ভর্তি গাঁজা, দুটি ভুয়ো পরিচয়পত্র, একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি আইপিএল লেখা বেল্ট উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই কালীঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অস্ত্র আই-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুকুর (Pond) থেকে ভাসমান এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মৃতদেহ (Dead Body) উদ্ধার। নেতাজীনগর (Netaji Nagar) থানা এলাকার রানীকুঠি পুকুরের ঘটনা। ঘটনাস্থলে পুলিস (Police) এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। পুলিস মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। তবে এখনও ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। পুলিসের অনুমান, ওই ব্যক্তির বয়স আনুমানিক চল্লিশ বছর। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালবেলা স্থানীয় কয়েকজন প্রাতঃভ্রমণে যাওয়ার সময় পুকুরের জলে একটি ভাসমান দেহ দেখতে পান। তারপরেই তাঁরা খবর দেন নেতাজীনগর থানায়। পুলিস ঘটনাস্থল থেকে দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু্র আসল কারণ জানতে পারবেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
রেড রোডে সরকারি উদ্যোগে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালন (Netaji Birthday)। এই অনুষ্ঠানে সপার্ষদ উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। বেলা ১২.১৫টা নাগাদ শঙ্খধ্বনি এবং সাইরেন বাজিয়ে নেতাজিকে স্মরণ করে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সমবেত সঙ্গীত এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এগিয়ে চলে অনুষ্ঠান। এদিনের অনুষ্ঠানে শাঁখ বাজাতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মূল মঞ্চে ছিলেন বসু (Netaji Family) পরিবারের তিন সদস্য সুগত বসু, সুমন্ত বসু এবং চন্দ্র বসু।
এই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ঘুরিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আন্দামান-নিকোবরের অনুষ্ঠানকে খোঁচা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আজকে কেউ নাম করতে বলতেই পারে, আমরা করলাম শহিদ দ্বীপ, স্বরাজ দ্বীপ। সেটা একদম না, এটা সুভাষচন্দ্র বসু যখন আন্দামানের সেলুলার জেল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, সে সময় করে এসেছিলেন।'
পাশাপাশি প্ল্যানিং কমিশন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা পরোক্ষে করেন মুখ্যমন্ত্রী। খোঁচার সুরে মমতার প্রশ্ন, 'দেশের পরিকল্পনা কী হবে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তৈরি করেছিলেন প্ল্যানিং কমিশন। এখন প্ল্যানিংয়ের চেয়ে, নন- প্ল্যানিং বেশি হচ্ছে। উঠেই গিয়েছে প্ল্যানিং কমিশন। কেন জানেন, আমাকে কেউ বলতে পারবেন?'
নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে (Netaji Birthday) আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ২১টি অনামী দ্বীপের নামকরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদী পরমবীর চক্র প্রাপকদের নামে সোমবার ওই ২১টি দ্বীপের নামকরণ করেন। পাশাপাশি নেতাজিকে উৎসর্গ করে জাতীয় স্মৃতিসৌধের নকশা উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)। ভার্চুয়ালি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, আন্দামানের (Andaman Island) সবেচেয়ে বড় অনামী দ্বীপের নাম প্রথম পরমবীর চক্র প্রাপক মেজর সোমনাথ শর্মার নামে রাখা হয়েছে।
Naming of 21 islands of Andaman & Nicobar Islands after Param Vir Chakra awardees fills heart of every Indian with pride. https://t.co/tKPawExxMT
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2023
এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পরমবীর চক্র প্রাপকদের নামে এই ২১টি দ্বীপের পরিচিতি বাড়বে। আগামী প্রজন্মের কাছে প্রেরণা জোগাবে নেতাজি সৌধ। আন্দামানের মাটিতেই প্রথম বার তেরঙা উড়েছিল।' ইতিমধ্যে ২৩ জানুয়ারিকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসাবে পালনের কথা ঘোষণা করেছে মোদী সরকার।
