কথায় আছে কান টানলে মাথা আসে। ইডির ওপর হামলা। শাহজাহানের বেপাত্তা। সঙ্গ দিয়েছিল পরিবার। শাসক দলের আশীর্বাদের হাত তাঁর মাথার উপর থাকায় তখনও অবধি বেঁচে যাওয়ার আশা ছিল শাহজাহানের মনে, ওয়াকিবহাল মহল বলতে শুরু করেছিল এমনটাই। তবে, দ্বিতীয়বার তাঁর আকুঞ্জিপাড়ার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালাতেই উদ্ধার প্রয়োজনীয় একাধিক নথি-পত্র উদ্ধার করে শাহজাহানের প্রাসাদ প্রমাণ বাড়ি সিল করে দিয়ে আসেন ইডির আধিকারিকরা, এবার সেই বাড়ি ফিরে পেতে মরিয়া শাহজাহান।
আইনজীবী মারফত শাহজাহান এবং তাঁর পরিবার দ্বারস্থ আদালতের। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে আকুঞ্জিপাড়ার বাড়ি সিল করা হয়েছে মাত্র, বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। তাই আদালতের কাছে তাঁদের আবেদন বাড়িটি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
যদিও আদালত এবিষয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাড়ি ফিরে পেতে গেলে ইডির অনুমতি নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি ইডি আধিকারিকদের দেখাতে হবে। যদি ইডি সম্মতি দেয়, তবেই বাড়ি ফিরে পাবে শাহজাহানের পরিবার।
একদিকে হেফাজতে নিয়ে একাধিক তদন্তের প্রশ্নজাল, অপরদিকে বাড়ি ফিরে পেতেও আদালতের নির্দেশে মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে এই ইডির, যাকে হালকা ছলে নিয়ে তদন্তকারী আধিকারিকদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন শাহজাহান। কর্মের ফল এভাবেই ভোগ করতে হবে শাহজাহানকে- হেনস্থা দোসর হয়ে জুড়ে থাকবেই তাঁর ক্ষোভ উগড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অবশেষে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার মোবাইল আনলক করতে সক্ষম হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আশা এই মোবাইলে থেকে মিলতে পারে জরুরি তথ্যপ্রমাণ। এবার তাই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার চ্যাট হিস্ট্রিতে নজর তদন্তকারীদের।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। প্রায় ১৪ ঘণ্টার তল্লাশিতে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল মন্ত্রীর ফোন। পরবর্তীতে, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে ইডির সদর দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তরফে। যদিও মন্ত্রীর পরিবার সূত্রে দাবি ছিল, তাঁকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র উদ্ধার হওয়া টাকা, মোবাইল ফোনের সমস্ত রকম ডিটেলস এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ইডির তরফে।
এছাড়াও ইডির নির্দেশ ছিল মন্ত্রীর বাজেয়াপ্ত মোবাইল ফোন আনলক করার। এরপরেই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার একজন প্রতিনিধিকে সমস্ত নথি-সহ পাঠানো হয় সিজিও-তে। তিনিই তদন্তকারী আধিকারিকদের সামনে আনলক করেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথের মোবাইল। ইডির দাবি, মন্ত্রীর মোবাইল থেকে খুলতে পারে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের রহস্যের জট। আর তাই এবার ইডির আতস কাঁচের নিচে মন্ত্রীর বাজেয়াপ্ত মোবাইল।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে বলাগড়ের বহিঃস্কৃত এক যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বাড়িতে তল্লাশির সূত্র ধরেই মন্ত্রী চন্দ্রনাথের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। এখন মন্ত্রীর মোবাইল থেকে, নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কে আর কী তথ্য উঠে আসে ইডির হাতে, সেটাই দেখার। তবে যেভাবে রাজ্যের একের পর এক দুর্নীতি কাণ্ডে, শাসকদলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়াচ্ছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে বারংবার দুর্নীতিতে তৃণমূলই কেন? এই দুর্নীতির জাল শাসকদলের মধ্যে কতদূর অবধি বিস্তৃত? শাসকদলের দুর্নীতির কারণে কেন বারবার বঞ্চিত হতে হবে রাজ্যবাসীকে? জবাব চাইছে বাংলার ওয়াকিবহাল মহল।
'রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র' করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, কয়েকদিন আগে এমনই দাবি করেছিলেন শেখ শাহজাহান। এবার বিজেপি মিথ্যে কথা বলছে সরব হন তিনি। আজ, শুক্রবার জোকা ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল সন্দেশখালির বাঘকে। সেখান থেকে বেরোনোর সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
শেখ শাহজাহান এদিন দাবি করেছেন, বিজেপির দালালরা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা বলছে। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক পাচারকের অভিযোগ ছিল। যেটা একেবারেই মিথ্যে বলে দাবি করেছেন তিনি। কোনও রকম মাদক কারবারের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শেখ শাহজাহান।
এদিকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে শেখ শাহজাহানকে দেখে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে দেখে 'চোর চোর' স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন শেখ শাহজাহানকে নিরাপত্তা না দিয়ে বুথে নিরাপত্তা দেওয়া। একজন চোরকে নিরাপত্তা দিয়ে কি হবে। তার চেয়ে বুথে বুথে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সন্দেশখালিতে অপরাধীরা জেল থেকে ছাড়া পাবে না। সন্দেশখালির অপরাধীদের সারাজীবন জেলেই থাকতে হবে। গতকাল কলকাতা হাইকোর্টও সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে যদি সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের একটি ঘটনাও ঘটে থাকে তাহলে শাসক দল সেটার দায় এড়াতে পারেন না।
ইডির উপরে হামলার পর ৫৫ দিন পলাতক ছিলেন তিনি। ৫৬ দিনের দিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তারপরে সিআইডি হেফাজতে ছিলেন শাহজাহান শেখ। সেখান থেকে সিবিআই তাঁকে হেফাজতে নেয়। কিন্তু একটা কথাও তাঁরা বলাতে পারেনি। তারপরে ইডি হেফাজতে মুখ খুলেছিলেন শাহজাহান শেখ। সেখানেই তিনি দাবি করেছেন, সন্দেশখালিতে মানুষের উপকারেই কাজ করেছেন তিনি। কারোর এক টুকরো জমি তিনি দখল করেননি।
ফের তুঙ্গে রাজ্য ও রাজ্যপাল সংঘাত। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের। এই সুপারিশকে এক্স হ্যান্ডেলে ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেন ব্রাত্য।
উল্লেখ্য, ৩০ শে মার্চ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন সরাসরি রাজ্যপাল। রাজ্যপালের অভিযোগ তিনি নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং সেই অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর সুপারিশ রাজ্যপালের।
এই ঘটনার পর টুইটে পাল্টা খোঁচা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। টুইট করে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আমি রাষ্ট্রপতির কাছে যদি রাজ্যপালকে সরানোর সুপারিশ করতাম, তা হলে সেটা যেমন হাস্যকর হত, এটাও ঠিক তেমনই। আমি কোনও নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করে থাকলে তা কমিশনের নজরে আনার অধিকার রয়েছে রাজনৈতিক দলের। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কোনও রাজ্যের মন্ত্রীর অপসারণ বা নিয়োগের সুপারিশ করতে পারেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাজ্যপাল এমন অভিযোগ তুলে নিজের সাংবিধানিক পদের অপব্যবহার করছেন। নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ও প্রকাশ্যে এনেছেন। নিজের সাংবিধানিক সীমাও লঙ্ঘন করেছেন।’’
— Bratya Basu (@basu_bratya) April 4, 2024
দিন যতই এগোচ্ছে, ততই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কড়া তদন্তে শাহজাহানের সম্পত্তির বহর একটু একটু করে ধসে পড়ছে। বৃহস্পতিবার জানা যায়, ইডির নজর এবার শেখ শাহজাহানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ওপর। কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে শেখ সাবিনার ফিশারির নাম উঠে এসেছে, যার মালিকও শাহজাহানই। শেখ সাবিনা নামাঙ্কিত শাহজাহানের সেই ফিশারির অ্যাকাউন্ট এবং শাহজাহানের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবার ফ্রিজ করল ইডি। ইডি সূত্রে খবর, ওই দুই অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে প্রায় ১০ বছরে ১৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
