দুর্ঘটনার (Rishabh Panth Accident) পর এক সপ্তাহ কেটেছে। দেহরাদুন থেকে মুম্বইতে (Mumbai Hopsital) স্থানান্তরিত হয়েছে ঋষভ পন্থের চিকিৎসা। ভারতীয় এই ব্যাটার-উইকেট রক্ষকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বিসিসিআই (BCCI)। এবার মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে ঋষভের লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শুক্রবার ডাক্তার দীনশ পার্দিওয়ালা ও তাঁর দল এই সার্জারি করেছেন। জানা গিয়েছে, ডাক্তার পার্দিওয়ালা সরাসরি বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক এবং ক্রিকেটারদের ফিটনেস সম্বন্ধে অবগত। তাঁর অধীনেই চিকিৎসাধীন পন্থ।
প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার হয় ব্যাটার-উইকেট রক্ষকের। তবে এখনও সুস্থ হয়ে তাঁর মাঠে নামতে দীর্ঘ দিন সময় লাগবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গাড়ি দুর্ঘটনার পরে প্রথমে দেহরাদুনের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পন্থ। কিন্তু সেখানে রেখে তাঁকে চিকিৎসা করাতে চায়নি বিসিসিআই। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পন্থকে।
প্রসূন গুপ্ত: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি এই সময়ে বিশ্ব দরবারে বাংলার অন্যতম মুখ। এবার এখনও তিনি তাঁর স্থানটি রাখতে পারছেন কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথ থেকে সত্যজিৎ রায় হয়ে অমর্ত্য সেনের নাম বাঙালি হিসাবে তাঁদের কৃতিত্ব বিশ্ব দরবারে উঠেছে। সৌরভ তেমন না হলেও ক্রিকেট দুনিয়াতে এসে নিজেকে এবং বাঙালির গর্বের জায়গাটি ধরেছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
খেলার দুনিয়াতে ভারত অলিম্পিক বাদ দিলে একসময় নাম করেছিল হকিতে। সেই ঐতিহ্য ১৯৮৪ থেকে ফিকে। ফুটবলে বাংলা ৯০-এর দশকের আগে ভারত সেরা থাকলেও, বিশ্বের দরবারে ভারতীয় ফুটবল নেহাতই লিলিপুট। একমাত্র ক্রিকেটে ভারত দু'বার সীমিত ওভারের খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং টি-২০-তে একবার। এই ভারতীয় দলে বাঙালি হিসেবে কিছুদিনের জন্য পঙ্কজ রায় সুনামের সঙ্গে খেললেও তখন ভারত বিদেশি দলের সঙ্গে খেলা মানে পরাজয় ছিল নিশ্চিত। ফলে পঙ্কজবাবু সেই অর্থে নাম করতে পারেননি। কিন্তু দীর্ঘদিন বাদে দলে এলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, খেললেন, অধিনায়ক হলেন। বেটিং-কাণ্ডে বিদ্ধ ভাঙাচোরা একটা দলকে একসূত্রে বাঁধলেন। অজস্র রান করলেন, দলকে জেতালেন। কিন্তু বোর্ড রাজনীতির শিকার হয়ে বাদ পড়লেন।
ফের ফিরলেন এবং এক সফল কামব্যাক করে মাথা উঁচু করে বিদায় নিলেন। বাঙালি গর্বিত হলো। এরপর সৌরভ ক্রিকেট প্রশাসনে এলেন। বাংলা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদ পেলেন, তারপর ভারতীয় ক্রিকেটের সভাপতি হলেন। এর আগে বিশ্ব ক্রিকেটে ক'জনের এই সম্মান এসেছে বা পেয়েছেন? শোনা যায় সৌরভ কেন্দ্রের বা বিজেপি নেতাদের সুনজরে ছিলেন।
হয়তো এমন কথাও হয়েছিল যে তিনি রাজ্য বিজেপির মুখ হবেন কিন্তু সৌরভ সেই দিক বেশ বুদ্ধি করে এড়িয়েছেন। সবসময়ে মানুষের সেরা দিন থাকে না, এটা অন্তত সৌরভের থেকে ভালো কেউ জানেন না। কোপ পড়ে তাঁর উপর।ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন থেকে এক প্রকার তাঁকে বিদায় দেওয়া হলো।
সৌরভ দলে থাকুন বা নাই থাক বাঙালির চোখের মণি হয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থান মোটেই সুবিধাজনক নয় ক্রিকেট দুনিয়াতে। টিভি চ্যানেলে গেম শো করেন কিন্তু তিনি জানেন বাঙালির কাছে আইকন থাকতে গেলে তাঁর নাম নিয়মিত খবরে থাকতে হবে, আপাতত লাইমলাইট থেকে তিনি অনেকটাই দূরে। এবারে কি তবে তৃণমূলের হয়ে রাজনীতিতে যোগ।
অসম্ভব কিছু নয়। খবর এমনটা না হলেও ইদানিং তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের মানুষ হতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন এমনকি সম্প্রতি ফিল্ম ফেস্টিভেলেও দেখা গেল তাঁকে। ভাষণও দিলেন 'দিদি'কে ধন্যবাদ দিয়ে। দেখা গেলো এক বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলেনেও। সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বাংলায় ভাষণ দিলেন যা অনেকের মতে অভূতপূর্ব। মঞ্চে তাবড় তাবড় বক্তা,রাজ্যপাল, প্রাক্তন লোকসভার স্পিকার থেকে বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের মতো মুখ।
