দোল, রংয়ের উৎসব, বাঙালির আবেগ। দিনভর রাজ্যের বিভিন্নপ্রান্তে নাচ-গান-উৎসবে মুখর একটা সুন্দর দিন। ক্যালেন্ডারে চৈত্র হলেও বাতাসে বসন্তের সুর। দোলে, আবিরের রংয়ে সেই রেশ যেন ছড়িয়ে পড়ে ছন্দ হয়ে। বসন্ত, বসন্ত উৎসব মানেই বোলপুর, শান্তিনিকেতন। সোনাঝুড়ির খোয়াইয়ে হাজার হাজার মানুষের সমাগমে বসন্ত উৎসব।
রবিঠাকুরের গানে প্রভাতফেরি। তারপর দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জমজমাট বসন্ত উৎসব টেরাকোটা শহর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। রংয়ের রেশ উত্তরবাংলাতেও। কোচবিহারের দেবতা মদনমোহন মন্দিরে সকাল থেকেই ছিল মানুষের ঢল। রংয়ের উৎসব শুধু উৎসব নয়, বাঙালির আবেগ। ১৫ তম বসন্ত উৎসব পালিত পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির আম্রকুঞ্জে। নাচে গানে আবৃত্তিতে পুরো দিনটাই ছিল রঙিন।
দোলযাত্রার দিনে জন্ম নিয়েছিলেন মহাপ্রভু। সেই দিন স্মরণ করে মহা সমারহ নদীয়ার মায়াপুরে। মহাপ্রভুর ৫৩৮ তম আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার ভক্তের কণ্ঠে হরিনামে মুখরিত মায়াপুর।
'টাকা নিয়ে প্রশ্ন' মামলায় লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) সাংসদপদ খারিজ হওয়ার প্রস্তাব ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। আর সেই পরিস্থিতিতে তৃণমূলে পদোন্নতি হল মহুয়ার। কল্লোল খাঁকে সরিয়ে লোকসভা ভোটের আগে মহুয়াকে নদিয়ার কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করল তৃণমূল। 'ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন' বিতর্কে মহুয়া মৈত্র থাকলেও দল থেকে ব্রাত্য নন তিনি, বরং তাঁর উপরই ভরসা রাখল তৃণমূল (TMC)।
Thank you @MamataOfficial and @AITCofficial for appointing me District President of Krishnanagar (Nadia North) .
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) November 13, 2023
Will always work with the party for the people of Krishnanagar.
আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই আজ অর্থাৎ সোমবার কিছু জেলার নেতৃত্বে বদল এনেছে ঘাসফুল শিবির। তখনই জানা গেল, 'ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন' বিতর্কের মাঝেই দলে ওজন বাড়ল মহুয়ার। একেবারে সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হল মহুয়া মৈত্রকে। টাকা নিয়ে প্রশ্ন কাণ্ডে, দলের তরফে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে না দেখা গেলেও দলের এই সিদ্ধান্তে বোঝাই গেল মহুয়ার পাশেই রয়েছে দল। এর পরই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মহুয়া। ক্যাপশনে লিখেছেন, "কৃষ্ণনগরের (নদিয়া উত্তর) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানাই। কৃষ্ণনগরের সাধারণ মানুষের জন্য আমি সবসময় দলের হয়ে কাজ করে যাব।"
এগরা, মহেশতলা এরপর দত্তপুকুর। পরপর অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ কাণ্ডে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। প্রতিবারই সতর্ক হয়েছে প্রশাসন। কিন্তু প্রতিবারই গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পারেনি প্রশাসন। সেজন্যই এবার অবৈধ বাজি কারখানা রুখতে বড় সিদ্ধান্ত নিলো রাজ্য সরকার। এবার জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হল, যাতে জেলা স্তর থেকে আর কোনও লাইসেন্স না দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবারই এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবার নবান্নে ছিল জেলাশাসকদের সঙ্গে মুখ্যসচিবের বৈঠক। বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে এদিন। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জেলাশাসকদের বলেছেন, যাতে আর কোনও বাজি কারখানাকে জেলাস্তর থেকে লাইসেন্স না দেওয়া হয়। পুলিশ সুপারদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে নবান্ন। মুখ্যসচিবের নির্দেশ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব জেলায় বাজি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। প্রয়োজনে ইটেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি-র নজরদারি বাড়িয়ে সব কারখানায় অভিযান চালাতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বারবার এভাবে বিস্ফোরণের ঘটনাই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের কপালে।