শুধু তাই না, জানা যাচ্ছে, ইডির নজরে এখনও ১৬-১৭ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। কারণ, বেতাজ বাদশা এতদিন শুধু নিজের বা নিজের কোম্পানির অ্যাকাউন্ট নয়, নিয়ন্ত্রণ করতেন তাঁর অনুগামীদের অ্যাকাউন্টও। সেখান থেকেও শেখ শাহজাহানের কোম্পানিতে টাকা লেনদেন হত বলে জানতে পেরেছে ইডি। সেই ক্ষেত্রে, সেসব অ্যাকাউন্ট-র লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে চিঠিও পৌঁছেছে ইডির তরফে। বেআইনিভাবে সাধারণের জমি কেড়ে, মুখের অন্ন কেড়ে যেভাবে তিলে তিলে কালো টাকায় শাহজাহান রাজত্ব তৈরি করেছিলেন, এভাবে তার অবসান হওয়ারই ছিল, মত ওয়াকিবহাল মহলের।
ইডি হেফাজতে পাওয়ার পরে, একদিকে ইডির ওপর হামলার মামলায় সিবিআই, অপরদিকে জমি দখল মামলায় ইডির সাঁড়াশি চাপ পড়েছে শাহজাহানের ওপর। ইতিমধ্যেই ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন ৫০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ছাপিয়ে গিয়েছে শাহজাহানের। বুধবার সকালবেলা স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য শাহজাহানকে আনা হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, সবটাই নাকি রাজনৈতিক চক্রান্ত।
আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত শাহজাহানের ঠিকানা সিজিও কমপ্লেক্স। সেখানেই জমি দখল মামলার তদন্তে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ইডির আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই মামলায় প্রায় ৩১ কোটি ২০ লক্ষ দুর্নীতির টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুধু জমি দখল মামলাতেই এখনও অবধি প্রায় ১৩৭ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে ইডির কাছে। ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন, কম করে ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি করেছে শেখ শাহজাহান।
ইডির কাছে শাহজাহানকে নিয়ে, শাহজাহানের জমি দখল মামলা নিয়ে যখন এমন তথ্য প্রমাণ আসছে, তখন সবটাকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে দাগিয়ে দেওয়ার চাল যে নিজেকে বাঁচানোর জন্যই, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু তা বললে আর শুনছেই বা কে!
মঙ্গলবার দুপুরে ওয়াটগঞ্জের কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের একটি পরিত্যক্ত গোডাউনে প্লাস্টিকের মধ্যে মহিলার দেহাংশ উদ্ধার হয়। দেহের মাথা থেকে বুক এবং কোমর থেকে পা মিললেও পেট, দুই পায়ের পাতা এবং দুই হাত এখনও উদ্ধার করা যায়নি। খণ্ডবিখণ্ড দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনও মহিলার দেহ সনাক্ত করা যায়নি। বুধবার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিসের তরফে।
প্রসঙ্গত, অন্যান্য থানায় কোনও মিসিং রিপোর্ট দায়ের হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার পাশাপাশি স্থানীয় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার কাজও শুরু করেছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিস। দেহাংশের হদিশ পেতে স্নিফার ডগও আনা হয় ঘটনাস্থলে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও দেহাংশের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত গোডাউনটিতে ঢোকার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে ওয়াটগঞ্জ থানার তরফে।
যে প্লাস্টিকের মধ্যে মুড়ে দেহাংশ ফেলে আসা হয়েছিল তার ভিতর থেকে ভারী ইট উদ্ধার হয়েছে। যা থেকে পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, মহিলার দেহাংশ জলাশয়ে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আততায়ী। তবে পোর্ট এলাকা জনবহুল হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বুধবার দুপুরে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দেহাংশের ময়নাতদন্ত হয়। দেহাংশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসবে, অনুমান লালবাজারের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকদের। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ঠিক করবে লালবাজার। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন এবং ২০১ ধারায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করেছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিস।
