আমি খেলা অতো বুঝি না, কিন্তু খেলতে বললে খেলে দেব। যুবভারতীর (Yubabharati Krirangan) বাইরে দাঁড়িয়ে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata)। এদিন তিনি উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরে জানবাজারে পুজো উদ্বোধনে যান। সেই ফাঁকেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। দাদার পাশে দাঁড়িয়ে মমতা জানান, সৌরভকে (Sourav Ganguly) বঞ্চিত করা হয়েছে। ও আইসিসি-র (ICC) জন্য যোগ্যতম ছিল। আমি বিজেপির অনেককে ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে, স্বার্থের কারণে জায়গাটা সংরক্ষিত করে রাখা হল। এই জায়গায় শচিন বা আজহার থাকলে ওদের জন্য বলতাম। এটা আদতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং লজ্জাজনক। বিশেষ একজনকে প্রাধান্য দিতে এই কাজ করা হয়েছে। আমরা এটা ভালো ভাবে নিচ্ছি না।
তিনি বলেন, 'আমি নিজে ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলাম। আমরাও চাইনি খেলায় রাজনৈতিক লোক ঢুকুক। আমি অতো খেলা বুঝি না, কিন্তু খেলতে বললে খেলে দেব। আমার বক্তব্য যাঁদের যোগ্যতা আছে, তাঁদের পদ দেওয়া হোক। তিন বছর মেয়াদ বেড়েছিল সৌরভ এবং জয় শাহের। তাহলে শুধু সৌরভের কেন পদ গেল?'
এদিন অবশ্য করুণাময়ীতে চলা আন্দোলন নিয়ে কিছু খোলসা করতে চায়নি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এই বিষয়ে ব্রাত্য ভালো বলতে পারবে। কারণ দফতরটা ওর। আমি বিস্তারিত জানি না। এভাবেই শিক্ষা দফতরের কোর্টে বল ঠেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসূন গুপ্ত: এআইসিসি বা সর্বভারতীয় কংগ্রেসের যে ভোট সোমবার হয়ে গেলো বুধবার তার গণনা হয়েছে। খবর বিপুল ভোটে জিতেছেন মালিকার্জুন খাড়গে। তাঁর জয় সুনিশ্চিত ছিল, কারণ গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার এই কংগ্রেস সাংসদ। সোনিয়া এবং রাহুলের আশীর্বাদধন্য খাড়গের জয় নিশ্চিত ছিল শশী থারুরের বিরুদ্ধে।
তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ ইতিমধ্যে তাঁর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পেজে কংগ্রেসের ভালো হোক লিখে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের আবেদন জানিয়েছেন। থারুর কংগ্রেসের বিদ্রোহী বা জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ। তবুও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য থারুর জিতলে কংগ্রেসেরই ভালো হতো। শশী থারুর সুশিক্ষিত, সুবক্তা এবং সুদর্শন। ফলে ৮-৮০ সবার মধ্যেই থারুরের ক্যারিশ্মা আছে। কিন্তু দল এবং দলের বাইরে সেটা হওয়ার নয়। কাজেই কয়েক ঘন্টার মধ্যে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি মালিকার্জুন খাড়গে।
এখন লাখ টাকার প্রশ্ন, আজ কংগ্রেসের যা অবস্থা সেখান থেকে খাড়গে কি দলে সুদিন আনতে পারবেন? অভিজ্ঞতা বলছে তা হবে কঠিন কাজ। এই মুহূর্তে সারা ভারতে রাজস্থান এবং ছত্রিশগড় ছাড়া হাতে অন্য কোনও রাজ্য কংগ্রেসের নেই। ঝাড়খণ্ড এবং বিহারে মিলিজুলি অবিজেপি সরকার। পড়শি এই দুই রাজ্যে কংগ্রেস শাসক জোটের শরিক মাত্র। এর মধ্যে রাজস্থানে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব গেহলট এবং পাইলটের। গেহলটকে সোনিয়া কংগ্রেসের সভাপতি পদে প্রার্থী হতে বলেছিলেন। কিন্তু উনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ শচিন পাইলটকে ছাড়তে নারাজ।
রাজস্থানে এই গোষ্ঠীকোন্দল খাড়গেকেই মেটাতে হবে। অন্যদিকে কর্নাটক, মহারাষ্ট্রতে বিজেপি বিরোধী জোটকে কাজে লাগিয়ে আগামি ভোটে ফল প্রত্যাশিত করার চাপ থাকবে খাড়গের। সামনে লোকসভা ভোট ২০২৪-এ। বর্তমান বিজেপি সরকারকে বেগ দিতে খাড়গে কি পারবেন নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে?