এমনকি এই বীর ভারতীয়কে শ্রদ্ধা জানাতে নেতাজির নামাঙ্কিত করা হয়েছে রস আইল্যান্ডকে। এবার রস আইল্যান্ডে নেতাজিকে উৎসর্গ করে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মডেল উন্মোচিত হয়েছে। পাশাপাশি নীল আইল্যান্ড ও হেভলক দ্বীপের নাম রাখা হয়েছে শহিদ দ্বীপ ও স্বরাজ দ্বীপ।
দার্জিলিং থেকে সুন্দরবন; ধুমধাম করে পালিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৬তম জন্মদিবস (Netaji Birthday Celebration)। কলকাতাও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মহামানবকে স্মরণ করছে। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, নানা প্রান্তে নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Anand Bose) থেকে রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যকে। পিছিয়ে ছিল না রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও (BJP)। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদারও নেতাজির জন্মদিন উদযাপনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে নেতাজি জন্মজয়ন্তী কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল।
এদিন সকালে একটি পৃথক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে নেতাজি ভবনেও। সেখানেও সকাল থেকে উৎসাহী মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোন। পাশাপাশি চেতলায় নিজের পাড়ায় নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় পা মেলান রাজ্যের মন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকেও দেখা গিয়েছে লেক টাউনে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করতে। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সাংসদ সৌগত রায়।
অপরদিকে, শহিদ মিনারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একইভাবে ধর্মতলায় নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান করে এই বরেণ্য ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানান বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
নেতাজির ১২৬তম জন্মজয়ন্তীতে (Netaji Birthday) বাংলায় অব্যাহত রাজনৈতিক তরজা। দেশের এই বীর সন্তানকে কে যোগ্য মর্যাদা দিয়েছে? এই প্রশ্নে যুযুধান বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস (BJP-TMC)। সোমবার প্রতিদিনের মতো প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়ে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, 'নেতাজিকে কেউ সম্মান দিলে বিজেপি দিয়েছে। দিল্লিতে তাঁর মূর্তি স্থাপন কে করলো, নরেন্দ্র মোদী। তোমরা ৭০ বছর করোনি কেন! নেতাজির নামে দোকান চলেছে, তাঁকে নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। মোদীজি নেতাজিকে যোগ্য সম্মান দিয়ে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করে যুব সমাজের সামনে নিয়ে এসেছেন।'
যদিও বিজেপি তথা দিলীপ ঘোষকে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, 'সাংসদ হিসেবে দিলীপ ঘোষ বা নতুন বিজেপি হয়েছে এমন কেউ, যারা সাংসদ বা সংসদে ছিলেন, তাঁরা একটা ভিডিও দেখাক যেখানে নেতাজির রহস্য উন্মোচনে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করেছে।'
তাঁর দাবি, 'নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে চিরকাল তৃণমূল সম্মান দিয়ে এসেছে, এটা কর্তব্য। নেতাজির পরিবারের সদস্যদের সাংসদ করে দেশের সংসদে পাঠিয়েছে দল। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন রাজ্যের বিষয় নয়। মুখার্জি কমিশনের রিপোর্টের উপসংহার টেনে কী করেছে কেন্দ্র? রাজ্য তো সব ফাইল খুলে দিয়েছে। কেন্দ্র এখনও গুরত্বপূর্ণ ফাইল খোলেনি। এমন অভিযোগও রয়েছে। রেনকোজি মন্দিরে রাখা চিতাভস্ম এনে ডিএনএ টেস্ট কেন করা হচ্ছে না?'
