ইডির হাজিরা এড়িয়ে নির্বাচনী প্রচারে মহুয়া মৈত্র। 'বিদেশ মুদ্রা লেনদেন' সংক্রান্ত মামলায় আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সকাল ১১ টার মধ্যে দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই তলবে সাড়া দিলেন না কৃষ্ণনগর তৃণমূল প্রার্থী। বরং নিজের কেন্দ্রেই প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন বলে তদন্তকারী সংস্থাকে স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে এদিন শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দান্দিকেও তলব করেছে ইডি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য পাওয়া যাবে, তার ভিত্তিতেই মহুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল ইডি, এমনটাই সূত্র মারফর খবর।
গত কয়েকদিন আগেই কৃষ্ণনগরের বহিস্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রের একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। দিল্লির বিশেষ টিম কলকাতায় নেত্রীর বাবার ফ্ল্যাটে দীর্ঘ তল্লাশি চালান। তল্লাশি চলে কৃষ্ণনগরের একাধিক ঠিকানায়। এমনকি নির্বাচনী কার্যালয়ে ঢুকেও দীর্ঘ তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় এই তল্লাশি অভিযান চলে। যদিও দীর্ঘ র্তল্লাশি অভিযানে খালি হাতে ফিরতে হয় তদন্তকারী সংস্থাকে।
এরপরেই 'বিদেশ মুদ্রা লেনদেন' সংক্রান্ত মামলায় মহুয়া মৈত্রকে তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ৪৮ ঘণ্টার নোটিশে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা বলা হয়। যদিও ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে তদন্তের মুখোমুখি তৃণমূল নেত্রী হবেন কিনা তা নিয়ে ছিল একাধিক প্রশ্ন। এর আগেও এই মামলায় তাঁকে নোটিশ দেয় ইডি। কিন্তু তদন্তকারী আধিকারিকদের মুখোমুখি হননি। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইডির হাজিরা এড়ালেন মহুয়া। ভোট প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন বলে তদন্তকারী সংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
আজ অর্থাৎ বুধবার সন্দেশখালির ঘটনার ১৯ দিন পর এখনও 'নিখোঁজ' শেখ শাহজাহান। গত ৫ জানুয়ারির ঘটনার পর আজ সকাল সকাল ফের শেখ শাহজাহানের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে ইডি। রেশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ডে ফের সুপার অ্যাকশন মোডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। জানা গিয়েছে, শাহজাহানের বাড়ির তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে ইডি। তবে এ দিনের দৃশ্যটা ৫ জানুয়ারির থেকে একেবারেই আলাদা। এদিন সরবেড়িয়া গ্রাম যেন পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। এলাকাজুড়ে রয়েছে রাজ্য পুলিস এবং সিআরপিএফ। আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা পুরোপুরি তৈরি হয়ে এসেছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে এসেছেন ইডি আধিকারিকরা। ৫ জানুয়ারি যে তল্লাশি করতে তাঁরা এসেছিলেন, সেই কাজই করতে না পারায় এদিন ফের শেখ শাহজাহানের ডেরায় হানা দিয়েছে ইডি। জানা গিয়েছে, বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ৮ জন ইডি আধিকারিক আসেন। ইডির তরফ থেকে পুরো তল্লাশি ভিডিওগ্রাফি করা হচ্ছে। আলাদা করে ভিডিওগ্রাফার নিয়ে আসা হয়েছে। মোতায়ন রয়েছে ন্যাজাট থানার পুলিস আধিকারিকরা এবং বসিরহাট থানার পুলিস আধিকারিকরা। তেরো জনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে তল্লাশির স্বার্থে। যেখানে আটজন ইডি আধিকারিক সহ দুজন লোকাল উইটনেস এবং প্রশাসনিক কর্তারা রয়েছেন। প্রশাসনিক কর্তাদের বডিক্যাম রয়েছে। মূল বাড়িতে যেরকম তল্লাশি চলছে পাশাপাশি অন্যান্য আত্মীয়দের বাড়িতেও চাবির খোঁজে যান তদন্তকারী আধিকারিকরা। চাবি খুঁজে না পাওয়ায় দিয়ে লোক দিয়ে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চলছে। জানা গিয়েছে, ইডির তরফে শেখ শাহজাহানের বাড়ির তালা ভাঙতে ২ জনকে আনা হয়েছে।
