সৌমেন সুর: সময় যতই আধুনিক হোক না কেন, রাধা কিন্তু তার থেকেও আধুনিক। প্রত্যেকের ভাবনায় আলাদাভাবে রাধা ধরা দেন। যত দিন যাচ্ছে, রাধা যেন আবিষ্কৃত হচ্ছেন নতুন রুপে। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রেমিকা রাইকিশোরী, কালক্রমে পরিণত হলেন শ্রীকৃষ্ণের নায়িকায়। তিনি মহাভাবময়ী। তাঁর জাগতিক প্রেম পরিণত হলো স্বর্গীয় অনুভূতিতে। শ্রীরাধা, এই নামটি আমাদের চির চেনা,আবার অচেনাও। তিনি কাছের হয়েও অধরা। রাধা মানেই প্রেম, আবার রাধা মানে সাধনা। প্রেম ও সাধনাকে একাকার করেছে রাধা নাম।
রাধা ডুবে গেলেন কৃষ্ণ প্রেমে। ইন্দ্রিয়র স্বাভাবিক আর্কষণ তাঁকে টেনে এনেছে কৃষ্ণের কাছে। বৈষ্ণব কবিদের নিপুন কলমে রাধা-কৃষ্ণের প্রণয়লীলার বর্ণনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রস সাহিত্যের উদাহরণ। প্রেম যখন গভীর, তখন কৃষ্ণ ব্যাকুল রাধাকে একবার চোখে দেখবার জন্য, রাধার অবস্থাও তাই।
তোমার জন্য তোমাকে চাই-এটাই হলো রাধাতত্ত্বের আধুনিক দর্শন। পার্থিব চাহিদামতো জগৎ এই একটি উচ্চারণে অপার্থিব অলৌকিক হয়ে ওঠে। রাধার প্রেমের কৃতিত্ব এখানে। রাধা চির আধুনিক এই কারণে love for, love sake। ভালোবাসার দুরন্ত বাণী-তোমার জন্য তোমাকে চাই, রাধার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হলো। আধুনিকতার এমন নির্দশন রাধা ছাড়া, অন্য কোনও মধ্যে দেখি না।
সবাই যখন বলেন আমি কৃষ্ণের, একমাএ রাধা বলেন-মানুষের সঙ্গেই হোক বা ভগবানের সঙ্গে- প্রেমে সম্পূর্ণ সমর্পণ। আত্মনিবেদন না থাকলে অধিকার আসে না। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী মানবীয় ভাবে উঠে এলেও মূলত ঈশ্বরের প্রতি বা মুক্তির প্রতি জীবকূলের চরম আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে। কৃষ্ণ যদি মুক্তির স্বরুপ পরমাত্মা হন, রাধা তবে জীবাত্মার প্রতীক।
সৌমেন সুর: রাস্তা দিয়ে বিয়ের শোভাযাত্রা দেখে রাজকুমারী চোখের পলক পড়ে না। সোজা মায়ের কাছে আবদার করে, 'মা আমার বর কই।' মা পড়লেন মহাফ্যাসাদে। কী করে মেয়েকে শান্ত করাবেন। অবশেষে মেয়েকে ধরে সোজা ঠাকুরঘরে এসে গিরিধারীলালকে দেখিয়ে বলেন,'এই যে তোমার বর মেঘে তারিখে দেখে আপ্লুত হয়ে যায়।' প্রথম পর্বের পর...