সরকারি পাট্টা বিলির অনুষ্ঠানে ফের সিএএ এবং এনআরসি (CAA NRC) বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বলেন, 'কখনও কখনও ভাঁওতা দেওয়া হয় তুমি নাগরিক নয়। নাগরিক না হলে সে ভোট দিল কী করে? আমার ভোটে তুমি প্রধানমন্ত্রী, আর আজকে বলছো তোমাকে নাগরিক অধিকার দেব। তুমি এটা অসম্মান করছো না? ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়ে, কলেজে পড়ে, কেউ রিক্সা চালায়, কেউ দোকানে কাজ করে, কেউ দোকান চালায়, কেউ চাষের কাজ করে। তাঁরা এই অধিকার কোথা থেকে পাচ্ছে? তাঁদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, ভোটাধিকার আছে। তাঁরা ভোটও দেয়।'
এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়েও এদিন সুর চড়া ছিল তাঁর। ভোটার লিস্টে নাম তোলার সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে মমতা বলেন, 'মনে রাখেবন এখন ভোটার লিস্টে নাম তোলার কাজ চলছে, ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এনআরসির নামে আপনাদের নাম যেন কেউ কেটে না দিতে পারে। এখন থেকে আপনাদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের নাম তুলে আসবেন। দেখে আসবেন আপনার নাম রয়েছে কিনা। অনেক সময় আপনার নাম ঠিক থাকবে, স্বামীর নাম ভুল, তাহলে সেই নাম কেটে দাও। অসমে দেখেছিলেন কত লক্ষ মানুষকে নাম কেটে বাদ দিয়েছিল, আমরা কত বড় আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। এনআরসি লজ্জা, আবার একটা পরিকল্পনা শুরু করেছে।'
তাঁর আবেদন, 'বাংলার সব মানুষ নিজেদের নাম ভোটার লিস্টে তুলুন। নয়তো বলবে আপনি এনআরসি ডিটেনশন ক্যাম্পে চলে যাবেন। তাই ভোটার লিস্টে তড়িঘড়ি নাম তুলে নেবেন, যারা নতুন ভোটার হবে তাঁরাও নাম তুলুন।' পাশাপাশি এদিন তিনি রাজ্যের বকেয়া টাকা এবং সার নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, 'সার নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। চাষীরা সার পাচ্ছেন না, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপার। সার আমরা তৈরি করি না, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে নিই। চাহিদা মতো কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সার দিচ্ছে না। চলতি বছর তিন বার চিঠি লেখা হয়েছে কেন্দ্রকে। কেন্দ্রের সার উৎপাদনের জায়গা আছে, আগামি দিনে সার উৎপাদনের কথা রাজ্যকে ভাবতে হবে, এভাবে অসহযোগিতা চললে। রাজনৈতিকভাবে মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু একশো দিনের কাজের টাকা দেব না, সার দেব না এসব কী!'
গাড়ি পার্কিং (Car Parking) করা নিয়ে বচসা, আর যার জেরে উত্তেজনা ছড়াল নেতাজি নগর (Netaji Nagar) থানা এলাকায়। সূত্রের খবর, বাঘাযতীনে রাস্তার উপর গাড়ি রাখাকে কেন্দ্র করে প্রথমে এক মহিলার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এক ব্যক্তির এবং পরে যা চরম বচসা পর্যন্ত গড়ায়। এমনকি মারধর ও অশ্রাব্য গালিগালাজ তো বটেই, সেই সঙ্গে শ্লীলতাহানির (Molestration) অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
জানা গিয়েছে, আক্রান্ত মহিলা এলাকারই এক চিকিৎসকের স্ত্রী। বৃহস্পতিবার রাতে পার্কিং করা নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে তুমুল ঝামেলা হয় তাঁর। মানসিক ও শারীরিক ভাবে আক্রমণের পর ভয় পেয়ে নিজের গাড়িতে উঠে দরজা লোক করে দেন মহিলা। কিন্তু তাতেও মেলেনি সুরাহা। এরপর নাকি রাস্তায় রাখা ম্যাটাডোর নিয়ে তাঁর গাড়িকে বারবার ধাক্কা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে এতকিছু ঘটনার পরেও উঠেছে পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। সেই রাতেই তৎক্ষণাৎ পাটুলি থানায় গেলেও অন্য এলাকার অজুহাত দেখিয়ে নাকি মহিলার অভিযোগই নিতে চাননি কর্তব্যরত পুলিস বলে অভিযোগ আক্রান্তের।