অনুমান করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে রয়েছে শাহজাহানের গুপ্তধন। দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা রয়েছে তার কাছে। আর সেই সূত্র ধরেই ফের সন্দেশখালিতে ইডির এই তল্লাশি অভিযান। এখনও অবধি হদিস নেই বিপুল সম্পদ এর। কোথায় গেলো শাহজাহান বিপুল বেআইনি অর্থ? সূত্র অনুযায়ী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতার একাধিক স্থানে গোপনে টাকা সরানো হয়েছে। সরানো হয়েছে অস্ত্র ও। ইডির হাতে একাধিক নেতা, বিধায়ক এর নাম উঠে এসেছে এই সূত্রে। ফলে এদিন ইডির তল্লাশি অভিযানের পর কী কী তথ্য হাতে উঠে আসে, তাই এখন দেখার।
সন্দেশখালিতে ইডির তদন্তকারী আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় এবারে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের কাছে আবেদন করেছিলেন তাঁরা।মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছেন বিচারপতি। আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই শুনানি বলে জানা গিয়েছে।
ইডির অভিযোগ, 'রেশন দুর্নীতির মামলায় তল্লাশি করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন ইডি অফিসাররা। উল্টে আমাদের অফিসারদের বিরুদ্ধে পুলিস এফআইআর করেছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। সব সংবাদমাধ্যমে এটা প্রচার হচ্ছে। আমরা বসিরহাট কোর্টেও খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু সেখানেও এমন কোনও এফআইআৎ কপি যায়নি। ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি। উল্টে পুলিস প্রতিদিন আমাদের অফিসে খোঁজ করছে, কোন কোন অফিসার সেদিন সেখানে গিয়েছিল। আমাদের আশঙ্কা, তাঁদের নামেও নতুন অভিযোগ দায়ের করবে হেনস্থার জন্য।' ইডি আরও জানিয়েছে, সন্দেশখালিতে ইডি অফিসারদের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিসের এফআইআর-এর কপি দিচ্ছে না পুলিস। তাই আদালতের দারস্থ হয়েছে ইডি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে এতদিন 'কালীঘাটের কাকু'র কন্ঠস্বরের নমুনা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইডি। এবারে রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হস্তাক্ষর নেওয়ার জন্য তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত শনিবার ইডি দাবি করেছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর মেয়ে প্রিয়দর্শিনীর মধ্যে চিঠির মাধ্যমে কথাবার্তা হয়েছে। ফলে সেই চিঠি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর লেখা কিনা তা খতিয়ে দেখতেই তাঁর হস্তাক্ষর মিলিয়ে দেখা হবে।
ইডি সূত্রে খবর, রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে গ্রেফতার রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হাসপাতালে থাকাকালীন মেয়েকে চিঠি পাঠান। কিন্তু সেই চিঠি ধরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা। হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয়ের নিরাপত্তায় বহাল ছিলেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা। তাঁদের মাধ্যমেই ইডির হাতে চিঠিটি এসেছে বলে দাবি। ইডি আরও দাবি করেছে, ওই চিঠিতে 'বিস্ফোরক' তথ্য রয়েছে। আর সেখানেই লেখা ছিল শঙ্কর আঢ্যের নামও। হাসপাতালে বসেই কি চিঠি লিখেছিলেন মন্ত্রী? বিদেশে টাকা পাচারের পরিকল্পনাও দিয়েছিলেন মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিককে। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতেই বালুর হস্তাক্ষর মিলিয়ে দেখতে চাইছে ইডি। তাই হ্যান্ড রাইটিং বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। খুব শীঘ্রই তাঁর হস্তাক্ষরের সঙ্গে চিঠিতে লেখা হস্তাক্ষর মিলিয়ে দেখা হবে বলে ইডি সূত্রে খবর।
শুক্রবার সন্দেশখালির ঘটনার পর সরবেড়িয়া এলাকা পুরো থমথমে। খোঁজ নেই বাহুবলী তৃণমূল নেতার। বাড়িতে ঝুলছে তালা। বেপাত্তা বেতাজ বাদশা শাহজাহান। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রাতে বাংলাদেশ পালানোর চেষ্টাও করেছিল তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তবে জানা গিয়েছে, তার ফোন ট্র্যাক করতেই লোকেশন বাড়ির ভেতর দেখাচ্ছে। ফলে অনুমান করা হয়েছে, বাড়িতেই রয়েছেন তিনি। তাই এবার লুক আউট নোটিশ জারি করা হয়েছে, যাতে কোনওরকম ভাবে বর্ডার পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন।