নির্বাচনের দিন ঠিক হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের (State) জেলায় জেলায় উদ্ধার হয়েছে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র। তবে এই বোমা (Bomb) উদ্ধারের ঘটনায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। পিছিয়ে নেই অন্য জেলাগুলিও (District)। প্রত্যেক জেলার গলিতে গলিতে পাওয়া গিয়েছে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র। আবার অনেক সময় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণও হয়েছে। এমনকি পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনও বোমাবাজি হয়েছে রাজ্যের জেলায় জেলায়।
আজ অর্থাৎ সোমবার ৬৯৬টি বুথে পুনর্নির্বাচন। আর সেই পুননির্বাচনে (Re-Polling) মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা এলাকায় একটি পুকুর এবং একটি মাঠ থেকে ৩৫ টি অপরিশোধিত বোমা উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করতে বম্ব স্কোয়াডের একটি দল, স্থানীয় পুলিসের সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। অন্যদিকে মালদহের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাকিপুর এলাকায় আম বাগানের ঝোপ থেকে চারটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। এমনকি নদীয়ার কৃষ্ণনগর ভাণ্ডারখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পানি নালা এলাকার একটি বাড়ি থেকে সাতটি বোমা উদ্ধার হয়েছে। পুননির্বাচনের দিনও এইভাবে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার মানুষের মধ্যে।
রাজ্যে ৩১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দ্রুত পাঠানো হবে, তা চিঠি দিয়ে আগেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এবার কোন ক্যাটেগরির ফোর্স কোন জেলায় যাবে তাও জানিয়ে দিল তারা।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে বিএসএফ, সিআরপিএফ, আইটিবিপি-র মতো পৃথক ক্যাটেগরি রয়েছে। কোথায়, কোন ক্যাটাগরির ব্যাটেলিয়ন মোতায়েন করা হবে, সেই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, ১১ জেলায় সিআরপিএফ, ৬ জেলায় সিআইএসএফ, ৯ জেলায় থাকবে বিএসএফ । সবচেয়ে বেশি বাহিনী মোতায়েন হবে বাঁকুড়া, বীরভূমে। সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদে পাঠানো হচ্ছে বিএসএফ। পুরুলিয়াতে পাঠানো হচ্ছে সিআরপিএফ। তবে, বাহিনী সংখ্যা বাড়লে কেন্দ্রীয় বাহিনী বন্টনের তালিকাও বদলে যাবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তার মধ্যে ২২ কোম্পানি বাহিনী ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছে কেন্দ্র। বাকি ৩১৫ কোম্পানি অতি দ্রুত পাঠানো হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। তবে ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীর নিশ্চয়তা এখনও পাওয়া যায়নি বলে খবর।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্যের জেলায় জেলায় (District) বজ্রবিদ্যুত্ (Lightning) সহ শিলাবৃষ্টি (Hail)। বাজ পড়ে মৃত্যু একাধিক। এমনই আরেক ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার যাদবনগর গ্রামে। মাঠে চাষের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়ই এক ব্যক্তির উপর বাজ পড়ে। বাজ পড়ার পরেই মাঠে লুটিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। তাঁকে উদ্ধার করে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা। জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম তাপস পাতর (২৬)। তিনি যাদবনগরের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার তাপস পাতর মাঠ থেকে চাষের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়ই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি শুরু হয়। আর তারপরেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
পাশপাশি বেশ কয়েক দিন ধরেই উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা ৪১-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেই নামছিল না। বরং কখনও কখনও তাপমাত্রার পারদ চড়ছিল ৪৩ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ গত ৪ থেকে ৫ দিন ধরে অল্পবিস্তর বৃষ্টি হতেই তীব্র দাবদাহে কাবু হয়েছিল৷ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল৷ তাই এই বৃষ্টিতে বেশ কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করছে রাজ্যের বাকি জেলা গুলি।