তিনি বক্তব্যে জানালেন আচার্য সত্যম রায়চৌধুরীর ডাকে এসেছেন। কাজেই তিনি বাঙালির প্রিয় জায়গাগুলিতে যাচ্ছেন তা প্রমাণিত। একইসঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও। সৌরভ খুব বুদ্ধিমান এবং আত্মসম্মানী। তাঁকে গ্রেগ চ্যাপেল যে দল থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন তা আজও ভোলেননি। ক্রিকেট বোর্ড থেকে বাদ দেওয়াটাও হজম করবেন বলে মনে হয় না। ৫ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন ছিল (যদিও তিনি ওই দিনটিকে শংসাপত্রে লেখা জন্মদিন বলেন)। ওই দিন দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা যেমন এসেছিল তেমনই এসেছিলো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকেও। এই প্রথম কিনা জানা নেই কিন্তু 'খবরে' এই প্রথম। তবে আগামি দিনে সৌরভ কি রাজ্যসভায়? সৌরভ পিছনের বেঞ্চে বসে থাকার পাত্র নয় অতএব আরও একটা খবরের অপেক্ষায় বাঙালি।
প্রসূন গুপ্ত: সৌরভ গাঙ্গুলি এখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে অতীত। তাঁর সভাপতিত্ব এক প্রকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং যুক্তি দেখানো হয়েছে, তিন বছরের বেশি কেউ বোর্ডের সভাপতি থাকেননি। অথচ অতীত ঘেঁটে দেখা যাবে জগমোহন ডালমিয়া টানা বহু বছর বিসিসিআই সভাপতি ছিলেন। এদিকে, সৌরভ সরে যাওয়ার পর তাঁর প্রিয়পাত্রদের সরানোর কি সূক্ষ্ম পরিকল্পনা চলছে? গুঞ্জন অবশ্য এমনটাই শোনা যাচ্ছে। সৌরভ সভাপতি থাকার আগে ভারতীয় দলের কোচ করতে চেয়েছিলেন বন্ধু অনিল কুম্বলেকে, হয়েও ছিলেন তিনি কিন্তু বিরাট কোহলিদের আস্থা অর্জন করতে না পারার জন্য তাঁকে দ্রুত সরে যেতে হয়।
কোচ হয় আসেন রবি শাস্ত্রী। সৌরভের অত্যন্ত অপছন্দের চরিত্র বরাবরই রবি। অন্যদিকে বিরাট কিন্তু একটা সময়ে সৌরভের প্রিয়পাত্র ছিলেন কিন্তু রবি-কোহলি জুটি অনেকটাই তাঁদের মতো করে দল চালাতে শুরু করেন। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ-সহ বহু আইসিসি ট্রফি হাতছাড়া হয় ভারতের। সৌরভ পুরো দায়িত্ব পাওয়ার পর ধীরে ধীরে অধিনায়কত্ব হারান বিরাট কোহলি এবং কোচিংয়ের দায়িত্ব থেকে সরানো হয় রবি শাস্ত্রীকে।
কোচিংয়ের দায়িত্ব এক প্রকার জোর করেই রাহুল দ্রাবিড়ের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়। সৌরভ চেয়েছিলেন বন্ধু রাহুল দায়িত্ব নিক। অন্যদিকে তিন ধরণের অর্থাৎ টেস্ট, ওয়ান ডে এবং টি২০-র অধিনায়কত্বের দায়িত্ব যাক রোহিত শর্মার কাছে। রোহিত, সৌরভ ও গাভাস্কারের প্রিয়পাত্র বলে গুঞ্জন। কথাতো বাস্তব সৌরভ এবং সানির সখ্যতা সর্বজনবিদিত। এবার টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত বিদায় নেওয়ার পর টিম জয় শাহ সক্রিয় রোহিতকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর জন্য বলে সংবাদ।
অন্যদিকে ফের যদি সুযোগ আসে এই আশায় রবি শাস্ত্রী চরম সমালোচনা শুরু করেছেন রাহুল দ্রাবিড়ের। তিনি বলছেন কেন দ্রাবিড় নিউজিল্যান্ডে গেলেন না। তিনি আরও অনেক বিষয়ে দ্রাবিড়ের সমালোচনা করছেন। এদিকে সৌরভের আরেক প্রিয়পাত্র ভিভিএস লক্ষণ বর্তমানে সাময়িক কোচের দায়িত্ব নিয়ে নিউজিল্যান্ডে। কিছু একটা না দেখতে পারলে কে বলতে পারে তাঁর উপরও কোপ পড়তে পারে। রাজনীতির পাঁকচক্রে এখন ভারতীয় ক্রিকেট দল।
ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket) ঐতিহাসিক মুহূর্ত। লিঙ্গবৈষম্য ধুয়েমুছে সাফ করলেন রজার বিনি, জয় শাহরা। বহুদিনের বঞ্চনা সরিয়ে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে (indian womens cricket) আজ নতুন সূর্যোদয়। ম্যাচ ফি'র ক্ষেত্রে আর পুরুষ-মহিলা ভেদাভেদ করবে না বিসিসিআই (BCCI)। রীতিমতো ট্যুইট করে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বোর্ড সচিব জয় শাহ (Jay Shah)। জয়ের ট্যুইট থেকে জানা গিয়েছে বেতন ইকুইটি নীতি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
যে হারে এযাবৎকাল ম্যাচ ফি পেয়ে এসেছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মহম্মদ শামিরা, একই হারে ম্যাচ ফি পাবেন হরমনপ্রীত, শেফালি বর্মা, স্মৃতি মন্দানারা। অর্থাৎ টেস্ট ম্যাচপিছু ১৫ লক্ষ টাকা, ওডিআইপিছু ৬ লক্ষ টাকা এবং টি-২০ বাবদ তিন লক্ষ টাকা। বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত ট্যুইট করেছেন সচিব জয় শাহ।
এদিন ট্যুইটে জয় শাহ লেখেন, 'ভারতীয় ক্রিকেটে লিঙ্গবৈষম্য অবসানের ব্যাপারে বোর্ড অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে পেরে আমরা খুশি।'