সন্দেশখালিতে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয় ইডি আধিকারিকদের। এর পর থেকেই পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অধরা অভিযুক্তরা। শাহজাহানও নিখোঁজ। এরপরই আজ অর্থাৎ শনিবার ইডি বিএসএফ-এর কাছে লুক আউট নোটিশ জারি করেছে। সেন্ট্রাল আইবিকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারণ জানা গিয়েছে, গতকাল বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল শাহজাহান, কিন্তু ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে নির্বাচন থাকার কারণে বর্ডার সিল থাকার জন্য বাংলাদেশ যেতে পারেনি। তাই ফের তিনি সন্দেশখালিতে ফিরে আসেন এবং একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন বলে সূত্রের খবর। এছাড়া জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই তিনি আত্মসমর্পণ করতে পারেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আত্মীয় পরিজনদের নামে চারটি চালকল কসাইখানা আত্মীয় পরিজনদের নামে একাধিক সম্পত্তি রয়েছে।
এদিকে শাহজাহানের অনুগামীরা আজও জানিয়েছে, 'এলাকাতেই রয়েছেন শেখ শাহজাহান। তিনি পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি একজন ভগবান। তিনি সন্দেশখালির বাঘ। তিনি যেখানেই থাকবেন সেটাই তাঁর এলাকা। উনি খুব বিচক্ষণ মানুষ। ঠিক সময় সামনে আসবেন।'
এ যেন একেবারে সিনেমার দৃশ্য! 'রেইড' সিনেমা তো নিশ্চয় দেখেছেন আপনারা! এবারে বাংলাতেও দেখা গেল একই ঘটনা। শাসকদলের নেতার বাড়িতে হানা দিতেই ঝাপিয়ে পড়ল স্থানীয়রা। বাঁশ, লাঠি, লোহার রড, হাতের সামনে যা পেয়েছে তা নিয়েই ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলা করার অভিযোগ উঠছে। তিন ইডি আধিকারিকদের বাঁশ দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। বাদ গেলেন না সিআরপিএফের জওয়ানরাও। মার খেতে হল তাঁদেরও। এছাড়া সাংবাদিকদের ওপরেও চড়াও হওয়া, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠছে। জানা গিয়েছে, জখম তিন ইডি আধিকারিক অঙ্কুর গুপ্তা, রাজকুমার রাম এবং সোমনাথ দত্তকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয়েছে। রাজকুমারের আঘাত সব থেকে গুরুতর। তাঁর শরীরে সাতটি সেলাই পড়েছে এবং সোমনাথ দত্ত-এর ৪ টি সেলাই পড়েছে। সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে তিন জনের। বর্তমানে সন্দেশখালি ঘিরে রেখেছে রাজ্য পুলিস।
নতুন বছরের শুরুতেই পুরো সুপার অ্যাকশন মুডে ইডি আধিকারিকরা। শুক্রবার রেশন দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ফের সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছেন তাঁরা। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে বালু ঘনিষ্ঠ শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিতেই তুলকালাম কাণ্ড। তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি হানা দিতেই বাড়ির সামনে তাঁর অনুগামীদের বিক্ষোভ। কেন না জানিয়ে ইডির হানা? প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। শুধু তাই নয়, ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলা করার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জনওয়ানদেরও ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের একাংশের বিরুদ্ধে। জনগণের প্রতিক্রিয়া দেখে ইডি আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যান। তবে এর পরেও থামেনি বিক্ষুব্ধ জনতা। টায়ারে আগুন ধরিয়ে রাস্তা অবরোধ করার অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুরো এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে স্থানীয় পুলিসকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। থানায় এফআইআর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইডি। আদালতেও জানানো হবে আজকের গোটা বিষয়। এছাড়াও সন্দেশখালির এই ঘটনার বিষয়ে কলকাতা অফিস থেকে ইডির দিল্লি হেড কোয়ার্টারকে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই দিল্লির সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে আজকের রিপোর্টে।
