প্রসূন গুপ্ত: সকাল সাড়ে ৯টা বাজতেই নেতাজি সুভাষ বিমানবন্দর (Kolkata Airport) ছুঁল নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) বিমান। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ববি হাকিম এবং শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী শশী পাঁজা। উপস্থিত ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং মুখ্য সচিব প্রমুখ। বিমানবন্দরেই তাঁকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয় পুলিসের তরফে। শশী পাঁজা অনায়াস ভঙ্গিতে দক্ষিণ ভারতীয় ভাষায় বোসের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন। এরপর রাজ্যপাল রাজ্ভবনে (Raj Bhawan) যান, সেখানেই তিনি আজকের দিনটি থাকবেন কিনা জানা না গেলেও জানা গিয়েছে বুধবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নেবেন।
দিল্লি থেকে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি ভবন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, যে মুহূর্তে ডক্টর বোস শপথ নেবেন, সেই মুহূর্ত থেকে তিনি রাজ্যের ৫ বছরের স্থায়ী রাজ্যপাল হবেন। অবশ্যই এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথা হয়েছে এবং শাহ জানিয়েছেন যে এই নতুন রাজ্যপাল আনন্দ বোস ভালো লোক মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ হবে। অন্যদিকে জানা গিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়পাত্র এই বোস। যিনি দীর্ঘদিন সংবিধানের নানা কাজে যুক্ত। এই আইএএস প্রাক্তনী তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতা থেকেই। নেতাজি সুভাষচন্দ্রের পদবি বোস নিয়েই তাঁর নাম বোস, অবশ্য নামের আগে একটি আনন্দও আছে।
তাঁর আগমনে খুশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর ইচ্ছা পূর্বতন রাজ্যপাল (ধনকর) মতোই সক্রিয় থাকবে বাংলার রাজ ভবন। যদিও রাজ্যপাল হওয়ার আগে বোস জানান, তিনি সংবিধান মেনেই সরকারকে সহযোগিতা করবেন। তাঁর সঙ্গে মমতার ফোনে কথা হয়েছে। বোসও মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ২৯টি পুরস্কারপ্রাপ্ত বোসকে জ্ঞানের আধার বলা হয়। দেখার বিষয় বাংলা, প্রকৃত সাংস্কৃতিক রুচিবান আদর্শে অচল এবং ৪০টি বই লেখা আনন্দ বোসকে কতটা কাছে পাবে আগামীতে।
২৩ নভেম্বর, বুধবার বাংলার নতুন রাজ্যপাল (Governor CV Ananda Bose) হিসেবে শপথ নেবেন ডক্টর সিভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার রাতেই তিনি আসবেন রাজ ভবনে (Raj Bhawan)। শনিবার তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। বুধবার রাজ ভবনে (Governor of Bengal) ডক্টর বোসকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। জানা গিয়েছে, ২১ এবং ২৩ তারিখ, কবে তিনি শপথ গ্রহণ করবেন, জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২৩ নভেম্বরকে বেছে নিয়েছেন বাংলার ভাবী রাজ্যপাল।
জানা গিয়েছে, এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বর্তমান অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশন ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এদিকে, প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট ডক্টর সিভি আনন্দ বোস সার্নে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নেহেরু ফেলোশিপপ্রাপক ডক্টর বোসের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকরের পদত্যাগের সাড়ে ৫ মাস পর স্থায়ী রাজ্যপাল পেয়েছে বাংলা।
প্রসূন গুপ্ত: বৃহস্পতিবার নির্ধারিত হয়ে গেল আর অস্থায়ী রাজ্যপাল নয়, এবার ৫ বছরের জন্য নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এই নিয়মরক্ষায় নতুনত্ব বা অভিনবত্ব কিছু নেই তবু তৃণমূলের প্রশ্ন থাকে, ইনি কি পূর্বসূরি ধনকরের মতো হবেন নাকি নিরপেক্ষ? অন্যদিকে বিজেপির কাছে প্রশ্ন, সাময়িক রাজ্যপাল লা গণেশনের মতো হবেন নাকি ফের তাঁদের মনপসন্দ ধনকরের মতো নিরপেক্ষ? আসলে এই 'নিরপেক্ষতা' শব্দটি এখন ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলি ভাবে তাদের মনের মতো প্রশাসন বা সংবাদমাধ্যম হওয়া মানেই নিরপেক্ষ নতুবা পক্ষপাতদুষ্ট। সর্বত্রই এই ভাবনার মধ্যে সমস্ত রাজনৈতিক দল।
লা গণেশন দ্রুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় মানুষ হয়ে পড়েছিলেন। কালীপুজোয় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান গনেশন। এরপর অস্থায়ী রাজ্যপালের আমন্ত্রণে তাঁর চেন্নাইয়ের বাড়িতো যান মমতা। এরই মাঝে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী, গণেশনের সাক্ষাৎ চেয়েও পাননি। ফলে গুঞ্জনে এই কারণেই কি তাঁকে সরিয়ে বোসকে দায়িত্ব দেওয়া হলো।
এবার প্রশ্ন কেমন মানুষ এই বোস? জানা গিয়েছে কেরালার ভূমিপুত্র আনন্দ বোস একজন প্রাক্তন আইএএস। দুর্দান্ত তাঁর কর্ম জীবন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড.মনমোহন সিংয়ের প্রিয়পাত্র ছিলেন বোস। ২০১১-তে কর্মজীবন শেষ হলে তিনি বিজেপির ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন বলে সংবাদ।
তাঁকে নাকি সরকারি নানা উপদেষ্টামণ্ডলীতে রাখা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে সম্মান দিয়ে 'ম্যান অফ আইডিয়াস' বলে অভিহিত করেছেন। ২০১৯-এ তাঁর বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে অথবা রাজ্যসভার সদস্য হয়ে মোদী মন্ত্রিসভাতে আসার কথা ছিল। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক সেটা আর হয়নি।
নতুন রাজ্যপাল স্থির হওয়ার আগে নিয়ম করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাকি তা করেননি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অবশ্য অমিত শাহ ফোন করে বাড়তি জানান মমতাকে। ক্ষুব্ধ মমতা শাহকে বলেন, 'ফের তাঁকে না জানিয়েই কেন বারবার রাজ্যপাল নিয়োগ হচ্ছে।' অমিত শাহ মমতাকে নিশ্চিন্ত করেন, নতুন রাজ্যপাল আপনার খুব পছন্দের হবে। উনি খুব ভালো লোক। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে মমতার সঙ্গে অমিত কথা বলেন। এখন লক্ষ টাকার প্রশ্ন, রাজ্যপাল কারও কাছের লোক হবেন নাকি রাজ্যের সংবিধান প্রধান হয়ে রাজ ভবনে বসবেন।
অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশনের জায়গায় স্থায়ী রাজ্যপাল (Bengal Governor) হিসেবে বাংলার দায়িত্বে আসছেন ডাঃ সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। বর্তমানে মেঘালয় সরকারের উপদেষ্টা আনন্দ বোসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাষ্ট্রপতি ভবন (Raisina Hill)। তাঁকে মনোনীত করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ১৯৭৭ সালের সিভিল (IAS) সার্ভেন্ট, আবাস বিশেষজ্ঞ, লেখক এবং বাগ্মী আনন্দ বোস। ভারত সরকারের সচিব পদমর্যাদায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ডক্টর আনন্দ বোসের। পাশাপাশি অঙ্গ রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে জওহরলাল নেহেরু ফেলোশিপ প্রাপক এই ব্যক্তি। এমনকি সার্নে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছে ডক্টর বোস। জগদীপ ধনকরের পর পাঁচ মাস স্থায়ী রাজ্যপাল পেল বাংলা।
জগদীপ ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর লা গণেশনকে অস্থায়ী রাজ্যপাল নিয়োগ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবন। কিন্তু বাংলার মতো রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ রাজ্যে স্থায়ী রাজ্যপাল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মোদী সরকার। পাশাপাশি রাজ্য বিজেপি বহুদিন স্থায়ী রাজ্যপাল চেয়ে দরবার করেছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট এবং ২০২৪-এ লোকসভা ভোট। তাই আগামি দিনে স্থায়ী রাজ্যপালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিজেপির এই দরবার।
দুষ্কৃতীদের গুলিতে (shot) উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন দুই ছাত্র-সহ চার। শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে হরিয়ানার (Haryana) রোহতকে মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Maharshi Dayanand University)। রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ছাড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এই দুষ্কৃতী হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আর্থিক লেনদেন (monetary dispute) সংক্রান্ত বিরোধের কারণেই এমনটা ঘটিয়েছে বলে অনুমান পুলিসের। ইতিমধ্যে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
এদিন গভর্নর বান্দারু দত্তাত্রেয়, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরও, ক্যাম্পাসের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যেতেই এমন উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ ঘটনায় তিনজন জড়িত বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার পর হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের খোঁজ শুরু হয়েছে।
এসএইচও প্রমোদ গৌতম বলেন, ইতিমধ্যে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ চারজনের নাম কুলদীপ, বিদিত, সুশীল হুদা এবং হর্ষ। এঁদের মধ্যে কুলদীপের অবস্থা আশঙ্কাজনক।