মীরা যখন আপন মনে ধ্যান করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন, সেই সময় বিজয়বর্গীয় নামে একজন এসে, ক্ষুধার্ত মীরাকে দুধ এনে দেয়। মীরা দুধের বাটি এনে নিবেদন করেন গিরিধারীলালকে। এরপর চরণামৃত জ্ঞানে সবটুকু খেয়ে ফেলেন। এদিকে বিজয়বর্গীয় ভয়ে কাঁপতে থাকেন। কারণ দুধে রানা মিশিয়ে দিয়েছেন বিষ। কিন্তু কৃষ্ণভক্তির জেরে বিষ অমৃত হয়ে যায়। মীরা কৌটো খুলে সাপটাকে মালা ভেবে গলায় ধারণ করে। মীরার প্রতি এরকম অনেক রকম অত্যাচার শুরু হয়। কিন্তু প্রতিবারই কৃষ্ণ মীরাকে বাঁচিয়ে দেয়।
মীরা সেই শৈশব থেকে শ্যামকে ভালবেসেছে। গিরিধারীলালের পুজোয় দেহমন সব সমর্পণ করেছে। ওই কালো রূপে মন মজেছে। কালো রূপে মগ্ন মীরা ব্যাকুল, চর্মচক্ষুতে কৃষ্ণের দর্শনে। সিংহাসনে শ্যমকে বসিয়ে কখনও হাসছেন, কখনও কাঁদছেন। দু'জনে শুধু মন দেওয়া-নেওয়া। ভক্ত আর ভগবানের মাঝে সেতুবন্ধন হলো মীরার ভজন। এরপর অনেক ধরনের অত্যাচার করেও রানা পরিশ্রান্ত, তখন মীরাকে চিতোর ত্যাগ করার আদেশ দিলেন।
কৃষ্ণকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাতের অন্ধকারে কাউকে কিছু না বলে মীরা দ্বারকার পথে পা বাড়ালেন। আসলে ভক্তিতেই মুক্তির সন্ধান। মীরা আজ সিদ্ধা। মীরার শরীরে কৃষ্ণপ্রেমের পূর্ণ প্রকাশ। মীরা আজ গিরিধারীলালের প্রেমিকা। কলঙ্কের ভাগী হয়ে ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিলেন মীরা। শুধু নিজের প্রেমকে বিসর্জন দেবেন না বলে।
কৃষ্ণলীলার স্বরূপ সন্ধানে শুধু রাধা নয়, মীরার আত্মনিবেদনের নির্যাসকে আত্মস্থ করতে হয়। আর এখানেই অমরত্ব পেয়েছেন মানবী মীরাবাঈ।
সৌমেন সুর: রাস্তা দিয়ে বিয়ের শোভাযাত্রা দেখে রাজকুমারী চোখের পলক পড়ে না। সোজা মায়ের কাছে আবদার করে, 'মা আমার বর কই।' মা পড়লেন মহাফ্যাসাদে। কী করে মেয়েকে শান্ত করাবেন। অবশেষে মেয়েকে ধরে সোজা ঠাকুরঘরে এসে গিরিধারী লাল কে দেখিয়ে বলেন,' এই যে তোমার বর মেঘে তারিখে দেখে আপ্লুত হয়ে যায়।'
এরপর স্বয়নে স্বপনে কৃষ্ণ ছাড়া অন্য কিছু ভাবনা নেই মীরার। মীরাবাঈ কৃষ্ণের প্রিয়তমা মহাসাধিকা। চির জনমের মতো কৃষ্ণকে স্বামীরূপে বরণ করে নেয় মীরা। তার জগৎজুড়ে শুধু শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যার সৃষ্টি সেই গিরিধারী লাল তার স্বামী, মীরার একমাত্র ইষ্ট হয়ে উঠল কানাহাইয়া।
১৫১৬ সালে ১৩ বছর বয়সে মীরার বিয়ে হয় মেবারের রাজা রানা শঙ্খের ছেলে ভোজরাজের সঙ্গে। কিন্তু মীরার বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। তিনি হৃদয়ে শ্রী কৃষ্ণের আসনে কাউকে বসাতে পারেননি। চললো মানসিক অত্যাচার। নির্দেশ এলো রাজ পরিবারের ঐতিহ্য মেনে চলতে।
কিন্তু মীরা তার সিদ্ধান্তে অটল। কৃষ্ণের ভজন, পূজন ছাড়া তার অন্যকিছু ভালো লাগে না। এর মধ্যে মীরার জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তার স্বামী মোঘলদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়। এতে মীরার জীবনে যা কিছু ছিল অনিত্য সব শেষ। একমাত্র চিরনিত্য রইলেন গিরিধারীলাল। সব বাঁধা ছিন্ন করে মীরা কৃষ্ণ প্রেমে নিজেকে সঁপে দিলেন।
রাজ অন্তপুরে মীরা যখন সাধন ভজনে বাধাপ্রাপ্ত হলেন, তিনি তখন নিকটবর্তী এক দেবালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানেই সাধনায় মগ্ন হলেন। মীরার মন চঞ্চল হয়ে উঠলো। এ রাজ্যে কেউ তাকে চায় না। একমাত্র আশ্রয় তার গিরিধারীলাল। তার জন্য অন্য কোনো আশ্রয়ের প্রয়োজন নেই। আপন মনে ধ্যান করতে করতে কখন যেন একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। (চলবে)
সৌমেন সুর: হিমালয় (Himalaya) থেকে তপস্যা শেষ করে দক্ষিণেশ্বরে ফিরেছেন সাধিকা গৌরী মা (Gouri Maa)। ঠাকুর রামকৃষ্ণের (Ramkrishna) খুব আনন্দ। ঠাকুর গৌরী মা-কে খুব স্নেহ করেন, ভালবাসেন। একদিন ঠাকুর দেখলেন গৌরী মা ভোরবেলায় ফুল তুলছেন। সেই সময় ঠাকুর ওকে বিধান দেন, 'গৌরী তোর ঢের সাধন ভজন হয়েছে। এবার তোর তপস্যাপূত দেহ মায়েদের সেবায় নিবেদন কর। এখানকার মায়েদের বড় কষ্ট। ওদের বাঁচা গৌরী।' প্রথম পর্বের পর...
