মণি ভট্টাচার্য: 'দিদি, বড় হয়ে তোমার মত শিক্ষক হব, সবাইকে পড়াব।' বলেই দাদা-দিদিদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল ছোট্ট ছেলেটি। বছর আটের (Minor) ছোট্ট ছেলে, দেবনাথের চোখে তখন বিরাট স্বপ্ন। চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে দেবনাথকে (Debnath Mondal) কাছে টেনে নেয়, ওর প্রিয় দিদিমণি।
পরিবারের প্রবল আর্থিক অনটনে স্কুল, স্বপ্ন, সবই ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল দেবনাথ মণ্ডল। বাম সমর্থিত ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সাহায্যে ফের স্কুলে ভর্তি হল সে। স্কুলে ভর্তি হয়ে দেবনাথের প্রতিজ্ঞা, ভবিষ্যতেও শিক্ষক হবে এবং সবাইকে শিক্ষাদান করবে। সূত্রের খবর, রাজারহাট-নিউটাউন সমগ্র চত্বরজুড়ে এসএফআইয়ের উদ্যোগে একটি দল গঠন করা হয়েছে, যার নাম 'অ্যান্টি ড্রপ আউট স্কোয়াড' এই স্কোয়াডের মাধ্যমেই দেবু অর্থাৎ দেবনাথের খবর পায় তাঁরা। খবর পেয়েই শুরু হয় দেবুকে মুলস্রোতে ফেরানোর কাজ।
এই দাদা-দিদিরাই ওকে স্কুলে ভর্তি করালেন:
এসএফআই সূত্রে খবর, কয়েকদিন ওই স্কোয়াডের সদস্যরা দেবুকে বোঝাতে শুরু করলে জানতে পারে, লকডাউনের আগে দেবু অর্থাৎ দেবনাথ চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ত। লকডাউনের পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে কেউই ওর পাশে দাঁড়ায়নি। পাড়ায় কমবেশি ওকে বুদ্ধিমান ছেলে হিসেবে চিনলেও, অধিকাংশই এখন ওকে দিয়ে দোকান-বাজার করিয়ে নেয়। নিউটাউন গৌরাঙ্গনগরের বাসিন্দা দেবনাথের বাবা, নিতাই মণ্ডল পেশায় দিন মজুর। কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে আর্থিক অনটনের মুখে ছেলের পড়াশুনা বন্ধ রাখতে হয়েছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
রবিবার সিএন-ডিজিটালকে তিনি বলেন, 'অনেক ছোট বেলায় মা কে হারিয়ে দমে যায়নি দেবু, পড়াশুনা করে বড় হতে চেয়েছিল। কিন্তু কোভিড এসে সব শেষ করে দিয়েছিল।' তিনি রবিবার এসএফআই সদস্যদের ধন্যবাদ দেন এবং বলেন, 'ওরা বোধ হয় আমার ছেলেটার স্বপ্ন নষ্ট হতে দিল না।'
স্কুলে দেবনাথ :
প্রথমদিনই দেবনাথ ওর স্বপ্নের কথা জানায় ওই দাদা-দিদিদের। পুনরায় স্কুলে ভর্তি করার আগে এসএফআইয়ের এক স্থানীয় কর্মী সুতপা মিস্ত্রি, বিনা পারিশ্রমিকেই ওকে পড়ানো শুরু করেন। শুরু হয় পুরোনো পড়া ঝালিয়ে নেওয়া। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে ফিরে পাওয়ার পর, দেবনাথের কাছের দিদিমণি হয়ে ওঠে সুতপা। রবিবার সুতপা সিএন-ডিজিটালকে জানায়, দেবনাথকে স্থানীয় যাত্রাগাছি প্রণবানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। নতুন করে পড়াশুনা শুরু করতে পেরে ওর ভালোই লাগছে।
দিদিমনি সুতপার সঙ্গে দেবনাথ:
শিক্ষায় দুর্নীতি-সহ (Education Scam) একাধিক বিষয় নিয়ে প্রতিবাদে সরব বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই (SFI)। পুলিসি অনুমতি ছাড়াই হাওড়া স্টেশন থেকে বিধানসভা অভিযান করে তাঁরা। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে এসএফআই-এর কর্মী সমর্থকরা এসে জমায়েত হয়েছে হাওড়া স্টেশনের বাসস্ট্যান্ডে। তবে স্টেশনের বাইরে তাঁদের আটকাতে বিশাল পুলিসবাহিনী ব্যারিকেড গড়ে। শুক্রবার সকাল থেকেই হাওড়া সিটি (Howrah Police) পুলিসের তরফ থেকে ব্যারিকেড করে রাখা হয় স্টেশন চত্বর। এমনকি এসএফআই কর্মীদের উপর নজর রাখতে পুলিসের পক্ষ থেকে ড্রোনের মাধ্যমে চলে নজরদারি।
হাওড়া সিটি পুলিসের কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে পুলিসের পদস্থ কর্তারা হাওড়া ব্রিজ এবং হাওড়া স্টেশনের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার নজরদারিও করে। এদিকে, শিয়ালদহ থেকেও পুলিসি বাধা উপেক্ষা করে এসএফআই-এর একটি অংশের মিছিল বিধানসভার গেটে পৌঁছে যায়। কয়েকজনকে বিধানসভার গেটে উঠে পড়তে দেখা গিয়েছে। রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিধানসভা চত্বর। এসএফআই-এর কর্মীদের সঙ্গে পুলিসের রীতিমতো ধস্তাধস্তির পর বিধানসভা গেটের পুলিসি ব্যরিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে এগনোর চেষ্টা করেন এসএফআই কর্মী-সমর্থকরা। কয়েকজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
পুলিসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে। এমনকি টেনে হিঁচড়ে এসএফআই-র সমর্থকদের প্রিজন ভ্যানে তোলার ছবি ধরা পড়ে সংবাদ মাধ্যমে। একাধিক ছাত্র নেতাকে গ্রেফতারির অভিযোগ উঠেছে। বাম এই ছাত্র সংগঠনের দাবি, 'এসএফআই-এর কর্মীদের আটকাতে পারেনি পুলিস। আমরা বলেছিলাম শুক্রবার মিছিল হবে এবং তা বিধানসভা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে তাতে আমরা সফল। এতো পুলিসি নিরাপত্তা সত্বেও এসএফআই-এর কর্মীদের মিছিল রুখতে পারেনি পুলিস।'
প্রসূন গুপ্ত: ত্রিপুরার ভোট হয়ে গিয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি, ফল ঘোষণা ২ মার্চ। সমস্ত দলের কাছেই ফল কিন্তু টেনশনের। যদিও ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা থেকে বিজেপির বিভিন্ন নেতা মিডিয়ার সামনে জয় সুনিশ্চিত বলে দাবি করেছেন। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্বের বাকি দুই রাজ্যে ভোট।
তারপর বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে শুরু বুথ ফেরত সমীক্ষা অর্থাৎ পরিভাষায় যাকে বলে স্যাম্পেল টেস্ট। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে বিভিন্ন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এই বুথ ফেরত সমীক্ষা তৈরি হয়। যদিও বহু সময়ে এই অগ্রিম বার্তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তেমনই প্রায় ঠিকও হয়েছে বহুবার। তবে এই সমীক্ষায় ভরসা রাখে না অনেকেই। তবে কী করে অগ্রিম জানা যাবে? এক্সিট পোল না করেও ধারণা যা দাঁড়ায় তাই ব্যক্ত করা হচ্ছে। প্রথমত বিপুল সংখ্যাই ভোট পোল হয়েছে। কোথাও ৯১ শতাংশ অবধি বলেই খবর, তবে শতাংশের হিসাবে ৮৭%-এর মতোই। প্রশ্ন হচ্ছে এই বিপুল ভোট কার বাক্সে যেতে পারে?
ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকেই ভোটবাক্সে বিপুল ভোট মানে সরকার-বিরোধী ভোট! ১৯৭৭-এ জরুরি অবস্থার পর যে ভোট হয়েছিল লোকসভায়, তা সাধারণ ভোট শতাংশের থেকে অনেক বেশি ছিল। ইন্দিরা পরাজিত হয়েছিলেন, আবার ইন্দিরার মৃত্যুর পর বিপুল যে ভোট হয়েছিল তাতে সুবিধা হয়েছিল ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের। রাজীব গান্ধী রেকর্ড গড়েছিলেন, ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪১৩ আসন পেয়ে।
ফলে এই দুই ধরণের ভোটের ফল হয়েছিল। ত্রিপুরায় এই মুহূর্তে জল্পনা হচ্ছে যদি ত্রিশঙ্কু হয়? তবে কি তিপরা মোথা ফ্যাক্টর? নাকি বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ফের আগরতলার মসনদে বিজেপি সরকার? অপেক্ষা কিন্তু ২ মার্চের। (চলবে)
প্রসূন গুপ্ত: হাতে গোনা আর মাত্র কয়েক ঘন্টা, তারপরে ত্রিপুরার ভোটাররা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে যাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ৭২ ঘন্টা আগে কে কোথায় দাঁড়িয়ে? ভোট নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়া ইস্তক প্রচার যা বিপুল ভাবে হয়েছে, তা কিন্তু বিজেপির পক্ষে অ্যাডভান্টেজ। ক্ষমতায় থাকা দল নিশ্চিতভাবে চেষ্টা করবে, ফের ভোটে জিতে ফিরে আসতে। ৫ বছর রাজত্ব করার পর যেকোনও স্থানে একটি বিপরীতমুখী ভোটের হওয়া ওঠে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরার রাজনৈতিক ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন ধর্মী।
এখানকার জনতা বারবার ক্ষমতাসীন দলকে সুযোগ দেয় বা দিয়ে এসেছে। বাম জমানা যেমন দীর্ঘদিন দুই রাজ্যে ছিল এবং তাদের পরাজিত করে এ বাংলায় তৃতীয় বারের মতো তৃণমূল সরকার। তেমন দীর্ঘ কংগ্রেস শাসন যেমন ছিল ত্রিপুরায়, তেমন বাম শাসনও ছিল দীর্ঘদিন। কাজেই ওই অংকে বলা যেতেই পারে ফের একবার হয়তো বিজেপিকে সরকার গড়তে সুযোগ দেবে ওই রাজ্যের ভোটাররা।
এদিকে একটি অলিখিত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিজেপির ভোট ২০২২-এ ৪০ শতাংশের মতো ছিল। একইসঙ্গে ওই অলিখিত সমীক্ষা (যা সিএন পোর্টাল যাচাই করেনি) বলছে, যে কংগ্রেস-বামেদের মিলিত ভোট এই মুহূর্তে ৩১ শতাংশের কাছাকাছি। সেটা হলেও অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় তৃতীয় শক্তি তৃণমূলের ভোট ৬/৭ শতাংশ। বাকি ভোট উপজাতি কেন্দ্রিক দল তিপরা মাথা-সহ অন্যদের।
কিন্তু এখানে জটিলতা রয়েছে, তৃণমূল মাত্র ২৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কাজেই বাকি ৩২ আসনে কী হতে পারে? আরও আছে, তিপরা মোথা নিজেদের ১৮টি আসন ব্যতীত বাকি আসনে বাম-কংগ্রেস জোটকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রচার করেছে। সরাসরি সুদীপ রায় বর্মনকে ভোট দিতে প্রচার করেছে। অতএব ফ্যাক্টর কিন্তু ৪২ আসন। এই ৪২ আসনে তৃণমূলের ৬% ভোট বাদ দিলে এবং বিজেপির ৪০ শতাংশ বাদ দিলে বাকি আসনে কী দাঁড়াতে পারে তাই নিয়ে মাথাব্যথা সব দলের। এসব জটিল অংকের শেষ দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি, শেষবেলায় যে দলের সংগঠন ভোট করাতে পারবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে।
