সোমবার এসএসসির রায় বেরোনোর পর, মঙ্গলবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অভিযুক্তদের জামিন মামলার। শুনানিতে মুখ্য সচিবের ওপর চরম ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। ২ বছর আগে তদন্তকারী সংস্থা মুখ্যসচিবের কাছ থেকে অনুমোদন পত্র চেয়েছে। কিন্তু তা জমা তো পড়েনি, এমনকি অনুমোদন পত্র দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্তও জানানো সম্ভব হয়নি মুখ্যসচিবের।
যদিও শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত জানান, নির্বাচনের জন্য কমিশনের নিয়মাবলীর মধ্যে বিষয়টি পড়ে যাওয়ায় মুখ্যসচিব অনুমোদন পত্র তৈরি করতে পারেননি। ক্ষুব্ধ বিচারপতি বাগচী জানান, দেড় মাসে মুখ্যসচিবের একটা অনুমোদন পত্র তৈরি করার সময় হচ্ছে না! নির্বাচন কমিশনের নিশ্চই নির্বাচনে নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। তবে আদালত তো নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যাপারে কিছু করতে বলছে না। তাহলে সমস্যা কোথায়? বিচারপতির আরও মন্তব্য, রাজ্যের একজন উচ্চপদস্থ অফিসার এভাবে যুক্তি দেখিয়ে নিজের দায় এড়াচ্ছেন? আজ বলছেন নির্বাচন কাল বলবেন অন্য কাজ আছে। ক্রিমিনাল কোর্টের এত সময় কোথায়? সিবিআইয়ের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদীও জানান, অনুমোদন পত্র পেলেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। নিয়মের বন্ধনে আমাদের হাত বাঁধা। ট্রায়ালও চলছে শ্লথ গতিতে।
দীর্ঘ শুনানির পর বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, মুখ্যসচিব এর হলফনামায় খুশি নয় কলকাতা হাইকোর্ট। মুখ্যসচিবকে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আদালত দশদিন সময় দিল। তারপরেও যদি মুখ্য সচিব অনুমোদন পত্র না জমা দেন, সেক্ষেত্রে রুল ইস্যুর হুঁশিয়ারিও দেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২ মে।
জিটিএ-তে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিঙ্গেল বেঞ্চের সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আজ, শুক্রবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি হরিশচন্দ্র টন্ডন ও মধুরেশ প্রসাদ-এর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় সিবিআই অনুসন্ধান হোক। অনুসন্ধানের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান বিচারপতি।
পাহাড় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ সিঙ্গেল বেঞ্চ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন মেনে আবেদন করেছিল রাজ্য। রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি বৃহস্পতিবারই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ, শুক্রবার তারই রায়দান হল। রায় দান করতে গিয়ে বিচারপতি হরিশচন্দ্র টন্ডন ও মধুরেশ প্রসাদ জানান, রাজ্যের আবেদনের কোনও গুরুত্ব নেই। সিবিআই অনুসন্ধান রিপোর্ট দেওয়ার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। আপাতত সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের আবেদন খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট।
সমতলের ধাঁচে এবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ পাহাড়েও। সম্প্রতি জিটিএ তে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। অভিযোগ ২০১৯ সালে আপার প্রাইমারিতে ৩১৩ জন ও প্রাইমারিতে ১২১ জন শিক্ষক নিয়োগ হয়। যেখানে ভলেন্টিয়ার শিক্ষককে স্থায়ীকরণ করা হয়। অভিযোগ, এই নিয়োগ কোনও নিয়ম না মেনেই হয়েছে। এমনকি বহু এমন ব্যক্তি চাকরি পেয়েছেন, যাঁরা কখনও ভলেন্টিয়ার শিক্ষকই ছিলেনই না। ইতিমধ্যেই ওই ৩১৩ জন শিক্ষকের তালিকা সিএন-এর হাতে ওই তালিকায় এরকম দুইজনের নাম উঠে আসছে।