প্রসূন গুপ্ত: আশা ছিল হয়তো বা বিসিসিআইয়ের সভাপতিত্ব গেলেও শেষ পর্যন্ত আইসিসি বা বিশ্ব ক্রিকেটের দরজা খুলেও যেতে পারে। কিন্তু বোর্ডের বার্ষিক সভায় আইসিসি চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে সৌরভের নাম নাকি আলোচনাতেই আসেনি। এমনটাই হয়তো হওয়ার ছিল। সূত্র মারফত খবর, সৌরভ নাকি বেশ কিছুদিন আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর গদি যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দিশেহারা হলেও শেষ পর্যন্ত কী হয় তার অপেক্ষায় ছিলেন।
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পয়লা সেপ্টেম্বরের ইউনেস্কোর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ। তিনিই উত্তরীয় পরিয়ে সম্মানিত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শোনা যাচ্ছে, তখন থেকেই সৌরভ অবস্থান বদলাতে শুরু করেন। এরপর কার্নিভালে সৌরভ-জায়া ডোনার ডান্সগ্রুপ নৃত্য পরিবেশনা করে। অসুস্থ শরীরেও ডোনা উপস্থিত ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। এতে যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন দিদি। যদিও এগুলোকে কাকতালীয় হিসেবে দেখতে চাইছেন অনেকে। অনেকের আবার অভিমত, সবই তাবু পাল্টানোর বিষয়।
এদিকে, মঙ্গলবার বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সভায় পাকাপোক্ত বিদায় জানানো হলো সৌরভকে। মমতার সোমবারের আবেদনে কাজ হল না মোটেই। যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত জানতেন সৌরভকে আইসিসিতে পাঠানোর আবেদন প্রধানমন্ত্রীকে করলেও, ফল হবে না কিছু। কিন্তু তিনি বাংলার জনতার কাছে এই বার্তাটি দিলেন যা একমাত্র তিনিই সৌরভের পাশে।
এবার সিএবি সভাপতি হতে চাইছেন দাদা। কাজটি খুব সোজা কারণ রাজ্য সরকারের সহযোগিতা তিনি পাবেনই। কিন্তু সমুদ্রের তিমিকে এবারে পুকুরের পোনা মাছ হতে হচ্ছে তা মনের দিক থেকে কতটা মেনে নেবেন সৌরভ? তিনি তো বলেছিলেন, আরও বড় জায়গায় যাবেন। সেটা হচ্ছে কি? এখনই হয়তো না তবে লাস্ট ল্যাপে সৌরভ যে কিছু একটা করবেন, যা আগেও করেছেন, যা বঙ্গবাসী অনুমান করতে পারছে না। কিন্তু স্টেপ আউট করেই কামব্যাক করবেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা। এমনটাই মনে করছে দাদার ঘনিষ্ঠ মহল।
প্রসূন গুপ্ত: রজার বিনির (Roger Binny) বিসিসিআইয়ের (BCCI) সভাপতি হওয়ার চিত্র পরিষ্কার। নিশ্চিত অমিত পুত্র জয়ের (Jay Shah) সচিব পদে থেকে যাওয়া। কিন্তু বাকি অনেক পরিবর্তন হচ্ছে ভারতীয় বোর্ড তথা ক্রিকেট দলে বলে গুঞ্জন বাজারে। প্রথমে হকি তারপর ফুটবল, শেষে ক্রিকেট বোর্ডেও পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় শাসক দলের অঙ্গুলিহেলন। এমন একটা সমালোচনা বিরোধী শিবিরে। যদিও ক্রীড়া সংস্থা এমন একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে বরাবর রাজনৈতিক মধ্যস্থতা। যে যখন ক্ষমতায়, কমবেশি তাঁদের গুডবুকের লোকেরা শীর্ষ পদে। একাধিক পদে নেতা মন্ত্রী বা তাঁদের ঘনিষ্ঠরা দায়িত্বে। এই বিষয়ে জোর চর্চা জাতীয় ক্রীড়ামহলে।
তবে রাজ্য ক্রীড়া সংস্থায় এভাবে নিজেদের লোক বসানো কঠিন। যেমন পশ্চিমবঙ্গ, দেখার সিএবিতে কারা আসছেন। যাঁরাই আসুন তাঁদের মাথার উপর যে রাজ্য শাসক দলের আশীর্বাদ থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি সৌরভের আমলে ভারতীয় ক্রিকেট দলে অনেক পরিবর্তন এসেছিল। রবি শাস্ত্রীকে এক প্রকার বিদায় জানিয়ে সৌরভের বন্ধু এবং ভারতীয় ক্রিকেটের মিস্টার ডিপেন্ডেবল রাহুল দ্রাবিড়কে কোচিংয়ের দায়িত্বে এনেছে বিসিসিআই। একইভাবে জুনিয়র দলে দায়িত্ব পেয়েছিলেন সৌরভের আরও এক প্রিয়পাত্র ভিভিএস লক্ষণ।
তাঁরা এখনও দায়িত্বে আছেন এবং চট করে তাঁদের সরানো কঠিন কাজ। তা হবু বোর্ড কর্তারা ভালোই জানেন। তবে দ্বিতীয় টার্মে তাঁদের রাখা হবে কিনা সময় বলবে। এমএস ধোনির উপর শোনা গিয়েছে সৌরভ অখুশি ছিলেন। তাঁকে বিভিন্ন সাংবাদিক বৈঠকে বিরাট কোহলির প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে। তবে বিরাটের অধিনায়কত্ব ছাড়া আবার এই সৌরভের আমলেই। ধোনি আচমকাই খেলা ছেড়ে দেন। প্রথমে টেস্ট ম্যাচ, পরে ওয়ান ডে ক্রিকেট থেকেও। অবশ্য তার অনেক আগে তাঁর হাত থেকে ওডিআইয়ের নেতৃত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কোহলি কিন্তু গাঙ্গুলি স্যারের ইয়েস ম্যান না হয়ে নতুন কোচ রবি শাস্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিসিসিআইয়ে এমনটাই কানাঘুষো।