প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা বর্তমানে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে ইডি। এই প্রেক্ষিতে মহুয়া মৈত্র সংসদে টাকার বদলে প্রশ্ন কাণ্ডে কটাক্ষপূর্ণ পোস্ট করলেন সমাজমাধ্যমে। এর আগে সিবিআই মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁর নিউ আলিপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ইডি মহুয়া মৈত্রকে এর আগে তিনটি সমন পাঠালেও, তিনি হাজিরা দেননি।
বুধবার এক্স হ্যান্ডেলে মহুয়া পোস্ট করে লেখেন, 'খুলে হ্যায় বিজেপি কে দ্বার/ আ যাও নহি তো অব কে বার— তিহাড়।' যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, 'বিজেপির দরজা খোলা আছে। চলে এস, নইলে এই বার ঠিকানা তিহাড়।' অর্থাৎ, বিজেপির বিরুদ্ধে ফের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির অভিযোগ তুললেন মহুয়া।
ইডির অভিযোগ, তৃণমূল নেত্রী ফেমার নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। এর আগে ইডি মহুয়া মৈত্রকে ফেমা সম্পর্কিত একটি মামলায় সমন পাঠিয়ে ২৮ মার্চ হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সময় মহুয়া মৈত্র বলেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত থাাকায় তিনি হাজির হতে পারবেন না।
বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সংসদে টাকার বদলে প্রশ্ন মামলায় লোকপালের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। লোকপালের তরফে এব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। লোকপাল সিবিআইকে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ছয় মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল লোকপাল। লোকপাল তার আদেশে বলেছিল মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মূল্যায়নের পরে দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রমাণ রয়েছে এবং তা খুবই গুরুতর প্রকৃতির। ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করতে দুবাই ভিত্তিক ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে নগদ ও উপহারের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন করেছিলেন মহুয়া মৈত্র। যদিও মহুয়া মৈত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, মহুয়া মৈত্র লোকসভা সদস্য হিসেবে পোর্টালের লগইন পাসোয়ার্ড দর্শন হিরানন্দানিকে শেয়ার করেছিলেন। নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ অনুযায়ী, মহুয়া মৈত্র লোকসভায় অন্তত ৫০ টি এমন প্রশ্ন করেছিলেন, যা হিরানন্দানি ও তার পরিবারের ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। বিজেপি সাংসদ আরও অভিযোগ করেছিলেন, এই প্রশ্ন করার পরিবর্তে মহুয়া মৈত্র নগদে দুই কোটি টাকা পেয়েছিলেন। মহুয়া মৈত্র নিজের লোকসভার পোর্টালের লগইন পাসোয়ার্ড শেয়ার করার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অভিযোগ ওঠার পরে লোকসভার অধ্যক্ষ এম বিড়লা একটি কমিটি গঠন করেন। সেখানে নিশিকান্ত দুবে, মহুয়া মৈত্র-সহ অনেকের বয়ান রেকর্ড করা হয়।
এরপর গত নয় নভেম্বর ক্যাশ ফর কোয়ারির অভিযোগে মহুয়া মৈত্রের লোকসভা সদস্যপদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়। কমিটির ছয় সদস্য রিপোর্টের পক্ষে ভোট দেন এবং গত ডিসেম্বরে মহুয়া মৈত্রের লোকসভা সদস্যপদ খারিজ করা হয়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কৃষ্ণনগর আসন থেকে মহুয়া মৈত্রকে ফের মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী আবারও তাঁর জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