বাম আমলে (Left Era in Bengal) বাংলায় উন্নয়ন স্তব্ধ ছিল, রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের ভার ছিল। আমরা এসে রাজ্যকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে G-20 বৈঠকের উদ্বোধনে এই দাবী করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। তাঁর সরকারের ১১ বছরের রাজ্যব্যাপী প্রায় ১২ মিলিয়ন কর্মসংস্থান হয়েছে। এদিন বিশ্ব বাংলা কনভেনশন (Biswa Bangla Convention Center) সেন্টারে দাঁড়িয়ে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
জানা গিয়েছে, সোমবার অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি থেকে থেকে শুরু হওয়া জি ২০ বৈঠক চলবে ১১ জানুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত। বিশ্বের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়েই এই দু'দিন আলোচনা হবে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। এদিন এই সম্মেলনের উদ্বোধনে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, 'আমরা এমন এক রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি যাঁদের বাম মতাদর্শ ছিল। তাদের ৩৪ বছরের শাসন শেষে আমরা ক্ষমতায় আসি। ক্ষমতায় এসে আমরা দেখি বাংলায় কোনও আর্থিকবৃদ্ধি, উন্নয়ন নেই স্তব্ধ হয়েছিল। রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের বোঝা। কিন্তু আমাদের সময়ে গর্বের সঙ্গে বলতে পারি কোভিডকালেও আমরা উন্নয়ন করেছি।'
রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান প্রসঙ্গেও সোমবার সরব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমাদের রাজ্যের জিডিপি ৪ গুণ বেড়েছে। রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৪ গুণ। আমরা ১২ মিলিয়ন কর্মসংস্থান করতে সমর্থ হয়েছি।'
তাঁর দাবী, 'আমরা মানুষকে বিনামূল্যে খাবার দিই। মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা সবচেয়ে জরুরি। কারণ সরকার মানে মানুষের, মানুষের জন্য এবং মানুষের দ্বারা।'
প্রসূন গুপ্ত: একটা সময়ে কথাই ছিল পশ্চিমবঙ্গে নাকি বাম মনোভাবাপন্ন মানুষের বাস। একটি অঙ্গরাজ্যে এমনটি কি হতে পারে, যুক্তিতে আসে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে ১৯৭৭ থেকে এ রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ ৩৪ বছর তারা ক্ষমতা উপভোগ করছে। তারপর সেই যে তারা ক্ষমতা হারালো এবং দিনের পর দিন ক্ষয়িষ্ণু হলো, তা এখনও পর্যন্ত ফেরত পাওয়ার আশা কোথায়? এখন এই মুহূর্তে সরকারিভাবে বিরোধী দল বিজেপি, যাদের ২০১১-তে কোনও অস্তিত্ব ছিল না এই রাজ্যে। বিধানসভায় একটিও আসন তারা পায়নি। আর আজকে সেই বামেদের বিধানসভায় শূন্য আসন এবং এই রাজ্য থেকে লোকসভাতেও শূন্য। রাজ্যসভায় সবেধন একটি আসন তাও আগামীতে শূন্য হয়ে যাবে, সাংসদ হিসেবে বিকাশ ভট্টাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে।
কিন্তু তাই বলে কি দীর্ঘদিনের একদল বামপন্থী দল শেষ হয়ে যায়? এ দেশে বিপ্লব হয়নি। সংসদীয় গণতন্ত্রে সিপিএম থেকে বাকি দলগুলি লড়াই করেছে। কমিউনিজম নামেই, মার্ক্সবাদ কথাতে রয়ে গিয়েছে। ৭০ দশকে যারা বন্দুক হাতে নিয়েছিল তারা আজ ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু এই রক্তক্ষয়ী অবস্থায় বামেরা কতদিন অপেক্ষা করবে সুসময়ের জন্য?