বিরাটের খেলার ফর্মের অবনতি ঘটলে রোহিত শর্মাকে নিয়ে আসা হয় অধিনায়কত্বে। এই পরিবর্তনের পিছনেও নাকি দাদার মস্তিষ্ক কাজ করেছে। সম্প্রতি শোনা গেলো নতুন কমিটি নাকি কোহলির বিষয় ফের উৎসাহী। অন্যদিকে বাংলার শামিকে শুধুমাত্র টেস্ট ম্যাচের জন্য ধরে রাখা হয়েছিল। বুমরার চোট থাকায় দ্রুত শামিকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য রবিবারের প্রাকটিস ম্যাচ এবং সোমবারের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন শামি। রইলো বাকি কোহলির প্রিয় উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা, দেখতে হবে তিনিও ফিরছেন কিনা।
বিসিসিআই (BCCI) সভাপতি পদ থেকে সৌরভের অপসারণ প্রশ্নে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে উত্তরবঙ্গ (North Bengal) উড়ে যাওয়ার আগে সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সৌরভের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, 'সৌরভ (Sourav Ganguly) আমাদের গর্ব। আইসিসি ভোটে লড়তে সৌরভকে সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে উদ্যোগ নিক। ও বিসিসিআই সভাপতি ছিল এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে এবং মাঠেও দক্ষতা দেখিয়েছে। কোর্ট একটা অর্ডার দিয়েছিল সৌরভ এবং জয় শাহকে তিন বছরের মেয়াদ বাড়িয়েছিল।'
তিনি জানান, অমিতবাবুর ছেলে রয়ে গেল। কিন্তু কোন উদ্দেশে সৌরভকে বাদ দেওয়া হল? এটা অন্যায় হয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ করতে গেলে ওকে আইসিসি ভোটে লড়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। আমার প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অনুরোধ। সৌরভ বঞ্চিত হয়েছে, ওকে আইসিসি-তে লড়তে অনুমতি দেওয়া হোক। ও বাংলা, দেশ-সহ গোটা বিশ্বের গর্ব। ক্রিকেট যারা ভালবাসে সভার কাছে সৌরভ গর্ব। এই খবরে আমি খুব শোকাহত। তাই বিষয়টির রাজনৈতিককরণ না করে প্রতিহিংসার চোখে না দেখে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৌরভকে আইসিসি ভোটে লড়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, 'উত্তরবঙ্গ সফরে তিনি মালবাজার বিসর্জন দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। তারপর উত্তরবঙ্গে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।'
বোর্ড (BCCI) সভাপতি বিতর্কের মধ্যেই আরও বড় দুসংবাদ বিসিসিআই কোষাগারে। বিপুল আর্থিক ক্ষতির সামনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ভারত সরকার যদি পরের বছর বিশ্বকাপ (World Cup 2023) আয়োজনের সময় কর ছাড় না দেয়, তা হলে কমবেশি হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম ধনী এই সংস্থার। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। ক্ষতির অঙ্ক জানিয়ে সব রাজ্য সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়েছে বোর্ডের তরফে।
আইসিসির নিয়ম, কোনও দেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চাইলে সরকারের তরফে কর ছাড়ের অনুমতি আদায় করতে হয়। যদি কর ছাড় না পাওয়া গেলে, সেই অর্থ আয়োজক দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে যত টাকা কর দিতে হবে আইসিসিকে, সে টাকা বাদ যাবে আইসিসি থেকে পাওয়া বোর্ডের লভ্যাংশ থেকে।
ভারতের করের নিয়মে এ ধরনের ছাড়ের কোনও নিয়ম নেই। সে কারণে ২০১৬-তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে বিসিসিআইয়ের কোষাগার থেকে বেরিয়েছিল ১৯৩ কোটি টাকা। সেই নিয়ে এখনও আইসিসির আদালতে মামলা চলছে। ক্ষতির পরিমাণ অনেক বাড়তে পারে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গেলে।
প্রসূন গুপ্ত: ঠিক কী চাইছেন এখনও সেই চিত্রটি পরিষ্কার জানাচ্ছেন না ভারতীয় বোর্ডে প্রাক্তন হতে চলা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি অপসারিত হয়ে যে প্রবল অপমানিত তা কিন্তু বৃহস্পতিবার এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে কিছুটা অভিমানের সুরে জানিয়েছেন। সৌরভ অপমানিত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। সেই গ্রেগ চ্যাপেল জমানা থেকে চলছে। জীবনের প্রথম বিদেশ ট্যুরে গিয়েছিলেন ১৯৯২-তে এবং মাত্র একটি ম্যাচ খেলিয়েই আজহারউদ্দিন পত্রপাঠ তাঁকে ভারতীয় দল থেকে ছেঁটে ফেলেন।
