বন্ধ্যা মাটির বুক চিরে ফসল ফলানোর স্বপ্নই দেখতেন পূর্ব বর্ধমানের নিমদহ পঞ্চায়েতের উত্তরপাড়ার রূপ সনাতন ঘোষ। মাটি তার বন্ধ্যাও ছিল না। বরং অকাল বৃষ্টিতে ছিল অতিরিক্ত সিক্ত। ২ বিঘা জমিতে সদ্য বোনা আলুর বীজগুলো অকালে মরত। সেই মরণ দেখার চেয়ে নিজের মৃত্যুটা সহজ মনে হল কৃষকের কাছে। ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে গলায় ফাঁস দেন কৃষক রূপ সনাতন। ধরা গলায় নাবালক ছেলে দেয় বাবার মৃত্যুর খবর।
প্রকৃতি বিমুখ, সঙ্গ দেয়নি সরকার। একের পর এক কোপ বসিয়েছে সারের কালোবাজারি, বীজের কালোবাজারি, মধ্যস্থতাকারীদের কারচুপি । আর কত সহ্য করবে কৃষক? মরণের পরও প্রশাসনের মারপ্যাঁচে ধামাচাপা পড়ে কৃষকের মৃত্যুর আসল কারণ!
কী ক্ষতিপূরণ দেয় সরকার? সেই ক্ষতিপূরণের আশায় বাঁচা যায়? মৃত্যুটা বোধহয় সত্যিই এর চেয়ে অনেক সহজ! কারও কারও মৃত্যুটা হয় সশব্দে। কিন্তু গোটা রাজ্যের কৃষকরা প্রতিদিন মনে মনে মরছে। কেউ কি রাখে না সেই খবর? তবু কেউ কি ছোঁয়াবে না জিয়ন কাঠি?
একদিকে শীতকাল অন্যদিকে বৃষ্টি। কারও কাছে বিষয়টি রোমান্টিক হলেও আবার কারও কাছে চিন্তার। নিম্নচাপের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টি, যার জেরে মাথায় হাত কৃষকদের। প্রকৃতি সহায় হলে এই সময় ঘরে উঠত নতুন ধান। সেই সুবাসে ভর করে আসতেন মা লক্ষ্মী। কিন্তু তার আগেই মাথায় বাজ ফেলল মিগজাউম। অকাল নিম্নচাপে বানভাসী এই রাজ্যের কৃষি।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের জেরে বাংলায় বেশ কয়েকটি জেলায় দিনভর অঝোর বৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষীদের বোনা আমন ধান জলের তলায়। কৃষকদের দাবি আবহাওয়ার সতর্কবার্তা পেয়ে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তড়িঘড়ি কাচা ধান কেটে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সেই ধান রোদে না শুকাতে পেরে ক্ষতির মুখে। শুধু তাই নয় এখনো মাঠে রয়েছে পাকা ধান, শুরু হয়েছে আলু লাগানো, বৃষ্টির জন্য নতুন করে আলু লাগানোর কাজ পিছিয়ে যাবে এবং আলুর জমিতেও জল জমায় আলুবীজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা।
এই সময়ে জ্যোতি, চন্দ্রমুখী, সুপারসিক্স, কে বাইস সহ বিভিন্ন প্রকারের আলু চাষ করা হয়। অনেকেই বাড়িতে আলুর বীজ ও সার কিনে রেখেছেন। নিম্নচাপের বৃষ্টির কারণে জমি স্যঁতস্যঁতে থাকার কারণে মাঠে নাঙ্গল দিতে দেরি হবে। ফলে দেরিতে হবে আলুচাষ। সময়মতো না লাগানোর ফলে উৎপাদন কম হবে। যার জেরে চিন্তায় ঘুম ছুটেছে কৃষকদের।
অসময়ে বৃষ্টির জন্য়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ধান চাষীরা ও আলু চাষীরা। এই বছরে অকালে বৃষ্টিতে কৃষকেরা হয়তো ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু ঠিক ভাবে বিক্রয় করতে পারবেন তো? সরকার আদৌ কি কোনোভাবে সাহায্যের হাত বাড়াবে? আর সেই সহযোগিতার অপেক্ষায় রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।
