প্রসূন গুপ্ত: স্বাধীনতার পর থেকেই কলকাতার পুজোর জাঁকজমক ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বিধান রায় থেকে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় অবধি পুজোর জাঁকজমক। বড় প্যান্ডেল থেকে ভোগপ্রসাদেই সীমাবদ্ধ ছিল। জ্যোতি বসুদের জমানায় সরকার সরাসরি পুজোতে অংশগ্রহণ না করলেও তাঁদেরই পরোক্ষ সহযোগিতা থাকতো। কারণ বাম জমানাতে ৭০ দশক থেকে অন্তত ৩০ শতাংশ দুর্গাপুজো বেড়েছে বাংলায়। তারই সঙ্গে বুদ্ধবাবুর আমলে শুরু হয়েছে প্রবল ভাবে থিম পুজো।
আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যর দায়ভাগ অনেকটাই মুখ্যমন্ত্রী নিজের স্কন্ধে নিয়েছেন। আজ যতটা ধর্মীয় বিষয়ে পুজো হয়। তার থেকে বেশি পুজোগুলি একটা এক্সিবিশনে বা প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। শহর কলকাতা থেকে শুরু করে বনগাঁ অন্যদিকে কল্যাণী অবধি জুড়ে যায় শারদ উৎসবে। গ্রাম বা মফস্বলের পুজো হয়তো আগের তুলনায় অনেক আধুনিক হয়েছে। কর্পোরেটের গন্ধও সেখানে কিন্তু তাহলেও সেখানে আজও দুর্গাপুজো মানে স্রেফ একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলার কয়েক হাজার পুজোকে মুখ্যমন্ত্রী কয়েক হাজার (গত বছর ৫০ হাজার ছিল এই বছর ৬০ হাজার) টাকা করে অনুদান করে থাকেন। কলকাতা থেকে দূরের পুজোগুলির হয়তো টাকার দরকার নিশ্চয় কিন্তু মহানগরীতে? কলকাতার পূজো মানে কোনও ক্লাবের হলেও এদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কিন্তু কোনও না কোনও রাজনৈতিক নেতা বা মন্ত্রী। আজকাল বিরোধী বিজেপির নেতারাও পুজো করে আসছেন। কলকাতার এই পুজো মানে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান আজ আর নেই। লক্ষ লক্ষ (নাকি কোটি) টাকা খরচ হয় এই পুজোতে। থিম বা এমন কিছু এই পুজোগুলিতে থাকে যা দেখতে বিদেশিদের ভিড় পর্যন্ত হয়। ইতিমধ্যে কলকাতার এই পুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। এই পুজো সরকারি অনুদানের উপর নির্ভরশীল নয়। অনায়াসেই কর্মকর্তারা এই অনুদান শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করতেই পারেন, তাতে সাধারণ জনতার আশীর্বাদই তারা পেতে পারেন। নেতারা ভাববেন কি?