ফের জগমোহন ডালমিয়ার কল্যাণে ১৯৯৬-তে ভারতীয় দলে ফেরেন। এই সময়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। ২০০৪-০৫ অবধি তাঁকে দল থেকে সরানো যায়নি। বেটিং কেলেঙ্কারিতে যখন ভারতীয় দল বিধস্ত, তখন অধিনায়ক হয়ে হাল ধরেছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটের সেই তিনিই দলের কোচ করে নিয়ে আসেন গ্রেগ চ্যাপেলকে। গ্রেগ এসেই তাঁকে দল থেকে ছেঁটে ফেলেন। নেপথ্যে ফিটনেস সমস্যা। ফের এক বছরের মধ্যে কামব্যাকও করেন এবং ২০০৭-০৮ অবধি খেলেন।
ওই সময়ে তিনি যে অবসর নেন তার পিছনেও বোর্ডের তৎকালীন শ্রীনিবাসন লবি এবং এমএস ধোনির চাপ ছিল বলেই সংবাদ। ২০০৮-এ শুরু হয় আইপিএল, এবার তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে নতুন ইনিংস শুরু করেন। এবার আইপিএল-র দু'বছর বাদে কেকেআর মালিক শাহরুখ খান তাঁকে বসিয়ে দেন। তিনি পুনে দলে যোগ দিয়ে আরও দু'বছর খেলেন।
এরপর জগমোহন ডালমিয়া যখন সিএবি প্রেসিডেন্ট, তখন সৌরভ সম্পাদক পদে আসীন হন। ডালমিয়ার মৃত্যু এবং বাংলার মসনদে রাজনৈতিক পালাবদল। মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নিয়ে সৌরভকে সিএবি প্রেসিডেন্ট করেন। এরপরের ইতিহাস আবার বিজেপির সঙ্গে প্রিন্স অফ কলকাতার সখ্যতা বাড়া। তিনি বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জোর চর্চা অমিত শাহের কল্যাণে তিনি নাকি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে শীর্ষ আসনে। যদিও ক্রীড়া মহলের একাংশ তাঁকে যোগ্যতম বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরে। তবে শাহরা চেয়েছিলেন একুশের ভোটে সৌরভ বাংলায় তাঁদের দলের মুখ হোন। এমন একটা গুঞ্জন তৈরি হয়। সৌরভ বুদ্ধিমান, নানা বাহানা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত যেকোনও ভাবেই হোক পূর্বের তাঁর জীবনের একাধিক ঘটনাপ্রবাহের মতো একপ্রকার তাঁকেও বিদায় দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রশাসক সৌরভ এবার কিছুটা ক্ষিপ্ত। তাঁর সামনে অবশ্য বিকল্প কিছু নেই। তিনি সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়ে রাজ্য ক্রিকেট বোর্ডে ফিরতে পারেন, যেমন এক সময়ে তাঁর মেন্টর ডালমিয়া হয়েছিলেন। কিন্তু ডালমিয়ার পিছনে নাকি সুভাষ চক্রবর্তীর মতো নেতার হাত ছিল।
এবার সিএবি-তে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বরূপ দে। যার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জোর চর্চা। এই বিশ্বরূপ দে এখন তৃণমূলের কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। ফলে প্রশাসক হিসেবে সৌরভকে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় ফিরতে গেলে মমতার আশীর্বাদ যে দরকার, তা একপ্রকার স্বীকার করছেন অনেকেই। সেখানে কি এবার তাঁকে কিছু দিতে হবে? ফের শুরু হয়েছে চর্চা।
একদিনে কেউ সচিন তেন্ডুলকর, নরেন্দ্র মোদী হয় না। বিসিসিআই (BCCI) সভাপতি বিতর্কের মধ্যে প্রথমবার মুখ খুললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। আরও বড় কিছু করার ইঙ্গিত তাঁর গলায়। বৃহস্পতিবার বেসরকারি এক ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর মন্তব্য, 'বড় লক্ষে পৌঁছতে প্রথমে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে হয়। একলাফে সাফল্য পাওয়া যায় না। সেটা সম্ভব নয়। একদিনে কেউ সচিন তেন্ডুলকর, নরেন্দ্র মোদী (Sachin-Modi) হয় না।'
তিনি জানান, আমিও সেভাবে এগিয়েছি। ক্রিকেট খেলা ছেড়ে সিএবি সভাপতি হয়েছি, তারপর বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। সামনের দিনে আরও ভালো কিছু করব। তবে আমার ক্রিকেটার জীবনের ১৫ বছর স্মরণীয়।' ভারতীয় ক্রিকেটের দাদার মন্তব্য, 'সব কিছুর একটা শেষ থাকে। গত তিন বছর ধরে বিসিসিআই করোনা কালে আইপিএল আয়োজন করেছে। মহিলা ক্রিকেটের উন্নতিতে উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছি। কমনওয়েলথ গেমসে আমাদের মহিলা দল রুপো পেয়েছে। ফলে কেরিয়ারে যতটা সময় যে যে জায়গায় কাজ করেছি, আমি সন্তুষ্ট। চেষ্টা করেছি যাতে নিজের কাজ সম্পূর্ণ নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে করতে পারি।'
তাঁকে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। এই মন্তব্য করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেন, 'সবাই শেষটাই দেখে। প্রশাসক হিসেবে হয়তো আমার এখানেই ইতি। আবার নতুন কিছু, সেখানে তো আবার শূন্য থেকে শুরু।'