ওই তালিকার ৮৩ নম্বর রয়েছে কেশব রাজ শর্মার নাম যিনি ওই ভলেন্টিয়ার শিক্ষক নিয়োগের ভেরিফিকেশন প্রসেসের সদস্য। অভিযোগ এই ব্যক্তি কখনও কোনও স্কুলে ভলেন্টিয়ার এর শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেননি। এমনকি পাহাড়ের ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা দল যে দলটি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ দল নামে পরিচিত ওই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের আত্মীয়।
ঘটনায় অপর একজনের নাম উঠে আসছে, যার নাম সঞ্চাবির সুব্বা। অভিযোগ এই ব্যক্তি কোন স্কুলে প্যারা টিচার হিসেবে কাজ করেনি, এমনকি তার বিএড ডিগ্রিও নেই। এছাড়া এই ব্যক্তি বর্তমানে জিটিএ শিক্ষা বিভাগের ডেপুটি চিফ এক্সজিউটিভ। ফলে সে কিভাবে জিটিএ ৩১৩ জন শিক্ষক নিয়োগ তালিকায় এল তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে উঠছে প্রশ্ন।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের তৎপর ইডি। শুক্রবার সকালে থেকে কলকাতায় চলছে ইডির ম্য়ারাথন তল্লাশি। লেকটাউন সহ ৫ জায়গায় চলছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তল্লাশি। জানা গিয়েছে, এদিন চেতলায় বিশ্বরূপ বসু নামক এক ব্য়বসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। পরিবহন ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার 'মিডলম্য়ান' অর্থাৎ প্রসন্ন রায় ঘনিষ্ঠ এই বিশ্বরূপ বসু।
ইডি সূত্রে খবর, এদিন চেতলার ১৭৮ নম্বর পিয়ারী মোহন রায় রোডের বাড়িতে ছিলেন না বিশ্বরুপ বসু। সেখানে তাঁর দাদাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্য়মে জানা যায়, কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন বিশ্বরূপ বসু। অন্যদিকে চেতলা লকগেটের কাছে বিশ্বরূপ বসুর আরেকটি ফ্ল্যাট পাওয়া গিয়েছে। যদিও সেই ফ্ল্যাটটি তালা বন্ধ অবস্থায় ছিল। সেখানেও তাঁর বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে পাওয়া গিয়েছে। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি আধিকারিকেরা। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর প্রসন্ন কুমার-এর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিশ্বরূপ বসুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন ইডি আধিকারিকরা।
এরপর প্রসন্ন কুমার রায়ের সূত্র ধরে এস কে ঝুনঝুনওয়ালা ওরফে সত্যেন্দ্র ঝুনঝুনওয়ালার সন্ধান পান ইডি আধিকারিকেরা। এদিন সকালে ইডি আধিকারিকেরা তাঁর লেকটাউন বিরাটি অঞ্চলের বাড়িতে পৌঁছে যায়। সেখানে তাঁকে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁকে নিয়ে তাঁর ভাই বীরেন্দ্র ঝুনঝুনওয়ালার বাড়ি এয়ারপোর্ট থানা এলাকার বিরাটি ৪ নম্বর মহাজাতি অঞ্চলের গৌরীপুর রোডের বাড়িতে যান ইডি আধিকারিকরা। সকাল ন'টা থেকে সেখানে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি আধিকারিকেরা।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে ফের গ্রেফতার ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়। সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়ে তাঁকে। এরপর আজ, বৃহস্পতিবার সকালে প্রসন্ন কুমার রায়কে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে নিয়ে যান ইডি আধিকারিকেরা। মেডিক্যাল চেকআপ করানোর পর তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।
জানা গিয়েছে, এর আগে এই একই মামলায় সিবিআই প্রসন্ন রায়কে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান ‘নিয়োগ দুর্নীতির অন্য়তম মিডলম্যান’। এরপর চলতি সপ্তাহের সোমবার প্রসন্ন রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় ডাকা হয়েছিল ইডি দফতরে। সেখানে তাঁকে দিন-রাত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।
গত জানুয়ারি মাসে প্রসন্ন রায়ের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। প্রসন্ন রায়ের নিউটাউনের অফিস থেকে একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে খবর। সেই নথিপত্রের ভিত্তিতেই প্রসন্ন রায়কে ইডি দফতরে তলব করা হয়েছিল।
শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ফের অ্যাকশনে নামল ইডি। শুক্রবার সকাল থেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের পক্ষ থেকে শহরের পাঁচ জায়গায় শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এই ব্য়বসায়ীর নাম রাজিব দে।
জানা গিয়েছে, নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিক উল্টোদিকেই পাঁচতলা বাড়ি রাজীব দে-র। সেখানে তল্লাশি অভিযান ইডি-র। পাশাপাশি, রাজীব দে-র শ্রীরাম কনস্ট্রাকশনের অফিসেও তল্লাশিতে নামেন ইডি আধিকারিকরা। তারপর রাজীব দের দাদা সঞ্জীব দে-কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন ইডি আধিকারিকেরা। বাড়ির পাশেই রয়েছে আরও এক প্রপার্টি। সেখানে গিয়ে খতিয়ে দেখলেন ইডির আধিকারিকরা।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের তলব করা হল কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তকে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ইডি দফতরে দফতরে আসেন বাপ্পাদিত্য। ইডি সূত্রে খবর, এই তৃণমূল কাউন্সিলরকে তাঁর ব্যাংকের পাসবুক, সমস্ত লেনদেন এবং আয়কর রিটার্নের সমস্ত কাগজপত্র সহ বেশ কয়েকটি নথি আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যা বৃহস্পতিবারই ইডি দফতরে জমা দেন বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। টানা ৬ ঘণ্টা ধরে চলছে জিজ্ঞাসাবাস।
প্রসঙ্গত, একসময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল বাপ্পাদিত্যের। সেই কারণে প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় পার্থের ভূমিকা সম্পর্কে বাপ্পাদিত্য অনেকটাই জানেন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তবে পার্থর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই তাঁকে তলব, এমনটাই দাবি এদিন ইডির দফতরে হাজিরা দিতে আসা বাপ্পাদিত্যের। পাশাপাশি তাঁর সাফ দাবি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।
তবে গত বছর প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের বাড়িতে উদ্ধার হয় প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত এবং এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক নথি। প্রায় ১০০ পাতার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি উদ্ধার হয়েছিল বলে সিবিআই সূত্রে খবর। এরপর বৃহস্পতিবার বাপ্পাদিত্যকে আবার তলব ইডির। এই বিষয়ে জল কতদূর গড়ায় এখন সেটাই দেখার।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির জাল গোটাতে সক্রিয় ইডি। এই আবহে এবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী রাজীব দে-কে তলব করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি, পার্থ ঘনিষ্ঠ কলকাতা পুরসভার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থ সরকারকে-ও তলব করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই সিজিও কমপ্লেক্সে তাঁদের আসতে বলা হয়েছে বলে খবর।
ইতিমধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ সরকারের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারী আধিকারিকরা মনে করছেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়। এর মধ্যে প্রোমোটিং ব্যবসাও রয়েছে। সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতেই পার্থ ঘনিষ্ঠ এই দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি।
এর আগে রাজীব দে-র বাড়ি ও বীরভূমের গেস্ট হাউসে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। আর এবার ইডির স্ক্যানারে পার্থ ঘনিষ্ঠ রাজীব দে। নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা কোথায় রয়েছে এবং কোন কোন ব্যবসায় সেই টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন ইডির আধিকারিকরা।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পরতে পরতে রহস্য। সেই রহস্যের পর্দাফাঁস করতেই তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডির এই তৎপরতায় কি উঠে আসবে নিয়োগ দুর্নীতির মাথাদের নাম? সামনে আসবে কি এই দুর্নীতির কোনও নতুন যোগসূত্র?