এরপর শেষমেষ নেতাজি নগর থানায় দায়ের করা হয় অভিযোগ। থানায় এফআইআর করার পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তি দিব্য এলাকায় খোলা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, পুলিসের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাল যোগসাজশ বলেও অভিযোগ করেছেন মহিলা। তাঁর দাবি, 'চিকিৎসক স্বামী কর্মসূত্রে ফ্রান্সে রয়েছেন। আর এই ধরনের ঘটনায় তিনি যথেষ্ট আতঙ্কিত।'
অবশ্য আইনি নোটিস পেয়ে অভিযুক্ত না এলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবা হবে, বলে জানিয়েছে পুলিস। তবে এও জানা গিয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে খবর স্থানীয় সূত্রে।
বাংলায় ৪০% দারিদ্রতা (Proverty Level in Bengal) কমেছে। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে উৎকর্ষ বাংলার অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তাঁর দাবি, 'স্কিল ডেভলপমেন্টের (Skill Development) আওতায় কয়েকলক্ষ ছাত্র-ছাত্রী চাকরি পাবে।'এই অনুষ্ঠানে স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং কারিগরি শিক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ পত্র প্রদানের ঘোষণা করেন। সোমবারের অনুষ্ঠান থেকে ৩০ হাজার পড়ুয়াকে ১৩৬টি সংস্থায় নিয়োগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। স্কিল প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে বাংলার ৯ জন শীর্ষস্থানে রয়েছে। তাঁদের সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারমূল্য পাবেন মেধাবী পড়ুয়ারা। তাঁর দাবি, 'আপনাদের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। চাকরি আপনার ঘরের সামনে আপনাকে ডাকবে, আপনাকে শুধু খোঁজ রাখতে হবে। দুয়ারে রেশন, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী করে দিয়েছি, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড করে দিয়েছি।'
আর কী বললেন তিনি---
আমার স্বপ্ন বাংলা বিশ্ব সেরা হবে। কন্যাশ্রীতে আমরা সেরা হয়েছি। দুর্গাপুজো স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। কয়েকদিন আগে কালচারাল ট্যুরিজম ডেসটিনেশন, বিশ্বে প্রথম স্টেট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। ২৩ মার্চ বার্লিনে পুরস্কার দেওয়া হবে। আমি যাব, গর্ব করার মতো বিষয় হলেও আমি নিজে যাই, নয়তো যাই না
বাংলায় ৪৫ হাজার মেয়েরা চাকরি পেয়েছে। বাংলায় এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা।
উৎকর্ষ বাংলা নামটা স্বার্থক
নিয়োগের চিঠি পেয়েছো কেউ? মমতা বলেন ইমেলে উৎকর্ষ বাংলার লোগো-সহ চিঠি যাবে। চিঠি পেয়ে অনেকে জয়েন করে গিয়েছে
আজ, কাল, পরশুর মধ্যে নিয়োগ পান কিনা দেখুন, নয়তো আমি ১৫ তারিখ থাকব খড়গপুরে জানাবেন
খড়গপুরে ৭ হাজার নিয়োগপত্র দেব। বর্ধমান, মালদা, মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুরে-সহ অন্য জেলার ছেলেমেয়ে মিলিয়ে ৩০ হাজার নিয়োগ দেব পুজোর আগে
সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁতিদের ৩ বছরের জন্য বরাত দেওয়া হচ্ছে।
দুর্গাপুজোর সময় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়। ৯০ লক্ষ এমএসএমই বা স্মল স্কেল ইউনিট হয়েছে
এখানে কিছু পলিটিক্যাল দল ও মিডিয়া ভালো কিছু দেখায় না। আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখনও দেখাতো রেলে ইঁদুর ঘুরছে, এখন কী ঘুরে বেরোয়? ভালো জিনিস দেখায় না, ভালো হবে কী করে?