ফের ইডির তলব এড়ালেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এই নিয়ে তৃতীয়বার ইডির নোটিশ এড়ালেন কেজরিওয়াল। ফলে আশঙ্কা বাড়ছে, লোকসভার নির্বাচনর আগেই কি গ্রেফতার হতে পারেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। আবগারি দুর্নীতি মামলায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। আজ অর্থাৎ বুধবারও তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিনও তিনি তলব এড়িয়ে ইডিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ইডির সঙ্গে সহযোগিতা করা সম্পূর্ণ ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। কিন্তু এই নোটিশ 'বেআইনি' এবং 'অবৈধ'।
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। এরপর এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তলব করেছে ইডি। এর আগে ১২ নভেম্বর ও ২১ ডিসেম্বর তলব করা হয়েছিল। আজও তাঁর ইডির দফতরে হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিন ইডিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর ইডির সঙ্গে সহযোগিতা করার সম্পূর্ণ ইচ্ছা আছে। কিন্তু যে নোটিশটি তাঁকে পাঠানো হয়েছে সেটি বেআইনি এবং অবৈধ। তিনি বুঝতে পারছেন যে, তাকে গ্রেফতার করার জন্যই এই নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। যাতে তিনি আগামী লোকসভা নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচার করতে না পারেন। তিনি আরও লিখেছেন আগের চিঠিতে তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেগুলির কোনও উত্তর ইডি না দিয়ে ফের নোটিশ পাঠিয়েছে। এছাড়াও লোকসভা নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রচার কার্যে ব্যস্ত থাকার জন্য তিনি হাজিরা দিতে পারছেন না। একাধিকবার ইডির তলব এড়ানোর জন্য ইডি পরবর্তী পদক্ষেপ কী নিতে চলেছে, সেটাই এখন দেখার।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ফের তৎপর ইডি। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল হতেই শহরের একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্নীতিকাণ্ডে এবারে ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন একাধিক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, ব্যবসায়ী ও হিসেবরক্ষকরা। আরও জানা গিয়েছে, একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে কলকাতার অন্তত ৫টি জায়গায় হানা দিয়েছেন তদন্তকারীরা। সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও। জানা যাচ্ছে, এদিন রাজেশ দোশী নামে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টের বড়বাজারের অফিসে হানা দিয়েছেন ইডি কর্তারা। এছাড়াও ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী।
ইডি সূত্রে খবর, বড়বাজারে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রাজেশ দোশীর অফিসে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, মোট পাঁচটি সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন তিনি। আর প্রত্যেকটি অফিসের ঠিকানা একই, ৭৭ এনএস রোড। এছাড়াও এদিন বাইপাসের ধারে বেঙ্গল কেমিক্যাল-এর কাছে দুটি ফ্ল্যাটে ইডি তল্লাশি চলছে। এরপর মানিকতলা রোডে অবস্থিত মনিকলা আবাসনে পৌঁছেছেন গোয়েন্দা আধিকারিকরা। সুবোধ সাচার এবং অশোক সাধুকা নামে দুই ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়েছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবার আলিপুর পার্ক রোডের বেলেয়ার সাউথ সিটি বহুতল আবাসনের চার তলায় আজ সকাল থেকে ইডি তল্লাশি চলছে। জিসি অ্যাভিনিউতে পি ডি রন্ধার অ্যান্ড কোম্পানি অফিসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি।
ইডি সূত্রে খবর, শুধুমাত্র নিয়োগ দুর্নীতি নয়, গরু পাচার, কয়লা পাচার সহ একাধিক দুর্নীতির টাকা এই সমস্ত চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কালো টাকাকে সাদা করার যে প্রচেষ্টা করা হয়েছে, সেই কারণেই আজ ইডির পক্ষ থেকে একাধিক হিসেবরক্ষক, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের বাড়িতে চলছে তল্লাশি অভিযান। হাওড়ায় এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানোর পর ইডির কর্তারা জানতে পারেন, কালো টাকাকে সাদা করতেই একাধিক ব্যবসায়ীকে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কালো টাকা কোন কোন ব্যবসার মাধ্যমে কোন কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে তারই খোঁজ চালাচ্ছেন ইডির আধিকারিকরা।