শিক্ষা ও রেশন দুর্নীতির পর এবার অভিযোগ উঠেছে শস্যবিমা দুর্নীতির। গ্রামের প্রকৃত কৃষকদের জমির পরিমাণ কমিয়ে ভুয়ো কৃষক হিসেবে শস্যবিমা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের হাউসিবাদ গ্রামের এমন ঘটনা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে কৃষি দফতর। অভিযোগ, একটি গ্রামের ২২ জন ভুয়ো কৃষক হিসাবে মোটা অঙ্কের বিমার টাকা পেয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত কয়েকবছর থেকেই এ রাজ্যের কৃষকরা খারিফ (বর্ষাকালীন ফসল) ও রবি (শীতকালীন ফসল) মরসুমে নিজেদের শস্যবিমা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই দুটি মরসুমে পৃথকভাবে নিজেদের চাষযোগ্য জমির বিবরণ সহ শস্যবিমা করার জন্য ব্লক স্তরের কৃষি দফতরে আবেদন জানান কৃষকরা। সেই আবেদনের তথ্য যাচাই করে কৃষি দফতর তা পাঠিয়ে দেয় বিমা সংস্থার কাছে। আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারনে ফসলহানী হলে সরাসরি বিমা সংস্থা কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিমার টাকা জমা করে।
চলতি বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় বাঁকুড়ার ছাতনায় খারিফ মরসুমে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কারণ বৃষ্টির অভাবে বহু জমিতে ধান রোপণ করতে পারেননি ওই ব্লকের কৃষকরা। সেই কারণে সম্প্রতি বিমা সংস্থার তরফে ছাতনা ব্লকের কৃষকদের শস্যবিমার টাকা পাঠানো শুরু হয়েছে। আর তাতেই উঠে এসেছে বড়সড় বেনিয়মের অভিযোগ। ছাতনা ব্লকের হাউসিবাদ গ্রামের কৃষকদের একাংশের দাবি, গ্রামের প্রকৃত কৃষকরা যে পরিমাণ জমির তথ্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন তা ইচ্ছাকৃত ভাবে কমিয়ে দিয়েছে কৃষিদফতর। অভিযোগ, গ্রামের যে সমস্ত কৃষকদের নিজস্ব জমি নেই তাঁদের অ্যাকাউন্টে মোটা মোটা অঙ্কের বিমার টাকা ঢুকেছে।
ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে স্থানীয় বিডিও, জেলা শাসক এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ পেতেই তদন্ত শুরু করেছে কৃষি দফতর।
রুটি রুজির টানে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে চাষ। আর ফসল ফলার আগেই ক্ষতির মুখে গোপীবল্লভপুরের বেলদুয়ার গ্রামের চাষিরা। রোগাক্রান্ত হয়ে নষ্ট হতে বসেছে চাষিদের বিঘার পর বিঘা শশা চাষ।
গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখা নদীর উর্বর পলি সমৃদ্ধ গ্রাম হল বেলদুয়ার। এই গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার কৃষি নির্ভর।বছরভর নানা ধরনের সবজি থেকে শুরু করে ধান চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এবছর আউষ ধান তোলার পর জমিতে শশা চাষ করেই সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন চাষিরা। শশা চাষের ফলন ফলার আগেই গাছে রোগ আক্রমণ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় একশো বিঘার বেশি জমির শশা গাছ হলদেটে হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও জমি আবার ঝলসে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করে চাষে ক্ষতি হওয়ায় মাথায় হাত চাষিদের।
বেলদুয়ার গ্রামের শশা চাষিদের অভিযোগ, কোম্পানির বীজ থেকেই রোগ ছড়িয়েছে। নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করেছে বীজ কোম্পানি। অপরদিকে চাষিদের আরও অভিযোগ, সবজি চাষের জন্য হর্টিকালচার দফতরে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। তাই চাষিদের দাবি শুধু ধান, সরিষার মতো চাষ নয়, সবজি চাষেও বীমা চালু করুক প্রশাসন।
মুর্শিদাবাদের নওদায় জমি বিবাদের জেরে চলল গুলি। ঘটনায় গুরুতর আহত এক কৃষক। রবিবার নওদা থানার অন্তর্গত সাবাতলা এলাকাতে জেলের রহমান নামে ওই কৃষককে গুলি করা হয়। সূত্রের খবর, এদিন ভোরবেলায় জমিতে সবজি আনার সময় ওই কৃষককে লক্ষ্য় করে পর পর চার রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। সেই সময় গুলির আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই ব্য়াক্তি। যদিও এ ঘটনায় প্রতিবেশী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে আহতের পরিবার।