প্রায় আড়াই দশক পর গান্ধী পরিবারের (Gandhi Family) বাইরে জাতীয় কংগ্রেসের (Indian National Congress) ব্যাটন। সীতারাম কেশরীর পর এবার মল্লিকার্জুন খাড়গে নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি। শশী থারুরকে বিপুল ভোটে হারিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন এই দলের সর্বোচ্চ পদে বসতে চলেছেন রাজ্যসভার সাংসদ খাড়গে (Mallikarjun Kharge)। যদিও তিনি গান্ধী পরিবার অনুমোদিত সভাপতি পদপ্রার্থী, এমনটাই কটাক্ষ বিজেপির। এদিন ভোট গণনার পর জানা গিয়েছে, খাড়গের পক্ষে ভোট পড়েছে ৭৮৯৭টি আর থারুর (Sashi Tharoor) পেয়েছেন ১০৭২টি ভোট। সোমবার দলের সভাপতি নির্বাচনে প্রায় ৯০% ভোটদান ছিল।
এদিন নির্বাচনের ফল যখন স্পষ্ট, তখনই রাহুল গান্ধী জানান, নতুন সভাপতি দলে আমার ভূমিকা ঠিক করে দেবেন। এ ব্যাপারে খাড়গেজি এবং সোনিয়াজি ভালো বলতে পারবেন।
এদিন ভোট গণনা চলাকালীন অনিয়মের অভিযোগ তোলেন কংগ্রেসের তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুর। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ভোট গণনা শুরু হয়ে বেলা ১টা নাগাদ শেষ হয়। ইতিমধ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে একাধিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখেছে জাতীয় রাজনীতি। ২০১৯ লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর সভাপতি পদ ছাড়েন রাহুল গান্ধী। অন্তর্বর্তী সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু ২০২৪-র লোকসভা ভোট এবং রাজ্য বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে অবিলম্বে পূর্ণ সময়ের সভাপতি বাছতে এই নির্বাচন।
প্রসূন গুপ্ত: আশা ছিল হয়তো বা বিসিসিআইয়ের সভাপতিত্ব গেলেও শেষ পর্যন্ত আইসিসি বা বিশ্ব ক্রিকেটের দরজা খুলেও যেতে পারে। কিন্তু বোর্ডের বার্ষিক সভায় আইসিসি চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে সৌরভের নাম নাকি আলোচনাতেই আসেনি। এমনটাই হয়তো হওয়ার ছিল। সূত্র মারফত খবর, সৌরভ নাকি বেশ কিছুদিন আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর গদি যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দিশেহারা হলেও শেষ পর্যন্ত কী হয় তার অপেক্ষায় ছিলেন।
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পয়লা সেপ্টেম্বরের ইউনেস্কোর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ। তিনিই উত্তরীয় পরিয়ে সম্মানিত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শোনা যাচ্ছে, তখন থেকেই সৌরভ অবস্থান বদলাতে শুরু করেন। এরপর কার্নিভালে সৌরভ-জায়া ডোনার ডান্সগ্রুপ নৃত্য পরিবেশনা করে। অসুস্থ শরীরেও ডোনা উপস্থিত ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। এতে যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন দিদি। যদিও এগুলোকে কাকতালীয় হিসেবে দেখতে চাইছেন অনেকে। অনেকের আবার অভিমত, সবই তাবু পাল্টানোর বিষয়।
এদিকে, মঙ্গলবার বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সভায় পাকাপোক্ত বিদায় জানানো হলো সৌরভকে। মমতার সোমবারের আবেদনে কাজ হল না মোটেই। যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত জানতেন সৌরভকে আইসিসিতে পাঠানোর আবেদন প্রধানমন্ত্রীকে করলেও, ফল হবে না কিছু। কিন্তু তিনি বাংলার জনতার কাছে এই বার্তাটি দিলেন যা একমাত্র তিনিই সৌরভের পাশে।