তবে এবছরের প্রথম শিলাবৃষ্টি এটি৷ এমনকি এই সময় ধান, আম-লিচু পাকতেও শুরু করেছে৷ তাই শিলাবৃষ্টিতে বেশ ক্ষতির মুখেও পড়তে হল কৃষকদের৷
ভোটের (Election) দিন নির্দিষ্ট না হওয়ার কারণে পিছিয়ে গেল কমিশনের সঙ্গে ডিএমদের (District Magistrate) বৈঠক (Meeting)। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কমিশনের প্রস্তুতি তুঙ্গে, অপেক্ষা এখন শুধু সময়ের। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে দোলাচলে কমিশন। পরবর্তী বৈঠক কবে হবে, আপাতত তা নিয়ে অনিশ্চিত কমিশন। আইন অনুযায়ী রাজ্য ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনে এর যৌথ মত নিয়ে হয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে দু'পক্ষের মত কবে এক বিন্দু তে মিলবে সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঠিক হয়নি ঠিকই,তবে হাত গুটিয়ে বসে নেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত নির্বাচন কবে হতে পারে তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সবুজ সংকেত নেই রাজ্যের তরফে। তা সত্ত্বেও একটা একটা করে সব কাজ গুছিয়ে ফেলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই তাপদাহের কারণে মঙ্গলবারের কমিশন ডিএম বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়। এক দিকে স্কুল ছুটির ঘোষণা করেছে সরকার, তেমন মানুষকে তাপদাহ থেকে বাঁচতেও সতর্ক করা হয়েছে। এই প্রচন্ড তাপ প্রবাহের কারণেই কমিশন ডিএম বৈঠক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। যদিও আগামী বৃহস্পতিবার সকাল দশটা থেকে রাজ্যের সব জেলাশাসক এবং জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে কমিশনের কর্তারা। মনোনয়নপত্র কিভাবে জমা নিতে হবে এবং মনোনয়ন পত্রের বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কমিশন ইতিমধ্যেই জেলাগুলিতে নির্বাচনের কালি, অ্যারো ক্রস মার্ক, প্রিসাইডিং অফিসার, ভোট কর্মী, রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের আচরণবিধি জেলাগুলিকে পাঠাতে শুরু করেছে। এর অনেক আগেই সব জেলায় পাঠানো হয়ে গিয়েছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যালট পেপার। এবার পাঠানো শুরু হল কালি এবং অ্যারো ক্রস মার্ক। এই অ্যারো ক্রস মার্ক এসেছে মুম্বই এর মাহিম থেকে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার, ১০ মিমি কালির বোতল পাঠাতে শুরু করেছে কমিশন। প্রত্যেক বুথের জন্য কমিশন ধার্য্য করেছে দুটি করে কালির বোতল এবং ছয়টি করে অ্যারো ক্রস মার্ক।
অন্যদিকে, দু হাজার ছয় সালে কমিশনের যে আইন হয়েছিল সেই মোতাবেক নির্দল প্রার্থীদের এবারও প্রতীক চিহ্ন বরাদ্দ আছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩০টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৫টি, এবং জেলা পরিষদে ১৭টি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ভোট কর্মীদের তালিকার কাজ পঁচানব্বই শতাংশের বেশি হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি।তাই কত সংখক ভোটকর্মী নিয়োগ হবে তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। সর্বোপরি এদিনও কমিশন সূত্রের খবর, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ পেতে পারে। ইদের পরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কমিশন এই বিষয়ে আলোচনায় বসতে চলেছে বলেই সূত্রের খবর। সোমবার রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কোভিড নির্দেশিকা জারি করার জন্য। কোভিড মোকাবিলায় রাজ্য যেমন সতর্ক তেমনই কোভিড পরিস্থিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুত রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মানুষের কাছে একটাই প্রশ্ন কবে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন, আর কমিশনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ কতটা শান্তিপূর্ণ ভাবে এই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
ব্যালট, কাগজ সহ, পঞ্চায়েতকে (Panchayet Election) মাথায় রেখে বেশ কিছু প্রস্তুতি আগেই শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। এবার পঞ্চায়েত ভোটকে নজরে রেখে আরও তৎপর রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশন এবার প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক (Administration) নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৮ এপ্রিল জেলাশাসকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছে। আরও খবর, সব জেলার জেলাশাসকদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ১৮ এপ্রিল দুপুর ২টো থেকে এই বৈঠক শুরু হবে। সরকারিভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন কবে হবে তা এখনও পর্যন্ত জানানো না হলেও এই বৈঠকের মাধ্যমে মনে করা হচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল।
কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র নিয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ প্রকাশ হওয়ার কথা ২৮ এপ্রিল। বিধি অনুযায়ী তার ১২ দিনের মধ্যে ভোট করানো সম্ভব নয়। কমিশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ভোট করানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথমে ত্রিস্তরীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জানিয়েছে রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার, সংশ্লিষ্ট সরকারের অধিকৃত সংস্থা পুরসভা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের ভোট কর্মী হিসেবে বাছা যেতে পারে। ভোট কর্মীদের দলে যাতে অন্তত একজন করে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কর্মী থাকেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে জেলাগুলিকে।
প্রসূন গুপ্ত: তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে, না হয়নি, তা নিয়ে জল্পনার স্থান নেই। সম্প্রতি কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো বিভিন্ন জেলায় কিছু রদবদল করেছিলেন। মূলত দায়িত্বে থাকা নেতাদের মাথার উপর ফের অঘোষিত পর্যবেক্ষক বসিয়েছেন দলের সুপ্রিমো। এই পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই আদি তৃণমূল নেতা অর্থাৎ অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিম, মলয় ঘটক প্রমুখ। এই পরিবর্তনে দলের একটি অংশের কাছে প্রশ্ন এসেছিল, তবে কি যুব মহল অর্থাৎ যা কিনা অভিষেকের পছন্দের, তারা বাতিল হবে? পরে অবশ্য মমতা জানিয়েছিলেন, যুবরাই ভবিষ্যৎ কিন্তু এখনই সময় হয়নি ভোট দাঁড়ানোর। জল্পনা এমন হয়েছিল যে, মমতাই কি দলের রাশ নিজের হাতে নিলেন? তিনিই কি প্রচারের মুখ আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে?
এত প্রশ্নের উত্তর একটাই, কোনও সন্দেহ নেই তিনিই মুখ। শেষ পর্যন্ত সব প্রার্থী ঠিক করার লিস্টে তিনিই টিক চিহ্ন বসাবেন। তবে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা কি? সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফর করলেন এবং সব সাংসদের নিয়ে বিভিন্ন আবেদন-নিবেদন বা প্রতিবাদের কাজটি সারলেন। দেখা গেল দুই হাউসের সদস্যরা অভিষেককেই এগিয়ে দিলেন পরিষদীয় নেতা থাকা সত্ত্বেও।
একদিকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে মমতা যেমন পূর্ব মেদিনীপুর গেলেন তেমনই শনিবার থেকে অভিষেক শুরু করছেন বিভিন্ন জেলা সফর। ২০২১-এ বিশাল জয় এলেও বর্তমানে শিক্ষা থেকে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকার বিব্রত। সমাপ্ত সাগরদিঘি উপনির্বাচন, যা কিনা মুসলিম অধুষ্যিত, পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট কিন্তু মমতার সবথেকে বড় ভরসার জায়গা।
কাজেই সাগরদিঘির মন কি সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে, প্রশ্ন তৃণমূল হাইকমান্ডে। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে দুই প্রধান নেতাই বেড়িয়ে পড়ছেন ভোটের খোঁজে। অভিষেক ইদানিং বারবার ডুয়ার্স অঞ্চলে যাচ্ছেন। যাওয়ার কারণ এই অঞ্চলে সব থেকে খারাপ ফল করেছিল তৃণমূল গত বিধানসভা নির্বাচনে। আলিপুরদুয়ারে একটিও আসন পায়নি তাঁরা। কাজেই অভিষেক আলিপুরদুয়ার থেকেই তাঁর প্রচার শুরু করছেন।
অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী নেতা বারবার চেষ্টা করেছেন পঞ্চায়েত ভোট এখুনি না করার। কিন্তু বাদ সেধেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে ভোট হচ্ছে আপাতত ঠিক। মে মাসেই ভোট বলেই অন্দরের খবর এবং ভোট পরিচালনা করবে রাজ্য প্রশাসন। তাই সাংগঠনিক প্রস্তুতির দায় অভিষেকেরই।