জানা গিয়েছে , বেশ কয়েক বছর ধরে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি জায়গা নিয়ে বিবাদ চলছিল জেলের রহমানের। জোর করে জেলের রহমানের জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। আর সেই বিবাদের কারণেই এদিন রাত দুটো নাগাদ জমিতে বেগুন তুলতে গেলে ওই জেলার রহমানকে পরপর চার রাউন্ড গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই কৃষককে।
বর্তমানে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই কৃষক চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে কি কারণে এই গুলি করা হল তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস প্রশাসন।
ফের বজ্রঘাতে মৃত্যু (Death) হল এক কৃষকের (Farmer)। শনিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জয়নগর থানার কৃপাখালি গ্রামে। পুলিস সূত্রে খবর, মৃতের নাম শৈলেন নস্কর (৪৯)। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে জমিতে ধান রুইতে বেরিয়েছিলেন শৈলেন নস্কর। এদিন সকাল থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে প্রচন্ড বজ্রপাত হচ্ছিল। সেই সময় পরিবারের কয়েকজন মাঠে আসতেই হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হয়। চোখের সামনেই বজ্রাঘাতে শৈলেন বাবু মাঠের মধ্যে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে পদ্মেরহাট গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানের চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
এর আগেও বহুবার বজ্রঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগেই বৃষ্টির মধ্যে মাঠে গরু, ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন এক ব্যক্তি। এছাড়াও সম্প্রতি বৃষ্টির সময় বাড়ির উঠোনে যেতেই বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার।
দক্ষিণবঙ্গে (South Bengal) বৃষ্টির দেখা তেমন না মিললেও উত্তরবঙ্গে (North Bengal) অবিরাম বৃষ্টি চিন্তায় ফেলেছে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের (Farmers)। পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদ না থাকায়, ভুট্টা শুকানো যাচ্ছে না। সেই নিয়েই সমস্যায় পড়ছেন ভুট্টা চাষীরা।
কয়েকদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টির ফলে রোদের দেখা নেই দার্জিলিং জেলায়। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় খড়িবাড়ি ব্লকের ভুট্টা চাষীরা মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন। রোদের অভাবে ভুট্টা না শুকোনোয় মহাবিপাকে পড়েছেন চাষীরা। কিন্তু চাষ বাসের এই অবস্থা হলে সেই ঋণ কী করে পরিশোধ করবেন চাষীরা সেই চিন্তায় তাঁদের রাতের ঘুম উড়েছে।
এক বিঘে জমিতে ভুট্টা চাষে কৃষকদের খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এ বছর খড়িবাড়ি ব্লক জুড়ে প্রায় দুইশ একর জমিতে ভুট্টা চাষীরা ভুট্টা লাগিয়েছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদের অভাবে সবাই একই সমস্যায় পড়েছেন। রোদের তেজ না থাকার জন্য ভুট্টা শুকানো যাচ্ছে না, এর ফলে ভুট্টা পচে যাচ্ছে, কালো হয়ে যাচ্ছে। ভুট্টার থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষীদের।
এই সংকট সময় কী করে ঋণ পরিশোধ করবেন তাঁরা? তাই এই কঠিন পরিস্থিতিতে চাষীরা সরকারের কাছে আবেদন রেখেছেন যদি কোন রকম ভাবে তাদের কৃষি ঋণ মুকুব করা যায় বা সরকারি সহযোগিতা করা যায় তাহলে খুব উপকৃত হবেন তাঁরা।