ধৃত অয়ন শীলের নাম ফের উঠে এল পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে। পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে গিয়েই চাঞ্চল্যকর তথ্য এল ইডির হাতে। নিয়োগ দুর্নীতিতে একাধিক মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। আর এই ফোনেই হদিশ পাওয়া গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের। যেখানে 'অ্যাডমিন' অয়ন শীল ও সেখানেই পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা সুপারিশ দিতেন নিয়োগের জন্য। ইতিমধ্যেই ১৪ টি পুরসভার নাম উঠে এসেছে এই দুর্নীতি মামলায়।
এর আগেও ইডির হাতে গ্রেফতার প্রোমোটার অয়ন শীলের সম্পর্কে একাধিক চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছিল। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলেই দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবারে ইডির দাবি, এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমেই পাঠানো হত চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা। জানা গিয়েছে, সেই গ্রুপেই চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশ করতেন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা। এরপর সেই নির্দেশ মতই অয়ন শীল চাকরিপ্রার্থীদের কাছে চাকরি 'বিক্রি' করতেন। অর্থাৎ টাকার অঙ্ক থেকে শুরু করে ওএমআর শিটে বিকল্প তৈরি করা, নম্বর বাড়িয়ে প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিজের সংস্থার কর্মীদের বলে দিতেন অয়ন শীল। পুরসভার চেয়ারম্যানদের সুপারিশ মতই নিয়োগ দেওয়াতে তৎপর হতেন অয়ন শীল। ফলে ইডির এই দাবির পরই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমেই অযোগ্য প্রার্থীদের পুরসভায় নিয়োগ দেওয়া হত? এই তথ্য উঠে আসার পর ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটাই এখন দেখার।
এবারে ইডির তলব বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ও তাঁর পুত্র তেজস্বী যাদবকে। তেজস্বী যাদব বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, জমি দিয়ে রেলে চাকরি দেওয়ার অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বুধবার তলব করেছে আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব ও তাঁর দ্বিতীয় পুত্র তেজস্বীকে।
এই মামলায় এর আগেই বাবা ও ছেলেকে জেরা করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলায় বেআইনি পথে অর্থ লেনদেনের অভিযোগের তদন্ত করছে ইডি। জানা গিয়েছে, লালু প্রসাদকে শুক্রবার অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর এবং তেজস্বীকে আগামী ২৭ ডিসেম্বর দিল্লির ইডি অফিসে যেতে বলা হয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, দুই নেতাকে গ্রেফতার করতে পারে তদন্তকারী সংস্থাটি। বর্তমানে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারির মামলায় লালুপ্রসাদ জামিনে মুক্ত। তাঁর জামিন খারিজ করে ফের জেলে পাঠাতে তৎপর সিবিআই। তারা দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছে। এরই মাঝে ফের বিপাকে আরজেডি সুপ্রিমো ও তাঁর ছেলে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার ইডির তলব ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থ সরকার ওরফে ভজাকে। তিনি শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অতি ঘনিষ্ঠ। এর আগে তাঁর বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চালালেও সম্ভব হয়নি যোগাযোগ। এবার সিজিও কমপ্লেক্সে পার্থ সরকারকে তলব ইডির। আজ, বুধবারই বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁকে ইডির দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শরীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে হাজিরা এড়ালেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর পার্থ সরকার।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলা শেষ করার সময় যতই এগিয়ে আসছে তদন্তে খুঁটিনাটি জানতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতা বাড়ছে। বেরিয়ে আসছে নতুন মুখ। এর আগেও ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের পাটুলির বাড়িতে পৌঁছেছিল সিবিআই। এবার যাঁর ডাক পড়েছে তাঁর বাড়িতেও এর আগে এসেছিল সিবিআই। তবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থ সরকারের সঙ্গে। যদিও তল্লাশি চালিয়ে তাঁর বাড়ি থেকে সিবিআই উদ্ধার করেছিল কিছু নথি।