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার ইডির স্ক্যানারে পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্ন রায়। বৃহস্পতিবার প্রসন্ন রায়ের অফিস সহ ৭ জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান ইডির আধিকারিকরা। এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর। পাশাপাশি, বেশকিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস-ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রসন্ন রায়ের ৪৫০টিরও বেশি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলে খবর।
জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর তাঁর একাধিক সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন প্রসন্ন রায়। এই আবহেই গতকাল একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। পাশাপাশি, প্রসন্ন রায়ের এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উৎস কী? কোন কোন ব্যবসায় তিনি বিনিয়োগ করেছেন? গোটা বিষয়টিই খতিয়ে দেখছেন ইডির আধিকারিকরা।
তবে শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নন, এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহার-ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রসন্ন রায়। সিবিআইয়ের দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে চাকরি পাইয়ে দিতেন প্রসন্ন রায়।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে মিডলম্যানের ভূমিকা ছাড়াও আর কোন কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রসন্ন রায়? আগামী দিনে কি সামনে আসবে এই দুর্নীতির মাথাদের নাম? এরকম একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্যবাসীর মনে।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে পরিবহন ব্যবসায়ী প্রসন্ন রায়কে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ২০২৩-এর নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান প্রসন্ন। জামিনের ৩ মাস পরেই ফের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির স্ক্যানারে এই প্রসন্ন রায়। বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রসন্নর একাধিক ফ্ল্যাট ছাড়াও নিউটাউনের অফিস সহ মোট ৭ জায়গায় তল্লাশি অভিযানে তৎপর হয়েছেন ইডি আধিকারিকরা।
আসলে কে এই প্রসন্ন রায়? এই প্রসন্ন রায়ের উত্থানের গল্প সিনেমার চিত্রনাট্য থেকে কোনও অংশে কম নয়। রংমিস্ত্রি থেকে পরিবহন ব্যবসায়ী হওয়ার গল্প শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। জানা যায়, প্রথম জীবনে প্রসন্ন রায় ছিলেন একজন সাধারণ রং মিস্ত্রি। তারপর ঠিকাদার রং মিস্ত্রি হিসেবেও কাজ করতেন প্রসন্ন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে গাড়ির ব্যবসায় হাত লাগান তিনি। বিভিন্ন সরকারি অফিসে গাড়ি ভাড়া দিতেন। প্রসন্নর গাড়ি ভাড়া যেত এসএসসি দফতরেও। জানা গিয়েছে, এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির প্রধান শান্তি প্রসাদ সিনহার কাছেও যেত প্রসন্নর গাড়ি। সেই সূত্র ধরেই শান্তি প্রসাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে প্রসন্নর। অন্যদিকে আবার এই প্রসন্ন রায়ের স্ত্রী, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-এর আত্মীয়। এই ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়েই চাকরি বিক্রির মিডলম্যান হিসেবে শান্তিপ্রসাদ সিনহার সঙ্গে কাজ শুরু করেন প্রসন্ন। এরপর থেকেই উত্থান শুরু হয় রং মিস্ত্রি প্রসন্ন রায়ের। সম্পত্তিও বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। ইতিমধ্যেই তদন্তে প্রসন্ন রায়ের কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি সামনে এসেছে। এছাড়াও রয়েছে একশোর বেশি কোম্পানি। পাশাপাশি একাধিক ফ্ল্যাট, নিউ টাউন এলাকায় প্রচুর জমিও রয়েছে প্রসন্ন রায়ের। কেন্দ্রীয় তদন্তে দাবি, প্রসন্নর এই বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে চাকরির বিক্রির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা হয়ে যেত সাদা।
অতি সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত সংসার থেকে ঠিক এভাবেই রকেটগতিতে উত্থান হয় নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম মিডলম্যান প্রসন্নের। প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত ২টি মামলার তদন্তে নেমে প্রসন্নের নাম পেয়েছিল সিবিআই। গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলা এবং নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ মামলা। পরবর্তীতে শর্তসাপেক্ষ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন প্রসন্ন রায়। ইতিমধ্যেই ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন প্রসন্ন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। এরপর ইডির তদন্তে নিয়োগ দুর্নীতিতে মিডলম্যানের ভূমিকা ছাড়াও আর কোন কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এই প্রসন্ন রায়? কার বদান্যতায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে এই প্রসন্ন রায়ের? এসব প্রশ্নের উত্তর ইডির তদন্তে শীঘ্রই পাওয়া যাবে বলে মনে করছে বঙ্গের ওয়াকিবহাল মহল।