দেউচা পাচামিতে কতগুলো মানুষ অশান্তি করে বেরাচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থান করে দিচ্ছি। ১ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। চাকরির জন্য বাইরে যাওয়ার দরকার নেই
আমার লক্ষ্য এখন শিল্প। ৩৪ বছরে শিল্প তছনছ হয়েছে, শিল্পে নবজাগরণ হবে।
আমার লক্ষ্য কর্মসংস্থান, কর্ম সঙ্কোচন নয়
রেল, সেইল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখানে বন্ধ করতে দিই না। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা দল কর্মসংস্থান চায় না, চাকরি চায় না। শুধু এজেন্সি রাজ চলছে
বেঙ্গল আগামির গন্তব্য, আসুন এবং বিনিয়োগ করুন, আমরা বণিক, শিল্পপতিদের পক্ষে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) রাজধানী দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের (India Gate) কাছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Subhash Chandra Bose) ২৮ ফুট উঁচু মূর্তির আবরণ উদ্বোধন করলেন। একটি গ্রানাইট শিলাকে কেটে ২৮০ মেট্রিক টনের ওই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোদী রাজপথ অ্যাভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে কর্তব্য পথ নামকরণ করেন।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজির ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি দাবি করেন, স্বাধীনতা উত্তর ভারতে নেতাজির প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করেনি কোনও সরকারই। মোদী বলেন,'আজ, ইন্ডিয়া গেটে জাতীয় নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর এই সুবিশাল মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হল।' এই মূর্তিকে শক্তিশালী ভারতের প্রতীক হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি। মোদীর খোঁচা পূর্বতন সরকারের দিকেও। তিনি বলে, দূর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পরই আমরা আমাদের এই মহান নেতাকে ভুলে গেলাম, তাঁর দেখানো পথ, এমনকি তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত চিহ্নকেও উপেক্ষা করা হল।'
এই প্রসঙ্গেই মোদীর ভাষণে উঠে আসে লালকেল্লায় তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলনের কথাও। তিনি বলেন, 'নেতাজি স্বপ্ন দেখেছিলেন লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের। আমি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে লালকেল্লায় তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলনের সৌভাগ্য অর্জন করেছি।' ইন্ডিয়া গেটের যে জায়গায় নেতাজির মূর্তি বসেছে সেখানে আগে ছিল অমর জওয়ান জ্যোতি। এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ব্রিটিশ রাজের সময় এখানে ব্রিটেনের প্রতিনিধির মূর্তি ছিল। আজ, একই জায়গায় নেতাজির মূর্তি স্থাপন করা হল। যা শক্তিশালী ভারতের প্রতীক।'
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবেশ করার পরই প্রধানমন্ত্রীকে হাসি গল্পে মেতে উঠতে দেখা যায় ওই মূর্তি স্থাপনে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে। তাঁদের প্রত্যেককে আগামী বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে তাঁর অতিথি হিসাবে নিমন্ত্রণও করেন প্রধানমন্ত্রী। নেতাজির পথে চললে ভারত অনেক উঁচুতে পৌঁছতে পারত। তিনি এখন সেই পথেই চলছেন বলে বার্তা দিয়েছেন মোদী।