এদিকে শ্রীশ্রী ঠাকুরের দেহত্যাগের পর সারদা মায়ের শোক নিবারনের জন্য ভক্তরা তাঁকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য বৃন্দাবনে নিয়ে আসেন। এখানে মায়ের সঙ্গে গৌরী মায়ের সাক্ষাৎ হলে, সারদা মা বলেন, 'গৌরী দাসী ঠাকুরের কথা তোর মনে আছে তো?' গৌরী মা উত্তরে বলেন, 'ঠাকুর যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা কি আমার দ্বারা সম্ভব? তার চেয়ে এই বেশ ভালো আছি জপ করবো আর তোমার সেবা করবো।' সারদা মা গৌরী মা-কে বোঝালেন, 'ঠাকুরের কথায় সুয্যি ওঠে, চন্দ্রিমা ওঠে আবার অস্ত যায়। তাঁর কথার মানে তুমি গভীরভাবে চিন্তা করো। গৌরীদাসী তুমি ঠাকুরের নির্দিষ্ট করা মঙ্গলঘট। এই ঘটেই প্রতিষ্ঠা হবে নারী সমাজের সর্ব শুভ সংকল্প।'
মায়ের এই অভয়বাণীতে গৌরী মায়ের মনে জাগিয়ে তুললো আত্মবিশ্বাস ও নির্ভীকতা। স্থির করলেন ঠাকুরের সংকল্পকে বাস্তবে রূপায়ন করবেন। এরপর কলকাতার অনতিদূরে গ্রাম্য পরিবেশ ব্যারাকপুরে দেড় বিঘা জমির উপর গড়ে তুললেন শ্রী শ্রী সারদেশ্বরী আশ্রম। এই কন্যা আশ্রমের প্রথম কন্যা হলেন দুর্গাপুরী মা। মা সারদা এলেন আশ্রম দেখতে এবং দেখে ভীষণ খুশি হলেন।
প্রথমদিকে ২৫ জন বিধবা ও বালিকা বাস করতেন। আশ্রমে বেদান্ত, গীতা, শাস্ত্র ইত্যাদি পাঠ হতো। শিল্প শিক্ষাও দেওয়া হতো। এই শিক্ষায় মজবুত হয়ে তাঁরা যেন স্ব-স্ব উপার্জনে বহাল থাকতে পারে তাঁর চেষ্টা করা হতো। স্বামীজি বার দুয়েক এসেছেন এই আশ্রমে।আশ্রমের ক্রিয়াকলাপ তাঁকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে এই আশ্রম বেড়ে ওঠে। একসময় ২৫ জন শিক্ষিকা ও ৩০০-র মতো ছাত্রীর সমাগম হয় এই আশ্রমে।
কথা হলো শ্রী রামকৃষ্ণের নির্দেশে গৌরী মা অসাধ্য সাধন করলেন। নারীজাতির মঙ্গল সাধনে তাঁর অপরিসীম কর্মকাণ্ড সমাজে একটা মাইলস্টোন।
সৌমেন সুর: হিমালয় (Himalaya) থেকে তপস্যা শেষ করে দক্ষিণেশ্বরে ফিরেছেন সাধিকা গৌরী মা (Gouri Maa)। ঠাকুর রামকৃষ্ণের (Ramkrishna) খুব আনন্দ। ঠাকুর গৌরী মা-কে খুব স্নেহ করেন, ভালবাসেন। একদিন ঠাকুর দেখলেন গৌরী মা ভোরবেলায় ফুল তুলছেন। সেই সময় ঠাকুর ওকে বিধান দেন, 'গৌরী তোর ঢের সাধন ভজন হয়েছে। এবার তোর তপস্যাপূত দেহ মায়েদের সেবায় নিবেদন কর। এখানকার মায়েদের বড় কষ্ট। ওদের বাঁচা গৌরী।'
গৌরী মা শুনে বললেন, 'বেশ তুমি তাহলে ক'টা মেয়ে দাও। আমি ওদের হিমালয়ে নিয়ে গিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে তারপর কাজ করছি।' ঠাকুর বাধা দিয়ে বললেন, ওটি হবে নি তোকে টাউনে বসে কাজ করতে হবে।' কথাটা শুনে গৌরী মা বিস্মিত হলেন। ভাবলেন কলকাতার কলকোলাহলে কী করে কাজ করবে! ঠাকুরের পা জড়িয়ে মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, 'ঠাকুর তোমার নির্দেশ আমি অমান্য করতে পারবো না। তবে এই নির্দেশ আমি সঠিকভাবে পালন করতে পারবো না। আমি তুমি ক্ষমা করো ঠাকুর, ক্ষমা করো।'
শ্রীরামকৃষ্ণ গভীর ভাবে জবাব দিলেন, 'তোর ঘাড় পালন করবে। আজ থেকে তোর সাধনার ঘরে কুলুপ এঁটে দিলুম। চাবি রইলো আমার কাছে। আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন সে ঘর পাবি।' অগত্যা বগুরু আদেশ মাথায় নিয়ে গৌরী মা শুরু করে দিলেন কাজ। তবে কাজটা অত সহজ ছিল না। ঘটনাচক্রে তাঁকে বৃন্দাবন যেতে হয়। এদিকে ঠাকুর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অসুস্থ ঠাকুরকে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে নিয়ে আসা হয়। (চলবে)