ইতিমধ্যেই শাহজাহানকে শোন এরেস্ট করেছে ইডি। অন্যদিকে ইডির উপর আক্রমণের ঘটনায় হাত গুটিয়ে বসে নেই সিবিআই। একদিকে যখন আর্থিক দুর্নীতি, মাদক যোগ, জমি কেলেঙ্কারি, কিংবা মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে শাহজাহানের ঠিক তখনই ইডির উপর আক্রমণের ঘটনায় সিবিআইয়ের সক্রিয়তা ঘুম, উড়েছে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার। সিবিআই সূত্রের খবর, ইডির ওপরে হামলার ঘটনার তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে সিবিআই এর পক্ষ থেকে ফের সমন করা হলো একাধিক ব্যক্তিকে। ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে ও একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক নতুন নাম খুঁজে পেয়েছে সিবিআই। এবার সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সাবাই আধিকারিকেরা। ইডির আধিকারিকদের ওপরে হামলার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে এমন বেশ কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাদেরকে সমন করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্র মারফত খবর।
ওদিকে গ্রেফতারির পর ইডির কাছে নত স্বীকার করল শেখ শাহজাহান। সূত্রের খবর, গত পাঁচই জানুয়ারিতে ইডির উপর আক্রমণের ঘটনায় ক্ষমাপ্রার্থী শেখ শাহজাহান। ইডিকে দেওয়া বয়ানে তিনি জানিয়েছেন হঠাৎ করেই ইডির তল্লাশিতে ভয় পেয়েছিলেন তিনি। গ্রেফতারের ভয় পেয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। সেক্ষেত্রে তিনি তার অনুগামীদের ফোন করে তাদের সাহায্য নেন।
ইতিমধ্যে জমি দখল মামলায় ইডি হেফাজতে রয়েছেন শেখ শাহজাহান। আগামী ১৩ তারিখ পর্যন্ত তার ঠিকানা সিজিও কমপ্লেক্স। ইডির আধিকারিকরা মনে করছেন কম করে ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি করেছে শেখ শাহজাহান। শুধুমাত্র জমি দখল নয় একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শাহজাহান। মাত্র কয়েক বছরে বিপুল পরিমান সম্পত্তির উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে ইডি। সূত্রের খবর, ইডির জেরায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বিষয় স্বীকারোক্তি করলেও সম্পত্তির উৎস কোথায় জানতে চাইলে মুখে কুলুপ শেখ শাহজাহানের।
সন্দেশখালির কুখ্যাত বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহানের সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগসূত্র ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ইডি হামলার পর থেকে শাহজাহানের নামে উঠে এসেছে একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ। আর্থিক তছরুপ থেকে দাদাগিরি। গান পয়েন্টে রেখে গ্রামের মহিলাদের সম্মানহানি থেকে মাছের ভেড়িও দখল গান পয়েন্টে রেখে। এবার শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসা, যা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য!
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী অবশ্য এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকেই একহাত নিলেন। জানালেন পশ্চিমবঙ্গ অবৈধ কারবারের জায়গা। শুনে কী হবে আমাদের? কুছ করকে দিখাও ইডি ভাই!
ইডি সূত্রে খবর আফগানিস্তান থেকে, পাকিস্তানের বন্দর শহর করাচি হয়ে তারপর মধ্য প্রাচ্য দুবাই হয়ে মাদক এসে পৌঁছত ভারতের পশ্চিম প্রান্ত গুজরাটে। সেখান থেকে সেই মাদক এসে পৌঁছত কলকাতা বন্দরে। এখানেই শেষ নয়, ২০২২ সালে আটক হয় প্রায় ৪০কেজি হেরোইন। নাম জড়ায় শাহজাহানের ডান হাত যিনি তাঁর মাদক ডিভিশনের দায়িত্বে ছিলেন সেই শরিফুল মোল্লার। শাহজাহান ও শিবু হাজরার ভেড়ির যৌথ দায়িত্বও পালন করতেন এই শরিফুল মোল্লাই। ঘটনায় গ্রেফতার হয় শরিফুলের ভাইও। এই অভিযোগকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। জানালেন, মাদক ধরা পড়ার পর থেকে শরিফুলের আজও কোনও হদিশ নেই।
বিরোধীদের অভিযোগ, মাদক ধরা পড়ার পর, শেখ শাহজাহানকে দেখা যায় রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বাড়িতে। এক নয়, একাধিকবার আর তাই এবার শাহজাহান, শরিফুল ছাড়াও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্তাহ ইডির নজরে ওই প্রভাবশালী মন্ত্রীও। আর সন্দেশখালির বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা শাহজাহানের এই মাদক ব্যবসা থেকে রাজ্যের মন্ত্রীর নাম জড়ানো, সব মিলিয়ে সরগরম বঙ্গের রাজনৈতিক মহল।
সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাহ শাহাজাহানের সাম্রাজ্যের পরতে পরতে লুকিয়ে রহস্য। ইডির তদন্তে ক্রমশ খুলছে সেই দুর্নীতি রহস্যের জট। তদন্তে উঠে এসেছে মেসার্স শেখ সাবিনা ফিশারির মালিক ধৃত শাহজাহান। যে ফিশারির অ্যাকাউন্টে ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এই ১০ বছরে কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করার কারবার বহাল তবিয়তে করেছে শাহজাহান। আর কালো টাকা সাদা হত ম্যাগনাম এক্সপোর্ট কোম্পানির মাধ্যমে। আপাতত ওই এক্সপোর্ট কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। অরূপ কুমার সোম ম্যাগনাম এক্সপোর্ট কোম্পানির মালিক। আর পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত ও অরুণ সেনগুপ্ত কোম্পানির পার্টনার। যাদের বয়ানের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দামহল।তদন্তের স্বার্থে তাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডিজিটাল ডিভাইস সিজও করেছে ইডি।
চাপে পড়তেই ফিশারির ম্যানেজার মইদুলের দাবি, এলাকায় শাহজাহানের দাদাগিরিতেই চলত ব্যবসা।স্থানীয় ব্যবসায়ীদের রীতিমতো শাসাতো শাহজাহান। তাদের কোম্পানিতে মাছ বিক্রি করতে হবে অন্যথায় ব্যবসায়ীদের মাছ ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিত সন্দেশখালির ত্রাস শাহজাহান। ইডি সূত্রে খবর ৫০% মাছই মাছ ব্যবসায়ীদের থেকে আসত। আর ৩০% থেকে ৪০% মাছ বেআইনি ভাবে গ্রামবাসীদের থেকে ছিনিয়ে নিত শাহজাহানের বাহিনী। গোটা কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিশেষ দলও গঠন করেছিল শাহজাহান।
শুধু তাই নয়, তদন্ত যতই এগোচ্ছে ততই উঠে আসছে শাহজাহানের এই কীর্তিকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে একাধিক ব্যক্তির নামও। শাহজাহান ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে ফিশারির টাকা লেনদেন হত বলে দাবি ইডির। আদালতে ইডির গোয়েন্দাদের জমা দেওয়া তথ্য বলছে, শাহজাহান ঘনিষ্ঠ ১০ জনের মাধ্যমে ফিশারি কোম্পানিতে টাকা লেনদেন হত। টাকা লেনদেনে কাজে লাগানো হত হাজরা এন্টারপ্রাইস, বসুন্ধরা ট্রেড, রিন্টু এন্টারপ্রাইজসহ একাধিক কোম্পানিকেও।এমনকি শাহজাহানঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতেন শাহাজাহান নিজেই। ফিশারির টাকা তার অঙ্গুলিহেলনেই ব্যবহৃত বিভিন্ন খাতে।তার নির্দেশেই সেই টাকায় কেনা হত জমি, সম্পত্তি।
একাধিক অসাধু কারবারের আখড়া শাহজাহানের সাম্রাজ্য তা বলাই বাহুল্য। ইডির তৎপরতায় এখন সেই তথ্যই ক্রমশ আসছে প্রকাশ্যে। ইডির হেফাজতে এদিকে চলছে শাহজাহানের জিজ্ঞাসাবাদপর্বও। আগামীদিনে শাহজাহানের বয়ানে আদৌ নতুন কোনও তথ্য উঠে আসবে নাকি সুকৌশলে প্রশ্ন এড়িয়ে জারিজুরি লোকাবে সে? লোকসভা নির্বাচনের গুরুগম্ভীর আবহে ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নটাই।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। এবার সাত দফায় চলবে ভোটগ্রহণ পর্ব। আর সেই ভোট পর্ব চলবে বেশিরভাগ স্কুলে। সেই উপলক্ষ্য়ে সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুলগুলিতে ছুটির নির্দেশিকা জারি করল স্কুল শিক্ষা দফতর। ৬ই মে থেকে ২রা জুন পর্যন্ত ছুটির নোটিশ দিয়েছে শিক্ষা দফতর।
সোমবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাশাপাশি প্রাইমারি পর্ষদেও ছুটির ঘোষণা করা হল। লোকসভা ভোটের দিনগুলিতে সংশ্লিষ্ট জেলায় প্রাইমারি স্কুলগুলি ছুটি থাকবে। সেখানেও গরমের ছুটি বাড়িয়ে ৬ মে থেকে ২ জুন অবধি ছুটি ঘোষণা করে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
চলতি মাসের ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হবে লোকসভা ভোটপর্ব। আর ভোট শেষ হবে আগামী ১ জুন। ৪ জুন হবে ভোটগণনা। সেক্ষেত্রে প্রথম দফার ইলেকশনের জন্য ১৬ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির জেলার স্কুল বন্ধ থাকবে। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন পর্বের জন্য ২৪ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার স্কুলগুলি বন্ধ থাকবে।
বসিরহাট মহকুমা আদালতের নির্দেশে শেষ কয়েকদিন জেল হেফাজতে ছিলেন শাহজাহান। যদিও শনিবার শাহজাহানকে শোন এরেস্ট করে ইডি। সেই সংক্রান্ত মামলা ইডি বিশেষ আদালতে হয় সোমবারে। শুনানির শেষে জেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে সোমবার বিকেল ৪টেয় শাহজাহানকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন বিচারক শুভেন্দু সাহা।
বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, গত ৩০ মার্চ বসিরহাটে শাহজাহানকে শোন এরেস্ট করছিল ইডি। সেদিন জেরা করার সময় বারবার তদন্তকারীদের তিনি বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন বলেও বিচারকের কাছে জানান ইডির আইনজীবী। জানান, তদন্তে এখন আরও কিছু নাম উঠে এসেছে। এখন শাহজাহানকে হেফাজতে নিয়ে জেরা না করা হলে, সন্দেহভাজনরা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারেন বা পালিয়ে যেতে পারেন। তাই আর দেরি নয়, সোমবারেই শাহজাহানকে হেফাজতে চায় ইডি। যদিও, সোমবার তড়িঘড়ি কীভাবে তা সম্ভব জানতে চেয়ে বিচারক প্রশ্ন করলে, ইডির আইনজীবী জানান, রাস্তা মাত্র ২ ঘণ্টার। এরপরেই বন্দি শাহজাহানকে বসিরহাট থেকে আদালতে হাজির করানোর জন্য রওনা দেন ইডির আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে খবর ছিলই, জমি দখল, ভেরি দখল এবং মাছের আমদানি-রপ্তানিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইসিআইআর করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এখন নিজেদের হেফাজতে নিয়ে বেতাজ বাদশার 'অত্যাচার রহস্য' কতটা উদ্ঘাটিত হয়, সেটাই দেখার।
শাসনের বেলিয়াঘাটায় অবৈধভাবে রমরমিয়ে চলছে গাঁজার ব্যবসা। সেই ব্য়বসায় বন্ধের প্রতিবাদে আক্রান্ত তিনজন। অভিযোগ, পুলিসের মদতে চলে গাঁজা ব্যবসা। ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে গ্রামবাসীরা ভাঙচুর চালায় অভিযুক্তের বাড়ি। পলাতক অভিযুক্ত গাঁজা ব্য়বসায়ী। যদিও গোটা ঘটনা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত গাঁজা ব্যবসায়ীর স্ত্রীর। বর্তমানে আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহত ওই তিনজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় শাসন থানার পুলিস গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গ্ৰামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মোবিল বিক্রির দোকানের আড়ালে রমরমিয়ে চালাছিল গাঁজার ব্যবসা। এরফলে বহিরাগতদের আনাগোনায় নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার রাতে স্থানীয় যুবক দিনেশ সর্দার গাঁজা বিক্রির প্রতিবাদ করলে অভিযুক্ত গাঁজা ব্যাবসায়ী তাঁকে কাঠ দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আরও দুজন প্রতিবাদীকে মারধর করে অভিযুক্ত গাঁজা ব্যবসায়ী।
ইডির আবেদনে সাড়া দিয়ে বসিরহাট জেলে শেখ শাহজাহানকে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিল বসিরহাট মহকুমা আদালত। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ বসিরহাট মহকুমা আদালতে পৌঁছন ৫ সদস্যের ইডির একটি প্রতিনিধি দল। সঙ্গে ছিলেন ইডি ও সিবিআই-এর একজন করে আইনজীবি। ইডি-র উপর হামলার ঘটনায় ধৃত শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু জমির হদিশ মেলে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩১ কোটি টাকা। এই ৩১ কোটি টাকার মধ্যে ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ইডির তরফে। এ বিষয়ে বসিরহাট জেলে জিজ্ঞাসাবাদ করার সম্ভাবনা সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহানকে, খবর ইডি সূত্রে। শনিবার আদালতের নির্দেশ মিলতেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি, ল্যাপটপ এবং প্রিন্টার সহ জেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রবেশ করেন ইডির ৩ আধিকারিক।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ন্যাজাট থানার ৮ নম্বর মামলায় শেখ শাহজাহান, মেহেবুব মোল্লা এবং সুকমল সর্দারকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। অপরদিকে, ন্যাজাট থানার ৯ নম্বর মামলায় আইজুল শেখ, এনামুল শেখ, হাজিনুর শেখ, সঞ্জয় মণ্ডল, আলি হোসেন ঘরামি, ফারুক আকুঞ্জি এবং সিরাজুল মোল্লাকে ২ এপ্রিল অর্থাৎ ৫ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল বসিরহাট মহকুমা আদালত।
বসিরহাট জেলে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।