সৌদি আরব ভ্রমণে গিয়ে বিপাকে পড়লেন মেসি (Lionel Messi)। প্যারিস সেইন্ট জার্মান (PSG) ক্লাব কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড (Suspended) করল তাঁকে। খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁকে সৌদি আরব যাওয়ার অনুমতি দেননি, তা সত্বেও সেখানে গিয়েছেন তিনি। তাই জন্যই শাস্তি ভোগ করতে হল মেসিকে। আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য মেসিকে মাঠের বাইরেই থাকতে হবে। এই শাস্তির জেরে মেসি বাদ যেতে পারেন আসন্ন দুটি ম্যাচ থেকে। এমনকি এই দুই সপ্তাহে মেসি ক্লাবের মাঠে খেলতে পারবেন না, ট্রেনিং দিতেও পারবেন না।
জানা গিয়েছে, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ানকে শাস্তির এই দুই সপ্তাহে ক্লাবের তরফ থেকে পারিশ্রমিকও দেওয়া হবে না। চলতি বছরের জুন মাসে পিএসজি অর্থাৎ প্যারিস সেইন্ট জার্মানদের সঙ্গে মেসির চুক্তি শেষ হচ্ছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ মেসির সঙ্গে আবারও নতুন করে চুক্তি করার কথা ভাবছিল, এরই মধ্যে ক্লাবের নির্দেশকে অমান্য করে সৌদি গেলেন মেসি। এই ঘটনাকে ইঙ্গিতবহ মনে করছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, মেসি বোধহ্য় নিজেই পিএসজিতে আর থাকতে চাইছেন না।
এর আগে গুঞ্জন উঠেছিল মেসি বার্সেলোনায় ফিরে যেতে পারেন। এমনকি বার্সেলোনার প্রাক্তন সতীর্থদের সঙ্গে ডিনারে গিয়েছিলেন তিনি। সেই নিয়েও কম চর্চা হয়নি। সম্প্রতি মেসি সৌদি গিয়েছিলেন সেখানকার পর্যটনের হয়ে প্রচার করতে। নেটিজেনদের প্রশ্ন, 'মেসি কী শুধুই এই কারণে আরবে গেলেন?' অনেকে মনে করছেন, মেসি সৌদি আরবের ক্লাব 'আল হিলাল'-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন। তাই বর্তমান ক্লাবকে অমান্য করেই তাঁর এই যাত্রা।
নয়া পালক কিং খানের (King Khan) মুকুটে। টাইম পত্রিকার (Time Magazine) বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছেন অভিনেতা শাহরুখ খান। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এসআরকে (Shah Rukh Khan) ভক্তদের মনে খুশির জোয়ার। শুধু তিনি শীর্ষস্থানেই নেই, ছাপিয়ে গিয়েছেন লিওনেল মেসি, ইলন মাস্ক, মার্ক জুকারবার্গের মতো তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বদের।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি কে, তা জানতে এক সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষায় মোট ১২ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন এতে। এরপর মোট ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সেরার সেরা হয়েছেন এসআরকে। অর্থাৎ মোট ৫০ হাজার মানুষের ভোট পেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়েছেন।
প্রথম স্থানে শাহরুখ থাকলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে একজন করে নেই। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইরানের নারীরা ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিশ্বের সকল স্বাস্থ্যকর্মীরা। ইরানের নারীরা যেভাবে সেদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে আসছেন, তার জন্য তাঁরা দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর যেভাবে কোভিড মহামারীর সময় সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের সেবা করে গিয়েছেন তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল। পঞ্চম স্থানে লিওনেল মেসি।
২০২২ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি ক্লাব ফুটবলে নিজের ৭০০তম গোলটি করে ফেললেন রবিবার রাতে। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের ম্যাচে মার্সেইলের বিপক্ষে পিএসজি জয় পায় ৩-০ গোলে। প্রথম গোলটি করেন ফরাসি তারকা এমবাপে। ২৯ মিনিটে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন প্রাক্তন বার্সা তারকা মেসি। দলের পক্ষে শেষ গোলটি আসে সেই এমবাপের পা থেকেই। গত ডিসেম্বরে বার্সেলোনা থেকে পিএসজি-তে আসার পর এটা তাঁর নতুন ক্লাব জার্সিতে ২৮ তম গোল। ১৩ বছর বয়সে কাতালান ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন মেসি।