পঞ্চায়েত ভোটের আগেই ফের রাজ্যে দুষ্কৃতী তাণ্ডব। এবার ঘটনাস্থল নদিয়ার কৃষ্ণনগরের (Krishnanagar) নগেন্দ্রনগর। শুক্রবার রাতে দুষ্কৃতী তাণ্ডব ও বোমাবাজির (bombing) জেরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ একদল দুষ্কৃতী ওই এলাকায় বোমাবাজি করে ও বেশ কয়েকটি বাইক ভাঙচুর চালায়। যার জেরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কোতয়ালী থানার পুলিস (police)। অভিযোগ, পুলিসের সামনেও চলে বোমাবাজি। পরে বিশাল পুলিসবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অন্যদিকে, ঘটনার পরেও এলাকায় তাজা বোমা (bomb) পড়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধার ৩টি তাজা বোমা।
কৃষ্ণনগর শহর যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কৌশিক বিশ্বাসের দাবি, শুক্রবার এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল। সেই সময় বেশকিছু দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় ও বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। অবশ্য পাল্টা হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ওই তৃণমূল নেতা আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষের জেরে মাঝে পড়ে আতঙ্কিত এলকাবাসী। পুলিসি নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
একদিকে যেখানে টেট উত্তীর্ণদের বিক্ষোভ, আন্দোলনে রণক্ষেত্র কলকাতার রাস্তা, অন্যদিকে এই আবহেই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে নামলেন স্বয়ং তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার তিন দিনের নদিয়া (Nadia) সফরের দ্বিতীয় দিনে দলীয় সভায় কার্যত দলের পুরনো ইমেজ ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হলেন তিনি। এদিন সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারের একাধিক নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শোনা গেল তাঁর গলায়। সেই সঙ্গে ফের সুর চড়ালেন সিএএ (CAA) প্রয়োগের বিরুদ্ধে। 'নির্বাচন আসলেই 'ক্যা' 'ক্যা' রব ওঠে, আপনাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। নির্বাচন আসলেই মাথায় 'এনআরসি' ঢোকে, মতুয়া, রাজবংশী, পাহাড়িদের নিয়ে বাংলা ভাগের চেষ্টা করে! বাংলায় 'ক্যা' করতে কখনই দেব না আমরা। আপনাদের ভোটেই মোদী (Narendra Modi) প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ভোটাধিকার না থাকলে আমাদের জিতিয়েছেন কী করে?' সিএএ প্রসঙ্গে এভাবেই কেন্দ্রের বিরোধিতায় মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।
অপরদিকে, অন্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও এককথায় তোপ বর্ষণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'বিজেপি বড় বড় কথা বলছে, আর তার দুই শাগরেদ বাম-কংগ্রেস। কিচ্ছু করে না। ইলেকশনের সময় রাম বাম শ্যাম, জগাই-মাধাই-গদাই এক হয়ে যায়। এ ওর কাছ থেকে কানাঘুষো করে, নানা রকম আদান প্রদান চলে, রাজনীতির পাশাপাশি আরও কিছু লেনদেন চলে,' বললেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে 'ব্যাপম' কেসের প্রসঙ্গ তুলে মমতার মন্তব্য, 'কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে! মধ্যপ্রদেশে ব্যাপমে কতজন গ্রেফতার হয়েছে জানতে চাই। ইচ্ছা করে করে ইলেকশনে যাতে কাজ করতে না পারেন তাই আমার অফিসারদের ভয় দেখাচ্ছে। এরা তৃণমূলের মান সম্মান নষ্ট করতে চাইছে।'