প্রসূন গুপ্ত: ১৮ অক্টোবর বিসিসিআইয়ের সাধারণ সভা (BCCI AGM) বা এজিএম। সভায় কী হবে মোটামুটি ধারণা হয়ে গিয়েছে। সম্ভাব্য সভাপতি হচ্ছেন ৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য রজার বিনি (Roger Binny)। রজার বিনি খুব শান্ত, মার্জিত প্রকৃতির মানুষ। একটা সময়ে বিশ্বনাথ খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর কিছুদিন কর্নাটকের অধিনায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু দলের খুব কিছু একটা সুবিধা হয়নি। মুম্বই, দিল্লি এবং কর্নাটক চিরকাল ভারতকে সেরা খেলোয়াড় দিয়েছে। কর্নাটক পরবর্তীতে ব্রিজেশ প্যাটেলের পর ভাল ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক দিয়েছে; যেমন রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে প্রমুখ।
সেরা কর্নাটক দলে অবশ্যই বিনি অন্তর্ভুক্ত। একাধারে তিনি ওপেনিং ব্যাটার এবং বোলার ছিলেন। তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ এবং ৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রথম একাদশের সদস্য তথা উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানির মতে, 'বিনির মতো জেন্টলম্যান আর হয় না। কিন্তু বিনি নাকি বরাবরই নীরব কর্মীর মতো খেলে গিয়েছেন।' তিনি ক্রিকেট জীবনে কোনওদিন বিতর্কেও জড়াননি। আবার আগ বাড়িয়ে কোনও উপদেশ দেননি। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে, বিনিকে কাঠের পুতুল বানিয়ে কি জয় শাহ বোর্ড চালাবেন, যা কিনা সৌরভের আমলে সম্ভব ছিল না বলেই গুঞ্জন। কিন্তু সৌরভ কি করবেন এরপর?
অভিষেক ডালমিয়া বর্তমানে বাংলা ক্রিকেট বোর্ড বা সিএবি-র সভাপতি। কিন্তু এবার তাঁর প্রথম টার্ম শেষ হচ্ছে। আগামীতে আইপিএলের সাব কমিটিতে তিনি স্থান পেয়েছেন, অতএব জাতীয় ক্রিকেটে তিনি দায়িত্ববান হচ্ছেন। অভিষেক অবশ্য এই প্রতিবেদককে বললেন, ১৮-র এজিএম পৌরোহিত্য করবেন মহারাজদা অর্থাৎ সৌরভ স্বয়ং। তারপর পরের সভাগুলি হবে ৬ জনের বিশেষ কমিটি সদস্যদের মধ্যে। যেখানে অবশ্যই সৌরভ থাকবেন না। এক বছর বাদে ফের সাধারণ সভায় সব রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
যদিও প্রশ্ন থাকছে এরপর সিএবির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন? সাধারণত এই রাজ্যের শাসক দল পরোক্ষে তা ঠিক করে থাকে। যেমন এক সময়ে সুভাষ চক্রবর্তী, জ্যোতি বসুরা জগমোহন ডালমিয়াকে ওই পদে রাখতে ক্ষমতার কসুর করেননি। আবার ডালমিয়াকে সরিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে সিএবি সভাপতি করেছিলেন। এরপর মমতা ক্ষমতায় আসার পর সৌরভ এবং অভিষেক ক্ষমতায় আসেন। এবার কি ফের মমতা দায়িত্ব নিয়ে সৌরভকে ফের বাংলা ক্রিকেটের মসনদে বসাবেন এবং সৌরভ কি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবেন? ১৮র পর চিত্র পরিষ্কার হবে।
BCCI-র সভাপতি পদ থেকে সরতে পারেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। সূত্রের খবর, তাঁর জায়গায় বসতে পারেন বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন ক্রিকেটার রজার বিনি (Roger Binny)। ১৮ অক্টোবর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক (AGM) সভায় এই রদবদলে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়বে। বিসিসিআই-তে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং জয় শাহদের প্রথম দফায় তিন বছরের টার্ম শেষ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আরও একটা টার্ম অর্থাৎ ২০২৫ পর্যন্ত তাঁদের গদি নিশ্চিত ছিল। সেই মোতাবেক জয় শাহ বিসিসিআই সচিব থাকলেও, বোর্ড সভাপতি পদে রদবদল আসন্ন। সেই সম্ভাবনা ক্রমশ প্রবল। ভারতীয় ক্রিকেটের দাদার উত্তরসূরি হিসেবে উঠে আসছেন কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোশিয়েশনকে প্রতিনিধিত্ব করা রজার বিনি।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে IPL-এর চেয়ারম্যান পদে ব্রিজেশ প্যাটেলের পরিবর্তে আসছেন অরুন সিং ধুমল। সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে ১৮-ই অক্টোবর বোর্ডের বার্ষিক সভায়। সূত্রের খবর, রাজধানীতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে মঙ্গলবার মুম্বই উড়ে যাচ্ছেন 'দাদা'।