সেই জার্সিতে ৭৭৮টি ম্যাচ খেলে ৬৭২টি গোল করেছিলেন এলএম-১০। ৭টি ব্যালন-ডি-ওর পাওয়ার রেকর্ডও তাঁরই দখলে। পাশাপশি বার্সেলোনার হয়ে ৩৫টি প্রতিযোগিতামূলক ট্রফি জিতেছিলেন মেসি। ফিফার সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও তাঁরই পকেটে আসছে বলেও ফুটবল বিশ্বে খবর। দেশের হয়ে ৯৮টি গোল করে রেকর্ডের সামনে দাড়িয়ে রয়েছেন লিও। ১০০টি গোল করলেই তিনি হবেন তৃতীয় আর্জেন্টাইন, যিনি ১০০টি গোলের মালিক হবেন। স্বভাবতই মেসি প্রেমীরা উচ্ছসিত এই সাফল্যে।
লিওনেল মেসি (Lionel Messi), পেলে (Pele), মারাদোনার (Diego Maradona) পর সর্বকালের শ্রেষ্ঠদের মধ্যে পড়েন। হয়তো বিতর্ক হতে পারে, হয়তো আরও অনেক নাম উঠে আসবে। কেউ বলবেন তাহলে রুড গুলিতের নাম বা জিদান বাদ কীসে? কেন আসবে না রোনাল্ডো অর্থাৎ সিআর ৭-এর নাম। আরও এই গোত্রীয় অনেক অনেক নাম আছে নিশ্চই যাঁরা বিশ্ব ফুটবলকে (Football World Cup) সমৃদ্ধ করেছেন। তর্ক থাকুক। কিন্তু একটি বিষয় জানতে হবে, এই তিন কিংবদন্তি একাই একটি দল অর্থাৎ একাই দলকে টেনে নিয়ে ফাইনালে যেতে পারেন।
পেলের খেলা আজকের অনেকেই দেখেননি হয়তো। ওই সময়ে খেলার গতি আজকের মতো দ্রুতগামী ছিল না কাজেই পেলে গোলমুখে যেতে অসংখ্য ড্রিবল ডজ করে গোল করতেন। পেলের মতো দৃষ্টিনন্দন গোল খুব কম দেখা গিয়েছে। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিন বলেছিলেন যে, পেলে কোন দিক থেকে গোল করে দেবে বোঝাই যায় না। এই পেলে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের খেলোয়াড়।
মারাদোনা এই তিন জনের মধ্যে সব থেকে প্রতিভাবান। তিনি টিপিকাল স্ট্রাইকার ছিলেন না বরং এটাকিং মিডফিল্ডার ছিলেন। অসংখ্য গোল করেছেন বহু খেলোয়াড়কে কাটিয়ে এবং করিয়েছেন। মারাদোনা একাই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন বিশ্বকাপে তা বলে ফেলা যায়।
উল্লেখিত, দুই খেলোয়াড় আজ আর নেই, কিন্তু ফুটবল আলোচনায় নিয়মিত আছেন। মেসি এঁদের তালিকার অন্যতম। অসম্ভব পায়ের কাজ। যখন যে কোনও দিক থেকে আক্রমণে যেতে পারেন। ঠিকানা লেখা পাস ইত্যাদি তো আছেই সঙ্গে এ বছর দেখা গেলো অসম্ভব মনের জোর নিয়ে তিনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করলেন। এবারে কাতার বিশ্বকাপের শুরুতেই জানিয়েছিলেন এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাঁর দেশ তথা দলের কোচ লিও স্কালোনির ইচ্ছা তিনি পরের বিশ্বকাপটিও খেলুন।
মনে রাখতে হবে ফুটবলে ৩৫/৩৬ বছর হয়ে যাওয়া মানে এবার খেলা ছাড়ো। মেসির বয়স এখন ৩৫, ৪ বছর পর ৩৯। অসম্ভব এই খেলা ধরে রাখা। ১৯৯৪ এ মারাদোনা এক প্রকার জোর করেই বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, কিন্তু তাতে তাঁর বদনামই হয়েছিল। মেসি বুদ্ধিমান, অনেক বেশি পেশাদার এবং নিজের বিষয়টি বোঝেন ভালো। কাজেই কোচ যাই বলুন মেসিকে আর বিশ্বকাপে হয়তো দেখা যাবে না।
প্রসূন গুপ্ত: একটাই স্বপ্ন ছিল আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসির, কোনও একদিন বিশ্বকাপটি তাঁর হাতে ওঠে। স্বাভাবিক, বিশ্বসেরা তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে সদ্য প্রয়াত পেলেকে বলা হয় সম্রাট, মারাদোনাকে রাজপুত্র এবং মেসিকে সুলতান বা রাজা। সমকালীন অনেক খেলোয়াড়ই এই তিন কিংবদন্তির সময়ে ছিলেন। কিন্তু এঁরা বিখ্যাত হয়েছেন একক শক্তিতে বা পায়ের জাদুতে দর্শকের ভোটেই। পেলে একমাত্র ফুটবলার, যিনি তিন-তিনবার বিশ্বকাপ পেয়েছেন। মারাদোনা ১৯৮৬-তে এবং অবশেষে মেসি খেলোয়াড় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। ২০০৬ থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেললেও এতদিন লাগলো কেন মেসির, উঠছে এমন প্রশ্ন। আসলে আর্জেন্টিনার গাঁট জার্মানি দল। ৮৬-র ফাইনাল বাদ দিলে এই জার্মানি কতবার যে আর্জেন্টিনার মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে তা নিয়ে রেকর্ড বই ঘাঁটার দরকার নেই। দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন ৯০-এ মারাদোনা, ২০১৪-তে মেসি।
১৯৮৬-র বিশ্বকাপ ফাইনালে নিয়মিত পায়ের জাদু দেখানো মারাদোনাকে বোতলবন্দি করে রেখেছিলো তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু তাঁকে লক্ষ্য রাখতে গিয়ে বাকিদের ঢিলে পরে যাওয়াতে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জিতেছিল। পরে ৯০-তেও ফাইনালে মারাদোনাকে আটকে দিয়েছিলো এই জার্মানিই। মেসির ২০০৬-০এ তেমন নাম ধাম ছিল না, কিন্তু উঠতি খেলোয়াড় ছিলেন তো বটেই। ২০১০-এ মেসির আর্জেন্টিনাকে জার্মানি কোয়ার্টার ফাইনালে ৪ গোল দিয়ে বিদায় করেছিল। ২০১৪-র ফাইনালে মেসিকে বল নিয়ে ড্রিবলিং বা পাসিং করতেই দেয়নি জার্মান ডিফেন্স। ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটের মাথায় গোৎজের গোলে আর্জেন্টিনা ১ গোলে হারে।
এবারে মেসি বলেই দিয়েছিলেন, এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। কাজেই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মতোই জানপ্রাণ লড়িয়ে সারা টুর্নামেন্ট খেললেন নেতার মতোই। অবশেষে ঐতিহাসিক ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বৈরথে টাই-ব্রেকে জয় পায়ে মেসি বাহিনী। ট্রফিতে পেলেনই সঙ্গে বিশ্বকাপ ইতিহাসে নামটিও তুলে ফেললেন। সেই রাতে ঘুমের সময়ে নাকি মেসি বিশ্বকাপটি সঙ্গে নিয়ে শুয়েছিলেন।
তাঁর ফেসবুকে সে ছবিই পোস্ট করেছিলেন। এরপর তাঁর ক্লাব ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বর্তমানে দেশে এবং এই সময়ে আর্জেন্টিনায় গ্রীষ্মকাল। সারা বছর শীতের দেশে থাকা মেসি গরমকাল উপভোগ করছেন স্ত্রী এবং ৩ পুত্রের সঙ্গে। এই ছবিও পোস্ট করেন মেসি দ্য গ্রেট।
মেসির হাতে বিশ্বকাপ (World Cup 2022)। কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ের টাইমলাইনে চিরিকালীন হয়ে থাকবে নীল-সাদার বিশ্বকাপ জয়ের ছবি। আন্দাজ করাই গিয়েছিল বড়দিনের উৎসব এবার বেশ জমিয়ে হবে বুয়েনস এয়ার্সে। রোজারিওর মেসির (Lionel Messi) প্রাসাদে বড়দিনের (Christmas Day) আনন্দ উপভোগ করতে সপরিবারে ছুটে এসেছিলেন লুই সুয়ারেজ (Luis Suarez)। রোজারিওর রাজকুমারের পারিবারিক ছবিও ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। ক্রিসমাস পোশাকে বড়দিন উপভোগ করছেন লিও। রয়েছেন তাঁর স্ত্রী আর তিন সন্তান।
মেসি সম্পর্কে বিশ্ব ফুটবলে চেনা তত্ত্ব, যত বড় ফুটবলার, তত বড় মানুষ। বিনয়ী, আদ্যন্ত ফ্যামিলি ম্যান। ছোটবেলার বান্ধবী আন্তনেলা রাকুজ্জকে পরবর্তীকালে বিয়ে করেছেন। ২০০৯ সালে প্রথম তাঁদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসে। লা লিগায় বার্সা-এসপানিওল ডার্বির পরে নিজেই ঘোষণা করেছিলেন ফুটবল রাজপুত্র। মেসি আর অন্তনেলার তিন সন্তান। থিয়াগো, মাতিও আর সিরো।
সুখের সংসারের ছবি কাতার বিশ্বকাপে দেখেছেন ভক্তেরা। শুধু তাই নয়। মায়ের ছবি নিজের হাতে ট্যাটু করে রেখেছেন মেসি। নিজের বন্ধু বৃত্ত সম্পর্কেও অত্যন্ত সচেতন লিও। উরুগুয়ের মেগাস্টার সুয়ারেজ অন্তরঙ্গ বন্ধু। সুয়ারেজের স্ত্রী সোফিয়া বালবি আবার মেসির স্ত্রীর ব্যবসার অংশীদার।। সেখানেও অটুট বন্ধুত্ব। সবমিলিয়ে মেসির পারিবারিক জীবনের গল্প কম আকর্ষণীয় নয়। বড়দিনে বেঁচে থাকুক পরিবারের গল্প। ঘরে ঘরে পূর্ণতা পাক ভালোবাসা।
রোজারিওর নতুন অতিথি কে জানেন? বড়দিনের আগে নতুন অতিথিকে নিয়ে সরগরম রোজারিও (Rosario)। আর্জেন্টিনায় লিও মেসির (Lionel Messi) জন্ম ওই রোজারিওর পাড়ায়। বিশ্বকাপ (World Cup 2022) জেতার পর দেশে ফিরেছে আর্জেন্টিনা দল। ডি মারিয়া, মার্টিনেজ, আকুনাদের স্বাগত জানাতে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ উপস্থিত ছিলেন বুয়েনস এয়ার্স রাজপথে। ভিড়ের চাপে কপ্টারে করে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয় ফুটবলারদের।
রোজারিওর কেন্টাকি কান্ট্রি ক্লাবে রয়েছেন মেসি ও পরিবার। বড়দিনে উৎসবের আগেই পরিবার সহ পৌঁছে গিয়েছেন লুই সুয়ারেজ। উরুগুয়ে ফুটবলার একটা সময় বার্সায় খেলতেন। মেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুই পরিবার একসঙ্গে বড়দিন উদযাপন করবে। সবমিলিয়ে সেলিব্রেশন মোডে ঢুকে পড়েছে মেসির আঁতুরঘর।
পাশাপাশি এবার টেনিস তারকা নোভাক জকোভিচের শুভেচ্ছাও পেলেন আর্জেন্টাইন ফুটবলের জাদুকর। সার্বিয়ান টেনিস তারকা ফাইনাল দেখেছেন। বিনয়ী মেসি জুনিয়রদের রোল মডেল। তাই মেসি কাপ জেতায় খুশি জোকার। নিজে সৌজন্য দেখিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লিও কে।
সাড়ে তিন দশকের প্রতীক্ষার অবসান। ফ্রান্সকে টাই ব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দিনের শেষে এই ট্রফি হয়তো বা মারাদোনাকে উৎসর্গ করবেন মেসিরা। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসের পাতায় এখন পেলে, মারাদোনা, জিদান, রোনাল্ডোর সঙ্গেই মেসির নাম ঢুকে গেল। ২০১৪-তে তীরে এসে তরী ডুবেছিল, কিন্তু 2022 মানেই ভামোস ভামোস আর্জেন্টিনা।
লুসেইল স্টেডিয়ামে নাটকীয়, রোমহর্ষক ফাইনালে ১২০ মিনিট পর্যন্ত খেলার ফল ৩-৩। পেনাল্টিতে দুটি গোলের পাশাপাশি ফ্রান্সের তৃতীয় গোলও এমবাপের ঝুলিতে। ১৯৬৬-র পর এই প্রথম কোন ফুটবলার ফাইনালে হ্যাট্রিক করলেন। ব্যস ওইটুকুই, কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রথম ৮০ মিনিট দেশর ছেলেদের সঙ্গে দাপট রেখেই খেলেছে আর্জেন্টিনা। প্রথম ৭৫ মিনিট মাঠেই খুঁজে পাওয়া যায়নি এমবাপে, গ্রিজম্যানদের আক্রমণ।
প্রথম অর্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় স্কালোনির দল। ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত ফ্রান্সের ঝুলিতে না ছিল কর্নার, না অফসাইড। বল পজেশন থেকে শুরু করে গোলমুখী শট এগিয়ে সেই নীল-সাদাই। আর্জেন্টিনার ৩ গোলের পিছনে অবদান মেসি ২ আর ডি মারিয়া ১। মেসির করা দুটি গোলের মধ্যে একটি আবার পেনাল্টি থেকে। কিন্তু ৮০ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়াকে স্কালোনি তুলে নিতেই আক্রমণের ধার ভারে এমবাপের।
প্রথম ৯০ মিনিট শেষ হয় ২-২ গোলে। অতিরিক্ত সময় শেষ হয় ৩-৩ গোলে। অবশেষে ম্যাচের ভাগ্য লিখতে হয় পেনাল্টি শুটআউটে। কোয়ার্টার ফাইনালের মতো এই ম্যাচেও নায়ক আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ই মার্টিনেজ। ফ্রান্সের দ্বিতীয় শট আটকে দিয়ে চাপে ফেলে দেন এমবাপেদের। এরপর শুধু সময়ের অপেক্ষা, কারণ ফুটবল দেবতা বিশ্ব ফুটবলের এল এম -১০-কে নিরাশ করেনি।
কাতার বিশ্বকাপ এই নামে খ্যাত হল আমি 'মেসিরই বিশ্বকাপ।' ঠিক যেভাবে ৯৪ রোমারিও, ৯৮ জিদান, ৮৬ মারাদোনা আর ২০২২ মানে লিওনেল মেসি। ৭৮,৮৬,২০২২ বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক এখন মারাদোনার দেশে।
মুন্নি চৌধুরীঃ বিশ্বকাপ ফাইনালের কাউন্টডাউন শুরু। আজ, রবিবার রাতে লুসেইল স্টেডিয়ামে হবে চলতি বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) মেগা ফাইনাল ম্যাচ। মেসি (Lionel Messi) না এমবাপে (Kylian Mbappe)? কাপ উঠবে কার হাতে? বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে নানা ফ্যাক্টর নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর্জেন্টিনা শিবিরে যেমন হঠাৎ উদয় হয়েছেন সেরগিও আগুয়েরো (Sergio Leonel Agüero)। সম্পর্কে দিয়েগো মারাদোনার জামাই। নীল-সাদা জার্সিতে খেলতে খেলতেই হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়ে তাঁর। খেলা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। আগুয়েরো ছিলেন লিও মেসির রুম পার্টনার। টিমের সঙ্গে খেলতে গেলে মেসির রুম পার্টনার হতেন তিনি। আগুয়েরো খেলা ছাড়ার পর নতুন কোনও ফুটবলার মেসির রুম পার্টনার হননি।
২০১০, ২০১৪ আর ২০১৮। তিনটে বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি। মেসির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে সেরগিও-র। ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা শিবির উড়িয়ে নিয়ে এসেছে আগুয়েরোকো। আর্জেন্টিনা অনুশীলনে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শুধু তাই নয়। মেসির সঙ্গে রুম ভাগ করে থাকবেন তিনি। সেই নিয়ম আদায় করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন। লিও মেসিকে তাজা রাখতে, মন ফুরফুরে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি নেই। মারাদোনার জামাই কি গুড লাক নিয়ে আসতে পারবেন?
কাতার বিশ্বকাপ শিক্ষাবিদ এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সত্যম রায়চৌধুরীর চোখে
যাবো যাবো করেও এবার বিশ্বকাপে যাওয়া হল না। এর আগে অনেকগুলো বিশ্বকাপের খেলা মাঠে বসে দেখেছি কিন্তু কাতার থেকে পুত্রের কাতর আবেদন ছিল যে, এই অসাধারণ ফুটবল দেখতে অন্তত একবার এসো। আসলে বর্ষশেষে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ইনস্টিটিউটগুলিতে সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে, ম্যানেজমেন্টের পরীক্ষাও আছে। এই সময় যাই কী করে? যাই হোক আমার যাওয়া না যাওয়াতে বিশ্ব ফুটবল থেমে থাকবে না। দারুন আকর্ষণীয় ভাবে প্রায় একমাসব্যাপী চলছে বিশ্ব ফুটবলের আসর। আমাদের পরিবারে সকলেই আর্জেন্টিনার ভক্ত। চাই যে, কাপটা এবার অন্তত মেসির হাতে উঠুক। পেলে, মারাদোনার পর সুপারস্টার তো মেসিই। আগের দুজনের হাতে বিশ্বকাপ এসেছিলো কিন্তু মেসি বিশ্বকাপে খেলছেন ২০০৬ থেকে, এখনও কাপ অধরা।
বললাম বটে কিন্তু কাজটা কি এতো সোজা হবে? ফ্রান্স ইউরোপের সেরা দল। প্রতিটি পজিশনে দুর্দান্ত খেলোয়াড়রা দাপটের সঙ্গে খেলছেন। এর উপর জিরুড, এমবাপে, গ্রিজম্যান ত্রয়ীর মুহুর্মুহ আক্রমণ কতটা সামাল দিতে পারবে আর্জেন্টিনা? এই নিয়েও হাজারো প্রশ্ন রয়েছে। আমি রাশিয়া বিশ্বকাপে এমবাপের খেলা দেখেছি। উনি তখন ডিফেন্সে নেমে বল তৈরি করে দৌড়তেন। এবার প্রথম থেকেই তাঁকে বামমুখী আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে মেসি ডান দিক থেকে আক্রমণ শানান। অর্থাৎ দুই খেলোয়াড়ই এক প্রান্তিক। ফলে কে কাকে কতটা মার্কিং করে সেটাই দেখার। এটা সত্যি বড় খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেওয়া হয় না। কিন্তু পাশাপাশি অন্য খেলোয়াড়রা সেই সুযোগটা নেন।
এদিকে গ্রিজম্যান যেমন ভয়ঙ্কর পাস দেন তেমন আর্জেন্টিনাতেও আলভারেজ, ডি'মারিয়া আছেন আক্রমণে। আর্জেন্টিনার এবারে বেশ ভালো ডিফেন্স। দুই দলের দুই গোলরক্ষক মার্টিনেজ ও লরিস অসাধারণ, ফলে গোল করাটাও কঠিন। আমার মন বলছে কয়েকটা গোল দু দিক থেকেই হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকে গেলে ভালো খেলার মজাটাই চলে যাবে। টাই ব্রেক অন্তত ফাইনাল চলে না।
আমাদের খুশি করতে পারেনি ১৯৯৪-এ ওভাবে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন হতে কিংবা লাল কার্ড দেখে জিদান বেরিয়ে যাওয়ার পর ইতালিকে জিততে। খেলা হোক আনন্দের, নব্বই মিনিটেই চূড়ান্ত হয়ে যাক কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নের নাম। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই জোর গুঞ্জন এবার হয়তো শেষ বিশ্বকাপ মেসি, রোনাল্ডো, মড্রিচের। এই নামগুলোর মধ্যে শেষ দু'জন বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ সিআর-৭ আর লুকা মড্রিচের কাতার বিশ্বকাপ জয় অধরা। তবে মঙ্গলবার রাতে স্বপ্নের খেলা খেলে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে লিয়োনেল মেসি জানিয়ে দিলেন, বিশ্বকাপে এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। পরের বিশ্বকাপে তিনি আর খেলবেন না। সেমিফাইনালে ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে দুরমুশ করে ফাইনালে আর্জেন্টিনা। ১৮ ডিসেম্বর লুসেইল স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ কে? ঠিক হবে বুধবার রাতে ফ্রান্স বনাম মরোক্কোর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে। কিন্তু প্রথমস সেমিফাইনালে ক্রোটদেওর বিরুদ্ধে একটি গোল করেন মেসি। আর আল্ভারেজ গোলের জন্য পাস বাড়িয়েছেন একটি।
মেসির বয়স ৩৫ বছর। পরের বিশ্বকাপ চার বছর পর অর্থাৎ ৩৯ বছর বয়সে পরের বিশ্বকাপ খেলতে হবে মেসিকে। যদিও ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে পেপে ৪০ বছর বয়সে কাতার বিশ্বকাপ খেলতে পারলে মেসি নয় কেন? যদিও আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালনি বলেছিলেন, মেসি পরের বিশ্বকাপ খেলবেন। কিন্তু মেসি নিজে জানালেন, এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। মেসিদেরকে কড়া মার্কিংয়ে রাখেন বিপক্ষের ফুটবলাররা। যে পরিমাণ চাপ মেসিদের নিতে হয়, যত বয়স বাড়ে সেই ট্যাকেল নেওয়ার ক্ষমতা কমে। এই বিশ্বকাপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে নিষ্প্রভ দেখিয়েছে, পরের বিশ্বকাপে হয়তো মেসিকেও তেমন দেখাবে। সেটা হতে না দিয়ে এই বিশ্বকাপেই শেষ করতে চাইছেন তিনি। এমনটাই মত অনেক ফুটবল লিখিয়ের।
এদিকে, ১৯৮৬-র পর বিশ্বকাপ জেতেনি আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ তাদের কাছে। ২০১৪-তে আশা জাগিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটের মাথায় জার্মানির গোটজের গোলে কাপ হাতছাড়া হয়ে আর্জেন্টিনার। এদিকে, আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেসি গোলদাতার তালিকায় এখন মেসি। মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁর আগে ছিল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। কিন্তু ১১ গোল করে বাতি গোলকেও ছাপিয়ে যান মেসি। এখন ১৮ ডিসেম্বর লুসেইল স্টেডিয়ামে সব চোখ থাকবে বিশ্ব ফুটবলের এলএম-১০-র দিকে।
কাতার বিশ্বকাপ সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের চোখে। খেলা দেখে কী লিখছেন তিনি
আহ কি খেলাটাই দেখলাম মঙ্গলবার রাতে! খেলা শুরু হয়েছিল আমাদের ঘড়ির রাত ১২.৩০-এ, শেষ হলো ঠিক ২.২০-তে। তারপর বাকি রাতটা আর ঘুম এলো না। স্বাভাবিক এরকম একটা স্বপ্নের ফুটবল ম্যাচ তাও সেমিফাইনাল এবং সঙ্গে মেসি সঙ্গে ৩টে অসাধারণ গোল ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে গেলো। ফুটবল প্রেমীর চরিত্রের উপর প্রশাসনের আবরণ পরে এবার সকালে প্রশাসনিক কাজে বেরোতে হবে যে। হাওড়ার বাসিন্দা কাজেই ফুটবল আমাদের রন্ধ্রে-অণুতে। আমি কিন্তু খাঁটি ভারতীয় তারপর মোহনবাগানী কাজেই বিশ্ব ফুটবলে কোনও সুনির্দিষ্ট দলের সমর্থক নই। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল ভালো লাগে এবং অবশ্যই লাতিন আমেরিকার ফুটবলের স্কিল। আমার ভালো লাগার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ২০০২-এর পর। ওই শেষ বারের মতো ব্রাজিলের পায়ের কাজ দেখেছিলাম রোনাল্ডো,রবার্তো কার্লোসদের। তারপর একেবারেই ইউরোপিয়ান ঘরানার প্রেসিং ও পাসিং ফুটবল।
মঙ্গলবার রাতে ফের শিল্প ফায়ার এলো মেসি বাহিনীর হাত ধরে। ৩টি গোল, কোনটাকে কার আগে রাখবো এখনও বুঝতে পারছি না। সকলেই ধরে নিয়েছিল ব্রাজিলকে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া কাজেই আর্জেন্টিনা আর কী করতে পারে। এছাড়া লাতিন আমেরিকার দলের চরিত্রই হচ্ছে ডিফেন্স আলগা রেখে আক্রমণে যাও। কিন্তু ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ব্রাজিলের মতো আক্রমণে প্রথমে যায়নি আর্জেন্টিনা। আল্ট্রা ডিফেন্স রেখে খেলা শুরু করেছিল অর্থাৎ ক্রোটদের আক্রমণ করতে দাও পরে আলগা বল ধরে প্রতি-আক্রমণ। ডিফেন্স এবারে যথেষ্ট ভালো আর্জেন্টিনার। গোলে মার্টিনেজ, উইথড্রল স্টপার মাক্যালিস্টার একটু নিচ থেকে রড্রিগো দি'পল।
শুরুতে ডিফেন্সের পথে না গিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ গেলো মড্রিচের দল। কিন্তু কিছুতেই বক্সের ভিতরে যেতে পারলো না। ৩০ মিনিট এভাবেই চলার পর হঠাৎ চলতি বল নিয়ে যাওয়ার পথে বক্সে ক্রোট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ, আলভারেজকে ফাউল করে বসে, পেনাল্টি ১০০% | মেসি এসে বাঁ পায়ে গোলকিপারের বাঁদিকের কোন দিয়ে গোল করে এগিয়ে দেন দেশকে। এরপর ৫ মিনিটের মধ্যে ৮৬-র মারাদোনাকে মনে করিয়ে দিলো জুলিয়ান আলভারেজ। নিজেদের অর্ধ থেকে একই বল নিয়ে বুলডোজারের মতো ক্রোটদের পাশে রেখে একার কৃতিত্বে বুটের টো দিয়ে জালে বল জড়ান। আগামীতে মেসি চলে যাওয়ার পর নতুন সুপারস্টার পেয়ে গেলো আলভারেজকে। এরপর আরও একটি গোল হতে পারতো। দুটি গোল খেয়ে মদ্রিচ, পেরিসিচ, কোভাচিচরা খেলা থেকেই যেন বেরিয়ে গেলো। এমনিতেও এই বিশ্বকাপ এদের অনেকের শেষ বিশ্বকাপ।
ব্রাজিলের সঙ্গে খেলে এনার্জিটা ছেড়ে এসেছিলো কি? তৃতীয় গোল সেই ৮৬-র মারাদোনাকে মনে করিয়ে দিলেন মেসি। ডান দিক থেকে গতি বাড়িয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার জাস্কো গার্ডিওলকে ঘাড়ের কাছে রেখেই একের পর এক ইনসাইড আউটসাইড ডজ এবং লম্বা স্প্রিন্ট। একটা সময় গার্ডিওলকে ডজ করে পিছনে ফেলে বারের এক প্রান্তে গিয়ে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ালেন আলভারেজকে। গোলমুখ খুঁজতে ভুল করেননি বছর বাইশের আলভারেজ। তিনি ঠিকানা লেখা পাস জালে জড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন বোঝালেন এবার আমি এসে গিয়েছি।
সেরা খেলা দেখলাম মঙ্গলবার মধ্যরাতে। তুলনাহীন, এবারে কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে যতটুকু ফারাক রইলো রবিবাসরীয়তে। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
সেমি ফাইনালে (Semi Final) সম্ভবত বিপক্ষের জোনাল বা ম্যান মার্কিংয়ে পড়বেন না লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) সেমিফাইনালের দিন দুই আগে এই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন ক্রোয়েশিয়ার (Argentina-Croatia) ফুটবলার ব্রুনো পেটকোভিচ। চলতি বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগের ম্যাচ থেকেই দেখা গিয়েছে, আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সিধারী খেলতে নামলেই, তাঁর গায়ে সেঁটে থাকে বিপক্ষ দলের ফুটবলার। তিনি বল ধরে দৌড়লে পিছনে বিপক্ষ দলের অন্তত তিন জন থাকেন। আর্জেন্টিনার আক্রমণের স্তম্ভ লিওনেল মেসিকে আটকানোই এযাবৎকাল বিপক্ষ কোচের কৌশল হয়ে এসেছে। কিন্তু সেই কৌশল ভেদ করেই এখনও পর্যন্ত সফল বিশ্ব ফুটবলের এলএম-১০। এবার চলতি বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফর্মে থাকা মেসিকেই কিনা আটকানোর পরিকল্পনা নেই ক্রোটদের?
এই প্রশ্নের জবাবে ব্রুনো জানান, 'আমরা মনে করি মেসিকে শুধু আটকালে হবে না। গোটা দলকে আটকাতে হবে। আমরা মেসিকে আটকানোর কোনও পরিকল্পনা এখনও করিনি। সাধারণত আমাদের ডিফেন্সের কৌশলের কোনও এক বিশেষ ফুটবলারকে আটকানোর চেষ্টা থাকে না। আমরা গোটা দলকে আটকানোর পরিকল্পনা করি।'
ব্রুনোর আশঙ্কা শুধু মেসিকে আটকালে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই টিম আর্জেন্টিনার আক্রমণের অন্য স্তম্ভদের আটকাতে চায় ক্রোয়েশিয়া। খানিকটা সেই ইঙ্গিত দেন ব্রুনো।
কুয়েত ফুটবলার (Kuwait Footballer) বদর আল মুতাওয়া-কে চেনেন? মেসি, রোনাল্ডো (Messi-Ronaldo), নেইমারদের তারকা দুনিয়ার বাসিন্দা নয়। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের (International Football) এক অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন বদর। দেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ ১৯৬টি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছিল তাঁর দখলে। বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) থেকে বিদায়ের রাতে সেই সাম্রাজ্যে ভাগ বসিয়ে গেলেন আরেক কিংবদন্তী। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন কার কথা বলা হচ্ছে।
ক্রিশ্চিয়ানা রোনাল্ডো, দেশের জার্সিতে তাঁরও তো ১৯৬ ম্যাচ খেলা হয়ে গেল। বদর আল মুতাওয়ার (Badr Al Mutawa) প্রায় হারিয়ে যাওয়া নামটা তোরঙ্গ থেকে এরাবিয়ানে বেরিয়ে এল। আরব্য রজনীর দেশে রূপকথার জন্ম দিয়েছে মরক্কো। কিন্তু এমন রাতেও রোনাল্ডোময় কাতার বিশ্বকাপ। বয়স ৩৭, ধরেই নেওয়া হচ্ছে পরের বিশ্বকাপে তিনি নেই। মানে বিশ্বকাপে শেষবার খেলে ফেলেছেন দেশের জার্সিতে। কিন্তু বিদায় বেলাতেও এত করুণ আবহ জন্ম নেবে সেটা নিজেও ভেবেছিলেন কি?
কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের সঙ্গে মন কষাকষি। সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচের মতো কোয়ার্টার ফাইনালের তিনি প্রথম এগারোয় নেই। দলের রাশ হাতে রাখতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়েছিল কোচকে। ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়। শৃঙ্খলার চেনা তত্ত্ব প্রয়োগ করেছিলেন কোচ। মরক্কোর কাছে প্রথমার্ধে দল পিছিয়ে, নামলেন রোনাল্ডো। কিন্তু কামব্যাক হলো না। গোল পেলেন না। গোল করার মতো বল কি পেলেন?
রোনাল্ডো জোন থেকে ফ্রি কিক নিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। পর্তুগিজ মহাতারকা এখানেও ব্যর্থ। শেষ বাঁশি বাজার পরেই মরক্কোর উদ্দাম উৎসব শুরু। রোনাল্ডো ফিরে চললেন টানেলে। চোখের জল বাঁধ মানলো না। তামাম ফুটবল দুনিয়ায় ভাইরাল হল কান্নার ছবি। পায়ে পায়ে ড্রেসিংরুমের পথে সিআর-সেভেন।
দেশের হয়ে ২২ বছরের কেরিয়ারে কি দাঁড়ি পড়বে? আশঙ্কা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে পর্তুগালের সাজঘরে। পাঁচটা বিশ্বকাপে ৮ গোলের মালিক কি বুটজোড়া তুলে রাখবেন? ইউসেবিওর পর পর্তুগাল ফুটবলের সেরা পোস্টার বয় কী করবেন?
২০২২ আমাদের নতুন আঙ্গিকের খেলা যেমন দিয়েছে, তেমনই কেড়ে নেবে অনেক কৃতি খেলোয়াড়ের খেলার অধ্যায়। শুরু যেমন আছে তেমন শেষও আছে। পেলে, মারাদোনা থেকে বহু সেরা খেলোয়াড় এক সময়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন। সকলেই মনে করেছিলেন যে এঁরা খেলা ছাড়লে আর কাকে দেখবো। কিন্তু নতুন প্রজন্ম এসেছে, নতুন খেলা, নতুন স্ট্রাটেজির স্কিল তাঁরা উপহার দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। ব্রাজিল এ বিষয়ে কিংবদন্তি তা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। পেলে, গারিঞ্চা থেকে রোনাল্ডো রোমারি্ রোনাল্ডিনহো বহু খেলোয়াড় এসেছে ব্রাজিল থেকে, যাঁরা আজ প্রাক্তনী। কিন্তু এঁদের পায়ের কাজ আজকের যুবা মহলেও উত্তেজনার বিষয়।
অন্য দেশ থেকেও বহু খেলোয়াড় এসেছেন, খেলেছেন এবং আলোচনায় তাঁরা আজও সম্পদ ফুটবলের। এবারের বিশ্বকাপের পর আর যাঁদের দেখা যাবে না তাঁদের অন্যতম মেসি। আর্জেন্টিনায় মারাদোনার পর যাঁকে নিয়েও দেশের গর্ব। মেসি আর্জেন্টিনিয়ান হলেও আদতে স্প্যানিশ। পূর্ব পুরুষরা যখন স্পেন আবিষ্কার করে তার পরেই এ দেশে আগমন বলে শোনা যায়। মেসির চেহারা ও গাত্রবর্ণও ইউরোপিয়ানদের মতো। তিনি স্পেনে থাকতেই ভালোবাসেন।
যাই হোক এরপর তিনি আর বিশ্বকাপ খেলবেন না বলে খবর। এরপর আর এক বিশ্বমানের খেলোয়াড় পর্তুগালের রোনাল্ডো। বয়স হয়েছে, এটাই শোনা যাচ্ছে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। পর্তুগাল বহু খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে ইউসেবিও থেকে রোনাল্ডো ইত্যাদি। জানা যাচ্ছে, সিআর ৭ যেমন বিদায় নেবে তেমন বিদায়ের পথে তাঁর অনেক দিনের সাথী পেপে। বিদায় নিয়েছেন জার্মানির মুলার হয়তো বিশ্বসেরা গোলরক্ষক নয়ারও। বিদায়ের পথে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার গ্রিজম্যান। এঁরা কিন্তু বিশ্বকাপ হাতে নিয়েছেন। বিদায় নিতে প্রস্তুত ক্রোয়েশিয়ার অন্তত ৩ /৫ জন।
এবারে প্রশ্ন এদের জায়গায় কারা? কেন? এবারে মাঠ কাঁপাবেন এমব্যাপেরা। আমরা নতুন খেলায় তো দেখবো আগামীতে।