এবার সিএবি সভাপতি হতে চাইছেন দাদা। কাজটি খুব সোজা কারণ রাজ্য সরকারের সহযোগিতা তিনি পাবেনই। কিন্তু সমুদ্রের তিমিকে এবারে পুকুরের পোনা মাছ হতে হচ্ছে তা মনের দিক থেকে কতটা মেনে নেবেন সৌরভ? তিনি তো বলেছিলেন, আরও বড় জায়গায় যাবেন। সেটা হচ্ছে কি? এখনই হয়তো না তবে লাস্ট ল্যাপে সৌরভ যে কিছু একটা করবেন, যা আগেও করেছেন, যা বঙ্গবাসী অনুমান করতে পারছে না। কিন্তু স্টেপ আউট করেই কামব্যাক করবেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা। এমনটাই মনে করছে দাদার ঘনিষ্ঠ মহল।
প্রসূন গুপ্ত: এআইসিসি বা সর্বভারতীয় কংগ্রেস দল আজও কি আদি ও অকৃত্রিম? সম্ভবত এর উত্তর অন্তত রাহুল গান্ধীর কাছে নেই। যে দলের সভাপতি থেকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন রাহুলের প্রপিতামহ জওহরলাল নেহেরু এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীও দায়িত্বে এসেছিলেন। তাঁরাও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী না হলেও দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সফল হয়েছিলেন ইন্দিরার পুত্রবধূ সোনিয়াও। কিন্তু সুরতাল কেটে গেলো রাহুলের জমানায়। ক্রমশই ভঙ্গুর হতে চলা শতাব্দীপ্রাচীন দলের দায়িত্ব নেবে কে। রাহুল জানিয়েছেন, এবার গান্ধী পরিবারের কেউ প্রধান পদে যাচ্ছেন না।
তবে দায়িত্ব যেই পাক না কেন গুঞ্জনে তিনি অবশ্যই গান্ধী পরিবারের অনুগত। বিজেপির আবার বলছে রিমোট কন্ট্রোল প্রেসিডেন্ট। এবার বহুযুগ বাদে কংগ্রেসের বা এআইসিসির ভোট হতে চলেছে ব্যালটের মাধ্যমে বলে সংবাদ। যদিও কংগ্রেসের তাবড় নেতাদের অনেকেই দল ছেড়ে দিয়েছেন, যথা কপিল সিবাল, গুলাম নবী আজাদ, আনন্দ শর্মা ইত্যাদি। আগেই ছেড়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ফলে উপযুক্ত অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুখ যাঁরা ছিলেন তাঁদের কাউকেই হয়তো সভাপতির আসনে আসীন হতে দেখা যাবে না।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসছে, যাঁরা ভোটযুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত। এসেছে রাজীব ঘনিষ্ঠ কমলনাথের নাম, এসেছে শশী থারুরের নাম। তিনি আবার মনোনয়নও জমা করেছেন। আছেন মধ্য প্রদেশের পারক্তন মুখমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। ভোট যদি ঠিকঠাক হয়, তবে সমস্যা নেই। কিন্তু একটা থেকেই যাচ্ছে।
শশী থারুর শিক্ষিত মার্জিত এবং সুবক্তা। সাদা চোখে দেখলে তাঁর থেকে উপযুক্ত আর কেউ হতে পারে না। বিপদ সেখানেই, বেশি জনপ্রিয় মুখ কি গান্ধীদের পছন্দ হবে, লক্ষ টাকার প্রশ্ন। শোনা যাচ্ছে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা মালিকার্জুন খাড়গেকে সভাপতি করার জন্য মুখিয়ে রাহুল। খাড়গের বয়স হয়েছে ৮০। এই বয়সে কি আদপেই তিনি এই সুবিশাল দলের মাথা হতে পারবেন? ২০২৪ এর নির্বাচনে নূন্যতম ভালো ফল করতে গেলে যে এমন একটা মুখ দরকার যাকে গ্রাম ভারত চেনে, গো-বলয় বা হিন্দি বলয়ে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে। তেমনটি আছে কি কেউ?