একসময়ের তাবড় বাম নেতাদের অধিকাংশই প্রয়াত, রয়েছেন বিমান বসু। একা বিমান বসু যে দলকে তুলে ধরবেন সেই বয়স বা শক্তি তাঁর এখন আছে কি? অন্যদিকে অন্য বাম দলগুলির কী অবস্থান সেটাও মস্ত প্রশ্ন। কোথায় আজ আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক, সিপিআই বা এসইউসি? এই দলগুলিকে নিজ শক্তিতে কোনও আন্দোলন বা সভা-সমিতি করতে দেখা যায় না। বৃস্পতিবার সন্ধ্যায় আরএসপির দীর্ঘদিনের নেতা অশোক ঘোষকে দেখা গেলো বিরাটি অটো স্ট্যান্ডের সামনে।
কোনও এক অটোচালকের সঙ্গে অনেক্ষণ কথা বলছিলেন। কিছুক্ষণ বাদে অটো চালক অবশেষে প্রশ্ন করলো, সে তো বুঝলাম কিন্তু দাদার নামটা কি? হতাশ হয়ে নেতা জানালেন, অশোক ঘোষ। এই তো অবস্থা, সিপিএম নেতা একসময় জানিয়েছিলেন, নব্য যুবারা এবারে নেতৃত্বে এসেছে কাজ করবে ওরা। সোশাল নেটের যুগে রাজ্যের যুব মহল সকলেই নিজের নিজের কেরিয়ারে ব্যস্ত, এখান থেকে নব্য বিপ্লব সম্ভব কি?
সৌমেন সুর: বাংলার কৃষক ও গণ আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গৌরবময় আন্দোলন তেভাগা আন্দোলন। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে তেভাগা কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল উৎপাদিত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের দাবিতে। বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণ কৃষক-জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম হল তেভাগা আন্দোলন। তাদের আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা, স্বঅধিকারের জন্য এই লড়াই।
এই আন্দোলনকে দমাতে জোতদার, জমিদার, পুলিসের সম্মিলিত নিপীড়ন, নির্যাতন, দমন-পীড়ন, গুলি, হত্যা, নারীদের শ্লীলতাহানি নির্বিচারে চলেছে। তবে কৃষক সমাজ দমে যায়নি। একজোট হয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। হিন্দু মুসলমান ঐক্য এই আন্দোলনকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল। সমাজ এবং সময়কে নিয়ে তৈরি হয় সাহিত্য এবং সেখানে মানুষ অংশগ্রহণ করে। সেদিক থেকে তেভাগা কেন্দ্রিক সাহিত্যের শাখা বাংলা ছোট গল্পে সমৃদ্ধ। যাঁদের লেখা গল্পে তেভাগার স্পষ্ট ছোঁয়া আছে, তাদের কিছু নাম ও কিছু কথা সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে।
লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-- গল্প/ছোট বকুলপুরের যাত্রী। তেভাগার সময় পরিবেশ ছোট বকুলপুর পুলিস পাহারা দিচ্ছিল। এমতাবস্থায় দিবাকর স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে আন্নার ভাইদের খবর নিতে সেখানে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থলে পুলিস তাদের নানাভাবে তদন্ত করে। সন্দেহ করে তাঁরা বিপ্লবী হতে পারে। শেষ পর্যন্ত একটা গানের কাগজে লেখা শব্দ দেখে দিবাকরকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং গ্রেফতার করে। (চলবে) তথ্যঋণ: মাসরেকুল আলম
দীর্ঘ রোগভোগের পর মল্লিক বাজারের এক নার্সিংহোমে প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় (Manab Mukherjee Death)। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এই সিপিএম নেতার (CPM Leader)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। সম্প্রতি দু'বার সেরিব্রাল স্ট্রোকের আক্রান্ত হয়েছিলেন বামফ্রন্ট আমলের (Left Front Government) এই মন্ত্রী এবং বেলেঘাটার প্রাক্তন বিধায়ক (former Beleghata MLA)।
জানা গিয়েছে মঙ্গলবার চক্ষুদানের পর পিস হেভেনে শায়িত থাকবেন মানব মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ। বুধবার অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর সেখান থেকে দেহ বের করে প্রথমে বেলেঘাটা পার্টি অফিস, সেখান থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এবং জেলা অফিস হয়ে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই হবে প্রাক্তন পর্যটন মন্ত্রীর দেহদান। ২০১১ সাল পর্যন্ত সিপিএম-র বিধায়ক ছিলেন মানব মুখোপাধ্যায়। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে একাধিক দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলেছেন রাজ্য রাজনীতিতে সুবক্তা হিসেবে পরিচিত এই সিপিএম নেতা।
১৯৫৫-র ২৪ অগাস্ট টালিগঞ্জের হরিপদ দত্ত লেনে জন্ম মানব মুখোপাধ্যায়ের। যোধপুর পার্ক বয়েজ হাইস্কুলের প্রাক্তনী, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন বা এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে ভারতের যুব ফেডারেশন বা ডিওয়াইএফআআই-র রাজ্য সম্পাদক নিযুক্ত হন প্রয়াত এই বাম নেতা।
আজীবন বামপন্থী এই নেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতেই মল্লিকবাজারের নার্সিংহোমে জড়ো হয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য, রবীন দেব এবং সিপিএম জেলা কমিটির সম্পাদক প্রমুখরা।
পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapore) কোলাঘাট ব্লকের সমবায় নির্বাচনে ফের ধরে রাখল বাম-কংগ্রেস প্রগতিশীল মোর্চা (Left-Congress)। তৃণমূল (TMC) একেবারে ধরাশায়ী হয়েছে এই নির্বাচনে। মোট ৪৩টি আসনের মধ্যে বাম-কংগ্রেস প্রগতিশীল মোর্চা পেয়েছে ৩৮টি আসন। এই ভোটে তৃণমূল পেয়েছে ৪টি আসন এবং প্রথমবার বিজেপি খাতা খুলেছে ১টি আসন ঝুলিতে পুড়ে। জানা গিয়েছে, মোট ভোটার ছিল ১০৬৭টি, মোটের উপর প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। মূলত এলাকার দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা সুরজিৎ মাইতির নেতৃত্বে এলাকায় কংগ্রেসের প্রাধান্য দীর্ঘদিনের।তিনি এই ভোট প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। ফল ঘোষণার পর গত নির্বাচনের মতোই ফের জয়লাভ করেছে বাম-কংগ্রেস জোট।
এই প্রসঙ্গে বাম-কংগ্রেস প্রগতিশীল জোটের এক সদস্য বলেন, 'বাম-কংগ্রেস মিলে এই ভোটে জিতেছে। আমাদের প্রার্থী সমবায় সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। ৪৩টি আসনের মধ্যে ৩৮টি আসন আমাদের পক্ষে গিয়েছে। ৪টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও আমাদের প্রার্থীরা হেরেছেন। তাঁদের প্রতি আমরা সহমর্মী।'
রাজ্যজুড়ে তিথি মেনে উদযাপিত হচ্ছে ভাইফোঁটা (Vai Duj)। মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Minister Sovondeb) থেকে সুজিত বসু প্রত্যেকেই ফোঁটা নিতে ব্যস্ত। পিছিয়ে নিয়ে বিজেপি, সিপিএম-ও। বৃহস্পতিবার বিজেপি (BJP) রাজ্য অফিসে মুরলিধর সেন লেনে ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। তাঁকে ফোঁটা দেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
পাশাপাশি যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনে গিয়ে স্থানীয়দের থেকে ফোঁটা নিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এদিকে, ভাইফোঁটা মানে মিষ্টিমুখ এবং পেটপুজো। আর কলকাতার বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে সকাল থেকেই লম্বা লাইন। কেউ নিজের দাদা/ভাইয়ের পছন্দমতো মিষ্টি কিনছেন, কেউ বা দিদি/বোনের পছন্দসই মিষ্টি কিনতে লাইন। অনেকে আবার নিজের পছন্দের মিষ্টি নিতেও নকুর, ভীম নাগের মতো দোকানে লাইন দিয়েছে।
পাশাপাশি মাংসের দোকানে লম্বা লাইন বৃহস্পতিবার। উৎসবের আবহে ভাইফোঁটা শেষ ছুটির দিন। কাল থেকে আবার নিত্য জীবন শুরু। তাই পরিবার, পরিজনদের সঙ্গে মুখ মিষ্টি করে ও কবজি ডুবিয়ে খেয়ে ভাইফোঁটা উদযাপনে মেতে বাঙালি।