সেখানে যোগ দেবেন বোর্ডের শীর্ষ পদাধিকারীদের বৈঠকে। এই বৈঠকের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ১৮ তারিখ বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভার আগে এই বৈঠক কার্যত সেমিফাইনাল। বিসিসিআইয়ের পরবর্তী মুখ কে হবেন? তাঁর সঙ্গেই বা কে কে থাকবেন সেটা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে আজকের বৈঠকে।
বিশাল রদবদল হতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিসিআইতে (BCCI)। খবরটি এক হিন্দি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং বোর্ডের তরফ থেকে সংবাদটির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেননি। বরং কেউ কেউ বলছেন এমনটাই নাকি হতে চলেছে।
প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) সরে যাবেন। এবং তাঁর জায়গায় আসতে পারেন অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ। সংবাদটি অনেক মিডিয়ায় বেরিয়ে গিয়েছিল যে সৌরভ জয়দের ক্ষমতায় থাকার সময়সীমা ২০২৫ অবধি থাকছে। এবং তারপর ৩ বছরের জন্য তাঁদের কুলিং পিরিয়ডে যেতে হবে অর্থাৎ ওই তিন বছর তাঁরা বোর্ডের কোনও পদে থাকতে পারবেন না।
এখানেই বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, জয় ২০২৮ এ ফের ক্ষমতায় আসতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। কাজেই অবিলম্বে বোর্ড সচিবের পদ ছেড়ে তিনি হয়ত সভাপতির পদে যেতে চাইবেন। অন্যদিকে সৌরভ চেষ্টা করবেন বিশ্ব ক্রিকেটের সভাপতি হওয়ার।
কিন্তু সংবাদ মাধমের কাছে নতুন তথ্য আসছে নিয়মিত। শোনা যাচ্ছে যা, সৌরভকে পদ ছাড়তেই হচ্ছে এবং সৌরভ প্রস্তুতও রয়েছেন। জয় শাহও নাকি সভাপতির দাবিদার হচ্ছেন না। তিনি ফের নির্বাচনে দাঁড়াবেন ওই সচিব পদের জন্য। এই মানসিকতার কারণ সূত্র মারফত যা জানা যাচ্ছে যে, জয় ক্রিকেট জগতের কেউ ছিলেন না। এমনকি পাড়ার ক্রিকেট খেলেছেন বলেও সংবাদ নেই।
কাজেই বিজেপির একটি অংশ নাকি চাইছেন যে, এমন কেউ আসুন যিনি ক্রিকেটটা খেলেছেন। অবশ্য এর আগে মাঠের বাইরের মানুষরাই তো বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, কিন্তু বর্তমান শাসক দল ওই পদ্ধতিতে বিশ্বাসী নয়। এই জটিলতার ফাঁকে বোর্ড সভাপতির প্রার্থী হিসাবে নাম উঠে এল ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম রজার বিনির নাম। তিনি প্রার্থী হচ্ছেন।
অন্যদিকে, সৌরভ সাধারণ সদস্য হিসাবে বোর্ডে থাকছেন। থাকার কথা বাংলা ক্রিকেট বোর্ডের অভিষেক ডালমিয়ার কিন্তু তাঁর জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করবেন সৌরভ। আগামী ১২ অক্টোবর নমিনেশন জমা হবে এবং যদি ভোটের প্রয়োজন হয় তবে নির্বাচন হবে ১৮ অক্টোবর।
প্রসূন গুপ্ত: হাওয়ায় ভাসছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আরও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেলেও তিনি কি ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থাকতে পারবেন? বৃহস্পতিবার সিএন পোর্টালে লেখা হয়েছিল, সৌরভ নয় বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা জয় শাহর। অন্য জাতীয় সংবাদ মাধ্যমও সেই দাবি করছে।
তবে ক্রীড়া প্রশাসকের রাজনীতি কখনই প্রত্যক্ষ রাজনীতিমুক্ত নয়। সবাই জানে বিসিসিআই বা এআইএফএফ স্বসাশিত সংস্থা। শাসক দল চেষ্টা করে নানাভাবে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত স্বশাসিত সংস্থাগুলোয় ক্ষমতা বিস্তার করা। কেন্দ্রে যখন ইউপিএ সরকার তখনও বিসিসিআই, এআইএফএফ কিংবা আইওসি-র মতো সংস্থায় প্রধান শাসক দল কংগ্রেসের পছন্দের লোক বসানো হয়েছিল। সে সুরেশ কালমাডি হোক, শরদ পাওয়ার কিংবা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি হোক। এই রীতির ব্যতিক্রম ছিল না বাংলার পূর্বতন বাম জমানা।
আমরা দেখেছি, বামফ্রন্ট বিশেষ করে সিপিএম রাজ্যের শাসনভার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গেই ক্লাব, লাইব্রেরি, ক্রীড়া, সিনেমা জগৎ থেকে শুরু করে সামাজিক সব জায়গাতেই তাদের দলের লোককে বকলমে বসিয়েছিল। সেই একই পথে কি হাঁটছে বিজেপি? সম্প্রতি ফুটবল, হকি ইত্যাদি সব জায়গাতেই তাদের কাছের লোক জায়গা পেয়েছে। তাহলে ক্রিকেট কেন ব্যতিক্রম হবে? বিসিসিআই শীর্ষ পদে জয় শাহের উত্তরণ সম্ভাবনা জোরালো করে এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
জয় শাহ এখনই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষপদ না পেলে তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৮ অবধি। তাই কি এবারেই সৌরভকে সরিয়ে জয় শাহকে বিসিসিআই সভাপতি করতে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির?