ইন্ডিয়া গেট থেকে রাইসিনা হিল পর্যন্ত রাজপথ ও তার দু’পাশের এলাকা— সেন্ট্রাল ভিস্টা ঢেলে সাজানোর পরে আজ প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধন করেছেন। রাজপথের নাম বদলে করেছেন 'কর্তব্য পথ'। স্বাধীনতার পরে সুভাষচন্দ্র বসু পথে চলার চেষ্টা করলে অনেকখানি উচ্চতায় পৌঁছতে পারত। দুর্ভাগ্য হল, এই মহান নায়ককে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।' নেতাজিকে 'অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধান' বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী।
কেষ্টর (Anubrata Mondal) শরীর এমনিতেই খারাপ। তার মধ্যে বগটুই হল, ওকে একটা ধাক্কা দিল। প্রতি ভোটে ওকে নজরবন্দি করে আটকাতে পারেন? ভাবছেন কেষ্টকে ধরে রেখে দু'টো লোকসভা আসন বেশি পাবেন, সে গুড়ে বালি! কেষ্ট ফিরে না আসা পর্যন্ত লড়াই তিন গুণ। ওকে বীরের মতো ফিরিয়ে আনতে তৈরি হন। এভাবেই বৃহস্পতিবার ফের জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। এদিন নেতাজি ইন্ডোরে (Netaji Indoor Meet) পঞ্চায়েত ভোট উপলক্ষে বুথস্তরের কর্মিসভা ডাকা হয়েছিল। সেই মঞ্চ থেকেই সরব ছিলেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো।
বিজেপির প্রতি সুর চড়া করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওরা ভাবছে তৃণমূলের কয়েকজন স্ট্রং লিডারকে জেলে ভরে রাখলে জেলার কর্মীরা, ব্লকের নেতারা ভয় পেয়ে যাবেন। আর সেই সুযোগে বিজেপি টুকটুক করে জল খেয়ে যাবে। মনে রাখবেন নিহত সিংহের চেয়ে আহত সিংহ বেশি ভয়ঙ্কর। আমাকে ধমকালে আমি চমকাই, চমকালে আমি গর্জাই। বাংলায় সব চোর আর তোমরা মন কা ব্যথায় দেখছ নতুন ভোর। এভাবে দেশ চলবে না। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তোপ দেগে সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি যারা আগে সিপিএম করত, এখন তাঁরাই বিজেপি করে এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী খোঁচা, 'যারা সিপিএম-র হার্মাদ, তাঁরাই বিজেপির জহ্লাদ। একদিন শুনতেই হবে জগাই-মাধাই-গদাই কবে হবে বাই বাই?' কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো নাকি সকালে ঘুম থেকে উঠেই বেড়িয়ে পড়ছে। এই দাবি করে তৃণমূল সুপ্রিমোর মন্তব্য, 'ইডি-সিবিআই সকালে ঘুম থেকে উঠেই আজ মলয়ের বাড়ি যাচ্ছে, কাল ববির বাড়ি যাবে, পরশু চন্দ্রিমার বাড়ি যাবে। অভিষেকের দু'বছরের বাচ্চাও সিবিআই অফিস ঘুরে এসেছে। মা বাচ্চাকে ছেড়ে যাবে কীভাবে?'
আগামি দিনে লড়াইয়ের পাল্টা লড়াই হবের স্লোগান তুলে বিরোধীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর খোঁচা, 'একটা বর্ণপরিচয় জানে না, ওরা সবারটা কেটে দিচ্ছে। ওরা জানে না রাজনীতিতে কেটে দিলে কিছু হয় না, ছেঁটে দিতে হয়। লড়াইয়ের পাল্টা লড়াই হবে।' তিনি জানান, তৃণমূল কংগ্রেসে কর্মীরাই সম্পদ। এই দলে টিকিটের জন্য লবি করতে হয় না। যারা কাজ করবে তাঁকে দল টিকিটের জন্য খুঁজে নেবে।
প্রসূন গুপ্ত: ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট যে স্বচ্ছ ছিল না, তা ফের আজকের ভাষণে বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এটা বাস্তব বাম আমলেও পঞ্চায়েত ভোট জবরদখল করেই করা হতো চিরকাল। সে সময় বিরোধীদের এই অভিযোগ বরাবর ছিল। একই সংস্কৃতি ত্রিপুরাতেও বিদ্যমান। সে যাই হোক না কেন গত পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে অভিষেক বারবার সতর্কতা অবলম্বন করে ভোট করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নতুন তৃণমূলের এটাও একটি লক্ষণ বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। অভিষেক একইসঙ্গে জানান যে এই দলে একজনই নেত্রী, সেকেন্ড বা থার্ড বলে কিছু নেই। নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, তিনিও উপস্থিত কর্মীদের মতোই একজন সাধারণ কর্মী। লক্ষণীয় তখন মঞ্চে উপস্থিত তাবড় সব নেতা। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে অভিষেকের সম্পূর্ণ ভাষণ শোনেন।
