ফের খবরের শিরোনামে গার্ডেনরিচ। সাত সকালে গার্ডেনরিচ বি এন আর রেল হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ছয়টি ইঞ্জিন। তারপর তড়িঘড়ি শুরু হয় আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ। হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গিয়েছে, এদিন সকাল সাতটা নাগাদ ওয়েস্ট পোর্ট থানার অন্তর্গত রেলের অধীনস্থ বি এন আর হাসপাতালে আগুন লাগে। হাসপাতালে চক্ষু বিভাগের ওটিতে থাকা এসি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। এরপরেই খবর দেওয়া হয় দমকলকে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে আসে দমকলের ছটি ইঞ্জিন। এক ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে আগে। আপাতত চক্ষু বিভাগের ওটি রুমটি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এছাড়াও আগুন আতঙ্কে চক্ষু বিভাগে থাকা, ১০ থেকে ১৫ জন রোগীকে জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, এসি থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে কোনওভাবে আগুন লেগেছে। যদিও অগ্নিকাণ্ডের আসল কারণ এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি।
গার্ডেনরিচকাণ্ডে ঘা এখনও দগদগে রাজ্যবাসীর মনে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়া বেশ কিছু ব্যক্তি। গরিবদের মাথার ছাদের ওপর বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় এখনও আসছে মৃত্যুর খবর। মঙ্গলবার ফের মৃত্যুর খবর এল গার্ডেনরিচকাণ্ডে আহত এক যুবকের। এসএসকেএম হাসপাতালে জখম অবস্থায় ভর্তি ছিলেন তিনজন। যাঁদের মধ্যে একজন বছর ২৩-এর মইনুল সর্দার। মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এমনটাই হাসপাতাল সূত্রে খবর।
এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুসরাত জাহান এবং মহম্মদ সহিলউদ্দিন নামে আরও দুজন। অন্যদিকে গার্ডেনরিচ সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি রয়েছেন আরও ৬ জন।
গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে মৃত্যু হওয়ার পরেও হুঁশ ফেরনি প্রশাসনের। ফের শহর কলকাতার বুকে গড়ে উঠেছে বেআইনি নির্মাণ। সেই চিত্র ধরা পড়ল শ্যামপুকুর থানার অন্তর্গত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৮৯/৪ রবীন্দ্র সরণী এলাকায়। সেখানে দেখা গিয়েছে অবৈধভাবে তৈরি হয়ে যাচ্ছে পাঁচ তলা বিল্ডিং। আর তাতে কোন হেলদোল নেই প্রশাসন এবং কাউন্সিলারের। যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যেই বসবাস করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগেই এই পাঁচতলা বহুতল বিল্ডিং ভাঙতে এসেছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় টাকা দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার শুরু হয় বিল্ডিং তৈরি কাজ। চারিদিকে যেভাবে বহুতল নির্মাণ ঘটনায় মৃত্যুর খবর আসছে, যার জেরে আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না মানুষের।
অভিযোগ, পুলিস প্রশাসন এবং কাউন্সিলর তাঁরা বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কোনওরকম পদক্ষেপে নিচ্ছেন না। টাকার বিনিময়ে পাঁচ-ছয় তলা বিল্ডিং শুরু হয়ে যাচ্ছে গলির মধ্যে। কলকাতা শহর জুড়ে যেভাবে অবৈধ নির্মাণ দিনের পর দিন তৈরী হচ্ছে। তাতে বারংবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন এটাই কোনও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কীভাবে তৈরী হচ্ছে পাঁচতলা বিল্ডিং। এই নিয়ে কবে হুঁশ ফিরবে প্রশাসনের?
গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল বিপর্যয়কাণ্ডে এবার ধৃত বেড়ে তিন। সোমবার গ্রেফতার করা হল রাজমিস্ত্রি কিংবা শ্রমিক ঠিকাদারকে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম শেখ রিপন। মূলত রাজমিস্ত্রি এবং লেবার কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অভিযোগ, গার্ডেনরিচ আবাসন তৈরীর জন্য় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল। আর সেই সমস্ত নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করেছিলেন অভিযুক্ত শেখ রিপন।
এর আগে গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে বিপর্যয়ের ঘটনায় ওই বহুতলের প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিস। এরপর যে জমির উপর ওই বহুতলটি তৈরি হচ্ছিল, সেটির মালিক মহম্মজ সরফরাজ ওরফে পাপ্পুকেও গ্রেফতার করা হয়।
সপ্তাহখানেক আগেই কলকাতার গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়ে বহুতল। আর তাতে প্রাণ হারায় ১২ জন। ঘর-বাড়ি হারিয়ে সর্বহারা হয়েছেন অনেকে। আর তারপর থেকেই উঠে আসছে শহরে একাধিক বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। এরপর বেআইনি নির্মাণ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুরসভা।
গার্ডেনরিচকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে তৎপর কলকাতা পুর সংস্থা। সংস্থার সব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ শুরু করতে চলেছে পুর কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, বেআইনি নির্মাণ আটকাতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, আইনি নোটিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পদ্ধতি নিয়ে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।
ইতিমধ্যে গার্ডেনরিচে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা নিয়ে শুরু হয়েছে পুরসভা ও আবাসিকদের মধ্যে টানাপোড়েন। ইতিমধ্যে আবাসিকরা দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টে। আগামী সোমবার রয়েছে এই মামলার শুনানি। কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিসের তরফে তৈরি করা হয়েছে, গার্ডেনরিচে গজিয়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণের তালিকা। সেই তালিকা ধরেই কলকাতা পুরসভা আগামীদিনে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু করবে। একই সঙ্গে পুনর্বাসন নিয়েও ভাবনা রয়েছে কলকাতা পুরসভার।
অন্য়দিকে গার্ডেনরিচকাণ্ডের পর বেআইনি নির্মাণ ভাঙার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল প্রশাসন। এবার গার্ডেনরিচের একটি বেআইনি বহুতল ভাঙার কাজে হাত দিল প্রশাসন। যদিও কোনওরকম নোটিশ ছাড়া বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায় গার্ডেনরিচে। যা নিয়ে বেআইনি বহুতলের আবাসিকরা বিক্ষোভও দেখান।
গার্ডেনরিচকাণ্ডের এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনও শেষ হয়নি বার্তা। গার্ডেনরিচে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা নিয়ে শুরু হয়েছে পুরসভা ও আবাসিকদের মধ্যে টানাপোড়েন। ইতিমধ্যে আবাসিকরা দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টে। আগামী সোমবার রয়েছে এই মামলার শুনানি।
জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিসের তরফে তৈরি করা হয়েছে, গার্ডেনরিচে গজিয়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণের তালিকা। সেই তালিকা ধরেই কলকাতা পুরসভা আগামীদিনে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু করবে। একই সঙ্গে পুনর্বাসন নিয়েও ভাবনা রয়েছে কলকাতা পুরসভার।
অন্য়দিকে গার্ডেনরিচকাণ্ডের পর বেআইনি নির্মাণ ভাঙার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল প্রশাসন। এবার গার্ডেনরিচের একটি বেআইনি বহুতল ভাঙার কাজে হাত দিল প্রশাসন। যদিও কোনওরকম নোটিশ ছাড়া বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায় গার্ডেনরিচে। যা নিয়ে বেআইনি বহুতলের আবাসিকরা বিক্ষোভও দেখান।