আনিস খানের খুনের (Anis Khan) প্রতিবাদে মঙ্গলবার ফের রাজপথে সিপিএম ছাত্র এবং যুব সংগঠন (SFI DYFI)। প্রথমে শহিদ মিনার চত্বরে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমায়েত বাড়তে থাকায় বদলাতে হয় সভাস্থল। ওয়াই চ্যানেল থেকে সভামঞ্চ সরে আসে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। আনিস, সুদীপ্ত, মইদুল হত্যার প্রতিবাদ-সহ কর্মসংস্থান এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ সভা (Insaf Rally)। বক্তব্য রাখেন বাম যুবনেত্রী মীনাক্ষ্মী মুখোপাধ্যায় (Minaxi Mukherjee), সৃজন ভট্টাচার্য-সহ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এই মিছিল থেকে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, 'পুলিস বলেছিল, মূলত কালীঘাট বলেছিল ধর্মতলায় মিছিল করতে দেব না। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ছিল ধর্মতলায় মিটিং করব।' সিপিএম যুবনেত্রী মীনাক্ষ্মী মুখোপাধ্যায় জানান, কাজ পেতে হবে। যতক্ষণ না কাজ পাচ্ছি ধারাবাহিক লড়াই চলবে। ইনসাফ চেয়ে এই প্রতিবাদ সভা ছিল। ইনসাফ না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। আনিস খান খুনে অভিযুক্তদের সাজা প্রসঙ্গে মিনাক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়ের খোঁচা, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলবেন কেন এখনও অভিযুক্তরা শাস্তি পেল না। আমরা তো প্রশ্ন করব।'
যদিও বাম ছাত্র-যুবদের এই মিছিলকে সিপিমূল-র মিছিল বলে তোপ দাগেন বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কটাক্ষ, 'পুলিসকে বলে দেওয়া ছিল যারা মিছিলে আসবেন, তাঁদের জন্য কোনও অসুবিধা না হয়।' তবে এই মিছিলকে বৃহত্তর সভা আখ্যা দিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'বামেদের মিছিলের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। ওরা পৃথক সভা ডেকেছে কর্মসূচি করেছে। তবে সভা-সমাবেশ দেখে যা মনে হয়েছে ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটাই বৃহত্তর সমাবেশ।'
চলতি সপ্তাহে বুধবারই সিবিআই(CBI) জেরার মুখে পড়েছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য(Vice Chancellor) তথা এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান(ex Chairman) সুবীরেশ ভট্টাচার্য(Subiresh Bhattacharya)। এরপর এদিন সকালে সোজা রওনা হলেন কলকাতার(Kolkata) উদ্দেশে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁকে সমন পাঠিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা ৷ মনে করা হচ্ছে সিবিআই তলবে দফতরে হাজিরা দিতে গেলেন তিনি । সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা যাচ্ছেন। তবে কেন যাচ্ছেন তিনি তা স্পষ্ট করেননি।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের বাংলোয় রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। সকাল থেকেই মোতায়েন রয়েছে একাধিক নিরাপত্তারক্ষী। এরই মাঝে এদিন সকাল প্রায় ৮ টা বেজে ১৪ মিনিটে একটি লাল রঙের গাড়ি প্রবেশ করে উপাচার্যের বাংলোয়। তার কিছু সময় বাদেই প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি গাড়ি সহ সাদা রঙের আরও একটি গাড়ি। প্রতিটি গাড়িই অবশ্য ফাঁকা ছিল বলে জানা গেছে।
গতকাল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হানা দিয়েছিল সিবিআই । সূত্রের খবর, প্রায় ১০ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় উপাচার্যকে। উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের ১১ জনের একটি দল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকা বাংলো এবং প্রশাসনিক ভবনের কার্যালয়ে হানা দেয়। পাশাপাশি উপাচার্যের বাঁশদ্রোনীর বাড়িটিও সিল করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ।
গতকালের পর আজও ফের সিবি আই হানার খবর রয়েছে। সূত্রের খবর, এদিন ফের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যেতে পারেন সিবিআই আধিকারিকরা।