প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের অপেক্ষা, তার উপর লাগাতার আন্দোলন, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ, আদালতের কড়া দাওয়াই, হাজার টানাপোড়েন, সব কাটিয়ে অবশেষে রবিবার রাজ্যে (West Bengal) হয়ে গেল প্রাথমিক টেট (Primary TET) পরীক্ষা। মোটের উপর রাজ্যজুড়ে শান্তিপূর্ণ ভাবেই টেট হয়েছে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু রাজ্যজুড়ে চালচিত্র বলছে অন্য কথা। শহর কলকাতা (Kolkata) থেকে জেলা, একাধিক জায়গায় উঠে এল চরম ভোগান্তি আর অব্যবস্থার ছবি। অনেক পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ পরিবহণ ব্যবস্থা ঠিক ছিল না, রবিবার বলে যানবাহন কম ছিল। ফলে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। টেট পরীক্ষা দিলে পরিবহণের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।
এদিকে শুধুমাত্র যানবাহন সমস্যাই নয়, পরীক্ষাকেন্দ্র খুঁজতে গিয়েও হাঁড়ির হাল পরীক্ষার্থীদের। টেট পরীক্ষা কেন্দ্রের ঠিকানা ভুল নিয়ে বিভ্রান্ত পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার্থীদের এডমিট কার্ডে রয়েছে ভুল ঠিকানা। সল্টলেক লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ এডি ব্লকে কিন্তু এডমিট কার্ডে লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ বিডি ব্লক উল্লেখ করা রয়েছে। অভিযোগ, হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করলেও কোন রকম সহযোগিতা করা হয়নি। কোন্নগর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে টেট পরীক্ষার সিট্ পড়ে। কিন্তু পিনকোডে ভুল থাকার জন্য অনেকেই পৌঁছন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কন্যা নগর স্কুলে। আবার এক স্কুলের বাইরে নোটিস দেখা যায় যে সেখানে নয়, পরীক্ষা রয়েছে সোদপুরের একটি স্কুলে। এরপরেই বিভ্রান্ত পরীক্ষার্থীদের গাড়ি করে নির্দিষ্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে বিষয় থেমে থাকেনি এখানেই। অন্যান্য বিভ্রান্তির সঙ্গেই দেখা গেল হয়রানির আরও এক চিত্র। শাঁখা পলা খুলিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশের নির্দেশ, আর যার ফলে অগত্যা মহিলাদের সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে খুলতে হয় শাঁখা। এমনকি দূর দূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীরা ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারেননি, অথচ ব্যাগ বাইরে কোথায় রাখবেন তাও কিছু নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। ফলে ব্যাগে ফোন, পার্স ফেলে মানসিক অশান্তির মধ্যে পরীক্ষা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কড়াকড়ি করতে গিয়ে সেটা বারাবারিতে পরিণত হয়েছে, দাবি পরীক্ষার্থীদের।
তবে টেট পরীক্ষা শেষ হলেও শেষ হয়নি অশান্তি। কলকাতার প্রখ্যাত দেশপ্রিয় পার্ক তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে বিক্ষোভে সামিল হলেন পরীক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা নির্দিষ্ট সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছিলেন। পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম বায়োমেট্রিক। কিন্তু তাঁদের সেই পদ্ধতি সম্পন্নই হয়নি বলে অভিযোগ। এদিকে বায়োমেট্রিক না হলে তাঁরা অনুপস্থিত বলে বিবেচিত হবেন বলে আশঙ্কা, আর তাতেই বিক্ষোভে সামিল পরীক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও খবর। যতক্ষণ না সমস্যার সমাধান হবে ততক্ষণ স্কুলেই অবস্থান করবেন বলে হুঁশিয়ারি পরীক্ষার্থীদের।
অপরদিকে দূর্ঘটনার কবলে টেট পরিক্ষার্থী। সিউড়ির মাঝি গ্রাম থেকে হেতমপুরে টেট পরিক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন পরীক্ষার্থী শুভশ্রী দে। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারে চারচাকা গাড়ি। ঘটনায় আহত শিশু সহ তিনজন। এদিন সকালে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে একটি গাড়িতে চাতরা রামাই পন্ডিত কলেজে টেটের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গাড়িতে কলেজের একজন কর্মী ছাড়াও ছিলেন পুলিশকর্মীরা। সাঁইতাড়া ও মির্জাপুরের মাঝামাঝি গাড়িটি মুখোমুখি ধাক্কা মারে একটি পিক আপ ভ্যানে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কোতুলপুর থানার পুলিশ। এরপরই তড়িঘড়ি পুলিশের অপর একটি গাড়িতে করে প্রশ্নপত্র চাতরা রামাই পন্ডিত কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি দাবি করেন, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে পরীক্ষা। এই আয়োজনকে সফল করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ধন্যাব্দ জানান। পাশাপাশি পুলি প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসায় সরব ছিলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল।