লোকসভা নির্বাচনের আগেই গ্রেফতার করা হতে পারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় এমনই ইঙ্গিত করলেন তৃণমূল কংগ্রেস দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার সকালে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কয়েকদিন আগে তাঁর কাছে একটি মেসেজ আসে। সেখানে জানানো হয় লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে।
পাশাপাশি লিপস অ্য়ান্ড বাউন্সে ইডি তল্লাশি নিয়েও মুখ খোলেন মমতা। বিনা কারণে অফিসের কম্পিউটার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এপ্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "তোমরা যদি কম্পিউটার ওস্তাদ হও আমরাও কম বড় ওস্তাদ নই, আমরাও তথ্য বের করে নিয়েছি। কখন কোন সময়ে ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছিল তা আমরা জানতে পেরেছি। লালবাজারেও অভিযোগ করা হয়েছে।"
এর আগেই জানা গিয়েছিল, অনলাইন গেমিং (Online Gaming), হর্স রেসিং ও ক্যাসিনোতে (Casino) বসতে চলেছে চড়া জিএসটি (GST)। এবারে সেটাই হল। শুক্রবার পাশ হয়ে গেল সেন্ট্রাল অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি বিল (GST Bill)। অনলাইন গেমিং, রেসিং, ক্যাসিনো এসবের উপর এখন থেকে ২৮ শতাংশ কর কার্যকর করা হবে বলে খবর। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে এই নিয়ম শুরু হতে চলেছে।
শুক্রবার, বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে লোকসভায় 'দ্য সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (অ্যামেনডেন্ট) বিল ২০২৩' এবং 'দ্য ইন্টিগ্রেটেড গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (অ্যামেনডেন্ট) বিল ২০২৩' ধ্বনিভোটে পাশ হয়েছে। জিএসটি আইনের ৩এ ধারা পরিবর্তন করার সুযোগ পেতেই এই সংশোধিত বিল পাশ করা হল। অনলাইন গেম, ক্যাসিনোর পাশাপাশি অনলাইনে জুয়া সংক্রান্ত বিষয়েও কার্যকর হবে ২৮ শতাংশ জিসএসটি। এই বিল পাশের জন্য সম্মতি দিয়েছিল জিএসটি কাউন্সিল। এ বার তা সংসদেও পাশ হয়ে গেল। তবে এই আইন ১ অক্টোবর থেকে শুরু কার্যকর হবে বলে জানা গিয়েছে।
লোকসভায় খারিজ বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব। সরকারের কাছে হেরে এই অধিবেশনে সম্ভবত অধীর চৌধুরীকেও হারাতে হতে পারে কংগ্রেসের। কারণ বৃহস্পতিবার অনাস্থা বিতর্কের পরেই লোকসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে। এদিন লোকসভায় মণিপুর বিতর্কে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় নিজের বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় সারাক্ষণ দুর্ব্যবহার করেছেন অধীর চৌধুরী। তাঁকে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল। এমনকী, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মধ্যেই অধীরের নেতৃত্বে ওয়াক আউট করে বিরোধীরা। অধিবেশন শেষের আগেই অধীরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। প্রিভিলেজ কমিটি সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সাসপেন্ড থাকবেন অধীর।
বিরোধীরা লোকসভা ছাড়তেই মণিপুর নিয়ে বলতে শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার নিজের বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, মণিপুরে শান্তি ফিরবেই। তার আগেই অবশ্য লোকসভা ছাড়েন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী জানান, পালিয়ে যাচ্ছেন বিরোধীরা। উত্তর-পূর্বের মানুষদের খারাপ অবস্থার জন্য কংগ্রেসকেই দায়ী করেন তিনি। মোদীর দাবি, মণিপুরে নিশ্চয়ই শান্তির সূর্য উঠবে। মণিপুর আবার নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।
প্রসূন গুপ্তঃ শুক্রবারেই শেষ হচ্ছে লোকসভা রাজ্যসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন। এই মুহূর্তে অর্থনীতি থেকে আমজনতা বহু সমস্যায়। ধারণা ছিল মনিপুর থেকে হরিয়ানা ইত্যাদি রাজ্যগুলির অগ্নিগর্ভ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে কিন্তু হলো কি? একেবারে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ঝগড়ায় মুখরিত থাকলো এবারের আইনসভা। বেশ কয়েক বছর ধরে আইনসভায় শুধুই হৈচৈ করে সময় কেটে যাচ্ছে। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে সাধারণত আঞ্চলিক বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা থাকে। বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা অবধি এই পর্ব থাকা উচিত। অন্তত আইনসভার আইন তাই বলে। এরপর শুরু হয় জিরো আওয়ার অর্থাৎ দেশের অবস্থান নিয়ে যা আলোচনা হওয়া উচিত তা আর হচ্ছে কোথায়? এই না হওয়ার জায়গা থেকে সমস্যা, সমস্যার অবস্থানেই থেকে যাচ্ছে আইন তৈরি হচ্ছে না।এটা বাস্তব সরকারি এনডিএ অনেক বেশি শক্তিশালী, কিন্তু যদি আলোচনায় হৈচৈ হয় তবে স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সভা স্থগিত করতে বাধ্য। এমনটাই হচ্ছে কয়েক বছর ধরে।
এবারের মনিপুর নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। শোনা গিয়েছিলো যে এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে নাকি বিজেপির সাংসদরা আলোচনা করতে রাজি নয়, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জবাব দেবেন কিনা তাই নিয়ে জল্পনাও তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে বিরোধীদের একটি জোটের নাম হয়েছে 'ইন্ডিয়া'। তারা ঠিক করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে মোদীকে লোকসভায় বক্তব্য রাখতে বাধ্য করা হবে। কাজেই তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন এবং তার মধ্যে মনিপুরের বিষয়টিকে জুড়ে দিলেন। এবারে বুধ এবং বৃহস্পতিবার এই অনাস্থা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলো। রাহুল গান্ধী বক্তব্য রাখতে গেলে তাঁকে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হলো। অবিশ্যি তিনি একা নন, প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল মনিপুরের আলোচনায় বক্তব্য রাখলেন।
এবারে জবাবিতে বুধবার অমিত শাহ জানালেন মোদী জমানার উন্নয়নের কথা এবং বৃহস্পতিবার স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী বক্তব্য রাখলেন | মোদীর আড়াই ঘন্টার ভাষণে তিনি তুলোধোনা করলেন বিরোধীদের এবং বিশেষ করে নেহেরু পরিবারকে | বিরোধীরা ভোটাভুটিতে অংশ না নিয়ে চলে সংসদ থেকে বেরিয়ে গেলেন | তাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার প্রধানমন্ত্রী মনিপুর নিয়ে দুচার শব্দ বললেন | ব্যাস , সমাপ্ত হলো তর্ক বিতর্ক | হতভাগ্য মনিপুর | পূর্ব অবস্থানেই রয়ে গেলো পূর্ব ভারতের ছোট্ট রাজ্যটি |
লোকসভার পর রাজ্যসভা। পাশ হয়ে গেল 'গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল টেরিটোরি অফ দিল্লি বিল ২০২৩'। এদিন, সংসদের উচ্চকক্ষে কেন্দ্রের বিতর্কিত বিল নিয়ে ভোট হয়। বিল পাশ হওয়ার জন্য ১১৯ জন সাংসদের সমর্থনের প্রয়োজন ছিল। ভোটের পর দেখা যায়, সেই সংখ্যা পার করে গিয়েছে। বিলের সপক্ষে পড়েছে ১৩১ টি ভোট ও বিলের বিপক্ষে পড়েছে ১০২ টি ভোট।
উল্লেখ্য, দিল্লি সার্ভিসেস বিল নিয়ে বহুদিন ধরেই বিজেপি ও আপের মধ্যে সংঘাত রয়েছে। বিলের বিপক্ষে ছিল আম আদমি পার্টি। যদিও, শেষপর্যন্ত সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়ে গেল বিলটি।
৩ অগাস্ট লোকসভায় প্রথমে পাশ হয়। এরপর বহু তর্কবিতর্কের পর রাজ্যসভাতেও এদিন পাশ হল বিল। এবার অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে বিলটি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের জন্য বিলটি গুরুত্বপূর্ণ। এটা দিল্লিবাসীর জয় বলে মনে করছে বিজেপি।
এদিকে, বিল পাশ হতেই সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাঁর অভিযোগ, উন্নয়মূলক কাজে বাধা দিচ্ছে বিজেপি। কিন্তু, দিল্লিবাসী তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। জনতাই আসনচ্যূত করবে বিজেপিকে।
আজ অর্থাৎ সোমবার লোকসভায় (Loksabha) পাস হয়ে গেল 'ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল' ২০২৩ (Digital Personal Data Protection Bill)। বিলটিতে বলা হয়েছে, বিধি লঙ্ঘন করলে জরিমানার অঙ্কের কথাও। জানা গিয়েছে, ভারতীয় নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য এই ডেটা সুরক্ষা বিল পাস করা হয়েছে। অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমে আরও সুরক্ষিত হবে ভারতীয়দের ব্যক্তিগত তথ্য।
গত বৃহস্পতিবার লোকসভায় ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল ২০২৩ পেশ করেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি বিলটি পেশ করার সময়েই বিরোধীরা এর বিরোধিতা করেছিলেন। তবে তিনি তখন তাঁদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এরপরেই আজ লোকসভায় পাস করা হল এই বিল। তবে এই বিল লোকসভায় পাস হয়ে গেলেও রাজ্যসভার অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। রাজ্যসভার অনুমোদন পেলেই এই বিল আইনে পরিণত হবে।
এই বিল পাস করায় এবার থেকে অফলাইন ও অনলাইন ডেটা সমস্ত কিছু আইনি ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমনকি ব্যক্তিগত ডেটাও। তবে সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত করার আগে ব্যক্তির থেকে অনুমতি নেওয়া হবে। জানানো হয়েছে, এই ডোমেইনে সব তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। তবে সোমবার লোকসভায় যে ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল পাস হল, সেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে ব্যক্তিগত তথ্য বিলের লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সর্বোচ্চ ২৫০ কোটি টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।
হাতে সময় আছে। কিন্তু তা বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। নেমে পড়তে হবে জোরকদমে। লোকসভা ভোটের আগে বাংলার বিজেপি সাংসদদের এই বার্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। জাতীয় নয়, প্রচারে প্রাধান্য দিতে হবে স্থানীয় ইস্যুকে। মূলত এ ভাবে লোকসভা ভোটের প্রচারের রূপরেখা তৈরি করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজনাথ সিংয়ের মতো শীর্ষ নেতারাও।
সোমবার সংসদের তাঁর ক্লাসে যোগ দিয়েছিলেন বাংলার বিজেপি সাংসদরা। সেখানেই আগামী বছরের লোকসভা ভোটে বিজেপি কী ভাবে কাজ করবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের দাবি, বাংলায় ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতাকেই এবার কাজে লাগাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই প্রাধান্য দিচ্ছেন স্থানীয় ইস্যুর উপরেই।
বিধানসভা ভোট পরবর্তী সময়ে ক্রমশই হারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে রাজ্য বিজেপিকে। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটেও শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে কার্যত হার স্বীকার করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী লোকসভা ভোটকেই বাংলার মাটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই হিসাবে নিতে চান সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষরা।
যদিও সম্প্রতি সংগঠনে রদবদল ফের ফলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলেই আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলের। কারণ, পাঁচ বছর আগে রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বাংলা থেকে বড় জয় পেয়েছিল বিজেপি। পাঁচ বছর পর দিলীপ ঘোষ আজ শুধুই সাংসদ।
পঞ্চায়েত ভোটের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে কলকাতায় এসেছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। শনিবার শহরের একটি অভিজাত হোটেলে রাজ্যের সব জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ের একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়।
সূত্রের খবর এরপর ১৯ অগাস্ট রাজ্যে আসবে নির্বাচন কমিশনের ৩ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে থাকবেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার নীতীশ ব্যাস। তবে শুধু এরাজ্য নয়, সব রাজ্যেই প্রতিনিধি দল যাবে বলে জানা গিয়েছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্ব খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তারপর বিভিন্ন জেলায় জেলায় সমীক্ষা এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হবে।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালের ১৬ মে। তার আগেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বিভিন্ন সূত্রের খবর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
মে মাস থেকেই আগামী বছরের লোকসভা (Loksabha) ভোটের প্রচার শুরু করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Modi)। বসে নেই বিরোধীরাও। তার প্রমাণ, মঙ্গলবার কলকাতায় আসছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। নবান্নে তিনি দেখা করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, দুই মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধী ঐক্যের প্রসঙ্গ ওঠা স্বাভাবিক। রবিবারই দিল্লিতে গিয়ে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
আম আদমি পার্টি জানিয়েছে, মঙ্গলবার কলকাতায় যাচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দেখা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তবে নবান্ন সূত্রে এই বৈঠক নিয়ে কিছু বলা হয়নি। সম্প্রতি কলকাতায় নীতীশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা। তার আগে দেখা করেছেন নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে।
শনিবারই কর্নাটকে সিদ্ধারামাইয়ার শপথ অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে ১৭ দলের বিরোধী জোটকে। সেখানে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আবার হাত মিলিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও।
রাহুলকে (Rahul Gandhi) সরকারি বাংলো ছাড়তে নোটিস (Notice)। সোমবার কংগ্রেস নেতা রাহুলকে নোটিস দিয়েছে লোকসভার (Loksabha) হাউসিং কমিটি। সম্প্রতি তাঁর লোকসভার সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। সাংসদপদ খারিজের পর, এবার রাহুল গান্ধীকে সরকারি বাংলো ছাড়তে নোটিস। ২০০৪ সাল থেকে লোকসভার সাংসদ ছিলেন রাহুল। সেই সূত্রে দিল্লিতে ১২ তুঘলক রোডে রাহুলের জন্য সরকারি বাংলো বরাদ্দ করা হয়েছিল।
আগামী ১ মাসের মধ্যে সরকারি বাংলো ছাড়তে রাহুলকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। যদিও রাহুলের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এমন কোনও নোটিস তিনি পাননি। সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর টুইট করেছিলেন রাহুল। লিখেছিলেন, ‘দেশের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি। প্রতিটি মূল্য চোকাতে প্রস্তুত।’ এরপর, শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল বলেন, 'মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলাতেই নিশানা করা হয়েছে তাঁকে।' তিনি এ-ও জানান যে, সংসদে তাঁর পরের বক্তৃতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভীত, তাই তাঁর সাংসদপদ খারিজ করা হয়েছে।
মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে রাহুল গান্ধীর দু'বছরের কারাদণ্ড। যদিও আগামি একমাস এই সাজা কার্যকর করা যাবে না। সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে সাজার বিরোধিতা করে আবেদনের সুযোগ রয়েছে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi row)। কিন্তু সুরাতের নিম্ন আদালতের এই রায় প্রকাশ্যে আসতেই খারিজ হয়েছে রাহুল গান্ধীর লোকসভার সদস্যপদ। সংসদের নিম্নকক্ষে রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খোয়ানোর পরেই তাঁর পাশে দেশের একাধিক বিজেপি-বিরোধী দল। এবার চুপ থাকলেন না বলিউডের পরিচিত মুখ স্বরা ভাস্কর।
সোনিয়া-পুত্রর পাশে দাঁড়িয়ে স্বরার টুইট, 'যাকে পাপ্পু বলে ডাকত, আজ তাকেই ভয় পেয়েছে। রাহুল গান্ধীর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া জনপ্রিয়তা ও ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই কাজ করা হয়েছে। যাতে লোকসভার ভোটে লড়তে না পারে। কিন্তু আমার বিশ্বাস এরপর রাহুল আরও বড় হয়ে ফিরবেন।'
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সংশোধিত জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ভর করে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের পিছনেও বিজেপির মদত দেখছে বিরোধী শিবির।
প্রসূন গুপ্ত: সময়টি সম্ভবত ২০১৯, কোনও একটি সভায় নিজের ভাষণে রাহুল গান্ধী বলেন যে, 'সব চোরেদের নাম কেন মোদী মোদী মোদী?' আক্রমণের কেন্দ্রে কে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি? এর আগেও গান্ধী পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে নরেন্দ্র মোদীকে ব্যক্তি আক্রমণ করেছে। 'চৌকিদার চোর হ্যায়' স্লোগান তুলে হাওয়া গরম করতে চেয়েছেন রাহুল গান্ধী। একইভাবে সোনিয়া গান্ধী 'মৌত কি সওদাগর' বলে খোঁচা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। এটা কি পরোক্ষে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ নয়? প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি শিবির।
যদিও এই আক্রমণে হিতে বিপরীত হয়েছিল। বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি। মাঝখান থেকে ২০১৯-র ভোটে আমেঠি থেকে রাহুল হেরে যান। সকলেই বলেছিল, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ রাহুলের ভুল ছিল। কিন্তু ২০১৯-র করা মন্তব্যে এবার ফ্যাসাদে সোনিয়া-তনয়। মানহানির মামলায় তাঁকে অপরাধী সাব্যস্ত করে জেলের সাজা শুনিয়েছে আদালত। যদিও এক মাসের জন্য এই সাজা কার্যকর না করার নির্দেশ রয়েছে।
কিন্তু সংশোধিত জনপ্রতিনিধিত্ব আইন তাঁর বিপরীতে গিয়েছে। দু'বছরের জন্য জেলের সাজা মাথার উপর খাঁড়ার মতো ঝোলায় খারিজ হয়েছে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ। এমনই বিজ্ঞপ্তি শুক্রবার জারি করেছে লোকসভার সচিবালয়। এই সংশোধিত জন প্রতিনিধিত্ব আইন নিয়ে এই রাহুলই এক দশক আগে সরব হয়েছিলেন। সংবাদ মাধ্যমের সামনে তাঁর অর্ডিন্যান্সের পেপার ছিঁড়ে ফেলার দৃশ্য এখনও অনেকের মনে সজাগ।
তবে আলোচনা প্রবল, আইনি পথে হেঁটে সংসদের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত কি রাহুলের পক্ষে যাবে? মোদী সরকারের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে কি পালের হাওয়া নিজের দিকে টানতে পারবেন সোনিয়া তনয়। কারণ এই মুহূর্তে আদানি-কাণ্ডে সংসদে জেপিসি চেয়ে এককাট্টা বিজেপি-বিরোধী শিবির। নেতৃত্বে কংগ্রেস। পর্যবেক্ষকরা বলছেন রাহুলে উদ্যোগে হওয়া ভারত জোড়ো আন্দোলন কিছুটা হলেও কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ বন্ধ করেছে। এই আবহে আইনি মতে রাহুলের সাংসদপদ খারিজকে রাজনৈতিকরন করতে পারবে হাত শিবির? খারগে, থারুর, জয়রাম রমেশরা শুনতে পাচ্ছেন?
যদিও একটি অংশ দাবি করছে, রাহুলের সাংসদ পদ খারিজে 'জাতীয় হিরো' হয়ে যেতে পারেন সোনিয়া তনয়। ইতিমধ্যে কংগ্রেসের প্রবল বিরোধী আপ পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল রাহুলের পাশে। প্রতিবাদ এসেছে প্রায় প্রতিটি বিরোধী দলের থেকে বাকি মমতা। তিনিও কি মূল স্রোতের বাইরে থাকবেন? অন্তত একটা ট্যুইট করে গান্ধী পরিবারের পাশে থাকবেন?