প্রসূন গুপ্ত: হাওয়ায় ভাসছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আরও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেলেও তিনি কি ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থাকতে পারবেন? বৃহস্পতিবার সিএন পোর্টালে লেখা হয়েছিল, সৌরভ নয় বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা জয় শাহর। অন্য জাতীয় সংবাদ মাধ্যমও সেই দাবি করছে।
তবে ক্রীড়া প্রশাসকের রাজনীতি কখনই প্রত্যক্ষ রাজনীতিমুক্ত নয়। সবাই জানে বিসিসিআই বা এআইএফএফ স্বসাশিত সংস্থা। শাসক দল চেষ্টা করে নানাভাবে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত স্বশাসিত সংস্থাগুলোয় ক্ষমতা বিস্তার করা। কেন্দ্রে যখন ইউপিএ সরকার তখনও বিসিসিআই, এআইএফএফ কিংবা আইওসি-র মতো সংস্থায় প্রধান শাসক দল কংগ্রেসের পছন্দের লোক বসানো হয়েছিল। সে সুরেশ কালমাডি হোক, শরদ পাওয়ার কিংবা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি হোক। এই রীতির ব্যতিক্রম ছিল না বাংলার পূর্বতন বাম জমানা।
আমরা দেখেছি, বামফ্রন্ট বিশেষ করে সিপিএম রাজ্যের শাসনভার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গেই ক্লাব, লাইব্রেরি, ক্রীড়া, সিনেমা জগৎ থেকে শুরু করে সামাজিক সব জায়গাতেই তাদের দলের লোককে বকলমে বসিয়েছিল। সেই একই পথে কি হাঁটছে বিজেপি? সম্প্রতি ফুটবল, হকি ইত্যাদি সব জায়গাতেই তাদের কাছের লোক জায়গা পেয়েছে। তাহলে ক্রিকেট কেন ব্যতিক্রম হবে? বিসিসিআই শীর্ষ পদে জয় শাহের উত্তরণ সম্ভাবনা জোরালো করে এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
জয় শাহ এখনই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষপদ না পেলে তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৮ অবধি। তাই কি এবারেই সৌরভকে সরিয়ে জয় শাহকে বিসিসিআই সভাপতি করতে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির?
যদি তাই হয়, তাহলে সৌরভ গাঙ্গুলির ভবিষ্যৎ কী? সৌরভ হয়তো চাইতে পারেন আইসিসির সভাপতি হতে, কিন্তু সেখানেও হার্ডল। দাবিদার অনেক, বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থার বর্তমান সভাপতি আরও দু'বছর মেয়াদবৃদ্ধি চেয়েছেন। হয়তো পেয়েও যাবেন, এছাড়া চেন্নাই ক্রিকেট বোর্ড চাইছে তাঁদের প্রতিনিধি আইসিসি সভাপতি হোক। শোনা যাচ্ছে বর্তমান সে রাজ্যের শাসক দল এবিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা বলে রেখেছে।
তাহলে সৌরভের হয়ে গলা ফাটাবে কে? সম্ভবত আইসিসি-র শীর্ষপদে যাওয়ার কাজ এখন কঠিন তাঁর পক্ষে। সেক্ষেত্রে তিনি কি ক্রীড়া ভাষ্যকার হয়ে ফিরবেন? সেখানেও বাধা, স্বার্থের সংঘাতে ভুগবেন তিনি। তাহলে রাস্তা খোলা একমাত্র রাজনীতিবিদ হওয়ার। অমিত শাহ তাঁর বাড়িতে যাওয়ার পর এই জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছিল। কিন্তু কোনওপক্ষ থেকেই উত্তর আসেনি। সৌরভ ভোটে দাঁড়াতে চাইবেন না। সম্প্রতি ইউনেস্কোর অনুষ্ঠানে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে মহারাজকে দেখা গিয়েছে। তাই নিরাপদ ভাবে জিততে রাজ্যসভা তাঁর জন্য আদর্শ। প্রশ্ন এ রাজ্য থেকে কি তিনি রাজ্যসভায় যাবেন বিজেপির সমর্থনে?
এমনও হতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য হিসেবে তিনি তৃণমূলের সাংসদ হতে পারেন। কারণ যাই হোক না বাংলার মহারাজ লম্বা রেসের ঘোড়া এবং ক্যালকুলেটিভ। তাই সময় সুযোগ বেছে সেরাটাই বাছবেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা, এমনটাই ধারণা দাদা অনুরাগীদের।
প্রসূন গুপ্ত: বুধবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০২৫ অবধি বর্তমান ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্বে থাকতে পারবেন। কার্যত খুশি সৌরভ ভক্তরা বিশেষ করে বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু এখানেই অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে যে দায়িত্বে থাকার অধিকার পেয়েছেন ঠিকই সৌরভ এন্ড কোম্পানি। কিন্তু স্বপদে অর্থাৎ সভাপতির পদে সৌরভ কতদিন থাকতে পারবেন?