রাজ্যের শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। সোমবার আদালতে শিক্ষা দুর্নীতির চারটি মামলার তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিট চার্জশিটেই নাম রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এছাড়াও পার্থর প্রাক্তন সচিব সুকান্ত আচার্য (ডব্লুবিসিএস), এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারপার্সন শর্মিলা মিত্র'র নাম রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সিবিআই সূত্র জানা গিয়েছে, নবম-দশম, একাদশ - দ্বাদশ, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। এসএসসির একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এদিন পেশ করা চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র প্রাক্তন কর্তা সুবীরেশ ভট্টাচার্য, ওএমআর শিট প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইসার কর্তা পুনীত কুমার, পঙ্কজ বনশাল, এজেন্ট প্রসন্ন রায়, প্রদীপ সিং, প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী, অরুণ মাইতি, অশোক মাইতি।
নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় পেশ করা চূড়ান্ত চার্জশিটে নতুন অভিযুক্তর তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র প্রাক্তন আধিকারিক সৌমিত্র ঘোষ, নাইসা, পুনীত কুমার, পঙ্কজ বনশাল। এমনকি অভিযুক্ত হিসেবে কয়েকজন শিক্ষকের নামও রয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, সৌমিত্র ঘোষ, সুবীর ঘোষ, দিলীপ ভৌমিক-এর নাম আছে। এসএসসির গ্রুপ ‘সি’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। এই মামলায় আগেই দু’দফায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিবিআই সূত্রে আরও খবর, চার্জশিটে নাম রয়েছে এসএসসির প্রাক্তন আধিকারিক পর্ণা বসু-রও।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার প্রেক্ষিতে দুটি মামলায় মুখবন্ধ খামে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মঙ্গলবার ইডি ও সিবিআই রিপোর্ট জমা দেয়। এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পাশাপাশি ভরা এজলাসে ইডি ও সিবিআই বেশকিছু বিস্ফোরক তথ্য সামনে নিয়ে আসে। ইডি জানান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সম্পর্কিত যে তথ্য ইডির হাতে তুলে দিয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখেছে যে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর মালিকানায় ৮ টি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যে সম্পত্তিগুলি ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে।
ইডি বিচারপতিকে জানায় তারা নিশ্চিত এই সম্পত্তিগুলি সোজা পথে আসেনি। আর সেই কারণেই এই সম্পত্তিগুলি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াকরণ করার পাশাপাশি এই সংস্থার যাঁরা কর্ণধার রয়েছেন, এই সম্পত্তির গুলির সঙ্গে যাঁদের নাম জড়িয়ে রয়েছে তাঁদের সমন পাঠানোর কাজ ইডি শুরু করে দিয়েেছে।
বিচারপতি সিনহাকে ইডি জানিয়েছে, ওই সম্পত্তির মূল্য সাড়ে ৭ কোটি টাকা।লিপস অ্যাণ্ড বাউন্ডসের সিইও পদে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তা স্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও বলেছিলেন, এই কোম্পানি কোনও অনৈতিক কাজ করেনি। ইডি ১০ পয়সার অনিয়ম হয়েছে দেখাতে পারবে না।
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি অভিষেকের অলক্ষ্যে এই বিপুল শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের। ইডির দাবি অনুযায়ী যা সবটাই হয়েছে ঘুরপথে।
এদিকে ইতিমধ্যে এই সংস্থার সঙ্গে জড়িত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করেছে ইডি। তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে সিএন-এ একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি এই কোম্পানির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। যা হয়েছে তিনি সবটাই জানেন। কিন্তু তিনি এও বলেছিলেন এই সংস্থার যারা মাথারা রয়েছেন তাদের অনুমতিতেই তিনি সমস্ত কাজ করতেন।
লিপস এণ্ড বাউন্ডসের পাশাপাশি মঙ্গলবার নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে আর একটি সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি নিয়েও আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাদের কথায় পরিষ্কার এই কোম্পানিকে সামনে রেখে নিয়োগ দুর্নীতিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু যেখানে সব থেকে খটকা লাগছে সকলের সেটা হল, এই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের যোগাযোগের প্রসঙ্গ। মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বিচারপতিকে জানিয়েছিলেন, এই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি ২০১২ সালে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট কোম্পানি ছিল। আর এখানেই আবারও খটকা। জানা যাচ্ছে এই কোম্পানি লিপস এণ্ড বাউন্ডসেরই আর্থিক সহযোগী হিসেবে কাজ করতো।
এখান থেকই প্রশ্ন উঠছে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট কোম্পানি, সে কীভাবে নিয়োগের ওএমআর শিট তৈরির বরাত পেল সেই সময় একাধিক যোগ্য কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও অনভিজ্ঞ এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি কেন টেন্ডার পেল? তদন্তকারী সংস্থার মতে এই কোম্পানিকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার জন্য কোনও টেন্ডারই ডাকা হয়নি।