সূত্রের খবর, এবার সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির তরফে ডেকে পাঠানো হল পার্থ সরকারকে। নিয়ে আসতে বলা হয়েছে বেশ কিছু তথ্য, নথিও। প্রথমে বাড়ি তল্লাশি, তার বেশ কিছু সময় পর খোদ কাউন্সিলরকে তলব ইডির। সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র সহ বেশ কিছু ধাপ পেরিয়ে পৌঁছতে হত তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর গ্রেফতারির পরে অঘোষিত বিধায়ক হিসেবে বেহালা পশ্চিম চত্বরে দেখা গিয়েছে এই পার্থ সরকারকেই। কিন্তু এদিন তাঁকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এড়িয়ে যান। তাঁর তরফ থেকে ৫দিনের সময় চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু নথি তিনি ইডি দফতরে পাঠিয়েছে ও বেশ কিছু নথি জোগাড় করতে সময় লাগবে বলে ইডির আধিকারিকদের জানিয়েছেন পার্থ সরকার। এখন দেখার, সেসব নথি থেকে কী কী তথ্য খুঁজে পায় ইডি।
এবারে মন্নতের দুয়ারে এল ইডির চিঠি। বেশ কয়েক মাস ধরেই মহাদেব বেটিং অ্যাপ মামলায় বলিউডের একাধিক তারকারা ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন। আর এবারে বলিউডের কিং খান গৌরী খানকেও তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তবে মহাদেব বেটিং অ্যাপ মামলায় নয়, গৌরী খানকে ইডি নোটিশ পাঠিয়েছে আর্থিক তছরুপের মামলায়।
শাহরুখ খানের স্ত্রীর পাশাপাশি গৌরী খান রেড চিলিজ প্রযোজনা সংস্থার মালকিন ও ইন্টিরিয়র ডিজাইনার কোম্পানিরও কর্ণধার। এবারে তাঁর নাম জুড়েছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি তুলসিয়ানি গ্রুপের সঙ্গেও। আসলে এই কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন তিনি। আর তাতেই বিপােকে পড়লেন গৌরী খান। এই সংস্থার বিরুদ্ধে কখনও প্রতারণা, কখনও আর্থির তছরূপের একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আর গৌরী খান এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলেই এবার ইডির ডাক পেলেন তিনি।
জানা গিয়েছে, এই সংস্থার এক প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৩০ কোটি পেয়েছিলেন গৌরী খান। আর এই অর্থের উৎস নিয়েই বর্তমানে প্রশ্ন তুলছে ইডি। অভিযোগ উঠছে, এই সংস্থা বিনিয়োগকারী ও ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ফলে গৌরী খান আর্থিক তছরূপের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তিনি যেহেতু এই সংস্থার সঙ্গে জড়িত, তাই গৌরী খানের বয়ান রেকর্ড করা প্রয়োজন। গৌরী খানকে তুলসিয়ানি গোষ্ঠী কত পারিশ্রমিক দিয়েছিল এবং তাঁদের মধ্যে কী চুক্তি হয়েছিল, তা জানতে চাইবে ইডি। এখনও পর্যন্ত ইডির তলব নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি গৌরীর।
একাই ১ হাজার কোটি টাকার মালিক বাকিবুর রহমান! ইডি তদন্তে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য। রেশন দুর্নীতির রহস্যের পর্দাফাঁস করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছিল প্রভাবশালী চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। তদন্ত এগোতেই দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির জালে উঠে আসে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। তদন্তের জাল গোটাতে তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নামে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সশরীরে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির অফিস ও বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী। ইডির হাতে এসে পৌঁছয় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এবার সেই মামলার তদন্তে দিল্লির সদর দফতরে বিস্ফোরক তথ্য পেশ করল ইডি আধিকারিকরা। ইডির দাবি, বিগত ১০ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ধৃত চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের কাছ থেকে ধান কেনার নামে দুর্নীতির মাধ্যমে ৪৫০ কোটি টাকা এবং গণবন্টনে দুর্নীতিতে ৫৫০ কোটি কামিয়েছে প্রভাবশালী ওই ব্যবসায়ী।