গার্ডেনরিচের বহুতল বিপর্যয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। শুধু কী তাই? সহায়-সম্বল এমনকি মাথার ছাদ হারিয়েছেন অনেকে। আর তারপর থেকেই উঠে আসছে শহরে একাধিক বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। আইন-শৃঙ্খলাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ হয়েছে কলকাতার বুকে। বৃহস্পতিবার ফের একবারে গার্ডেনরিচ এলাকাতেই খোঁজ পাওয়া গেল একটি বেআইনি বহুতলের। এলাকার জে ৪৭৪/সি/১ নির্মীয়মান একটি বহুতল বিল্ডিং হেলে রয়েছে পাশের বহুতলের গায়ে। ওই বেআইনি বহুতল পরিদর্শনে যায় কলকাতা পুরসভার বিশেষ তদন্ত কমিটি। সঙ্গে ছিলেন পুরসভার বেশ কয়েকজন কর্মীও। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিল্ডিংয়ের মালিক জনৈক রাজকুমার সিং। প্রাথমিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নির্মাণ বেআইনি। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বেআইনি ওই বহুতল ভাঙার কাজ। আর এই ঘটনাতেই ক্ষোভ শুরু বহুতলের বাসিন্দাদের। অভিযোগের তিরে রাজকুমার সিং।
যদিও গার্ডেনরিচের বিপর্যয়ের আগে অবধি এবিষয়ে দেখা যায়নি প্রশাসনিক তৎপরতা। প্ৰশাসনিক ঔদাসীন্যের কারণেই শহরের দিকে দিকে গজিয়েছে বেআইনি বহুতল। বারংবার সাধারণ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে টনক নড়ছে রাজ্য প্রশাসনের। আর সেকারণেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্যবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা নিয়েও।
গার্ডেনরিচের বহুতল বিপর্যয়ে অকালে বলি হয়েছে বহু প্রাণ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় গঠন হয়েছে কলকাতা পুরসংস্থার তদন্ত কমিটি। শুরু হয়েছে তদন্ত।
মঙ্গলবার পুরসভার যুগ্ম কমিশনার জয়ন্ত তাঁতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি আজহার মোল্লা বাগানে সাইট পরিদর্শন করে। তদন্তে ছিলেন, ডিসি পোর্ট, ওসি গার্ডেন রিচ সহ ডিজি সিভিল, সিএমই এসডব্লিউএম, ডিজি রোডস, ডিজি বিল্ডিং, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মৃৎ ও স্থাপত্য বিভাগের ৩ জন বিশেষজ্ঞও।
বিশেষজ্ঞরা বিপর্যয়স্থলের লোহা, কংক্রিটের কয়েকটি নমুনা সংগ্রহ সহ, ধ্বংসের পিছনে ঠিক কী কারণ, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখেন। চিহ্নিত করা হয়েছে মাটি পরীক্ষার বোরিং স্পটও। নিরাপত্তা পয়েন্টে কিছু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে, সেখানে ধ্বংসের কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। নিরাপত্তার কারণেই ইতিমধ্যেই স্থানীয়দের ঘটনাস্থলে বা ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে না যাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা। এছাড়াও প্রোমোটারদের দ্বারা, কোন ধরনের পরিকল্পনা ব্যবহার করা হয়েছিল বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে, তাও অনুসন্ধান করছে পুলিস কর্তৃপক্ষ। পার্শ্ববর্তী কাঁচা বাড়ি এবং সম্পত্তির ক্ষতির মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছে তদন্ত কমিটি। যদিও একারণে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার ফের জমির বিবরণ যাচাই তদন্ত কমিটির। এছাড়াও ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষজ্ঞরা সাইট থেকে কংক্রিটের নমুনা সংগ্রহ করেন বলে সূত্রের খবর। তবে, বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী ২দিনের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থল ফের পরিদর্শন করা হতে পারে বলে কলকাতা পুরসংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে।
এখন দেখার বিষয় একটাই যে, এই তদন্ত কমিটির হাতে ঠিক কী কী তথ্য উঠে আসে? প্রশাসনিক গাফিলতির জেরে ফের অকালে বলি হবেন না তো বাংলার মানুষ? রাজ্যবাসীর নিরাপত্তার দায়ভার নিয়ে ছেলেখেলা চলবে না তো? যদিও প্রশ্নগুলো জানা থাকলেও বরাবরের মতোই অজানা এর উত্তর।
গার্ডেনরিচ বহুতল বিপর্যয়ে আরও একজনের মৃত্যু। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২। শনিবার কলকাতার এসএসকেএমে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয়েছে ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধার।
সরকারি নথি অনুযায়ী গার্ডেনরিচের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬ জন জখম বাসিন্দা। তাঁর মধ্যে রয়েছেন, মহম্মদ হায়দার (২৪), রিজওয়ানা খাতুন (৩৫), মহম্মদ জানু (৩৫), সবিয়া পারভিন (১৯), সারিকা বেগম (২৬) এবং নমিতা পাত্র (৪০)।
গার্ডেনরিচের বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনায় এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রেড জোনে রয়েছেন যে ৩ জন তাঁর মধ্যে রয়েছেন, মুসরত জাহান (৩৫), মঈনুল হক (২৩) এবং মহম্মদ সহিলউদ্দিন(২১)।
তবে এই এই বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই শোকজ করা হয়েছিল পুরসভার ৩ ইঞ্জিনিয়ারকে। শোকজ জবাবে ইঞ্জিনিয়ারদের যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় পুরসভা। শোকজের এই জবাবে ইঞ্জিনিয়ারদের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হচ্ছে তিন ইঞ্জিনিয়ার, শুভম ভট্টাচার্য, দেবব্রত ঘোষ, এবং দেবাদিত্য পালের বিরুদ্ধে।
এখন দেখার বিষয় যে গার্ডেনরিচের ঘটনায় গঠিত ৭ সদস্যের কমিটির ওই রিপোর্টে কী তথ্য উঠে আসে। শুধুই কি ইঞ্জিনিয়ারদের গাফিলতি নাকি নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালীদের হাত? এই উত্তর তো বলবে সময়। কিন্তু এই মৃত্যু মিছিল পুনরায় ঘটবে না তো? প্রশাসনের হুঁশ আদৌ ফিরবে তো? নাকি ভোট পেরোলেই আবার যেই কী সেই? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
গার্ডেনরিচের বহুতল বিপর্যয়ের পরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এলাকার অন্যান্য অবৈধ নির্মাণ নিয়ে অতি সক্রিয় কলকাতা পুরসভা। ভেঙে পড়া বাড়ির আশেপাশের অবৈধ নির্মাণ নিয়ে পুরসভার তৎপরতা রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। আগামী ২৮ তারিখেই ধ্বংসস্তূপের ২০০ মিটারের মধ্যে একটি পাঁচতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেলার নোটিশ দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। সম্প্রতি গার্ডেনরিচকাণ্ডের পরেই সিএন-এর ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল কীভাবে একটি বাড়ি আরেকটি বাড়ির উপর বিপজন্নকভাবে হেলে পড়েছিল। খবর সম্প্রচার হতেই তড়িঘড়ি সেই হেলে পড়া বাড়ির জন্য বিপর্যস্ত বহুতলটির একাংশ ভাঙার নির্দেশ পুরসভার। কিন্তু এই বহুতলের মালিকের দাবি, তার বাড়ি সম্পূর্ণ বৈধ। আইন-নিময়কানুন মেনে পুরসভার অনুমতি নিয়েই তৈরি বহুতলটি। বরং যে বাড়িটি হেলে পড়েছে, সেই বাড়িটিই অবৈধ নির্মাণ। এখন তাঁর বাড়ি ভাঙলে বিপজন্নক অবস্থায় থাকা বাড়িটি আরও হেলে পড়বে, আশঙ্কা বহুতলের মালিকের।
সূত্র্রের খবর, ২০২৩ সালের ৭ জুলাই দুটি বাড়ির মালিককেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল কলকাতা পুরসভায়। উভয়ের পক্ষকেই বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দেয় পুরসভা। কিন্তু অবৈধ বহুতলের মালিক কোনও সহযোগিতা করেনি। পুরসভাকে বিষয়টি জানানোর পরও অবৈধ বহুতলের মালিকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি পুরসভার তরফে। বরং খবর প্রকাশ্যে আসতেই নতুন করে কোনও হিয়ারিং-এর ডেট না দিয়ে, সরাসরি আইন অনুযায়ী তৈরি হওয়া বাড়িটির একাংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় পুরসভা। দাবি নোটিশ পাওয়া বাড়ির মালিকের।
কিন্তু গার্ডেনরিচ বিপর্যয়ের পরেই কেন প্রশাসনের এই অতি সক্রিয়তা? কেন বিপর্যয়ের আগেই হুঁশ ফেরে না সরকারের? এই প্রশ্নের নেই কোনও উত্তর। বরং এখনও সেই অসাধুভাবে নির্মাণের ঘটনাই আড়ালের চেষ্টা চলছে গার্ডেনরিচে। আর কোপ পড়ছে বৈধ নির্মাণের উপর। প্রশ্নের সম্মুখীন পুরসভার কর্ম দক্ষতা তা বলাই বাহুল্য।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গোটা এলাকা। রবিবার রাতে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। বহু মানুষ আটকে থাকে ধ্বংসস্তূপের নিচে। আজ, শুক্রবার সেখান থেকে উদ্ধার হয় আব্দুল রউফ নিজামি ওরফে শেরুর মৃতদেহ। ওই ব্যক্তি প্রোমোটারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে খবর।
সূত্রের খবর, ধ্বংসস্তূপের নিচে শেরুও আটকে যান। কংক্রিটের চাঙড়ের কোনও এক অংশের মধ্যে তিনি আটকেছিলেন। মোবাইল ফোনে সেই কথা জানিয়েছিলেন শেরু। অবশেষে তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বুধবার এনডিআরএফ উদ্ধারকাজ শেষ করে। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে টানা উদ্ধার কাজ হবে। এমন কথাই জানিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার গোটা দিন বিভিন্ন জায়গার চাঙর ভেঙে সরানো হয়। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজও চলে৷ আজ শুক্রবার সকালে আব্দুল রউফ নিজামি ওরফে শেরুকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১।
রবিবার রাতে গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগানে এলাকায় ঝুপড়ির উপর ভেঙে পড়েছিল নির্মীয়মাণ বহুতলের একাংশ। নিমেষের মধ্যে ওই ঝুপড়ি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। আর সেই ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে ছিলেন বহু মানুষ। বহু প্রাণহানি, বহু জখমের খবরে চোখে জল শহরবাসীর।
সেদিন রাত থেকেই উদ্ধার কাজে নামে NDRF। কিন্তু ইতিমধ্যেই কাজ বন্ধ করে এনডিআরএফ। দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে পুরসভার হাতে। গার্ডেনরিচের বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনায় এখনও আটকে থাকার সম্ভাবনা সেরু নামে ১ জনের। বুধবার এনডিআরএফ কর্মীরা, 'ভিকটিম লাইভ ডিটেক্টর' নামে অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে খোঁজ পেয়েছিলেন প্রাণের। যেখান থেকে অনুমান করা হচ্ছিল ধবংসস্তূপের নিচে চাপা রয়েছেন শেরুই।
বৃহস্পতিবার বহুতল বিপর্যয় এলাকা পরিদর্শণে আসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। জানালেন DMG এবং পুরসভা মিলিত ভাবে শুরু করেছে গার্ডেনরিচের উদ্ধারকাজ। একইভাবে পোর্ট ডেপুটি কমিশনারও জানালেন পুরসভার সঙ্গে মিলিত ভাবেই চলছে উদ্ধারকাজ। চলছে উদ্ধার কাজ। এ যেন সেই 'উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে'। বেআইনি নির্মাণের নেপথ্যে প্রভাবশালীরা, আর প্রাণ গেল আমজনতার। আর কতদিন বাংলার মানুষ এই চিত্র দেখবে? কেনই বা বারবার সাধারণ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে হুঁশ ফেরাতে হবে প্রশাসনের? এই ঘটনায় যতই বেআইনি নির্মাণ নিয়ে নড়েচড়ে বসুক পুরসভা, ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে হবে না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার দায় আসলে কার? নাকি প্রত্যেকবারই এর-ওর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা অব্যাহত থাকবে? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। সরব রাজ্যবাসী। আর এভাবেই বারংবার একাধিক প্রাণের বিনিময়ে হুঁশ ফিরছে প্রশাসনের। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার পর কলকাতা পুরসংস্থায় জমছে অভিযোগের পাহাড়। একাধিক বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। তাও আবার জমা পড়ছে সরাসরি ডিজি বিল্ডিংয়ে। সূত্রের খবর, সেই সমস্ত অভিযোগ বোরো এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে কলকাতা পুরসংস্থার বিল্ডিং বিভাগ।
ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ জানালেন, সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে লুঠপাটের রাজ চলছে। পরিণাম, অসংখ্য প্রাণহানি। প্রশাসন জানে সবই শুধু দায় কেউ নিচ্ছেন না।
একদিকে যখন প্রশ্ন উঠছে, গার্ডেনরিচের মতো এমন জনবহুল, ঘিঞ্জি এলাকায় এমন অবৈধ নির্মাণের বহুতল গড়ে উঠল কীভাবে? অন্যদিকে এই ঘটনায় প্রকাশ্যে আসছে বেআইনি নির্মাণের এক নয়, একাধিক অভিযোগ। আর এখানেই প্রশাসনের গাফিলতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে শহরবাসীর নিরাপত্তা নিয়েও। এতদিন কি ঘুমিয়ে ছিলেন প্রশাসন? আর কত লাশের পাহাড় জমা হলে এই সমস্যার সুরাহা মিলবে? জবাব চাইছে বাংলার মানুষ।
কলকাতার আরও একটি বেআইনি নির্মাণকে জরিমানার অঙ্ক দ্বিগুণ করে দু- লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের। বেআইনি নির্মাণগুলির ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট যে চরম পদক্ষেপের পথে হাঁটছে তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। কলকাতার নন্দীবাগান এলাকায় একটি বেআইনি নির্মাণে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দ্বিগুণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিনহা। এর আগে ওই বেআইনি নির্মাণের জন্য প্রোমোটারকে এক লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। বুধবার সেই অঙ্ক বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা করেছেন বিচারপতি সিনহা।
কিন্তু কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে ঠিক এমন নির্দেশ? কলকাতা পুরসভার ১২ নম্বর বোরোর ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দীবাগান এলাকায় কোনরকম অনুমতি ছাড়া একটি তিন তলার বেআইনি নির্মাণ গড়ে উঠেছিল। নজরে আসতেই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু পুরসভায় পাল্টা ওই বেআইনি নির্মাণকে আইনি অনুমোদন দেওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছিলেন প্রোমোটার। তাতে কাজ না হওয়ায় পরে প্রমোটার নিজেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর আবেদন ছিল নির্মাণটিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হোক। কিন্তু বিচারপতি সিনহা তাতে কোন আমল দেননি। উল্টে প্রোমোটার কে ১৮ মার্চের মধ্যে জরিমানা বাবদ এক লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু সেই নির্দেশ পালন না করে পাল্টা ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় প্রোমোটার। যেহেতু সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি তাই বুধবার বিচারপতি সিনহার কাছে জরিমানার অঙ্ক জমা দেওয়ার জন্য আরও কিছুটা সময় চান প্রোমোটারের আইনজীবী। আর এতেই চটে যান বিচারপতি। তিনি বলেন আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি এবং ইচ্ছাকৃত জরিমানা এড়ানোর জন্য ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রোমোটার। চূড়ান্ত সাহসিকতার কাজ করছে প্রোমোটার। তাই তাকে এবার দ্বিগুণ জরিমানা দিতে হবে। এরপরই বিচারপতি নির্দেশে জানিয়ে দেন, ২২ মার্চের মধ্যে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে ওই প্রোমোটারকে। ২৭ মার্চ তার রশিদ জমা দিতে হবে আদালতে। সেইদিনই মামলার পরবর্তী শুনানি।
গার্ডেনরিচে বিপর্যয়ের ঘটনায় মৃতের সংখ্য়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃত অবস্থায় এক ব্য়ক্তিকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের পর থেকে বন্ধ রয়েছে উদ্ধারকাজ। আজ, বুধবার ভোররাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ব্যাহত ছিল উদ্ধারকাজ। বৃষ্টির পরিমাণ একটু কমতেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন এনডিআরএফের কর্মীরা।
এদিন সকালে গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া বহুতল ও তার পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলির খতিয়ে দেখতে যান কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক অধিকর্তা। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের চার অধিকর্তা এসে গোটা এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, নির্মীয়মাণে গাফিলতির কারণে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চলেছে কলকাতা পুরসংস্থা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই জায়গায় জলাশয় ছিল। এলাকার সবাই সমস্ত কিছু জানে। কিন্তু কোন অভিযোগ করার সাহস নেই। গার্ডেনরিচের বাড়িগুলি একে অন্যের গায়ে হেলে রয়েছে। যা দেখার পরেও মানুষের কোনও হেলদোল নেই। এভাবেই আতঙ্কের মধ্য়েই বসবাস করছেন মানুষজন। দুর্ঘটনার তিন দিন কেটে গেলেও ভয়াবহ সোমবারের সেই রাতের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না স্থানীয়রা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এসএসকেএম হাসপাতালে যে তিনজন ভর্তি রয়েছেন তাঁদের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। আগের থেকে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে তাঁদের স্বাস্থ্যের।