যদি তাই হয়, তাহলে সৌরভ গাঙ্গুলির ভবিষ্যৎ কী? সৌরভ হয়তো চাইতে পারেন আইসিসির সভাপতি হতে, কিন্তু সেখানেও হার্ডল। দাবিদার অনেক, বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থার বর্তমান সভাপতি আরও দু'বছর মেয়াদবৃদ্ধি চেয়েছেন। হয়তো পেয়েও যাবেন, এছাড়া চেন্নাই ক্রিকেট বোর্ড চাইছে তাঁদের প্রতিনিধি আইসিসি সভাপতি হোক। শোনা যাচ্ছে বর্তমান সে রাজ্যের শাসক দল এবিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা বলে রেখেছে।
তাহলে সৌরভের হয়ে গলা ফাটাবে কে? সম্ভবত আইসিসি-র শীর্ষপদে যাওয়ার কাজ এখন কঠিন তাঁর পক্ষে। সেক্ষেত্রে তিনি কি ক্রীড়া ভাষ্যকার হয়ে ফিরবেন? সেখানেও বাধা, স্বার্থের সংঘাতে ভুগবেন তিনি। তাহলে রাস্তা খোলা একমাত্র রাজনীতিবিদ হওয়ার। অমিত শাহ তাঁর বাড়িতে যাওয়ার পর এই জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছিল। কিন্তু কোনওপক্ষ থেকেই উত্তর আসেনি। সৌরভ ভোটে দাঁড়াতে চাইবেন না। সম্প্রতি ইউনেস্কোর অনুষ্ঠানে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে মহারাজকে দেখা গিয়েছে। তাই নিরাপদ ভাবে জিততে রাজ্যসভা তাঁর জন্য আদর্শ। প্রশ্ন এ রাজ্য থেকে কি তিনি রাজ্যসভায় যাবেন বিজেপির সমর্থনে?
এমনও হতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য হিসেবে তিনি তৃণমূলের সাংসদ হতে পারেন। কারণ যাই হোক না বাংলার মহারাজ লম্বা রেসের ঘোড়া এবং ক্যালকুলেটিভ। তাই সময় সুযোগ বেছে সেরাটাই বাছবেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা, এমনটাই ধারণা দাদা অনুরাগীদের।
প্রসূন গুপ্ত: বুধবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০২৫ অবধি বর্তমান ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্বে থাকতে পারবেন। কার্যত খুশি সৌরভ ভক্তরা বিশেষ করে বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু এখানেই অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে যে দায়িত্বে থাকার অধিকার পেয়েছেন ঠিকই সৌরভ এন্ড কোম্পানি। কিন্তু স্বপদে অর্থাৎ সভাপতির পদে সৌরভ কতদিন থাকতে পারবেন?
প্রথমত বিশ্ব ক্রিকেট বোর্ড বা আইসিসির সভাপতির পদ খালি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা ওই পদে সৌরভ গাঙ্গুলিকে চাইছেন। পাকিস্তান থেকে নিউজিল্যান্ড চাইছে, সৌরভকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। দু-একটি দেশের আপত্তি থাকলেও সেসব ম্যানেজ করা যাবে বলেই ধারণা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। কিন্তু সৌরভ শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন কি? একবার ওই পদে গেলে ফের ফিরে এসে দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব পাওয়া কঠিন। ডালমিয়া ছাড়া আর কেউই ফিরে পাননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের গুরু দায়িত্ব।
দ্বিতীয় সমস্যা ঘরের অন্দরেও। আপাতত বোর্ড সচিব হিসেবে অমিত শাহর পুত্র জয় ২০২৫ অবধি কমিটিতে থাকছেন মহারাজের সঙ্গে। কিন্তু ২০২৫ এর পর ৩ বছর এঁরা কেউই ক্রিকেট বোর্ডের কোনও পদে থাকতে পারবেন না, যাকে প্রশাসনিক পরিভাষায় কুলিং পিরিয়ড বলছে। এমনটাই এটিই ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৮ এর আগে জয় আর ফিরতে পারবেন না বোর্ডের কোনও দায়িত্বে। জয় শাহ কি এটা মেনে নেবেন?
ইতিমধ্যে ফুটবল বোর্ডের বা এআইএফেরের সভাপতি হয়েছেন বিজেপি সদস্য কল্যাণ চৌবে। বাইচুং ভুটিয়াকে রীতিমতো হেলায় হারিয়েছেন তিনি। তাই ক্রিকেট পিচে জোর গুঞ্জন বোর্ড সভাপতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জয় শাহের। সেখানে বর্তমান বোর্ড সভাপতি সৌরভকে আইসিসি-তে পাঠিয়ে ফাঁকা আসন পূর্ণ করার উদ্যোগ নিতেই পারেন অমিত পুত্র।