
কাশির সমস্যা ছোট থেকে বড় সবার মধ্যেই দেখা যায়। তবে কাশি দু'রকমের হতে পারে। এক শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি, অন্যটি শুকনো কাশি। সবথেকে মানুষকে বিরক্ত করে দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি। সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা-গরমের ফলে শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি আর ধুলোবালি, দূষণের ইত্যাদির কারণে শুকনো কাশি হয়ে থাকে। তার মধ্যে এখন কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, অ্যাডিনো ভাইরাসের ছড়াছাড়ি, ফলে কাশি যেন কমার নামই নেয় না। তবে আর চিন্তা নয়, কাশির জন্য আপনাকে এখন সবসময় ওষুধ খেতে হবে না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বাড়িতেও কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি আপনার দীর্ঘদিনের কাশি থেকে রেহাই পেতে পারেন। তবে কী সেই উপায়গুলি?
চিকিৎসকের পরামর্শ, প্রথমেই আপনাকে আপনার গলাকে বিশ্রাম দিতে হবে। সঙ্গে কিছু খাবার ও পানীয় খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে। যা আপনার গলাকে আর্দ্রতা দেবে। আপনাকে দিনে বারবার গরম জল, গরম স্যুপ, তরল জাতীয় খাবার, গরম চা, কফি খেতে হবে। তবে বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে চা, কফি বেশি না খাওয়া হয়ে যায়।
কারণ এতে পরে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য ফল, শাকসবজিও খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর সবথেকে প্রয়োজনীয় ও উপকারী উপায় হল গার্গেল করা। উষ্ণ গরম জলের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে সারাদিনে বারবার গার্গেল করতে হবে। এতে আপনার গলা ব্যথা থাকলে সেটি কমবে ও কাশি থেকেও দ্রুত মুক্তি পাবেন।
ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza) এইচ৩এন২ (H3N2) ভাইরাসের দাপট ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার (Corona) পর নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এই ভাইরাস। সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট প্রধান উপসর্গ দেখা গিয়েছে আক্রান্তদের মধ্যে। আর এই পরিস্থিতিতে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতে খাদ্যতালিকায় বিশেষ নজর রাখা উচিত। কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতেও সাহায্য করতে পারে এই খাবারগুলি।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: যে সমস্ত সবজি বা ফল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যেমন- বেরি, কিউই, লেবুজাতীয় ফল, খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি, ই, এ, জিঙ্ক রয়েছে, যা ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
শস্য জাতীয় খাবার: মিলেট, ব্রাউন রাইস, রেড রাইস, ওটমিল এই খাবারগুলি খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, শস্যজাতীয় খাবার ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল খাবার: ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তদের খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি জাতীয় খাবার যেমন- আদা, রসুন রাখা উচিত।
দই ও ফল দিয়ে তৈরি ড্রিঙ্কস: ডায়েটেসিয়ানদের মতে দই-এর সঙ্গে বাদাম, ফল দিয়ে তৈরি স্মুথি খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
স্যালাড: ডায়েটেসিয়ানের মতে, কাঁচা সবজি স্যালাড হিসেবে খাওয়া উচিত নয়। আক্রান্তদের সবসময় অল্প করে ভেজে রাখা সবজি স্যালাড হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
জ্বর-শ্বাসকষ্টজনিত কারণে শহরে অব্যাহত শিশুমৃত্যু। নেপথ্যে অ্যাডিনো আক্রমণে? জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের দুই হাসপাতালে ৫ শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের প্রভাবে এই শিশু মৃত্যু বলে খবর। বিসি রায় হাসপাতালে জ্বর এবং শ্বাসকষ্টজনিত কারণে এই শিশু মৃত্যু বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ১৭ ফেব্রুয়ারি জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হরিণঘাটার বাসিন্দা এক সদ্যজাতকে। তারপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাকে। এদিন সকালে ৬ টা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে সেই শিশুর। পাশাপাশি দেগঙ্গার বাসিন্দা ৭ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার। ২৪ ঘণ্টায় বিসি রায় হাসপাতালে ৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
জানা গিয়েছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে আরও দুই শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। নিউমোনিয়ার জেরে এই শিশু মৃত্যু বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। মৃত শিশুদের মধ্যে একজনকে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ থাকায় ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। মৃত এক শিশুর পরিবার সূত্রে খবর, প্রথমে আরজি করে ভর্তি ছিল ওই শিশু। সুস্থ বলে ছেড়ে দেওয়ার পর, বাড়িতে গিয়ে ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় কলকাতা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ ওই শিশুর মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের ১ বছর ৮ মাসের এক শিশুর গায়ে জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং র্যাশ ছিল। ওই শিশুকে উদয়নারায়ণপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কলকাতা মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছিল। আজ সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুর।
এদিকে, সোমবার স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে হাসপাতালগুলোর বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। রেফার বেশি হচ্ছে বিসি রায় হাসপাতালের। একদম শেষ মুহূর্তে জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে বিশেষ করে বিসি রায় হাসপাতালে এই রেফারের জেরে রোগী বাড়ছে। ফলে নাজেহাল অবস্থা হাসপাতালগুলোর।
এই প্রসঙ্গে এক শিশু চিকিৎসকের মন্তব্য, 'অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হন। অভিভাবক, চাইল্ড কেয়ার গিভার প্রত্যেকে সতর্ক থাকুন। এই রোগ নিয়ে সচেতন থাকলে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারতাম। করোনার সময় যেভাবে বিধি মেনে চলেছি সেভাবেই থাকতে হবে।'