খড়িবাড়ি ব্লকের কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়িবাড়ি ব্লকে মোট ১৭৫০ হেক্টর জমিতে চলতি বছরে ভুট্টা চাষ হয়েছে। খড়িবাড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক ঠাকুরদাস কার্জি বলেন, যেহেতু শস্য বিমার আওতায় ভুট্টা পরে না তাই এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বিমার ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা আবেদন করলে বিষয়টি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান হবে।
হরিয়ানার (Hariyana) জলভরা ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে একদল কৃষক (Farmer), ধান বুনছেন। তাঁদের ভিড়েই এক লম্বা ছিপছিপে সুদর্শন যুবক, মুখে কাঁচা-পাকা দাড়ি, পরনে সাদা টি-শার্ট, হাঁটু পর্যন্ত গোটানো ট্রাউজার, একমনে কথা বলছেন কৃষকদের সঙ্গে, ওঁদের সঙ্গেই ধানও বুনছেন। তিনি আর কেউ নন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। শনিবার সকালটা এভাবেই সোনিপাতের কৃষকদের সঙ্গে, তাঁদেরই একজন হয়ে কাটালেন রাহুল।
শুক্রবারই গুজরাট হাই কোর্টে বড় ধাক্কা খেয়েছেন রাহুল। কিন্তু শনিবার সকালে কংগ্রেস নেতার চোখে মুখে ছিল না দুশ্চিন্তার লেশ। রাজধানী থেকে শিমলা যাচ্ছিলেন সোনিপতের মদিনা গ্রামে নেমে পড়লেন হঠাৎ, ট্র্যাক্টর চালালেন, শুনলেন কৃষকদের সুখ দুঃখের কথা।
সাংসদ পদ বাতিল হওয়ার পর বেশ কয়েকবার জনসংযোগের জন্য এমন 'মাটির মানুষ' ইমেজ প্রকাশ্যে এসেছে রাহুলের, মার্কিন সফরে গিয়ে ট্রাকচালকদের সঙ্গেও কাটিয়েছিলেন গোটা দিন।
ক্ষেতের জমিতে কাকতাড়ুয়া (Scraecrows) তো আপনারা দেখেছেনই। কিন্তু কখনও ক্ষেতে ভালুক (Bear) দেখেছেন কি? তবে এবারে এমনটাই দেখা গিয়েছে। আখের ক্ষেতে বানরের (Monkey) উপদ্রব। তাই এবারে এক নয়া পন্থা নিল আখচাষিরা। ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের (UttarPradesh) লখিমপুর খেরির। সেখানে দেখা গিয়েছে, বানরের উপদ্রব কমাতে কৃষকরা নিজেই ভালুকের মতো সেজে ক্ষেতে বসে রয়েছেন। দেখা গিয়েছে, অবশেষে তাঁদের এই পন্থাই কাজে লেগেছে।
জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির জাহাননগর গ্রামে বানরের উৎপাতে নাজেহাল আখচাষিরা। বানররা প্রায়ই আখ ক্ষেতে এসে আখ গাছ নষ্ট করে দেয়। ফলে এতে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিল আখচাষিরা। কাকতাড়ুয়া লাগিয়েও কোনও কাজে দেয়নি। ফলে তাঁরা এক নতুন উপায় বের করেন বানর তাড়ানোর। তাঁরা নিজেরাই ভালুকের মত লোমশ পোশাক পরে বসে যায় আখের ক্ষেতে। এরপরেই অদ্ভূত কাণ্ড। ক্ষেতে ভালুক দেখে ভয়েই আসছে না বানর।
আখচাষিরা সংবাদমাধ্য়মে জানান, প্রায় ৪০-৪৫ টি বানর ক্ষেতে এসে আখ নষ্ট করে চলে যাচ্ছিল। তাই তাঁরা চার হাজার টাকা দিয়ে ভালুকের মতো পোশাক কিনেছে আখ ক্ষেত বাঁচানোর জন্য, যাতে বানরগুলো ভালুক দেখে আর না আসে আখের ক্ষেতে।
বিয়ে (Wedding) করার জন্য কনে খুঁজে পাচ্ছিলেন না, ফলে শোকে-দুঃখে আত্মহত্যা করে নেন এক ব্যক্তি। ঘটনাটি কর্নাটকের (Karnataka) হাভেরি জেলার। আশ্চর্যের হলেও এটাই সত্যি। শুক্রবার খবরে উঠে এসেছে যে, ৩৬ বছর বয়সি, পেশায় কৃষক কনে (Bride) খুঁজে না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিস সূত্রে খবর, ৩৬ বছর বয়সি সেই কৃষকের নাম মঞ্জুনাথ নাগানুর। তিনি প্রায় ৮ বছর ধরে বিয়ে করার জন্য কনে খুঁজছিলেন। কিন্তু কোনওমতেই তিনি নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে পাননি। জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়ার তাঁর সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি হতাশায় পরে নিজেকেই নিজে মেরে ফেলেন। জানা গিয়েছে, বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