তবে এখানেই শেষ নয় দুর্নীতির। ইডির দাবি, রাইসমিলের মাধ্যমেই দুর্নীতির সাম্রাজ্য তৈরী করছে ধৃত চালকল ব্যাবসায়ী। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি রাইস মিল। মূলত খাদ্যশস্যের ২৫ শতাংশ ওজন কমিয়ে সেখানে খারাপ মানের খাদ্যশস্য মিশিয়ে দুর্নীতির কারবার চালাত বাকিবুর। সূত্রের খবর,এই দুর্নীতির লভ্যাংশ পৌঁছে যেত বালু ওরফে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়র পকেটেও।অভিযোগ, রেশন দুর্নীতির টাকা সরাতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের নামেও টার্ম ডিপোজিট খুলেছিলেন। খোলা হয়েছিল প্রায় ৫৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছিল ২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা।ভুয়ো কৃষকদের নামেও কেনা হয়েছে ধান। এই বেনিয়মে হাত ছিল রাইস মিল মালিক বাকিবুর রহমানের। আত্মীয় এবং মিল কর্মীদের ভুয়ো কৃষক সাজিয়ে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বকলমে ঘরে তুলতেন বাকিবুর। এমনকী, তদন্তে উঠে এসেছে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নামে থাকা একাধিক সংস্থায় দুর্নীতির অর্থ বিনিয়োগের তথ্য।
কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে শুধু কি বালু নাকি আরো অনেক প্রভাবশালী এই লভ্যাংশের ভাগীদার? খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবিভাগ। আগামী দিনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ধরপাকড়ে এখন আর কোন কোন প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ্যে আসে সেটাই দেখার।
ফের একবার ইডির তলব দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে। আজ অর্থাৎ সোমবার দিল্লি আবগারি মামলায় ইডি ফের তলব করল আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আগামী ২১ ডিসেম্বর তাঁকে হাজিরা দিতে বলেছে। জানা গিয়েছে, এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্যেই ইডির সমন হাতে পেলেন কেজরিওয়াল।
এর আগেও দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু সেসময় দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডির সমন এড়িয়ে যান তিনি। বিধানসভা ভোটের প্রচারে মধ্যপ্রদেশে যাবেন বলেই কেজরীওয়াল ইডির সদর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছিল। এছাড়াও জানা গিয়েছিল, কেজরীওয়াল তাঁকে তলব করার ঘটনাকে ‘বেআইনি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেছেন। ফলে এবার কি তিনি সমনে সাড়া দেবেন নাকি ফের হাজিরা এড়িয়ে যাবেন, এটাই এখন দেখার।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলায় বুধবার আদালতে হাজির করানো হয় বাকিবুর রহমানকে (Bakibur Rahman)। এদিন তাঁর আইনজীবী দেবজ্যোতি সেনগুপ্তকে জামিনের আবেদন করতে দেখা যায়নি। এর পরই বাকিবুরকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু এদিন আদালতে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করেছেন ইডি আধিকারিকরা। ইডির দাবি, শুধু আটা নয়, চাল নিয়েও একই ধরণের দুর্নীতি হয়েছে। ফলে চাল কীভাবে চুরি করা হয়েছে, সে নিয়েও তদন্ত করছে ইডি। ইডির দাবি, এই দুর্নীতিতে ডিলাররা এবং সমবায় সমিতিও জড়িত।
এদিন বাকিবুরকে আদালতে হাজির করানো হলে ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ভুয়ো শিবির করে ভুয়ো চাষির নাম করে ধান কেনার ভান করতেন বাকিবুর রহমান। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ব্যবহার করা হত আধিকারিকদের সিলও। এ ভাবে খাদ্য দফতরের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন বাকিবুর। ইডির আইনজীবী আদালতে আরও জানান, ধান কেনার ক্ষেত্রে খাদ্য দফতরের ভুয়ো অফিসার এবং ভুয়ো সমবায় সমিতির মাধ্যমে সব লেনদেন হত। ধান কেনার জন্য শিবিরের আয়োজন না করেই ধান কেনা হত ও সরকার নির্ধারিত টাকা পেত ভুয়ো সমবায় সমিতি এবং ভুয়ো চাষিরা। ফলে আসল চাষিরা বঞ্চিত হতেন ও মূল চক্রিরা আড়ালেই থাকতেন।
বুধবার জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বাকিবুরকে আদালতে তোলা হলে তাঁকে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।