এরই পাশাপাশি, তৃণমূল কংগ্রেসকে 'মানবিক' সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে 'দানবিক' সরকার বলে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর। তবে এদিন আবারও মতুয়া মন পেতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াস এবং সেই সঙ্গে মুকুল রায়কে ফের গুরুত্ব প্রদানকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। এবার আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর এই স্ট্র্যাটেজি তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কের পালে কতটা হাওয়া লাগায় সেটাই এখন দেখার।
ভাসানের (Immersion) সময় মদ খাওয়াকে ঘিরে বচসা, তর্কাতর্কি! দুষ্কৃতীদের দায়ের কোপে মৃত দমকল কর্মী (Fire Brigade Staff) তুহিনশুভ্র ঘোষ।। কৃষ্ণনগরের (Krishnanagar Incident) রানীনগর এলাকায় বুধবার রাতের এই ঘটনায় বৃহস্পতিবারও চাঞ্চল্য। এই দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সরব স্থানীয় মানুষ থেকে মৃতের পরিবার। প্রত্যেকেই প্রশাসনিক গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছে। অত্যাধিক রক্তক্ষরণের কারণে ওই দমকল কর্মীর মৃত্যুর হয়েছে। পরিবারকে জানান চিকিৎসকরা। ঠিক কী হয়েছিল?
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রানীনগর চৌমাথা মোড়ে কয়েকদনের সঙ্গে মদ্যপান নিয়ে বচসা বাঁধে। সেই সময় ভাসানের প্রস্তুতি চলছিল। আমাদের দিকে ওরা দা নিয়ে তেড়ে এসে হামলা চালায়। আমার মুখে আঘাত লাগলেও প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসি। কিন্তু তুহিন ওদের মধ্যে পড়ে যায়। ওর পায়ে কোপ মেরেই পালায় অভিযুক্তরা। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় তুহিনকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও শেষরক্ষা হয়নি। যারা এই কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে।
নিহতের ভাই জানিয়েছে, এলাকায় এই ধরনের ঘটনা বাড়লেও প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। এক স্থানীয় জানান, এই এলাকায় প্রায় মদের আসর বসে। আমাদের পরিবার নিয়ে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। এই ঘটনা যখন ঘটেছে, আমরা বিসর্জন দেখছিলাম। পরে পুলিস আসলে আমরা যে যার বাড়িতে ঢুকি।
রোজভ্যালি (rosevalley) বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও, নাম পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে কাজ চালাচ্ছে রোজভ্যালি, এমনই অভিযোগ আমানতকারীদের। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে নদিয়ায় (Nadia)। জানা যায়, রোজভ্যালির আমানতকারীদের টাকা ফেরত না পাওয়ায় একটি আলোচনাসভা বসে। ঘটনাস্থল নদিয়ার কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠ। নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তের রোজভ্যালির আমানতকারীরা একত্রিত হয়ে একটি আলোচনা সভা করেন সোমবার। সেখান থেকে আমানতকারীরা জানান, রোজভ্যালির যে সমস্ত জমি, জায়গা ও হোটেল রয়েছে সেগুলি আইনের চোখে ফাঁকি দিয়ে তাঁদের ব্যবসা চলাচ্ছে।
কিন্তু রোজভ্যালি পলিসির আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
আমানতকারীদের আরও দাবি, রোজভ্যালির বিভিন্ন সম্পত্তি অন্যজনের নামে চালানো হচ্ছে। অথচ নদিয়া জেলা-সহ বিভিন্ন জেলার আমানতকারীরা তাঁদের বকেয়া টাকা ফেরত পাচ্ছে না। তারা আরও জানান, রোজভ্যালির আমানতকারীদের ম্যাচিওর হওয়ার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আগামীদিন তাঁরা পথে নেমে বৃহত্তর আন্দোলন করবেন। তবে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার এই বিষয় নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, বলেই তাঁদের অভিযোগ। কেন্দ্র এবং রাজ্য বোঝাপড়া করে তাঁদের ব্যবসা করতে দিচ্ছে।