প্রথমত বিশ্ব ক্রিকেট বোর্ড বা আইসিসির সভাপতির পদ খালি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা ওই পদে সৌরভ গাঙ্গুলিকে চাইছেন। পাকিস্তান থেকে নিউজিল্যান্ড চাইছে, সৌরভকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। দু-একটি দেশের আপত্তি থাকলেও সেসব ম্যানেজ করা যাবে বলেই ধারণা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। কিন্তু সৌরভ শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন কি? একবার ওই পদে গেলে ফের ফিরে এসে দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব পাওয়া কঠিন। ডালমিয়া ছাড়া আর কেউই ফিরে পাননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের গুরু দায়িত্ব।
দ্বিতীয় সমস্যা ঘরের অন্দরেও। আপাতত বোর্ড সচিব হিসেবে অমিত শাহর পুত্র জয় ২০২৫ অবধি কমিটিতে থাকছেন মহারাজের সঙ্গে। কিন্তু ২০২৫ এর পর ৩ বছর এঁরা কেউই ক্রিকেট বোর্ডের কোনও পদে থাকতে পারবেন না, যাকে প্রশাসনিক পরিভাষায় কুলিং পিরিয়ড বলছে। এমনটাই এটিই ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৮ এর আগে জয় আর ফিরতে পারবেন না বোর্ডের কোনও দায়িত্বে। জয় শাহ কি এটা মেনে নেবেন?
ইতিমধ্যে ফুটবল বোর্ডের বা এআইএফেরের সভাপতি হয়েছেন বিজেপি সদস্য কল্যাণ চৌবে। বাইচুং ভুটিয়াকে রীতিমতো হেলায় হারিয়েছেন তিনি। তাই ক্রিকেট পিচে জোর গুঞ্জন বোর্ড সভাপতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জয় শাহের। সেখানে বর্তমান বোর্ড সভাপতি সৌরভকে আইসিসি-তে পাঠিয়ে ফাঁকা আসন পূর্ণ করার উদ্যোগ নিতেই পারেন অমিত পুত্র।
খানিকটা বিরোধী অভিযোগেই সিলমোহর বসালেন বিজেপি (BJP) সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তাঁর গলায় এবার সিবিআইয়ের (CBI) সঙ্গে প্রভাবশালীদের সেটিং তত্ত্ব। ঠিক যেমনটা এযাবৎকাল করে এসেছে বাংলার অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সাম্প্রতিককালে রাজ্যে চলা একাধিক দুর্নীতি মামলার সিবিআই তদন্তে কোনও প্রভাব দেখতে পাচ্ছে না মানুষ। কেউ ধরা পড়ছে না, কোনও নথি বাজেয়াপ্ত নেই। এর পিছনে থাকতে পারে সেটিং। কিনে নেওয়া হতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীদের। কারণ সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকে, পেট সকলেরই আছে। কেউ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়, কেউ আবার কোটি টাকায়। রবিবার আইসিসিআর-এ (ICCR) এক অনুষ্ঠানে গিয়ে এই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন দিলীপ ঘোষ।
এখানেই থামেননি তিনি। বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির আরও মন্তব্য, 'কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে কিছু একটা সেটিং হয়েছে, সরকার বুঝতে পেরেই অর্থ মন্ত্রক ইডিকে পাঠিয়েছে। আর অর্থমন্ত্রীর বিশেষ প্রয়াসেই রাজ্যে ইডি এসেছে। আর যাঁরা সেটিং করছিলেন, তাঁরা এখন প্রশ্ন করছেন, ইডি কেন? ইডিকে সরানোর জন্য কোর্টেও গিয়েছেন তাঁরা। আসলে ওই কুকুরকে পোষ মানানো যাচ্ছে না। কিছু কুকুর আছে কামড়ে দেবে। ওষুধের পরিমাণ কম হয়ে যাচ্ছিল, এবার ডোজ বাড়াতে হবে।'
তিনি জানান, এতো মামলা, এতো দুর্নীতি ৫০-৬০ বছর ধরে চলছে। যে দুর্নীতি দমনের কাজ স্থানীয় পুলিস, প্রশাসন, গোয়েন্দাদের করা উচিৎ। সেই কাজ ওরা করছে না, উলটে দুর্নীতিবাজদের বাঁচাচ্ছে। ফলে সিবিআই-ইডিকে একাহাতে সেই কাজ করতে হচ্ছে। এতে সমস্যা বাড়ছে। তদন্তে শ্লথ গতি, বিচারব্যবস্থায় প্রভাব পড়ছে। ফলে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছে মানুষ।
যদিও বিজেপির সহ-সভাপতির এই মন্তব্যকে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, 'বিজেপি রাজনৈতিকভাবে এই সংস্থাগুলো ব্যবহার করে ব্র্যান্ডগুলোকে খারাপ করছে। আর দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে সিবিআইয়ের সম্মানহানি হয়েছে। উনি এই কথাগুলো হতাশা থেকে কাকে বলছেন? প্রধানমন্ত্রীকে বলছেন, অমিত শাহকে বলছেন? আমার মনে হয় দিলীপ ঘোষ ঘুরিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে সিবিআইয়ের সেটিংয়ের প্রসঙ্গ সামনে এনে দিলেন।'