তবে কি এক্ষেত্রে লিপস এণ্ড বাউন্ডসের প্রভাবশালী কর্ণধারদের মদতেই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি এই সুযোগ পেয়েছিল ? আর বোর্ড কিভাবে এই অনভিজ্ঞ কোম্পানির হাতে নিয়োগের মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ টেন্ডার ছাড়াই তুলে দিয়েছিল। কার কথায় এতবড় সীদ্ধান্ত নিয়েছিল বোর্ড ? যেখানে এতগুলো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত জড়িত। তবে কি এই দুটি কোম্পানি অর্থাত্ এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি ও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গে বোর্ডের কোনও সমঝোতা হয়েছিল? এই সমস্ত প্রশ্নগুলিকে জোড়া লাগিয়ে তদন্তের এগিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার উঠে এল ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার নাম। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রিপোর্ট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ জড়িত। এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দিয়ে ইডির বক্তব্য, মোট সাড়ে ৭ কোটি টাকার দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে ইডি। এই সাড়ে ৭ কোটি টাকার পুরোটাই ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সম্পত্তি। এছাড়া আটটি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। এগুলি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে ইডি।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় এদিন সিবিআই ও ইডি আলাদা আলাদা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গেল বেঞ্চে। বিচারপতি রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর বুধবার ফের এই মামলার শুনানি করবেন। ইডির জয়েন্ট ডিরেক্টর ও ইএসআই হাসপাতালের একজন সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসারকে আগামীকাল, বুধবার আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, ইডির স্ক্যানারে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস ছাড়া আরও চারটি কোম্পানির নাম উঠে এসেছে তদন্তে। চার কোম্পানির ডিরেক্টরদের তলব করেছে ইডি। নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সহ এই চারটি সংস্থা যুক্ত রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এই কোম্পানিগুলি থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে টাকা যেত বলে অনুমান তদন্তকারী আধিকারিকদের।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলে প্রায় থাকেননি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। অসুস্থ থাকার নাম করে হাসপাতালেই কাটছে দিন। ইডি মরিয়া হয়ে উঠেছে কাকুর ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট করার জন্য। কিন্তু এসএসকেএম কোনও অজানা কারণে কাকুর ফিট সার্টিফিকেট দিতেই চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে 'কালীঘাটের কাকু' এখনও এসএসকেএম হাসপাতালেই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করল বিজেপি। অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ না হয়েও অপ্রয়োজনে এসএসকেএম হাসপাতালে শয্যা দখল করে রয়েছেন তিনি। এরফলে রোগী ভর্তি হতে পারছেন না।
অভিযোগের আরও বলা হয়, হাসপাতালে থাকার জন্য নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে দেরি হচ্ছে ইডির। ইডি হেফাজতের দাবি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হয়। প্রধান বিচারপতি জানান, বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, এসএসকেএম হাসপাতালের তরফ থেকে একটার পর একটা স্বাস্থ্য পরীক্ষা সুজয় কৃষ্ণের ক্ষেত্রে করানোর কথা বলা হয়েছে। কখনও মায়োকার্ডিয়াল স্পেস পারফিউশন টেস্ট, আবার কখনও মেন্টাল টাফনেস টেস্ট-স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যেই আবদ্ধ কালীঘাটের কাকু। শুধু কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে না। অন্যদিকে, আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালের কাছ থেকে কাকুর সমস্ত শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন আরও ১ অভিযুক্ত। চাকরি বিক্রির অন্যতম দালাল প্রসন্ন রায়কে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার প্রসন্ন রায়ের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি। উত্তর ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠাতেন এই প্রসন্ন রায়। দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে ইডি ও সিবিআই।
এদিন প্রসন্ন রায়ের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন মুকুল রোহতগি। তার পরই তাঁকে জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রসন্ন রায়। এসএসসি দুর্নীতিতে সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করলেও পরে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতেও তাঁকে হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রসন্ন রায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। উত্তর ২৪ পরগনা ও লাগোয়া এলাকার চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠাতেন তিনি। সেজন্য বিধাননগরে একটি পরিবহন সংস্থার দফতর খুলেছিলেন তিনি। সেই দফতর থেকেই চলত জালিয়াতির কারবার। প্রসন্নের পাঠানো তালিকা মিলিয়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন পার্থ।
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এই নিয়ে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি জামিন পেলেন। এর আগে মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ও ওএমআর শিট পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থা নাইসার কর্তা নীলাদ্রি দাস জামিন পেয়েছেন।