আরও জানা গিয়েছে যে, তিনি আত্মহত্যা করার সময়ে এটি চিঠিও লিখে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই তাঁর সমস্ত দুঃখ-কষ্ট, হতাশা লিখে রেখে গিয়েছিলেন। এও লেখা ছিল যে, এত বছর ধরে তিনি কনে খুঁজে না পাওয়ায় তিনি তাঁর বাবা-মাকেও হতাশ করেছেন। ফলে অবশেষে নিজের প্রাণ শেষ করলেন বিষ খেয়ে। পুলিস সূত্রে খবর, ব্যাদাগী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এই ঘটনার তদন্ত চলছে।
নির্বাচনী প্রচারে নানারকম প্রতিশ্রুতির কথা দিয়ে থাকেন ভোট প্রার্থীরা। কিন্তু কোনওদিন শুনেছেন কৃষকের ছেলেকে বিয়ে করলে টাকা দেওয়া হবে পাত্রীকে, এমন প্রতিশ্রুতি দিতে? সম্প্রতি এ রকমই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘিরে হইচই পড়েছে কর্নাটকে (Karnataka Poll)। আগামী ১০ মে সে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই বিভিন্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি কোমর বেঁধে নেমেছে প্রচারে। তার মধ্যে অভিনব ভোটপ্রচারের জন্য চর্চায় উঠে এলেন জেডিএস (JDS Leader) নেতা এইচডি কুমারস্বামী (HD Kumarswamy)। সোমবার প্রচারে গিয়ে তিনি বলে বসেন, কৃষকদের ছেলেকে বিয়ে করলে তাঁর দল মহিলাদের ২ লক্ষ টাকা করে দেবে।
সোমবার কর্নাটকের কোলারে একটি জনসভায় অংশ নিয়েছিলেন জেডিএস নেতা তথা কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী। ‘পঞ্চরত্ন’ জনসভায় বক্তব্য রাখার সময়ই এই বিষয়ে বলেছেন তিনি। কুমারস্বামী ঘোষণা করেছেন, তার সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন প্রকল্প আনবেন তিনি। তাতে কোনও মহিলা যদি কৃষকের ছেলেকে বিয়ে করেন, তাহলে তাকে ২ লক্ষ টাকা দেবে সরকার। টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে কুমারস্বামী বলেছেন, “কৃষকদের ছেলেদের মেয়েরা বিয়ে করতে রাজি নয় বলে আমার কাছে পিটিশন জমা পড়েছিল। তাই কৃষকদের ছেলেদের বিয়েতে উৎসাহ দিতে এই ভাবনা। আমাদের ছেলেদের আত্মসম্মান বজায় রাখতেই এই উদ্যোগ।”
১০ মে কর্নাটকে অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা ভোট। ১৩ মে প্রকাশিত হবে সেই ভোটের ফল। ২২৪ আসনের এই বিধানসভার ভোটে লড়ার জন্য এখনও অবধি ৯৩ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জেডিএস।
অবিরাম বৃষ্টিতে মাথায় হাত আলু (Potato) চাষিদের। অন্যদিকে আলুর বন্ড নিয়ে কালোবাজারির চলছে, অভিযোগ কৃষকদের। শাসক দলের নেতারা বিক্রি করছে আলুর বন্ড চড়া দামে। ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে সেই দাম থেকে, এমনটাই অভিযোগ।
হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের দাপট। আর তাতেই জলের তলায় বিঘার পর বিঘা আলু ক্ষেত। চৈত্রের অকাল বৃষ্টিতে হাঁটু সমান জল আলুর ক্ষেতগুলিতে। দু-দিনের ঝড় বৃষ্টিতে জল জমে গিয়েছে আলু খেতে, আর তাই মাথায় হাত আলু চাষিদের। দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন সকলে। কারণ এভাবে জলের তলায় আলু বেশিদিন থাকলে আলুর পচন ধরতে পারে। যার ফলে বেশ ক্ষতির মুখেই পড়তে হবে আলু চাষিদের।
কৃষকদের অভিযোগ, আলুর বন্ড নিয়ে নেতারা কালোবাজারি শুরু করেছে। কৃষকদের দাবি, 'ডুয়ার্সের গয়েরকাটা, বানারহাট, ধূপগুড়িতে অবিরাম চলা বৃষ্টির ফলে বিঘার পর বিঘা আলু ক্ষেত এখন জলের তলায়। কৃষকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সেই আলুগুলিকে বাঁচাবার, কিন্তু জল বের করার কোন উপায় নেই। তাই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এমনকি আলু তুলে হিম ঘরে রাখা নিয়েও দুশ্চিন্তা। ৫০ বস্তার বেশি আলুর বন্ড দেওয়া হয়েছে, তাই বাড়তি আলু নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে কৃষকরা। তার উপরে এই কালবৈশাখীর ঝড় বৃষ্টি।' জানা গিয়েছে, এবছর ধূপগুড়ি এবং বানাহাট ব্লকে প্রায় ১ কোটি প্যাকেট আলু উৎপাদন হয়েছে। এদিকে দুই ব্লক মিলে আলু হিমঘরে রাখার ক্ষমতা ২৪ লক্ষ প্যাকেট। তবে বাকি আলুর কী ব্যবস্থা করবেন চাষিরা, উঠছে সেই প্রশ্ন।
তবে এই বিষয়ে কৃষি দফতরের আধিকারিক তিলোক বর্মন বলেন, 'আলুর বয়স ৮০ থেকে ৯০ দিন হয়েছে। এই ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার আগে আমরা চাষিদের সতর্ক করেছিলাম। সেই অনুযায়ী জল নিকাশি ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, যেহেতু আলুগুলি তোলার সময় হয়ে এসেছে তাই এক দুদিন জলের তলায় থাকলে তেমন কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে এই আশ্বাসেও কৃষকদের দুশ্চিন্তা কাটছে না।
মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী (Suicide) এক আলু ব্যবসায়ী। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী ওই ব্যক্তি। গোঘাট থানার অন্তর্গত লালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোঘাট থানার(Police) পুলিস। দেহটি উদ্ধার করে কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, মৃত(Death) আলু ব্যবসায়ীর নাম শ্যামল ঘোষ। তিনি গোঘাটের মান্দারণ গ্রাম পঞ্চায়েতের লালুকা গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার ওই আলু ব্যবসায়ী নিজের দোকানেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিস সূত্রে খবর।
মৃতের পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার শ্যামল ঘোষ দোকানে যাওয়ার আগে এক ব্যাক্তি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে দোকানে গিয়েছিলেন শ্যামল। তারপরই এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়। পরিবারের দাবি, আলু ব্যবসায় লাভ হয়নি শ্যমলের, যার জেরে বাজারের দেনাও শোধ করতে পারছিলেন তিনি। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার দেনা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। গত বছর কৃষকদের থেকে আলু নিয়েছিলেন শ্যামল। তবে টাকা দিতে পারেননি তিনি। সেই কারণে প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছিল। এই বছর আর কৃষকরা আলু দিতে চায়নি।
পরিবারের অভিযোগ, মহাজনদের থেকে মানসিক চাপ দেওয়া হয়েছে শ্যামলকে যার জেরেই এমন ঘটনা।
বাঘের হামলায়(Tiger Attack) মৃত এক কৃষকের। মধ্যপ্রদেশের খারগোন জেলার কুশিয়ালা গ্রামের ঘটনা। জানা গিয়েছে, মৃত(Death) কৃষকের নাম সন্তোষ। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীনই মৃত্যু হয় তাঁর। বন দফতর সূত্রে খবর, মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার চিরিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ থেকে বাঘটি মধ্যপ্রদেশের (Madhyapradesh) অম্বা দোচার এলাকায় ঢোকে। গ্রামের একটি ক্ষেতে বাঘটি বিশ্রাম নেয়। বাঘ দেখে উৎসাহী গ্রামবাসীরা ভিড় জমান সেই ক্ষেতের সামনে। এদিকে বাঘের খবর পেয়ে বনকর্মীরাও পৌঁছে যায় গ্রামে।
এরপরই বাঘটি গ্রাম ছেড়ে পালায়। কিন্তু বাঘের পিছু-পিছু কয়েক জন গ্রামবাসী ধাওয়া করে। কিছুটা যাওয়ার পর আবার একটি ক্ষেতে গিয়ে আশ্রয় নেয় বাঘটি। তখনই সন্তোষ নামের ওই ব্যক্তি বাঘের কাছে এগিয়ে যান। এমনকি বাঘের লেজ ধরে আলতো করে টানও দেন। বাঘ নিরুত্তাপ থাকলে লাঠি দিয়ে তাঁর লেজের মধ্যে আলতো ভাবে মারেন।
তারপর বাঘের পেটে খোঁচা দিতেই সন্তোষের ঘাড়ে লাফ মারে বাঘটি। ঘাড়ে থাবা বসিয়ে দেয়। এমনকি কামড় দিয়ে সন্তোষকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে। কিন্তু কোনওরকমে নিজেকে মুক্ত করে পালান সন্তোষ। এই অবস্থায় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তাঁর ঘাড় থেকে। গ্রামবাসীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীনই বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় সন্তোষের।
সৌমেন সুর: বাংলার কৃষক ও গণ আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গৌরবময় আন্দোলন তেভাগা আন্দোলন। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে তেভাগা কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল উৎপাদিত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের দাবিতে। বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণ কৃষক-জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম হল তেভাগা আন্দোলন। তাদের আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা, স্বঅধিকারের জন্য এই লড়াই। প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বের পর...
১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা মুছে ফেলে অবিভক্ত বাংলার গ্রামগঞ্জে কৃষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তেভাগার দাবিতে লড়াই করে। সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সংহতি ছিল তেভাগা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বহু চেষ্টা করেও এই ঐক্য নষ্ট করতে পারেনি জমিদার, জোতদার শ্রেণি। বন্দুক গল্পের রচয়িতা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। এই গল্পের গুণ্ডা চরিত্র রঘুরামকে ঘিরে চরিত্রের রূপান্তর ঘটেছে। তবে এই গল্পে আরও একটা দিক দেখানো হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি।
কৃষক নেতা রহমানের নেতৃত্বে গ্রামবাসী একত্রিত হয়েছে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছে। তারা ঠিক করেছে উৎপন্ন ফসলের একভাগ দেবে মহাজনদের আর দু'ভাগ নিজেদের গোলায় উঠবে। তাঁদের মেলবন্ধন ও সংগঠিত আন্দোলনকে নষ্ট করার জন্য জোতদার ফজল আলি ধর্মের দোহাই দিয়ে রহমানকে দূরে থাকতে বলে।
কিন্তু গ্রামবাসী এ কথায় কান দেয় না। আসলে এখানে ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, শোষক এবং শোষিতের বিষয়ে দুই শ্রেণি। আর এখানে রহমান-সহ গ্রামবাসীরা শোষিতের মধ্যে এক শ্রেণি। অন্যদিকে ফজল আলি, লোকনাথ সাহা, বৃন্দাবন পালেরা সবাই শোষক সম্প্রদায়ভুক্ত। ছলে বলে কৌশলে কৃষকদের সংঘবদ্ধ আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ভাঙতে পারেনি মহাজনের দল।
তখন শোষক শ্রেণি ভাড়া করা গুণ্ডা রঘুরামকে ডেকে বন্দুক তুলে দেয় হাতে। এখানেই ঘটে চরিত্রের রূপান্তর। রঘুরাম বুঝতে পারে কৃষক নেতা রহমানের মূল্য। তেভাগা আন্দোলনে সব শ্রেণির মানুষের ঐক্য আজ নৈতিক জয়ের পূর্বাভাস। রঘুরাম বন্দুক সমর্পণ করে দেন। (তথ্যঋণ: মাসরেকুল আলম)