এমনকি তাঁদের বিস্ফোরক মন্তব্য, ইডি, সিবিআইকে প্রতিমাসে ১০ লক্ষ করে টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে রেখেছে রোজভ্যালির কর্মকর্তারা। আমানতকারীদের স্পষ্ট দাবি, অবিলম্বে গ্রাহক থেকে শুরু করে সমস্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। না হলে আগামীদিনে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
প্রসূন গুপ্ত: এই মুহূর্তে সংসদে সেরা বাগ্মী সাংসদের মধ্যে অন্যতম তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। তাঁর এবং শশী থারুরের বক্তব্য শুনতে সরকারি দলের সাংসদের ভিড় থাকে লোকসভায়। ইংরাজিতে চোস্ত এই দুই সাংসদে যুক্তি-তক্কের জুড়ি মেলা ভার। কৃষ্ণনগরের সাংসদ উচ্চ শিক্ষিতা, বিদেশ থেকে বিশেষ পড়াশুনো এবং সর্বোপরি দিল্লির রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন অনেকদিন। এক সময়ে কংগ্রেসের বা রাহুল গান্ধীর সহযোগী ছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন এবং ২০১৬-তে করিমপুর থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয়পাত্রী হিসাবে তাঁর একটা বিশেষ স্থান ছিল দলে। ২০১৯-এ মাস্টারস্ট্রোক দেওয়ার মতো মমতা তাঁকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেন এবং মহুয়া জিতেও আসেন। মনে রাখতে হবে এই জয় মোটেই সহজ কাজ ছিল না, কারণ সেবার ১৮টি আসন জয় করেছিল বিজেপি এবং কৃষ্ণনগরেও ভালো জায়গায় ছিল গেরুয়া দল। কিন্তু মহুয়া তাঁর নিজস্ব পরিচিতি এবং সামাজিক অবস্থানকে ব্যবহার করে ভোটারদের কাছে বিশেষ বার্তা দিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছেন।
এ হেন মহুয়া অনেক সময়ে প্রেসের সামনে বা নিজের পেজে নানা মন্তব্য করে জনমানসে জনপ্রিয় হয়েছেন। কখনও আবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। কয়েক ডজন ফ্যান ক্লাব আছে তাঁর নামে। কয়েক মাস আগে তিনি কালীপুজো নিয়ে কিছু মন্তব্য করে বিজেপির রোষানলে পড়েন। ওই সময়ে দল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি কারণ ধর্মের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মহুয়া কিন্তু তাঁর মন্তব্য থেকে এক চুলও সরে যাননি।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের কর্মিসভা থেকে তিনি দলনেত্রীর হালকা ধমক খেয়েছেন। মমতা পরিষ্কার জানিয়েছেন, মহুয়ার প্রাক্তন বিধানসভা কেন্দ্র করিমপুর, যা কিনা নদিয়াতে হলেও লোকসভা হিসাবে আবু তাহেরের মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে পড়ছে। অতএব মহুয়া তাঁর নিজের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর নিয়েই যেন থাকেন। করিমপুরের দায়িত্ব আবু তাহেরের। স্বাভাবিক ভাবেই ভরা জনসভায় থতমত খেয়ে যান মহুয়া।
পরে তিনি তাঁর পেজে লেখেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদেই তিনি আজ একটা জায়গা করে নিয়েছেন। অতএব তাঁর নির্দেশ মেনে চলবেন কিন্তু করিমপুরের ভোটার যেহেতু তিনি, অতএব সেখানেও তিনি থাকবেন। প্রশ্ন উঠেছে মহুয়া কি বিদ্রোহী, নাকি অভিমানী বার্তা দিলেন। মহুয়া ঘনিষ্ঠরা অবশ্য বলেছে, এটা খারাপ কি বার্তা, তিনি তো দলনেত্রীর আদেশ মেনেই তাঁর পেজে মন্তব্য করেছেন। বাকি বিষয়টি কোথায় যায় সেটাই দেখার।