রাজ্য মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পর প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠক (Cabinet Meeting) করলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। এই বৈঠকে মন্ত্রীদের আরও স্বচ্ছ এবং সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পার্থ-কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রীর, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ। সূত্রে মারফত এই খবর পাওয়া গিয়েছে।
সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, 'ভালো ভাবে, সতর্ক হয়ে কাজ করুন। কোনও ফাইল সইয়ের আগে খতিয়ে দেখে নিন।' এমনকি, জেলা থেকে কলকাতায় আসা মন্ত্রীরা পাইলট কার এবং বাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারবেন না। এমন নির্দেশ নাকি এদিনের ক্যাবিনেট বৈঠকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিমন্ত্রীদের জন্যও কাজ ভাগ করে দেওয়া হবে। এযাবৎকাল পূর্ণমন্ত্রীদের জন্য কাজ থাকলেও প্রতিমন্ত্রীদের জন্য সেভাবে ছিল না কাজ। সেই দায়িত্ব এবার ভাগ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনটাই সূত্রের খবর। পাশাপাশি রাজ্যে আগামি দিনে ১৮টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট ও ৫টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হবে।
৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৪০০০ কর্মসংস্থান হবে রাজ্যে। নবান্নের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই হয়েছে। বৃহস্পতিবার নবান্নে জানান অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২১ হাজার রেশন ডিলারেরর সহযোগিতায় ৯.২৫ কোটি মানুষকে পরিষেবা দিতে পারছে সরকার। আগে তাই দুয়ারে রেশন প্রকল্পে ৭৫ টাকা প্রতি কুইন্টাল কমিশন দেওয়া হতো। সরকার সন্তুষ্ট হয়ে এবার ৫০০০টাকা করে প্রতি মাসে কমিশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal Club) এক অনুষ্ঠানে এসে প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চন্দ্র মেমোরিয়াল আর্কাইভের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার বিকাশ পাঁজি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্তরীয় পরিয়ে ও স্মারক তুলে দিয়ে সংবর্ধনা জানান। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা নীতু সরকার দিদি ১০০ নামাঙ্কিত জার্সি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এই অনুষ্ঠানে স্মৃতিমেদুর মমতা বলেছেন, 'যাদবপুরে যখন সাংসদ হয়েছিলাম, কথা দিয়েছিলাম উদ্বাস্তুদের জন্য জমির ব্যবস্থা করব, তা করতে পেরেছি। কঠিন সময়ে ওপার বাংলা থেকে যারা এপার বাংলায় এসেছেন, আমি তাঁদের স্যালুট করি।'
তিনি জানান, যারা কাপুরুষ নয়, তাঁরাই গড়তে পারে এবং মরতে ভয় পায় না। আমারা মনের জোর দিয়ে না পারা জিনিস জয় করতে পারি। তাঁর দাবি, 'গত বছর একেবারে শেষ মুহূর্তে একজনকে বলে ইস্টবেঙ্গলকে আইএসএল খেলতে পাঠানো হল। এ বছর
ইমামি গ্রুপ কথা রেখেছে। আগামী কয়েক বছর চিন্তার কারণ নেই। মন দিয়ে খেলে যান। মোহনবাগান খেলছে, ইস্টবেঙ্গল খেলুক, আমি চাই মহামেডানও আইএসএল খেলুক।'
এদিন তিনি ১০০ বছরের পুরনো এই ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়নের আরও ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। শুধু ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান নয়, পরিকাঠামো উন্নয়নে এই টাকা পাবে মহামেডানও। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনুষ্ঠানে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি তৈরি হবে। বাংলার দুর্গাপুজো বিশ্বসেরা। সেই স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। খেলা হবে স্লোগান মনে রাখতে আমি বাড়িতে প্রতিদিন ১০০ বার বল নাচাই। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'ছোটবেলায় ব্যাডমিন্টন খেলেছি, পিটটু, গাদি খেলেছি। আদি গঙ্গায় সাঁতার কেটেছি। লড়ব, খেলব, জিতব রে জয় বাংলা।' এদিন ইস্টবেঙ্গলে লাইব্রেরি তৈরির জন্য ৫৭ লক্ষ টাকা ক্রীড়া দপ্তরের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে লাল-হলুদ ক্লাবকে।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বেহালায় তৃণমূলের অনুষ্ঠানে ঘুরিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই অবস্থানকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছে বিরোধী দলগুলো। একযোগে আক্রমণ করেছে বিজেপি-কংগ্রেস। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'তৃণমূলের নৌকা ডুবতে চলেছে। মানুষ বুঝতে পারছে তৃণমূল চোরদের দল। অনুব্রত মণ্ডল সাংসদ, বিধায়ক না হয়েও মেডিক্যাল কলেজের মালিক। এমনটা শোনা যাচ্ছে। চুরি না করলে এমনটা কী করে হয়? আগে শুনতাম চোরের মায়ের বড় গলা, এখন চোরের দিদির বড় গলা।'
এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ঝাড়খণ্ডে বিধায়ক কেনবেচা বাংলার পুলিস আটকেছে। এদিন সেই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের পাল্টা, 'উনি এ রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক চুরি করে পিএসির চেয়ারম্যান করেছে। আরও অনেক বিরোধী বিধায়ককে কিনেছেন।'
একই সুর শোনা গিয়েছে সিপিএম-র গলায়। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'বেহালার যিনি বিধায়ক আগে জেলে গিয়েছেন। বেহালায় বসে তিনি অনুব্রতর কথাই বলে গেলেন। অনুব্রত মণ্ডল কেন এমএলএ, এমপি না, সেটা দলনেত্রীর বিষয়। উনি যা বলেছেন তার কোনও ব্যাখ্যা বা যুক্তি নেই। যেহেতু অনুব্রতর কাছে মধুভান্ড আছে, তাই বেহালায় দাঁড়িয়ে অনুব্রতর কথা বলে গেলেন। আসলে ভয় পেয়ে হালুম করলেন।'
এদিন বেহালার জনসভায় মমতার প্রশ্ন, 'কেষ্ট কী করেছিল? ওকে ধরলে কেন? একটা কেষ্টকে জেলে পুরলে হাজার কেষ্ট তৈরি হবে। কেষ্টরা এজেন্সিকে ভয় পায় না। প্রতি ভোটে ওকে নজরবন্দি করে রাখে।'
রবিবার, ১৪ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বেহালায় যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata banerjee)। প্রতি বছর তিনি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু এ বছর চিত্রটা ভিন্ন। এই বেহালার (Behala) এক বিধানসভা আসনের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) আপাতত জেলবন্দি। প্রতিবার বেহালার এই অনুষ্ঠানে 'দিদি'র পাশেই দেখা যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে আপাতত তিনি দলের কোনও পদে নেই। তাঁকে সরানো হয়েছে রাজ্য ক্যাবিনেট থেকে।
তাই তৃণমূল তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার একদা নাম্বার দুয়ের অনুপস্থিতিতে বেহালাবাসীকে কী বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী? সেদিকে তাকিয়ে বিরোধীরা। এদিকে, জানা গিয়েছে প্রেসিডেন্সি জেলে এদিন পরিদর্শন করল ৮ জন ডাক্তারের একটি টিম। টিমের সদস্যরা সকলেই এসএসকেএমের চিকিত্সক বলে জানা গিয়েছে। মূলত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখতেই এই মেডিক্যাল টিম বলে জেল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে জেলেরই অন্য সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই আছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
খাওয়াদাওয়াও করছেন স্বাভাবিকভাবেই। গত দুদিনে পায়ের ব্যথা কিছুটা বেড়েছে। তাই মাঝেমধ্যেই সেলের বাইরে হাঁটাহাঁটি করছেন।
জেলে একদিন মাছ, একদিন মাংস, একদিন ডিম, একদিন সোয়াবিন ও বাকি দিন নিরামিষ খাচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পড়ছেন রামকৃষ্ণদেবের কথামৃত। অর্থাত্, টাকা মাটি মাটি টাকার সেই মূল মন্ত্রকেই এখন জেলের নিস্তরঙ্গ সেলে নিজের সঙ্গী করে নিয়েছেন পার্থবাবু।
সূত্রের খবর, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পার্থর খাওয়ার আবদারে প্রায় প্রতিদিনই দুবেলা ভাত দিতে হচ্ছে। কখনও আবার বিকালের দিকে চপ, বেগুনি এনে দিতে হচ্ছে জেলের ক্যান্টিন থেকে অনেক জোরাজুরিতে। এর মধ্যে একদিন খাসির মাংসের ঝোল ও ভাত দিতে হয়েছে তাঁকে। যদিও গতকাল রাখি পূর্ণিমার দিন জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাতে আমিষ পড়েনি। গতকাল তাঁর দুপুরের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল এবং দু-রকমের তরকারি। যা খাবার দেওয়া হয়েছে সবটুকুই খেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মহাসচিব। পাশাপাশি তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।