দলে যে অসংখ্য নতুন মুখ দায়িত্ব পাবেন তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন অভিষেক। দলের অভিমানী বা বিদ্রোহীদের উদ্দেশে আলাদা করে কিছু না বললেও তিনি জানিয়েছেন, সবাইকে একইসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিষেকের আক্রমণ ছিল দেখার মতো। নরেন্দ্র মোদীর নাম না করলেও তিনি ফের আক্রমণ শানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে। ইডি অফিস থেকে বেরিয়ে আগের দিন যেমন অমিত শাহকে টার্গেট করেছিলেন অভিষেক, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এখানে প্রশ্ন থেকেই যায় যে ক্রমাগত তিনি অমিতকে আক্রমণ করছেন কেন? অভিষেক ছাড়া এ কয়েক মাসে বা কয়েক বছরে যত তৃণমূল নেতাদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ডেকে পাঠিয়েছিল ততবার প্রত্যেকে কোনও না কোনও বাহানা দেখিয়ে অনুপস্থিত থেকেছেন।
এদেরই অনেককেই বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ব্যতিক্রম শুধু অভিষেক। অনেকেরই ধারণা দলকে চাঙ্গা করতে এবং নিজের নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে অভিষেক অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স পলিসি নিয়েছেন। এতে নিঃসন্দেহে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। মমতা ভাষণ দিয়েছেন, আক্রমণ শাণিয়েছেন, তবু কোথাও ফের হিরো অভিষেকই।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথস্তরের সভা। দলনেত্রীর আহ্বানেই এই জমায়েত। উপস্থিত থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শোনা যাচ্ছে, দলের কাছে বিশেষ বার্তা থাকবে মমতা এবং অভিষেকের তরফে। মূলত পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এই সভা বলে খবর হলেও ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের ভাবনাও থাকছে এই সভায়। ২১ জুলাই বা ছাত্র সমাবেশের পরে ফের এই সভা। দলের বুথস্তরেরকর্মীদের জন্য খোলা এবং প্রকাশ্যে। উপস্থিত থাকার কথা সর্বস্তরের নেত-মন্ত্রীদের। কাজেই বলে ফেলা যায় হয়তো বা উপস্থিত থাকতে পারেন জহর সরকার কিংবা ইদানিং খানিক বেসুরো হওয়া তাপস রায়। হিসাব মতো জেলার নানা দায়িত্বে থাকা নেতাদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন তাপস রায় কি কোনও বিষয়ে হতাশ দলের উপর। তাপস দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী। প্রথমে ছাত্র পরিষদের সভাপতি হয়েছিলেন। ঘোরতর সিপিএম বিরোধী চরিত্র। তাপস প্রথমে সোমেন মিত্রের ঘনিষ্ঠ ছিলেন পরে তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পরে যোগ দেন ২০০০-এ। মমতা পরের বছর তাঁকে তৎকালীন বড়বাজার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেন, তাপস জিতেও আসেন। এই ছিল আদি ইতিহাস। ২০১১-তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময়ে থেকে তিনি বরানগরের বিধায়ক।
তাপস সেবার মন্ত্রী হননি। ১৬-র ভোট জিতে আসার অনেকদিন বাদে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার ২১-এর ভোটের পর ফের দায়িত্ব নেই তাপসের। গত বছর থেকে একবার উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি হয়েছিলেন বটে কিন্তু সম্প্রতি সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাপস আপাতত বিধানসভার ডেপুটি চিফ হুইপ (এর আগে এমন কোনও পদ ছিল না)। কাজেই তাপস হয়তো ভেবেছিলেন সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভার পরিবর্তনে তাঁর দায়িত্ব আসতে পারে, আসেনি। এরপর থেকে লক্ষ্য করা গিয়েছে, তাপস নাকি খানিক বিষন্ন। হয়তো বা সে কারণেই অবসর নেওয়ার কথা ভেবেছেন। দেখার বিষয় বৃহস্পতিবার দলের বৈঠকে তাঁর ভূমিকা।